হরিশচন্দ্র মুখার্জি (সম্পাদক, হিন্দু পেট্রিয়ট)
কুলীন ব্রাহ্মণের সন্তান বাবু হরিশচন্দ্র মুখার্জির পিতা সাতটি বিবাহ করেছিলেন। তাঁর কনিষ্ঠতমা পত্নীর মাতামহের গৃহে হরিশচন্দ্রের জন্ম হয় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে। কলকাতা থেকে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত ভবানীপুর গ্রামের বর্ধিষ্ণু ও সম্মানিত অধিবাসী ছিলেন হরিশচন্দ্রের মাতামহ। সে যুগের কুপ্রথা অনুযায়ী কুলীন ব্রাহ্মণ ইচ্ছে হলেই বিয়ে করতেন, অনেক সময় এরূপ পাত্রের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্য কোন কুলীন ব্রাহ্মণকে কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করতে প্রায় বাধ্য করা হত, আর এইভাবে বিবাহিতা স্ত্রীদের দুঃখ দুর্দশার অন্ত থাকত না, এঁদের কেউ কেউ হয়তো হীন জীবনেও নেমে যেতে বাধ্য হতেন। সেই রীতি অনুযায়ী হরিশচন্দ্রের মাকেও পিতৃগৃহে থেকে সন্তান পালন করতে হত। শৈশবে হরিশচন্দ্র বাড়িতেই তাঁর দাদার কাছে ইংরেজি শেখেন; সাত বছর বয়সে তাঁকে ভবানীপুরের একটি ইংরেজি বিদ্যালয়ে, দরিদ্র বলে বিনা বেতনের ছাত্র হিসাবে, ভর্তি করে নেওয়া হয়। তাঁর বয়সের বিবেচনায় তাঁর মেধা ও স্মৃতিশক্তি দেখে বিদ্যালয়ের ডিরেক্টরবর্গ এতই বিস্মিত হন যে, তাঁর মাত্র তের বছর বয়সে তাঁকে হিন্দু কলেজের উচ্চতর শ্রেণির ছাত্রদের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে প্রায় বাধ্য করা হয়; সময় অত্যন্ত অল্প থাকায় সফল তিনি হতে পারেন নি, কিন্তু উপযুক্ত প্রস্তুতির সময় পেলে তাঁর মতো মেধাবী ছাত্র যে সাফল্য লাভ করতেন; এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। যে যাই হোক পরিস্থিতির চাপে তাঁকে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাট এখানেই শেষ করে জীবিকার সন্ধানে বের হতে হল। মেসার্স টুল্লাহ্ অ্যান্ড কোম্পানির নিলাম ঘরে মাসিক আট টাকা মাইনের একটা চাকরিও তাঁর অল্প দিনের মধ্যে জুটে গেল।
হীন চাকরি, হেয় কাজ, কিন্তু চাকরি পেয়ে তিনি যেন হাতে স্বর্গ পেলেন; কারণ, তাঁদের সাংসারিক অবস্থা এমন যে, ঠিকমত গ্রাসাচ্ছাদনও চলে না। একদিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, এক জমিদারের মোক্তার তাঁকে দুটি টাকা দিয়ে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বাঙলা দলিল ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে না নিলে, সেদিন তাঁর নিরুপায় উপবাসেই কাটত। পরবর্তীকালে তাঁর বেতন বৃদ্ধি পেয়ে হল দশ টাকা। টুল্লাহ্ কোম্পানিতে বেশ কয়েক বছর তাঁর কেটে গেল। ১৮৫১তে মিলিটারি (অ্যাকাউন্টস) ডিপার্টমেন্টে একটি পদ খালি হল : মাসিক বেতন ২৫ টাকা, কিন্তু ভবিষ্যতে উন্নতির আশা থাকায় বহু ব্যক্তি ঐ পদের জন্য আবেদন করেন, হরিশচন্দ্র ও আবেদন করেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাদ্বারা পদটি পূরণের ব্যবস্থা হল। পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করে হরিশচন্দ্রই এই পদে নিযুক্ত হলেন। অতি বাল্যকাল থেকেই তাঁর অধ্যয়ন স্পৃহা ছিল প্রবল; বিদ্যালয়ে তিনিই ছিলেন সর্বাপেক্ষা অধিক অধ্যয়নশীল বালক। জীবনে যে ক্ষেত্রেই তিনি অধিষ্ঠিত থাকুন, অধ্যয়নশীলতা ছিল তাঁর আজাবনের অভ্যাস। দৈন্যজনিত বিপত্তির জন্য বাধা অবশ্যই মাঝে মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, এ অভ্যাস কিন্তু তিনি কখনও ছাড়েন নি। পরিস্থিতি এখন অনেকটা অনুকুল হল। বেতন পেতে লাগলেন এখন দ্বিগুণেরও বেশি। ওদিকে, নতুন চাকরির ক্ষেত্রে তাঁর কর্তব্যানুরাগ, কাজে নিষ্ঠা ও উন্নতমানের কাজের জন্য উচ্চতর সকল আধিকারিকই তাঁর প্রতি প্রসন্ন হয়ে উঠলেন। হরিশের অতৃপ্ত অধ্যয়নশীলতার পরিচয় পেয়ে তাঁরা তাঁকে নিজ নিজ পুস্তক ও জ্ঞান দ্বারা সাহায্য করতে লাগলেন। কিন্তু তাঁর মেধা, অর্জিত জ্ঞান ও জানার আগ্রহ এত বিপুল, যে তাদের দেওয়া সামান্য কয়েক খন্ড পুস্তকে তার তৃপ্তি সম্ভব ছিল না। কাজেই তিনি স্থির করলেন ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য হবেন। মাসিক চাঁদা ২ টাকা; মাইনে কম; ঐ অল্প বেতন থেকেই দুটি টাকা তিনি এই উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখতে লাগলেন। অফিসের ছুটির পর মেটকাফ হলে গিয়ে তিনি গভীর অভিনিবেশ সহকারে অধ্যয়নে মগ্ন হতেন; তিনি ইতিহাস, দর্শন ও রাজনীতি বিষয়ক বই পড়ে বিশেষ আনন্দ পেতেন।
অফিসারদের মধ্যে কর্নেল গোলডিক ও কর্নেল শ্যাপেনেজ তাঁর বুদ্ধিমত্তা শুরুতেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সানন্দেই তাঁরা তাঁকে উচ্চতর ও অধিকতর সম্মানজনক পদে উন্নীত করবার চেষ্টা করতে লাগলেন। তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে তাঁর মাসিক মাইনে ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা হল। হরিশ কিন্তু কারও অনুগ্রহের প্রত্যাশী ছিলেন না। অত্যন্ত তেজী মানুষ হরিশচন্দ্র এক এক সময় অফিসারের অন্যায় অভিযোগ বা ভিত্তিহীন দোষারোপ মেনে না নিয়ে, প্রতিবাদ করে, অফিসি কেতার দিক থেকে ‘অপরাধ’-ই করে ফেলতেন বলা যায়। একবার তাঁর করা একটা হিসাবের ভুল ধরে কর্নেল শ্যাপেনেজ তাঁকে বকাবকি করেন; কিন্তু হরিশ জানতেন তাঁর কোন ভুল হয়নি ভুল করেছেন কর্নেল নিজে; এই নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে ব্যাপার এতদূর গড়ায় যে হরিশ পদত্যাগ করতে উদ্যত হন। পদত্যাগ অবশ্য তাঁকে করতে হয়নি। কর্নেল শ্যাপেনেজ একে তো তাঁর গুণগ্রাহী, তার ওপর মানুষের যে উদারতা ও মহানুভবতা থাকলে মানুষ নিজের ভুল বোঝবার ও স্বীকার করবার ক্ষমতা পায়, কর্নেলের সে-সব গুণ ছিল। ব্যাপারটা ‘দেওয়া নেওয়া’র মধ্যে মিটে যায়। এরপর কর্নেল তাঁকে অনেকটা বন্ধুর মতো করেই গ্রহণ করলেন; একজন প্রতিভাধরের প্রাপ্য মর্যাদাও দিতে থাকলেন। অল্পকালের মধ্যেই হরিশকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অডিটর পদে উন্নীত করা হল– পদমর্যাদার সঙ্গে বেতনও মর্যাদাসূচক স্তরে পৌঁছল; মৃত্যুর কয়েকমাস আগে হরিশচন্দ্রের মাসিক বেতন বেড়ে হয়েছিল ৪০০ টাকা।
অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলেও এই সময় তাঁর সাহিত্য সংক্রান্ত কার্যকলাপ বন্ধ ছিল না। পন্ডিত ব্যক্তি ও লেখক হিসাবে খ্যাতি অর্জনের উচ্চাশা নিয়ে তিনি পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখছিলেন। অন্য লক্ষ্যও তাঁর ছিল। দেশবাসীর ওপর অনুষ্ঠিত অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিনিধিত্ব করে তিনি জননেতা হবার উচ্চাশা পোষণ করতেন—-তাঁর বিশ্বাস ছিল, তাঁর অনুসৃত পথেই অবিচার অত্যাচারের প্রতিকার হবে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি হিন্দু ইনটেলিজেন্সার পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক কাশীপ্রসাদ ঘোষের সঙ্গে পরিচয় করলেন–হয়ে উঠলেন, এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান লেখক। ভুল বুঝাবুঝির ফলে ইনটেলিজেনসারের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে তিনি বেঙ্গল রেকর্ডারের সম্পাদকত্ব গ্রহণ করলেন। অল্পকাল পরে রেকর্ডার উঠে গেলে, হিন্দু পেট্রিয়ট তার স্থান অধিকার করল, কিন্তু পেট্রিয়টের প্রচার ছিল সীমিত; তার ওপর পর পর তিন বছর বিপুল লোকসান হওয়ায় পত্রিকাটির মালিক পত্রিকা ইজারা দিয়ে, ছাপাখানা ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করে দিতে চাইলেন। এতে দুঃখ পেয়ে হরিশ তাঁর মিত্যবয়িতা দ্বারা সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সে-সব কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পত্রিকাটির স্বল্প প্রচার তাঁকে বিমুখ করতে পারল না, কারণ স্বীয় শক্তি সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন– বিশ্বাস ছিল সামান্য উপকরণ নিয়েও তিনি সফল হতে পারবেন। ১৮৫৫-র জুন মাস থেকে তিনি হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা পরিচালনা করতে লাগলেন। প্রথম দিকে তিনি আদৌ সাফল্য লাভ করতে পারেন নি, কিন্তু অদম্য উৎসাহ নিয়ে তিনি প্রতিটি বাধাবিপত্তি জয় করে এগিয়ে চললেন। ফলে, অল্পকালের মধ্যে পত্রিকাটি বিখ্যাত হয়ে উঠল। মহা (বা সিপাহী) বিদ্রোহের সময়, বাঙালীর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের কলঙ্ক অপনয়নে পেট্রিয়টে শক্তিশালী প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে লাগল। পেট্রিয়ট পত্রিকা অপেক্ষাও কিছু বেশি ছিল; এতে বিখ্যাত পশ্চিমী চিন্তাবিদদের গ্রন্থসমূহের ওপর বিশ্লেষণাত্মক নিবন্ধ থাকত। হ্যাঁমিলটন ও অন্যান্য দার্শনিকদের চিন্তাধারা বিষয়ে এতে উল্লেখযোগ্য লেখা থাকত। কিন্তু তাঁর এবং তাঁর পত্রিকার খ্যাতি ছড়িয়েছিল অন্য কারণে।
কয়েক বছর পূর্বে নীলচাষ দ্বারা ভারতের মাটি উর্বর করার জন্য এবং অত্যাচার করে ‘ভারতীয় জনগণকে সুখী করবার’ উদ্দেশ্য নিয়ে একদল লোককে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ থেকে এদেশে পাঠান হয়েছিল। ভারতীয় চাষীদের ওপর চরম অত্যাচার চালিয়ে এই নীলকররা কীভাবে তাদের নীলচাষ করতে বাধ্য করত–সে কাহিনী এই সেদিনের, তাই সকলেই সে সম্পর্কে ওয়াকেফাল। তার পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। টাকা করাই ছিল নীলকরদের একমাত্র উদ্দেশ্য। অর্থ উপার্জনে সফল হলেই, কি পদ্ধতিতে সেটা সাধিত হল, সে ব্যাপারে তারা আদৌ চিন্তিত ছিল না। তাদের বেপরোয়া পদ্ধতি কল্পনা করা কঠিন নয়; আগুন, তলোয়ার, চাবুক, মুগুর, লাথি আর অশ্রাব্য গালিগালাজ ছিল তাদের পদ্ধতির অঙ্গ। মানবিক কোন বোধ তাদের অন্তরে ছিল না। পুরুষদের সম্মানবোধ বা নারীর সতীত্বের কোনো মূল্যই এরা দিতে জানত না।
এমন অকথ্য অত্যাচারে অতি দুর্বল চরিত্রের মানুষও ফুঁসে ওঠে। এই ক্ষুদে তানাশাহদের বিরুদ্ধে বাংলার রায়তরাও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ করলেন। কিন্তু নীলকরদের প্রবল প্রভাবপ্রতিপত্তির বিরুদ্ধে এদের দুর্বল প্রতিরোধ বিশেষ কার্যকর হল না; শক্তিশালী, উদ্যমী এবং নিঃস্বার্থ কোন ব্যক্তি তাঁদের পক্ষে না দাঁড়ালে সফল হবার কোন আশাই তাঁদের ছিল না। এই সংকটকালে, হরিশ তাঁর সমগ্র শক্তি নিয়ে রায়তদের পক্ষে দাঁড়ালেন। নীলকরদের অচিন্তনীয় অবিচার, অভাবিত শক্তি প্রয়োগ, বর্বর নিষ্ঠুরতার একটা-না-একটা সজীব বিবরণ প্রেটিয়টের পাতায় দিনের পর দিন প্রকাশিত হতে লাগল। সঠিক বর্ণনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় নিজ ব্যয়ে লোক (সংবাদদাতা) রেখেছিলেন। (ফলে) যে আলোড়নের সৃষ্টি হল তার সম্মুখীন হয়ে সরকার প্রকৃত পরিস্থিতি জানবার জন্য একটি কমিশন নিয়োগ করতে বাধ্য হলেন। হরিশচন্দ্র সহ বহু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হল। সাক্ষ্যদানে প্ৰধান ভূমিকা ছিল হরিশচন্দ্রের। এইভাবে নিপীড়িত কৃষকদের ওপর অনুষ্ঠিত অত্যাচার সর্বসমক্ষে ‘ফাঁস করে’ দিয়ে তিনি বিরাট বিপদের ঝুঁকি নিজের কাঁধে তুলে নিলেন! নীলকরগণ তাঁর ওপর মহাক্রুদ্ধ হয়ে উঠল; গালিগালাজ করাকে যারা সাংবাদিকতা ভাবে, তেমন কতকগুলি সংবাদপত্র দিনের পর দিন তাঁর ওপর বিষ বর্ষণ করে চলেছিল। নীলকরদের শত্রুতা বা তথাকথিত সংবাদপত্র সমূহের গালিগালাজকে তিনি আদৌ গ্রাহ্য করতেন না। নিন্দা প্রশংসা সব কিছু অগ্রাহ্য করে তিনি অবিচল রইলেন নিজ কর্তব্যে। শুধু নৈতিক বা বৌদ্ধিক সহায়তা নয়, প্রয়োজনে তিনি নির্যাতিত কৃষকদের আর্থিক সাহায্যও দিতেন। তাঁর বাড়ীতে অত্যাচারক্লিষ্ট কৃষকদের ভিড় লেগে থাকত। তাঁদের দুঃখের কাহিনী শুনতে শুনতে হরিশচন্দ্র কেঁদে ফেলতেন। তিনি কৃষকদের খেতে দিতেন, পরামর্শ দিতেন, অর্থ দিতেন আর দিতেন আশা। একে পবিত্র কর্তব্য বলে তিনি মনে করতেন; এই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি অন্তর অর্থ ও শক্তি দিয়ে যথাসাধ্য দেশ, দেশবাসী ও ঈশ্বরের প্রতি তাঁর কর্তব্য করে চললেন। সংগ্রামে কৃষকগণ জয়ী হয়েছেন, এ খবর শুনে মৃত্যুশয্যায় শায়িত হরিশের নিষ্প্রভ চক্ষু দুটি উজ্জল হয়ে উঠত; এর থেকেই বোঝা যায়, কী উদগ্র আগ্রহ, কত নিঃস্বার্থ উদ্যম নিয়ে তিনি নিপীড়িতের দুঃখ মোচনে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন–বরং বলা যায় তিনি নিপীড়িত কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে হরিশচন্দ্রের মৃত্যু হয়। অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমই যে তাঁর অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। স্বাস্থ্যের যখন তাঁর অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থা, যে অবস্থায় সাধারণ মানুষ শয্যায় আশ্রয় নেয়, তখনও তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। পরের মঙ্গল সাধন চেষ্টায় তিনি ছিলেন অদম্য। দারিদ্র্য দেখলেই তাঁর দানের হাত প্রসারিত হত। একবার অত্যন্ত লাভদায়ক একটা পেশা গ্রহণের জন্য তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হলে, তিনি বলেন, ও কাজ নিলে, ওতেই তো আমার সমস্ত সময় কেটে যাবে, অপরের জন্য ব্যয় করবার মতো সময় পাব কোথায়? দরিদ্রের প্রতি বন্ধুত্ব প্রসারের উৎসাহে তিনি বহু ধনী, মানী ব্যক্তিকে শত্রুতে পরিণত করে বসেন। দৃঢ়চেতা হরিশচন্দ্র সেজন্য ভীত হবার মানুষ ছিলেন না। স্বগ্রামকেও তিনি বহুলাংশে উন্নত করেছিলেন। সাধারণ বিষয় আলোচনার জন্য তিনি সেখানে একটি ‘অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রন্থাগারটি ‘হরিশচন্দ্র মুখার্জির গ্রন্থাগার’ নামে এখনও অভিহিত হয়ে চলেছে।