রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ১৪১-১৫০
১৪১
জ্ঞান যদি তোর থাকে কিছু – জ্ঞানহারা হ সত্যিকার,
পান করে নে শাশ্বতী সে সাকির পাত্রে সুরার সার!
সেয়ান-জ্ঞানী! তোর তরে নয় গভীর আত্মবিস্মৃতি,
সব বোকারা জ্ঞান লভে না সত্যিকারের জ্ঞানহারার।
১৪২
যার পরে তোর আস্থা গভীর, এই যে বুকের বন্ধু তোর
মার্জিত জ্ঞান-চক্ষু নিয়ে দেখ এই তোর শত্রু ঘোর।
বন্ধু বেছে নিসনে রে তোর অমার্জিতের ভিড় থেকে,
ভেজিয়ে দে ভাই অন্তরহীন অন্তরঙ্গতার এ দোর।
১৪৩
দাস হোয়ো না মাৎসর্যের, হোয়ো নাকো অর্থ-যখ,
ঘাড়ে যেন ভর করে না ঠুনকো যশোখ্যাতির শখ,
অগ্নিসম প্রদীপ্ত হও, বন্যাসম প্রাণোদ্বেল
হোয়ো নাকো পথের ধূলি, হাওয়ার হাতের ক্রীড়নক!
১৪৪
যোগ্য হাতে জ্ঞানীর কাছে ন্যস্ত করো এই জীবন,
নির্বোধদের কাছ থেকে ভাই থাকবে তফাত দশ যোজন!
জ্ঞানী হাকিম বিষ যদি দেয় বরং তাহাই করবে পান,
সুধাও যদি দেয় আনাড়ি – করবে তাহা বিসর্জন!
১৪৫
সেরেফ খেয়াল-খুশির বশে আপন জনের বক্ষে তুই,
এই যে তীব্র যন্ত্রণারই ক্ষত এঁকে দিস নিতুই –
শোক কর, কাঁদ, অশান্ত তোর মনও মৃত বীর তরে,
আপন হাতে বধ করেছিস, রে অবোধ, এ শক্তি দুই।
১৪৬
ধীর চিত্তে সহ্য করো, দুঃখ শোকের এই দাওয়াই,
দুঃখ পেয়ে রুক্ষ-মেজাজ হসনে, দেখবি দুঃখ নাই!
অভাবে ক্ষয় হয় না যেন তার স্বভাবের প্রশান্তি,
ষড়ৈশ্বর্য লাভের উপায়, আমার মতে, এই সে ভাই!
১৪৭
আকাশ পানে হতাশ আঁখি চেয়ে থাকি নির্নিমিখ
‘লওহ’ ‘কলম’ বেহেশত-দোজখ কোথায় থাকে কোন সেদিক
অন্ধকারে পেলাম আলো, দরবেশ এক কইল শেষ –
‘লওহ’ ‘কলম’ বেহেশত-দোজখ তোরই মাঝে– নয় অলীক।
১৪৮
দশ বিদ্যা, আট স্বর্গ, সাত গ্রহ আর নয় গগন
করল স্রষ্টা সৃষ্টি রে ভাই, দেখছে যাহা জ্ঞান-নয়ন।
চার উপাদান, ইন্দ্রিয় পাঁচ, আত্মা তিন, ও দুই জগৎ–
পারল না সে সৃষ্টি করতে আরেকটি লোক মোর মতন।
১৪৯
কী হই আর কী নই আমি – মোর চেয়ে তা কে জানে?
ঊর্ধ্বে নিম্নে যাহা কিছু ভেদ আছে তার মোর প্রাণে।
একদিনে মোর এসব বিদ্যা করব জলে বিসর্জন,
শরাব পানের অধিক মহৎ– কেউ যদি তার খোঁজ আনে!
১৫০
একদা মোর ছিল যখন যৌবনেরই অহংকার
ভেবেছিলাম- গিঁঠ খুলেছি জীবনের সব সমস্যার।
আজকে হয়ে বৃদ্ধ জ্ঞানী বুঝেছি ঢের বিলম্বে,
শূন্য হাতড়ে শূন্য পেলাম – যে আঁধারকে সে আঁধার!