আকাবার বাইয়াতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যুদ্ধের বা প্রয়োজনে রক্তপাত ঘটানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। তখন পর্যন্ত তাঁকে শুধু আল্লাহর দ্বীনের দিকে দাওয়াত দেয়া, যুলুম নির্যাতনে ধৈর্যধারণ করা এবং অজ্ঞ লোকদের ক্ষমা করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণকারী যেসব লোককে ঘরবাড়ী ত্যাগ করতে হয়েছিলো, তাদের উপরে কুরাইশরা চরম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিলো। অসহ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ কেউ ইসলাম ত্যাগ করতেও বাধ্য হয়েছিলো। কুরাইশরা বেশ কিছু সংখ্যাক ঈমানদারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিলো। এভাবে মুসলমানেদের কেউবা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো, কেউবা ইসলাম পরিত্যাগ করেছিল, কেউবা দেশত্যাগ করেছিলো। তাদের তধ্যে অনেকে হাবশায় এবং অনেকে মদীনায় হিজরাত করেছিলো এভাবে সবদিক দিয়েই মুসলমানরা যখন লাঞ্ছিত ও সর্বস্বান্ত, কুরাইশরা খোদাদ্রোহিতার শেষ সীমায় উপনীত এবং তাঁর নবী প্রত্যাখ্যাত, তখনই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা এবং যালিম খোদাদ্রোহীদেরকে পর্যুদস্ত করার অনুমতি দিলেন। উরওয়া ইবনে যুবাইর ও অন্যান্য বর্ণনাকারীদের নিকট থেকে আমি যা জানতে পেরেছি। তদনুসারে আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠা ও ঈমানদারদের প্রতিরক্ষার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ ও রক্তপাত বৈধ ঘোষণা করে সর্বপ্রথম যে আয়াতগুলো নাযিল হয়, তা হলো-
[আরবী *************]
“যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে তাদেরকে (যুদ্ধের) অনুমতি দেয়া গেল। কারণ তারা মাযলুম। বস্তুত: আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করার মত ক্ষমতাশালী। তারা সেই সব লোক, যাদেরকে শুধু ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ এই কথাটুকু বলার কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ঘরবাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয় হয়েছে। আল্লাহ যদি একদল মানুষকে আরেক দল দিয়ে দমন করার ব্যবস্থ না রাখতেন তাহলে মন্দির, গীর্জা, সব ইবাদাতখানা ও মসজিদসমূহ, যেখানে বেশী করে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়ে থাকে ধ্বংস করে দেয়া হতো। আল্লাহকে যে সাহায্য করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। বস্তুত: আল্লাহ শক্তিশালী মহা প্রতাপান্বিত। তারা সেই সব লোক যাদের আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা ও সুযোগ দিলেই নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করবে এবং অন্যায় ও অসত্যকে প্রতিরোধ করবে। আল্লাহর হাতেই সব কিছুর চূড়ান্ত পরিণতি। (সূরা হজ্জ ৩৯-৪১)
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের ওপর যুলুম নির্যাতন হওয়ার কারণেই আমি তাদের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ বৈধ করেছি। তারা মানুষের প্রতি কোন অপরাধ বা পাপ করেনি। তারা যখনই বিজয়ী হবে তখনই নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ প্রতিহত করবে। এরপর আল্লাহ আবার নাযিল করেন।
[আরবী *************]
“তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যাতে কোন মু’মিনকে আর তার দীন পরিত্যাগ করতে বাধ্য করা না হয় এবং একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য অবশিষ্ট থাকে।” (সূরা বাকারাহ্) অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর ইবাাত বা দাসত্ব করা হয়, অন্য কারো নয়।