অবশেষে সেই সময়টি এসে উপস্থিত হলো যখন আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে বিজয়মাল্যে ভূষিত করা, তাঁর নবীকে অধিকতর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা এবং তাঁকে দেয়া প্রতিশ্রুতি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এবারও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথরীতি হজ্জ উৎসবে আগত লোকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে ও তাঁকে আপন করে গ্রহণ করার জন্য আরব গোত্রগুলিকে অনুরোধ করতে লাগলেন। এবার তিনি কিছুসংখ্যক মদীনাবাসীর সাক্ষাত পেলেন। এরা ছিলেন মদীনার খাজরাজ গোত্রের একটি দল। আকাবার [ ৩৬. মক্কা থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত একটি জায়গার নাম। এটি মক্কা ও মিনার মধ্যবর্তী একটি জায়গা। এখান থেকে পাথর নিক্ষেপ হজ্জের অন্যতম বিধি।] কাছাকাছি এক স্থানে তাদের সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। আল্লাহ এই দলটির কল্যান সাধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই এই ঘটনা ঘটেছিলো। [৩৭. এ ঘটনা ঘটে নবুওয়াতের একাদশ বছরে।] তাদের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কারা? ” তারা বললো,“আমরা খাজরাজ গোত্রের লোক।” তিনি পুনরায় বললেন, “যা ইহুদিদের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ আপনারা কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?” তাঁরা বললো, “হ্যাঁ।” তিনি বললেন, “আপনারা একটু বসবেন কি? আমি আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।” তারা বললো, বেশ,বলুন।” এরপর তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে বসলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দাওয়াত দিলেন, তাদের সামনে ইসলাম পেশ করলেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করে শোনালেন।
আগে থেকেই মহান আল্লাহ তাদের ইসলাম গ্রহণের সহায়ক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। মদীনায় তাদের আশেপাশে ইহুদীরা বাস করতো। তারা আসমানী কিতাকের অধিকারী ছিলো এবং সেই সুবাদে তাদের কাছে ঐশী জ্ঞান ছিল। খাজরাজ ও অন্যান্য আরব গোত্র ছিল মুশরিক তথা প্রতিমাপূজারী। ইতিপূর্বে এইসব পৌত্তলিক আরবকে আগ্রাসী যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে ইহুদীরা তাদের এলাকা দখল করে বসতি স্থপন করে পৌত্তলিক ও ইহুদেিদর মধ্যে যখনই কোন অপ্রীতিকর অবস্থার উদ্ভত হতো, তখনই ইহুদীরা পৌত্তলিকদেরকে এই বলো শাসাতো, “এ যুগের নবীর আগমনের সময় আসন্ন হয়ে উঠেছে। ঐ নবী এলে আমরা তাঁর সেতৃত্বে ‘আদ ও ইরাম জাতিকে যেভাবে পাইকারী হত্যা করা হয়েছিল, তোমদেরকে সেইভাবে কচুকাটা করবো।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাজরাজ গোত্রের দলটির সাথে আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিলেন তখন তারা এক অপরকে বলতে লাগলো, “আল্লাহর শপথ, ইনিই তো সেই নবী যার কথা বলে ইহুদরিা আমাদেরকে হুমকি দেয় ও শাসায়। এখন ইহুদীদেরকে কিছুতেই আমাদের আগে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দেয় উচিত হবে না।” এইরূপ চিন্তার বশবর্তী হয়ে তারা তৎক্ষনাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলো। তারা বললো, “আমরা আমাদের সম্প্রদায়কে এক ভয়ংকর শত্রুর শত্রুতার মুখে অসহায় অবস্থায় রেখে এসেছি। আমরা আশা করি আল্লাহ আমাদের গোটা সম্প্রদায়কেই আপনার সমর্থক করে দেবেন। আমরা তাদের কাছে ফিরে গিয়ে আপনার দাওয়াত তাদের কাছেও তুলে ধরবো। আল্লাহ যদি তাদেরকে আপনার সমর্থক বানিয়ে দেন তা হলে আপনার চেয়ে স্মমানিত ও পরাক্রান্ত আর কেউ থাকবে না।”
এভাবে তারা ঈমান আনা ও ইসলামকে সত্য বলে মেনে নেয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে গেলেন। যতদূর জানা যায়, খাজরাজ গোত্রীয় এই দলটির সদস্য ছিল ছয়জন। মদীনায় পৌঁছে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য গোত্রের কাছে পেশ করলেন এবং তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। এভাবে ক্রমে মদীনার প্রতিটি ঘরে ইসলমের দাওয়াত পৌঁছে গেল। এমন একটি বাড়ীও অবশিষ্ট রইলো না, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা আলোচিত হতো না।