1 of 3

হন্তদন্ত

হন্তদন্ত

সমস্যার পর সমস্যা।

অস্থির হয়ে পড়েছেন হরেন মিত্র। এতই অস্থির হয়েছেন তিনি যে একেক সময় আশঙ্কাষিত বোধ করছেন, পাগল না হয়ে যাই।

না, এখনও পাগল হয়ে যাননি তিনি। কিন্তু এত সমস্যার ধাক্কা সামলানো সহজ নয়।

বিপদ আর সমস্যা কখনও একা আসে না। এক সমস্যার ঘাড়ে এসে আরেক সমস্যা চেপে বসে। ঘরের দেয়ালের দিকে তাকালেন হরেনবাবু, সেখানে ইস্কুলের একটা বাতিল ব্ল্যাকবোর্ড টাঙানো আছে। সেখানে এখনও ঝকঝকে অক্ষরে লেখা আছে ন্যালাখ্যাপা, সেই ন্যালাখ্যাপার সমস্যা না মিটতেই এখন ঘাড়ে এসে পড়েছে হন্তদন্ত

হরেনবাবুর বর্তমান বৃত্তান্ত আরম্ভ করার আগে হরেন মিত্র লোকটির ইতিহাস একটু বলে নিই।

হরেন মিত্র সম্পর্কে লোকটি বলা অবশ্য সঠিক হল না। হরেনবাবু কিছুদিন আগেও কলাখোঁপা রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বাড়ির অবস্থা খারাপ নয়। বাগুইহাটিতে পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। পঞ্চাশের এদিকে বয়েস, বিয়ে করেননি। সংসার চালাবার দায় বা ঝামেলা নেই। এই বাড়িতেই তাঁর দুই ভাইপো থাকে। তাদের আলাদা আলাদা হেঁসেল, বিয়ের পর বউদের মধ্যে সদা সর্বদা খিটিমিটি লাগায় হরেনবাবুই মধ্যস্থতা করে তাদের ভিন্ন করে দিয়েছেন। এতে অবশ্য পরবর্তীকালে হরেনবাবুরই সুবিধে হয়েছে। দুই ভাইপোর হেঁসেলে এক মাস এক মাস করে অন্নগ্রহণ করেন, বিনিময়ে তাদের কিছু অর্থ সাহায্য করেন।

শিক্ষক জীবনে হরেনবাবু অত্যন্ত মারকুটে ছিলেন। ছাত্রদের বেধড়ক পেটাতেন। শুধু তাই নয়। এক তরুণ শিক্ষক কাজে নতুন যোগদান করেছিলেন। টি শার্ট এবং জিনস পরা সেই শিক্ষকটি ক্লাসে ঢোকার মুখে, জীবনে প্রথম ক্লাস নেওয়া তাই একটি সিগারেট টেনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনোবল সংগ্রহ করছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই নতুন শিক্ষককে হরেনবাবু আগে দেখেননি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধূমপানরত অবস্থায় তাকে দেখে ছাত্ৰভ্রমে হরেনবাবু তার কান ধরে বারান্দার ওপরে নিল ডাউন করিয়ে দেন।

এই ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে হরেনবাবুকে শিক্ষকতার চাকরিটি মানে মানে ছাড়তে হয়। কিছু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ছিল, সামান্য পেনশনও পাবেন। তাতে মোটামুটি চলে যাচ্ছে।

তা ছাড়া হরেনবাবু নতুন একটা কাজ জোগাড় করেছেন। তার পাড়ায় কলেজ স্ট্রিটের একজন প্রকাশক আছেন। সেই প্রকাশকের বইগুলোর তিনি প্রুফ দেখে দেন।

প্রুফ দেখা খুব কঠিন কাজ। তবে হরেনবাবু একনিষ্ঠ, পরিশ্রমী এবং বানান সচেতন। তিনি খুব ভাল প্রুফ দেখেন। প্রকাশক মশায়েরও তার ওপর খুবই আস্থা।

কিন্তু এই প্রুফ দেখতে গিয়েই যত বিপদ আর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বিপদ প্রকাশক মশায়ের, যিনি পাড়ায় ভুতোবাবু নামে পরিচিত। ভুতোবাবু ছাপোষা মানুষ, বইয়ের ব্যবসা করেন। তবে তিনি তো পণ্ডিত লোক নন। তা ছাড়া খুব পণ্ডিত লোকও হরেনবাবুর কাছে সহজে পার পাবে না।

হরেনবাবুর যেটা সমস্যা, ভুতোবাবুর সেটাই বিপদ। প্রুফ দেখতে দেখতে কথায় কথায়, সময়ে অসময়ে হরেনবাবু ভুতোবাবুর কাছে ছুটে আসেন।

মাসখানেক আগের একটা ঘটনা বলি।

রাত এগারোটা, ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ ঘনঘন কলিংবেলের আওয়াজে জানলার খড়খড়ি তুলে ভুতোবাবু দেখেন সদর দরজায় ছাতা মাথায় হরেনবাবু দাঁড়িয়ে।

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে হরেনবাবুকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে ভুতবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার। হরেনবাবু? এই বৃষ্টির মধ্যে, এত রাতে?

হরেনবাবু ভেজা ছাতাটা দরজার একপাশে রাখতে রাখতে বললেন, আপনার বনবিহারীবাবুর উপন্যাসের প্রুফটা দেখতে গিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়ে গেছি।

এই অসময়ে কী এমন সমস্যা হল? কপিতে কোনও গোলমাল?–ভুতোবাবু ঘুমচোখে প্রশ্ন করেন।

হরেনবাবু বলেন, না, কপিতে কোনও গোলমাল নেই। কপি চমৎকার, কিন্তু ওই যে বনবিহারী লিখেছেন, …ভুবন চক্রবর্তী মানুষটি একটু ন্যালাখ্যাপা গোছের। …তা এই ন্যালাখ্যাপা কথাটার মানে কী?

ভুতোবাবু একটু অবাক হয়ে বললেন, ডিকশনারি দেখেছেন? সেখানে নেই?

হরেনবাবু বললেন, তা একটু আছে। কিন্তু শব্দটা এল কোথা থেকে?

বিরক্ত হয়ে ভুতোবাবু বললেন, তা যেখান থেকেই আসুক। বনবিহারীবাবু বড় লেখক, তিনি যখন শব্দটা ব্যবহার করেছেন। আপনি প্রুফ দেখে ছেড়ে দিন।

হরেনবাবুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, এ কী বলছেন আপনি? আপনি একটা বই ছাপছেন, সেই বইয়ে এমন একটা শব্দ আছে, যেটা কোথা থেকে এসেছে। আপনি কিছু জানেন না। এ হয় নাকি?

মধ্যরাতে আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে! আপাতত হরেনবাবুকে এড়ানোর জন্যে ভুতোবাবু বললেন, ঠিক আছে, আমি দু-একদিনের মধ্যে বনবিহারীবাবুর কাছ থেকে জেনে এসে আপনাকে বলব।

প্রশ্নটা শুনে বনবিহারীবাবু হো হো করে হেসে উঠেছিলেন। প্রবীণ প্রতিষ্ঠিত লেখক, ভুতোবাবু তাকে আর ঘাঁটাতে সাহস পাননি। পাড়ায় এসে হরেনবাবুকে বলেছিলেন, বনবিহারীবাবুর আন্ত্রিক হয়েছে, নার্সিংহোমে আছেন। তাই জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

হরেনবাবু বললেন, খবরের কাগজে যে দেখলাম বনবিহারীবাবু ভবানীপুর হিতসাধিনী সভার শতবর্ষ উৎসবে কালকেই সভাপতি হয়েছেন।

কোনওরকমে আমতা আমতা করে ভুতোবাবু বললেন, তারপরেই তো ঘটনাটা ঘটল। হিতসাধিনী সভার শেষে ওখানেই চা-সিঙাড়া-জিলিপি দিয়ে জলযোগ করেছিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বমি, পেট ব্যথা। তারপরে ওই ভবানীপুরেই নার্সিংহোমে তাকে ভর্তি করা হয়।

হরেনবাবু কী বুঝলেন কে জানে! ওই ন্যালাখ্যাপা শব্দ নিয়ে তিনি আর ভুতোবাবুকে জ্বালাতন করেননি। সমস্যাসংকুল ন্যালাখ্যাপা শব্দটি তিনি তার ব্ল্যাকবোর্ডে তুলে দিয়েছেন।

এই ব্ল্যাকবোর্ডটির একটি ব্যাপার আছে। শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছা-অবসরের পর ফেয়ারওয়েলের সময় তিনি ছাত্র বা শিক্ষকদের তরফ থেকে কোনও উপহার না নিয়ে বিদ্যালয়ের একটি পুরনো ব্ল্যাকবোর্ড চেয়ে নেন।

তারপর সেই ব্ল্যাকবোর্ডটির নামকরণ করেন সমস্যা। যেসব শব্দ নিয়ে সমস্যা হবে, সেগুলোর কোনও সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এখানেই লেখা থাকবে, যাতে সমস্যাটি সব সময়ে চোখের সামনে থাকে।

আজ সপ্তাহ চারেক ন্যালাখ্যাপা শব্দটি ব্ল্যাকবোর্ড আলো করে রয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল আবার হন্তদন্ত যোগ হয়েছে।

তরুণ কবি মোজাম্মেল হকের নতুন কাব্যগ্রন্থটির নাম হন্তদন্ত। নাম কবিতাটিও হন্তদন্ত। বইটি ভুতোবাবুই প্রকাশ করছেন।

নাম কবিতাটি এইভাবে আরম্ভ হয়েছে,

হসন্তগুলি কোথায় পালালো
হন্তদন্ত তদন্ত করা ভালো।

বইয়ের নাম, কবিতার নাম, তার ওপরে প্রথম কবিতার দ্বিতীয় পংক্তিতে আবার হন্তদন্ত, সব মিলে হরেনবাবুকে বিপর্যস্ত করে দিল।

ন্যালাখ্যাপার সমস্যা না মেটার আগেই তিনি অন্য কোনও সমস্যায় জড়িত হতে চাইছিলেন না। কিন্তু উপায় নেই হন্তদন্ত তার ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। সঙ্গে অনেক প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে। 

লোকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। এসে বলে, আজ ব্যাপারটার একটা হন্তদন্ত করতে চাই। কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে হরেনবাবু ভাবেন, এই দুই হন্তদন্তের মানে তো এক হতে পারে না।

আর শেষ পর্যন্ত মানে যাই হোক, হন্তদন্ত কথাটা তৈরি হল কী করে? মনের গভীরে প্রশ্নের বুদ্বুদ উঠছে তো উঠছেই, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে হরেনবাবু ন্যাল্যাখ্যাপার নীচে লিখলেন হন্তদন্ত।

ইচ্ছে করলে এখনই তিনি ভুতোবাবুকে গিয়ে ধরতে পারেন, কবি মোজাম্মেলের কাছ থেকে জেনে আসার জন্যে হন্তদন্তের ব্যাপারটা। কিন্তু তার ওপরে হরেনবাবুর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু ন্যালাখ্যাপা নয়, তারপরেও অর্ধচন্দ্র, হড়িকাঠ এবং গোঁফ-খেজুরে নিয়ে ভুতোবাবু রীতিমতো বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

তবে এগুলো সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারেনি। কলাখোঁপা ইস্কুলে গিয়ে পেনশনের তাগাদা দেয়ার সময়ে স্কুল লাইব্রেরি থেকে পুরনো আমলের অতিকায় বাংলা অভিধান থেকে এগুলোর অর্থ ও ব্যুৎপত্তি পেয়ে গেছেন এবং সন্তুষ্ট হয়েছেন।

কয়েকদিন আগে জগাখিচুড়ির পাল্লায় পড়েন হরেনবাবু। অথচ জগাখিচুড়ির ব্যাপারটা খুব সহজে সমাধান হয়েছিল।

জগাখিচুড়ি হাসির গল্পের পাঁচ নম্বর লেখক গয়ারাম দাসের আশু প্রকাশিতব্য গল্প সংকলন। হাসির গল্পের লেখকদের নম্বর ফুটবলের নম্বরের মতো। যত বড় লেখা তত বেশি নম্বর, পাঁচ হল সবচেয়ে বড় নম্বর।

জগাখিচুড়ি বইটার প্রুফ হাতে পেয়ে গয়ারামবাবুকে পাড়ার বুথ থেকে ফোন করেছিলেন হরেনবাবু। গয়ারাম তার পুরনো বন্ধু, এক সময়ে কলাখোঁপা ইস্কুলে তিনি ড্রিল মাস্টার ছিলেন। সেই সঙ্গে সংস্কৃতের সেকেন্ড পণ্ডিত। সংস্কৃত উঠে গেল, ড্রিল উঠে গেল! গয়ারাম মনের দুঃখে মাস্টারি ছেড়ে হাসির গল্প লিখতে লাগলেন।

 গয়ারামের সঙ্গে হরেনবাবুর বন্ধুত্ব আজও ছিন্ন হয়নি। গত বছরই গয়ারামের মেয়ের বিয়েতে তিনি নেমন্তন্ন খেয়ে এসেছেন। গয়ারামকে ফোন করা মাত্র তিনি হরেনবাবুকে জগাখিচুড়ির বৃত্তান্ত সংক্ষিপ্ত করে ফোনেই শোনালেন।

জগা নামে এক পাগল থাকত কালীঘাট মন্দিরের চত্বরে। তার হাবভাব পাগলদের মধ্যেও ছিল অতি অস্বাভাবিক। কোমরে খুপরির তলোয়ার, হাতে বাঁশের তির ধনুক, কপালে কাঁঠালপাতার মুকুট–সে সবসময় বীর রাজার বেশে থাকত। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যাবেলা কালীঘাট বাজারের সবজি আর মুদি দোকানিদের কাছ থেকে অল্প করে সবজি-চাল-ডাল-নুন-মশলা চেয়ে নিত। ভাল খারাপ নানারকম চাল, মুগ-মসুর-ছোলা সব রকম ডাল, কচু থেকে কাঁচকলা, ফাটা আলু, শুকনো বেগুন যে যা দিত–তাই জগা নিয়ে ঝুলিতে ভরত। তারপর রাতে ইটের উনুনে বিরাট মাটির হাঁড়িতে সব মিলিয়ে খিচুড়ি রান্না হত। সেই খিচুড়ি মন্দিরের সব ভিখিরির সঙ্গে ভাল করে জগা খেত।

 সেই থেকে জগাখিচুড়ি। জগাখিচুড়ি নাকি ছিল অতি উপাদেয়। গয়ারাম আরও বলেছিলেন যে ওই জগা ছিল সাধুপুরুষ, নিজের মৃত্যুর কথা সে বুঝতে পারে। সেদিন রাতে জগাখিচুড়ি বেঁধে সবাইকে খাইয়ে সে মন্দিরের সামনে কাঠের তলোয়ার নিয়ে একা একা লড়াই শুরু করে আর গলা খুলে গান গাইতে থাকে–

যম জিনিতে যায় রে জগা
যম জিনিতে যায়।

সেই রাতেই জগা মৃত্যুবরণ করে।

জগাখিচুড়ির কাহিনি শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন হরেনবাবু। সামান্য একটা চালু কথার পিছনে কত বড় গল্প। সেই থেকে তার আরও ঝোঁক বেড়ে গেছে সব গোলমেলে শব্দের মর্মার্থ জানার।

অবশ্য ন্যালাখ্যাপা শব্দটা এরপর প্রায় ঘাড়ের থেকে নামিয়ে দিয়েছেন হরেনবাবু। ধরে নিয়েছেন ওটাও ওই জগাখিচুড়ির মতো ন্যালা নামে কোনও খ্যাপার ব্যাপার।

কিন্তু এখন হন্তদন্ত ঘাড়ে ভূতের মতন চেপেছে। হরেনবাবু কলাখোঁপা ইস্কুলে গিয়ে সুবল চন্দ্র মিত্রের বাঙ্গালা অভিধান খুঁজে এসেছেন। সেখানে হন্তদন্ত নেই। ভুতোবাবুর কাছে জিজ্ঞাসা করেও কোনও লাভ নেই। তা ছাড়া আগেই বলেছি, তার ওপরে এখন আর হরেনবাবুর বিশ্বাসই নেই। অবশ্য কবি মোজাম্মেল হককে গিয়ে ধরা যেতে পারে। কিন্তু হয়তো দেখা যাবে, সে ছোকরাও কিছু জানে না। তার কবিতাগুলোর প্রুফ দেখার সময়েই হরেনবাবুর মনে হয়েছিল এই ব্যক্তি অনেক কিছু না বুঝে অনুমানে লিখেছে।

দিশেহারা হয়ে গেছেন হরেনবাবু। এই অবস্থায় একদিন অন্যমনস্কভাবে পথ চলতে গিয়ে একটা ইটে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন হরেনবাবু। পথের লোকজন তাকে টেনে তুলে পাশের ডাক্তারখানায় নিয়ে গেল।

পাড়ার মধ্যেই, ডাক্তারবাবু চেনা। তিনি ভাল করে দেখলেন। সামনের একটা দাঁত ভেঙে গেছে, আর ঠোঁটটা একটু কেটে গেছে। ওষুধপত্র দেওয়া হল।

ডাক্তারবাবু বললেন, আমি আপনাকে মাঝেমধ্যেই দেখি, রাস্তা দিয়ে এমন অন্যমনস্ক চলাফেরা করেন। সর্বক্ষণ এত কী ভাবেন মশায়?

ভাঙা দাঁতের গোড়ায় জিব বুলিয়ে হরেনবাবু বললেন, একটা শব্দের মানে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

ডাক্তারবাবু বললেন, শব্দের মানে নিয়ে চিন্তা? কী সে শব্দ?

হরেনবাবু বললেন, হন্তদন্ত।

ডাক্তারবাবু বললেন, এই শব্দ নিয়ে এত মাথাব্যথা? আপনি নিজেই এখন হন্ত দন্ত। হন্ত মানে হত, দন্ত মানে দাঁত, পুরো মানে আপনার দাঁত হত হয়েছে।

হরেনবাবু অবাক। ডাক্তারবাবু কত সহজে শব্দটার মানে ধরতে পেরেছেন। ফাটা ঠোঁট আর ভাঙা দাঁতের দুঃখ ভুলে নিশ্চিন্ত মনে তিনি বাড়ি রওনা হলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *