1 of 3

গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি

গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি

বন্ধুতে বন্ধুতে, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে নানা রকমের যৌথ কারবার হয়।

রাস্তাঘাটে, খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে হামেশাই দেখতে পাওয়া যায় চক্রবর্তী অ্যান্ড চ্যাটার্জি কোম্পানি কিংবা জি.সি. দত্ত অ্যান্ড সনস। অবশ্য শুধুমাত্র সনসেই ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ নয়।

এ পাড়াতেই মোড়ের মাথায় আছে, কে. কে. মিটার অ্যান্ড গ্র্যান্ডসনসের ঘড়ির দোকান। তার থেকে কিছুটা এগিয়েই ঘোষ ব্রাদার্সের মিষ্টির দোকান। সনস এবং ব্রাদার্সের পরেও একটু এদিক ওদিক খোঁজ করলেই নেফিউ, কাজিন এদেরও দেখা যায়। দরজি মহম্মদ আলি অ্যান্ড নেফিউ, গয়নার দোকান দত্ত কাজিনস খুবই বিখ্যাত।

সুতরাং গয়া এবং গঙ্গা দুইজনে মিলে একটি ভ্যারাইটি স্টোরস খুলেছে, তাতে বিস্ময়ের ব্যাপার কিছু নেই। অন্তত, আপাতত তাই মনে হয়।

কিন্তু ব্যাপারটা অন্য রকম। গয়া-গঙ্গা এই দুজনে পিতাপুত্র, ভাইবন্ধু, আত্মীয়স্বজন নয়।

গয়া-গঙ্গা পরস্পর সম্পর্ক হল যে তারা স্বামী-স্ত্রী। সংক্ষেপে নাম গয়া-গঙ্গা হলেও পুরো নাম হল গয়ারাম দাস এবং গঙ্গামণি দাসী।

বাজারের মধ্যে একটা পুরনো, পারিবারিক মুদির দোকান ছিল গয়ারামদের। গঙ্গামণির অপুত্রক পিতার মৃত্যুর পর সে কিছু ধনসম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। তারই কিছু অংশ ব্যবহার করে নামহীন মুদির দোকানের জায়গায় কাঁচের রঙিন সাইনবোর্ড ফ্লুরোসেন্ট আলো জ্বালা গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরস হয়েছে।

গয়ারাম অকৃতজ্ঞ নয়। স্ত্রীর টাকা নিজ ব্যবসায়ে অনেকেই বিনিয়োগ করে। কিন্তু সে এটাকে। কাগজপত্রে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ব্যবসা করেছে, যা একেবারে অভিনব। এবং তেমনি অভিনব এই গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরস নামকরণ, উভয়েরই নামে কোনও দোকান আর বোধহয় কোথাও। নেই। দেশে বিদেশে হাজার জায়গা খুঁজেও ওরকম নামের একটা ব্যবসা বা দোকান খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গয়ারাম অবশ্য এ কাজটা, এই নামকরণের ব্যাপারটা সচেতন ভাবে করেনি। এর গুরুত্বও সে বোঝে না। বোঝার দরকারও নেই।

সপ্তাহের শেষে রবিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় বাজারে-দোকানে ভিড় খুব কম হয়। কেনাকাটা প্রায় থাকে না বললেই চলে।

অনেক বাজারই রবিবারের সন্ধ্যায় বসে না। যেসব বাজার খোলা থাকে, সমস্ত দোকান খোলা থাকে না। অধিকাংশ বন্ধ।

রবিবার অপরাহ্নে যাঁরা বাজারে আসেন প্রায় সকলেই মহিলা, বাড়ির গিন্নি বান্নি। সপ্তাহান্তিক মোটা বাজারটা বাড়ির কর্তারা শনিবার ছুটি থাকলে ওই দিন সকালে বা সন্ধ্যায় সেরে ফেলেন। না। হলে রবিবারের সকালে।

রবিবার সন্ধ্যায় গৃহিণীরা বাজারে আসেন প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়, খুচরো বা শৌখিন কিছু কেনাকাটা করতে। পাশের বাড়ির তমালী এক পাতা চৌকো বিন্দি কিনেছে, তাই শ্যামলী কিনতে এসেছেন এক পাতা ছক্কা বিন্দি। এই রকম আর কী। যাঁরা জানেন না, এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন।, যাদের বিদ্যাবুদ্ধি খবরের কাগজের হেডলাইন পর্যন্ত, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই যে, বিন্দি হল মেয়েদের কপালের রঙিন (এবং সাদা) এক পিঠে আঠা লাগানো টিপ। চৌকো আর ছক্কা বিন্দি হল, যথাক্রমে চতুর্ভুজ এবং ষড়ভুজ আকারের।

তবে শুধু বিন্দিই নয়, সদ্য দূরদর্শনে দেখা দুর্গন্ধ দূরীকরণ সাবান, জীবানুনাশক টুথপেস্ট, বর্ণে-গন্ধে অনুপম গুঁড়োমশলা রবিবার সন্ধ্যায় তমালী দেবী, শ্যামলী দেবীরা কিনতে বেরোন।

রবিবারের সন্ধ্যাটাই গৃহিণীদের নিজস্ব সময়। ছেলেমেয়েদের ইস্কুল থেকে ফেরার ব্যাপার নেই। ক্ষুধার্ত গৃহকর্তার ঘর্মাক্ত কলেবরে অফিস কাছারি সেরে বাড়ি আসা নেই। এমনকী কাজের মেয়েটিরও এই অপরাহ্নে ছুটি।

গৃহিণীরা বাজারে আসেন, কিন্তু এই সন্ধ্যায় অতি অল্প দোকান খোলা থাকে। তার মধ্যে একটি হল এই আমাদের গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরস।

গয়ারাম জানেন খদ্দের হিসেবে মেয়েরা ভাল। অধিকাংশ ওজন ব্যাপারটা কিছুই বোঝে না, হিসেবও ভাল করতে পারে না।

আর আজকের বাজারে হিসেব করাও কম কঠিন নয়। সাড়ে তেরো টাকা দরের জিনিস আড়াইশো গ্রাম কিনে দশ টাকার নোট দিলে কত ফেরত পাওয়া যাবে এ হিসেব করতে গেলে বাঘা বাঘা অঙ্কের ছাত্রেরা হিমশিম খেয়ে যায়। গৃহবধূরা পারবেন এরকম আশা করা যায় না।

মোট কথা গৃহবধূরা হিসেব করতে পারেন না, ওজন বোঝেন না। খদ্দের হিসেবে অবশ্যই লোভনীয়।

কিন্তু তাই বলে গয়ারাম যে মহিলাদের দোকানে পেলেই ঠকায় তা কিন্তু নয়। গয়ারামের হাত নিশপিশ করে, মন চুলবুল করে ঠকানোর জন্যে। কিন্তু সাহস পায় না, গঙ্গামণির নিষেধ আছে।

গঙ্গামণির বক্তব্য খুব সোজা, ওজনের হেরফের, দামের গোলমাল করে অন্যান্য খদ্দেরদের যতটা ঠকানো হয় মহিলাদের তার চেয়ে বেশি ঠকানো চলবে না। আমি নিজে মহিলা হয়ে আমার দোকানে মহিলাদের অতিরিক্ত ঠকাতে দেব না।

এ কারণে গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরসের ব্যবসায়ে লাভ হয়তো কিছু কম হয়। কিন্তু গঙ্গামণি সেটা পুষিয়ে দিয়েছে নতুন একটা কায়দা করে। গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরসের দেয়াল ঘেঁষে কাঁচের টানা শো-কেস রয়েছে। সেই শো-কেসের মাথায় একটা গণেশ মূর্তি রয়েছে। রোজ দুবেলা সেই মূর্তিতে ধূপধুনো দিয়ে, আলো জ্বালিয়ে পুজো করা হয়। সেই গণেশ ঠাকুরের একপাশে রয়েছে। একটা অতি পুরনো অ্যালার্ম ঘড়ি। ঘড়িটা গয়ারামের বাবা গয়ারামকে কিনে দিয়েছিলেন, সেই যখন সে ইস্কুলে পড়ত।

এই অ্যালার্ম ঘড়িটা খুব কাজে লাগিয়েছে গঙ্গামণি। গঙ্গামণির পরামর্শে গয়ারাম দোকানের ভেতর এবং বাইরে দুটো বড় নোটিশ দিয়েছে:

নোটিশ
প্রতি রবিবার বৈকাল বেলায়
অভাবনীয় লাভের সুযোগ।
ভেতরে অনুসন্ধান করুন।

ভেতরে অনুসন্ধান মানে গয়ারাম কিংবা তার তিন বালক কর্মচারীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে যা জানা যাচ্ছে সে যেমনি চমকপ্রদ, তেমনি অভিনব।

স্বীকার করা উচিত, কস্মিনকালেও কোনও মুদির দোকানে এ জাতীয় কিছু দেখা যায়নি। এ বিষয়ে পরে বলছি। যেহেতু বুদ্ধিটা বেরিয়েছে গঙ্গামণির মাথা থেকে তাই তার আগে গঙ্গামণি প্রসঙ্গে একটু আসা যেতে পারে।

ব্যবসায়িক ভাষায় একটা পুরনো চালু কথা আছে Sleeping partner। এর সরাসরি মানে হল ঘুমন্ত অংশীদার। অনেক সময় টাকাওয়ালা লোকেরা ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস কিংবা কোম্পানির ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের চেয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য লোকের ব্যবসায়ে টাকা ঢালেন বেশি আয়ের আশায়। তারা কিন্তু কিছুই করেন না সেই ব্যবসায়ের জন্য। তারা শুধুই মূলধন জোগান আর অন্যে খাটে। লাভ সমান সমান ভাগ হয়।

এই রকম ভাবে যারা টাকা খাটান তাদের বলা হয় স্লিপিং পার্টনার বা ঘুমন্ত অংশীদার।

গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরসের ক্ষেত্রে ওই স্লিপিং পার্টনার কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্য। স্বামী-স্ত্রী এক বিছানায় ঘুমোয় আবার তারা দুজনে একই ব্যবসার অংশীদার। সুতরাং গয়ারাম এবং গঙ্গামণি এরা দুজনে আদর্শ স্লিপিং পার্টনার।

তবে কোনও অর্থেই গঙ্গামণি ঘুমন্ত অংশীদার নয়। দোকানের ব্যাপারে গঙ্গামণির অনেক রকম কূটবুদ্ধি গয়ারামের কাজে লাগে।

মাখনের ব্যাপারটাই ধরা যাক। গঙ্গামণি যে পরামর্শ দিয়েছিল সেটা প্রথমে নির্ভরযোগ্য মনে হয়নি গয়ারামের।

.

গঙ্গামণি কখনও দোকানে বসে না। তবে বিকেলের দিকে বাড়ির কাজকর্ম বিশেষ কিছু না থাকলে দোকানের দিক দিয়ে একবার ঘুরে যায়। কখনও কখনও দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা দেখে।

গঙ্গামণিকে বাজারের প্রায় সবাই চেনে। দোকানদাররা অনেকেই তাকে বউদি বলে, কেউ কেউ বলে গঙ্গাদি। নতুন ছেলেছোকরারা বলে কাকিমা বা মাসি।

শ্বশুরের আমলে এ দোকানে গঙ্গামণি একদিনই আসত বছরে, সেটা হল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। হালখাতাও হত সেদিন। সত্যনারায়ণ পুজো হত বাড়িতে। পুজোর পর এক মাথা ঘোমটা টেনে, হাতে কাঠের বারকোশ ভরতি করে ফলমূল, ঘরে তৈরি নারকেলের সন্দেশ, নাড়ু, বাতাসা, নকুলদানা নিয়ে গঙ্গামণি সন্ধ্যাবেলা দোকানে আসত।

এই প্রসাদটা বাজারের অন্য দোকানদারদের জন্যে। খদ্দেরদের আলাদা বন্দোবস্ত, কাগজের বাক্সে বোঁদে, গজা আর নিমকি। সেটা হালুইকরের দোকান থেকে আসত।

এ সব তিরিশ বছর আগের কথা। তখন এক সের জিনিসের যা দাম ছিল এখন একশো গ্রামের তাই দাম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি।

তারপর শ্বশুর-শাশুড়ি গত হয়েছেন। এক পাগল ভাশুর ছিল, তিনি কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গঙ্গামণির পর পর তিনটি মেয়ে জন্মেছে। জন্মেছে, কিছুটা লেখাপড়া করেছে, বড় হয়েছে, পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে অল্পবিস্তর ফষ্টিনষ্টি করেছে। তারপর তাদের বিয়ে হয়েছে। বরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। এখন তাদের ভরা সংসার, কালে ভদ্রে বাপের বাড়িতে আসে।

.

গয়ারাম-গঙ্গামণির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এই গল্প নয়, তার জন্যে উপন্যাস লিখতে হবে।

আপাতত আমরা মাখনের প্রসঙ্গে একটু ফিরে যাচ্ছি। কারও ফ্রিজ আছে। কারও ফ্রিজ নেই। কেউ হয়তো একটু কৃপণ। কারও হয়তো আর্থিক সম্পত্তির অভাব আছে। গঙ্গামণি বিকেলের দিকে বেড়াতে বেড়াতে দোকানে এসে লক্ষ করেছে সবাই বারো টাকা দিয়ে এক প্যাকেট মাখন নিতে চায় না। কেউ বলে অর্ধেক দিতে, কেউ জিজ্ঞাসা করে, অল্প পাওয়া যাবে কি না।

এ সব দেখে গঙ্গামণির মাথায় একটু বুদ্ধি এল।

বুদ্ধিটা গোলমেলে। গয়ারাম প্রথমে সায় দেয়নি। কিন্তু স্ত্রীর পরামর্শ অগ্রাহ্য করার মতো মানুষ। জগৎসংসারে সামান্য যে কয়েকজন আছে তার মধ্যে গয়ারাম পড়ে না।

গঙ্গামণির ব্যাপারটা, মানে মাখন বেচার বুদ্ধিটা খুবই সরল।

বারো টাকার মাখনের প্যাকেটটা মধ্য দিয়ে ঠিক সমান সমান ভাবে ছুরি দিয়ে কেটে দুভাগ করতে হবে। এখন দুভাগের দামই যদি ছয় টাকা করা যায় তাহলে বিক্রি হয়তো সামান্য বাড়বে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেবে পোষাবে না। কিছু মাখন নষ্টও হতে পারে। গঙ্গামণি কিন্তু একটা উলটো কাজ করল, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না।

গঙ্গামণি প্রত্যেকটা মাখনের প্যাকেটকে সমান দু টুকরো করে, এক অংশের দাম করল সাড়ে ছয় টাকা, অন্য অংশের দাম সাড়ে পাঁচ টাকা।

গঙ্গারামের মাথায় হাত। হাফ প্যাকেট যদি সাড়ে পাঁচ টাকায় বেচা হয়, পুরো প্যাকেট এগারো টাকা। কেনা দামই যে উঠবে না।

গঙ্গামণি নির্বিকার। সে বলল, একবার পরীক্ষা করেই দেখা যাক না।

দোকানের মধ্যে নোটিশ আটকানো হল,

মাখন।
আধ প্যাকেট ৫-০, ৬-৫০
পরীক্ষা প্রার্থনীয়
অন্য কোথাও পাইবেন না।

এই নোটিশ দেওয়ার পরে মাখনের বিক্রি বাড়ল। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, গয়ারামের আশঙ্কা ধুলিসাৎ করে দিয়ে সাড়ে ছয় টাকার মাখনই বেশি বিক্রি হতে লাগল।

মাখন আধ টুকরো করে, ফ্রিজের মধ্যে দুটো আলাদা কাঁচের বাটিতে রাখা আছে। দেখা গেল সাড়ে ছয় টাকার বাটি যখন নিঃশেষে ফুরিয়ে গেছে, তখনও সাড়ে পাঁচ টাকার কাঁচের বাটি প্রায় ভর্তি। কেউই মাত্র এক টাকার জন্যে কম দামি মাখন নিতে চায় না।

 ঘি-মাখন, দুধ-ডিম এই সব স্বাস্থ্যকর জিনিস লোকে বিশুদ্ধ ও খাঁটি কিনতে চায়। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনতে আপত্তি করে না।

গয়া-গঙ্গার মাখনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সবাই ভাবে দাম বেশি যখন এই মাখনটা অনেক ভাল। দুটোই যে একই মাখন, এই বাটির সাড়ে ছয় টাকার মাখনের টুকরোগুলো যে গতকালই সাড়ে পাঁচ টাকার বাটিতে ছিল, খদ্দের সেটা জানেও না, এ নিয়ে তলিয়ে ভাবেও না।

মাখন বৃত্তান্ত পাঠ করে গঙ্গামণির বুদ্ধির ওপর পাঠকদের নিশ্চয় একটু আস্থা হয়েছে।

এবার গল্পের শেষ অংশে সন্ধ্যাবেলায় ফিরে যাই।

সেই যে অ্যালার্ম ঘড়ির কথা লিখেছি, দোকানের শো-কেসের ওপরে গণেশঠাকুরের পাশে আছে। সেই পুরনো ঘড়িটাকে এবার গঙ্গামণি রবিবারের বিকেলের বিক্রিবাটা বাড়ানোর কাজে লাগাল।

গল্প অতিরিক্ত না বাড়িয়ে গঙ্গামণির বুদ্ধিটা একটু সংক্ষিপ্ত করে বলছি।

প্রতি রবিবার সকালে গঙ্গামণি নিজের হাতে ঘড়িটায় দম দেয়। অ্যালার্মের স্প্রিংয়েও দম দেয়, দিয়ে ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা থেকে আটটার মধ্যে কোনও একটা সময়ে অ্যালার্ম বাজিয়ে রাখে।

একেকদিন একেক রকম সময়ে অ্যালার্ম বাজে। কোনওদিন সোয়া পাঁচটায়, কোনও দিন সাড়ে ছটায়, কোনও দিন পৌনে আটটায় বা অন্য কোনও সময়ে। অবশ্য অধিকাংশ রবিবারই আটটার। কাছাকাছি সময়ে অর্থাৎ দোকান বন্ধ করার একটু আগে অ্যালার্ম বাজে।

চাবি দেওয়া হয়ে যাবার পরে শো-কেসের ওপরে একটা ছোট তোয়ালে দিয়ে ঘড়িটা ঢেকে রাখে গঙ্গামণি। ঘড়ির ডায়ালটা দেখতে না পারায় কেউ বুঝতে পারে না কখন অ্যালার্মটা বাজবে।

এইখানেই গঙ্গামণির কেরামতি। গয়া-গঙ্গা স্টোরসে নিয়ম করা হয়েছে প্রতি রবিবার সন্ধ্যাবেলা যে মুহূর্তে অ্যালার্মটা বেজে উঠবে ঠিক তখন যে সব খদ্দের যা যা জিনিস কিনছিলেন তা অর্ধেক দামে দেওয়া হবে।

ফলে অ্যালার্ম বাজার অপেক্ষায় খদ্দেররা সারা সন্ধ্যা জিনিস কিনে যাচ্ছেন। গয়া-গঙ্গা স্টোরসে বিক্রি রবিবার সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। অ্যালার্ম বাজার শুভ মুহূর্তে ডবল লাভের লোভে টিভি-তে বাংলা সিনেমা ফেলে রেখে এ পাড়া ও পাড়ার গৃহিণীরা ভিড় করছেন গয়া-গঙ্গা ভ্যারাইটি স্টোরসে।

.

কোনও রবিবার সন্ধ্যায় আমাদের ওদিকে এলে আপনিও দেখে যেতে পারেন গয়া-গঙ্গার কেমন রমরমা চলছে। ইচ্ছে হলে কোনও জিনিস কিনতে পারেন, ভাগ্য প্রসন্ন হলে, অ্যালার্ম বেজে উঠলে জিনিসটা অর্ধেক দামে পেয়ে যাবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *