আবু সুফিয়ানের চ্যালেঞ্জের সময় ঘনিয়ে আসায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা’বান মাসে আবার বদর অভিযানে বেরুলেন[৬৭.উল্লেখ্য যে, এ সময় তিনি আনসারী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সুুলুলকে মদীনার শাসনভার দিয়ে যান।]এবং সেখানে গিয়ে শিবির স্থাপন করলেন। সেখানে তিনি আবু সুফিয়ানের অপেক্ষায় আটটি রজনী অতিবহিত করলেন। ওদিকে আবু সুফিয়ান মক্কাবাসীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে মাজনা গিয়ে যাত্রাবিরতি করলো। সে যাহরান হয়ে এখানে উপনীত হয়। তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সে বললো, “হে কুরাইশগণ, তোমাদের জন্য যুদ্ধ করা কেবল ভাল ফসল ফলার বছরেই শোভা পায়, যখন তোমরা তোমাদের গাছপালার তত্ত্বাবধান করতে পারবে এবং দুধ পান করতে পারবে। কিন্তু এটা তো অজন্মার বছর। আমি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমরাও ফিরে চলো।” তার কথায় লোকেরা ফিরে গেল। মক্কাবাসী তাদেরকে ‘ছাতুখোর বাহিনী’ নামে অভিহিত করে। তারা বলতো, “তোমরা তো শুধু ছাতু খেতে লড়াইয়ে গিয়েছিলে।”
ওদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সুফিয়ান কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় বদরের প্রন্তরে বসে প্রহর গুনতে লাগলেন এই সময় মাখশা ইবনে আমর দামরী তাঁর কাছে এলো। ওয়াদ্দান অভিযানে এই ব্যক্তিই বনু দামরা গোত্রের পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সন্ধি করেছিলো। সে বললো, “হে মুহাম্মাদ, আপনি কুরাইশদের মুকাবিলা করতে এই জলাশয়ের পাশে এসেছেন?” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “সত্যিই তাই হে বুন দামরার ভাই! এ অবস্থা দেখেও তুমি যদি চাও তবে তোমাদের সাথে আমাদের যে সন্ধি রয়েছে তা প্রত্যাহার করে যুদ্ধ করতে আমরা প্রস্তুত। যুদ্ধের মাধ্যমেই আল্লাহ তোমাদের ও আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত করে দিন তা চাইলে তাতে আমাদের অমত নেই।” সে বললো, “না, হে মুহাম্মাদ, আল্লাহর শপথ, আমাদের তাতে কোন প্রয়োজন নেই।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সুফিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। এই সময় মা’বাদ ইবনে আবু মা’বাদ আল খুযায়ী তাঁর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলো। সি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিত দেখতে পেয়ে নিম্নলিখিত কবিতা আবৃত্তি করতে করতে দ্রুত উট হাঁকিয়ে চলে গেল।
“(আমার উট) মুহাম্মাদের ও মদীনার কালো কিসমিস সদৃশ খেজুরের সান্নিধ্যের প্রতি বিতৃষ্ণ। সে ছুটে চলেছে তার বাপের পুরানো রসম রেওয়াজের প্রতি অনুগত হয়ে। কুদাইদের জলাশয়ে আজকে এবং দাজনাদের জলাশয়ে কালকে বিকালের মধ্যে তাকে পৌঁছে যেতেই হবে।[কুদাইদ মক্কার নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম।]
আর সাহাবী আবদুল্লাহ রাওয়াহা আবু সুফিয়ানের অনুপস্থিতিকে লক্ষ্য করে নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন,
“আবু সুফিয়ানের সাথে বদর প্রান্তরে মুখোমুখি হবার জন্য আমরা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু তার ওয়াদার সত্যতা পেলাম না এবং সে ওয়াদা রক্ষাকারী নয়। কসম করে বলছি, তুমি যদি ওয়াদা রক্ষা করতে (হে আবু সুফিয়ান) ও আমাদের মুখোমুখি হতে তাহলে ধিকৃত ও তিরস্কৃত হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হতে এবং মিত্রদেরকেও হাতছাড়া করে ফেলতে। এই বদর প্রান্তরেই আমরা উতবা ও তার ছেলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফেলে গিয়েছি। আবু জাহলের লাশও এখানে রেখে গিয়েছি। তোমরা আল্লাহর রাসূলকে অমান্য করলে! তোমাদের ধর্মমত এবং তোমাদের কুৎসিত ও বিভ্রান্তিকর কর্মকা-কে ধিক! তোমরা আমাকে যতই ভর্ৎসনা করো, তবুও বলবো, রাসূলুল্লাহর জন্য আমার ধন-জন সবই কুরবানকৃত। আমরা তাঁর অনুগত। তাঁকে ছাড়া কাউকে কোন অঙ্গীকার দিই না। তিনি আমাদের জন্য অন্ধকার রাতের দিশারী ধ্রুব নক্ষত্র।”