বাবু রামদাস সেন, মজিদার, বহরমপুর
দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত সেনের পৌত্র ও বাবু লালমোহন সেনের পুত্র বাবু রামদাস সেন বহরমপুরের একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার। বর্তমানে তাঁর বয়স ত্রিশ বছর মাত্র, জনসাধারণের মধ্যে ইনি “সাহিত্যিক জমিদার” নামে পরিচিত। বাস্তবে তিনি একজন পুরাতত্ত্ববিদ। ডাঃ এম মিচেলের বিদুষী পত্নী শ্রীমতী মারে মিচেল তাঁর ‘ইন ইন্ডিয়া’ নামক ভ্রমণ বৃত্তান্তে বাবু রামদাস সম্পর্কে লিখেছেন :
“দেখলাম ইনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান, সুশিক্ষিত এবং একান্ত বিনয়ী মানুষ। এই তরুণ জমিদারের সঙ্গে ডাঃ মিচেলের মনোগ্রাহী আলোচনা হয়, তাঁর মতে বাবু রামদাস সেন সংস্কৃতে গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী।”
তাঁর কবিতা ও সনেটের একখানি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে তিনি বঙ্গদর্শন পত্রিকায় বিশেষ পান্ডিত্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধ “ঐতিহাসিক রহস্য” নামে পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। অনুমতি নিয়ে তিনি পুস্তকখানি ডাঃ ম্যাক্সমুলারকে উৎসর্গ করেন। লন্ডনের ওরিয়েন্টাল কংগ্রেসে উক্ত মহাপন্ডিত পুস্তকখানির বিশেষ প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে মিঃ বার্গেস ‘অ্যান্টিকুইরি’ নামক পত্রিকা পরিচালনা করেছেন; এতে ত্রিবাঙ্কুরের মাননীয় রাজা বহরমপুরের জমিদার রামদাস সেন, কাশীনাথ টি তেলাং, শেষাদ্রী শাস্ত্রী ও অপর কয়েকজনের মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে; প্রবন্ধগুলি ইউরোপীয় পন্ডিতবর্গের নিকট একাধারে আকর্ষণীয় এবং শিক্ষাপ্রদ। পুস্তকখানি সম্পর্কে ক্যালকাটা রিভিউ মন্তব্য করেন, ‘ভারতীয় ইতিবৃত্তের বিপুল কিন্তু অবিন্যস্ত উপকরণসমূহকে ইতিহাসাশ্রয়ী একটা রূপ দেবার মহৎ ও পরিশ্রমসাধ্য যে উদ্যম আমাদের দেশবাসীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তারই এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হল এই “ঐতিহাসিক রহস্য” পুস্তকখানি। কয়েক খন্ডে পুস্তকখানি সমাপ্ত হবে; এর দ্বিতীয় খন্ডের মুদ্রণ চলছে এবং তৃতীয় খন্ডটি প্রস্তুতির পথে। আধুনিক বৌদ্ধতাত্ত্বিক গবেষণা বিসয়ে বাবু রামদাস সেনের বক্তৃতা প্রসঙ্গে মন্তব্য করে ‘ন্যাশন্যাল ম্যাগাজিন’ লেখে, “সফল পুরাতাত্ত্বিকের সকল গুণই বাবু রামদাস সেনের আছে।” সাহিত্য ও গবেষণাকার্যে লিপ্ত থাকা ছাড়াও, তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া, সাংসকৃট টেক্সট সোসাইটি অব লন্ডন, অ্যাকাডেমিয়া ওরিয়েনতেল ফ্লোরেন্স প্রভৃতির সদস্য।
মুর্শিদাবাদ, ২৪ পরগণা, হুগলী, নদীয়া, দিনাজপুর, মেদিনীপুর, প্রভৃতি জেলাতে তাঁর জমিদারী আছে। বহরমপুরে তাঁর একটি অতিথিশালা আছে, সেখানে প্রতিদিন বহুসংখ্যক দরিদ্রনারায়ণকে আহার্য দান করা হয়।