2 of 3

০৭৪. আযানের সূচনা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় তাঁর মুহাজির ভাইদের সবাইকে কাছে পেয়ে এবং আনসারদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তখন ইসলাম একটি সুসংহত শক্তিতে পরিণত হলো। সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত নামায কায়েমের ব্যবস্থা হলো, যাকাত ও রোযা ফরয হলো এবং অপরাধ দমনের আইন চালু হলো। হালাল হারামের বিধানও কার্যকর হলো। এভাবে ইসলাম তাদের মধ্যে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করলো। আনসারদের এই গোত্রটিই ঈমান গ্রহণের পর এখানে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর মুসলমানগণ নামাযের সময় হলেই তাঁর কাছে আপনা থেকেই জমায়েত হতো, ডাকতে হতো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনস্থ করলেন, ইহুদীরা যেমন শিঙ্গা বাজিয়ে নামাযের জন্য লোক জমায়েত করে থাকে তিনিও তেমনি শিঙ্গা বাজানোর ব্যাবস্থা করবেন। কিন্তু পরক্ষণেই ব্যাপারটা তাঁর মনঃপূত না হওয়ায় বাদ দিলেন। এরপর ঘণ্টা বাজিয়ে মুসলমানদেরকে নামাযে ডাকায় বিষয়টি চিন্তা করলেন।

এইসব চিন্তাভাবনা চলাকালেই আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ কিভাবে মানুষকে ডেকে জমায়েত করতে হয় তা স্বপ্নে দেখলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, অচেনা একজন লোক সবুজ কাপড় পড়ে এবং একটা ঘণ্টা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকটা আমার কাছ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি তাকে বললাম, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা, তুমি কি এই ঘন্টাটা বিক্রি করবে?’ সে বললো, ‘ঘণ্টা দিয়ে তুমি কি করবে?’ আমি বললাম, ‘নামাযের জন্য লোকজনকে ডাকবো।’ সে বললো, ‘তোমাকে এর চেয়ে ভালো জিনিস শিখিয়ে দেবো?’ আমি বললাম, ‘কি জিনিস, বলতো।’ সে বললো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ, হাইয়া আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।” রাসূলুল্লাহকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, “ইনশাআল্লাহ এই স্বপ্ন সত্য। তুমি বিলালকে নিয়ে এক জায়গায় দাঁড়াও। তাকে কথাগুলো শিখিয়ে দাও। সে আযান দিক। কেননা ওর আওয়াজ তোমার আওয়াজের চেয়ে বড়।” বিলাল আযান দিলেন। উমার ঘরে বসে তা শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চাদর টানতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আল্লাহর কসম, আবদুল্লাহ ইবনে যায়িদ যে স্বপ্ন দেখেছে, আমিও সেই রকম দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *