রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৫১-০৬০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৫১-০৬০

৫১
একমনি ওই মদের জালা গিলব, যদি পাই তাকে,
যে জালাতে প্রাণের জ্বালা নেভাবার ওষুধ থাকে!
পুরানো ওই যুক্তি তর্কে দিয়ে আমি তিন তালাক,
নতুন করে করব নিকাহ্ আঙুর-লতার কন্যাকে।

৫২
বিষাদের ওই সওদা নিয়ে বেড়িয়ো না ভাই শিরোপরি,
আঙুর-কন্যা সুরার সাথে প্রেম করে যাও প্রাণ ভরি!
নিষিদ্ধা ওই কন্যা, তবু হোক সে যতই অ-সতী,
তাহার সতী মায়ের চেয়ে ঢের বেশি সে সুন্দরী!

৫৩
স্বর্গে পাব শরাব-সুধা, এ যে কড়ার খোদ খোদার,
ধরায় তাহা পান করলে পাপ হয়, এ কোন বিচার?
‘হামজা’ সাথে বেয়াদবি করল মাতাল এক আরব–
তুচ্ছ কারণ – শরাব হারাম তাই হুকুমে ‘মোস্তফার’।

৫৪
‘রজব শাবান পবিত্র মাস’ বলে গোঁড়া মুসলমান,
‘সাবধান, এই দু-মাস ভাই কেউ করো না শারাব পান।’
খোদা এবং তার রসুলের ‘রজব’ ‘শাবান’ এই দু-মাস
পান-পিয়াসীর তরে তবে সৃষ্ট বুঝি এ ‘রমজান’?

৫৫
শুক্রবার আজ, বলে সবাই পবিত্র নাম জুম্মা যার,
হাত যেন ভাই খালি না যায়, শরাব চলুক আজ দেদার।
এক পেয়ালি শরাব যদি পান করো ভাই অন্যদিন,
দু-পেয়ালি পান করো আজ বারের বাদশা জুম্মা বার!

৫৬
মসজিদের অযোগ্য আমি, গির্জার আমি শত্রু-প্রায়,
ওগো প্রভু, কোন মাটিতে করলে সৃজন এই আমায়?
সংশয়াত্মা সাধু কিংবা ঘৃণ্য নগর-নারীর তুল
নাই স্বর্গের আশা আমার, শান্তি নাহি এই ধরায়।

৫৭
মুগ্ধ করো নিখিল-হৃদয় প্রেম-নিবেদন কৌশলে
হৃদয়জয়ী হে বীর, উড়াও নিশান প্রিয়ার অঞ্চলে।
এক হৃদয়ের সমান নহে লক্ষ ম-জিদ আর ‘কাবা’;
কী হবে তোর তীর্থে ‘কাবা’র শান্তি খোঁজ হৃদয় তলে।

৫৮
বিধর্মীদের ধর্মপথে আসতে লাগে এক নিমেষ,
সন্দেহেরই বিপথ-ফেরত বিবেক জাগে এক নিমেষ।
দুর্লভ এই নিমেষটুকু ভোগ করে নাও প্রাণ ভরে,
এই ক্ষণিকের আয়েস দিয়ে জীবন ভাসে এক নিমেষ।

৫৯
হৃদয় যাদের অমর প্রেমের জ্যোতির্ধারায় দীপ্তিমান,
মসজিদ মন্দির গির্জা, যথাই করুক অর্ঘ্য দান–
প্রেমের খাতায় থাকে লেখা অমর হয়ে তাদের নাম,
স্বর্গের লোভ ও নরক-ভীতির ঊর্ধ্বে তারা মুক্ত-প্রাণ।

৬০
মদ পিয়ো আর ফুর্তি করো – আমার সত্য আইন এই!
পাপ পুণ্যের খোঁজ রাখি না – স্বতন্ত্র মোর ধর্ম সেই।
ভাগ্য সাথে বিয়ের দিনে কইনু, ‘দিবি কি যৌতুক?’
কইল বধূ, ‘খুশি থাকো, তার বড়ো যৌতুক সে নেই!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *