০১. কুড়ুলে-বিনোদপুরের বিখ্যাত বস্ত্রব্যবসায়ী

দেবযান – উপন্যাস – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

১.

সৰ্ব্বাজীবে সৰ্ব্বসংস্থে বৃহন্তে।
অস্মিন্ হংসো ভ্রাম্যতে ব্রহ্মচক্রে

–শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ

২.

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি
ন্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোইয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।

–ভগবদগীতা

৩.

But Mind, Life and Matter, the lower trilogy, are also indispensable to all cosmic beings not necessarily in the form or with the action and conditions which we know upon earth or in this material universe, but in some kind of action however luminous, how ever puissant, however subtle. For Mind is essentialy that faculty of super-mind which measures and limits, which fixes a particular centre and views from that the cosmic movement.

SRI AUROBINDO’S
The Life Divine, Vol. I.

৪.

Beyond these subtle physical planes of experience and the life-worlds there are also mental planes to which the soul seems to have an internatal access… but it is not likely to live consciously there if there has not been a sufficient mental or soul development in this life…

৫.

We know that he creates images of these superior planes which are often mental translation of certain elements in them and erects his images into a system, a form in actual worlds; he builds up also desireworlds of many kinds to which he attaches a strong sense of inner reality.

Vol. III, p. 77.

৬.

We arrive then necessarily at this conclusion that human birth is a term at which the soul must arrive in a long succession of rebirths and that it has had for its previous and preparatory terms in the succession the lower forms of life upon earth…

৭.

“God is Love and object of Love. Divine Love is not a thing of God: it is God Himself. God needs us just as we need God. This universe is the mere Visible tangi ble aspect of Love and of the need of love.”

HENRI BERGSON.

.

০১.

কুড়ুলে-বিনোদপুরের বিখ্যাত বস্ত্রব্যবসায়ী রায়সাহেব ভরসারাম কুন্ডুর একমাত্র কন্যার আজ বিবাহ। বরপক্ষের নিবাস কলকাতা, আজই বেলা তিনটের সময় মোটরে ও রিজার্ভ বাসে কলকাতা থেকে বর ও বরযাত্রীরা এসেচে। অমন ফুল দিয়ে সাজানো মোটর গাড়ী এদেশের লোক কখনো দেখেনি। পুকুরের ধারে নহবৎ-মঞ্চে নহবৎ বসেচে, রং-বেরঙের কাপড় ও শালু দিয়ে হোগলার আসর সাজানো। হয়েছে। খুব জাঁকের বিয়ে।

রাত সাড়ে ন’টা। রায়সাহেবের বাড়ীর বড় নাটমন্দিরে বরযাত্রীদের খেতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সকলেই কলকাতার বাবু, কুড়লে বিনোদপুরের মত অজপাড়াগাঁয়ে যে তাঁদের শুভাগমন ঘটেছে, এতে রায়সাহেব কৃতার্থ হয়ে গিয়েচেন, বার বার বিনীতভাবে বরযাত্রীদের সামনে এই কথাই তিনি জানাচ্ছিলেন। সভামন্ডপ থেকে নানারকম শব্দ উত্থিত হচ্ছিল।

–ও কি পালমশায়, না-না-মাছের মুছোটা ফেললে চলবে না–

–ওরে এদিকে একবার ভাতের বালতিটা (অর্থাৎ পোলাও-এর বালতি–পোলাওকে ভাত বলাই নিয়ম, তাতে সভ্যতা, সুরুচি ও বড়মানুষী চালের বিশিষ্ট পরিচয় দেওয়া হয়) নিয়ে আয় না–এঁদের পাত যে একেবারেই খালি–সন্দেশ আর দুটো নিতেই হবে–আজ্ঞে না, তা শুনবো না–বাটাছানার না হলেও পাড়াগাঁয়ের জিনিসটা একবার চেখে দেখুন দয়া করে–

ওদিকে যখন সবাই বরযাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত, নাটমন্দিরের সামনে উঠানে একপাশে বিভিন্ন গ্রামের কতকগুলি সাধারণ লোক খেতে বসেচে। তাদের মধ্যে একজন ব্রাহ্মণ, কিন্তু অত্যন্ত দরিদ্র–সে অন্য লোকদের সঙ্গে নিজের পার্থক্য বজায় রেখে একটু কোণ মেরে বসেচে। বসলে কি হবে, এদের দিকে পরিবেশনের মানুষ আদৌ নেই-ফলে এরা হাত তুলে খালি-পাত কোলে বসে আছে।

ব্রাহ্মণযুবকের নাম যতীন। পাশের গ্রামের বেশ সৎ বংশের ছেলে। বয়েস তার পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। লোকটি বড়ই হতভাগ্য। বেশ সুন্দর চেহারা, লেখাপড়া ভালই জানে, এম্-এ পর্যন্ত পড়ে গান্ধীজীর নন কো-অপারেশনের সময় কলেজ ছেড়ে বাড়ী আছে। বিবাহ করেছিল, কয়েকটি ছেলেমেয়েও আছে, আজ কয়েক বৎসর তার স্ত্রী তার সঙ্গে ঝগড়া করে ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ী গিয়ে উঠেছে। এখানে নিজেও আসে না, ছেলেমেয়েদেরও আসতে দেয় না। যতীনের বাপ-মা কেউ জীবিত নন–সুতরাং বড় বাড়ীর মধ্যে ওকে নিতান্তই একা। থাকতে হয়, তার ওপর ঘোর দারিদ্র্যের কষ্ট। একজনের খরচ, তাই চলে না।

ভরসারাম কুণ্ডুর ছোটভাই ওদের পাতের সামনে দিয়ে যেতে যেতে ওকে দেখতে পেয়ে বলে উঠলো–আরে এই যে যতীন, পাচ্চ-টাচ্চ তো সব? ওরে কে আছিস্ এদিকে পাতে লুচি দিয়ে যা–

যতীনের মনটা খুশি হ’ল। এতক্ষণ সত্যিই তাদের এখানে দেখবার লোক ছিল না। আয়োজন খুব বড় বটে কিন্তু পরিবেশন করবার ও দেখাশুনো করবার লোকের অভাবে সাধারণ নিমন্ত্রিতদের অদৃষ্টে বিশেষ কিছু জুটচে না।

আহারাদি শেষ হয়ে গেল! এখুনি পুকুরের ধারে বাজি পোড়ানো। হবে, কলকাতা থেকে বরপক্ষ ভাল বাজি এনেচে। এসব পাড়াগাঁয়ে অমন কেউ দেখেনি। বাজি দেখবার জন্যে পুকুরের ধারে লোকে লোকারণ্য হয়েছে। যতীনও তাদের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো।

হুস্ শব্দে একটা হাউই আকাশে উঠে গিয়ে প্রায় নক্ষত্রের গায়ে ঠেকে ঠেকে তারপর লাল নীল সবুজ ফুল কেটে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে লাগলো।

দলের অনেকে চীৎকার করে উঠলো, আগুন লাগবে। আগুন লাগবে।

দু-চারবার এ রকম তারাবাজি উঠলো নামলো, কারো ঘরের চালে আগুন লাগলো না দেখে উদ্বিগ্ন লোকদের মন শান্ত হোল।

তারাবাজি একটার গায়ে একটা হুস্ করে আকাশে উঠছিল, আর যতীন আশ্চর্য হয়ে সে দিকে চেয়ে দেখচিল একদৃষ্টে ঊর্ধ্বমুখে। বহুদিন ধরে সে পাড়াগাঁয়ে নিতান্ত দুরাবস্থায় পড়ে আছে, অনেকদিন ভাল কিছু দেখে নি। কলকাতার সে ছাত্রজীবন এখন আর মনে পড়ে যেন–সে সব যেন গত জন্মের কাহিনী।

সূতোরগাছির মেঘনাথ চক্কত্তি ওকে দেখে বল্লে–এই যে যতীন। আজ রায়সাহেবের বাড়ী খেলে নাকি? তোমার নেমন্তন্ন ছিল? তা তোমাদের বলতে সাহস করে–কই আমাদের বলুক দিকি? ছোট জাত তিলি-তামলি, না হয় দুটো টাকাই হয়েছে, তা বলে ব্রাহ্মণদের নেমন্তন করে খাওয়াবে বাড়ীতে! তোমরা গিয়ে গিয়ে নিজেদের মান। খুইয়েচ তাই তোমাদের বলতে সাহস করে—ছিঃ–

যতীন যখন বাড়ী পৌঁছলো তখন রাত্রি দ্বিপ্রহর।

বাঁশবনের মধ্যে সুড়ি পথ পেরিয়ে ওর পৈতৃক আমলের কোঠা। অনেকগুলো ঘরদোর, বাইরের চন্ডীমণ্ডপ, তবে এখন সবই শ্রীহীন। একটা ধানের বড় গোলা ছিল, অর্থকষ্টে পড়ে গত মাঘমাসে সে সাড়ে সাত টাকায় গোলাটা বিক্রী করে ফেলেচে। গোলার ইটে-গাঁথুনির্সিড়ি ক’খানা মাত্র বর্তমান আছে।

আলো জ্বেলে নিজের বিছানাটা পেতে নিয়েই সে আলোটা নিভিয়ে দিলে–তেলের পয়সা জোটে কোথা থেকে যে আলো জ্বালিয়ে রাখবে? অন্ধকারে শূন্য বাড়ীতে একা বসলেই মনে পড়ে আশালতার কথা।

আশালতা কি করে এত নিষ্ঠুর হতে পারলে? বিয়ের পরে প্রথম পাঁচ বছরের কথা মনে হোলে তার বুকের মধ্যে কেমন করে ওঠে। এই ধরনের কত শ্রাবণ-রাত্রিতে ঐ ছাদে সে কত নিভৃত আনন্দ মুহূর্তের কাহিনী এই বাড়ীর বাতাসে আজও বাজে, কত মিষ্টি কথা, কত চাপা হাসি, কত সপ্রেম চাহনি।

মনে পড়ে তারা দুজনে একসঙ্গে তারকেশ্বর গিয়েছিল একবার, তখন যতীনের বড় ছেলেটি আট মাসের শিশু। যাবার আগের দিন রাত্রে আশা রাত একটা পর্যন্ত জেগে খাবার তৈরী করলে। বল্লে, তোমায় কোথাও বাজারের খাবার খেতে দেবো না। নানারকম অসুখ করে যা-তা খাবার খেলে। তার চেয়ে তৈরী করে নিলুম, সস্তাও হবে কেনা খাবারের চেয়ে। ওখানে গিয়ে বাবার প্রসাদ খেলেই চলবে, পথে এই যা করে নিলুম এতেই কুলিয়ে যাবে।

পথে দুষ্টুমি করে যতীন সব খাবার খেয়ে ফেলেছিল নৈহাটি যাবার আগেই, আশাকে ঠকাবার জন্যে। নৈহাটি স্টেশনে খাবার খেতে চাইলে আশা অপ্রতিভ হয়ে পড়লো, খাবার একটুকরোও নেই। যতীন হেসে বল্লে–কেমন, বাজারের খাবার কিনতে হবে না যে বড়! এখন কি হয়?

হয়তো অতি তুচ্ছ ঘটনা। কিন্তু এই তুচ্ছ ঘটনাই পরের পাঁচ ছ’মাস তাদের দুজনকে অফুরন্ত হাসির ফোয়ারা জুগিয়েছিল।–মনে। আছে সেই নৈহাটি স্টেশনের কথা? কি হয়েছিল বল তো?

–যাও যাও, পেটুক গণেশ কোথাকার! আমি কি করে জানবো। যে-ইত্যাদি…

আহা, প্রথম যৌবনের স্বপ্নে রঙীন্ রাগ-সাগরের লীলাচঞ্চল বীচিমালার সে কত চপল নৃত্য! কোথায় মিলিয়ে গিয়েছে, মিশিয়ে গিয়েচে, অতলতলে তলিয়ে গিয়েছে সে সব দিন–তার ঠিকানা নেই, খোঁজ নেই, খবর নেই।।

সেই আশালতা আছে তার বাপের বাড়ীতে। আজ পাঁচ বছরের মধ্যে একখানা চিঠি দেয়নি যে তার স্বামী বেঁচে আছে না মরেচে। সেও শ্বশুড়বাড়ী যায় না; একবার বছর তিনেক আগে গিয়েছিল, নিতান্ত না থাকতে পেরে। আগে থেকে একখানা চিঠি দিয়েছিল যে সে যাচ্চে।

দুপুরের আগে সে গিয়ে পৌঁছুলো। অনেক আগ্রহ করে গিয়েছিল। শাশুড়ীঠাকরুণ রান্নাঘরের দাওয়ায় বসে কুটনো কুটছিলেন, তাকে দেখে যেন ভূত দেখলেন। যতীন গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে পায়ের ধুলো নিতেই তিনি উদাসীন সুরে বল্লেন–থা থাক্‌ হয়েছে, তারপর, এখন কি মনে করে এখানে?

–এই সব দেখাশুনো করতে এলাম। ছেলেমেয়ে সব ভাল আছে? কোথায় সব?

–ঐ যে বাইরের দিকে খেলা করছে–ডেকে দিচ্ছি।

যতীন স্ত্রীর কথাটা লজ্জায় উল্লেখ করতে পারলে না।

ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করলে। তাদের মায়ের কথা জিজ্ঞেস। করতে গিয়ে যতীনের মনে হোল তারা কি একটা যেন ঢাকচে। ছেলেমেয়েও সব পর হয়ে গিয়েচে, ওর কাছে বড় একটা ঘেঁষতে চায় না আর। ছোট মেয়েটা তো তাকে দেখে নি বল্লেই হয়, আশা যখন চলে এসেছিল তখন খুকীর বয়েস এক বছর মাত্র।

খাওয়া-দাওয়ার সময়েও আশাকে দেখা গেল না। তার ঘরেও নয়। ওর মনে ভয় হোল, আশা বেঁচে আছে তো? লজ্জা ও সঙ্কোচ কাটিয়ে শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস করল–ওদের মা কোথায়? দেখচি নে যে?

শাশুড়ী তাড়াতাড়ি বল্লেন–সে এখানে নেই বাপু। সে আজ দিন দশেক হোল গিয়েছে, তার দিদির শ্বশুরবাড়ী বারাসতে। তারা অনেকদিন থেকে নিয়ে যাবে নিয়ে যাবে করছিল, তা আমি বলি যাক বাপু দুদিন একটু বেড়িয়ে আসুক। জীবনে তো তার সুখের সীমা নেই!

যতীন ভীষণ নিরাশ হোল। সে যে কত কি মনে ভেবে এসেছে, আশাকে বলবে–চল আশা, যা হবার তা হয়ে গিয়েচে–ঘরের লক্ষ্মী। ঘরে চলো। কাকে নিয়ে কাটাই বলো তো তুমি যদি এমন করে থাকবে?

তারপর শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস্ করলে–কবে আসবে?

–আসা-আসির এখন ঠিক নেই। এ মাসে তো নয়ই, পূজোর সময় পর্যন্তও থাকতে পারে। এখানে রাঁধবার লোক নেই, বুড়োমানুষ। এতগুলো লোকের ভাতজল করচি দুবেলা, প্রাণ বেরিয়ে গেল।

শেষের কথাটি যে তাকে চলে যাবার ইঙ্গিত, যতীনের তা বুঝতে দেরি হোল না। বিকেলের দিকেই সে ভগ্নমনে বাড়ীর দিকে রওনা হোল। পথে তার খুড়তুতো শালী আন্না, দশ বছরের মেয়ে, অশথ তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে দেখে কাছে এসে বল্লে–দাদাবাবু, আজই এলেন, আজই চল্লেন যে। রইলেন না?

–না, সব দেখাশুনো করে গেলুম। তা ছাড়া তোর দিদি তো এখানে। নেই, অনেকদিন পরে এলুম, প্রায় বছর দুই পরে, দেখাটা হোল না।

আন্না কেমন এক অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চাইলে–তারপরে এদিক ওদিক চেয়ে সুর নিচু করে বল্লে–একটা কথা বলবো দাদাবাবু, কাউকে বলবেন না আগে বলুন!

যতীন বল্লে–না, বলছি নে। কি কথা রে আন্না?

–দিদি এখানেই আছে, কোথাও যায় নি। আপনার আসবার খবর পেয়ে চৌধুরীদের বাড়ী ওর সই-মার কাছে লুকিয়ে আছে। জ্যাঠাইমা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে আপনার কাছে এসব কথা না বলতে।

যতীন বিস্মিত হয়ে বল্লে–ঠিক বলছিস্ আন্না!

পরেই বালিকার সরল চোখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারলে এ প্রশ্ন নিরর্থক। সে দৃষ্টিতে মিথ্যার ভাঁজ ছিল না।

যতীন চলে আসছে, আন্না বল্লে–আজ থেকে গেলেন না কেন। দাদাবাবু?

–না, থাকা হবে না আন্না। বাড়ীতে কাজকর্ম ফেলে এসেচি বুঝলি নে?

আন্না আবার বল্লেদিদিকে একবার চুপি চুপি বলে আসবো যে আপনি চলে যাচ্ছেন, যদি দেখা করে? যাবো দাদাবাবু?

বালিকার সুরে করুণা ও সহানুভূতি মাখানো। সে ছেলেমানুষ হলেও বুঝেছিল যতীনের প্রতি তার শ্বশুরবাড়ীর আচরণের রূঢ়তা। বিশেষ করে তার নিজের স্ত্রীর।

যতীন অবিশ্যি রইল না, চলেই এল।

চলে এল বটে, কিন্তু যে যতীন গিয়েছিল, সে যতীন আর আসে নি। মনভাঙা দেহটা কোনো রকমে বাড়ীতে টেনে এনেছিল মাত্র।

তারপর দীর্ঘ তিন বছর কেটে গিয়েচে। একথা ঠিক যে, সে রকম বেদনা তার মনে এখন আর নেই, থাকলে সে পাগল হয়ে যেতো। সময় তার ক্ষতে অনেকখানি প্রলেপ বুলিয়ে জ্বালা জুড়িয়ে এনেচে। কিন্তু এমন দিন, এমন রাত্রি আসে যখন স্মৃতির দংশন অসহ্য হয়ে ওঠে।

তবুও নীরবে সহ্য করতে হয়। তা ছাড়া আর উপায় কিছু তো নেই। এই ক’বছরের মানসিক যন্ত্রণায় ওর শরীর গিয়েছে, মন গিয়েছে, উৎসাহ নেই, আগ্রহ নেই, অর্থ উপার্জনের স্পৃহা নেই, মান-অপমান বোধ নেই।

যে যা বলে বলুক, দিন কোনো রকমে কেটে গেলেই হোল। কিসে কি এসে যায়? তেলি-তামলির বাড়ী নেমন্তন্ন খেলেই বা কি, রবাহূত অনাহূত গেলেই বা কি, লোকে নিন্দে করলেই বা কি, প্রশংসা করলেই বা কি। কিছু ভাল লাগে না–কিছু ভাল লাগে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *