2 of 3

০৭০. কুবায় উপস্থিতি

আবদুর রহমান ইবনে উয়াইমি ইবনে সায়েদা স্বগোত্রীয় বিপুল সংখ্যাক সাহাবীর এই বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন: আমরা যখন শুনতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে রওয়ানা হয়েছেন এবং যে কোন দিন মদীনায় পৌঁছতে পারেন বলে আমরা মনে করছিলাম, তখন থেকে প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর আমাদের এলাকার উন্মুক্ত প্রন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতীক্ষা করতাম। সূর্যের উত্তাপ অসহনীয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরতাম না। যখন আর কোন ছায়া থাকতো না তখন ফিরে যেতাম। তখন ছিলো প্রচ- গরমের মৌসুম। যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যি সত্যি এসে পৌঁছলেন, প্রতিদিনের মত সেদিনও আমরা প্রান্তরে বসে অপেক্ষা করছিলাম। সূর্য মাথার ওপর আসার কারণে যখন কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকলো না তখন আমরা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলাম। আমরা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছলেন। একজন ইহুদী সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছিলো। আমরা কিভাবে তাঁর অপেক্ষায় থাকতাম তা সে দেখেছিলো। তাই সে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বললো, “হে কায়লার বংশধরগণ, [৪৬. এ কথা দ্বারা সমগ্র আনসারদেরকে বুঝায়। কায়লা তাদের এক খ্যাতনামা পিতামহী ছিলেন।]

তোমাদের সৌভাগ্যের ধন এসে গিয়েছে।”

আমরা একটা খেজুর গাছের ছায়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাত করলাম। তাঁর প্রায় সমবয়সী আবু বাক্র (রা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আমাদের অধিকাংশ লোকই তখন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেনি। তাঁকে দেখার জন্য বিরাট জনতার ভিড় জমলো অথচ কে আবু বাক্র আর কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কেউ বুঝতে পারছিলো না। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরের ওপর থেকে ছায়া সরে গেলো, তখন আবু বাক্র (রা) নিজের চাদর দিয়ে তাঁকে ছায়া দিতে লাগলেন। তখন আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারলাম।

ইবনে ইসহাক বলেন, অনেকের মতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুলসূম ইবনে হিদামের, আবার কারো মতে সা’দ ইবনে খাইসামার মেহমান হন। যারা বলেন, তিনি কুলসূম ইবনে হিদামের মেহমান হয়েছিলেন, তাঁরা বলেন যে, তিনি কুলসূমের বাড়ীতে থাকলেও লোকজনকে সাক্ষাত দানের জন্য অকৃতদার সা’দ ইবনে খাইসামার বাড়ীতে গিয়ে বসতেন। মুহাজিরদের ভেতরে যারা অবিবাহিত তাঁরাও ঐ বাড়ীতেই থাকতেন। আবু বাক্র সিদ্দীক (রা) মেহমান হন হাবিব ইবনে ইসাফের, মতান্তরে খাবেজা ইবনে যায়িদের।

আলী ইবনে আবু তালিব (রা) মক্কায় তিন দিন অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গচ্ছিত আমানতসমূহ মালিকদের কাছে ফেরত দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন এবং তারপর হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে যান। তিনিও কুলসূম ইবনে হিদামের মেহমান হন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবাতে ইবনে আওফ গোত্রে সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন অবস্থান করেন। এই সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *