রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম – ১০১-১১০
১০১
এই কুঁজো – যা আমার মতো ভোগ করেছে প্রেম-দাহন,
সুন্দরীদের মাথায় থাকি পেল খোঁপার পরশন।
এই সোরাহির পার্শ্বদেশ এই যে হাতল দেখতে পাও,
পেল কতই তন্বঙ্গীর ক্ষীণ কাঁকালের আলিঙ্গন!
১০২
দ্রাক্ষা সাথে ঢলাঢলির এই তো কাঁচা বয়স তোর,
বৎস, শরাব-পাত্র নিয়ে ঠায় বসে দাও আড্ডা জোর।
একবার তো নূহের বন্যা ভাসিয়েছিল জগৎখান,
তুইও না হয় ভাসিয়ে দিলি মদের স্রোতে জীবন তোর!
১০৩
সাবধান! তুই বসবি যখন শরাব পানের জলসাতে,
মদ খাসনে বদমেজাজি নীচ কুৎসিত লোক সাথে।
রাত্তির ভর করবে সে নীচ চিৎকার আর গণ্ডগোল,
ইতর সম চেঁচিয়ে কারণ দর্শাবে ফের সে প্রাতে।
১০৪
যদিও মদ নিষিদ্ধ ভাই, যত পার মদ চালাও,
তিনটি কথা স্মরণে রেখে ; কাহার সাথে মদ্য খাও?
মদ-পানের কি যোগ্য তুমি? কী মদই বা করছ পান?
জ্ঞান পেকে না ঝুনো হলে মদ খেয়ো না এক ফোঁটাও!
১০৫
তোমরা – যারা পান কর মদ আর সব দিন, কিন্তু যা
পান কর না শুক্রবারে, ছোঁও না শরাবের কুঁজা–
তাদের বলি – আমার মতো সব বারকে সমান জান,
খোদার তোরা পূজারি হ, করিস নাকো বার পূজা।
১০৬
করছে ওরা প্রচার – পাবি স্বর্গে গিয়ে হুরপরি,
আমার স্বর্গ এই মদিরা, হাতের কাছের সুন্দরী।
নগদা যা পাস তাই ধরে থাক, ধারের পণ্য করিসনে,
দূরের বাদ্য মধুর শোনায় শূন্য হাওয়ায় সঞ্চরি।
১০৭
এই যে আঁধার প্রহেলিকা পারবিনে তুই পড়তে মন!
তুই কি সফল হবি যথায় হার মেনেছে বিজ্ঞজন?
শরাব এবং পেয়ালা নিয়ে খুশির স্বর্গ রচ হেথাই–
পাবি কি না পাবি বেহেশত, বলতে পারে কেউ কখন?
১০৮
দোহাই! ঘৃণায় ফিরিয়ো না মুখ দেখে শরাব-খোর গোঁয়ার
যদিও সাধু সজ্জনেরই সঙ্গে কাটে কাল তোমার।
শরাব পিয়ো, কারণ শরাব পান কর আর না-ই কর,
ভাগ্যে ধার্য থাকলে নরক যায় না পাওয়া স্বর্গ আর।
১০৯
জীবন যখন কন্ঠাগত – সমান বলখ নিশাপুর,
পেয়ালা যখন পূর্ণ হল – তিক্ত হোক কি হোক মধুর!
ফুর্তি চালাও, নিভে যাবে হাজার তপন লক্ষ চাঁদ,
আমরা ফিরে আসব না আর এই ধরণির পথ সুদূর!
১১০
আয় ব্যয় তোর পরীক্ষা কর ঠিক সে হিসাব করতে পেশ,
আসার বেলায় আনলি কী আর নিয়েই বা কী যাস সে দেশ।
‘আনব নাকো বিপদ ডেকে শরাব পিয়ে’ কস যে তুই,
মদ খাও আর না খাও তবু মরতে তোমায় হবেই শেষ।