০৩. দ্য নাইট বাস

০৩. দ্য নাইট বাস

কিছুদূর গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ল হ্যারি। ভারি স্যুটকেসটা টানতে টানতে ম্যাগনোলিয়া ক্রিসেন্টের কাছে নিচু একটা দেয়ালের পাশে বসল। তখনও রাগে সারা শরীর কাঁপছে, খাঁচার ভেতর ধড়াস ধড়াস করছে হৃৎপিণ্ডটা।

কিন্তু অন্ধকার রাস্তার পাশে একাকী দশ মিনিট বসে থাকবার পর ভয় এসে গ্রাস করল ওকে। জীবনের সবচেয়ে বড় মুসিবতে পড়েছে সে সন্দেহ নেই। একদম একা সে এইখানে, এই অন্ধকার মাগল বিশ্বে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। এবং সবচেয়ে খারাপ ঘটনা হচ্ছে, এইমাত্র সে ম্যাজিক করে এসেছে বেআইনীভাবে, তার মানে হোগার্টস থেকেও তাকে বের করে দেয়া হবে নিশ্চিত। অপ্রাপ্তবয়স্কদের যাদু সম্পর্কিত ডিক্রিটি সে গুরুতরভাবে ভঙ্গ করেছে। এখনও যে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের লোকেরা তাকে ধরবার জন্যে ছুটে আসেনি তাতেই অবাক হচ্ছে সে।

কি হবে ওর? গ্রেপ্তার করা হবে? না, শুধু যাদুকরদের দুনিয়া থেকে বহিষ্কার করা হবে? রন আর হারমিওন সম্পর্কে ভাবল এবং আরো হতাশা গ্রাস করল তাকে।

হাতে কোন মাগল মানিও নেই। ট্রাংকের নিচে মানি ব্যাগে কয়েকটি উইজার্ড গোল্ড রয়েছে এবং তার বাবা মা যে টাকা রেখে গেছে সেটা তো লন্ডনের গ্রিংগটস উইজার্ডিং ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। কিন্তু লন্ডন পর্যন্ত সে স্যুটকেস টেনে নিয়ে যাবে কীভাবে? যদি না।

যাদুর কাঠিটার দিকে তাকালো হ্যারি, একটা আইডিয়া এসেছে মাথায়, ওর কাছে তো বাবার অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটা আছে। সে তো যাদু করে ট্রাংকটাকে পাখির পালকের মতো হালকা করে নিতে পারে, ওটাকে ব্রুমস্টিকে বেঁধে নিয়ে নিজেকে জামাটা দিয়ে অদৃশ্য করে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়ে যেতে পারে। সেখানে ব্যাংক থেকে সব টাকা বের করে নিয়ে বাকী জীবনটা একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটিয়ে দিতে পারে। চিন্তাটা ভয়ংকর সন্দেহ নেই, কিন্তু এখানে এই অন্ধকার রাস্ত Tয় সে তো চিরকাল বসে থাকতে পারবে না। যেকোন সময় মাগল পুলিশ এসে হাজির হতে পারে, তারপর তার হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে জান বেরিয়ে যাবে।

ট্রাংকটা আবার খুলল হ্যারি, অদৃশ্য হওয়ার জামাটা খুঁজছে। পাওয়ার আগেই আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। ঘাড়ের পেছনে কেমন একটা সড়সড় অনুভূতি হচ্ছে, মনে হলো গোপনে কেউ তার ওপর নজর রাখছে। কিন্তু রাস্তা তো খালি, কোন বাড়ীতে বাতিও জ্বলছে না।

আবার সে ট্রাংকের ওপর ঝুঁকল, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সড়াৎ করে আবার উঠে দাঁড়াল, হাতের মুঠোয় যাদুর কাঠিটা শক্ত করে ধরা। শোনেনি কিছুই, কিন্তু তার অনুভূতি বলছে, কেউ অথবা কোন কিছু রয়েছে পেছনের বেড়া আর সামনের গ্যারেজের মধ্যের জায়গাটুকুতে। চোখ সরু করে হ্যারি অন্ধকার জায়গাটার দিকে তাকালো, যদি শুধু ওটা এবার নড়ে উঠে তাহলেই ও বুঝতে পারবে ওটা রাস্তার বেড়াল না অন্য কিছু।

‘আলো’ বিড় বিড় করে বলল হ্যারি। ওর যাদুর কাঠির মাথায় একটা উজ্জল আলো জ্বলে উঠল। চোখটা ধাধিয়ে গেলো। যাদুর কাঠিটা মাথার ওপর তুলে ধরল হ্যারি, এবার পরিষ্কার দেখতে পেলো দৈত্যাকার একটা আকৃতি, চোখ দুটো জ্বলছে ভাটার মতো।

এক পা পেছনে এলো হ্যারি এবং ট্রাংকের উপর উল্টে পড়ল, হাত থেকে যাদুর কাঠিটা পড়ে গেলো, এক হাত দিয়ে নিজের পতন ঠেকাতে চেষ্টা করল, তারপরও একেবারে ড্রেনে পড়ে গেলো সে। ব্যাং! হঠাৎ যেন বজ্রপাতের শব্দ হলো, সেই সাথে তীব্র আলো। হাত দিয়ে চোখ আড়াল করল হ্যারি।

চিৎকার দিয়ে আবার রাস্তায় উঠে এলো সে। এক সেকেন্ড পর একজোড়া বিরাট চাকা আর হেডলাইট এসে স্কিইই–চ শব্দ করে দাঁড়াল তার সামনে, এক মুহূর্ত আগে সে যেখানে পড়ে ছিল ঠিক সেইখানে। চোখ তুলে হ্যারি দেখল একটা ট্রিপল বাস দাঁড়িয়ে আছে, রংটা রক্তের মতো, সোনালী অক্ষরে ওটার গায়ে লেখা আছে দ্য নাইট বাস।

এক সেকেন্ড পর একজন কন্ডাক্টর বেরিয়ে এসে অন্ধকারের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে উঠল: নাইট বাসে স্বাগতম। আটকে পড়া ডাইনী এবং যাদুকরদের জন্যে ইমারজেন্সি বাস। শুধু তোমার যাদুর কাঠিটা বাড়িয়ে আমাদের ডাকবে, বাসে উঠবে, যেখানে যেতে চাও সেখানেই নিয়ে যাবো। আমি স্ট্যান শানপাইক আজ সন্ধ্যায় তোমাদের কন্ডাক্টার–

হঠাৎ করেই থেমে গল কন্ডাক্টর। হ্যারিকে দেখতে পেয়েছে। মাটিতেই বসে ছিল সে, এতক্ষণে যাদুর কাঠিটা হাতে তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। কন্ডাক্টারের বয়স খুব বেশি হবে না ভাবল হ্যারি, আমার চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের বড়, এই আঠারো উনিশ হবে হয়তো।

ওখানে কি করছো? স্ট্যানের স্বরে এখন আর কৃত্রিমতা নেই।

পড়ে গিয়েছিলাম হ্যারি জবাব দিল।

কিনো পড়ে গিলে কিনো, কিরম করে?

আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি নাকি, বিরক্ত হলো হ্যারি। হাটুর কাছে জিনসের প্যান্টটা ছিঁড়ে গেছে। হাতে ছিলে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল কেন সে পড়ে গিয়েছিল, চট করে ঘুরে গ্যারেজের সামনের জায়গাটা দেখে নিল, নাইট বাসের হেডলাইটে আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে জায়গাটা এবং শূন্য, কেউ নেই।

কি দিখছ? স্ট্যান জিজ্ঞাসা করল।

খালি জায়গাটায় ইশারা করে সে বলল, ওখানে কি যেন একটা ছিল, অনেকটা কুকুরের মতো, কিন্তু বিশাল দৈত্যকার। ঘুরে স্ট্যানের দিকে তাকালো, ওর চোখে অস্বস্তি। হ্যারির কপালের দাগটার ওপর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

উটা কি কপালে? কাটা দাগটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল স্ট্যান।

ও কিছু না। কাটা দাগের ওপর চুল বিছিয়ে দিতে দিতে বলল হ্যারি। কোন সনাক্ত চিহ্ন দেখানো যাবে না। ম্যাজিক মন্ত্রণালয় যদি খোঁজাখুঁজি করে তবে সহজে ওদের কাছে ধরা দেবে না হ্যারি।

 তুমার নাম কি উ?

মাথায় প্রথম যে নামটা আসলো সেটাই অবলীলাক্রমে বলে দিল হ্যারি, নেভিল লংবটম। স্ট্যানের মনোযোগ অন্যদিকে সরাবার জন্যে বলল, তাহলে এই বাস–কি বললে তুমি যেকোন জায়গায় যায়?

ই-হু যে কুনো জায়গায়, গর্ব করে বলল স্ট্যান, যিখানি তুমি যিতি চাও। যতক্ষণ ওটি মাটি উপরত আছি সব জায়গায় যাতি পারি। পানির নিচি কিছু করতি পারি না। ইয়ে, মানি, তুমি তু আমাদির থামিছ, মানি তুমার ম্যাজিক কাঠি দিই নয়? একটু সন্দেহের চোখে হ্যারিকে দেখছে স্ট্যান।

হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বলল হ্যারি, লন্ডনে যাওয়ার ভাড়া কত?

এগারো সিকলস, বলল স্ট্যান, কিন্তু তুমি যদি তের দাও তবে একটি চকলিট পাবি, পনরো দিলি একটা গম পানির বোতল আর তুমার পছন্দির রঙ্গের টুথব্রাশ। ট্রাংক খুলে কয়েকটা সিলভার কয়েন স্ট্যানের হাতে দিয়ে বাক্স প্যাটরা নিয়ে হ্যারি উঠে পড়ল বাসে।

বাসে কোন সিট নেই। অর্ধডজন পিতলের বিছানা। প্রত্যেক বিছানার পাশে একটি করে মোমবাতি জ্বলছে। বাসের একেবারে পেছনে ছোট্ট খাট থেকে এক যাদুকর ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে উঠল, ধন্যবাদ, না, এখন না, এখন আমি পোকার আচার বানাচ্ছি।

ড্রাইভারের পেছনের বিছানাটার নিচে ওর ট্রাংকটা ঠেলে দিয়ে স্ট্যান হ্যারিকে বলল ওটা তোমার। হ্যারি বিছানাটায় বসল।

তাহলে যাওয়া যাক ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল স্ট্যান।

আরেকটি বজ্রপাত হলো। পর মুহূর্তে বিছানায় বসা থাকা হ্যারি একেবারে সটান চিৎপাতে। আকস্মিক স্পীডের ধাক্কাটা সামলে, উঠে বসে হ্যারি দেখে ওরা আরেক রাস্তা ধরে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। ওর অবাক বিস্ময় দেখে মজাই পাচ্ছে স্ট্যান।

ইখান থেকেই তুমি আমাদের নামিয়েছিলে, হ্যারিকে জানালো স্ট্যান। কোথায় আমরা এখনো আৰ্ণি, ওয়েলস এর কোথাও?, এবার ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল।

মাগলগুলি এই বাসের শব্দ শুনতে পায় না এটা কি করে সম্ভব? কৌতূহলী প্রশ্ন হ্যারির।

ওহ মাগল! তাচ্ছিল্যের সাথে বলল স্ট্যান, ওরা তো শুনতেই পায় না ঠিকমতো। পায় কী? ভালো করে দিখেও না। কখনই কিছু খিয়াল করে না।

হ্যারি অস্বস্তি বোধ করছে। ড্রাইভারের ওস্তাদির ওপর এখনও ভরসা পাচ্ছে না। তীব্র গতিতে চলছে নাইট বাস। সামনে ল্যাম্প পোস্ট, ডাক বাক্স বা ডাস্টবিন পড়ছে, বাসটা কাছাকাছি আসতেই ওগুলো সরে গিয়ে জায়গা করে দিচ্ছে, আবার জায়গায় ফিরে আসছে বাস চলে যাওয়ার পর। রাস্তা ধরেই চলছে বাস কিন্তু কোন কিছুতে লাগছে না, এমনকি রাস্তার সঙ্গেও বাসের কোন সংস্পর্শ হচ্ছে না। আজব ব্যাপার।

দুশ্চিন্তায় হ্যারির ঘুম আসছে না। দুশ্চিন্তাটা ১০০ মাইল স্পীডে লাফিয়ে লাফিয়ে চলা বাসের জন্যে না। তার কী হবে? ডার্সলিরা কী মার্জ আন্টিকে সিলিং থেকে নামাতে পেরেছে?

স্ট্যান এক কপি ডেইলি প্রফেট মেলে ধরে ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসল। প্রথম পাতায় তোবড়ানো গালের একটি লোকের ছবি রয়েছে। লোকটাকে চেনা চেনা লাগল হ্যারির কাছে।

ওই লোকটা, বলল হ্যারি নিজের যন্ত্রণা ভুলে, ওকে তো মাগল টিভির খবরে দেখিয়েছে।

ছবিটার দিকে এক নজর তাকিয়ে স্ট্যান মন্তব্য করল, সাইরাস ব্ল্যাক, হ: ওর খবর আছিল মাগল টিভিত। হ্যারি তখনও পত্রিকার পাতার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ওটা ওর হাতে দিয়ে স্ট্যান বলল, লাও, তুমার আরো পত্রিকা পড়া উচিত।

মোমবাতির আলোর দিকে পত্রিকাটা ধরে হ্যারি পড়ল:

ব্ল্যাক এখনও পলাতক
সাইরাস ব্ল্যাক সম্ভবত আজকাবান দুর্গে আটক সবচেয়ে কুখ্যাত বন্দী, এখনও ধরা পড়েনি, ম্যাজিক মন্ত্রণালয় এর সত্যতা স্বীকার করেছে। ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কর্ণেলিয়াস ফাজ আজ সকালে বলেছেন আমরা ব্ল্যাককে ধরবার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি যাদুকর সম্প্রদায়কে শান্ত থাকার জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন।
সংকট সম্পর্কে মাগল প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য ওয়ার লকদের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন কাজের সমালোচনা করেছে। বিরক্ত ফাজ এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
‘আমাকে জানাতেই হতো, তোমরাও সেটা জানো। ব্ল্যাক একটা বদ্ধ উন্মাদ। সকলের জন্যেই মূর্তিমান বিপদ। মাগল অথবা যাদুকর সকলের জন্যেই এবং প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে ওয়াদা করেছেন যে তিনি ব্ল্যাকের আসল পরিচয় কারো কাছেই প্রকাশ করবেন না। আর করলেই বা কি কে তাকে বিশ্বাস করবে?’
মাগলদের জানানো হয়েছে যে ব্ল্যাক-এর কাছে অস্ত্র রয়েছে। এদিকে যাদুকর সম্প্রদায় আরো একটি গণহত্যার আশংকা করছে, বারো বছর আগে ব্ল্যাকই একসঙ্গে তেরজনকে হত্যা করেছিল একটি মাত্র ম্যাজিক্যাল শাপ দিয়ে।

হ্যারি আবার ব্ল্যাকের ছবিটা দেখল, ভাঙাচোরা মুখটার মধ্যে শুধু চোখ দুটোকেই জ্যান্ত মনে হচ্ছে। সে কখনও ভ্যাম্পায়ার দেখেনি, কিন্তু ক্লাসে ছবি দেখেছে, ছবিতে ব্ল্যাকের পিচ্ছল সাদা চামড়া দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা ভ্যাম্পায়ার।

ভয়ংকর চেহারা তাই না! বলল স্ট্যান হ্যারির উপর চোখ রেখে।

কাগজটা ওর হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে হ্যারি বলল, এক শাপে লোকটা তেরোজন মানুষকে হত্যা করেছে।

ইয়েপ! বলল স্ট্যান, এবং প্রকাশ্যে দিনির বেলায় বহুত লোকের চোখের সামনে। বড় একটা মুসিতেই হয়ে গিয়েছিল, তাই না, আর্ণি?

এরর! আৰ্ণির গলা থেকে গম্ভীর শব্দ বের হলো। এবার হ্যারির দিকে চেয়ারটা ঘুরিয়ে স্ট্যান বলল, ব্ল্যাক কার সমর্থক ছিল, তুমি জান কার?

কোনরকম চিন্তা ভাবনা না করেই হ্যারি বলে ফেলল, কার আবার ভোন্ডেমোর্ট-এর।

স্ট্যানের মুখের ব্রণের দাগগুলো সাদা হয়ে গেলো। স্টিয়ারিংটাকে আর্লি এত জোরে ঘোরালো যে বাসটাকে এড়ানোর জন্যে একটা গোটা ফার্ম হাউজ লাফিয়ে একপাশে সরে গেলো।

মনে হয় তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, চিৎকার করে উঠল স্ট্যান, নাম বুলছ কীসের জন্য তুমি?

 তাড়াতাড়ি হ্যারি বলে ফেলল, দুঃখিত, আমি, আমি, মানে ভুলে গিয়েছিলাম…

ভুলে গিয়েছিলে! কোনরকমে বলল স্ট্যান, বিশ্বাস করো এখনও আমার বুক ধক ধক করছে…

তাহলে ব্ল্যাক ছিল মানে তুমি–জানো–কার সমর্থক, অনেকটা মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতেই বলল হ্যারি।

স্ট্যান আবার বকর বকর শুরু করল, পিচ্চি হ্যারি পটার যখন ইউনো—হুর’র হ্যারি কুণ্ঠিতভাবে প্যান্টের কুঁচকে যাওয়া জায়গাটা সমান করছে–মুখোশটা উম্মোচন করে ফেলল, তখন ওর দলের সকলকেই ধরে ফেলা হলো, তাই না অনি? সবাই মনে করল এবার সব শেষ। ইউ–নো–হুঁ নেই, অনেকেই ধরা পড়ে গেছে, অন্যরা সব ঠাণ্ডা মেরে গেলো। কিন্তু সাইরাস ব্ল্যাক দমবার পাত্র নয়। আমি শুনেছি সে আশা করত ক্ষমতা দখল করলে সেই হবে দুই নম্বর ব্যক্তি।

যাই হোক ওরা ব্ল্যাককে একটা রাস্তার মাঝখানে কোণঠাসা করে ফেলল। রাস্তা ভর্তি মাগল। ব্ল্যাক ওর যাদুর কাঠিটা বের করে রাস্তাটাকেই দুই ভাগ করে ফিলল। অমনি একজন যাদুকর আর এক ডজন মাগল ওই ফাঁকের ভিতরে হারিয়ে গেলো চিরদিনের জন্য। ওহ! সে কি ভয়ংকর দৃশ্য। তুমি জানো এরপর ব্ল্যাক কি কোরল? নাটকীয়ভাবে ফিস ফিস করে বলল স্ট্যান।

কী? হ্যারির প্রশ্ন।

হাসল। ওখানে দাঁড়িয়ে সি কি অট্টহাসি ওর। ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের লোকেরা যখন পৌঁছালো ওখানে, সে ওদের সাথে গেলো বিনা আপত্তিতেই। তখনও হাসছে। একটা বদ্ধ পাগল, তাই না আর্ণি?

আজকাবানে যাওয়ার আগে যদি নাও হয়ে থাকে তবে এতদিনে নিশ্চয়ই হয়ে গেছে বলল আৰ্ণি নিচু গলায়। যে ভয়ংকর জায়গা ওখানে পা রাখার আগে আমি নিজেই নিজকে শেষ করে ফেলতাম। যা ও করেছে ওটাই ওর জন্য একেবারে ঠিক জায়গা….

কাগজের ছবিটা দেখতে দেখতে বিড় বিড় করে বলল স্ট্যান, এখন এই ভয়ংকর পিশাচটা বাইরে। এর আগে কখনই কেউ আজকাবান কারাগার ভেঙ্গে বের হতে পারেনি। বের হয়েছে আর্ণ? কি করি পারলো ভেবেই কুল কিনারা পাওয়া যায় না। ভয়াবহ ব্যাপার তাই না? আমার মনে হয় না আজকাবান গার্ডদের হাত থেকে সে বাঁচতে পারবে। তাই না আর্ণ?

কি এক অজানা আশংকায় কেঁপে উঠল আর্ণি।

অন্য কিছু বলো স্ট্যান। আজকাবানের কথা উঠলেই আমার তলপেটে কেমন যেন শির শির করে ওঠে।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাগজটা রেখে দিল স্ট্যান আর হ্যারি নাইট বাসের জানালায় হেলান দিল। ওর খুব খারাপ লাগছে, এমন খারাপ আর কখনই লাগেনি। কল্পনায় সে এখনই দেখতে পারছে কয়েক রাত পর এই স্ট্যানই অন্য বাসযাত্রীদের বলছে, ওই যে হ্যারি পটারের কথা নিশ্চয়ই শুনেছ? ওর আন্টিকে একদম উড়িয়ে দিয়েছিল। এই বাসে এক রাতে সেও চড়েছিল তাই না আর্ণ? ও ও তখন পালাচ্ছিল।

সাইরাস ব্ল্যাকের মতোই হ্যারিও তো উইজার্ডদের আইন ভেঙ্গেছে। মার্জ আন্টি এমন ফোলান ফুলিয়েছিল যে আজকাবানে যাওয়ার জন্যে ওই একটা ঘটনাই যথেষ্ট। যদিও হ্যারি নিজে এই আজকাবান জেলটি সম্পর্কে কিছুই জানে না কিন্তু যারাই এর সম্পর্কে বলে একেবারে ভীত সন্ত্রস্ত হয়েই বলে। হোগার্টস-এর গেম টিচার হ্যাগ্রিড এই আগের বছরই সেখানে দুই মাস কাটিয়ে এসেছে। হ্যাগ্রিডকে যখন বলা হলো কোথায় তাকে পাঠানো হচ্ছে ওর তখনকার চেহারায় নির্ভেজাল ভয়টা হ্যারি কোনদিনই ভুলতে পারবে না। এবং হ্যাগ্রিড হচ্ছে হ্যারির দেখা স্বল্প সংখ্যক সাহসী লোকদের মধ্যে একজন।

অন্ধকারের মধ্যে নাইট বাস ছুটে চলেছে। একসময় অ্যানজলেসিয়া থেকে আবারডিন পৌঁছল। এক এক করে যাদুকর আর ডাইনীরা সব নেমে গেল। হ্যারি তখন বাসের একমাত্র যাত্রী।

হ্যা নেভিল, বলল স্ট্যান দুই হাতে তালি বাজিয়ে, লন্ডনে কোথায়?

ডায়গন অ্যালি, জবাব দিল হ্যারি।

ঠিক আছে, শক্ত করে বসো..

ব্যাং

ওরা চ্যারিং ক্রস রোডের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। হ্যারি সোজা হয়ে বসল। বিল্ডিংগুলো সব সংকুচিত হয়ে নাইট বাসের পথ থেকে সরে যাচ্ছে। আকাশটা হালকা হয়ে আসছে। কয়েক ঘণ্টা তাকে আড়ালে থাকতে হবে। গ্রিংগট খোলা মাত্রই ওখানে যেতে হবে। তারপর আবার নতুন যাত্রা। কোথায়? সে নিজেও জানে না।

কড়া ব্রেক চাপল আৰ্ণি। নাইট বাসটা থামল ছোট্ট জীর্ণশীর্ণ পাব, লিইকি কলড্রন-এর সামনে, এর ঠিক পেছনেই রয়েছে ডায়গন অ্যালিতে ঢোকার ম্যাজিক পথ।

ধন্যবাদ, আৰ্ণকে লক্ষ্য করে বলল হ্যারি।

বাস থেকে লাফিয়ে নামল সে। নিজের ট্রাংক আর হেডউইগের খাঁচাটা নামাতে সাহায্য করল স্ট্যানকে।

তাহলে, বলল হ্যারি, বাই।

স্ট্যানের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিইকি কলড্রনের আধো অন্ধকার প্রবেশপথের দিকে।

এই তো হ্যারি, অন্ধকার থেকে কার গলা শোনা গেল।

ও ঘোরার চেষ্টা করল, তার আগেই কাঁধে হাতের ছোঁয়া পেল। ঠিক সেই সময়ই চিৎকার করে উঠল স্ট্যান, বিশ্বাস করবে না আর্ণ! এদিকে এসো জলদি এসো।

হ্যারি হাতের মালিকের দিকে মুখ তুলে তাকালো, ওর পেটে কে যেন বরফের চাই সেঁধিয়ে দিল–ও সোজা কর্ণেলিয়াস ফাজ-এর হাতে এসে পড়েছে। ফাজ মানে স্বয়ং ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।

লাফিয়ে স্ট্যান বাসের দরজা থেকে রাস্তার ওপর নামল।

নেভিলকে কি বলে ডাকলেন? মন্ত্রীকে তার উত্তেজিত প্রশ্ন।

বেটেখাট ফাজ লম্বা স্ট্রাইপড কোট গায়ে চড়ানো, শীতল এবং ক্লান্ত।

নেভিল?, বিরক্ত পুনুচ্চারণে বললেন, কে নেভিল? ওতো হ্যারি পটার।

উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল স্ট্যান, আমি জানতাম। আৰ্ণ! আৰ্ণ! ভাবতে পারো নেভিল আসলে কে? ও হচ্ছে হ্যারি পটার। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যারি পটার, ওই যে আমি তার দাগটা দেখতে পাচ্ছি।

হ্যাঁ।, বললেন ফাজ, নাইট বাস ওকে তুলে নিয়ে ভালোই করেছে কিন্তু এখন আমাদেরকে লিইকি কলড্রনে ঢোকা দরকার..।

ফাজ হ্যারির কাঁধের ওপর হাতের চাপ বাড়ালো। হ্যারি বুঝতে পারলো ওকে কেন ঘুরিয়ে বার-এর ভেতর ঢোকানো হচ্ছে। বার-এর পেছন থেকে হ্যারিকেন হাতে কুঁজো একটা লোক এগিয়ে এলো। লোকটা টম, বার-এর মালিক।

ওকে পেয়েছেন? বলল টম, আপনাদের কিছু চাই? বিয়ার? কনিয়াক?

সম্ভব হলে চা, জবাব দিলেন মন্ত্রী। হ্যারির কাঁধ থেকে এখনও ওর হাত সরানো হয়নি।

পেছন থেকে টানা হেঁচড়ার বিকট শব্দ পাওয়া গেলো। স্ট্যান এবং আর্ণকে দেখা গেলো হ্যারির বাক্স পেটরা, হেডউইগের খাঁচা টেনে টুনে নিয়ে আসছে। চারদিক তাকাচ্ছে, ওরা উত্তেজিত।

নেভিল তুমি তো বলোনি আসলে তুমি কে? দাঁত কেলিয়ে বলল স্ট্যান আর ওর কাঁধের ওপর দিয়ে, উঁকি দিচ্ছে আৰ্ণির পেঁচার মতো মুখখানা।

ফাজ বললেন, টম, একটা প্রাইভেট রুম প্লিজ।

বিদায় স্ট্যান আর আৰ্ণিকে বেজার মুখে বলল হ্যারি। টম ফাজকে বার-এর প্যাসেজটার দিকে ইশারা করল।

বিদায়, নেভিল, জোরের সঙ্গে বলল স্ট্যান।

টমের হ্যারিকেনের পেছন পেছন ফাজ হ্যারিকে নিয়ে চলল, সরু প্যাসেজটা ধরে এগিয়ে ওরা একটা বসার ঘরে চলে এলো। টম দুই আঙুলে ক্লিক করলে ফায়ারপ্লেসটাতে আগুন ধরে গেলো। মাথা নুইয়ে বো করে বিদায় নিল সে।

বসো, আগুনের কাছে একটি চেয়ার দেখিয়ে ওকে বসতে বললেন মন্ত্রী ফাজ।

হ্যারি বসলো। ভেতরে ভেতরে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে ও। লম্বা স্ট্রাইপড কোর্তাটা খুলে একপাশে ছুঁড়ে ফেললেন ফাজ। বটল গ্রীন সুটের প্যান্টটাকে ওপরের দিকে তুলে হ্যারির উল্টোদিকে বসলেন।

হ্যারি, আমি কর্ণেলিয়াস ফাজ, ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।

খবরটা হ্যারির অজানা নয়। কিন্তু মন্ত্রীকে ওর জানা সম্পর্কে ধারণা না দেয়াই ভালো। ট্রের ওপর চায়ের পট আর টোস্ট সাজিয়ে টম আবার হাজির হলো। ফাজ এবং হ্যারির মাঝখানের টেবিলে ট্রেটা রেখে চলে গেলো। যাওয়ার সময় দরজাটা বন্ধ করে গেলো।

যেভাবে তোমার আন্টির বাসা থেকে পালিয়েছ আমাদেরকে তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে। একেবারে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে গিয়েছিল, হ্যারিকে উদ্দেশ্যে করে এতক্ষণে বললেন ফাজ। কিন্তু এখন তুমি নিরাপদ… তোমার ভয়ের কিছু নেই।

টোস্টে মাখন লাগিয়ে ফাজ প্লেটটা হ্যারির দিকে ঠেলে দিল।

খাও। মনে হচ্ছে তুমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেছো… এখন তুমি জেনে খুশি হবে যে তোমার আন্টি মার্জ ডার্সলির দুঃখজনকভাবে ফুলে ওঠার ঘটনাটিকে আমরা সামাল দিয়ে ফেলেছি। দুর্ঘটনাজনিত ম্যাজিক বিভাগের দুইজন সদস্য কয়েক ঘন্টা আগে প্রাইভেট ড্রাইভে চলে গেছে। মিস ডার্সলিকে ফুটো করে স্বাভাবিক আকৃতিতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তার স্মৃতিকে সংস্কার করা হয়েছে। ওই ঘটনাটি তার আর মনে থাকবে না, সেই ব্যবস্থাও করা হয়ে গেছে। তাহলে মিস্টার হ্যারি সব কুছ ঠিক হ্যায় এবং কারো কোন ক্ষতিও হলো না, কি বলো?

চায়ের কাপের ওপর দিয়ে ফাজ দেখল হ্যারিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে, যেন চাচা দেখছে প্রিয় ভাতিজাকে। হ্যারি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলল। বলার মতো কিছুই ভেবে পেল না। আবার মুখ বন্ধ করে ফেলল।

আহ হ্যারি তোমার আংকল এবং আন্টি সম্পর্কে ভাবছ। প্রথমে তারা ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিল সন্দেহ নেই। এখন অবশ্য হোগার্টস-এ খ্রীস্টমাস আর ইস্টার কাটানোর পর গরমের ছুটিতে ওরা তোমাকে বাসায় পেলে আপত্তি করবে না।

হ্যারি গলাটা পরিষ্কার করল।

খ্রীস্টমাস আর ইস্টার ছুটিতে সবসময়ই আমি হোগার্টস-এ থাকি। আর প্রাইভেট ড্রাইভে ফিরে যেতে চাই না।

এত রাগ করে না। মাথা ঠান্ডা হলে নিশ্চয়ই তুমি অন্যরকম ভাববে। ওরাই তোমার রক্তের বন্ধন, পরিবার। মনের গভীরে তোমরা একে অন্যকে পছন্দই কর।

ফাজ-এর ভুল ভাঙানোর কথা এখন আর হ্যারি ভাবছে না। ও ভাবছে ওর নিজের ভবিষ্যতের কথা। এরপর ওর কী হবে?

এখন বাকী থাকল শুধু তোমার ছুটির শেষ দুই সপ্তাহ। এই দুই সপ্তাহ তুমি কোথায় কাটাবে? আরেকটা টোস্টে মাখন লাগাতে লাগাতে হ্যারিকে প্রশ্ন করলেন ফাজ। উত্তরটাও নিজেই দিলেন, আমার প্রস্তাব হচ্ছে তুমি এইখানে মানে এই লিইকি কলড্রনেই একটা রুম নিয়ে…

কিন্তু আমার শাস্তির কী হবে? হঠাৎ করেই বলে ফেলল হ্যারি।

এবার চোখ পিট পিট করে হ্যারির দিকে তাকালেন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয়।

শাস্তি?

আমি যে আইন ভেঙ্গেছি, হ্যারি বলল, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাজিক প্র্যাকটিস করার বিরুদ্ধে যে ডিক্রি রয়েছে সেই ডিক্রি অমান্য করার কী হবে?

ওরকম তুচ্ছ একটা ঘটনার জন্যে নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে কোন শাস্তি দেব না, হাতের টোস্টটা নাড়াতে নাড়াতে অধৈর্যের সঙ্গে বললেন ফাজ, ওটা একটা অ্যাকসিডেন্ট। আংকল বা আন্টিকে ফোলানোর জন্যে আমরা কাউকে আজকাবানে পাঠাই না।

কিন্তু ওর সঙ্গে হ্যারির ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের যে অতীত রফাগুলো হয়েছিল তার কোন মিল নেই। গত বছর একটা গৃহ-ডাইনী আমার আংকল-এর ঘরে একটা পুডিং নষ্ট করেছিল বলে আমাকে সরকারিভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। ম্যাজিক মন্ত্রণালয় বলেছিল ওখানে আর কোন যাদু হলে আমাকে হোগার্টস থেকে বহিষ্কার করা হবে।

হ্যারির চোখ যদি ভুল না দেখে থাকে, ফাজকে হঠাৎ বিব্রতই মনে হলো। অবস্থার পরিবর্তন হয় হ্যারি–আমাদের অনেক কিছুই বিবেচনায় নিতে হয়… তুমি নিশ্চয়ই বহিস্কৃত হতে চাওনা?

অবশ্যই না।

তাহলে আর এত কথা কেন, নাও এখন টোস্ট খাও, আমি গিয়ে দেখছি টম তোমার রুমটা ঠিক করেছে কিনা, বলে হেলেদুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ফাজ।

একটা রহস্য নিশ্চয়ই আছে, ভাবলো হ্যারি, না হলে মন্ত্রী ফাজ কেন তার জন্যে এই লিইকি কলড্রনে অত রাতে অপেক্ষা করবেন, যদি না সে যা করেছে তার জন্যে শাস্তি দেয়ার ব্যাপার থাকে। ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, নিজে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাজিক প্র্যাকটিস সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়বেন এটাও কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

ফাজ ফিরে এলেন। হ্যারির চিন্তায় বাধা পড়ল।

এগারো নম্বর রুম খালি আছে, বললেন ফাজ, আমার মনে হয় ওখানে তোমার ভালোই লাগবে। আর একটা বিষয়, আমি চাই না তুমি মাগল লন্ডনে ঘুরে বেড়াও। আশা করি ব্যাপারটা তুমি বুঝবে। ডায়গন অ্যালির মধ্যেই থাকবে এবং অন্ধকার হওয়ার আগেই এখানে ফিরে আসতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমার হয়ে টম তোমার গতিবিধির ওপর নজর রাখবে।

ঠিক আছে, ধীরে ধীরে বলল হ্যারি, কিন্তু কেন?

আমরা আবার তোমাকে হারাতে চাই না, ফাজের সহাস্য মন্তব্য, না না সেটাও হয়তো নয়… এইভাবে আমরা জানতে পারবো তুমি আছো কোথায়… বুঝতেই পারছো… মানে…

এখন আমাকে যেতে হচ্ছে। অনেক কাজ পড়ে আছে জানত, ডোরাকাটা আলখাল্লাটা তুলে নিতে নিতে বললেন ফাজ।

ব্ল্যাকের ব্যাপারে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো? মানে কোন খবর.. হ্যারি জিজ্ঞাসা করল।

আলখাল্লাটা পরছিলেন ফাজ, আঙুল পিছলে গেল।

কি বললে? ওহ! তুমিও শুনেছ না, মানে এখনও ওকে ধরা যায়নি বটে, তবে ধরা ওকে পড়তেই হবে। সময়ের ব্যাপার মাত্র। আজকাবানের ওরা কখনই ব্যর্থ হয় না। ওরা ভীষণ ক্ষেপে আছে। আমি ওদেরকে এমন ক্ষেপতে দেখিনি কখনও।

আমাকে এখন যেতেই হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে দিল ফাজ। করমর্দন করতে করতে হ্যারির মাথায় একটা আইডিয়া এলো।

মিস্টার মিনিস্টার আপনাকে একটা কথা বলতে পারি? বলল সে।

স্বচ্ছন্দে।

হোগার্টস-এর থার্ড ইয়ারে হগসমিড-এ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু আমার আংকল-আন্টি অনুমোদন ফরম-এ স্বাক্ষর করেননি। আপনি করতে পারেন না?

মন্ত্রী ফাজকে এখন আবার বিব্রত হতে দেখা গেলো।

না, না, দুঃখিত হ্যারি, আমি তোমার পিতাও নই অভিভাবকও নই

কিন্তু আপনি তো ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, আপনি যদি পারমিশন দেন।

না, আমি দুঃখিত। নিয়ম নিয়মই, এবার ফাজ সোজা সাপটা বলে ফেলল। হয়তো আগামী বছর যেতে পারবে। আসলে আমি মনে করছি তোমার হগসমিডে যাওয়াই বোধহয় ঠিক নয়… হ্যাঁ সেটাই বোধহয় ঠিক… আচ্ছা আমাকে এখন যেতে হবে। ভালো থেকো। এঞ্জয় ইওরসেল্ফ।

শেষ একটা হাসি দিয়ে হ্যারির হাতটা আবার মর্দন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ফাজ।

স্মিত হাস্যে টম এগিয়ে এলো হ্যারির দিকে।

মিস্টার পটার যদি আমার সঙ্গে আসেন। আমি আপনার জিনিসগুলো এরই মধ্যে ওপরে নিয়ে গেছি।

টমকে অনুসরণ করল হ্যারি। চমৎকার একটি কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওরা দোতালায় উঠে এলো। পিতল দিয়ে এগারো লেখা দরজাটা ওর জন্যে খুলে দিল টম।

ভেতরে চমৎকার আরামদায়ক বিছানা, ওক কাঠের কয়েকটি ফার্নিচার, ফায়ার–প্লেসটাতে আগুন জ্বলছে। এবং ওয়ার্ডরোবের ওপরে বসে

হেডউইগ! বিস্ময়ে হতবাক হ্যারি।

বরফ সাদা পেঁচাটা ওর ঠোঁট দুটো নাচালো। উড়ে এসে বসলো হ্যারির হাতে।

খুব স্মার্ট পেঁচা আপনার মিস্টার হ্যারি, বলল টম। আপনার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই এখানে এসেছে। কোন কিছু দরকার হলে চাইতে সংকোচ করবেন না।

মাথাটা একবার নুইয়ে চলে গেলো টম।

বিমনা হয়ে অনেকক্ষণ বিছানার ওপরই বসে থাকলো হ্যারি। ধীরে ধীরে হাত বুলালো হেডউইগের মাথায়। বাইরের আকাশটা দ্রুত রং বদলাচ্ছে। ঘন মখমলি নীল থেকে ঠাণ্ডা স্টিলের ধূসর, তারপর ধীরে ধীরে সোনা মেশানো গোলাপীতে। হ্যারির কাছে পুরো ব্যাপারটা এখনও অবিশ্বাস্য ঠেকছে। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সে প্রাইভেট ড্রাইভ ছেড়ে এসেছে। তাকে এখনো হোগার্টস থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। এবং তার সামনে রয়েছে দুদুটো ডার্সলি মুক্ত সপ্তাহ।

হাই তুলে হেডউইগকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, বড় অস্বাভাবিক একটা রাত গেলো হে!

এবং সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। চশমাটাও খুলল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *