অধ্যায় ৯ : আন্তঃলিঙ্গ দ্বন্দ্ব
যদি পিতামাতা আর তাদের সন্তানদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত থাকে, যারা একে অপরের ৫০ শতাংশ জিন বহন করে, তাহলে সহজেই বোধগম্য আরো কত বেশী মাত্রায় স্বার্থের সংঘাত থাকতে পারে প্রজনন সঙ্গীদের মধ্যে, যারা জিনগতভাবে পরস্পরের অনাত্মীয় (১)? তাদের মধ্যে যে একটি মাত্র সাধারণ বিষয় আছে সেটি হচ্ছে তারা তাদের একই সন্তানদের শরীরে ৫০ শতাংশ জিনগত অংশীদারিত্ব দাবী করে। যেহেতু বাবা ও মা দুজনেই একই সন্তানদের ভিন্ন অর্ধাংশগুলোর কল্যাণের ব্যপারে আগ্রহী, সে কারণে সেই সন্তানদের প্রতিপালন করার জন্য একে অপরের সহযোগিতা করলে অবশ্যই দুজনের কিছু উপকৃত হবার সম্ভাবনা থাকে। পিতামাতার দুজনের মধ্যে একজন যদি প্রতিটি সন্তান প্রতিপালনে তাদের মূল্যবান সম্পদের নায্য অংশ বিনিয়োগ না করেই পার পেয়ে যায়, সেটা তার জন্য সুবিধাজনক হবে, কারণ সে তাহলে তার অন্য যৌনসঙ্গীর মাধ্যমে জন্ম দেওয়া অন্য সন্তানদের জন্য আরো খানিকটা সম্পদ ব্যয় করতে পারবে, সুতরাং সে তার জিনগুলো আরো বেশী বিস্তার করতে পারবে। প্রতিটি সঙ্গীকে সেকারণেই ভাবা যেতে পারে পরস্পরকে তাদের নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে, অন্যজনকে তার ভাগের বেশী পরিমান সম্পদ বিনিয়োগ করার জন্য বাধ্য করতে চেষ্টা করছে। আদর্শ কোনো পরিস্থিতিতে, কোনো একক সদস্য হয়তো পছন্দ করবে (আমি শারীরিকভাবে উপভোগ করার কথা বলছি না, যদিও সেটি সে করতেই পারে) তার বিপরীত লিঙ্গের যতটা সম্ভব পারা যায় এমন সংখ্যক সদস্যদের সাথে প্রজনন করতে, এবং প্রতিবারই সেই সঙ্গীদের পরিত্যাগ করতে, যেন সেই সন্তানের প্রতিপালনের দায়ভার তার সেই পরিত্যক্ত সঙ্গী/সঙ্গীনির উপর বর্তায়। আমরা নানা উদাহরণের সহায়তায় দেখবো বহু প্রজাতিতে পুরুষ সদস্যরা এই পরিস্থিতিটি অর্জন করেছে, কিন্তু অন্য অনেক প্রজাতিতে পুরুষরা বাধ্যভাবে সন্তান। প্রতিপালনের সমপরিমান দ্বায়িত্ব পালন করে। যৌন-অংশদারীত্বের এই দৃষ্টিভঙ্গি, পারস্পরিক অবিশ্বাস আর পারস্পরিক নিজ স্বার্থে ব্যবহার করার সম্পর্ককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন ট্রিভার্স। পাণি-আচরণবিদদের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে একটি নতুন ধারণা। যৌন আচরণ, সঙ্গম এবং সঙ্গী নির্বাচন পুর্ববর্তী নানা আচরণ বা কোর্টিং সম্বন্ধে আমরা সাধারণত যা ভেবে এসেছি সেটি হচ্ছে আবশ্যিকভাবে এগুলো একধরনের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ, যা গ্রহন করা হয় পারস্পরিক সুবিধার্থে অথবা এমনকি প্রজাতির কল্যাণের জন্য!
আসুন আবার আমরা একেবারে সেই প্রথম মূলনীতিতে ফিরে যাই। এবং অনুসন্ধান করি পুরুষ আর স্ত্রী সদস্যদের মৌলিক প্রকৃতিটি আসলে কি রকম। তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা যৌনতা নিয়ে আলোচনা করেছি এর মূল অপ্রতিসাম্যতার উপর গুরুত্বারোপ না করে। আমরা শুধু মেনে নিয়েছি যে, কিছু প্রাণী সদস্যকে আমরা বলছি পুরুষ আর অন্যদের স্ত্রী, এই শব্দগুলো আসলে কি বোঝাচ্ছে সেই পশ্নটির জিজ্ঞাসা না করেই। কিন্তু পুরুষত্বের সেই সারবস্তুটি আসলে কি? আর মূল সেই বিষয়টিই বা কি যা কোনো স্ত্রী সদস্যকে স্ত্রী লিঙ্গের সদস্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে? আমরা স্তন্যপায়ী হিসাবে দেখি লিঙ্গগুলোকে সংজ্ঞায়িত করছে একগুচ্ছ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা: পুরুষাঙ্গের উপস্থিতি, সন্তান ধারণ, বিশেষ দুধ উৎপাদনের গ্রন্থির মাধ্যমে দুধ পান করানো, কিছু নির্দিষ্ট ক্রোমোজোম সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। প্রজাতির সদস্যদের লিঙ্গ বিচার করার এই সব মানদণ্ড স্তন্যপায়ীদের জন্য বেশ ভালোভাবেই কাজ করে, কিন্তু অন্যান্য প্রাণী আর উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সেগুলো ট্রাউজার বা প্যান্ট পরা দেখে মানুষের লিঙ্গ বিচার করার মতই কোনো অংশেই বেশী নির্ভরযোগ্য উপায় নয়। যেমন, ধরুন, ব্যাঙের ক্ষেত্রে, তাদের কোনো লিঙ্গেরই কোনো পুরুষাঙ্গ থাকে না। হয়তো, তাহলে, স্ত্রী, পুরুষ শব্দ দুটির কোনো সাধারণ সর্বজনীন অর্থ নেই। তারা সর্বোপরি হয়তো শুধুমাত্র শব্দ এবং যদি আমরা তাদের উপযোগী শব্দ না ভাবি ব্যাঙদের বর্ণনা করার জন্য, আমরা অবশ্যই স্বাধীন তাদের পরিত্যাগ করার জন্য। আমরা ইচ্ছামত মনগড়া উপায়ে ব্যাঙদের ভাগ করতে পারি লিঙ্গ ১ এবং লিঙ্গ ২ হিসাবে, যদি আমরা চাই। তবে, প্রাণী আর উদ্ভিদ সবার ক্ষেত্রেই দুই লিঙ্গেরই জন্য একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে, যা কিনা পুরুষ সদস্যকে পুরুষ আর স্ত্রী সদস্যকে স্ত্রী হিসাবে চিহ্নিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে, পুরুষদের ‘গ্যামেট বা জনন কোষ আকারে স্ত্রী সদস্যদের জনন কোষের তুলনায় আকারে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র এবং সংখ্যায় অগণিত এবং এটি সত্য আমরা প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ, যাদের কথাই আলোচনা করি না কেন। জীব সদস্যদের একটি গ্রুপের জনন কোষ আকারে বড় এবং তাদের ক্ষেত্রে না “স্ত্রী’ শব্দটি ব্যবহার করা সুবিধাজনক। অন্য গ্রুপটিকে সুবিধার খাতিরে আমরা বলতে পারি ‘পুরুষ’, যাদের ক্ষুদ্রাকৃতির জনন কোষ আছে। এই পার্থক্যটি সবচেয়ে বিশেষভাবে সুস্পষ্ট সরীসৃপ আর পাখিদের ক্ষেত্রে, যেখানে একটি একক ডিম্বাণু কোষ হচ্ছে আকারে যথেষ্ট বড় এবং পুষ্টিকর খাদ্যপুর্ণ, যা কোনো বিকাশমান প্রাণকে বেশ কয়েক সপ্তাহ অবধি পুষ্টি জোগাতে পারে। এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও যখন ডিম্বাণু এর আকৃতিতে আণুবীক্ষণীক, তারপরও সেটি শুক্রাণু অপেক্ষা আকারে অনেক বেশী মাত্রায় বড়। পরবর্তী আলোচনায় যেমন আমরা দেখবো আসলেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব যে এই দুটি লিঙ্গের মধ্যে অন্যান্য সব পার্থক্যগুলোর এই একটি মৌলিক পার্থক্য থেকেই উদ্ভব হয়েছে।
কিছু আদিম জীবে, যেমন ধরুন কিছু ছত্রাক, স্ত্রী আর পুরুষ, দুটি লিঙ্গ হিসাবে বিষয়টি ঘটে না, যদিও একধরনের যৌন প্রজনন সেখানে ঘটছে। কোনো একটি সিস্টেম যা পরিচিত ‘আইসোগ্যামি’ হিসাবে, যেখানে কোনো একক সদস্যরা দুটি পৃথক লিঙ্গে শনাক্তযোগ্য নয়। যে কেউই যে কারো সাথে প্রজনন করতে পারে। দুটি ভিন্ন ধরনের গ্যামেট– শুক্রাণু আর ডিম্বাণু সেখানে নেই বরং সব জনন কোষই একই রকম, যাদের বলা হয় “আইসোগ্যামেট। নতুন সদস্যদের জন্ম হয় এই দুটি আইসোগ্যামেটের মিলনে, যাদের প্রতিটি মাইওটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে। আমাদের যদি তিনটি আইসোগ্যামেট থাকে, ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’; ‘ক’, ‘খ’ কিংবা ‘গ’ এর সাথে মিলিত হতে পারে, যেমন, ‘খ’ পারে ‘ক’ এবং ‘গ’ এর সাথে মিলিত হতে। কিন্তু সাধারণ যৌন প্রজনন পদ্ধতিতে সেটি কখনোই সম্ভব নয়। সেখানে যদি ‘ক’ একটি শুক্রাণু হয় এবং এটি ‘খ’ ও ‘গ’ এর সাথে মিলিত হতে পারে, তাহলে ‘খ’ ও ‘গ’ কে অবশ্যই ডিম্বাণু হতে হবে এবং ‘খ’ ডিম্বাণু কখনোই ‘গ’ ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পারবেনা।
যখন দুটি আইসোগ্যামেট মিলিত হয়, দুটি কোষই সমপরিমান জিন প্রদান করে মিলনে অংশগ্রহন করে কোনো একটি নতুন সদস্যের জন্মের কারণ হয়, এবং তারা একইভাবে সমপরিমান খাদ্য মজুদও সরবরাহ করে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুও একই সংখ্যক জিন দান করে কিন্তু ডিম্বাণু সংরক্ষিত খাদ্যের সিংহভাগ তৈরী করে: আসলেই শুক্রাণুরা সংরক্ষিত খাদ্য মজুত তৈরীতে কোনো অংশগ্রহন করেনা, তাদের একটি কাজ শুধু যত দ্রুত সম্ভব ডিম্বাণুতে তাদের ভাগের জিনগুলোকে পৌঁছে দেয়া। সুতরাং, ডিম্বাণু নিষিক্ত হবার মুহূর্তে, পিতা তার সন্তানের জন্য তার সম্পদের নায্য ভাগের চেয়ে কম অংশ বিনিয়োগ করে ( যেমন, ৫০ শতাংশ)। যেহেতু প্রতিটি শুক্রাণ আকারে এত ছোট যে কোনো পুরুষ দিনে বহু মিলিয়ন সংখ্যক শুক্রাণু তৈরী করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, অল্প একটি সময় পর্বে পুরুষ সদস্যটি বিভিন্ন স্ত্রী সদস্যদের দ্বারা বহু সংখ্যক সন্তান জন্ম দেবার সম্ভাবনা ধারণ করে। এবং এটি শুধুমাত্র সম্ভব কারণ প্রতিটি নতুন ভ্রূণে যথেষ্ট পরিমান খাদ্য মজুত থাকে, প্রতিটি ক্ষেত্রে যা করে তার মা, আর সেটাই কোনো একটি স্ত্রী সদস্য কয়টি সন্তানের জন্ম দিতে পারবে তার উপর একটি সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। কিন্তু কোনো একটি পুরুষ কয়টি সন্তানের পিতা হবে সেই সংখ্যাটি হতে পারে অসীম। স্ত্রী-সদস্যদের নিজস্ব স্বার্থসাধনে ব্যবহার করার সূচনা এখান থেকে (২)।
পার্কার এবং অন্যরা দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে এই অসাম্যতা মূলত কোনো একটি আইসোগ্যামেট নির্ভর প্রজনন পদ্ধতি থেকে বিবর্তিত হতে পারে। সেইসব দিনগুলোয় যখন সব জনন কোষরা মূলত পারস্পরিকভাবে প্রতিস্থাপনযোগ্য এবং মোটামুটিভাবে আকারে একই রকম ছিল, সেখানে ঘটনাচক্রে কিছু আইসোগ্যামেট হয়তো ছিল, যারা অন্যদের তুলনায় আকারে বড় ছিল। কিছু ক্ষেত্রে একটি বড় আইসোগ্যামেটের গড়পড়তা আকারের কোনো গ্যামেটের চেয়ে বাড়তি কিছু সুবিধা ছিল, কারণ এটি তার ভ্রূণকে শুরু থেকেই ভালো পরিমান খাদ্য-মজুদ সরবরাহ করে বাড়তি সুবিধা দিতো তার যাত্রা শুরু করতে। হয়তো একটি বিবর্তনীয় প্রবণতা থাকতে ডপারে যা ক্রমান্বয়ে বড় আকারের জনন কোষের বিবর্তনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু এখানে অন্য একটি ব্যাপারও ঘটে। সুনির্দিষ্টভাবে যা প্রয়োজন, আকারে তার তুলনায় খানিকটা বড় আইসোগ্যামেটের বিবর্তন হয়তো স্বার্থপর উদ্দেশ্যপূরণ করার দরজাটাও উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যে সদস্যরা গড়পড়তা আকারের চেয়ে ছোট জনন কোষ তৈরী করে তারাও সুবিধা নিতে পারে, যদি তারা নিশ্চিৎ করতে পারে আকারে বড় জননকোষগুলোর সাথে তারা মিলিত হবে। আর এটি অর্জিত হতে পারে যদি খুব ছোট জনন কোষগুলোকে আরো বেশী গতিশীল করে তৈরী করা যায়, যারা সক্রিয়ভাবে আকারে বাড়তি গ্যামেটগুলো খুঁজে বের করে। আকারে ছোট, দ্রুত গতি সম্পন্ন জনন কোষ তৈরী করে এমন কোনো একটি সদস্যের জন্য বড় সুবিধা হচ্ছে তারা বহু সংখ্যক জনন কোষ তৈরী করতে পারে, সুতরাং তাদের বহু সংখ্যক সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকে। প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব জনন কোষ উৎপাদনের বিষয়টিকে সহায়তা করবে যারা মিলিত হবার জন্য সক্রিয়ভাবে বড় জনন কোষগুলোকে খুঁজে বের করে। সুতরাং আমরা দুটি ভিন্ন ধরনের কৌশল বিবর্তিত হয়েছে বলে ভাবতে পারি। প্রথমে আছে বড়-বিনিয়োগ বা “সৎ’ কৌশল। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্বল্প বিনিয়োগকারী, নিজের স্বার্থ হাসিলের কৌশল বিবর্তিত হবার সুযোগ করে দেয়। যখন এই দুটি কৌশলের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়, এটি খুব দ্রুততার সাথে চলার কথা। মাঝারী আকারের কোনো জনন কোষের মধ্যবর্তী রুপ সেখানে শাস্তি পেতে পারে, কারণ তারা আরো বেশী চরম দুটি কৌশলের কোনোটিরও সুবিধা নিতে পারেনা। যারা এই পরিস্থিতিকে নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করবে তারা আকারে ক্রমশই ছোট থেকে আরো ছোট এবং আরো দ্রুতগতি সম্পন্ন হবার মাধ্যমে বিবর্তিত হবে। সৎ কৌশলটি বিবর্তিত হয়, ক্রমেই আকারে বড় থেকে আরো বড় হয়, ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকা তাদের স্বার্থপর-ব্যবহারকারীদের (শুক্রাণু) কম বিনিয়োগের ঘাটতি পূরণ করার প্রচেষ্টায় এবং তারা স্থির নিশ্চল হয়ে পড়ে কারণ এমনিতেই তাদের সবসময় সক্রিয়ভাবে মিলনের জন্যে খুজবে স্বার্থপর-ব্যবহারকারীরা। প্রতিটি সৎ জনন কোষ ‘চাইবে’ এরকম ‘সৎ’ কোন জনন কোষের সাথে মিলিত হতে। কিন্তু নির্বাচনী চাপ তাদের স্বার্থপর-ব্যবহারকারীদের সীমানার বাইরে রাখার জন্যে যে চাপ সৃষ্টি করে সেটি সেই চাপটির থেকে দূর্বলতর, যা এই স্বার্থপর-ব্যবহারকারীদের বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সীমানা অতিক্রম করতে চাপ দেবে: স্বার্থপর-ব্যবহারকারীদের হারাবার পরিমান অনেক বেশী এবং সেকারণে তারা বিবর্তনীয় যুদ্ধে জয়লাভ করে। সৎ’ কৌশলের কোষগুলো ‘ডিম্বাণু জনন কোষে এবং তাদের স্বার্থপর-ব্যবহারকারীরা শুক্রাণু জনন কোষে রূপান্তরিত হয়।
তাহলে, ‘পুরুষ সদস্যদের বেশ অকাজের মনে হতে পারে, এবং শুধুমাত্র ‘প্রজাতির জন্য কল্যাণ’ এই ভিত্তিতে, আমরা হয়তো প্রত্যাশা করতে পারি পুরুষ সদস্যদের সংখ্যা স্ত্রী সদস্য সংখ্যার চেয়ে ক্রমশ কমতে থাকবে। যেহেতু একটি পুরুষ সদস্য তাত্ত্বিকভাবে যথেষ্ট পরিমাণ শুক্রাণু তৈরী করতে পারে, যা কিনা ১০০ স্ত্রী সদস্যের প্রত্যেকের ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে পারে, আমরা হয়তো অনুমান করতে পারি, কোনো জীব জনগোষ্ঠীতে স্ত্রী সদস্যদের সংখ্যা পুরুষ সদস্যদের সংখ্যার চেয়ে বেশী হবে, প্রতি ১ জন পুরুষের বিপরীতে ১০০ জন স্ত্রী সদস্য অনুপাতে। এ বিষয়টিকে আরো একটি উপায়ে প্রকাশ করা যেতে পারে সেটি হচ্ছে প্রজাতির কল্যাণে পুরষ সদস্যরা অনেক বেশী বাতিলযোগ্য আর স্ত্রী সদস্যরা অনেক বেশী মূল্যবান এবং অপরিহার্য। অবশ্যই পুরো প্রজাতির দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে, এটি নির্ভুল একটি সত্যি। খুব চরম একটি উদাহরণের কথা ধরুন, এলিফ্যান্ট সিলদের নিয়ে একটি গবেষণা প্রদর্শন করছে যে, সেই জনগোষ্ঠীর মোট যৌন মিলনের ৮৮ ভাগ, যা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল, তার জন্যে প্রায় ৪ শতাংশ পুরুষ মূলত দায়ী। এই ক্ষেত্রে এবং আরো অনেক ক্ষেত্রেও, সেখানে আছে বিশাল অতিরিক্ত পরিমান ব্যাচেলর পুরুষরা, যারা তাদের সারা জীবনে কখনো প্রজনন করার সুযোগই পায় না। কিন্তু এই অতিরিক্ত পুরুষরা এছাড়া তাদের স্বাভাবিক জীবনই কাটায় এবং তারা সেই জনগোষ্ঠীর খাদ্য সম্পদ বাকী সব সদস্যদের মতই ক্ষুধার্ত হয়ে খায়। সুতরাং প্রজাতির কল্যাণের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি নিশ্চয়ই চূড়ান্তভাবে একটি অপচয়। এই বাড়তি পুরুষগুলোকে সামাজিক পরজীবি হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। এটি শুধু আরো অনেক উদাহরণের একটি মাত্র, যেখানে গ্রুপ সিলেকশন তত্ত্বটি বেশ ঝামেলার মুখে পড়ে। স্বার্থপর জিন তত্ত্বটি, অন্যদিকে, পুরষ ও স্ত্রী সদস্যদের সংখ্যা সাধারণত সমান হয়, এই বাস্তব তথ্যটি ব্যাখ্যা করতে কোনো সমস্যা অনুভব করে না, এমনকি যখন পুরুষরা, যারা আসলেই প্রজনন করে, তারা মূল সংখ্যার একটি শুধুমাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ হয়। আর এই ব্যাখ্যাটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন আর. এ. ফিশার।
কতজন পুরুষ আর কতজন নারীর জন্ম হবে এই সমস্যাটি ‘প্যারেন্টাল স্ট্রাটেজী’ বা পিতামাতার প্রতিপালন কৌশলের একটি বিশেষ সমস্যা। ঠিক যেমন, সবচেয়ে অনুকুল পরিবারের আকার নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম, যার মাধ্যমে একটি পিতামাতা যুগলের কোনো সদস্য পৃথকভাবে তাদের জিনকে টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে, আমরা সেভাবে সবচেয়ে অনুকুল লিঙ্গ অনুপাত নিয়েও আলোচনা করতে পারবো। আপনার মূল্যবান। জিনগুলো ভরসা করে কার কাছে হস্তান্তর করা উত্তম, পুত্রদের কাছে, নাকি কন্যাদের কাছে? ধরুন, একটি মা তার সব সম্পদ তার ছেলেদের জন্য বিনিয়োগ করে এবং সেকারণে তার কন্যাদের জন্য তার বিনিয়োগ করার মত আর কিছুই থাকেনাঃ তাহলে কি সে গড়পড়তাভাবে ভবিষ্যতের জিন পুলে বেশী জিন রেখে যাবে অন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বী মায়ের চেয়ে, যে কিনা তার কন্যাদের জন্য তার সব সম্পদ বিনিয়োগ করেছে? আসলেই কি পুত্র সন্তান পছন্দ করার জিন কি জিন পুলে কম অথবা বেশী হবে কন্যা সন্তান পছন্দ করার জিন থেকে? ফিশার আমাদের যা দেখিয়েছিলেন, সেটি হচ্ছে কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল লিঙ্গ অনুপাত হচ্ছে ৫০:৫০; আর সেটা কেন হয় তা বাঝার জন্য আমাদের প্রথমে অবশ্যই লিঙ্গ নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সম্বন্ধে খানিকটা জানতে হবে।
জিনগতভাবে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় এভাবে: সব ডিম্বাণুরই একটি পুরুষ বা স্ত্রী সদস্য হিসাবে বিকশিত হবার ক্ষমতা আছে। এবং লিঙ্গ-নির্ধারণী ক্রোমোজোম বহন করে শুক্রাণু। কোনো একটি পুরুষের তৈরী অর্ধেক শুক্রাণু স্ত্রী সন্তান জন্ম দেবার উপযোগী বা X-শুক্রাণু এবং বাকী অর্ধেক পুরুষ সন্তান জন্ম দেবার উপযোগী বা Y-শুক্রাণু। এই দুই ধরনের শুক্রাণু একই রকমদেখতে। তাদের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটি মাত্র ক্রোমোজোমে। কোনো পিতা তৈরীর জিনের কিছু নেই, তবে কন্যারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে তাকে দিয়ে শুধু X-শুক্রাণু উৎপাদন করানোর মাধ্যমে। কোনো একটি মা তৈরীর জিনের কিছু নেই কিন্তু কন্যারা তাদের সেই উদ্দেশ্য পুরণ করতে পারে তাকে দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট-শুক্রাণুনাশী কিছু নিঃসরণ করানোর মাধ্যমে, যার ফলে সে পুরুষ ক্রুণের গর্ভপাত ঘটাতে পারে। আমরা যা খুঁজছি সেটি হচ্ছে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলের (ইএসএস) সমতুল্য কিছু; যদিও এই অধ্যায়ে আর এমনকি আগ্রাসন নিয়ে আলোচিত অধ্যায়টিতে আরো বেশী, কোনো স্ট্রাটেজি বা কৌশল আসলে শুধুমাত্র একটি উপমা বা বাক্যালংকার (বা যাকে বলা হয় ফিগার অব স্পিচ)। কোনো একটি সদস্য আক্ষরিকভাবে তার সন্তানের লিঙ্গ কি হবে সেটি আগে থেকে নির্বাচন করতে পারেনা। কিন্তু যেকোনো একটি লিঙ্গের সন্তান হবার প্রবণতার জিন থাকা সম্ভব। যদি আমরা মনে করি এমন কোনো জিন, যা অসম লিঙ্গ অনুপাতের প্রতি আনুকুল্য প্রদর্শন করে, তার অস্তিত্ব আছে, তাহলে কি তাদের কোনো একটি জিন পুলে সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিকল্প জিনটির তুলনায়, যা সমান লিঙ্গ অনুপাত সৃষ্টিতে সহায়তা করে?
ধরুন, এলিফ্যান্ট সীলদের মধ্যে, যাদের কথা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি, একটি পরিবর্তিত জিনের উদ্ভব হলো, যা পিতামাতাকে মূলত কন্যা সন্তান উৎপাদন করতে সাহায্য করে। যেহেতু জনগোষ্ঠীতে কোনো পুরুষের ঘাটতি নেই, কন্যাদের কোনো সমস্যা হবে না তাদের সঙ্গী খুঁজে পেতে এবং কন্যা উৎপাদনকারী জিনটি জনগোষ্ঠীতে বিস্তার লাভ করবে। কোনো জনগোষ্ঠীতে লিঙ্গ অনুপাত হয়তো তাহলে বাড়তি নারীর উপস্থিতির দিকে পরিবর্তিত হবে। প্রজাতির জন্য কল্যাণময় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এটি কোনো সমস্যার কারণ না, কারণ অল্প কিছু পুরুষ আসলেই পুরোপুরিভাবে সক্ষম প্রয়োজনীয় শুক্রাণুর যোগান দেবার জন্য, যা সুবিশাল সংখ্যক বাড়তি স্ত্রী সদস্যদের দরকার হতে পারে, যেমন আমরা দেখেছি। উপরিভাবে, সেকারণে, আমরা হয়তো আশা করতে পারি যে কোনো কন্যা উৎপাদনকারী জিন বিস্তার লাভ করে যাবে যতক্ষণ না লিঙ্গ অনুপাত এতটাই ভারসাম্যহীন হবে যে অল্প কিছু অবশিষ্ট পুরুষরা, সর্বস্ব পরিশ্রম করে, কোনো মতে হয়তো শুক্রাণুর চাহিদাটি সামাল দিতে পারবে। কিন্তু এখন, ভাবুন, কি বিশাল পরিমান জিনগত সুবিধা উপভোগ করে অল্প কিছু পিতামাতা যাদের পুত্র সন্তান আছে। যে কেউই যারা পুত্র সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করে তাদের শতাধিক সীলের দাদা-দাদী হবার সুস্পষ্ট সম্ভাবনা আছে। আর যারা শুধুমাত্র কন্যা ছাড়া আর কিছু জন্ম দেয়না তারা নিরাপদভাবে কিছু নাতিনাতনী পাওয়ার ব্যপারে নিশ্চিৎ হতে পারে। কিন্তু সেটি আসলেই তুলনা করার মত না, যে বিস্ময়কর জিনগত সম্ভাবনার সুযোগ উন্মুক্ত হয় সেই সবার সমানে যারা বিশেষায়িত হতে পারে শুধুমাত্র পুত্র সন্তান জন্ম দিতে। সে কারণে পুত্র সন্তান উৎপাদন করার জিনটি আরো বেশী সংখ্যায় বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং এই ভারসাম্য পেন্ডুলামের দোলের মত আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
সরলতার খাতিরে আমি পেন্ডুলামের দোলের ভাষা ব্যাবহার করেছি। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে পেন্ডুলামকে কখনোই স্ত্রী সদস্যদের আধিপত্যের দিকে বেশী দুলতে দেয়া হয় না। কারণ পুত্র সন্তান তৈরী চাপ তাহলে সেখানে শুরু হয়ে যাবে এবং এটি আগের দিকে ফিরিয়ে দেবার জন্য আবার চাপ দিতে শুরু করবে যখনই লিঙ্গ অনুপাত অসমান হয়ে যাবে। সমান সংখ্যক পুত্র আর কন্যা উৎপাদনের কৌশল একটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশল বা ইএসএস, এই অর্থে যে, কোনো জিন এই নিয়মের বাইরে গেলে মোটাদাগে তার নিজের জন্যই ক্ষতি করে।
পুত্র বনাম কন্যাদের সংখ্যার ভাষায় আমি এই গল্পটি বললাম। এর কারণ বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করা, কিন্তু নিয়ম মানলে এটি পিতামাতার বিনিয়োগের ভাষা দিয়ে সমাধান করা উচিৎ, এর মানে সব খাদ্য এবং অন্যান্য সম্পদ যা কোনো একটি পিতামাতা তার সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে, তা পরিমিত হয় এমন একটি উপায়ে যা আমরা এর আগের অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। পিতামাতাদের তাদের পুত্র ও কন্যাদের জন্য সমানভাবে বিনিয়োগ করা উচিৎ। সাধারণত এটির অর্থ যে সংখ্যার দিক থেকে তাদের একই সংখ্যক কন্যা আর পুত্রের জন্ম দেয়া উচিৎ। কিন্তু অসম লিঙ্গ অনুপাতও থাকতে পারে যা বিবর্তনীয়ভাবে অস্থিতিশীল, পুত্র ও কন্যাদের জন্য যদি একইভাবে অসমপরিমান সম্পদ বিনিয়োগ করা হয়। এলিফ্যান্ট সিলদের জন্য, যত সংখ্যক পুত্র তার চেয়ে তিনগুন বেশী কন্য সন্তানের জন্ম দেয়ার নীতি, কিন্তু প্রতিটি পুত্রকে শক্তিশালী বা ‘সুপার মেল’ এ রূপান্তরিত করার জন্য তার পেছনে তিনগুণ বেশী পরিমান খাদ্য আর অন্যান্য সম্পদ ব্যয় করা, স্থিতিশীল হতে পারে। কোনো একটি পুত্রের খাদ্যের পেছনে বেশী পরিমান বিনিয়োগ ও তাকে বড় ও শক্তিশালী হিসাবে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে, কোনো পিতামাতা হয়তো তার একটি হারেম জয় করার সর্বোচ্চ পুরস্কারটি অর্জন করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এটি একটি বিশেষ কেস। সাধারণত যে পরিমান সম্পদ প্রতিটি পুত্রের জন্য বিনিয়োগ করা হয় তা মোটামুটিভাবে প্রতিটি কন্যার জন্য বিনিয়োগকৃত সম্পদের সমান এবং লিঙ্গ অনুপাত, সংখ্যার হিসাবে, সাধারণত ১:১।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের দীর্ঘ যাত্রায় সুতরাং, গড়পড়তা কোনো জিন মোটামুটিভাবে এর অর্ধেকটা সময় কাটায় পুরুষ শরীরে এবং বাকী অর্ধেক অংশ কোনো স্ত্রী সদস্যের শরীরে। কিছু জিনের প্রভাবগুলো। তাদের দৃশ্যমান করে শুধুমাত্র একটি লিঙ্গের শরীরে। এদের বলা হয় লিঙ্গ-নির্দিষ্ট জিনের প্রভাব। একটি জিন যা পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সেটি তার প্রভাব প্রদর্শন করে শুধু পুরুষ শরীরে। কিন্তু এটি স্ত্রী সদস্যদের শরীরেও বাহিত হয় এবং স্ত্রী সদস্যদের শরীরে তাদের প্রভাব হয়তো সম্পূর্ণ অন্য ভিন্ন কিছু। কোনো কারণই নেই কেন একটি পুরুষ দীর্ঘ পুরুষাঙ্গের জন্য দায়ী জিনটি তার মায়ের কাছ থেকে পেতে পারেনা।
এবং দুই ধরনের শরীরের মধ্যে যেখানে সে নিজেকে খুঁজে পাক না কেন, আমরা আশা করতে পারি যেকোনো একটি জিন সে যে ধরনের শরীরে বাস করবে সে শরীরের সংশ্লিষ্ট সুযোগগুলোরই সদ্ব্যবহার করবে। আর এই সুযোগগুলো বেশ ভালোভাবেই ভিন্ন, আর সেই ভিন্নতা নির্ভর করবে সেই শরীরটি পুরুষের, নাকি স্ত্রী সদস্যদের, তার উপর। একটি সুবিধাজনক ধারণা হিসাবে আমরা আবারো মনে করে নিতে পারি যে প্রতিটি একক শরীর হচ্ছে একটি স্বার্থপর মেশিন, যা তার সব কয়টি জিনের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো সেই কাজটি করার চেষ্টা করছে। এমন কোনো স্বার্থপর মেশিনের জন্য সবচেয়ে ভালো নীতিমালা হবে এক রকম, যদি এটি পুরুষ হয় এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি নীতিমালা হবে যদি শরীরটি হয় কোনো স্ত্রী সদস্যের হয়। সংক্ষিপ্ততার খাতিরে আমরা আবার সেই নিয়মটি ব্যবহার করবো, আমরা ভাববো কোনো একক সদস্যদের যেন কোনো একটি সচেতন উদ্দেশ্য আছে। আবারো আমরা সচেতন থাকবো আমাদের ভাবনায় যে এটি আসলে এই ধারণা ব্যাখ্যা করা নিমিত্তে ব্যবহৃত শব্দসমষ্টী। একটি শরীর তো আসলেই একটি মেশিন যা অন্ধভাবে নির্মাণ করে এর স্বার্থপর জিনগুলো।
আবার বিবেচনা করুন সেই প্রজনন যুগলদের, যাদের দিয়ে এই অধ্যায়টি শুরু করেছিলাম। উভয় সঙ্গী বা সঙ্গীনি, স্বার্থপর একটি মেশিন হিসাবে সমান সংখ্যক পুত্র ও কন্যার জন্ম দিতে চায়। এই পর্যন্ত তারা একমত। তাদের যেখানে মতের মিল হয়না সেটি হচ্ছে এই প্রত্যেকটি সন্তান প্রতিপালন করার দ্বায়িতেও সিংহভাগ কে বহন করবে। প্রতিটি সদস্য চায় যত বেশী সম্ভব তত সংখ্যক জীবিত সন্তান। যত কম কোনো সন্তানের জন্য বিনিয়োগ করতে তাকে বাধ্য হতে হবে তত বেশী সন্তানের জন্ম সে দিতে পারবে। এই কাঙ্খিত পরিস্থিতি অর্জন করার একটি সুস্পষ্ট উপায় হচ্ছে আপনার যৌন সঙ্গীকে প্ররোচিত করা, সে যেন তার সম্পদের নায্য যে ভাগ বিনিয়োগ করার কথা তারচেয়ে বেশী পরিমান সম্পদ প্রতিটি শিশুর প্রতিপালনের জন্য বিনিয়োগ করে, যা অন্য কোনো সঙ্গী/সঙ্গীনির সাথে আরো সন্তান উৎপাদন করতে আপনাকে মুক্ত করে। যেকোনো লিঙ্গের সদস্যের জন্য এটাই কাঙ্খিত কোনো কৌশল হবার কথা। কিন্তু নারীদের জন্য এটি অর্জন করা খুব কঠিন, কারণ সে শুরুই করে পুরুষদের চেয়ে বেশী পরিমানে বিনিয়োগ করে। তার বড়, পুষ্টি সমৃদ্ধ ডিম রুপে কোনো একটি মা সেই ভ্রুণটিকে নিষিক্ত হবার মূহুর্ত থেকে প্রতিটি সন্তানের প্রতি গভীরভাবে দায়বদ্ধ তার পিতার তুলনায়। যদি শিশুটি মারা যায় তার পিতার চেয়ে তার মায়ের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশী হবে। আরো মূল কথাটি হচ্ছে ‘ভবিষ্যতে তাকে কোনো পিতার চেয়ে আরো বেশী বিনিয়োগ করতে হবে বিকল্প আরেকটি শিশুকে সেই অবধি বড় করে তুলতে। যদি মা পিতার কাছে শিশুকে রেখে চলে যাবার সেই কৌশল ব্যবহারের চেষ্টা করে, যখন মা কোনো পুরুষ সঙ্গীর সাথে চলে যায়, শিশুর পিতা হয়তো, অপেক্ষাকৃতভাবে তার জন্যে অনেক কম ক্ষতি স্বীকার করে নিয়ে সে নিজেও শিশুটিকে পরিত্যাগ করে এর বদলা নিতে পারে। সেকারণে অন্তত শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক স্তরে, যদি পরিত্যাগ করার মত কোনো ঘটনা ঘটে, পিতারই সন্তানসহ মাকে পরিত্যাগ করার সম্ভাবনা অনেক বেশী এর বিপরীত কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার তুলনায়। একইভাবে স্ত্রী সদস্যদের কাছে প্রত্যাশা করা যেতে পারে পুরুষের চেয়ে তারাই শিশুর জন্য বেশী পরিমান বিনিয়োগ করে, শুধু শুরুর মুহূর্তেই না, তাদের বেড়ে ওঠার পুরোটা সময় ধরে। সুতরাং স্তন্যপায়ীদের জন্য যেমন, স্ত্রী সদস্যরাই তাদের নিজেদের শরীরে ভ্রূণকে ধারণ ও লালন পালন করে। স্ত্রী সদস্যরা দুধ তৈরী করে তাদের স্তনগ্রন্থিতে, যেন জন্ম হবার পর থেকে শিশুটি তা চুষে পান করার সুযোগ পায়, এবং স্ত্রী সদস্যরাই সন্তানদের প্রতিপালন আর সুরক্ষা করার মূল ভারটি বহন করে। স্ত্রী লিঙ্গের সদস্যরা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং এমন কিছু হবার মৌলিক বিবর্তনীয় ভিত্তি হচ্ছে সেই বাস্তব সত্যটি, সেটি হচ্ছে ডিম্বাণুগ শুক্রাণু থেকে আকারে বড়।
সন্তানদের প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক প্রজাতিতে পিতারাও বিশ্বস্ততার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু এমনকি তারপরও, আমাদের অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে প্রতিটি শিশুর পেছনে খানিকটা কম বিনিয়োগ এবং ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রী সদস্যদের দ্বারা আরো বেশী সন্তান উৎপাদন করার প্রচেষ্টা করা জন্যে সাধারণভাবেই পুরুষ সদস্যদের উপর একটি বিবর্তনীয় চাপ থাকবে। এটা দিয়ে আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি জিন পুলে সফল হবার জন্য সেই জিনদের একটি প্রবণতা থাকে বলার যে, ‘শরীর যদি তুমি পুরুষ হও, তাহলে তোমার সঙ্গীদের ছেড়ে একটু আগে চলে যাও, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালিল তোমাকে যা করতে বলতো তার আগে এবং অন্য সঙ্গীনি খোঁজার ব্যবস্থা করো। ঠিক কি পর্যায় অবধি এই বিবর্তনীয় চাপ আসলেই কাজ করে, ব্যবহারিক অর্থে প্রজাতি ভেদে সেটি ভিন্ন হয়; অনেক প্রাণী, যেমন, বার্ডস অব প্যারাডাইস পাখিদের স্ত্রী সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পায় না এবং সন্তানদের তারা নিজেরাই এককভাবে প্রতিপালন করে। অন্য প্রজাতি যেমন, কিটিহকরা যারা একগামী জুটি বাধে দৃষ্টান্তমূলক বিশ্বস্ততার সাথে এবং উভয় সঙ্গী তাদের সন্তান প্রতিপালনে পরস্পরকে সহায়তা করে। এখানে আমাদের অবশ্যই কোনো বিবর্তনীয় বিপরীতমুখী চাপের কথা ভাবতে হবে যাঃ অবশ্যই স্বার্থপরতার মাধ্যমে সঙ্গীকে নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কৌশলের সংশ্লিষ্ট যেমন শাস্তি, তেমনি সুবিধা, এবং কিটিহকদের এই ক্ষেত্রে এই শাস্তি তাদের লাভের চেয়ে বেশী। তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই তার স্ত্রী আর শিশুকে পরিত্যাগ করলে কোনো একটি পিতার জন্য শুধুমাত্র লাভ হয়, যদি স্ত্রী সদস্যটির ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাবা যেতে পারে সে একাই সন্তানের প্রতিপালন করতে পারবে।
সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো ট্রিভার্স বিবেচনা করেছিলেন যা কিনা কোনো একটি মা নিতে পারে, যাকে তার সঙ্গী পরিত্যাগ করেছে; তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে অন্য আরেকজন পুরুষকে প্রতারণা করার চেষ্টা করা, যেন সে তার সন্তানকে নিজের সন্তান ভেবে গ্রহন করে (পোষক হিসাবে)। যখন ভ্রূণটি গর্ভে থাকে, এখনও যার জন্ম হয়নি, তখন খুব একটি কঠিন কাজ হয় না এটি। অবশ্যই, যদিও শিশুটি তার অর্ধেক জিন বহন করে, কিন্তু সে সহজেই বিশ্বাসপ্রবণ’ সৎ-বাবার কোনো জিন বহন করে না। প্রাকৃতিক নির্বাচন কঠোরভাবে পুরুষদের এ ধরনের ‘বিশ্বাসপ্রবণতার শাস্তি দেয় এবং আসলেই সেই সব পুরুষদের সহায়তা করে যারা যেকোনো সৎ সন্তানদের হত্যা করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয় যখনই সে তার নতুন স্ত্রী সঙ্গীনির সাথে প্রজনন শুরু করে। খুব সম্ভবত এটাই উপযুক্ত ব্যাখ্যা হতে পারে তথাকথিত সেই ‘ব্রুস’ ইফেক্ট প্রভাবের (Bruce Effect): পুরুষ ইঁদুররা একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যখন সেটির গন্ধ শুঁকলে কোনো গর্ভবতী স্ত্রী ইঁদুরের গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। এবং শুধুমাত্র তার গর্ভপাত ঘটে যদি গন্ধটি তার প্রাক্তন সঙ্গীর গন্ধ থেকে ভিন্ন হয়। এভাবে কোনো পুরুষ ইঁদুর তার সম্ভাব্য সব সৎ সন্তানদের বিনষ্ট করে এবং তারা নতুন স্ত্রী সদস্যদের তার নিজের যৌন প্রজননে অংশগ্রহন করার উপযোগী করে প্রস্তুত করে। আর্জ্যে, ঘটনাচক্রে, ব্রুস ইফেক্টটিকে দেখেছিলেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার একটি পদ্ধতি হিসাবে! একই ধরনের আরো একটি উদাহরণ হচ্ছে পুরুষ সিংহরা, যারা যখন কোনো একটি প্রাইডে (সিংহদের একটি গ্রুপ, ফ্যামিলি ইউনিট) নতুন প্রবেশ করে, তারা মাঝে মাঝে। সেখানে জীবিত সব সিংহ-শাবকদের হত্যা করে এবং সম্ভবত এর কারণ তারা তাদের নিজেদের সন্তান নয়।
কোনো একটি পুরুষ একই ফলাফল অর্জন করতে পারে আবশ্যিকভাবে তার সৎ সন্তানদের হত্যা না করেই। একটি স্ত্রী সদস্যের সাথে যৌন প্রজনন করার আগে একটি দীর্ঘমেয়াদী কোর্টশীপ পর্বকে সে বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দিতে পারে, সেই স্ত্রী সদস্যের দিকে এগিয়ে আসা উৎসাহী সকল পুরুষদের তাড়িয়ে দেবার মাধ্যমে এবং স্ত্রী সদস্যটি যেন না পালাতে পারে, সেটি নিশ্চিৎ করে। এভাবে সে অপেক্ষা করতে পারে এবং দেখতে পারে স্ত্রী সদস্যটি কি কোন সৎ সন্তানকে তার গর্ভে ধারণ করে আছে কিনা এবং যদি সে তাই করে থাকে, তাকে পরিত্যাগ করে। আমরা পরে দেখবো একটি কারণ, কেন একটি স্ত্রী সদস্য সঙ্গমের আগেই দীর্ঘ ‘এনগেজমেন্ট’ পর্ব চাইতে পারে। এখানে আমরা সেই কারণটি দেখছি কেন একটি পুরুষ সদস্য একই রকম চাইতে পারে। শুধুমাত্র শর্ত হচ্ছে, স্ত্রী সদস্যটিকে সে অন্য সব পুরুষদের সংস্পর্শ থেকে আলাদা করে রাখতে পারে। এটি তাদের নিজের অজান্তে অন্য কোনো পুরুষের জিন বহনকারী সন্তানদের ত্রাণকর্তা হবার মত কোনো পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করে।
যদি ধরে নেই একটি পরিত্যক্ত স্ত্রী সদস্য তার সন্তানের ভরণপোষণের দ্বায়িত্ব নেবার জন্য কোনো নতুন পুরুষ সদস্যকে বোকা বানাতে পারবে না, তাহলে আর কি কৌশল সে অবলম্বন। করতে পারে? অনেক কিছু নির্ভর করে সেই শিশুটির বয়স কত তার উপর। যদি শুধুমাত্র কেবল গর্ভধারণ করা হয়েছে এমন কোনো অবস্থা হয়, সত্য যে সে তার পুরো একটি ডিম্বাণু বা তারও চেয়ে কিছু বেশী সেখানে বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু তারপরও তার জন্য লাভজনক হবে এটিকে গর্ভপাত করা এবং যত দ্রুত সম্ভব নতুন কোনো পুরুষ সদস্যকে খুঁজে বের করা। এই সব পরিস্থিতিতে পারস্পরিক সুবিধার একটি বিষয় হবে উভয়ের ক্ষেত্রেই, তার নিজের ও তার সম্ভাব্য নতুন সঙ্গী উভয়ের জন্যই তার গর্ভপাত করা উচিৎ– কারণ আমরা ধরে নিয়েছি যে নতুন পুরষ সঙ্গীকে বোকা বানিয়ে তার সন্তানকে পোষক হিসাবে গ্রহন করানোর ক্ষেত্রে তার কোনো আশা নেই। এটি ব্যাখ্যা করে কেন ‘ব্রুস’ প্রভাবটি স্ত্রী সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করে।
আরেকটি বিকল্প পদক্ষেপ যা পরিত্যক্ত স্ত্রী সদস্যের হাতে থাকে তা হলো চেষ্টা করে যাওয়া, এবং একা নিজে নিজেই সন্তানটির প্রতিপালন করা। এটি করা তার জন্য লাভবান হতে পারে যদি শিশুটি ইতিমধ্যে বয়সে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। যত বড় সে হবে ইতিমধ্যে তার জন্য ততটা পরিমান বেশী বিনিয়োগ করা হয়েছে, তাকে প্রতিপালন করার কাজটি শেষ করতে তার ততই কম খরচ হবে। এমনকি যদি সে খুবই অল্প বয়সেরও হয়, তার শুরুর বিনিয়োগ থেকে কিছু উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়তো তার জন্য লাভবান হবে, এমনকি শিশুটিকে খাওয়ানোর জন্য যদি তাকে দ্বিগুণ পরিমান কাজও করতে হয়, এখন যখন পুরুষটি চলে গেছে। তার জন্য স্বস্তির কোনো ব্যাপার নেই যে শিশুটি সেই পুরুষের অর্ধেক জিন বহন করছে এবং সে তার বদলা নিতে পারে সেটি পরিত্যাগ করে। কিন্তু তার নিজের জন্য তার কোনো বদলা নেবার দরকার নেই। শিশুটি তার অর্ধেক জিন বহন করছে এবং এই উভয়-সঙ্কটটি এখন শুধু তার একার।
কোনো একটি স্ত্রী সদস্য যার পরিত্যক্ত হবার ভয় আছে, তার জন্যে আপাত-স্ববিরোধী মনে হলেও সত্যবর্জিত নয় এমন একটি যৌক্তিক নীতিমালা হচ্ছে, পুরুষ সঙ্গীটি তাকে ত্যাগ করার আগে নিজেই তার সেই সঙ্গীটিকে ত্যাগ করে চলে আসা। এটি তার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, এমনকি যদিও ইতিমধ্যে সেই পুরষ সঙ্গীটি যা করেছে তার চেয়ে সন্তানের জন্য সে বেশী বিনিয়োগ করে ফেলেছে। অস্বস্তিকর সত্যটি হচ্ছে যে, কোনো কোনো পরিস্থিতিতে একটি সঙ্গীর জন্য সুবিধাগুলো ক্রমেই পুঞ্জীভূত হয় যদি যে ‘প্রথম’ পরিত্যাগ করে আসতে পারে, সে মা হোক কিংবা বাবা। যেমন করে ট্রিভারস ব্যাখ্যা করেছেন, যে সঙ্গী পরিত্যক্ত রয়ে যায়, সে একটি নিষ্ঠুর বন্ধনে আটকে পড়ে। এটি বেশ আরো ভয়ঙ্কর, তবে খুব সূক্ষ্ম একটি যুক্তি। পিতামাতার কারো ক্ষেত্রে হয়তো প্রত্যাশা করা যেতে পারে তাদের কেই সেই মুহূর্তে পরিত্যাগ করবে,যখন তাদের দুজনের যে কারোর ক্ষেত্রে এমন কিছু বলা সম্ভব হয়: ‘শিশুটির এখন যথেষ্ট পরিমান বড় হয়েছে, এবং আমাদের যে কেউই একাই তার প্রতিপালনের কাজটি শেষ করতে পারবো, সুতরাং আমার জন্য লাভজনক হবে এখনই এখান থেকে চলে যাওয়া পরিত্যাগ করে, শুধুমাত্র যদি আমি নিশ্চিৎ হতে পারি যে আমার সঙ্গীও একই সাথে আমাদের সন্তানকে পরিত্যাগ করবে না। যদি আমি এখনই পরিত্যাগ করি, আমার সঙ্গী তাই করবে যা তার জিনের জন্য সবচেয়ে ভালো। সেও আমি এখন যেভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তার মতই কোনো আকস্মিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার জন্য বাধ্য হবে, কারণ ততক্ষণে আমি তাকে ছেড়ে চলে যাবো। আমার সঙ্গী ‘জানবে’ যে, যদি সেও যদি ছেড়ে চলে যায় তাহলে সন্তানটি অবশ্যই মারা যাবে। সুতরাং ধরে নেই যে আমার সঙ্গী সেই সিদ্ধান্তটি নেবে যেটা তার স্বার্থপর জিনের সবচেয়ে ভালো হবে। আমার উপসংহার হচ্ছে প্রথমে সঙ্গীকে পরিত্যাগ করাই আমার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হবে। এটাই সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ, বিশেষভাবে তার কারণ হচ্ছে, যেহেতু আমার সঙ্গী হয়তো ঠিক একই ভাবে ‘ভাবছে’, এবং যেকোনো মুহূর্তে সে একই সুযোগ নিতে পারে আমাকে পরিত্যাগ করে। সবসময়কার মত, এই ব্যক্তিক অনুভূতি নির্ভর আত্মকথনটি শুধুমাত্র ‘উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য। মূল বক্তব্যটি হচ্ছে আগে বা প্রথমে পরিত্যাগ করার জিনটি নির্বাচনী সুবিধা পায় শুধুমাত্র দ্বিতীয় পরিত্যক্ত জিনটির নির্বাচনী সুবিধা না পাওয়ার কারণে।
আমরা বেশ কিছু বিষয়ে নজর দিয়েছি যা একটি স্ত্রী সদস্য হয়তো করতে পারে, যদি সে তার পুরুষ সঙ্গী কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু সেই সব কয়টি পদক্ষেপ দেখলে মনে হতে পারে খারাপ কোনো পরিস্থিতিতে যতটুকু ভালো করা সম্ভব ততটুকু করার প্রচেষ্টা মাত্র। কোনো স্ত্রী সদস্য কি এমন কিছু করতে পারে, শুরুতে তার সঙ্গী তাকে যতটুকু তার নিজের স্বার্থের খাতিরে ব্যবহার করে তার মাত্রাটি যেন সে খানিকটা কমাতে পারে? তার কাছে একটি শক্তিশালী কৌশল আছে। সে সঙ্গম করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। বিক্রেতাদের বাজারে তার চাহিদা অনেক বেশী। এর কারণ সে একটি বড়, পুষ্টিকর খাদ্য সমৃদ্ধ ডিম্বাণুর যৌতুক নিয়ে আসবে। কোনো পুরুষ যে সফলভাবে সঙ্গম করে সে তার সন্তানের জন্য মহা মূল্যবান খাদ্য উৎস পাচ্ছে। সঙ্গম করতে রাজী হবার আগেই কোনো স্ত্রী সদস্য ভালো দর কষাকষি করার জন্য তাই সম্ভাব্য সেরা কোনো একটি অবস্থানে আছে। একবার যখন সে সঙ্গম করে ফেলে, সে তার হাতের সেরা তাসটি খেলে ফেলে– তার ডিম্বাণুটি তখন পুরুষটির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পড়ে। ভালোই শুনতে লাগে যখন আমরা বেশ জোরালো দর কষাকষির কথা বলছি, কিন্তু আমরা খুব ভালো করে জানি যে আসলেই এটা সেরকম কিছু না। আর কি কোনো বাস্তবসম্মত উপায় আছে যেখানে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সমতুল্য কিছু বিবর্তিত হতে পারে যা জোরালো দরকষাকষি করতে পারে? আমি দুটি প্রধান সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবো, যাদের একটি হচ্ছে ‘ডমেস্টিক-ব্লিস স্ট্রাটেজী’ আরেকটি হচ্ছে ‘হি-ম্যান স্ট্রাটেজী।
‘ডোমেস্টিক ব্লিস স্ট্রাটেজীর সবচেয়ে সরলতম সংস্করণটি হচ্ছে এরকম: স্ত্রী সদস্যরা খুব ভালো করে পুরুষদের লক্ষ করে এবং চেষ্টা করে আগাম সেই চিহ্নগুলো শনাক্ত করতে যা বিশ্বস্ততা আর পারিবারিক জীবন কেমন কাটতে পারে সেই বিষয়ে ইঙ্গিত করে। বিশ্বস্ত স্বামী হবার প্রবণতা বিষয়ে অবশ্যম্ভাবীভাবে জনগোষ্ঠীতে পুরুষদের মধ্যে আমরা বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ করি। যদি স্ত্রী সদস্যরা এই বৈশিষ্টগুলো আগে থেকে শনাক্ত করতে পারে, তাহলে সেই ধরনের পুরুষদের বাছাই করার মাধ্যমে তারা তাদের নিজেদের উপকার করবে। আর স্ত্রী সদস্যদের জন্য সেটি করার একটি উপায় হচ্ছে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সহজে পুরুষের ডাকে সাড়া না দেওয়া, তারা নিজেদের সহজলভ্য হিসাবে উপস্থাপন করে না, ‘লাজুক’ একটি আচরণ করা। কোনো পুরুষ যে-কিনা যতক্ষণ না সঙ্গমের জন্য অবশেষে স্ত্রী সদস্যটি সম্মতি দেয় ততক্ষণ অবধি অপেক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ধৈর্যশীল নয়, সে সম্ভবত ভালো বিশ্বাসী স্বামী হবার মত উপযুক্ত নয়। কোনো দীর্ঘ সময়ব্যাপী ‘এনগেজমেন্ট’ বা বাগদান পর্বের উপর জোর দিয়ে, কোনো স্ত্রী সদস্য সাধারণত বহু। অনুপযুক্ত, অমনোযোগী পাণিপ্রার্থীকে বাতিল করে দিতে পারে এবং অবশেষে সে শুধুমাত্র সেই পুরুষের সাথে সঙ্গম করে যে তার বিশ্বস্ততা আর অধ্যাবসায়ের গুণাবলীর পূর্ব-প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্ত্রী-সদস্যসুলভ ‘লজ্জা’ আসলেই প্রাণীদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায় এবং এই কথা প্রযোজ্য দীর্ঘ বাগদান কিংবা কোর্টশীপ পর্বের ক্ষেত্রে। যেমন আমরা দেখেছি দীর্ঘ বাগদান পর্ব কোনো একটি পুরুষকেও উপকৃত করে বিশেষ করে যখন অন্য-পুরুষের সন্তান প্রতিপালন করার জন্যে তার প্রতারিত হবার সম্ভাবনা আছে।
কোর্টশীপ আচরণগুলোয় প্রায়শই বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পুরুষ সদস্যদেরযথেষ্ট পরিমান প্রাক-সঙ্গম বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট থাকে। কোনো স্ত্রী সদস্য হয়তো সঙ্গম করতে অস্বীকার জানায় যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরুষটি তার জন্য একটি ‘নীড়’ বানিয়ে না দেয়। অথবা পুরুষটি তাকে যদি যথেষ্ট পরিমান খাদ্য সরবরাহ না করতে পারে। এটি অবশ্যই বেশ উত্তম কোনো স্ত্রী সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কিন্তু এটি আরেকটি সম্ভাব্য ‘ডেমেস্টিক ব্লিস স্ট্রাটেজীর’ প্রস্তাব দেয়। স্ত্রী সদস্যরা কি প্রজননে সম্মতি দেবার আগে পুরুষ সদস্যদেরকে বাধ্য করতে পারে তাদের সন্তানের জন্য বেশ বড় মাপের কোনো বিনিয়োগ করাতে, যেন আসলেই সঙ্গমের পরে কোনো পুরুষের সেই নারীকে ত্যাগ করলে তার আর লাভবান হবার সম্ভাবনা থাকে না। এই ধারণাটি আবেদনময়। কোনো পরষ যে-কিনা কোনো লাজক বা সহজে-ধরা-না-দেওয়া স্ত্রীর সাথে একসময় সঙ্গমের জন্য অপেক্ষা করে সে আসলে একটি মূল্য পরিশোধ করছে: সে অন্য কোনো স্ত্রী সদস্যের সাথে সঙ্গম করার সুযোগ হাতছাড়া করছে এবং তার মন ভোলানোর জন্য যথেষ্ট পরিমান সময় আর সময় আর শক্তি ব্যয় করছে। এবং অবশেষে যখন সে-কোনো একটি নির্দিষ্ট স্ত্রী। সদস্যের সাথে সঙ্গম করার অনুমতি পায়, অবশ্যম্ভাবীভাবে সে তার প্রতি বেশী পরিমানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। তাকে পরিত্যাগ করার জন্য তেমন কোনো প্ররোচণা বা লোভ তার নেই, যদি সে জানে মূল কাজটি করার আগে, যে-কোনো ভবিষ্যৎ নারী, তার বর্তমান সঙ্গীনির মত একইভাবে কালক্ষেপণ করবে।
যেমন, আমি একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছিলাম, এখানে ট্ৰিভার্সের যুক্তিটিতে কিছু ভ্রান্তি আছে। তিনি ভেবেছিলেন যে ‘প্রাক-বিনিয়োগ বিষয়টি এককভাবে কোনো একটি সদস্যকে ভবিষ্যত-বিনিয়োগের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। এটি একটি ভ্রান্ত অর্থনীতি। কোনো ব্যবসায়ী কখনোই বলেন না, ‘আমি ইতিমধ্যে এত বেশী পরিমান বিনিয়োগ করে ফেলেছি ‘কনকর্ড’ এয়ারলাইনারে (উদাহরণ স্বরুপ) যে, আমি এখন আর এটাকে বাতিল হিসাবে ফেলে দিতে পারবো না। তার সবসময়ই জিজ্ঞাসা করা উচিৎ হবে বরং এটি কি ভবিষ্যতে তার জন্য লাভজনক হবে কিনা, তার লোকসান সে থামাতে পারে কিনা এবং এই প্রকল্পটি এখনই পরিত্যাগ করতে পারে কিনা, এমনকি যদিও সেখানে ইতিমধ্যেই সে বিপুল পরিমানে অর্থ বিনিয়োগ করে ফেলেছে। একইভাবে, কোনো লাভ হয় না যখন একটি স্ত্রী সদস্য কোনো পুরুষ সদস্যকে তার জন্য বড় মাপের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করে এমন আশায়, যে এটি, শুধু এর উপর ভিত্তি করে যে, বিষয়টি র পরবর্তীতে তাকে পরিত্যাগ করার মত পদক্ষেপ নিতে পুরুষটিকে নিরুৎসাহিত করবে। ডোমেস্টিক ব্লিস স্ট্রাটেজীর’ এই সংস্করণটি নির্ভর করে আরো একটি বাড়তি গুরুত্বপূর্ণ প্রাক-ধারণার উপর। সেটি হচ্ছে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্ত্রী সদস্যদের উপর ভরসা রাখা যায় তারা একই খেলা খেলবে। যদি কোনো ‘সহজলভ্য স্ত্রী সদস্য থাকে সেই জনগোষ্ঠীতে, যে কিনা প্রস্তুত পুরুষদের স্বাগতম জানাতে যারা তাদের স্ত্রীদের পরিত্যাগ করে এসেছে, তাহলে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারলে যেকোনো পুরুষের জন্য লাভজনক হয়, ইতিমধ্যে সে যতই তার সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ করে থাকুক না কেন।
সুতরাং অনেক কিছুই নির্ভর করে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্ত্রী সদস্যরা কিভাবে আচরণ করবে। আমাদের যদি অনুমতি দেয়া হয় স্ত্রী সদস্যদের ষড়যন্ত্রের ভাষায় বিষয়টি ভাবতে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু স্ত্রী সদস্যদের একটি ষড়যন্ত্র বিবর্তিত হতে পারে না, যেমন কিনা ডোভদের ষড়যন্ত্র বিবর্তিত হতে পারেনা, যা আমরা আলোচনা করেছিলাম অধ্যায় ৫ এ। বরং, আমাদের বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কোনো কৌশল এখানে খুঁজে বের করতে হবে। আসুন আমরা মেনার্ড স্মিথের আগ্রাসী দ্বন্দ্বগুলো বিশ্লেষণের পদ্ধতি গ্রহন করি এবং এটি যৌন প্রজনন ও লিঙ্গ দ্বন্দ্ব ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সেটি প্রয়োগ করি। (২)।এটি অবশ্যই আরেকটু বেশী জটিল হবে ‘হক’ আর ‘ডোভদের’ উদাহরণ থেকে, কারণ, আমাদের হাতে আছে স্ত্রী সদস্যদের দুটি স্ট্রাটেজী এবং পুরুষ সদস্যদের দুটি স্ট্রাটেজী।
মেনার্ড স্মিথের গবেষণার মতই, “স্ট্রাটেজী’ বা কৌশল শব্দটি বোঝাচ্ছে অন্ধ, অবচেতন একটি আচরণগত একটি প্রোগ্রাম। আমাদের স্ত্রী সদস্যদের দুটি স্ট্রাটেজী বা কৌশলকে বলা হবে, কয় (লাজুক) এবং ‘ফাস্ট (বেপরোয়া)’, আর পুরুষ সদস্যদের দুটি কৌশলকে বলবো ‘ফেইথফুল (বিশ্বাসী)” এবং “ফিলানডেরার (ছলনাকারী)। এই চারটি প্রকারের আচরণের নীতিমালা হচ্ছে এরকম: ‘কয়’ বা লাজুক নারী কোনো পুরুষ সদস্যের সাথে সঙ্গম করবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে একটি দীর্ঘমেয়াদী, ব্যয়বহুল প্রাক মিলন কোর্টশিপ বা প্রেম কিংবা বাগদান পর্ব সম্পন্ন না করে, যা কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী দীর্ঘ হতে পারে। ফাষ্ট’ বা বেপরোয়া স্ত্রী সদস্যরা প্রজনন করে সাথে সাথেই যে কারো সাথেই। ফেইথফুল’ বা বিশ্বাসী পুরুষরা দীর্ঘমেয়াদী একটি সময় প্রাকমিলন কোর্টশীপ আচরণ অব্যাহত রাখে ধৈর্য সহকারে এবং সঙ্গমের পর তারা সন্তান প্রতিপালনে সহায়তা করতে স্ত্রী সদস্যের সাথে থাকে। ‘ফিলানডেরার’ বা হালকাভাবে প্রেমের ভান করা ছলনাকারী কোনো পুরুষ সদস্য দ্রুত তাদের ধৈর্য হারায় যদি স্ত্রী সদস্যরা সাথে সাথেই সঙ্গম না করে, এবং অন্য কোন সম্ভাব্য প্রজনন সঙ্গীর জন্য তারা অন্য জায়গায় তাদের সন্ধান অব্যাহত রাখে, এবং সঙ্গমের পরেও ভালো পিতাদের মত তারা তাদের সন্তানদের মায়ের সাথে বেশী দিন থাকে না বরং অন্য নতুন প্রজনন সঙ্গীর সন্ধানে দ্রুত তাদের পরিত্যাগ করে। হক’ ও ‘ডোভ’ উদাহরণের ক্ষেত্রে যেমন হয় আমরা দেখেছিলাম, শুধুমাত্র এগুলোই সম্ভাব্য কৌশল নাও হতে পারে, কিন্তু তাসত্ত্বেও কৌশলগুলোর পরিণতিগুলো নিয়ে গবেষণা বহু বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে পারে।
মেনার্ড স্মিথের মতই, আমরা কিছু কাল্পনিক হাইপোথেটিকাল মূল্যমান ব্যবহার করবো নানা ধরনের মূল্য এবং এর সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলো বোঝাতে। আরো সাধারণভাবে বোঝানোর জন্য এটি করা যেতে পারে বীজগণিতের চিহ্ন ব্যবহার করে। কিন্তু সংখ্যা বোঝা অপেক্ষাকৃত সহজতর। ধরুন, যখন কোনো একটি শিশুকে সফলভাবে প্রতিপালন করা হয়, তখন পিতামাতা পৃথক পৃথকভাবে জিনগত যে লাভ অর্জন করে, সেটি মূল্যমান হচ্ছে: +১৫ ইউনিট। কোন একটি শিশুকে প্রতিপালন করার মূল্য, তাকে খাওয়ানো সব খাদ্যের মূল্য এবং সেই সময় যা তার জন্য ব্যয় করা হয় এবং তাকে রক্ষা করার জন্য যে পরিমান ‘ঝুঁকি নিতে হয়, সেটি মূল্যমান হচ্ছে– ২০ ইউনিট। এই মূল্যমানটি প্রকাশ করা হয়েছে ‘ঋণাত্মক চিহ্ন ব্যবহার করে কারণ এই মূল্য পিতামাতা পরিশোধ করছে। আরো ঋণাত্মক মূল্যমান হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী প্রাক-প্রজনন কোর্টশীপ আচরনের অপচয়কৃত সময়, ধরা যাক তার মূল্যমান হচ্ছে:–৩ ইউনিট।
কল্পনা করুন আমাদের কাছে একটি জনগোষ্ঠী আছে, যেখানে সব স্ত্রী সদস্যরা হচ্ছে ‘কয়’, এবং সব পুরুষরা ‘ফেইথফুল’। এটি একটি আদর্শ একগামী সমাজ। প্রতিটি যুগল, পুরুষ ও স্ত্রী সদস্য উভয়েই গড়পড়তা একই লাভ অর্জন করে। তারা +১৫ পায় প্রতিটি শিশুকে প্রতিপালন করার জন্য। তারা দুজনে সেই সন্তানটিকে পালন করার জন্য মূল্যটি (-২০) সমানভাবে ভাগ করে নেয়, অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্য গড়ে:–১০। দীর্ঘ কোর্টশীপ পর্বের জন্য তারা দুজনেই–৩ পয়েন্ট শাস্তি হিসাবে মূল্য পরিশোধ করে। তাহলে গড়পড়তায় তারা মাথাপিছু মোট লাভ করে; +১৫-১০-৩=+২;
এখন মনে করুন একজন ‘ফাস্ট’ কৌশলের স্ত্রী সদস্য সেই জনগোষ্ঠীতে প্রবেশ করে। সে খুবই সফল হয়। প্রাক-প্রজনন বিলম্ব করার জন্য তাকে কোনো নম্বর শাস্তি হিসাবে দিতে হয়না। কারণ সে সময় নষ্ট করে না দীর্ঘমেয়াদী কোনো কোর্টশীপ আচরণে। যেহেতু সব পুরুষ সেই জনগোষ্ঠীতে ‘ফেইথফুল’, সে মোটামুটি ভরসা রাখতে পারে তার সন্তানদের জন্য সে ভালো পিতা পাবে, যার সাথেই সে প্রজনন করুক না কেন। তার গড়পড়তা লাভ সন্তান প্রতি তাহলে হবে: +১৫-১০=+৫; সুতরাং সে তার ‘কয়’ বা লাজুক প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী সদস্যদের তুলনায় +৩ ইউনিট বেশী পায়। সুতরাং এই ‘ফাস্ট’ স্ত্রী সদস্যের ‘জিন’ জনগোষ্ঠীর জিন পুলে বিস্তার লাভ করতে শুরু করে।
ফাস্ট স্ত্রী সদস্যদের যদি সাফল্য এতই বেশী পরিমানে হয় যে জনগোষ্ঠীতে তারা প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে, পুরুষদের ক্ষেত্রেও তাহলে কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আপাতত যেখানে ‘ফেইথফুল’ কৌশলের পুরুষরা প্রাধান্য বিস্তার করতো, কিন্তু এখন ‘ফিলানডেরার’ বা ছলনাকারী পুরুষ কৌশলের আবির্ভাব হয় সেই জনগোষ্ঠীতে, সে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ফেইথফুল’ বা বিশ্বাসী পুরুষ সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশী ভালো করতে শুরু করবে। কোনো। একটি জনগোষ্ঠীতে যেখানে ‘ফাস্ট’ স্ত্রী সদস্যদের প্রাধান্য বেশী, সেখানে কোনো ‘ছলনাকারী’ পুরুষদের সঙ্গী জয় করা খুব সহজ একটি কাজ, এবং তারা দ্রুত সফলও হয়। সে মোট +১৫ পয়েন্ট পায় যদি কোনো শিশু সফলভাবে প্রতিপালিত হয় এবং তাকে কোনো ধরনের মূল্য পরিশোধ করতে হয় না। এই মূল্য পরিশোধ না করার আসল অর্থ হচ্ছে তার সঙ্গীকে পরিত্যাগ করার জন্য এবং নতুন স্ত্রী সদস্যদের সাথে প্রজনন করার জন্য সে স্বাধীন। তার সব দুর্ভাগা স্ত্রী সদস্যরা একা একাই তাদের সন্তানদের প্রতিপালন নিয়ে সংগ্রাম করে, তাদের পুরো– ২০ পয়েন্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়। একা একাই। যদিও সেই স্ত্রী সদস্যদের প্রাক-মিলন কোর্টশীপের জন্য কোনো ঋণাত্মক পয়েন্ট মূল্য হিসাবে পরিশোধ করতে হয় না; যখন ‘ফাস্ট’ স্ত্রী সদস্য কোন “ছলনাকারী’ পুরুষের সাথে মিলিত হয় তখন তার মোট লাভের পরিমান, +১৫-২০=-৫; আর লম্পট পুরুষদের জন্য এটি +১৫। কোনো একটি জনগোষ্ঠীতে যেখানে সব স্ত্রী সদস্যরা ‘ফাস্ট’ কৌশল অনুসরণ করেন, সেখানে ‘ছলনাকারী’ পুরুষরা অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে, দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে।
যখন ‘ছলনাকারী পুরুষ সদস্যদের সংখ্যা সফলভাবে এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে তারা সেই জনগোষ্ঠীর পুরুষদের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে, “ফাষ্ট’ স্ত্রী সদস্যরা তখন আসলেই গভীর সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করে। যে কোনো ‘কয়’ বা লাজুক স্ত্রী সদস্য তখন সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধা অর্জন করে। যদি কোনো ‘কয়’ স্ত্রী সদস্য ‘ছলনাকারী’ পুরুষের দেখা পায়, তাদের মধ্যে কিছু ঘটে না। কারণ কয় স্ত্রী সদস্যটি দীর্ঘ একটি কোর্টশীপ বা বাগদান পর্বের দাবী করে, এবং ‘ছলনাকারী’ পুরুষ সেটি করতে অস্বীকার করে এবং অন্য সঙ্গীর সন্ধানে সে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়; এখানে কোনো পক্ষই সময় নষ্ট করার মূল্য পরিশোধ করে না, এবং কোনো পয়েন্টও অর্জন করে না, যেহেতু কোনো সন্তানের জন্ম হয় না। সুতরাং কোনো ‘কয়’ বা লাজুক স্ত্রী সদস্যের জন্য মোট খতিয়ান হয় শূন্য, এমন কোনো জনগোষ্ঠীতে যেখানে সব পুরুষরাই ‘ছলনাময়ী’ প্রেমিক। শূন্য হয়তো খুব বেশী কিছু না তবে এটি অবশ্যই–৫ এর চেয়ে ভালো, যা ফাস্ট স্ত্রী সদস্যদের গড় পয়েন্ট। এমনকি যদি কোনো ‘ফাস্ট’ স্ত্রী সদস্য সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার সন্তানকে ছেড়ে চলে যাবে তার ছলনাকারী পুরুষ সঙ্গী তাকে পরিত্যাগ করার পরপরই, তারপরও তাকে তার ডিম্বাণুর জন্য যথেষ্ট পরিমান মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং, “কয়’ জিনটি ধীরে ধীরে জনগোষ্ঠীতে আবার বিস্তার লাভ করতে শুরু করে।
এই হাইপোথসিস নির্ভর চক্রটি পূর্ণ করতে যখন ‘কয়’ স্ত্রী সদস্যদেরা সংখ্যা বাড়তে থাকে এত বেশী যে তারা জনগোষ্ঠীতে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে, “ছলনাকারী’ পুরুষরা, যারা এতদিন সহজে ‘ফাস্ট’ নারীদের সাথে প্রজনন করে আসছিল, তারা বেশ বড় বিপদের মুখে পড়ে। একটি পর একটি স্ত্রী সদস্য এখন দীর্ঘ আর কষ্টসাধ্য কোর্টশিপ পর্বের দাবী করে। আর এইসব পুরুষরা একজন স্ত্রী সদস্য থেকে অন্য স্ত্রী সদস্যের কাছে পালাবার চেষ্টা করে এবং সবসময়ই গল্পটা একই ভাবে ঘটতে থাকে। কোনো একজন ‘ছলনাকারী’ পুরুষের এখানে মূল লাভ, যখন সব স্ত্রী সদস্য “কয়’, শূন্য। এখন যদি কোনো একজন ‘ফেইথফুল’ পুরুষের আবির্ভাব ঘটে সেখানে, সে হচ্ছে একমাত্র পুরুষ তার সাথে ‘কয়’ স্ত্রী সদস্যরা মিলিত হবে, তার মূল লাভ হচ্ছে + ২, যা ছলনাকারী পুরুষের লাভের চেয়ে বেশী। সুতরাং ফেইথফুল জিনটা জনগোষ্ঠীতে দ্রুত বাড়তে থাকে।
এর আগে আগ্রাসনের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যেমন, আমি গল্পটি বলেছিলাম যেন এটি একটি অনন্ত দোদুল্যমান পরিস্থিতি। কিন্তু, যেমন এই ক্ষেত্রে, এটা দেখানো যেতে পারে যে আসলেই এমন কোনো ধরনের দোদুল্যমানতা এখানে আমরা দেখবো না, এবং সিস্টেম একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে উপনীত হবে (৩)। আপনি যদি হিসাব করেন, দেখবেন যে জনগোষ্ঠীর ৫/৬ ভাগ স্ত্রী সদস্যরা ‘কয়’ এবং ৫/৮ ভাগ পুরুষরা ‘ফেইথফুল’, সেটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশল বা ইএসএস। অবশ্যই এটি সূনির্দিষ্টভাবে কাল্পনিক একটি সংখ্যা যা দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম, কিন্তু যে কোনো কাল্পনিক প্রাক-ধারণার উপস্থিতিতে স্থিতিশীল অনুপাতটি পরিমাপ করা খুব সহজ।
যেমন, মেনার্ড স্মিথ বিশ্লেষণ করেছিলেন, জনগোষ্ঠীতে দুইটি ভিন্ন কৌশলের পুরুষ এবং দুটি ভিন্ন কৌশলের স্ত্রী সদস্যরা আছে, এমন কিছু আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবেনা। বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলে সমানভাবেই সফলতা অর্জিত হতে পারে যদি প্রতিটি পুরুষ তার সময়ের ৫/৮ ভাগ ‘ফেইথফুল’ হিসাবে এবং বাকী সময় অনির্ভরযোগ্য ‘ছলনাকারী’ পুরুষ হিসাবে ব্যয় করে এবং প্রতিটি স্ত্রী সদস্য তার সময়ের ৫/৬ ভাগ ব্যয় করে কয়’ হিসাবে এবং ১/৬ ভাগ ব্যবহার করে ‘ফাস্ট’ হিসাবে। আমরা যেভাবেই বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলের কথা ভাবিনা কেন, এর অর্থ হচ্ছে এটাই। দুটি লিঙ্গের যেকোনো একজন সদস্য যদি সুপ্রযোজ্য স্থিতিশীল অনুপাত থেকে দুরে সরে আসে সে শাস্তি পাবে, এর ফলশ্রুতিতে অন্য লিঙ্গের পরিবর্তিত কৌশলগত অনুপাতের মাধ্যমে, যা, আবার মূল ব্যতিক্রমীর জন্য অসুবিধাজনক একটি পরিস্থিতি। সুতরাং বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলটি সুরক্ষিত হবে।
আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে অবশ্যই কোনো জনগোষ্ঠীর বিবর্তিত হওয়া সম্ভব, যা মূলত গঠিত হয় কয় বা ‘লাজুক’ স্ত্রী সদস্য আর ‘বিশ্বাসী পুরুষদের নিয়ে। এইসব পরিস্থিতিতে ‘ড্ডামেস্টিক ব্লিস’ কৌশলটি স্ত্রী সদস্যদের জন্য আসলেই কাজ করছে বলে মনে হয়। আমাদেরকে এটি ‘কয়’ বা লাজুক স্ত্রী সদস্যদের ষড়যন্ত্র ভাষায় ভাবতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এই লাজুকতা বা কয়নেস আসলেই স্ত্রী সদস্যদের স্বার্থপর জিনকে লাভবান করতে পারে।
বেশ কিছু উপায় আছে যেভাবে স্ত্রী সদস্যরা এই ধরনের কৌশলগুলো বাস্তবক্ষেত্রে কাজে লাগায়। আমি ইতিমধ্যেই প্রস্তাব করেছি যে, কোনো স্ত্রী সদস্য হয়তো এমন পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে প্রত্যাখ্যান করতে পারে, যে কিনা তার জন্য এখনও কোনো নীড় তৈরী করেনি বা কমপক্ষে তার নীড়টি গড়তে তাকে সাহায্য করেনি। এটি আসলেই বাস্তব সেই পরিস্থিতি যেখানে অনেক একগামী পাখিদের জনগোষ্ঠীতে সঙ্গম ঘটে না যতক্ষণ না নীড় তৈরী করা হচ্ছে। এর ফলাফল হচ্ছে যে ডিম্বাণু নিষিক্ত হবার মুহূর্তে পুরুষ পাখিটি তার সন্তানের পেছনে শুধুমাত্র তার সস্তা শুক্রাণু ছাড়াও ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিমান বিনিয়োগ করে ফেলেছে।
সম্ভাব্য কোনো প্রজনন সঙ্গীর কাছে নীড় বানিয়ে দেবার দাবী করা একটি কার্যকর উপায় যার মাধ্যমে কোনো স্ত্রী পাখি সদস্য তাকে ফাঁদে ফেলতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে হয়তো ভাবা যেতে পারে যে প্রায় যে কোনো কিছু যা কোনো পুরুষকে অনেক বেশী পরিমান মূল্য পরিশোধ করায়, এমনকি যখন সেই বিনিয়োগ মূল্য সরাসরি পরিশোধিত হয়না অজাত বা এখনও জন্ম হয়নি এমন সন্তানদের প্রতি উপযোগিতা রুপে। একটি জনগোষ্ঠীতে সব স্ত্রী সদস্যরা তাদের সাথে সঙ্গমে সম্মতি জানানোর আগে যদি পুরুষদের কোনো কঠিন এবং ব্যয়সাধ্য কোনো কাজ করার জন্য বাধ্য করে, যেমন, ড্রাগন বধ বা পর্বতাহোরণ, তাত্ত্বিকভাবে তারা সক্ষম হতে পারে সঙ্গমের পর তাদেরকে পরিত্যাগ করে পুরুষদের চলে যাবার প্রলোভনটি হ্রাস করতে। কোনো পুরুষ যে তার সঙ্গীকে পরিত্যাগ করার জন্য প্রলোভিত হয় এবং যে চেষ্টা করে তার জিন আরো স্ত্রী সদস্যদের সাহায্য নিয়ে বিস্তার করতে, সে হয়তো তার সেই প্রলোভন দমন করতে পারবে, তাকে আরো একটি ড্রাগন মারতে হবে এমন কথা ভেবে। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যদিও স্ত্রী সদস্যরা ড্রাগন মারা বা হলি গ্রেইল খুঁজে নিয়ে আসার মতো এমন কোন মনগড়া কাজ চাপিয়ে দেয় না তাদের সম্ভাব্য সঙ্গীদের উপর। এর কারণ হচ্ছে সেই স্ত্রী সদস্যটির অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী সদস্য হয়তো তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ কাজের প্রস্তাব দিতে পারে, যা হয়তো তার এবং তার সন্তানদের জন্য কল্যাণময় হবে। তাদের অবশ্যই একটি বাড়তি সুবিধা পাবার কথা, বেশী রোমান্টিক মনের স্ত্রী সদস্যদের চেয়ে যারা ভালোবাসার জন্য অর্থহীন কোন কঠিন কাজ সম্পাদন করার অনুরোধ জানায়। একটি নীড় বানানো অপেক্ষাকৃত কম রোমান্টিক হতে পারে কোনো ড্রাগন বধ করার তুলনায় বা হেলেসপন্ট সাঁতার কেটে পার হবার চেয়ে, কিন্তু এটি বহুগুণে উপযোগী স্ত্রী সদস্য ও তার সন্তানের জন্য।
স্ত্রী সদস্যের জন্য আরো উপযোগী হচ্ছে যে আচরণটির কথা আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছিলাম, পুরুষদের দ্বারা ‘কোর্টশীপ ফিডিং’, যখন কোনো পুরুষ সদস্য স্ত্রী সদস্যটিকে তার সঙ্গী বানানোর লক্ষ্যে খাদ্য সরবরাহ করে। পাখিদের ক্ষেত্রে যে আচরণটিকে ভাবা হয় স্ত্রী সদস্যদের এক ধরনের শৈশবের আচরণের দিকে পত্যার্পনের মত। সে পুরুষদের কাছে ভিক্ষা চায়, শিশু পাখিরা যেমন আচরণ করে, ঠিক সেই একই আচরণ ব্যবহার করে। ধারণা করা হতো এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরুষদের আকর্ষণ করে, ঠিক যেভাবে পুরুষ সদস্যরা কোনো প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী সদস্যদের আধো আধো উচ্চারণে কথা বলা কিংবা ফুলে থাকা ঠোঁটের আকর্ষণ অনুভব করতে পারে। স্ত্রী পাখিরা এই সময় যতটুকু বাড়তি খাদ্য পাওয়া যায় তার সবই তাদের প্রয়োজন হয়। কারণ সে তার বিশাল ডিম্বাণু তৈরী করার প্রক্রিয়ায় সেই খাদ্যগুলোকে মজুদ করছে। কোনো পুরুষের এই প্রাক-প্রজনন খাওয়ানো বা কোর্টশীপ ফিডিং এর সময় স্ত্রী পাখিকে খাওয়ানোর আচরণ সেই ডিম্বাণুগুলোর জন্য পুরুষটির প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকেই সম্ভবত প্রতিনিধিত্ব করছে। সেকারণে সন্তানদের প্রতি পিতামাতার প্রাথমিক বিনিয়োগের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করতে এর একটি প্রভাব আছে।
বেশ কিছু পতঙ্গ আর মাকড়শা এই কোর্টশীপ ফিডিং আচরণের প্রাকৃতিক ঘটনাটি প্রদর্শন করে। এখানে একটি বিকল্প ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে যা কখনো কখনো অনেক বেশী স্পষ্ট। কারণ, যেমন, প্রেইং মানতিসের ক্ষেত্রে, পুরুষটির হয়তো তার চেয়ে আকারে বেশ বড় স্ত্রী মানতিসের খাদ্যে পরিণত হবার বিপদ আছে, সেখানে পুরুষটি নারী মানতিসের ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে তার পক্ষে যা করা সম্ভব সেটাই করার চেষ্টা করে, কারণ এটাই তার জন্য সুবিধাজনক। একটা অতি অদ্ভুত অর্থে বলা যেতে পারে দুর্ভাগা পুরুষ মানতিস তার শিশুর প্রতি বিনিয়োগ করে। সে নিজে খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় ডিম্বাণু উৎপাদনের জন্য যা পরে নিষিক্ত হয়, তার মৃত্যুর পর, তার নিজের মজুত করে যাওয়া শুক্রাণু দিয়ে।
কোনো স্ত্রী সদস্য, যে ‘ডোমেস্টিক ব্লিস’ কৌশল প্রয়োগ করে, যে শুধুমাত্র পুরুষদের দিকে তাকিয়ে আগে থেকেই বিশ্বস্ততার কোনো চিহ্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, তার প্রতারিত হবার হবার ঝুঁকি অনেক বেশী। কোনো পুরুষ যে কিনা নিজেকে বিশ্বস্ত, অনুগত, ঘরোয়া হিসাবে উপস্থিত করার চেষ্টা করে কিন্তু বাস্তবে সে অবিশ্বস্ত এবং সঙ্গীকে পরিত্যাগ করার শক্তিশালী প্রবণতাকে গোপন রাখে, তারা বাড়তি বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারে। যতক্ষণ না তার পরিত্যক্ত প্রাক্তন স্ত্রী সদস্যদের কিছু সন্তান প্রতিপালন করে বড় করার জন্য কোনো সুযোগ থাকবে, সেই ছলনাকারী পুরুষ সদস্যদের তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষদের চেয়ে যারা কিনা সৎ বিশ্বস্ত স্বামী এবং বাবা, তাদের চেয়ে বেশী জিন প্রজন্মান্তরে হস্তান্তর করার সুযোগ থাকে। পুরুষদের মধ্যে সেই কার্যকরী উপায়ে প্রতারণা করার জিন জিনপুলে বিশেষ সুবিধা পাবে।
