রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৪১-০৫০

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম – ০৪১-০৫০

৪১
অজ্ঞানেরই তিমির-তলের মানুষ ওরে বে খবর!
শূন্য তোরা, বুনিয়াদ তোর গাঁথা শূন্য হাওয়ার পর।
ঘুরিস অতল অগাধ খাদে, শূন্য মায়ার শূন্যতায়,
পশ্চাতে তোর অতল শূন্য, অগ্রে শূন্য অসীম চর।

৪২
লয়ে শরাব-পাত্র হাতে পিই যবে তা মস্ত হয়ে
জ্ঞানহারা হই সেই পুলকের তীব্র-ঘোর বেদন সয়ে,
কী যেন এক মন্ত্রবলে যায় ঘটে কী অলৌকিক,
প্রোজ্জ্বল মোর জ্ঞান গলে, যায় ঝরনাসম গান বয়ে।

৪৩
‘শরাব ভীষণ খারাপ জিনিস মদ্যপায়ীর নেইকো ত্রাণ।’
ডাইনে বাঁয়ে দোষদর্শী সমালোচক ভয় দেখান –
সত্য কথাই! যে আঙুরে নষ্ট করে ধর্মমত,
সবার উচিত – নিঙড়ে ওরে করে উহার রক্ত পান!

৪৪
আমার কাছে শোন উপদেশ – কাউকে কভু বলিসনে–
মিথ্যা ধরায় কাউকে প্রাণের বন্ধু মেনে চলিসনে!
দুঃখ ব্যথায় টলিসনে তুই, খুঁজিসনে তার প্রতিষেধ,
চাসনে ব্যথার সমব্যথী, শির উঁচু রাখ ঢলিসনে!

৪৫
মউজ চলুক! লেখার যা তা লিখল ভাগ্য কালকে তোর,
ভুলেও কেহ পুঁছল নাকি থাকতে পারে তোর ওজর !
ভদ্রতারও অনুমতি কেউ নিল না অমনি ব্যস
ঠিক ঠাক সব হয়ে গেল ভুগবি কেমন জীবন-ভোর!

৪৬
আমি চাহি স্রষ্টা আবার সৃজন করুন শ্রেষ্ঠতর
আমি চাহি স্রষ্টা আবার সৃজন করুন শ্রেষ্ঠতর
সেই সাথে চাই – সৃষ্টি-খাতায় দিক কেটে সে আমার নাম,
কিংবা আমার যা প্রয়োজন তা মিটাবার দিক সে বর।

৪৭
নাস্তিক আর কাফের বলো তোমরা লয়ে আমার নাম,
কুৎসা গ্লানির পঙ্কিল স্রোত বহাও হেথা অবিশ্রাম।
অস্বীকার তা করব না যা ভুল করে যাই, কিন্তু ভাই,
কুৎসিত এই গালি দিয়েই তোমরা যাবে স্বর্গধাম?

৪৮
বদখশানী রক্ত-চুনির মতন সুরা চুঁইয়ে আন
তপ্তহিয়ার আনন্দ যা, শান্ত যাহে দগ্ধ প্রাণ।
মুসলমানের তরে শরাব হারাম নাকি, সবাই কয়,
বলতে পারে তাদের কেহ – আছে কি আর মুসলমান?

৪৯
মসজিদ মন্দির গির্জায় ইহুদ-খানায় মাদ্রাসায়
রাত্রি-দিবস নরক-ভীতি স্বর্গ সুখের লোভ দেখায়।
ভেদ জানে আর খোঁজ রাখে ভাই খোদার যারা রহস্যের
ভোলে না এই খোশ-গল্পের ঘুম-পাড়ানো কল্পনায়।

৫০
এক হাতে মোর তসবি খোদার, আর-হাতে মোর লাল গেলাস,
অর্ধেক মোর পুণ্য-স্নাত, আধেক পাপে করল গ্রাস।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁটি মুসলমানও–
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *