ইবনে ইসহাক বলেন, আবদুল মালিক ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবু সুফিয়ান সাকাফী যিনি প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন, আমাকে জানিয়েছেন :
ইরাশ গোত্রের এক ব্যক্তি তার একটা উট নিয়ে একবার মক্কায় আসে। আবু জাহল তার কাছ থেকে উটটা খরিদ করে নেয়। কিন্তু তার দাম নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে।
ইরাশী লোকটা অনন্যোপায় হয়ে কুরাইশদের একটি সভায় গিয়ে হাজির হয়। সেখানে উপস্থিত সবাইকে সম্বোধন করে সে বলে, “হে কুরাইশগণ, আবুল হাকাম ইবনে হিশামের কাছ থেকে আমর পাওনা আপনারা কেউ কি আদায় করে দিতে পারেন?
দেখুন, আমি একজন বহিরাগত পথিক। আমাকে দুর্বল পেয়ে সে আমার পাওনা দিতে গড়িমসি করছে।” এই সময় মসজিদের একপাশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে ছিলেন। উপস্থিত কুরইশগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়ে বললো, “ঐ যে লোকটা বসে আছে দেখছো, তার কাছে গিয়ে বল। সে তোমার পাওনা আদায় করে দেবে।” আসলে তারা বিদ্রƒপাচ্ছলেই কথাটা বলেছিল। আবু জাহল ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের কথা তাদের অজানা ছিল না।
উট বিক্রেতা ইরাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাঁকে বললো, “হে আল্লাহর বান্দা, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম তার দাপট দেখিয়ে আমার পাওনা নিয়ে টালবাহানা করছে। আমি একজন বহিরাগত পথিক। আমি এই লোকগুলির কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমার হক কে আদায় করে দিতে পারে? তারা সবাই আপনাকে দেখিয়ে দিল। আপনি তার কাছ থেকে আমার পাওনা আদায় করে দিন। আল্লাহ আপনাকে রহমত করবেন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমার সাথে এসো।” এই বলে তিনি তাকে সাথে নিয়ে চললেন। কুরাইশরা তাঁকে ঐ লোকটা সাথে যেতে দেখে এক ব্যক্তিকে পেছনে পেছনে পাঠিয়ে দিয়ে বললো, “যাও, দেখে এসো. মুহাম্মাদ (সা) কি করে।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু জাহলের বাড়ী চলে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দরজায় করাঘাত করলেন। সে ভেতরে থেকে বললো, “কে?” তিনি বললেন, “আমি মুহাম্মাদ, একটু বেরিয়ে এসো!” সে তখনই বেরিয়ে এলো। ভয়ে তার প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম এবং চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বরলেন, “এই ব্যক্তিকে তার পাওনা দিয়ে দাও।” সে তৎক্ষনাৎ বললো, “আচ্ছা একটু অপেক্ষা কর, তার পাওনা দিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে সে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে উট বিক্রেতাকে তার পাওনা দিয়ে দিল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। উট বিক্রেতাকে বললেন, “এবার তুমি তোমার কাজে ফিরে যাও।” সে কুরাইশদের সেই সভায় গিয়ে হাজির হলো এবং উপস্থিত লোকদেরকে বললো, “আল্লাহ তাঁকে উত্তম পুরষ্কার দিন। তিনি আমাকে আমার পাওনা আদায় করে দিয়েছেন।” আর যে ব্যক্তিকে তারা পেছনে পেছনে পাঠিয়েছিল তাকে বললে,“এই, তুমি কি দেখলে?” সে বললো, “সে এক আশ্চর্য কান্ড! তাকে কিছুই করতে হয়নি। যেয়ে শুধু দরজায় করাঘাত করেছে, আর অমনি সে যেন আতংকিত হয়ে বেরিয়ে আসলো। সে তাকে বললো, এই ব্যক্তির পাওনা দিয়ে দাও। সে বললো, আচ্ছা, একটু অপেক্ষা কর। এক্ষুণি দিয়ে দিচ্ছি। এই বলে ভেতরে গিয়ে তৎক্ষনাৎ পাওনা এনে দিয়ে দিল।” কিছুক্ষণের মধ্যে আবু জাহল সেখানে উপস্থিত হলে সবাই তাকে বললো, “কি ব্যাপার, তোমার কি হয়েছে? আজ তুমি যে কা- করেছো, এমন তো আর কখনো করতে দেখিনি? ” আবু জাহল বললো, “এটা সত্য যে, মুহাম্মাদ আমার দরজায় কড়ানাড়া ছাড়া আর কিছু করেনি। আমি শুধু তার শব্দটা শুনেই ভয় পেয়ে যাই এবং পরক্ষণেই তার সামনে আসি। আমি দেখতে পেলাম. তার মাথার ওপর একটা ভয়ংকর আকারের উট। তার মত চুঁট, ঘাড় ও দাঁতবিশিষ্ট কোন উট আমি আর কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ, অস্বীকার করলে সে নিশ্চিত আমাকে খেয়ে ফেলতো।”