এর বিপরীত, প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব স্ত্রী সদস্যদের সাহায্য করার বিশেষ প্রবণতা দেখাবে, যারা পুরুষদের এধরনের প্রতারণা শনাক্ত করতে আরো দক্ষ হয়ে উঠবে। আর একটি উপায় যেভাবে তারা সেটি যাচাই করতে পারে সেটি হলো নতুন কোনো পুরুষ যখন তাদের সঙ্গী বানানোর জন্য প্রাক-প্রজনন আচরণ করবে, খুব সহজে সেই প্রস্তাবে সহজে তাদের সাড়া না দেয়া। কিন্তু এরপর ধারাবাহিক প্রজনন ঋতুগুলোতে তারা ধীরে ধীরে আরো বেশী প্রস্তুত হয়ে ওঠে গত বছরের প্রজনন সঙ্গীর ডাকে খানিকটা দ্রুত রাজি হবার জন্য। এটি সাথে সাথেই তরুণ পুরুষদের শাস্তি দেয় যারা তাদের প্রথম প্রজনন ঋতু শুরু করেছে, তারা ‘ছলনাকারী’ হোক বা না হোক। প্রথম বছরের অবুঝ স্ত্রী সদস্যদের শিশুদের মধ্যে অপেক্ষাকৃতভাবে উচ্চ হারের জিন থাকে অবিশ্বাসী বাবার কিন্তু কোনো মায়ের জীবনে দ্বিতীয় ও তার পরবর্তী বছরগুলোয় বিশ্বাসী বাবাদের জন্য সুবিধা আছে, কারণ তাদের সেই একই দীর্ঘমেয়াদী শক্তিক্ষয়ী এবং সময় খরচ করার কোর্টশীপ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতে হয় না। কোনো জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা যদি কোনো অবুঝ মায়ের শিশু হবার বদলে অভিজ্ঞ মায়ের শিশু হয়– একটি যৌক্তিক ধারণা যা করা যেতে পারে যে কোন দীর্ঘজীবি প্রজাতির ক্ষেত্রে– সতোর জন্য জিন, ভালো পিতৃত্বের জিনও সেই জিনপুলে প্রাধান্য বিস্তার করবে।
সরলতার কারণে, আমি এমনভাবে কথা বলছি যেন পুরুষরা হয় বিশুদ্ধভাবে সৎ নয়তো পুরোপুরিভাবে প্রতারক। বাস্তবে আরো সম্ভাব্য যে সব পুরুষরা, আসলে সব একক সদস্যরা, সামান্য খানিকটা ছলনাকারী, অর্থাৎ তারা এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যে তারা তাদের সঙ্গীদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ নেবে। প্রাকৃতিক নির্বাচন, প্রত্যেকটি সঙ্গীর মধ্যে অন্য সঙ্গীর অসততা শনাক্ত করার ক্ষমতা শানিয়ে তোলার মাধ্যমে, বড় মাপের প্রতারণাকে নিয়ন্ত্রণ করে, ফলাফলে প্রতারণার ঘটনা মোটামুটি নিম্ন একটি পর্যায়ে থাকে। পুরুষদের অসৎ হবার লাভ স্ত্রী সদস্যদের অসৎ হবার লাভ থেকে অনেক বেশী এবং আমাদের অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে যে এমন কি সেই সব প্রজাতির ক্ষেত্রেও যেখানে পুরুষরা যথেষ্ট পরিমান পিতামাতার পরার্থবাদীতা প্রদর্শন করে থাকে, সাধারণত স্ত্রী সদস্যদের চেয়ে তাদের কিছুটা কম কাজ করার প্রবণতা থাকে এবং পরিত্যাগ করার খানিকটা বেশী সম্ভাবনা থাকে। পাখি ও স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই সাধারণত সত্য।
তবে এমন প্রজাতি আছে, যেখানে পুরুষরা আসলেই তাদের সন্তানদের প্রতিপালন করার জন্য অনেক বেশী কাজ করে কোনো স্ত্রী সদস্যের তুলনায়। পাখি ও স্তন্যপায়ীদের মধ্যে পিতামাতাদের এধরনের নিবেদিত প্রাণ আচরণের উদাহরণগুলো ব্যতিক্রমভাবে খুবই দূর্লভ, কিন্তু মাছদের মধ্যে এটি বেশ পরিমানে দেখা যায়। কেন? (৪) স্বার্থপর জিন তত্ত্বের এই চ্যালেঞ্জটি আমাকে বহু দিন ধরে ভাবিয়েছে। সম্প্রতি আমার একটি টিউটোরিয়াল ক্লাসে একটি উদ্ভাবনী সমাধান প্রস্তাব করেছিলেন মিস টি. আর. কার্লাইল। তিনি সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য ট্রিভার্সের ‘জুয়েল বাইন্ড’ (cruel bind) ধারণাটি ব্যবহার করেছিলেন, ১৯৩ পৃষ্ঠায় যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে:
বহু মাছই যৌন সঙ্গম করে না বরং এর পরিবর্তে তাদের জনন কোষগুলো তারা শুধুমাত্র খোলা পানিতে উগরে দেয় বমি করা মত। নিষিক্তকরণ পক্রিয়াটি ঘটে খোলা পানিতে, তাদের কোনো সঙ্গীর শরীরের অভ্যন্তরে না, এভাবে সম্ভবত যৌন প্রজনন প্রথম শুরু হয়েছিল। পাখিদের, স্তন্যপায়ী আর সরীসৃপদের মত স্থলবাসী প্রাণীদের জন্য এরকম শরীরের বাইরে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়াটি পোষায় না, কারণ তাদের জনন কোষগুলোর শুকিয়ে যাবার ঝুঁকি অনেক বেশী। একটি লিঙ্গের জনন কোষগুলোকে– পুরুষের শুক্রাণু, যেহেতু শুক্রাণু সচল, অন্য লিঙ্গের কোনো সদস্যের আর্দ্র অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয় –স্ত্রী সদস্য। আপাতত এতটুকু হচ্ছে শুধু বাস্তব সত্য। এবার আমরা কিছু ধারণা নিয়ে কথা বলি। যৌন মিলনের পরে, সত্যিকার ভ্রণের দ্বায়িত্ব স্থলবাসী স্ত্রী প্রাণীর কাছেই থাকে। তার শরীরের অভ্যন্তরে এটি অবস্থান করে। এমনকি যদি সে নিষিক্ত ডিম প্রসব করেও থাকে তাৎক্ষণিকভাবে, পুরুষটির হাতে সময় থাকে সেখান থাকে পালিয়ে যাবার, এবং সেভাবেই সে স্ত্রী প্রাণীকে বাধ্য করে ট্রিভার্সের ‘ক্রুয়েল বাইন্ড’ পরিস্থিতিতে আবদ্ধ হতে। অবশ্যম্ভাবীভাবে পুরুষের পূর্বপ্রদত্ত সেই সুযোগটি থাকে, তার সঙ্গীনিকে পরিত্যাগ করতে পারে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সে আগেই নিতে পারে, যা স্ত্রী সদস্যটি জন্য কোনো বিকল্প পথ খোলা রাখে না এবং সে স্ত্রী সদস্যকে বাধ্য করে সিদ্ধান্ত নিতে, সে কি তার সন্তানকে নিশ্চিৎ মৃত্যু মুখে ফেলে পরিত্যগ করবে নাকি সেই সন্তানের সাথেই থাকবে ও সেটিকে প্রতিপালন করবে। সে-কারণেই স্থলবাসী প্রাণীদের মধ্যে মা কতৃক সন্তান প্রতিপালনের বিষয়টি আমরা পিতা কতৃক সন্তান প্রতিপালনের উদাহরণের চেয়ে অনেক বেশী দেখতে পাই।
কিন্তু মাছ এবং অন্যান্য পানিতে বসবাসকারী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি খুবই ভিন্ন। যদি পুরুষরা শারীরিকভাবে তাদের শুক্রাণু স্ত্রী সদস্যের শরীরে প্রবেশ না করায়, স্ত্রী সদস্যদের সেখানে এমন কোনো আবশ্যিকতা নেই যে তাদের বাচ্চাদের তাদের সাথে ধরে রাখতে হবে। যেকোনো সঙ্গীই দ্রুত পালিয়ে যাবার প্রচেষ্টা করতে পারে অন্য ন উপর সদ্য নিষিক্ত হওয়া ডিম্বাণুগুলোর দ্বায়িত্ব দিয়ে। এমনকি এখানে একটি সম্ভাব্য কারণও আছে কেন প্রায়শই সঙ্গীদের মধ্যে পুরুষদেরই পরিত্যক্ত হবার ঝুঁকি থাকে বেশী। হতে পারে এখানে বিবর্তনীয় যুদ্ধ গড়ে ওঠে কে প্রথমে জনন কোষ শরীরের বাইরে ছড়িয়ে দেয় সেই প্রশ্নে। সঙ্গীদের ( স্ত্রী কিংবা পুরুষ) মধ্যে যে এই কাজটি করে তার অন্য সঙ্গীর উপর নতুন ভ্রূণের দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সুযোগ আছে। আবার অন্য দিকে, যে সঙ্গী প্রথম শরীরের বাইরে তার জনন কোষ ছড়িয়ে দেয়, তার আবার কিন্তু সেই ঝুঁকি থাকে যে তার সম্ভাব্য সঙ্গীটি হয়তো পরে তার জনন কোষ সময়মত নিঃসরণ করে নিষিক্ত করতে করতে ব্যর্থ হতে পারে। এখন এখানে পুরুষ থাকে ঝুঁকির মধ্যে, শুধুমাত্র এর কারণ যদি হয় শুক্রাণুরা হালকা এবং ডিমের চেয়ে সেগুলোর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী। আর যদি কোনো স্ত্রী প্রাণী আগে বেশী ডিম পারে, যেমন, যদি পুরুষ প্রাণীটি প্রস্তুত হবার আগেই, খুব একটা বেশী কোনো হেরফের হবে না কারণ ডিম, আকারে বড় ও ভারী হবার সুবাদে এবং কিছু সময়ের জন্য সেগুলোর একসাথে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গুচ্ছাকারে ভেসে থাকার সম্ভাবনা থাকে। সে-কারণে কোনো স্ত্রী মাছের পক্ষে আগে ডিম পাড়ার ‘ঝুঁকি নেয়া সম্ভব হয়। পুরুষরা সাহস করে এই ঝুঁকি নিতে পারেনা কারণ যদি সে বেশী আগে তার জনন কোষ পানিতে ছাড়ে তার শুক্রাণুগুলো আগেই পানিতে ভেসে দুরে সরে যাবে স্ত্রী প্রাণী ডিম পাড়ার জন্য প্রস্তুত হবার অনেক আগে, এবং সে হয়তো এরপর আর নিজেই ডিম পাড়বে না কারণ তার জন্য এমন কোনো অপচয়ের ঝুঁকি নেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। এই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বার সমস্যার কারণে পুরুষ অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না স্ত্রী প্রাণীরা ডিম পাড়ে এবং তারপর তাকে অবশ্যই ডিম্বাণুর উপরে তার শুক্রাণু ছড়িয়ে দিতে হবে। সুতরাং স্ত্রী সদস্যটির হাতে মূল্যবান কিছু সেকেন্ড আছে, পুরুষটির উপর তার প্রাণগুলোর দ্বায়িত চাপিয়ে যে সময় সে পালিয়ে যেতে পারে এবং ট্রিভার্সের উভয় সংকটটি সরাসরি মোকাবেলা করার জন্য তাকে বাধ্য করতে পারে। সুতরাং এই তত্ত্ব খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে কেন পিতা কতৃক প্রতিপালনের বিষয়টি জলজ প্রাণীদের মধ্যে খুব বেশী দেখা গেলেও কিন্তু স্থলে এটি অপেক্ষাকৃতভাবে দূর্লভ।
মাছদের প্রসঙ্গ ছেড়ে, আমি এবার স্ত্রী সদস্যদের অন্য প্রধান কৌশলটি নিয়ে আলোচনা করবো –‘হি-ম্যান স্ট্রাটেজী’। যে সমস্ত প্রজাতিতে স্ত্রী সদস্যরা এই কৌশলগত নীতিমালা ব্যবহার করে– সেখানে কার্যত তারা, তাদের সন্তানদের পিতার কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাওয়া থেকে নিজেদের নিবৃত রাখে, এবং এর পরিবর্তে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় কিভাবে ভালো জিন তারা পেতে পারে। আরো একবার তারা তাদের অস্ত্র ব্যবহার করে মিলনে অস্বীকৃতি জানিয়ে। তারা যেকোনো পুরুষের সাথে মিলনে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু কোনো পুরুষকে তাদের সাথে মিলনের অনুমতি দেবার আগে তারা খুব বেশীমাত্রায় সতর্কতার সাথে বাছ বিচার করে। কিছু পুরুষ নিঃসন্দেহে বহু সংখ্যক ভালো জিন ধারণ করে অন্য পুরুষদের চেয়ে। পুত্র কিংবা কন্যা উভয় সন্তানের ক্ষেত্রেই যে জিনগুলো বাঁচা ও প্রজনন সফল হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যদি কোনো একজন স্ত্রী সদস্য কোনো ভাবে পুরুষদের মধ্যে ভালো জিন শনাক্ত করতে পারে, বাহ্যিক কোনো দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য বা ইঙ্গিত দেখে, সে তার নিজের জিনেরই উপকার করবে, ভবিষ্যৎ সন্তানের পিতার ভালো জিনের সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে। নৌকা বাইচের দল নিয়ে আমাদের আগের সেই উদাহরণটা যদি ব্যবহার করি, একটি স্ত্রী সদস্য পারে তার নিজের জিনকে খারাপ জিনদের সাথে সম্পর্ক করার সম্ভাবনাকে যতটুকু সম্ভব হ্রাস করা সম্ভব তা করতে। সে চেষ্টা করতে পারে তার নিজের জিনের জন্য ভালো নৌকাবাইচের সঙ্গী বাছাই করে নিতে।
ভালো সম্ভাবনা আছে যে, কে সবচেয়ে সেরা পুরুষ সেটি নির্ধারণ করার মানদণ্ড নিয়ে অধিকাংশ স্ত্রী সদস্যদের মধ্যে একটি পারস্পরিক ঐক্যমত থাকে, কারণ নির্বাচনের কাজটি শুরু করার সময় তাদের সবার কাছে একই তথ্য থাকে। সুতরাং এই সব অল্প কিছু পুরুষরা বেশীর ভাগ প্রজননের কাজটি করে। এবং কাজটি করার জন্য তারা যথেষ্ট যোগ্য, কারণ তাদের শুধু যা করতে হবে তাহলে প্রতিটি স্ত্রী সদস্যদের কিছু সস্তা শুক্রাণু দান করা। এবং ধারণা করা হয় এটাই ঘটে এলিফ্যান্ট সীল আর বার্ড অব প্যারাডাইজদের ক্ষেত্রে। এই স্ত্রী সদস্যরা শুধুমাত্র অল্প কিছু পুরুষকে তাদের পরিত্যাগ করার সুযোগ দেয় আদর্শ স্বার্থপরতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল ব্যবহার করে, যা সব পুরুষই করার জন্য আশা করে থাকে, কিন্তু স্ত্রী সদস্যরা একটা বিষয় নিশ্চিৎ করে যে শুধুমাত্র সেরা পুরুষরা যেন এই বিলাসিতা করার অনুমতি পায়।
কোনো স্ত্রী সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, যে শুধু চেষ্টা করছে সবচেয়ে ভালো জিনগুলো বাছাই করার জন্য যার সাথে সে তার নিজের জিনগুলোর সম্মিলন ঘটায়, সে আসলে কোন জিনিসটি সন্ধান করে? একটি জিনিস হচ্ছে সে টিকে থাকার যোগ্যতার প্রমাণ চায়। অবশ্য যে কোনো সম্ভাব্য সঙ্গী যে তার সাথে মিলিত হবার জন্য প্রাক প্রজনন আচরণ করছে সে তার টিকে থাকার যোগ্যতা দিয়েছে অন্তত তার এই প্রাপ্তবয়স্ক বয়স অবধি বাঁচার মাধ্যমে, কিন্তু সে অবশ্যম্ভাবিভাবে কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না যে সে আরো অনেকদিন। টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং একটি ভালো নীতি হতে পারে কোনো স্ত্রী সদস্যের জন্য, তা হলো বয়স্ক পুরুষদের সাথে মিলিত হওয়া। তাদের যে সমস্যাগুলোই থাকুক না কেন, তারা অন্তত প্রমাণ করেছে যে তারা টিকে থাকতে পারে এবং স্ত্রী সদস্যটিরও দীর্ঘায়ু জিনের সাথে তার নিজের একটি মিত্রতা গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে। তবে, কোনো অর্থই হয়না তার সন্তানদের জন্য দীর্ঘ জীবনের নিশ্চয়তা করা, যদি না তারা তাকে সেই সাথে অনেক নাতি-নাতনী উপহার না দেয়। দীর্ঘায়ু পৌরুষদীপ্ততার প্রমাণ নয়। আসলেই একজন দীর্ঘায়ু পুরুষ টিকে থাকে কারণ প্রজনন করার জন্য হয়তো সুনির্দিষ্টভাবে সে কোনো ঝুঁকি নেয়নি। কোনো স্ত্রী সদস্য যে একজন বৃদ্ধ পুরুষকে বাছাই করে সে আবশ্যিকভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো স্ত্রী সদস্য অপেক্ষা বেশী সংখ্যক উত্তরসূরির নিশ্চয়তা পায়না, যে কিনা তরুণ কোনো পুরুষকে বাছাই করে, যে ভালো জিন বহন করার অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য হয়তো প্রদর্শন করে।
অন্য আর কি প্রমাণ আছে? বহু সম্ভাবনা আছে। হয়তো শক্তিশালী মাংসপেশী খাদ্য সংগ্রহ করার জন্য দক্ষতার চিহ্ন বহন করে, হয়তো লম্বা পা, যা প্রমাণ করে শিকারী প্রাণীর আক্রমণ থেকে তার দৌড়ে পালাবার যোগ্যতা। কোনো স্ত্রী সদস্য হয়তো এই সব বৈশিষ্ট্যসহ জিনের সাথে মিত্রতা গড়তে পারে, যেহেতু সেগুলো তার ছেলে কিংবা মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে উপযোগী গুণাবলী হতে পারে। তাহলে, শুরুতেই আমাদের স্ত্রী সদস্যদের কল্পনা করতে হবে তারা পুরুষ সদস্যদের বাছাই করে শুধুমাত্র সুচারুভাবে সত্যিকারের লেবেল বা শনাক্তকারী চিহ্ন দেখে, যা সেই পুরুষদের শরীরে ভালো জিনের উপস্থিতি প্রমাণ করে। কিন্তু এখানে একটি খুব কৌতূহলোদ্দেীপক বিষয় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন ডারউইন এবং যার সুস্পষ্ট আর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছিলেন ফিশার। কোনো একটি সমাজে যেখানে পুরুষরা পরস্পরের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে ‘হি-ম্যান’ হিসাবে স্ত্রী সদস্যদের দ্বারা বাছাই হবার জন্য– সবচেয়ে ভালো যে কাজটি কোনো মা তার জিনের জন্য করতে পারে তাহলো একটি ছেলের জন্ম দেয়া যে তার সময় হলে একজন আকর্ষণীয় ‘হি-ম্যান’এ রূপান্তরিত হবে। যদি সে নিশ্চিৎ করতে পারে তার ছেলে সেই অল্প কিছু ভাগ্যবান পুরুষদের একজন হবে, যারা বেশীর ভাগ প্রজননের সুযোগ অর্জন করে সেই সমাজে, যে সমাজে সে প্রতিপালিত হয়েছে– সে বহুসংখ্যক নাতিনাতনী উত্তরসূরী হিসাবে পাবে। এর ফলাফল হচ্ছে স্ত্রী সদস্যদের চোখে কোনো একটি পুরুষের জন্য সবচেয়ে কাঙ্খিত গুণাবালী হবে, খুব সাধারণভাবেই, যৌন আকর্ষণীয়তা বৈশিষ্ট্যটি নিজেই। কোনো একটি স্ত্রী সদস্য যে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ‘হি-ম্যানের সাথে প্রজনন করে তার সম্ভাবনা থাকে সেই সব পুত্রের জন্ম দেয়া যারা পরবর্তী প্রজন্মের স্ত্রী সদস্যদের কাছেও আকর্ষণীয় হয় এবং যারা তার জন্য প্রচুর সংখ্যক নাতিনাতনীর জন্ম দেবে। মূলত, তাহলে, স্ত্রী সদস্যদের সম্বন্ধে ভাবা যেতে পারে, যারা পুরুষদের নির্বাচন করে সুস্পষ্টভাবে উপযোগী গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে, যেমন, শক্তিশালী মাংসপেশী। কিন্তু একবার এইসব গুণাবলী যখন প্রজাতির স্ত্রী সদস্যদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গৃহীত হবে আকর্ষণীয় হিসাবে, প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে টিকে থাকতে সহায়তা করতে শুরু করবে শুধুমাত্র তারা আকর্ষণীয় এই কারণে।
আড়ম্বরময় বাহুল্য যেমন, পুরুষ বার্ড অব প্যারাডাইজ পাখিদের লেজ হয়তো সেকারণে বিবর্তিত হয়েছে এক ধরনের অস্থিতিশীল নিয়ন্ত্রণহীন প্রক্রিয়ায় (৫)। শুরুর দিনগুলোতে, পুরুষদের মধ্যে সাধারণের চেয়ে খানিকটা লম্বা লেজ হয়তো স্ত্রী সদস্যদের দ্বারা একটি কাঙ্খিত বৈশিষ্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল, হয়তো এর কারণ এটি শারীরিক ও প্রজননগত সুস্থতার ইঙ্গিত দেয়। কোনো একটি পুরুষের ছোট লেজ হয়তো কোনো ভিটামিনের ঘাটতির সংকেত দেয়– যা প্রমাণ করে খাদ্য সংগ্রহে তার অদক্ষতার বিষয়টি। অথবা হয়তো ছোট লেজের পুরুষরা খুব বেশী দক্ষ না শিকারী প্রাণীদের আক্রমণ থেকে পালানোর জন্য সে কারণেই তাদের লেজ হয়তো কোন শিকারী প্রাণীর কামড়ের শিকার হয়েছে। লক্ষ করুন আমাদের অবশ্যই এমন কোনো ধারণা করতে হবে না যে ‘ছোট-লেজ’ বৈশিষ্ট্যটাই জিনগতভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হতে হবে, শুধুমাত্র এটি কোনো জিনগত দূর্বলতা প্রকাশের কোনো চিহ্ন হতে পারে। তবে যাই হোক, যেকোনো কারণে আসুন আমরা মনে করে নেই কোনো পূর্বসূরি বার্ড অব প্যারাডাইজ প্রজাতির স্ত্রী সদস্যরা তাদের সঙ্গী হিসাবে গড়পড়তা লেজের চেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের লেজ বিশিষ্ট পুরুষদের তাদের প্রজনন সঙ্গী হিসাবে বেশী শ্রেয়তর মনে করেছিল। তবে শর্ত হচ্ছে লেজের দৈর্ঘ্যের তারতম্যের কারণ হিসাবে সেখানে জিনের কিছু অবদান থাকতে হবে, যা সময়ের সাথে জনগোষ্ঠীতে পুরুষ সদস্যদের গড়পড়তা লেজের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হবার কারণ হবে। স্ত্রী সদস্যরা শুধুমাত্র একটি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করে; সব পুরুষদের ভালো করে লক্ষ করতে হবে, এবং যার সবচেয়ে দীর্ঘ লেজ আছে শুধু তাকে সঙ্গী করতে হবে। যখনই কোনো স্ত্রী সদস্য এই আইন থেকে সরে আসে তারা শাস্তি পায়, এমনকি যখন পুরুষদের লেজ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট লম্বা হয়ে গেছে, যা এর বাহক পুরুষের জন্য রীতিমত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হচ্ছে কোনো স্ত্রী সদস্য যদি লম্বা লেজের পুত্রের জন্ম না দেয় তাহলে তার ছেলেদের আকর্ষণীয় হবার সম্ভাবনা কম, নারীদের কাপড়ের ফ্যাশনের মত বা আমেরিকার গাড়ির ডিজাইনের মত, লম্বা লেজের প্রবণতা তাই ক্রমেই তার নিজস্ব গতিতে গতিশীল হয়। এটা তখনই বন্ধ হয় যখন লেজগুলো আকারে এত বেশী অদ্ভুতদর্শন ও বড় হয়, যে তাদের আকারের এই অসুবিধা, এর কারণে যৌন-আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার সুবিধার চেয়েও বড় হয়।
সত্যিকারভাবে বোঝার জন্য এটা বেশ কঠিন একটি ধারণা এবং এটি বহু সন্দেহবাদীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, ‘যৌন নির্বাচন নামের অধীনে যখন ডারউইন প্রথম এটি প্রস্তাব করেছিলেন। যারা বিশ্বাস করেননি তাদের একজন হচ্ছেন, এ. জাহাবী, যার ‘ফক্স,ফক্স’ তত্ত্ব আমার ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। তিনি তার নিজের উন্মত্ততার সাথেই একটি প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাখ্যা হিসাবে বিপরীত একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন: “হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপাল’ (৬)। তিনি দেখিয়েছিলেন সেই বাস্তব সত্যটি যে, স্ত্রী সদস্যদের পুরুষদের মধ্যে ভালো জিনের সন্ধান করা প্রচেষ্টাটি পুরুষদের ছলনার আশ্রয় নেবার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়। শক্তিশালী মাংসপেশী হয়তো স্ত্রী সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য সত্যিকারভাবে কোনো ভালো গুণ হতে পারে, কিন্তু তাহলে পুরুষদের কোন জিনিসটি বাধা দিচ্ছে মিথ্যা মাংসপেশী তৈরী করা থেকে, যার আসলেই কোনো শক্তি নেই, মানুষের প্যাড দিয়ে বানানো কাঁধের মত এমন কিছু? পুরুষের জন্য সত্যিকারের মাংসপেশীর বদলে মিথ্যা মাংসপেশী সৃষ্টি করা যদি বেশী ব্যায়সাধ্য কোনো বিষয় না হয়, যৌন নির্বাচন তাহলে সেই সব জিনগুলো নির্বাচন করবে যারা মিথ্যা মাংসপেশী তৈরী করে। তবে খুব বেশী সময় অপেক্ষা করতে হবে না যদিও বিপরীতমুখী-নির্বাচন স্ত্রী সদস্যদেরও বিবর্তনে সহায়তা করবে, যারা এই ছলনাটি ধরতে ক্রমেই আরো সক্ষম হয়ে উঠবে। জাহাবীর মূল প্রস্তাবটি হচ্ছে এধরনের ছদ্ম যৌন বিজ্ঞাপন একসময় স্পষ্টভাবে স্ত্রী সদস্যরা শনাক্ত করতে পারবে। সে কারণে তিনি উপসংহারে পৌঁছান যে সত্যিকারের সফল পুরুষরা হবে তারা, যারা মিথ্যা কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করবে না, যারা খুব স্পষ্টভাবে অনুভব করা সম্ভব এমন কোনো উপায়ে জানান দেবে, তারা কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেয়নি। যদি আমরা শক্তিশালী মাংসপেশী নিয়ে কথা বলি, তাহলে যে পুরুষরা শুধুমাত্র শক্তিশালী মাংস আছে বলে এমন একটি চোখে পড়ার মত ভান করে, সেটি খুব শীঘ্রই স্ত্রী সদস্যরা শনাক্ত করতে পারবে। কিন্তু কোনো একটি পুরুষ, ভার উত্তোলন বা একাগ্রচিত্তে অনুশীলন করার সমতুল্য কিছু প্রদর্শন করে, সে সফল হয় স্ত্রী সদস্যদের মনে ভরসা জাগাতে। অন্যার্থে জাহাবী বিশ্বাস করেন যেকোনো একটি ‘হি-ম্যান’ আপাতদৃষ্টিতে শুধুমাত্র ভালো গুণাবলী সম্পন্ন পুরুষ হলে চলবে নাঃ তাকে সত্যিকারভাবে ভালো গুণের পুরুষ হতে হবে, নতুবা কোনো সন্দেহবাদী স্ত্রী সদস্য দ্বারা সে সেভাবে গৃহীত হবে না। প্রদর্শনী সে কারণে বিবর্তিত হয়, শুধুমাত্র কোনো সত্যিকারের ‘হি-ম্যান’ যা প্রদর্শন করতে পারে।
এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে, এরপর আসে জাহাবীর তত্ত্বটির সেই অংশ যা গলায় কাটার মত বাঁধে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, পুরুষ বার্ডস অব প্যারাডাইজ এবং ময়ুরের লেজের পালক, হরিণের বিশাল অ্যান্টলার বা শিঙ এবং অন্য যৌন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত বৈশিষ্ট্যগুলো যা সবসময়ই মনে হয়েছে ধাঁধার মত কারণ তারা আপাতদৃষ্টিতে তাদের বাহকের জন্য প্রতিবন্ধকতা স্বরুপ প্রতীয়মান হয়, এবং তারা বিবর্তিত হয়, সুনির্দিষ্টভাবে যার কারণ তারা আসলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী। একটি পুরুষ পাখির লম্বা, ঝামেলাময় লেজ হচ্ছে স্ত্রী পাখিদের প্রদর্শন করার জন্য যে সে শক্তিশালী একজন ‘হি ম্যান’ এবং তার এই সমস্যা সৃষ্টিকারী লেজ থাকা সত্ত্বেও সে বেঁচে থাকতে পারে। কোনো একজন স্ত্রী সদস্যর কথা ভাবুন যে দুটি পুরুষ সদস্যের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণ করছেন। যদি তারা দুজনে একই সময়ে দৌড়ের শেষ সীমা অতিক্রম করে, এবং তাদের একজন যদি নিজেকে পরিকল্পিতভাবে ভারাক্রান্ত করে তার পিঠে এক বস্তা কয়লাসহ, স্ত্রী সদস্যটি খুব স্বাভাবিকভাবে সেই উপসংহারে পৌঁছাবে যে ভারী বোঝা সহ পুরুষটি সত্যিকারভাবে দ্রুত দৌড়াতে পারে।
আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করিনা, যদিও আমি আমার সন্দেহবাদিতার উপর তেমন বেশী আত্মবিশ্বাসও ধারণ করিনা, যেমনটি ছিল যখন আমি প্রথমবারের মত এটি শুনেছিলাম। সেই সময় আমি যে বিষয়টি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম সেটি হচ্ছে, এর যৌক্তিক উপসংহার হবে, সেই সব পুরুষের বিবর্তন হবে যাদের শুধুমাত্র একটি পা আর একটি চোখ থাকবে। জাহাবী, যিনি এসেছেন ইসরায়েল থেকে, সাথে সাথেই উত্তর দিয়েছিলেন: “আমাদের বেশ কিছু সেরা সেনাপ্রধানদের শুধুমাত্র একটি চোখ আছে! যাই হোক, যে সমস্যা রয়ে যায় সেটি হচ্ছে ‘হ্যান্ডিক্যাপ’ তত্ত্বটি আপাতদৃষ্টে একটি মৌলিক স্ববিরোধিতা ধারণ করে। যদি হ্যান্ডিক্যাপ বা প্রতিবন্ধকতাটি সত্যিকারের হয়– এবং এই তত্ত্বটি মূল বিষয়টি হচ্ছে এটি অবশ্যই সত্যি হতে হবে– তাহলে সেই প্রতিবন্ধকতাটি নিজেই উত্তরসুরীদের সমস্যা সৃষ্টি করবে নিশ্চিৎভাবে, ঠিক যেমন ভাবে এটি স্ত্রী সদস্যদের আকৃষ্ট করে। যে কোনো ক্ষেত্রেই, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিবন্ধকতাটি অবশ্যই যেন তাদের কন্যাদের মধ্যে হস্তান্তরিত না হয়।
আমরা যদি হ্যান্ডিক্যাপ তত্ত্বটিকে জিনের ভাষায় পুনবর্ণনা করি, আমরা এমন কিছু পাই: কোনো একটি জিন যা কোনো পুরুষের শরীরে একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, যেমন, লম্বা লেজ, তাদের সংখ্যা জিন পুলে সংখ্যায় বাড়তে থাকে কারণ স্ত্রী সদস্যরা সেই সব পুরুষদের বাছাই করে যাদের এই প্রতিবন্ধকতাটি আছে। স্ত্রী সদস্যরা সেই সব পুরুষদের পছন্দ করে কারণ যে জিনগুলো স্ত্রী সদস্যদের বাধ্য করে এভাবে বাছাই করতে তাদের সংখ্যাও জিন পুলে সংখ্যায় বাড়ে। এর কারণ প্রতিবন্ধকতার কোনো বৈশিষ্ট্যসহ পুরুষদের বাছাই করার রুচি সম্পন্ন স্ত্রী সদস্যরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য সব পুরুষদের বাছাই করে যাদের অন্যান্য ক্ষেত্রে ভালো জিন আছে, কারণ তাদের সেই প্রতিবন্ধকতা সত্তেও সেই সব পুরুষরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া টিকে আছে। এই সব অন্যান্য ‘ভালো’ জিনগুলো উত্তরসূরী সন্তানদের শরীরে উপকারে আসবে, সুতরাং সেটি টিকে থাকবে সেই জিনগুলোর বিস্তারে যারা প্রতিবন্ধকতার কারণ এবং সেই সাথে সেই সব জিনগুলো যা এই প্রতিবন্ধকতাসহ পুরুষদের নির্বাচন করতে সহায়তা করে। যদি ধরে নেয়া হয় প্রতিবন্ধকতার জিন তার প্রভাব খাটায় শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের উপর, ঠিক যেমন করে যৌন সঙ্গী নির্বাচনের সময় প্রতিবন্ধকতা বাছাই এর জিন কাজ করে শুধু মাত্র কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে, এই তত্ত্বটি হয়তো কাজ করার উপযোগী হতে পারে। যতক্ষণ এটি শুধুমাত্র শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আমরা নিশ্চিৎ হতে পারিনা এটি কাজ করবে কি করবে না সে ব্যাপারে। আমার আরো বেশী ভালো একটি ধারণা পাই এমন কোনো তত্ত্ব কতটা সম্ভাব্য হতে পারে যখন আমরা এটিকে ব্যাখ্যা করি গাণিতিক মডেলের ভাষায়। এ পর্যন্ত গাণিতিক জিনতত্ত্ববিদরা যারা চেষ্টা করেছিলেন হ্যান্ডিক্যাপ মূলনীতিকে কাজ করানোর জন্য একটি সম্ভাব্য মডেল হিসাবে, সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ হয়তো এটি কর্মোপযোগী মূলনীতি নয় বা এর কারণ হতে তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান নন। তাদের একজন হচ্ছেন মেনার্ড স্মিথ, এবং আমার ধারণা আগের সম্ভাবনাটাই ঠিক।
যদি কোনো পুরুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করতে পারে অন্য সব পুরুষের সাথে এমনভাবে যেখানে পরিকল্পিতভাবে তার নিজেকে কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়না, কেউই সন্দেহ করতে পারবে না যে, এভাবে সে তার জিনগত সাফল্য বাড়াতে পারে। এভাবে এলিফ্যন্ট সিলরা তাদের হারেম জয় করে এবং তার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে, স্ত্রী সদস্যদের কাছে নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার মাধ্যমে না বরং শুধুমাত্র আরো দ্রুত একটি উপায় ব্যবহার করে, আর সেটি হচ্ছে হারেম দিকে নজর দেয়া বা দখল করতে আসা সব পুরুষদের সাথে লড়াই করে তাদের দুরে হটিয়ে দেয়া। হারেমের মালিকরাই সাধারণত হারেম দখল করতে আসা পুরুষদের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করে। দখল করতে আসারা প্রায়শই তাদের যুদ্ধে জিততে পারেনা, কারণ তারা যদি জেতার জন্য যোগ্যই হতো, বহু আগেই তারা সেটি করতো। কোনো স্ত্রী সদস্য যারা শুধুমাত্র হারেমের মালিকের সাথে প্রজনন করে, সে এভাবেই তার জিনগুলোর সাথে এমন একটি পুরুষের জিনের সাথে মিত্রতা তৈরী করে যে পুরুষ যথেষ্ট শক্তিশালী, জনগোষ্ঠীর বাড়তি আর মরিয়া হয়ে ওঠা প্রজনন অসফল পুরুষ সদস্যদের ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে তার হারেম রক্ষার্থে। ভাগ্য ভালো হলে তার পুত্ররাও তার বাবার হারেম দখলে রাখার ক্ষমতা উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কোনো একটি স্ত্রী এলিফ্যান্ট সীলের খুব বেশী কিছু বাছাই করার ক্ষমতা থাকে না, কারণ হারেমের মালিক পুরুষ সীল তাকে আক্রমণ করে যখনই সে হারেমের মালিক ছাড়া এর বাইরে কোনো পুরুষের সাথে প্রজনন করার চেষ্টা করে। সেই মূলনীতিটা অপরিবর্তিত থাকে– যদিও স্ত্রী সদস্যরা, যারা এমন কোনো পুরুষের সাথে মিলিত হতে চায় যারা দ্বন্দ্বে জয় লাভ করে, তারা সেটা করার মাধ্যমে হয়তো তাদের জিনকেই সহায়তা করে। আমরা যেমনটা দেখেছি, উদাহরণ আছে যেখানে স্ত্রী সদস্যরা সেই সব পুরুষদের সাথে মিলিত হতে চায় যারা কোনো এলাকার উপর নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে এবং সেই সব পুরুষদের সাথে যারা প্রাধান্য বিস্তারের ক্রমবিন্যাসের পরম্পরায় উপরে কোনো স্তরে অবস্থান করে।
এই পর্যন্ত এই অধ্যায়টিতে যা আলোচনা করেছি তার একটি সংক্ষেপ রুপ দেবার চেষ্টা করি। বিভিন্ন ধরনের প্রজনন পদ্ধতি যা আমার বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে লক্ষ্য করি– একগামী, বহুগামিতা, হারেম পদ্ধতি এবং ইত্যাদি আরো অনেক কিছু– সেগুলো বোঝা সম্ভব হবে স্ত্রী ও পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের ভাষায়। তাদের জীবদ্দশায় দুই লিঙ্গের সদস্যরাই ‘চায়’ মোট প্রজনন সাফল্যতা যতটা সম্ভব ততটা সফল করার চেষ্টা করতে। শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর আকারে ও সংখ্যায় মৌলিকভাবে বৈষম্য থাকার কারণে, পুরুষদের সাধারণভাবে প্রবণতা থাকে বহুগামী হবার এবং প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পিতা হিসাবে সন্তান প্রতিপালনে অংশগ্রহন না করার। এর বিরুদ্ধে স্ত্রী সদস্যদের দুটি পাল্টা কৌশল আছে, যাদের আমি উল্লেখ করেছি– ‘হি-ম্যান’ এবং ‘ডোমেস্টিক ব্লিস’ কৌশল হিসাবে। কোনো একটি প্রজাতির পরিবেশগত পরিস্থিতি নির্ধারণ করে এই দুটি পাল্টা কৌশলের মধ্যে কোনটিকে স্ত্রী সদস্যরা বেছে নিবে, বা কোনটি বেছে নেবার প্রতি তাদের প্রবণতা থাকবে এবং একইভাবে এটি নির্ধারণ করবে পুরুষরা কিভাবে এর প্রত্যুত্তর দেবে। বাস্তব ক্ষেত্রে হি-ম্যান এবং ডোমেস্টিক ব্লিস স্ট্রাটেজীর মাঝামাঝি সব অবস্থাই খুঁজে পাওয়া যায়, যেমন আমরা দেখেছি, এমনও অনেক ক্ষেত্র যেখানে পিতারা মায়েদের চেয়ে অনেক বেশী সন্তানের যত্ন নেয়। এই বইটি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রাণী প্রজাতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সাথে সংশ্লিষ্ট না বিধায় আমি আলোচনা করবো না, কোন বিষয়টি একটি প্রজাতিকে কোনো একটির বদলে বরং অন্য একটি বিশেষ প্রজনন কৌশলের দিকে প্ররোচিত করার ক্ষেত্রে ভুমিকা পালন করে। এর পরিবর্তে আমি বরং আলোচনা করবো সেই পার্থক্যগুলো যা আমরা সাধারণভাবে দেখি স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে এবং দেখাতে চাই কিভাবে সেই পার্থক্যগুলো ব্যাখ্যা দেয়া যায়। সেকারণে আমি সেই প্রজাতির উপর বেশী গুরুত্বারোপ করবো না যে প্রজাতিতে দুই লিঙ্গর মধ্যে পার্থক্য সামান্য, এবং সাধারণভাবে এই প্রজাতিগুলো হচ্ছে সেগুলো যাদের স্ত্রী সদস্যরা ‘ডোমেস্টিক ব্লিস’ স্ট্রাটেজী প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে।
প্রথমত, সাধারণত পুরুষদের দেখা যায় যৌন আকর্ষণীয় রুপে, উজ্জ্বল চটকদার রঙের, এবং স্ত্রী সদস্যদের সাদামাটা অনুজ্জ্বল রঙের হবার প্রবণতা আছে। দুই লিঙ্গের সদস্যরাই চেষ্টা করে কোনো শিকারী প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে, এবং কিছুটা বিবর্তনীয় চাপ থাকে দই লিঙ্গর উপরেই তার রঙ যেন অনজ্জ্বল হয়। উজ্জ্বল রঙ সহজেই শিকারী প্রাণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, যা কোন অংশেই কম নয়, যেমন করে সেই একই রঙ যৌন সঙ্গীকে আকর্ষণ করে। জিনের ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে অনুজ্জ্বল রঙের জিনগুলোর তুলনায়, উজ্জ্বল রঙের জন্য জিনগুলোর শিকারী প্রাণীদের পেটের মধ্যে শেষ হবার অনেক বেশী সম্ভাবনা থাকবে। আবার অন্যদিকে, অনুজ্জ্বল রঙের জন্য জিনগুলো উজ্জ্বল রঙের জিনগুলোর চেয়ে পরবর্তী প্রজন্মের শরীরে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষাকৃত কম সম্ভাবনা থাকবে। কারণ, অনুজ্জ্বল রঙের সদস্যদের প্রজনন সঙ্গী আকর্ষণ করতে বেশ কঠিন সমস্যা হবে। সুতরাং এখানে দুটি সাংঘর্ষিক নির্বাচনী চাপের উপস্থিতি আছে: শিকারী প্রাণীরা উজ্জল রঙের জিনগুলো জিনপুল থেকে সরিয়ে দেবে আর প্রজনন সঙ্গীদের অনুজ্জ্বল রঙের জিনগুলো জিনপুল থেকে সরিয়ে দেবার প্রবণতা থাকবে। এবং আরো অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতই, সফল দক্ষ সারভাইভাল মেশিনকে গন্য করা যেতে পারে এই দুটি সাংঘর্ষিক নির্বাচনী চাপের একটি সমঝোতা হিসাবে। আমাদের যা আগ্রহী করে তুলছে এই মুহূর্তে সেটি হচ্ছে, কোনো পুরুষের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সমঝোতাটি কোনো স্ত্রী সদস্যদের জন্য সবচেয়ে অনুকূল সমঝোতা থেকে ভিন্ন হবে। এবং এটি পুরোপুরিভাবে পুরুষ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির– বেশী ঝুঁকি নেওয়া, বেশী লাভের জন্য জুয়া খেলা– সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কারণ একটি পুরুষ সদস্য, স্ত্রী সদস্যের তৈরী প্রতিটি ডিম্বাণু প্রতি বহু মিলিয়ন শুক্রাণু তৈরী করে, শুক্রাণুর সংখ্য খুব স্পষ্টভাবে ডিম্বাণুর চেয়ে অনেক বেশী। কোনো শুক্রাণুর চেয়ে যেকোনো ডিম্বাণুর সেকারণেই যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় কোনো শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ডিম্বাণু অপেক্ষাকৃতভাবে মূল্যবান একটি সম্পদ এবং সেকারণে কোনো স্ত্রী সদস্যদের বেশী যৌন আকর্ষণীয় হবার কোনো প্রয়োজন নেই, যতটা না কোনো পুরুষ সদস্যের কোনো স্ত্রী সদস্যের ডিম্বাণু নিষিক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিৎ করার জন্য দরকার। কোনো একটি পুরুষ পুরোপুরিভাবে দক্ষ একটি বড় স্ত্রী সদস্যেদের জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সন্তানের জন্মদাতা হবার জন্য, এমনকি যদি কোনো পুরুষের জীবন সংক্ষিপ্তও হয় কারণ যার হয়তো চোখে পড়ার মত উজ্জ্বল লেজ শিকারী পাণীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বা কোনো ঝোঁপের মধ্যে আটকে যায়, তারও মৃত্যুর আগে বহু সংখ্যক সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। একজন অনাকর্ষণীয় অনুজ্জ্বল পুরুষ হয়তো বেঁচে থাকতে পারে কোনো একটি স্ত্রী সদস্যদের মত লম্বা সময়, কিন্তু তার সন্তান সংখ্যা কম হবে, তার জিনগুলো হস্তান্তরিত হবে না। সেই পুরুষটির কি লাভ হবে যদি সে সারা পৃথিবী লাভ করে কিন্তু তার অমর জিনগুলো হারায়?
আরেকটি খুব সাধারণ লিঙ্গ পার্থক্য হচ্ছে স্ত্রী সদস্যরা অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী বাছবিচার করে তারা কার সাথে প্রজনন করবে সে বিষয়ে। যেকোনো লিঙ্গের কোনো একজন সদস্যের এই বাছবিচার করার কারণগুলোর একটি হচ্ছে অন্য কোনো প্রজাতির সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়া কোনো সম্ভাবনাকে এড়ানোর প্রয়োজন আছে। এই ধরণের মিশ্র প্রজাতি সৃষ্টি বা হাইব্রিডাইজেশন খুব ভালো ঘটনা নয় নানা কারণে। কখনো, যেমন কোনো একটি মানুষ যদি ভেড়ার সাথে প্রজনন করে, সেই প্রজননের কারণে যদি কোনো ভ্রূণ উৎপাদন না হয়, খুব বেশী কিছু ক্ষতি হয়না। যখন আরো নিকটবর্তী সম্পর্কযুক্ত দুটি প্রজাতির মধ্যে প্রজনন ঘটে, যেমন ঘোড়া আর গাধার সঙ্কর। তবে এর মূল্য, অন্ততপক্ষে কোনো স্ত্রী সঙ্গীর কাছে, অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। একটি মিউল প্রাণ তৈরী হতে পারে যারা তার জরায়ুটিকে এগারো মাস দখল করে রাখে। সম্পূর্ণ পিতামাতার বিনিয়োগের একটি বড় অংশ এটি দখল করে রাখে, শুধু মাত্র খাদ্য রুপে না, যা প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে শোষিত হয় বিকাশমান ভ্রূণের শরীরে এবং পরে দুধ রুপে, কিন্তু সর্বোপরি সেই সময় হিসাবে যা সে ব্যায় করতে পারতো নিজের অন্য সন্তান প্রতিপালন করে। এবং তারপর যখন মিউল প্রাপ্তবয়স্ক হয়, দেখা যায় সে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। এর কারণ সম্ভবত, যদিও ঘোড়ার ক্রোমোজোম এবং গাধার ক্রোমোজোম যথেষ্ট পরস্পর সদৃশ যে একটি ভালো শক্তিশালী মিউল শরীর গড়ে তুলতে তারা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা করে, কিন্তু কোনো মাইওসিসের সময় সঠিকভাবে কাজ করার জন্য তারা যথেষ্ট পরিমান সদৃশ্য নয়। সঠিক কারণ যাই হোক না কেন, উল্লেখযোগ্য পরিমান বিনিয়োগ যা কোনো মা একটি মিউলকে প্রতিপালন করার জন্য করে থাকে সেটি তাদের জিনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুরোপুরিভাবে অপচয়। স্ত্রী ঘোড়ারা খুব বেশী সতর্ক থাকে যে তারা যে পুরুষ সদস্যটির সাথে প্রজনন করছে, সে তার প্রজাতির অন্য একটি ঘোড়া, এবং কোনো ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী যেমন, গাধা নয়। জিনের ভাষায়, কোনো ঘোড়ার জিন যা বলে, ‘শরীর, তুমি যদি স্ত্রী সদস্য হও, তাহলে যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে প্রজনন করো, যে ঘোড়া হোক কিংবা গাধা, সেই জিনটি তার নিজেকে আবিস্কার করবে কোনো একটি মিউলের শরীরে, যেখানে তার যাত্রার শেষ, সেটি কোনো উত্তরসূরীর শরীরে হস্তান্তরিত হয়না। এবং কোনো শিশু মিউলের প্রতিপালনের জন্য ব্যয় হওয়া মায়ের ‘প্যাটারনাল ইনভেস্টমেন্ট বা প্রতিপালনের বিনিয়োগ তার উর্বর প্রজননক্ষম ঘোড়া প্রতিপালনের ক্ষমতাকে ভয়ঙ্করভাবে খর্ব করে। একটি পুরুষ, অন্যদিকে, তার হারাবার খুব অল্প কিছু আছে যদি সে ভুল প্রজাতির কোনো সদস্যের সাথে প্রজনন করে এবং যদিও তাদের কোনো কিছু লাভ করার সম্ভাবনা নেই, আমাদের প্রত্যাশা করা উচিৎ পুরুষরা তাদের যৌন সঙ্গী বাছাই করার ক্ষেত্রে কম বাছবিচার করে। যেখানে এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, সেখানে এটিকে সত্য হিসাবে পাওয়া গেছে।
এমনকি কোনো একটি প্রজাতির মধ্যে, অনেক কারণ হয়তো থাকতে পারে খুঁতখুঁতে হবার জন্য, নিকটবর্তী আত্মীয়তার সম্পর্কযুক্ত সদস্যদের মধ্যে প্রজননের ক্ষেত্রে, হাইব্রিডাইজেশন বা সংকরীকরণের মত, ক্ষতিকর জিনগত পরিণতি হবার সম্ভাবনা থাকে। এই ক্ষেত্রে প্রাণনাশী (লিথালী অথবা প্রায় প্রাণনাশী রিসেসিভ বা প্রচ্ছন্ন জিনগুলো তাদের পূর্ণশক্তিতে উন্মোচিত হবার সম্ভাবনা থাকে। আরো একবার, পুরুষ সদস্যদের চেয়ে স্ত্রী সদস্যদের হারাবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী, যেহেতু কোনো একটি নির্দিষ্ট সন্তানের প্রতি তাদের বিনিয়োগ বেশী হবার প্রবণতা থাকে। যেখানে অজাচার বা ইনসেস্টের প্রতিষিদ্ধতার অস্তিত্ব আছে, আমাদের প্রত্যাশা করা উচিৎ পুরুষ সদস্যদের চেয়ে স্ত্রী সদস্যরা কঠোরভাবে সেই বিধিনিষেধ মেনে চলে। যদি আমরা মনে করি কোনো একটি অজাচারের সম্পর্কের বয়োজ্যেষ্ঠ সঙ্গীটি সক্রিয় সূচনাকারী হবার সম্ভাবনা থাকে, আমাদের প্রত্যাশা করা উচিৎ যে অজাচারী সম্পর্ক যেখানে পুরুষটি তার স্ত্রী সঙ্গী অপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ, সেই উদাহরণগুলোই বেশী নজরে পড়বে সেই সব সম্পর্কের চেয়ে, যেখানে পুরুষ সঙ্গীর চেয়ে স্ত্রী সদস্যটি বয়োজ্যেষ্ঠ। যেমন পিতা/কন্যার অজাচার অনেক বেশী দেখা যাবে মাতা/পুত্র অজাচারের তুলনা, এর মাঝামাঝি দেখা যাওয়া উচিৎ ভাই/বোন এর অজাচার।
সাধারণভাবে কোনো স্ত্রী সদস্যদের তুলনায় পুরুষদের বহুগামী হবার প্রবণতা থাকা উচিৎ; যেহেতু কোনো স্ত্রী সদস্য সীমিত সংখ্যক ডিম্বাণু তৈরী করে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে, বিভিন্ন পুরুষের সাথে বহু সংখ্যকবার প্রজনন করার ক্ষেত্রে তার খুব সামান্যই লাভ করার আছে। কোনো একটি পুরুষ অন্যদিকে যে প্রতিদিন মিলিয়ন সংখ্যক শুক্রাণু তৈরী করে, তার বহু লাভ করার আছে যত সংখ্যক সম্ভব, কোনো বাছবিচার ছাড়াই সে যতটুকু পারে তত সংখ্যকবার প্রজনন করলে। অতিরিক্ত প্রজনন হয়তো আসলে কোনো স্ত্রী সদস্যকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করেনা, শুধুমাত্র সময় আর শক্তির অপচয় ছাড়া, কিন্তু সেগুলো ইতিবাচকভাবে তার জন্য ভালো কিছু করেনা। অন্যদিকে কোনো পুরুষ যতবার সম্ভব ততবার ভিন্ন ভিন্ন স্ত্রী সদস্যের সাথে প্রজননের সংখ্যা কখনোই যথেষ্ট হয়নাঃ পুরুষের কাছে অতিরিক্ত শব্দটা কোন অর্থ বহন করেনা।
আমি সুস্পষ্টভাবে শুধুমাত্র মানুষের কথা বলিনি, কিন্তু অবশ্যম্ভাবীভাবে যখন আমরা এই অধ্যায়ে উল্লেখিত বিবর্তনীয় যুক্তিগুলো নিয়ে ভাবি, আমরা আমাদের নিজেদের প্রজাতি এবং আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা না ভেবে পারি না। নারীদের সঙ্গমে বিরত থাকা যতক্ষণ না কোন পুরুষ দীর্ঘ মেয়াদী বিশ্বস্ততার কোনো প্রমাণ দিচ্ছে এই ধারণাটি আমাদের কাছে পরিচিত মনে হয়। এটি হয়তো প্রস্তাব করে যে মানব নারী ‘ড্ডামেস্টিক ব্লিস’ কৌশল অবলম্বন করে ‘হি-ম্যান’ কৌশলের চেয়ে। বহু মানব সমাজ বাস্তবিকভাবে একগামী। আমাদের নিজেদের সমাজে, পিতামাতার যৌথ বিনিয়োগ অনেক বিশাল এবং আবশ্যিকভাবে ভারসাম্যহীন নয়। মায়েরা নিশ্চিৎভাবে তাদের সন্তানের জন্য অনেক বেশী সরাসরি কাজ করে তাদের বাবাদের তুলনায়, কিন্তু বাবা প্রায়শই কাজ করে পরোক্ষভাবে আবশ্যিক বস্তুগত সম্পদের যোগান নিশ্চিৎ করার জন্য যা সন্তানদের প্রতিপালনে ব্যয় হয়। অন্যদিকে কিছু মানব সমাজ বহুগামী, এবং অনেকগুলোই হারেম নির্ভর। এই বিস্ময়কর বিচিত্রতার উপস্থিতি প্রস্তাব করে যে, মানুষের জীবনাচারণ প্রধানত নির্ধারিত হয় জিন নয় বরং সংস্কৃতির দ্বারা। তা সত্ত্বেও এটি এখনও সম্ভব যে মানব পুরুষের বহুগামী হবার একটি সাধারণ প্রবণতা আছে এবং স্ত্রী সদস্যদের একগামী হবার প্রবণতা আছে, যেমনট আমরা বিবর্তনীয় ব্যাখ্যার মূল তত্ত্বের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি। এবং এই দুটি প্রবণতার নির্দিষ্ট কোনটি প্রাধান্য বিস্তার করবে তা নির্ভর করছে সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির মধ্যে, ঠিক যেমনটি ঘটে বিভিন্ন প্রজাতিতে, যখন এটি নির্ভর করে পরিবেশগত পরিস্থিতির উপর।
আমাদের নিজেদের সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য যা মনে হয় সুস্পষ্টভাবে অসঙ্গতিপুর্ণ, সেটি হচ্ছে যৌন বিজ্ঞাপনের বিষয়টি। যেমনটি আমরা দেখেছি, বিবর্তনীয় ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করেই খুব দৃঢ়ভাবেই প্রত্যাশিত যে, যেখানেই দুটি লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য দৃশ্যমান, সেখানে পুরুষদেরই বিজ্ঞাপন করা উচিৎ এবং স্ত্রী সদস্যদের যেখানে বর্ণহীন নিষ্প্রভ হবার কথা। আধুনিক পশ্চিমা মানুষরা কোনো সন্দেহ নেই এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অবশ্যই সত্যি কিছু পুরুষ জমকালোভাবে জামাকাপড় এবং কিছু নারী খুব নিষ্প্রভভাবে কাপড় পরেন, কিন্তু গড়পড়তা কোনো সন্দেহ নেই আমাদের সমাজে ময়ুরের লেজের সমতুল্য কোনো কিছু প্রকাশ করে নারীরাই, পুরুষরা নয়। নারীরা তাদের মুখে রঙ লাগায়, মিথ্যা চোখের পাপড়ি আঠা দিয়ে লাগায়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া, যেমন অভিনেতারা, পুরুষরা নয় বরং নারীদের আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারা তাদের ব্যাক্তিগত উপস্থিতি এবং চেহারা প্রতি বেশী আগ্রহী এবং তাদের সেটি করতে উৎসাহ যোগায় তাদের প্রতি নির্দেশিত নানা পত্রিকাগুলো। পুরুষদের পত্রিকাগুলো পুরুষদের যৌন আকর্ষণীয়তা নিয়ে সাধারণত বেশী ব্যস্ত থাকে না এবং কোনো পুরুষ যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী মাত্রায় আগ্রহী তার নিজের কাপড় আর চেহারা নিয়ে, সে প্রায়শই পুরুষ এবং নারী উভয়েরই সন্দেহের উদ্রেক করে। যখন কোনো নারীকে কথোপকথনে বর্ণিত করা হয়, খুবই সম্ভাবনা আছে তার যৌন আকর্ষণীয়তা বা যৌন আকর্ষণীয়তার অভাব, খুব স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হবে। এটি সত্যি, সেই বক্তা নারী কিংবা পুরুষ যেই হোক না কেন। কোনো পুরুষকে বর্ণনা করা হয়, যে বিশেষণগুলো ব্যবহৃত হয় তাদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যৌনতার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
এই সব বাস্তব সত্যগুলো মুখোমুখি হয়ে, একজন জীববিজ্ঞানী হয়তো সন্দেহ করতে বাধ্য হবেন, তিনি এমন কোন সমাজের দিকে তাকাচ্ছেন যেখানে নারীরা পুরুষদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এর বিপরীতটা অর্থাৎ পুরুষরা নারীদের জন্য দ্বন্দ্বরত নয়। বার্ড অব প্যারাডাইজের ক্ষেত্রে, আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, স্ত্রী পাখিরা বর্ণহীন নিষ্প্রভ হয় কারণ তাদের পুরষদের জন্য দ্বন্দ্ব করার কোনো প্রয়োজন নেই। পুরুষরা উজ্জ্বল বর্ণের আর সাড়াম্বর হয় কারণ স্ত্রী পাখিদের চাহিদা অনেক বেশী এবং তারা এই বাছবিচার করার ঝুঁকি নিতে পারে। আর যে কারণে স্ত্রী বার্ড অব প্যারাডাইজদের চাহিদা অনেক বেশী, তা হচ্ছে যে ডিম্বানুরা শুক্রাণু অপেক্ষা অনেক বেশী দুর্লভ একটি সম্পদ। তাহলে আধুনিক পশ্চিমা পুরুষদের সাথে কি হচ্ছে? পুরুষরা কি আসলেই বহু-কাঙ্খিত লিঙ্গে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার চাহিদা আছে, সেই লিঙ্গটি, যা বাছবিচার করার জন্য ঝুঁকি নিতে পারে? যদি তাই হয়, তার কারণটাই বা কি?
নোটস (অধ্যায় ৯)
(১) যেমন প্রায়শই ঘটে, এই শুরুর বাক্যটি অনুল্লেখিত ‘অন্য সব বিষয়গুলো যদি একই থাকে এই শর্তে বাক্যাংশটিকে গোপন করে। অবশ্যই সঙ্গীরা সহযোগিতার মাধ্যমে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে। এবং এটাকেই বার বার আমরা এই অধ্যায়ে ফিরে আসতে দেখি। কারণ সর্বোপরি, সঙ্গীদের সম্ভাবনা বেশী একটি ননজিরো সাম গেম’ খেলায় অংশগ্রহন করার, একটি গেম যেখানে উভয়েই সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের অর্জিত লাভের পরিমানকে বাড়াতে পারবে, শুধুমাত্র একজনের লাভ আবশ্যিকভাবে অন্যজনের ক্ষতি হবার বদলে (আমি এই বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছি অধ্যায় ১২ এ); বইটিতে এটাই অন্যতম একটি জায়গা যেখানে আমার বক্তব্যের সুর জীবনের নৈরাশ্যবাদী, স্বার্থপরতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বেশী ঝুঁকে পড়েছিল। সেই সময় আমার কাছে এটাই আবশ্যিক মনে হয়েছিল, কারণ প্রাণীদের প্রাক-প্রজনন আচরণ বা কোর্টশিপ সংক্রান্ত প্রচলিত প্রধান ধারণাটি ঝুঁকে ছিল এর বিপরীত দিকে। প্রায় সর্বজনীনভাবে, মানুষ কোনো নিরীক্ষা ছাড়াই ধরে নিয়েছে সঙ্গীরা অকৃপনভাবে পরস্পরের সহায়তা করবে। কোনো ধরনের শোষণ কিংবা অপব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা এমনকি বিবেচনাতেও আনা হয়নি। এই ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে আপাতদৃষ্টিতে আমার শুরুর বাক্যটির নৈরাশ্যবাদীতা বোধগম্য কিন্তু আজ হলে আমি আরো খানিকটা নমনীয় অবস্থান গ্রহন করতাম। একই ভাবে এই অধ্যায়ের শেষে মানুষের যৌনতায় তাদের ভুমিকা সংক্রান্ত আমার মন্তব্য আমার কাছে এখন মনে হয় খুব বেশী সরলভাবে এখানে শব্দচয়ন করা হয়েছিল। দুটি বই যারা মানুষের যৌনতার ও লিঙ্গ পার্থক্যগুলোর বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছে, সেগুলো হচ্ছে মার্টিন ডালি এবং মার্গো উইলসনের Sex, Evolution, and Behavior এবং ডোনাল্ড সিমন্সের The Evolution of Human Sexuality;
(২) এখন মনে হয় এটি ভ্রান্ত একটি ধারণার উদ্রেক করে, যখন আমরা লিঙ্গ ভূমিকার ভিত্তি ব্যাখ্যা করার জন্যশুক্রাণু আর ডিম্বাণুর আকার, আকৃতি আর সংখ্যার বৈষম্যের উপর গুরুত্বারোপ করি। এমনকি যদিও একটি শুক্রাণু আকারে ছোট এবং সস্তা, কিন্তু মিলিয়ন সংখ্যক শুক্রাণু বানানো এবং সেটি সফলভাবে কোনো স্ত্রী সদস্যের শরীরে সকল ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলা করে প্রবেশ করানো অবশ্যই শক্তি এবং সময়ের ব্যয়ের মাত্রায় আদৌ সস্তা কোনো ব্যাপার নয়। এখন আমি বরং নিচে বর্ণিত উপায়টি বেছে নেবো নারী পুরুষের মৌলিক অপ্রতিসাম্যটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য:
ধরুন, আমরা দুটি লিঙ্গ নিয়ে শুরু করলাম, যাদের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই, যা দিয়ে তাদের স্ত্রী কিংবা পুরুষ হিসাবে শনাক্ত করা যায়। একটি নিরপেক্ষ নাম দিয়ে তাদের আমরা উল্লেখ করি, ধরুন ‘ক’ এবং ‘খ’। আমাদের যে বিষয়টি শুধু নিশ্চিৎ করতে হবে সেটি হচ্ছে প্রতিটি প্রজনন যেন একটি ‘ক’ এবং একটি ‘খ’ এর মধ্যে ঘটে। এখন যেকোনো প্রাণী, সে ‘ক’ কিংবা ‘খ’ হোক না কেন, তাকে একটি ট্রেড অফ বা হিসাব নিকাশের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে দ্বন্দ্ব করার জন্য ব্যবহৃত সময় ও শক্তি বিদ্যমান সন্তানদের প্রতিপালনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারেনা। এবং একইভাবে সন্তান প্রতিপালনের জন্য ব্যবহৃত শক্তি সে ব্যবহার করতে পারে না কোনো দ্বন্দ্বের জন্য। প্রতিটি জীবের জন্যে এটাই প্রত্যাশিত যে তারা এই দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী চাহিদার টানাপোড়েনের মধ্যে সে তার প্রচেষ্টার একটি ভারসাম্য তৈরী করবে। যে বিষয়টি আমি বর্ণনা করতে চাইছি, সেটি হচ্ছে যে ‘ক’ রা হয়তো ‘খ’ এর ভিন্ন কোনো ভারসাম্য অর্জনের পথ বেছে নেয় এবং সেটা একবার যখন তারা বেছে নেয়, তাদের মধ্যে ক্রমশ ভিন্নতা বাড়তে থাকে।
এটা দেখার জন্য, মনে করুন যে দুটি লিঙ্গ, ‘ক’ এবং ‘খ’ রা, একে অপরের থেকে ভিন্ন, একেবারে শুরু থেকে, ভিন্নতার বিষয়টি হচ্ছে কিভাবে সন্তানের পিছনে বিনিয়োগ অথবা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে যুদ্ধ করে তারা তাদের সফলতাকে প্রভাবিত করতে পারে (আমি ‘যুদ্ধ’ কথাটা ব্যবহার করবো একই লিঙ্গের মধ্যে সবধরনের সরাসরি দ্বন্দ্বকে বোঝাতে); শুরুতে দুটি লিঙ্গর মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য, কারণ আমি যা বলতে চাইছি সেটি হচ্ছে এর একটি অন্তর্গত প্রবণতা আছে ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার। ধরুন ‘ক’রা শুরু করেছিলো সেই অবস্থা দিয়ে, যেখানে তাদের প্রজনন সাফল্যে সন্তান প্রতিপালনের আচরণের তুলনায় প্রধান অবদান রেখেছিল ‘যুদ্ধ’ ‘খ’ রা,অন্যদিকে, শুরু করে এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে সরাসরি যুদ্ধ অপেক্ষাতাদের প্রজনন সাফল্যের জন্য সন্তান প্রতিপালনের আচরণ খানিকটা বেশী ভূমিকা রেখেছিল। এর অর্থ হচ্ছে, যেমন, যদিও একজন ‘ক’ অবশ্যই লাভবান হয় প্রতিপালন আচরণের জন্য, কিন্তু ‘ক’দের মধ্যে একজন সফল প্রতিপালনকারী এবং একজন অসফল প্রতিপালনকারীর মধ্যে পার্থক্য, তাদের মধ্যে কোনো সফল যোদ্ধা এবং একজন অসফল যোদ্ধার মধ্যে পার্থক্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত। ক্ষুদ্র। ‘খ’দের মধ্যে ঠিক এর বিপরীতটাই সত্য, সুতরাং কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিমান পরিশ্রমে, কোনো একজন ‘ক’ তার নিজের জন্য উপকার করবে যুদ্ধ করার মধ্যে, তবে ‘খ’ কি তার নিজের জন্য ভালো কিছু করবে, যদি সে তার প্রচেষ্টা যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয় প্রতিপালন আচরণে।
পরবর্তী প্রজন্মগুলোয়, সেকারণে, ‘ক’রা তাদের পিতামাতা অপেক্ষা খানিকটা বেশী যুদ্ধ করবে, এবং ‘খ’রা কম যুদ্ধ করবে, এবং তাদের পিতামাতাদের চেয়ে একটু বেশী প্রতিপালনে বিনিয়োগ করবে। এখন সেরা ‘ক’ এবং সবচেয়ে খারাপ ‘ক’ এর মধ্যে পার্থক্য এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে আরো অনেক কম হবে। সুতরাং কোনো একটি ‘ক’ এমনকি আরো বেশী লাভ করবে তার প্রচেষ্টা যুদ্ধে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে, এবং এমনকি আরো কম সে লাভবান হবে প্রতিপালনের জন্য তার বিনিয়োগ প্রচেষ্টায়। এর ঠিক উল্টোটা হবে ‘খ’দের ক্ষেত্রে তাদের প্রজন্মান্তরে। মূল ধারণাটি হচ্ছে একটি সামান্য প্রারম্ভিক পার্থক্য, যা ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গদের মধ্যে থাকে সেটি স্বপ্রণোদিতভাবে বৃদ্ধি পায় : নির্বাচন শুরু করতে পারে একটি প্রারম্ভিক, সামান্য পার্থক্য দিয়ে এবং এটিকে সে ক্রমশ আরো বেশী বিশালকার পার্থক্যে রুপান্তর করে, যতক্ষণ না ‘ক’রা রূপান্তরিত হয় যাদের আমরা এখন বলি পুরুষ, এবং ‘খ’রা রূপান্তরিত হয় যাদের আমরা বলি স্ত্রী। শুরুর পার্থক্যটা হতে পারে খুব সামান্যই যা ঠিক অনির্দিষ্টভাবেই শুরু হয়েছিল। সর্বোপরি, দুই লিঙ্গের মধ্যে শুরুর পরিস্থিতি হুবহু একরকম হবার সম্ভাবনাও কম।
আপনি হয়তো লক্ষ করতে পারবেন, এটি বরং কোনো তত্ত্বের মত, পার্কার,বেকার এবং স্মিথের গবেষণায় শুরু হয়েছিল এবং ১৮৫ (মূল বইয়ে) পৃষ্ঠায় আলোচনা করা হয়েছে, যে তত্ত্বটি আদিম গ্যামেটের শুক্রাণু আর ডিম্বাণুতের বিচ্ছিন্ন হবার সূচনা পর্বটি ব্যাখ্যা করে। যে যুক্তিটি এই মাত্র উপস্থাপন করা হলো, সেটি একটি সাধারণ রুপ। লিঙ্গ নির্দিষ্ট ভুমিকাগুলোর আরো মৌলিক বিভেদে ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মধ্যে পার্থক্য হওয়া শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্র। শুক্রাণু-ডিম্বাণুর পার্থক্য প্রাথমিক হিসাবে গণ্য না করে, স্ত্রী ও পুরুষের সব বৈশিষ্ট্যসূচক গুণাবলীগুলো উৎস হিসাবে এই বিষয়টি চিহ্নিত করলে, আমরা এখন একটি যুক্তি পাবো যা ব্যাখ্যা করতে পারে। শুক্রাণু-ডিম্বাণুর পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া এবং একই ভাবে অন্যান্য বিষয়গুলোও। আমরা ধারণা করে নিয়েছিলাম যে, দুটি লিঙ্গ একে অপরের সাথে প্রজনন করবে; আমাদের ঐ সব লিঙ্গ নিয়ে আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই। শুরুর খুব সামান্য ধারণা থেকে শুরু করে, আমরা ইতিবাচকভাবে প্রত্যাশা করি যে শুরুতে এই দুটি লিঙ্গ যতটাই সমান হোক না কেন, তারা বিভাজিত হয় দুটি পৃথক লিঙ্গে যারা বিশেষায়িত হয় বিপরীত এবং সম্পূরক প্রজনন কৌশলে। শুক্রাণু আর ডিম্বাণু পার্থক্য হবার বিষয়টি আরো অনেক বেশী সাধারণ পৃথকীকরণের একটি উপসর্গ, এর কারণ নয়।
(৩) কোনো একটি লিঙ্গের মধ্যে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলের মিশ্রণ খোঁজার চেষ্টা করার এই ধারণাটি, এখন অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে গেছেন মেনার্ড স্মিথ নিজে এবং এছাড়া, অ্যালান এ্যাফেন ও রিচার্ড সিবলী স্বতন্ত্রভাবে কিন্তু প্রায় একটি দিক বরাবর বিষয়টি আরো বিস্তারিত করেছিলেন। গ্রাফেন এবং সিবলীর পেপারটি তাত্ত্বিক দিক থেকে অনেক বেশী অগ্রসর, মেনার্ড স্মিথ এর পেপারটি শব্দে ব্যাখ্যা করা অপেক্ষাকৃত সহজতর। সংক্ষেপে, তিনি শুরু করেছিলেন দুটি কৌশল বিবেচনা করে, ‘গার্ড’ এবং ডেজার্ট’ (“রক্ষা’ ও ‘পরিত্যাগ করা), এর কোনো একটিকে গ্রহন করতে পারে যেকোন লিঙ্গের সদস্যরা। আমার ‘কয়/ফাস্ট আর ফেইথফুল/ফিলাডেরার’ মডেলে যেমন হয়েছে, কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নটি হচ্ছে: পুরুষদের কোন কৌশলগুলোর মিশ্রণ, স্ত্রী সদস্যদের কোন কৌশলগুলোর মিশ্রণের বীপরিতে স্থিতিশীল? এর উত্তর সুনির্দিষ্টভাবে সেই প্রজাতির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে আমাদের প্রাক-ধারণার উপর নির্ভর করবে? মজার ব্যপার যদিও অর্থনীতি সম্বন্ধে আমাদের ধারণায় ভিন্নতা থাকতে পারে, তা সত্ত্বেও গুণবাচকভাবে ভিন্ন পরিণতিগুলো কোনো ধারাবাহিক পার্থক্যের স্তর বিন্যস্ত পরম্পরা নেই। মডেলটির প্রবণতা হচ্ছে মোট চারটি স্থিতিশীল পরিণতির যেকোনো একটিকে গুরুত্ব দেয়া। এই চারটি পরিণতিকে নামকরণ করা হয়েছে সেই প্রাণী প্রজাতির নামানুসারে যারা এই কৌশলের জন্যে উদাহরণ: ডাক (পুরুষ পরিত্যাগ করে, স্ত্রী পাহারা দেয়), স্টিকলব্যাক (স্ত্রী পরিত্যাগ করে, পুরুষ পাহারা দেয়), ফুট ফ্লাই ( উভয়ে পরিত্যাগ করে) এবং গিবন (উভয়ে পাহারা দেয়)।
এবং আরো বেশী কৌতূহলোদ্দীপক একটি বিষয় হচ্ছে এখানে, অধ্যায় ৫ থেকে মনে করে দেখুন যে ইএসএস মডেলগুলো দুটি পরিণতির যেকোনো একটিকে বেছে নেয়, দুটোই সমানভাবে স্থিতিশীল? বেশ এটি সত্যি মেনার্ড স্মিথ মডেলের ক্ষেত্রেও। যে বিষয়টি বিশেষ করে কৌতূহলোদ্দীপক সেটি হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট জোড়া, অন্য কোনো জোড়ার বীপরিতে, এইসব পরিনামগুলো যৌথভাবে স্থিতিশীল একই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে। যেমন, কিছু পরিস্থিতিতে, ‘হাস’ এবং ‘স্টিকলব্যাক’ উভয়ই স্থিতিশীল। এই দুটোর কোনটির উদ্ভব হবে সেটি নির্ভর করে ভাগ্যের উপর অথবা, আরো সুনির্দিষ্টভাবে, বিবর্তনীয় ইতিহাসের দুর্ঘটনার কারণে– প্রারম্ভিক পরিস্থিতিতে। এবং অন্য কিছু পরিস্থিতিতে, ‘গিবন’ এবং ‘ফুট ফ্লাই’ উভয়েই স্থিতিশীল। আবারো এটি হচ্ছে ঐতিহাসিক একটি দুর্ঘটনা, যা নির্ধারণ করে দুটি কৌশলের কোনটি আমরা কোন প্রজাতির মধ্যে দেখতে পাবো। কিন্তু এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যেখানে ‘গিবন’ এবং “ডাক’ যৌথভাবে স্থিতিশীল, এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যেখানে ‘ডাক’ এবং ‘ফুট ফ্লাই’ যৌথভাবে স্থিতিশীল। অনুকল এবং প্রতিকুল সমন্বয়ের ‘ইএসএস’ এর এই ‘স্টেবলমেট’ ( দ্বিগুণ কোনো শব্দ কৌতুক সৃষ্টির প্রচেষ্টা) পর্যালোচনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব আছে আমাদের বিবর্তনীয় ইতিহাস পুননির্মাণের প্রক্রিয়ায়। যেমন, এটি আমাদের প্রত্যাশা করতে প্ররোচিত করে যে প্রজনন পদ্ধতির কিছু নির্দিষ্ট ধরনের এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উত্তরণ সম্ভাব্য হবে, আর অন্যগুলো হবে অসম্ভাব্য। মেনার্ড স্মিথ এই সব ঐতিহাসিক নেটওয়ার্কগুলো পর্যালোচনা করেছিলেন প্রাণী জগতের প্রজনন পদ্ধতির একটি সংক্ষিপ্ত জরিপের মাধ্যমে, যা শেষ হয়েছিল একটি স্মরণীয় আলঙ্করিক প্রশ্নে: ‘কেন স্তন্যপায়ীদের পুরুষরা দুধ উৎপাদন করেনা?’
(৪) আমি দুঃখিত হচ্ছি বলতে যে এই প্রস্তাবনাটি ভুল। এটি ভুল একটি কৌতূহলোদ্দীপক উপায়ে, সুতরাং আমি এই ভুলটি সেখানে রেখে দিয়েছি এবং এখন কিছুটা সময় নেবে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে। এটি আসলে একই ধরনের ভুল যেমন, গেল ও ইভস, মেনার্ড স্মিথ ও প্রাইস এর মূল পেপারে শনাক্ত করেছিলেন ( মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ৯৭ র নোটটি দেখুন); আমার ভুলটি শনাক্ত করে দিয়েছিলেন অষ্ট্রিয়ায় কর্মরত দুজন গাণিতিক জীববিজ্ঞানী, পি. শুসটার এবং কে. সিগমন্ড।
‘বিশ্বাসী’ ও ‘ছলনাকারী’ পুরুষের মধ্যে এবং ‘কয়’ ও ‘ফাষ্ট’ স্ত্রী সদস্যদের অনুপাতগুলো সঠিকভাবেই আমি পরিমাপ করেছিলাম। যেখানে দুই ধরনের পুরুষই সমানভাবে সফল এবং দুই ধরনের স্ত্রী। সদস্যরা সমানভাবে সফল। আসলেই সত্যিকারভাবে এটি একটি ভারসাম্য, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি আগে থেকে যা পরীক্ষা করে দেখতে, সেটি হচ্ছে এই ভারসাম্যটি ‘স্থিতিশীল’ কি কিনা। হয়তো ভারসাম্যটি হতে পারে বিপদজ্জনক কোন ধারালো ছুরি প্রান্তে দাঁড়িয়ে, কোনো নিরাপদ উপত্যকায় না। স্থিতিশীলতার পরীক্ষা করতে গেলে, আমাদের দেখতে হবে কি ঘটতে পারে যদি আমরা ভারসাম্যটা সামান্য নাড়াচাড়া করি (ধারালো ছুরির প্রান্ত দিয়ে যদি আপনি কোনো বল ঠেলে দেন সেটি হারিয়ে যায়, কিন্তু ঠিক উপত্যকার মধ্যে দিয়ে যদি বলটি ঠেলে দেন, এটি ফিরে আসে)। আমার এই নির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক উদাহরণে, ভারসাম্যের অনুপাত পুরুষদের জন্য ছিল ৫/৮ বিশ্বাসী এবং ৩/৮ ছলনাকারী। কি হবে যদি আকস্মিকভাবে কোনো একটি জনসংখ্যায় ‘ছলনাকারী’ অংশটি ভারসাম্যকালীন পরিমানের চেয়ে খানিকটা বৃদ্ধি পায়? কোনো ভারসাম্যকে যদি স্থিতিশীল ও স্ব-সংশোধনীমূলক হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়, তাহলে আবশ্যিকভাবে ‘ছলনাকারী’ পুরুষদের তাৎক্ষণিকভাবেই খানিকটা কম সফল হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যেমনটা শুষ্টার এবং সিগমন্ড প্রদর্শন করেছিলেন, এমন কিছু ঘটছে না। বরং এর বিপরীত, “ছলনাকারী’ পুরুষরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে সফল হতে শুরু করে। জনগোষ্ঠীতে তাদের সংখ্যা, তাহলে স্বস্থিতিশীলকারী হওয়া তো দূরের করা বরং স্ব-উন্নয়নকারী। এটি বাড়তে থাকে– চিরকালের জন্য নয়, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পর্যায় অবধি। যদি আপনি মডেলটিকে গতিশীলভাবে কম্পিউটারে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করেন, যেমন, আমি এখন করেছি, আপনি তাহলে নিরন্তরভাবে একটি অনন্ত পুনরাবৃত্তি চক্র পাবেন। বিস্ময়করভাবে এটাই সেই বিশেষভাবে সৃষ্ট চক্রটি যা আমি ১৯৭-৮ (মূল বইয়ের) পৃষ্ঠায় একটি হাইপোথিসিস হিসাবে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমি সেই কাজটি করছিলাম শুধুমাত্র একটি ব্যাখ্যা করার উপযোগী একটি পন্থা হিসাবে, ঠিক যেমন আমি করেছিলাম ‘হক’ এবং “ডাভ’দের সাথে। হক’ বা ‘ডাভ’দের তুলনামূলক আলোচনায় আমি মনে করিলাম, পুরোই ভ্রান্তভাবে, এই চক্রটি শুধুমাত্র হাইপোথেটিকাল এবং পুরো সিস্টেমটি আসলেই স্থির হয় স্থিতিশীল একটি ভারসাম্যে। শুস্টার আর সিগমন্ড এর চূড়ান্ত মন্তব্যে পর আর কিছু বলার থাকে না। সংক্ষেপে আমরা দুটো উপসংহার টানতে পারি:
(ক) প্রিডেশন বা শিকারী প্রাণীর আচরণের সাথে দুই লিঙ্গের মধ্যে দ্বন্দ্বটির বেশ সদৃশ্যতা আছে এবং (খ) প্রেমিক প্রেমিকার আচরণ চাঁদের মত দৌঁদুল্যমান এবং পুর্বধারণাযোগ্য নয়, যেমন, আবহাওয়া।
অবশ্যই বিষয়টি এর আগে লক্ষ করার জন্য মানুষের কোনো অন্তরক (ডিফারেন্সিয়াল) সমীকরণের প্রয়োজন হয়নি।
(৫) মাছ নিয়ে তামসিন কার্লাইলের আন্ডারগ্রাজুয়েট হাইপোথিসিসটি এখন তুলনামূলকভাবে পরীক্ষা করে দেখছেন মার্ক রিডলী, পুরো প্রাণী জগতে পিতৃসুলভ আচরণের একটি সামগ্রিক পর্যালোচনার অংশ হিসাবে। তার পেপারটি একটি বিস্ময়কর অর্জন যা কার্লাইলের হাইপোথেসিসটির মত, এটিও শুরু হয়েছিল একটি আন্ডারগ্রাজুয়েট নিবন্ধ হিসাবে যেটা আমার জন্য লেখা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উনি এই হাইপোথিসিসটির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাননি।
(৬) আর. এ. ফিশারের যৌন নির্বাচনের ‘রান অ্যাওয়ে’ তত্ত্ব, খুব সংক্ষেপে তিনি যা উল্লেখ করেছিলেন, সেটি গাণিতিকভাবে এখন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আর, ল্যান্ড ও অন্যান্যরা। এটি রূপান্তরিত হয়েছে কঠিন একটি বিষয়ে, কিন্ত গণিতমুক্তভাষায় ব্যাখ্যা করা যায়, যদি এর জন্য যথেষ্ট পরিমান সময় দেয়া যায়। এর জন্য প্রয়োজন আসলে পুরো একটি অধ্যায়, এবং আমি পুরো একটি অধ্যায় এ বিষয়কে দিয়েছি ‘দ্য ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার’ বইটিতে (অধ্যায় ৮)। সুতরাং এখানে আমি আর বেশী কিছু বলবো না।
এর পরিবর্তে আমি যৌন নির্বাচনের একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো যা আমি আমার কোনো বইতে কখনোই যথেষ্ট বিস্তারিতভাবে আলোচনা করিনি। কিভাবে প্রয়োজনীয় প্রকরণ বা ভ্যারিয়েশনটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়? ডারউইনীয় নির্বাচন কাজ করে শুধুমাত্র যদি কাজ করার জন্যে আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমান জিনগত ভ্যারিয়েশন বা প্রকরণ থাকে সেখানে। আপনি যদি চেষ্টা করেন প্রজনন করাতে, যেমন, ক্রমেই লম্বা হওয়া কানের খরগোশের জন্য, আপনি সফল হবেন যদি শুরু থেকেই তাদের জনগোষ্ঠীতে কানের দৈর্ঘ্যের মধ্যে ভিন্নতা থাকে। বন্য জনগোষ্ঠীতে গড়পড়তা খরগোশের মাঝারী আকারের কান ছিল (খরগোশের মানদণ্ডে, আমাদের মানদণ্ডে অবশ্যই আরো বড় কান এর হবে); অল্প কিছু খরগোশ গড়পড়তা দৈর্ঘ্যের কানের চেয়ে ছোট কান থাকে, এবং কিছু কিছু খরগোশের গড়পড়তা দৈর্ঘ্যের চেয়ে লম্বা কান থাকে। শুধুমাত্র যাদের লম্বা কান আছে তাদের মধ্যে প্রজনন করালে পরের প্রজনন কানের দৈর্ঘ্য গড়পড়তা বাড়াতে আপনি সফল হবেন। কিছু সময় ধরে আপনি যদি যাদের সবচেয়ে লম্বা কান আছে তাদের মধ্যে প্রজনন করা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এমন একটা সময় আসবে যখন আর প্রয়োজনীয় বৈচিত্র্যের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের সবারই লম্বা কান থাকবে, এবং বিবর্তন ধীরে ধীরে সেখানে থমকে দাঁড়াবে। সাধারণ কোনো বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এরকম বিষয় কোনো সমস্যা নয়, কারণ বেশীরভাগ পরিবেশই একদিক বরাবর স্থির, একই মাত্রায় এবং অনড় কোনো চাপ প্রয়োগ রাখা অব্যাহত রাখে না। কোনো প্রাণীর একটি অংশের সেরা দৈর্ঘ্য সাধারণত বর্তমান গড় দৈর্ঘ্যের চেয়ে একটু বেশী দীর্ঘ হবে, বর্তমান গড়পড়তা দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন। সবচেয় ‘সেরা’ দৈর্ঘ্য খুব সম্ভবত একটি নির্দিষ্ট স্থির দৈর্ঘ্য, ধরুন তিন ইঞ্চি। কিন্তু যৌন নির্বাচনের সত্যিকারের একটি বিব্রতকর বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে নিরন্তরভাবে সম্ভাব্য সবচেয়ে অনুকুল বা সেরা দৈর্ঘ্যটি পাবার প্রচেষ্টা করা। স্ত্রী সদস্যদের ফ্যাশন আসলে পারে দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর পুরুষের কান কামনা করতে, বর্তমান জনগোষ্ঠীতে কানগুলো ইতিমধ্যে যতটাই লম্বা থাকুক না কেন। সুতরাং ভিন্নতা বা প্রকরণ আসলেই সত্যিকারভাবে শেষ হতে পারে। এবং তারপরও যৌন নির্বাচন মনে হতে পারে কাজ করছে, আমার দেখেছি অদ্ভুতভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় পুরুষের অলঙ্কারে। আমাদের মনে হতে পারে একটি ধাঁধা আছে এখানে, যাকে আমরা বলতে পারি, ‘প্যারাডক্স অব ভ্যানিসিং ভ্যারিয়েশন’ (বা ক্রমশ অপসৃয়মান প্রকরণের প্যারাডক্স)।
এই প্যারাডক্সের সমাধান হিসাবে ল্যান্ড প্রস্তাব ছিল মিউটেশন (বা পরিব্যক্তি)। তিনি মনে করেন, স্থির নির্বাচনী চাপ টিকিয়ে রাখার জন্য সবসময়ই যথেষ্ট পরিমান মিউটেশনের অস্তিত্ব থাকবে। এবং এই বিষয়টি আগে মানুষের সন্দেহ করার কারণ ছিল, কারণ তারা ‘একটি মুহূর্তে একটি করে জিন’ এর ভাষায় ভাবতেন: “প্যারাডক্স অব ভ্যানিশিং ভ্যারিশেন’-এর বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য কোনো একটি জিনগত লোকাসে মিউটেশনের হার খুবই খুব কম। ল্যান্ড আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, লেজ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো যার উপর যৌন নির্বাচন কাজ করে, অনির্দিষ্টভাবে বিশাল সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন জিন দ্বারা সেগুলো প্রভাবিত হয়– ‘পলিজিন’- যাদের সবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রভাবগুলো সব একসাথে যুক্ত হয়। উপরন্তু, যেমন জিনদের বেছে নেয়া হয় সেট হিসাবে, যা ‘লেজের দৈর্ঘ্যর’ বিভিন্নতায় প্রভাব রাখে এবং পুরনোগুলো হারিয়ে যায়। মিউটেশন এই সব বড় এবং পরিবর্তনশীল জিনের সেটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সুতরাং প্যারাডক্স অব ভ্যানিশিং ভ্যারিয়েশন নিজেই হারিয়ে যায়।
এই প্যারডক্সটি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ডাবলিউ. ডি. হ্যামিলটনের উত্তরটি ছিল ভিন্ন। তিনি এর উত্তর দিয়েছিলেন একইভাবে, ঠিক যেভাবে তিনি ইদানিং সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে থাকেন: প্যারাসাইট বা পরজীবি। আবার খরগোশের কানের কথা ভাবুন। সঙ্গতকারণে আমরা ধারণা করতে পারি খরগোশের কানের সবচেয়ে সেরা দৈর্ঘ্য শব্দ-সংক্রান্ত নানা ধরণের নিয়ামকের উপর নির্ভর করবে। প্রজন্মান্তরে এই নিয়ামকগুলো স্থির সুনির্দিষ্টভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট দিক বরাবর পরিবর্তিত হবার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। খরগোশের কানের আদর্শ দৈর্ঘ্য আসলেই হয়তো চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট কোনো ধ্রুব পরিমাপ নয়, কিন্তু তারপরও এটিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে আরো বেশী ঠেলে দিতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের খুব কমই সম্ভাবনা আছে, যা কিনা এটিকে প্রকরণের সীমানার বাইরে চলে যায়, যা বর্তমান জিন পুল সহজেই বাতিল করে দিতে পারে। সেকারণেই কোনো ভ্যানিশিং ভ্যারিয়েশনের প্যারাডক্স নেই।
কিন্তু এখন খুব সহিংসভাবে পরিবর্তনশীল পরিবেশ লক্ষ করে দেখুন, যা পরজীবিরা সৃষ্টি করে। পৃথিবী ভর্তি পরজীবির ক্ষেত্রে একটি তীব্র নির্বাচনী চাপ আছে তাদের প্রতিরোধ করার যোগ্যতা অর্জনে। প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব একক খরগোশদের সহায়তা করবে যারাই কিনা পরজীবির আক্রমণের মুখে সবচেয়ে কম ঝুঁকির মধ্যে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে সবসময়ই একই পরজীবি থাকবে। নানা ধরনের মহামারী আসবে আর যাবে। আজ হয়তো এটি মিক্সোম্যাটোসিস, পরের বছর হয়তো এটি খরগোশদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ডেথ এর সমতুল্য কোনো কিছু, এর পরের বছর হয়তো র্যাবিট এইডস এবং এভাবে চলতে থাকে। তারপর ধরুন, দশ বছরের একটি চক্রের পর এটি আবার মিক্সোম্যাটোসিস হতে পারে এবং এভাবেই চক্রটি চলতে পারে। অথবা মিক্সোম্যাটোসিস ভাইরাস নিজেই হয়তো বিবর্তিত হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে খরগোশরা যে প্রতিরোধমূলক অভিযোন গড়ে তুলেছে সেটি মোকাবেলা করতে; হ্যামিলটন একরকম ভাবে প্রতিরোধমূলক পাল্টা-অভিযোজন এবং প্রতিরোধমূলক পাল্টা-পাল্টা-অভিযোজন চক্রের দৃশ্য প্রস্তাব করেছেন, যা নিরন্তরভাবে ঘটতে থাকে সময়ের পরিক্রমায় এবং স্বেচ্ছাচারীভাবে সবচেয়ে ‘সেরা’ খরগোশের সংজ্ঞাটিকে নিরন্তর পরিবর্তন করে যেতে থাকবে।
এই সবকিছুর একটি পরিনাম হচ্ছে যে, রোগ-প্রতিরোধের জন্য অভিযোজন আর ভৌতিক পরিবেশের সাথে অভিযোজনের মধ্যে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণভাবে কিছু ভিন্নতা আছে। যদিও সেখানে মোটামুটিভাবে নির্দিষ্ট ‘সেরা’ খরগোশের পায়ের দৈর্ঘ্যের অস্তিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু যতক্ষণ রোগ-প্রতিরোধের জন্য অভিযোজন বিষয়টি প্রসঙ্গে আসে, সেখানে নির্দিষ্টভাবে ‘শ্রেষ্ঠ’ কোনো খরগোশ নেই। ঠিক যেমন করে বর্তমানে সবচেয়ে বিপদজ্জনক রোগটি পরিবর্তিত হয়, ঠিক তেমন করে সাম্প্রতিক সবচেয়ে ‘সেরা’ খরগোশের সংজ্ঞাও বদলে যায়। কিন্তু পরজীবিরাই কি শুধুমাত্র এককভাবে এমন কোনো নির্বাচনী শক্তি, যেটি এভাবে কাজ করে? শিকারী এবং শিকারী প্রাণীদের বিষয়টি বা কি, তাহলে? হ্যামিলটন একমত যে তারা আসলে সবাই মলত পরজীবির মত। তবে তারা বহু পরজীবির মত এত দ্রুত বিবর্তিত হয় না। এবং পরজীবিদেরই বেশী দেখা যায় শিকারী প্রাণী বা তার শিকারের তুলনায় জিনের বীপরিতে জিনের বিস্তারিতভাবে প্রতি-অভিযোজনে আরো দ্রুত বিবর্তিত হয়।
হ্যামিলটন এই চক্রাকারে আরোপিত চ্যালেঞ্জগুলো যা পরজীবিরা আরোপিত করে এবং এবং সেটির উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেন পুরোপুরিভাবে বিশাল একটি তত্ত্ব, কেনই বা যৌন প্রজনন ও লিঙ্গের আদৌ অস্তিত্ব আছে সেই সংক্রান্ত তত্ত্ব। কিন্তু এখানে আমরা মূলত আলোচনা করবো তার পরজীবিদের ধারণাটি ব্যবহার করে যৌন নির্বাচনের ভ্যানিশিং ভ্যারিয়েশন এর প্যারাডক্সটির সমাধান নিয়ে। তিনি বিশ্বাস করেন যে পুরুষদের বংশগত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে সবচেয়ে প্রধান মানদণ্ড, যা দিয়ে কোনো স্ত্রী সদস্য তাদের বাছাই করে। রোগব্যাধি এতটাই শক্তিশালী একটি সমস্যা যে স্ত্রী সদস্যরা আসলেই খুবই লাভবান হয় যদি তাদের কোনো ধরনের ক্ষমতা থাকে, যা দিয়ে তারা সম্ভাব্য প্রজনন সঙ্গীদের মধ্যে এটি শনাক্ত করতে পারে। কোনো স্ত্রী সদস্য যে কিনা খুব ভালো শনাক্তকারী ডাক্তার হিসাবে আচরণ করে এবং শুধুমাত্র সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান পুরুষকে তার সঙ্গী হিসাবে বেছে নেয়, সে তার সন্তানদের জন্য স্বাস্থ্যবান জিন সংগ্রহ করে। এখন, যেহেতু ‘সেরা আদর্শ খরগোশের সংজ্ঞা স্বতত পরিবর্তনশীল, সুতরাং যখন তারা কোনো পুরুষদের দিকে তাকায়, স্ত্রী সদস্যদের জন্য বাছাই করার জন্য সবসময়ই কিছু থাকবে, যা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সবসময়ই কিছু ‘ভালো’ পুরুষ আর খারাপ’ পুরুষ থাকবে। তারা সবাই একইসাথে ‘ভালো’ হবে না বহু প্রজন্মের নির্বাচনের পরেও, কারণ, ততদিনে পরজীবিরা পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং সুতরাং ভালো ‘আদর্শ খরগোশের সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হবে। একটি স্ট্রেইনের মিক্সোমা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জিন সফল হবে না পরবর্তী স্ট্রেইনের মিক্সোমা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য, যা মিউটেশনের মাধ্যমে দৃশ্যে আবির্ভূত হয়েছে। এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে, অনির্দিষ্ট সংখ্যক রোগব্যাধির চক্রের মাধ্যমে, পরজীবিরা কখনোই হাল ছাড়ে না, সুতরাং স্ত্রী সদস্যরাও হাল ছাড়তে পারেনা স্বাস্থ্যবান পুরুষদের সন্ধানে তাদের নিরন্তর অনুসন্ধানে।
কিন্তু পুরুষরা কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ডাক্তারদের মত স্ত্রী সদস্যদের দ্বারা এভাবে নিরীক্ষিত হতে? সেখানে স্বাস্থ্য ভালো এমন ভান করার জন্য কি কোনো জিন বিশেষ সুবিধা পায়? শুরুতে, হয়তোবা, কিন্তু নির্বাচন তখন স্ত্রী সদস্যদের উপর কাজ করে তাদের রোগ শনাক্তকারী দক্ষতাকে আরো শাণিত করে এবং তারা সত্যিকারের স্বাস্থ্যবানদের থেকে মিথ্যাগুলো বাদ দিতে পারে। পরিশেষে হ্যামিলটন বিশ্বাস করেন, স্ত্রী সদস্যরা এতটাই ভালো ডাক্তারে রূপান্তরিত হয় যে পুরুষরা বাধ্য হবে, তারা যদি তাদের বিজ্ঞাপন আদৌ করে থাকে, সৎভাবেই বিজ্ঞাপন করে। যদি কোনো যৌন বিজ্ঞাপন পুরুষদের মধ্যে আসলেই আড়ম্বরপুর্ণ হয়, তা হবে কারণ এটি আসলেই সত্যিকারভাবে স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত বহন করে। পুরুষরা এমনভাবে বিবর্তিত হবে যা স্ত্রী সদস্যদের দেখতে সহজ করে দেয় যে তারা স্বাস্থ্যবান– যদি তারা স্বাস্থ্যবান হয়। সত্যিকারভাবে স্বাস্থ্যবান পুরুষরা সেই বাস্তব সত্যটিকে বিজ্ঞাপন করেত আনন্দিত হবে। আর যারা স্বাস্থ্যবান না, অবশ্যই, সেটা করবে না, কিন্তু তাদের কি করার আছে? যদি তারা নিদেনপক্ষে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সার্টিফিকেট প্রদর্শন করার কোনো চেষ্টা না করে, স্ত্রী সদস্যরা সবচেয়ে খারাপ একটি উপসংহার টানবে সেখানে। যাই হোক না কেন, ডাক্তার সংক্রান্ত এই সব বার্তাগুলোর একটি ভ্রান্ত ব্যাখ্যা হতে পারে যদি এমন কিছু ভাবা হয় যে স্ত্রী সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের নিরাময় করার ব্যপারে আগ্রহী। তাদের আগ্রহ শুধু রোগ শনাক্তকরণে, এবং এটি কোনো পরার্থবাদী আগ্রহ নয়। আমি ধরে নিচ্ছি ‘সততা’ আর ‘উপসংহারে উপনীত হওয়া রুপকগুলোর জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার আর কোনো আবশ্যিকতা নেই।
বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি। মনে হতে পারে যেন, স্ত্রী সদস্যরা পুরুষদের জোরপূর্বক মুখের ভিতরে থেকে স্থায়ীভাবে বের হয়ে থাকা একটি ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারসহ বিবর্তিত করেছে, স্পষ্টভাবেই যে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য যেন স্ত্রী সদস্যরা সেটি পড়তে পারে। এই ‘থার্মোমিটারগুলো’ আসলে কি হতে পারে? বেশ, পুরুষ বার্ড অব প্যরাডাইজ পাখিদের জাকজমকপূর্ণ লম্বা লেজের কথা ভাবুন। আমরা ইতিমধ্যে ফিশারের এই আড়ম্বরময় সজ্জার জন্য দারুন ব্যাখ্যা পড়েছি। হ্যামিলটনের ব্যাখ্যা আরো বেশী সরল। পাখিদের অসুখের খুব সাধারণ একটি উপসর্গ হচ্ছে ডায়ারিয়া। আপনার যদি লম্বা লেজ থাকে, ডায়ারিয়ার সম্ভাবনা আছে সেই লম্বা লেজটি ময়লা করার। আপনি যদি সেই সত্যটিকে গোপন করেন যে আপনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, সেটা করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হবে লম্বা লেজ পরিত্যাগ করা। এবং একই অর্থে, যদি আপনি বিজ্ঞাপন করতে চান আপনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নন, তাহলে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে লম্বা লেজ রাখা। সেই ভাবে, আপনার লেজ যে পরিষ্কার সেই বিষয়টি আরো বেশী চোখে পড়ার মত হবে। আপনার যদি তেমন কোনো লম্বা লেজ না থাকে, তাহলে স্ত্রী সদস্যরা কিছুতেই বুঝতে পারবে না যে সেই লেজ কি পরিষ্কার, নাকি ময়লা, সুতরাং তারা সবচেয়ে খারাপ উপসংহারেই উপনীত হবে। হ্যামিলটন নিজেকে অবশ্যই বার্ড অব প্যারাডাইজদের লেজ সংক্রান্ত এই বিশেষ ব্যাখ্যায় নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চাননি, কিন্তু এটি তার সমর্থিত ‘ধরনের ব্যাখ্যার একটি চমৎকার উদাহরণ।
আমি স্ত্রী সদস্যদের সমরুপ উদাহরণে তাদের রোগ শনাক্তকারী ডাক্তার হিসাবে ব্যবহার করেছি এবং পুরুষদের বলেছি, তারা তাদের কাজটি সহজ করে দেয় সারা শরীরে দৃশ্যমান একটি উপায়ে থার্মোমিটার পরে থাকার একটি দৃশ্যরুপ কল্পনা করে। ডাক্তারদের ব্যবহৃত রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করে এমন যন্ত্র যেমন, রক্তচাপমান যন্ত্র, স্টেথোস্কোপ, আমাকে বেশী কিছু ধারণা করতে প্ররোচিত করেছে মানব যৌন নির্বাচনের ব্যাপারে। আমি সংক্ষেপে তাদের এখানে উপস্থাপন করবো, যদিও আমি স্বীকার করছি সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যার তুলনায় আমি এগুলো অনেক কমই আপাতঃগ্রাহ্য মনে করেছি। প্রথম, কেন মানুষরা তাদের পুরুষাঙ্গের মধ্যে থাকা হাড়টি হারিয়েছে সেই সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব। কোনো একটি দৃঢ় শক্ত মানব পুরুষাঙ্গ এতটাই শক্ত হতে পারে যে মানুষ ঠাট্টা করেই তাদের সন্দেহবাদীতা প্রকাশ করে যে, আসলেই সেখানে কোনো হাড় নেই এমন ভাবনায়। বাস্তব সত্য হচ্ছে বহু স্তন্যপায়ী প্রাণীর আসলেই পুরুষাঙ্গ শক্ত করার জন্য নিবেদিত হাড় আছে, যাকে বলে ব্যাকুলাম বা অস-পেনিস, যারা যৌন কর্মের সময় উত্তেজিত দৃঢ় পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা প্রদান করে। আরো বিস্ময়কর যে, এটি আমাদের কাছের আত্মীয় প্রাইমেটদের মধ্যেও সাধারণত দেখা যায়। এমনকি আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্মীয় শিম্পাঞ্জিরও একটি আছে, যদিও স্বীকার করতেই হবে খুবই ছোট, এটি হয়তো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায় হারিয়ে যাবার পথে আছে। আপাতদৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রাইমেটদের মধ্যে ওস পেনিসের বিলুপ্ত হবার একটি প্রবণতা; আমাদের প্রজাতি এবং কয়েকটি বানর প্রজাতি ইতিমধ্যেই এটি হারিয়ে ফেলেছে পুরোপুরিভাবে। সুতরাং আমরা সেই হাড়টাকে হারিয়ে ফেলেছি যা আমাদের পুর্বপুরুষরা সম্ভবত খুব সহজে, ভালোভাবে দৃঢ় হওয়া একটি পুরুষাঙ্গের জন্য ব্যবহার করতেন। এর পরিবর্তে আমরা এখন ভরসা করছি সম্পূর্ণভাবে একটি হাইড্রোলিক পাম্পিং সিস্টেমের উপর,, ঘুরিয়ে পেচিয়ে সহজ কোনো কাজ ব্যয়সাপেক্ষ আর জটিলভাবে করার একটি উপায় হিসাবে আমরা যা অনুভব করতে বাধ্য হই।এবং কুখ্যাতভাবে ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থাণ এর ব্যপারটি প্রায়শই ব্যর্থ হয়– নিদেনপক্ষে যা বন্যাঞ্চলে কোনো পুরুষ প্রাণীর জিনগত সাফল্যের জন্য অবশ্যই দূর্ভাগ্যজনক। এর খুব স্পষ্ট প্রতিকার তাহলে কি হতে পারে? পুরুষাঙ্গের মধ্যে একটি অস্থি, অবশ্যই। তাহলে আমার কেন একটি বিতর্তিত করলাম না? অন্তত একবারের জন্য জিনগত সীমাবদ্ধতার মতামতের সপক্ষে থাকা জীববিজ্ঞানীরা এমন কিছু বলার সুযোগ বঞ্চিত হয়েছেন, ওহ, প্রয়োজনীয় প্রকরণ কোনভাবেই উদ্ভব হয়নি। খুব সাম্প্রতিক সময় অবধি আমাদের পুর্বপুরুষদের সুনির্দিষ্টভাবে এমন একটি হাড় ছিল এবং আমরা আসলেই চেষ্টা করে এই হাড়টি হারিয়েছি! কেন?
মানুষের শরীরে ইরেকশন সংঘটিত হয় বিশুদ্ধভাবে রক্তচাপের দ্বারা। দুঃখজনকভাবে এটা সম্ভব না এমন কিছু প্রস্তাব করা যে, উত্তেজিত পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা ডাক্তারের রক্তের চাপ মাপ যন্ত্রের সমতুল্য নয়, যা কিনা পুরুষদের স্বাস্থ্য পরিমাপ করার জন্য স্ত্রী সদস্যরা ব্যবহার করতে পারেন। আমরা রক্ত চাপ মাপার যন্ত্রের রুপক উদাহরণের সাথে গাটছড়া বেঁধে রাখিনি। যদি, যে কোনো কারণেই হোক, ইরেকশন ব্যর্থতা হচ্ছে খুবই সংবেদনশীল আদি সতর্ক সংকেত কিছু বিশেষ অসুস্থতার, শারিরীক অথবা মানসিক, তত্ত্বটির একটি সংস্করণ ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। স্ত্রী সদস্যের যা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে নির্ভলযোগ্য কোন টুল বা কৌশল শনাক্ত করার জন্য। ডাক্তার কোনো ইরেকশন টেষ্ট ব্যবহার করেন না রুটিন চেকআপের সময়– তারা বরং পছন্দ করেন আমরা আমাদের জিহ্বা বের করে দেখাবো। কিন্তু ইরেকশন ব্যর্থতা ডায়াবেটিস কিংবা কিছু স্নায়ুরোগের আদি সতর্ক সংকেত হতে পারে। তবে অনেক বেশী এর কারণ মনোবৈজ্ঞানিক নিয়ামক– হতাশা, চিন্তা, স্ট্রেস, কাজের অতিরিক্ত চাপ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং এইসব আরো বেশ কিছু কারণে। ( প্রকৃতিতে, কেউ হয়তো কল্পনা করতে পারেন, প্রাধান্য পরম্পরা বা পেক অর্ডারের যে পুরুষরা নিচের স্তরে তারা এর দ্বারা আক্রান্ত হয়, কিছু বানর শক্ত হওয়া পেনিস ব্যবহার করে ভয় দেখানোর সংকেত হিসাবে); খুব অসম্ভব ব্যাখ্যা হবে না যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা শনাক্তকারী দক্ষতার ক্রমশ আরো শাণিত হবার কারণে স্ত্রী সদস্যরা পুরুষদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সব ধরনের সংকেতকে যাচাই করে দেখতে পারে, এবং এছাড়া চাপের সাথে খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষেত্রে তার সামর্থ্য, তার পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা এবং আচরণ থেকে। কিন্তু যদি কোনো হাড় থাকে, সেটি এই প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে। যে কেউই তো তার পুরুষাঙ্গে একটি হাড় গজাতে পারে, আপনাকে বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবান কিংবা শক্তিশালী হবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং স্ত্রী সদস্যদের থেকে আসা নির্বাচনী চাপ পুরুষদের ওস পেনিসটিকে হারাতে বাধ্য করেছে, কারণ শুধুমাত্র সত্যিকারের স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী পুরুষরা পারে সত্যিকারের শক্ত পুরুষাঙ্গ উপস্থাপন করতে, এবং কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্ত্রী সদস্যরা রোগ শনাক্ত করতে পারে।
বিতর্ক করার সম্ভাব্য অবকাশ এখানে রয়ে গিয়েছে। কিভাবে, বলা যেতে পারে,স্ত্রী সদস্যরা যারা এই বিধিনিষেধ আরোপ করে তারা কিভাবে জানে, এই দৃঢ়তার কারণ হাড় নাকি হাইড্রোলিক প্রেশার? যাই হোক আমরা সেই পর্যবেক্ষণ দিয়ে শুরু করেছিলাম যে, মানুষের উত্তেজিত লিঙ্গ অনুভূত হতে পারে হাড়ের মতই। কিন্তু আমি সন্দেহ করছি, স্ত্রী সদস্যদের কি এত অনায়াসে বোকা বানানো যায় কিনা? তারাও নির্বাচনী চাপে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এই হাড়টি হারানোর জন্য নয় বরং কিভাবে সেটি বিচার করা যেতে পারে সেই প্রক্রিয়ায়। কিন্তু ভুললে চলবে না, স্ত্রী সদস্যরা সেই একই পুরুষাঙ্গটি দেখেন যখন সেটি উত্তেজিত থাকে না এবং এই বিভেদটি চোখে পড়ার মত। হাড়তো তার ফোলা অবস্থা থেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে না ( যদি সেটিকে ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়া যেতে পারে)। হয়তো এটাই বেশ চমৎকার পুরুষাঙ্গের জন্য দ্বৈত জীবন যা নিশ্চিৎ করে তার হাইড্রোলিক বিজ্ঞাপনের অকৃত্রিমতা।
এখন স্টেথোস্কোপ বিষয়ে কথা বলা যাক, শয়নকক্ষের আরেকটি কুখ্যাত সমস্যা বিবেচনা করুন, নাক ডাকা। আজ নাক ডাকা হয়তো। সামাজিক অসুবিধা মাত্র। কিন্তু কোনো এক সময় এটি জীবন বা মৃত্যুর একটি বিষয় ছিল। গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় নাক ডাকার আওয়াজ অত্যন্ত তীব্র শব্দের সৃষ্টি করতে পারে। যা আশে পাশে বহু দুরের শিকারী প্রাণীকে আহবান করতে পারে যে নাক ডাকছে তার প্রতি এবং সেই পুরো গ্রুপটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারতো তাদের একজনের নাক ডাকার কারণে, যাদের সাথে সে শুয়ে আছে। কেন তাহলে এত বেশী মানুষ এটি করে? কল্পনা করুন আমাদের পুর্বপুরুষেদের একটি দল যারা ঘুমিয়ে আছে প্রস্তর যুগের কোন গুহার মধ্যে, সেখানে পুরুষরা নানা স্বরে নাক ডাকছে, স্ত্রী সদস্যরা জেগে আছেন, তাদের নাক ডাকার শব্দ শোনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ( আমি মনে করি এটা সত্যি যে পুরুষরা বেশী নাক ডাকে); এখানে পুরুষরা কি তাদের স্ত্রী সদস্যদের জন্য পরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন এই তীব্রতর শব্দে স্টেথোস্কোপিক তথ্যে? হতে পারে কি আপনার নাক ডাকার বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী আপনার শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যের সংকেত বহন করে? আমি বলতে চাইছি না যে যখন অসুস্থ কেবল তখনই শুধু মানুষ নাক ডাকে। বরং, নাক ডাকা কোনো রেডিও ক্যারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সির মত, কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে শব্দ করে না। এটি হয়তো সুস্পষ্ট কোনো সংকেত যা পরিমান মত পরিবর্তন করা যায়, রোগ শনাক্ত করার মত কোনো সংবেদনশীল উপায়ে, নাক এবং গলার অবস্থার উপর নির্ভর করে। স্ত্রী সদস্যরা স্পষ্ট ট্রাম্পেটের মত আওয়াজ পছন্দ করে কোনো প্রতিবন্ধকতাহীন শ্বাসনালীর, ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো গোঙ্গানীর মত আওয়াজের চেয়ে এই ধারণাটি ঠিকই আছে, কিন্তু আমি স্বীকার করছি, আমার পক্ষে কল্পনা করা কঠিন স্ত্রী সদস্যরা সত্যি সত্যি কোনো নাক ডাকা পুরুষকে বেছে নেয়। তারপরও ব্যক্তিগত অন্তর্গত জ্ঞান নির্ভর ধারণা তার অনির্ভরশীলতায় কুখ্যাত। হয়তো নিদেনপক্ষে এটি কোনো ঘুমাতে না পারা চিকিৎসকের গবেষণা প্রকল্প হতে পারে। চিন্তা করে দেখুন, তিনি হয়তো এ ক্ষেত্রে অন্য তত্ত্বটিও পরীক্ষা করে দেখার মত উপযুক্ত অবস্থানে আছেন।
এই দুটি ধারণা খুব বেশী গুরুত্বের সাথে গ্রহন করা উচিৎ হবে না। এগুলো সফল হতে পারে যদি এটি শুধু হ্যামিলটনের তত্ত্বটির মূলনীতিটি, কিভাবে স্ত্রী সদস্যরা স্বাস্থ্যবান পুরুষদের নির্বাচন করা চেষ্টা করে, সেটি বুঝতে সহায়তা করে থাকে। হয়তো তাদের ব্যাপারে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে তারা হ্যামিলটনের ‘প্যারাসাইট’ তত্ত্ব এবং আমোজ জাহাভীর ‘হ্যান্ডিকাপ’ তত্ত্বটির মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করার বিষয়টি নজরে আনে। আপনি যদি আমার পুরুষাঙ্গ হাইপোথিসিসের যুক্তিটি অনুসরণ করতে পারেন, পুরুষরা প্রতিবন্ধীতার স্বীকার হচ্ছে পুরষাঙ্গের হাড় হারিয়ে এবং এই প্রতিবন্ধীতা শুধুমাত্র ঘটনাচক্রে ঘটে না। হাইড্রোলিক বিজ্ঞাপন এর কার্যকারিতা অর্জন করে সুনির্দিষ্টভাবে এর কারণ’ ইরেকশন কখনো কখনো ব্যর্থ হয়, ডারউইনীয় পাঠকরা নিশ্চিৎভাবে ‘হ্যান্ডিক্যাপ’ বা প্রতিবন্ধীতার ইঙ্গিতটি বুঝতে পেরেছেন এবং তাদের মধ্যে এটি গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করে। আমি তাদের কোনো কিছু বিচারিক বিবেচনায় আসতে নিষেধ করছি যতক্ষণ না তারা পরের নোটটি পড়ছেন, সেখানে আমরা দেখবো হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপালকে কিভাবে নতুন রুপে আমরা দেখতে পারি।
(৭) প্রথম সংস্করণে আমি লিখেছিলাম: ‘আমি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করিনা, যদিও আমি পুরোপুরিভাবে তেমন আত্মবিশ্বাসী নই আমার সন্দেহবাদিতায়, যেমনটা ছিলাম আমি যখন এটি প্রথমবারের মত শুনেছিলাম। আমি খুশী, “যদিও’ শব্দটা আমি আগের বাক্যে যোগ করেছিলাম, কারণ যখন আমি প্রথম এই অনুচ্ছেদটি লিখেছিলাম সেই সময়ের তুলনায় জাহাভীর তত্ত্বটি এখন অনেক বেশী ব্যাখ্যাযোগ্য মনে হয়। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক সাম্প্রতিক সময়ে তত্ত্বটিকে গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করেছেন। আমার জন্য সবচেয়ে চিন্তার বিষয়টি হচ্ছে, এর মধ্যে আছেন আমার সহকর্মী অ্যালান গ্রাফেন, যেমনটি তার সম্বন্ধে এর আগে ছাপার অক্ষরে বলেছি, “সবসময়েই সঠিক হবার তার একটি বিরক্তিকর অভ্যাস আছে। তিনি জাহাভীর মৌখিক ধারণাটিকে গাণিতিক মডেলে রূপান্তরিত করেন এবং সেই কাজের উপর উপর নিজের পুর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এবং এটি আর কোনো কল্পনা নয়, জাহাভীর কোনো দুর্বোধ্য প্যারোডি, যেমনটি অন্যরা তার এই ধারণাটি নিয়ে করেছিল, গ্রাফেনের সৃষ্টিটি হচ্ছে জাহাভীর ধারণাটির একটি প্রত্যক্ষ গাণিতিক অনুবাদ। গ্রাফেনের মডেলটির মূল ‘ইএসএস সংস্করণটি নিয়ে আমি আলোচনা করবো। যদিও তিনি বর্তমানে একটি পূর্ণ জেনেটিক সংস্করণ নিয়ে কাজ করছেন, যা অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বে তার ‘ইএসএস’ মডেলকে ছাড়িয়ে যাবে। এর মানে কিন্তু এই না যে ‘ইএসএস’ মডেল আসলে ভুল। এটি খুব ভালো প্রায় নিকটবর্তী একটি ধারণা।
আসলেই সব ‘ইএসএস’ মডেলগুলো, এই বইতে যেটি আছে সেটি সহ, একই অর্থে প্রায় নিকটবর্তী ধারণা। সেই সব পরিস্থিতির জন্য ‘হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপাল’ হচ্ছে সম্ভাবনাময়ভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে কোনো প্রজাতির সদস্যরা অন্য সদস্যদের গুণগত মান বিচার করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা এখানে স্ত্রী সদস্যদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন করা পুরুষদের নিয়ে কথা বলবো। এবং এটি মূলত সুস্পষ্টতার জন্য জরুরী। এটি সেই পরিস্থিতিগুলোর অন্যতম যখন লিঙ্গবাদী কোনো সর্বনাম আসলেই উপযোগী হতে পারে। গ্রাফেন লক্ষ করেন যে আসলেই হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপালটিকে দেখার কমপক্ষে চারটি উপায় আছে। তাদেরকে বলা যেতে পারে, হ্যান্ডিক্যাপকে গুণারোপ করা বা ‘কোয়ালিফাইং হ্যান্ডিক্যাপ’ (কোনো পুরুষ, যে তার হ্যান্ডিক্যাপ বা প্রতিবন্ধীতা সত্ত্বেও টিকে থাকে অবশ্যই অন্যান্য ক্ষেত্রে সে যথেষ্ট পরিমান দক্ষ হবে, সুতরাং স্ত্রী সদস্যরা সঙ্গী হিসাবে তাদের বাছাই করবে); উন্মোচনকারী বা ‘রিভিলিং হ্যান্ডিক্যাপ’ (পুরুষরা কষ্ঠসাধ্য কোনো কাজ করে যা তাদের অন্যথায় গোপনীয় কোনো ক্ষমতাকে প্রদর্শন করে); শর্তসাপেক্ষ বা “কন্ডিশনাল হ্যান্ডিক্যাপ ( শুধুমাত্র উচ্চগুণ সম্পন্ন পুরুষরদেও মধ্যে আদৌ কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়); এবং পরিশেষে গ্রাফেনের নিজস্ব পছন্দের ব্যাখ্যা, যাকে তিনি বলেছেন, কৌশলগত বাছাই বা ‘স্ট্রাটেজিক চয়েস’ হ্যান্ডিক্যাপ ( পুরুষদের নিজস্ব গুণ সম্বন্ধে ব্যক্তিগত তথ্য থাকে, যা স্ত্রী সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হয়, এবং তারা এই তথ্যটি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা কি নিজেদের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধীতা সৃষ্টি করবে কিনা, এবং সেটির ঠিক কত হওয়া উচিৎ)। গ্রাফেনের স্ট্রাটেজিক চয়েস হ্যান্ডিক্যাপের ব্যাখ্যা ‘ইএসএস’ বিশ্লেষণে যুক্ত করা যায়। এখানে কোনো পূর্ব ধারণা নেই যে বিজ্ঞাপন যা পুরুষরা বেছে নেয় সেটি মূল্যবান নাকি প্রতিবন্ধীতা সৃষ্টিকারী হবে। বরং এর বিপরীত, যে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন বিবর্তন করার জন্য তারা মুক্ত, সৎ কিংবা অসৎ, মূল্যবান অথবা সস্তা। কিন্তু গ্রাফেন প্রদর্শন করেছেন যে, এই কাজটি শুরু করার জন্য তার স্বাধীনতার শর্তাধীনে, একটি হ্যান্ডিক্যাপ সিস্টেমের বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল একটি কৌশল হিসাবে উদ্ভব হবার সম্ভাবনা থাকবে।
গ্রাফেনের শুরুর প্রাকধারণাগুলো হচ্ছে নীচে বর্ণিত চারটি প্রসঙ্গ: [ক]. পুরুষরা তাদের সত্যিকারের গুণাবলীতে ভিন্নতা প্রদর্শন করে। এই গুণগতমান আবার অস্পষ্ট কোনো সামাজিক মর্যাদাহীনদের প্রতি অবজ্ঞামূলক কোনো ধারণা না, যেমন কোনো চিন্তাহীন গর্ব যা কেউ তার পুরোনো কলেজ বা কলেজের ভাতৃত্ব সংঘের প্রতি প্রদর্শন করতে পারে (আমি একবার একটি চিঠি পেয়েছিলাম এক পাঠকের কাছ থেকে যা শেষ হয়েছিল এভাবে: আমি আশা করি, আপনি এই চিঠিটাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনে করেননি, যাই হোক আমি বেলিওল কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র, গর্বিত বেলিওল ম্যান।’); গ্রাফেন এর কাছে এর অর্থ হচ্ছে, এমন কিছু বিষয় আছে যেমন, ভালো পুরুষ এবং খারাপ পুরুষ, এবং সেটি এই অর্থে যে স্ত্রী সদস্যরা জিনগতভাবে উপকৃত হবে যদি তারা ভালো পুরুষের সাথে প্রজনন করে এবং খারাপ পুরুষদের এড়িয়ে চলে। এর অর্থ এমন কোনো কিছু যেমন, মাংসপেশীর শক্তি, দৌড়াবার গতি, কোনো শিকার খোঁজার জন্য যোগ্যতা, কোনো ভালো নীড় বানানোর দক্ষতা। আমরা কিন্তু কোনো পুরুষের সর্বশেষ বা চূড়ান্ত প্রজনন সাফল্যের কথা বলছি না, কারণ এই বিষয়টি প্রভাবিত হবে কোনো স্ত্রী সদস্য অবশেষে তাকে পছন্দ করবে কিনা। এই বিষয়ে কথা বলার মানে হচ্ছে আরো একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নকে আমন্ত্রণ জানানো, সেটা এমন কোনো কিছু এই মডেল থেকে উদ্ভব হতেও পারে কিংবা নাও পারে। [খ] স্ত্রী সদস্যরা সরাসরিভাবে পরুষদের গুণগত মান অনুধাবন করতে পারে না বরং তাদের নির্ভর করতে হয় পুরুষদের প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের উপর। সেই বিজ্ঞাপন প্রদর্শনীটি সৎ নাকি অসভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে এই পর্বে আমরা কোনো পুর্বধারণা করছিনা। “সততা’ ভিন্ন একটি বিষয় যা এই মডেল থেকে বের হতে পারে, আবার নাও পারে। আর আবারো স্মরণ করুন সে কারণেই মডেল তৈরী করা হয়। কোনো একটি পুরুষ হয়তো ফোলানো কাধ তৈরী করতে পারে, যেমন, বড় আকার এবং শক্তির বিভ্রমকে অসতোর সাথে উপস্থাপন করতে। এটি মডেলের দ্বায়িত আমাদের বলা যে এরকম মিথ্যা সংকেত বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল হবে কিনা, অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রদর্শনী বা বিজ্ঞাপনের উপর শ্লীল, সৎ এবং বিশ্বাসযোগ্য কোনো মানদণ্ড আরোপ করে কিনা। [গ] স্ত্রী সদস্যরা যারা তাদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যতিক্রম, পুরুষরা একটি অর্থে ‘জানে তাদের নিজেদের গুণগত মান কি। এবং তারা তাদের গুণ প্রদর্শনী করার জন্য একটি কৌশল’ বেছে নেয়, একটি নিয়ম যা শর্তসাপেক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনী করবে তাদের সত্যিকারের গুণের আলোকে। যথারীতি, এই ‘জানা’ বলতে আমি কিন্তু বোঝাতে চাইছি না তারা এটি কগনিটিভ’ বা অবধারণগত পর্যায়ে সেটি জানে। কিন্তু পুরুষদের মনে করা হয় কিছু ‘জিন’ আছে যারা শর্ত সাপেক্ষে পুরুষদের নিজস্ব গুণাবলীর উপর নির্ভর করে সক্রিয় হয়ে ওঠে (এবং এই তথ্যটির প্রতি বিশেষ অগ্রাধিকার খুব অযৌক্তিক ধারণা নয়; কোনো একটি পুরুষের জিন, মোটকথা, তার আভ্যন্তরীণ রাসায়নিক কাঠামোয় নিমজ্জিত এবং অবশ্যই কোনো স্ত্রী সদস্যদের জিনদের চেয়ে সেটি অনেক বেশী উত্তম অবস্থানে থাকে, তার নিজের এই গুণগত মানের প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রকাশের ক্ষেত্রে)। ভিন্ন ভিন্ন পুরুষরা ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করে। যেমন, একজন পুরুষ হয়তো অনুসরণ করতে পারে সেই সূত্র, আমার সত্যিকারের গুণগত মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে লেজ প্রদর্শন করো। অন্যজন হয়তো এর বিপরীত নিয়মটি গ্রহন করে। এটি সুযোগ করে দেয় প্রাকৃতিক নির্বাচনকে নিয়মগুলোর সাথে একটি সামঞ্জস্য স্থাপন করতে, যারা জিনগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম মেনে নেবার জন্য আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা আছে। প্রদর্শনীর স্তরকে সরাসরিভাবে সত্যিকারের গুণগত মানের সাথে সমানুপাতিক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, আসলেই কোনো পুরুষ হয়তো সম্পূর্ণ বিপরীত একটি নিয়ম বেছে নেয়। আমাদের শুধুমাত্র যা দরকার সেটি হচ্ছে পুরুষদের এমনভাবে প্রোগ্রাম করা উচিৎ হবে তাদের সত্যিকারের গুণের দিকে তাকানোর কোনো একধরনের নিয়ম অনুসরণ করার জন্য এবং এই বাছাইয়ের উপর নির্ভর করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনীর স্তর নির্বাচন করা –যেমন, লেজের আকার, বা ধরুন অ্যান্টলারের (শিং) আকার। আর কোন সম্ভাব্য নিয়মগুলো বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি আবারো এমন কিছু যা খুঁজে বের করাও হবে এই মডেলের অন্যতম লক্ষ্য। [ঘ] সমান্তরালভাবে স্ত্রী সদস্যদেরও তাদের নিজস্ব অনুসরিত আইনগুলো বিবর্তিত করার স্বাধীনতা থাকে। তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো হচ্ছে, পুরুষদের প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের শক্তির উপর নির্ভর করে (মনে রাখবেন যে তারা, বরং তাদের জিনগুলো, পুরুষদের নিজেদের সেই গুণগতমান অনুধাবন করার সুবিধাপ্রাপ্ত দৃষ্টি নেই); যেমন, একজন স্ত্রী সদস্য হয়তো এমন কোনো আইন মেনে নেয়: ‘পুরুষদের পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করো। অন্য কোনো স্ত্রী সদস্য হয়তো এমন কোনো আইন অনুসরণ করতে পারে, ‘পুরোপুরিভাবে পুরুষদের বিজ্ঞাপন উপেক্ষা করো’, হয়তো আরো একজন গ্রহন করে এমন কোনো আইন, ‘তাদের বিজ্ঞাপন যা বলছে ঠিক তার উল্টোটা ভাবো’।
সুতরাং আমাদের পুরুষদের সম্বন্ধে ধারণা আছে যে, সংশ্লিষ্ট গুণের ক্ষেত্রে নেয়া তাদের গৃহীত নীতিমালার উপর নির্ভর করে প্রদর্শনী বিজ্ঞাপনের স্তর নির্ধারণে পারস্পরিক ভিন্নতা আছে। এবং স্ত্রী সদস্যরা বিজ্ঞাপনের স্তরের উপর তাদের প্রজনন সঙ্গী বাছাই করার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের নিয়মগুলোয় পারস্পরিক ভিন্নতা প্রদর্শন করে। এবং জিনের প্রভাবে উভয় ক্ষেত্রেই আইনগুলো নিরন্তর পরিবর্তিত হয়। এ পর্যন্ত আমাদের আলোচনায়, বিজ্ঞাপনের গুণাবলীর উপর নির্ভর করে পুরুষরা যে কোনো নিয়ম বাছাই করতে পারে এবং স্ত্রীরা পারে পুরুষদের বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনী বিষয়ে তারা কি পছন্দ করবে সে বিষয়ে যেকোনো নিয়ম বাছাই করতে। এই বিস্তৃতির ধারায় সম্ভাব্য সব পুরুষ আর স্ত্রী সদস্যদের নিয়মসমষ্টির মধ্যে, আমরা যা খুঁজি সেটি হচ্ছে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল এক-জোড়া নিয়ম। এটি খানিকটা ‘ফেইথফুল/ফিলান্ডেরার ( বিশ্বাসী/ছলনাকারী) এবং ‘কয়/ফাষ্ট (লাজকীবেপরোয়া) মডেলের মত, যেখানে আমরা একটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল পুরুষদের নিয়ম এবং বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল স্ত্রী সদস্যদের কোনো নিয়মকে অনুসন্ধান করি। এই স্থিতিশীলতা হচ্ছে পারস্পরিক স্থিতিশীলতা, প্রতিটি নিয়ম সেখানে স্থিতিশীল অন্য নিয়ম এবং সেই নিয়মটির নিজের উপস্থিতিতে। যদি আমরা পারি এমন কোনো বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল জোড়া নিয়ম খুঁজে বের করতে আমরা তাদের পরীক্ষা করে দেখতে পারি, জীবন কেমন হবে এমন কোনো সমাজে যেখানে পুরুষ এবং স্ত্রী সদস্যরা এই সব নিয়ম মেনে চলছে। বিশেষভাবে এটা কি জাহাভী’র ‘হ্যান্ডিক্যাপ’ বিশ্ব হবে?
এধরনের কোনো পারস্পরিকভাবে স্থিতিশীল জোড়া নিয়ম খুঁজে বের করতে গ্রাফেন তার নিজের উপর দ্বায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। যদি আমি এই কাজটি করার দ্বায়িত্ব নিতাম, আমি হয়তো কষ্ট করতাম জটিল পরিশ্রমসাধ্য কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে। আমি কম্পিউটারে পুরুষ সদস্যদের তথ্য ইনপুট করতাম, বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনীর গুণগতমানের ক্ষেত্রে যারা পরস্পর থেকে ভিন্ন। এবং আমি স্ত্রী সদস্যদের তথ্য সেখানে ইনপুট করতাম, যারা পুরুষদের বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনীর স্তরের উপর নির্ভর করে পুরুষ বাছাই করার প্রক্রিয়ায় পরস্পর থেকে ভিন্ন। এরপর আমি পুরুষ এবং স্ত্রী সদস্যদের কম্পিউটারের সিমুলেশনের ছেড়ে দিতাম, তারা একে অপরে সাথে দেখা হতো, এবং তারা মিলিত হতো যদি স্ত্রী সদস্যদের বাছাইয়ের মানদণ্ডে তারা উত্তীর্ণ হয়, পুরুষ এবং স্ত্রী সদস্যদের নিয়মগুলো তারা তাদের সন্তান, পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে বংশানুক্রমে হস্তান্তরিত করতো। এবং তাদের সেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ‘গুণের জন্য অবশ্যই সদস্যরা টিকে থাকে বা টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। প্রজন্মান্তরে প্রতিটি পুরুষ এবং প্রতিটি স্ত্রী সদস্যদের নিয়মের ভাগ্য পরিবর্তন আবির্ভূত হয় জনসংখ্যায় তাদের উপস্থিতির হার রুপে। এবং কিছু বিরতির পর পর আমি কম্পিউটারে দেখতাম কোনো ধরনের একটি স্থিতিশীল মিশ্রণ সেখানে তৈরী হচ্ছে কিনা।
নীতিগতভাবে এই প্রক্রিয়াটি কাজ করবে, কিন্তু ব্যবহারিক পর্যায়ে এটি বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়। সৌভাগ্যজনকভাবে, গণিতবিদরা সিমুলেশনের মতই একই উপসংহার পান, শুধু তারা কিছু সমীকরণ প্রস্তুত করেন এবং সেগুলো সমাধান করেন। এবং এটাই গ্রাফেন করেছিলেন। আমি তার গাণিতিক যুক্তি এখানে উপস্থাপন করবো না বা তার এর পরবর্তী, আরো বিস্তারিত ধারণাগুলোরও ব্যাখ্যা দেবো না। বরং, আমি সরাসরি উপসংহারে যাবো। তিনি আসলেই একটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল জোড়া নিয়মের সন্ধান পেয়েছিলেন।
সুতরাং, এবার মূল প্রশ্নটি আলোচনা করা যাক, গ্রাফেনের ‘ইএসএস’ কি এমন কোনো পৃথিবী সৃষ্টি করে যা প্রতিবন্ধী (হ্যান্ডিক্যাপ) আর সতোর জগত হিসাবে জাহাভী শনাক্ত করতে পারেন? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। গ্রাফেন খুঁজে পেয়েছিলেন যে আসলে আমরা একটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল জগৎ পেতে পারি যারা জাহাভীর নিম্নলিখিত গুণাবলীগুলোর একটি মিশ্রণ সৃষ্টি করে: [ক] বিজ্ঞাপনের স্তর বাছাই করার কৌশলগত স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও পুরুষরা এমন একটি স্তর বেছে নেয় যা সঠিকভাবে তাদের সত্যিকারের গুণাবলী প্রদর্শন করে, এমনকি যদিও এর অর্থ হয় যে তাদের সত্যিকারের গুণগত মান খুব নিম্নমানের এই বিষয়টি সেটি প্রকাশ করে দেয়।’ইএসএস’-এর ক্ষেত্রে, অন্যভাবে যদি বলা হয়, পুরুষরা সৎ। [খ] পুরুষদের প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের প্রতি প্রতিক্রিয়া বাছাই করার ক্ষেত্রে স্বাধীন কৌশলগত ক্ষমতা সত্ত্বেও, স্ত্রী সদস্যরা
অবশেষে ‘পুরুষদের বিশ্বাস করো’ কৌশলটি বাছাই করে, ‘ইএসএস’ এর ক্ষেত্রে, যুক্তিযুক্তভাবে স্ত্রী সদস্যরা বিশ্বাসপ্রবণ। [গ] বিজ্ঞাপন ব্যয়সাধ্য। অন্যার্থে, যদি আমরা কোনোভাবে গুণগত মানে এবং আকর্ষণীয়তার প্রভাব উপেক্ষা করতে পারি, একটি পুরুষের জন্য বিজ্ঞাপন না করাটাই উত্তম (কারণ এভাবে সে তার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে বা অপেক্ষাকৃতভাবে কম জমকালো হবে শিকারী প্রাণীর আক্রমনের শিকার হওয়ার জন্য)। শুধুমাত্র এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শনী ব্যয়সাপেক্ষ একটি ব্যপার না, কোনো একটি বিজ্ঞাপন পদ্ধতি যে বাছাই করতে হয় তার ব্যয়বহুলতার কারণে। কোনো একটি প্রদর্শনী সিস্টেমকে বাছাই করা হয় কারণ এটির আসলেই প্রভাব আছে বিজ্ঞাপকের সম্ভাব্য সফলতাকে হ্রাস করতে– যদি আর সবকিছুই একই থাকে। (ঘ) গুণহীন পুরুষদের জন্য বিজ্ঞাপন আরো বেশী বায়সাপেক্ষ ব্যপার। একই পর্যায়ের বিজ্ঞাপন যোগ্য শক্তিশালী পুরুষ অপেক্ষা অযোগ্য পুরুষদের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। কম যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষরা ব্যয়বহুল বিজ্ঞাপনের কারণে যোগ্য পুরুষদের চেয়ে আরো বেশী গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি হয়।
উপরে বর্ণিত এই বৈশিষ্ট্যগুলো, বিশেষ করে [গ], পুরোপুরিভাবে জাহাভীয়, গ্রাফেন প্রদর্শন করেছিলেন, যে বিবর্তনীয়ভাবে সেগুলো স্থিতিশীল কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে মনে হতে পারে খুবই বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু ঠিক একইভাবে বিশ্বাসযোগ্য ছিল জাহাভীর সমালোচকদের সমালোচনা, যা এই বইটির প্রথম সংস্করণে বিশেষ প্রভাব রেখেছিল এবং যারা উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, জাহাভীর এই ধারণাগুলো বিবর্তনে ঘটতে পারে না। গ্রাফেন এর উপসংহারে আমাদের খুব আনন্দিত হওয়া উচিৎ হবে না যতক্ষণ না আমরা সন্তুষ্ট হবো যে আমরা বুঝেছি কোথায়– যদি কোথাও– এই সব পূর্ববর্তী সমালোচকরা ভুল করেছিলেন। তারা কি ভেবেছিলেন যা তাদের ভিন্ন একটি উপসংহারের দিকে নিয়ে গিয়েছে? উত্তরে কিছুটা অংশ মনে হতে পারে যে তারা তাদের হাইপোথেটিকলাল প্রাণীদের ধারাবাহিক কিছু কৌশল থেকে কোনো একটি কৌশল বেছে নেয়ার কোনো সুযোগ দেয়নি। এবং প্রায়শই এর অর্থ হচ্ছে তারা জাহাভীর মৌখিক ধারণাটিকে ব্যাখা করেছিলেন গ্রাফেনের তালিকা করা তিনটির কোনো একটি ব্যাখাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন– কোয়ালিফাইং হ্যান্ডিক্যাপ, রিভিলিং হ্যান্ডিক্যাপ অথবা কন্ডিশনাল হ্যান্ডিক্যাপ, তারা চতুর্থ ব্যাখ্যার কোনো সংস্করণকে বিবেচনা করেননি– স্ট্রাটেজিক চয়েস হ্যান্ডিক্যাপ। এর ফলাফল ছিল তারা হয়তো হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপালকে কার্যকরী হিসাবে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি আদৌ অথবা এটি শুধুমাত্র কাজ করে বিশেষ গাণিতিকভাবে নৈর্ব্যাক্তিক কোনো পরিস্থিতিতে, যেখানে পুরোপুরিভাবে জাহাভীয় ধাঁধার অনুভুতিটি টের পাওয়া যায়না। উপরন্তু, হ্যান্ডিক্যাপ প্রিন্সিপালের কৌশলগত বাছাই করার ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, ‘ইএসএস’ এ উচ্চ গুণসম্পন্ন কোনো সদস্য এবং কম গুণ সম্পন্ন সদস্যরা, সবাই একই কৌশল ব্যবহার করে: ‘সৎভাবে বিজ্ঞাপনী প্রদর্শন করো। আগের মডেল নির্মাতারা পূর্বধারণা করেছিলেন যে উচ্চগুণ সম্পন্ন পুরুষরা কম গুণসম্পন্ন পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকে এবং সেকারণেই ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞাপনের উদ্ভব হয়। গ্রাফেন, এর ব্যতিক্রম, ধারণা করেন যে, ‘ইএসএস’- এ, উচ্চ এবং নিমাগুণ সম্পন্ন সংকেতকারীদের উদ্ভব ঘটে কারণ তারা সবাই একই কৌশল ব্যবহার করে– এবং তাদের বিজ্ঞাপনের পার্থক্যের উদ্ভব হয় কারণ তাদের গুণগতমানের মানে পার্থক্যগুলোকে বিশ্বস্তভাবে প্রতিনিধিত্ব করে সংকেত প্রদানকারী নিয়মগুলো।
আমরা সবসময় স্বীকার করেছি যে, সংকেতগুলো বাস্তবিকভাবে হ্যান্ডিক্যাপ হতে পারে। আমরা সবসময় বুঝেছি যে চূড়ান্ত প্রতিবন্ধীতা বিবর্তিত হতে পারে, বিশেষভাবে যৌন নির্বাচনের ফলাফল হিসাবে, সেই ‘বাস্তব তথ্যটি সত্ত্বেও যে, তারা আসলে হ্যান্ডিক্যাপ। জাহাভীর তত্ত্বে যে অংশটিকে আমরা সবাই বিরোধিতা করেছি সেটা হচ্ছে সেই ধারণাটি যে সংকেতগুলো হয়তো নির্বাচনের দ্বারা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়। বিশেষভাবে তার কারণ তারা সংকেত প্রদানকারীদের জন্য ‘হ্যান্ডিক্যাপ’। এবং আপাতদৃষ্টিতে অ্যালান গ্রাফেন এটাকেই তার বিজয় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
যদি গ্রাফেন সঠিক হয়ে থাকেন– এবং আমি মনে করে তিনি সঠিক– এটা মূলত প্রাণীদের সংকেত সংক্রান্ত পুরো গবেষণাটির প্রতি যথেষ্ট পরিমান গুরুত্ব দেবার ফলাফল। এটি এমনকি হয়তো একটি বড় মাপের পরিবর্তনের আবশ্যিকতাকে বাস্তব করেছিল আচরণের বিবর্তনের প্রতি আমাদের পুরো দৃষ্টিভঙ্গিটায়। এই সব প্রসঙ্গগুলোর অনেকগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন এই বইতে আলোচনা করা হয়েছে। যৌন বিজ্ঞাপন হচ্ছে শুধু এক ধরনের একটি বিজ্ঞাপন। জাহাভী-গ্রাফেন তত্ত্ব, যদি সত্যি হয়, তাহলে এক লিঙ্গের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে, পিতামাতা এবং সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ভিন্ন প্রজাতির শত্রুদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক সংক্রান্ত ধারণাগুলো ওলট পালট হয়ে যাবে। আমি সেই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত, কারণ এর অর্থ হচ্ছে যে প্রায় সীমাহীন উন্মত্ত্বাপূর্ণ তত্ত্বগুলো সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের ভিত্তিতে আর কখনো বাতিল করা যাবে না। আমরা যদি কোনো প্রাণীর অদ্ভুত কোনো আচরণ করতে লক্ষ করি, যেমন কোনো একটি সিংহ থেকে দৌড়ে না পালিয়ে কোনো প্রাণীর তার মাথার উপর দাঁড়িয়ে থাকা, হয়তো তার এমন কিছু করার কারণ কোন একটি স্ত্রী সদস্যকে সে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনী করছে। এমনকি হয়তো প্রাণীটি সিংহকে সে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করছে: “আমি এমন একটি উচ্চ গুণ সম্পন্ন প্রাণী, তুমি তোমার সময় নষ্ট করবে আমাকে ধরার চেষ্টা করলে। (মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ২২২ দেখুন)।
কিন্তু কোনো কিছুকে যতটা পাগলামি হিসাবে আমি মনে করিনা কেন, প্রাকৃতিক নির্বাচনের অন্য পরিকল্পনা হয়তো থাকতে পারে। শিকারের লোভে লালায়িত একগুচ্ছ শিকারী প্রাণীর সামনে হঠাৎ ঘুরে কোনো প্রাণীর উল্টো ডিগবাজী দেয়ার মত তার সেই ঝুঁকিটি বিজ্ঞাপনী প্রদর্শনীর গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়, বিজ্ঞাপকের আক্রান্ত হবার ঝুঁকির চেয়েও বেশী। আর ঠিক এর বিপজ্জনকটাই এই আচরণের প্রদর্শনী হিসাবে বাড়তি শক্তি প্রদান করে। অবশ্যই প্রাকৃতিক নির্বাচন অসীম কোনো বিপদকে কখনোই পক্ষপাতিত্ব করবে না। যে মুহূর্তে যেখানে এই প্রদর্শনীময়তা রূপান্তরিত হবে সরাসরিভাবে অবিমৃষ্যকারিতা, তখনই এই আচরণ তার শাস্তি পাবে। একটি ঝুঁকিপূর্ণ অথবা ব্যয়সাপেক্ষ কোনো প্রদর্শনী আমাদের কাছে পাগলামী মনে হতে পারে। কিন্তু আসলেই সেটা আমাদের বিবেচনা করার কোন বিষয় না। প্রাকৃতিক নির্বাচন শুধুমাত্র একাই সেটি বিচার করার অধিকার রাখে।