দুই
সকালবেলা।। বড়ভাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলায় টাই বাধছে। কিছুতেই মাপে মিলছে না। কখনও সরু দিকটা লম্বা হয়ে ঝুলে যাচ্ছে, কখনও চওড়া দিকটা।
বড়।। ধ্যাৎ তেরিকা, এত বয়স হল এখনও টাই বাঁধাটাই শিখতে পারলুম না। আমার বাবাকে দ্যাখো, ওই তো ছবি। কতভাবে কত কায়দায় টাই বাঁধতে পারতেন। দিস সিম্পিল মেকানিজম ফ্রাস্ট্রেটস অল মাই এফার্টস।
[আয়নার সামনে থেকে বাবার ছবির সামনে গিয়ে] ও ফাদার টিচ মি, হাউ টু নট এ টাই। ধ্যাৎ তেরিকা।
[একটান, এইবার টাই ফাঁস হয়ে এমন আটকাল আর খুলতে পারছে না, তখন চিৎকার।]
—কুসি—কুসি
কুসি।। সাতসকালে কী হল আবার।
বড়।। সেই ওল্ড প্রবলেম, লাগ লাগ লাগ, লাগিয়ে বসে আছি।
কুসি।। শোন দাদা, টাই তোমার জিনিস নয়। স্কার্ফ, মাফলার নিদেন একটা গামছা। এই নিয়ে থাকার চেষ্টা করো না? তোমাকে কতবার দেখিয়েছি টাই—এর নট হবে আলগা ফাঁস। একটা পাশ ধরে টানবে খুস করে খুলে যাবে।
বড়।। আরে সাতটা থেকে তো সেই চেষ্টা করছি এখন ঘড়িটা দ্যাখ। ওদিকে আবার সেমিনার আরম্ভ হয়ে গেল। প্লিজ দে ভাই, শেষবারের মতো বেঁধে।
কুসি।। [নিমেষে টাইটা বেঁধে, ঠিকঠিক করে দাদার বুকে একটা চাপড় মেরে] নাউ ইউ আর রেডি। ইউ ক্যান গো।
বড়।। [কুসির মাথাটাকে আচমকা বুকের কাছে টেনে নিয়ে] মেরি পেয়ারি বাচ্ছে।
কুসি।। [ভয়ে চিৎকার করে উঠল] লেগে যাবে। লেগে যাবে। মাথায় জবা আর কেশুত পাতা একসঙ্গে মেখেছি। যা জামাটার সর্বনাশ হয়ে গেল বোধহয়।
বড়।। [বুকের দিকে তাকিয়ে] বাঁচ গিয়া, বাঁচ গিয়া।
কুসি।। আর একটু হলেই যেত। শেষ রাতে লাগিয়েছি তো শুকিয়ে গেছে।
বড়।। তোর নাম বদলে রাখব ঘৃতকুমারী। আচ্ছা গুডবাই।
[দরজার মুখে ন’ভাই, মুখটা অসম্ভব গম্ভীর]
বড়।। কীরে বদহজম!
ন।। [নাটকীয় ভঙ্গিতে] ফাইনালি ডিসাইড করলুম আমার দাম্পত্য জীবন চুরমার হয়ে গেল। আমি আজই চলে যাব যেদিকে দু’চোখ যায়। তোমরা তোমাদের আদরের বউমাকে নিয়ে থাকো। তোমাদের আদরে সে আর মানুষ নেই। শি হ্যাজ বিকাম এ মাঙ্কি।
বড়।। বাংলা করলে কী দাঁড়ায়। আমাদের আদরে তোমার বউ বাঁদর হয়েছে।
কুসি।। এ স্লাইট কারেকশন সিনিয়র মিত্তির। বিপদকালে লিঙ্গ ভুল করো না। বাঁদর নয় বাঁদরী।
বড়।। এই রে মহা সমস্যায় ফেললি, মাঙ্কির স্ত্রীলিঙ্গ কী হবে রে? ক্যারেকশনটা তো ওরই ইংরেজিতে করতে হবে। বিয়ের পর ব্যাটা লিঙ্গ তো ভুলেইছে—গ্রামারও ভুলে গেছে। আজ বাবা থাকলে এই মূর্খটার খাওয়া বন্ধ করে দিতেন। ছাত্রজীবনে সারাটা দুপুর আমাদের মুখস্থ করতে হত ডাচ—ডাচেস, গুজ—গিজ, হর্স—মেয়ার। এই নেসফিল্ড বের করে আগে তোর ইরেজি ঠিক কর। মাঙ্কির স্ত্রীলিঙ্গ খুঁজে বের কর। তারপর গৃহে থাকবি কী গৃহত্যাগ করবি দেখা যাবে।
[ভাইয়ের গালে টোকা মারতে মারতে] মাঙ্কির ইংরেজি জানো না মানিক, বউয়ের সঙ্গে কাজিয়া করতে গেছ। যদি গৃহত্যাগ করতে হয় তো ব্যাকরণ শিখে গৃহত্যাগ করবি। মূর্খের কোনো সম্মান নেই। কুসি সংস্কৃতটা মনে করিয়ে দে।
কুসি।। বিদ্বান সর্বত্রঃ পূজ্যতে।
বড়।। এইজন্য তোকে আমার ভালো লাগে। তুই গ্রেট। চুলে লতাপাতা চটকালেও তুই ডাচেস। তুই মিত্তির বাড়ির গাঁদাল পাতা জড়ানো সম্রাজ্ঞী। [আচমকা ন’ভাইকে এক ধমক] এক গেলাস ফ্রুটসল্ট খেয়ে পড়তে বোস। আমি দুপুরে এসে জেন্ডার ধরব।
মেজ।। [মন্থরগতিতে প্রবেশ, ঘুম ঘুম ভাব] এত চিৎকার কীসের? কী কারণে এই চলচ্চিত্তচঞ্চরী? ভোরবেলা কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল। একালে কে আবার গৃহত্যাগ করছে। সে তো সেকালে একবারই হয়ে গেছে। সুন্দরী বিষ্ণুপ্রিয়াকে ত্যাগ করে মহাপ্রভু সমুদ্রে ঝাঁপ মেরেছিলেন। [ন’ভাই—এর ভুঁড়িতে কুচুরমচুর করে] শোন গোপাল, আধ্যাত্মিক কারণে গৃহত্যাগ করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পাঁচশো বছর ধরে যুগ অপেক্ষা করে আছে আর একজন শ্রীচৈতন্যর জন্য। তুমি যদি সেই আত্মচৈতন্য হতে পারো, আমরা তাহলে ঢাক বাজাব। আর যদি স্ত্রীর খোঁচা খেয়ে মগ্নচৈতন্য হও, তাহলে ভেঁপু বাজাব, ব্যাটা গাধা। কুসি শ্লোকটা সাপ্লাই কর।
কুসি।। অজা যুদ্ধে, ঋষি শ্রাদ্ধে, প্রাতে মেঘডম্বরে, দাম্পত্য কলহেচৈব বহবারম্ভে লঘুক্রিয়া।
মেজ।। কুসি তোকে আমি ব্যাকরণতীর্থ, স্মৃতিচঞ্চু তর্কালঙ্কার উপাধি তিনটেই একসঙ্গে ম্যানেজ করে দেব। তোমার তুলনা তুমিই ভগিনী। [মেজ ন’ভাই—এর ভুঁড়িটা আর একবার খামচে] শুনলে নাড়ুগোপাল, প্রাতঃকালে মেঘ ডাকলে কিছুই হয় না। দেখি তোর পেট, ড্যাব ড্যাব করছে মনে হচ্ছে—এ তো বায়ুপুরাণ। কুসি এর আজ জলপথ্য। এত ভোরে উঠলে কেন আর্টিস্ট! যাও আর এক রাউন্ড নাক ডাকিয়ে এসো।
বড়।। যাঃ, সর্বনাশ হয়ে গেল, আধঘণ্টা লেটে চলেছি। ফাইনালি গুডবাই (দরজা দিয়ে বেরোতে) শান্তি, শান্তি, শান্তি।
মেজ।। যাঃ বাড়িটা খালি করে চলে গেল রে। বড়টা না থাকলে বাড়িটা কেমন খালি হয়ে যায় দেখেছিস কুসি। ওটা কোন জাতের প্রাণী বল তো, হাতি না ভাল্লুক।
কুসি।। হাতি বোলো না দাদা,সম্মান জানাতে হলে শুদ্ধ সংস্কৃত বলতে হয়, দ্যাখো হাতি হল গালাগাল। কিন্তু বিশুদ্ধ ঐরাবত? একটা আলাদা ব্যাপার। বড়দা আমাদের সুঠাম ঐরাবত।
মেজ।। [উজ্জ্বলমুখে] আর আমি?
কুসি।। তুমি মনে হয় জাতিতে ভাল্লুক।
মেজ।। [ফিউজ হয়ে গিয়ে] আমার মধ্যে ভাল্লুকের কী দেখলি?
কুসি।। বেশ একটা নরম নরম, কম্বল কম্বল, ভোম্বল ভোম্বল ব্যাপার।
মেজ।। বেশ ভালো লাগল। ভাল্লুকের সংস্কৃত?
কুসি।। আগে মাঙ্কির স্ত্রীলিঙ্গ বলো। তারপর আমি ভাল্লুকের সংস্কৃত বলব।
মেজ।। পরীক্ষা করছিস। শোন লিঙ্গ শব্দটা খুব মজার। তার নিজের কোনো লিঙ্গ নেই। আগে একটি পুং বসালে পুংলিঙ্গ, আগে একটি স্ত্রী বসালেই স্ত্রীলিঙ্গ। সেইরকম মাঙ্কিরও কোনো লিঙ্গ নেই। বাঁদরামি ছেলেও করতে পারে, মেয়েও করতে পারে। মাঙ্কির আগে একটি ‘হি’ বসাও, হয়ে গেল বাঁদর, একটা ‘শি’ বসাও হয়ে গেল বাঁদরি। তাহলে বাঁদরির ইংরেজি হল শি মাঙ্কি। এইবার ভাল্লুকের সংস্কৃত বল তো।
কুসি।। হারাতে পারবে না, ভাল্লুকের সংস্কৃত হল ঋক্ষ।
ন’ভাই।। পালতোলা জাহাজের মতো এধার থেকে ওধারে গিয়ে তোমরা ব্যাপারটাকে হালকা করে ঘুরিয়ে দিতে চাইছ। এটাই প্রমাণ করে এ বাড়িতে আমার কোনো পজিশন নেই। রেখাই তোমাদের মনে রেখাপাত করেছে। তোমাদের পরিমল হল মল।
মেজ।। সত্যি কথাটাই বললি রে। তুই হলি মল, সুন্দর একজোড়া পায়ে সেই মল ঝুমুর ঝুমুর বাজে। কিছু মনে করিসনি, তুই একটু স্ত্রৈণ আছিস। অবশ্য শিল্পী মাত্রেই মেয়েদের একটু অন্য চোখে দেখে।
ন।। [ঘুরে দাঁড়িয়ে] মেজদা অ্যাডিং ইনসাল্ট টু ইনজুরি। তুমি আমার মতো এক পুরুষসিংহকে স্ত্রৈণ বললে, তোমার মনে এই ছিল।
মেজ।। শোন ভ্রাতা। কাল ছিল চাঁদের আলোর রাত। তোমার ঘরের খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলো তোমাদের ঘরে লুটিয়ে ছিল, সেই আলোয় জানলার দিকে মুখ করে তোমরা পাশাপাশি বসেছিলে। তোমার হাতে ছিল বিলেত থেকে আনা সেই ঝকঝকে পাইপটা। সেটাতে তুমি একটা বাংলা প্রেমের গান বাজাবার চেষ্টা করছিলে। অবশ্যই ব্যর্থ চেষ্টা। বেশিরভাগ পর্দাই লিক করছিল। তার ফলে মনে হচ্ছিল, মাঝরাতে একটা মা—হারা ছানা বাসার খড়কুটোয় চিঁ চিঁ করে ডাক ছাড়ছে। বল ভ্রাতা, ইহা সত্য না মিথ্যা। তোমার ফুঁ আছে, সেই ফুঁয়ে বাতি নিভতে পারে, কিন্তু প্রেম জাগে না। রাতের সেই প্রেম কোন কায়দায় চটকালে মানিক।
ন।। তুমি এত সব জানলে কী করে। ইউ আর ও পিপিং টম।
মেজ।। ইউ আর এ টম ক্যাট। হুলো বেড়াল।
কুসি।। [তুমি এমন প্রেমের দৃশ্য দেখলে কেন? কোন আক্কেলে, ওদের প্রেমের জানালায় নাক গলাতে গিয়েছিলে? বুড়ো আইবুড়ো তুমি। তোমার ক্যারেকটারই একমাত্র কম্বল। সেইটাকে সম্বল করে তোমার জীবনপথে এগিয়ে যেতে হবে।
মেজ।। [অমায়িক হেসে।] জানি, এই সন্দেহই করবি। আমি উঁকি মেরেছিলাম টেকনিক্যাল কারণে।
কুসি।। অর্থাৎ?
মেজ।। ওই বিশেষ ধরনের বাঁশিতে কিঞ্চিৎ দক্ষতা আছে আমার। আমি যখন অক্সফোর্ডে ছিলাম, তখন ব্ল্যামফোর্ড সাহেব আমাকে কিছু তালিম দিয়েছিলেন। বারেবারে ওর ফুঁ যখন ফসকে যাচ্ছিল তখন আমি অস্বস্তিতে ছটফট করছিলাম। মনে হচ্ছিল বাঁশিটা কেড়ে গিয়ে আমি বাজাই, মোৎজার্ট—এর একটা কনচের্টো। জান বোধহয় ওই প্রখ্যাত শিল্পীকে বাঁশিটি উপহার দিয়েছিল—এই প্রখ্যাত পণ্ডিত [ন’কে ইঙ্গিত করে]
।[রেখার প্রবেশ, হাতে এককাপ চা, ন’কে লক্ষ করে ঝাঁঝালো গলায়]
রেখা।। মিত্তির বাড়ির অনেক রেস্ত দেখেছ তাই না? বড়দা আর মেজদার অনেক টাকা। আর আমার দিদির রান্নাঘরটাও ভূত ভোজনের জায়গা। এই নিয়ে তিনবার চা হল আর চা ফেলা হল। তোমার এত রাগ কীসের! যে সকালে পরপর পঞ্চাশটা হাঁচে, হজমের ওষুধ না খেলে ঝোলভাতও হজম হয় না, যে এখনও অন্ধকারে ভূত দেখে, বিছানায় একা শুতে পারে না, তার কীসের এত মাস্তানি!
মেজ।। কুল ডাউন, কুল ডাউন। লাস্ট ওয়ার্ডটা রকে। কুসি, মাস্তানির সংস্কৃত কী হবে?
কুসি।। ওখানে পুরুষত্ব বসিয়ে দাও। ওইটাই ফিট করবে।
মেজ।। রেখা, তুমি মাইরি খুব ডিপ্লোম্যাটিক আছ।
কুসি।। মাইরিটা তুলে ফেল। ওটা বন্ধুকে বলা যায়। তুমি ওর ভাসুর।
মেজ।। এ তুই একটা, সেকালের মতো কথা বললি। সেই রাবণের যুগে ভাসুররা সব অসুর ছিল। শ্বশুররা ছিল খশুর। শাশুড়িরা ছিল বউকাটকি। একালে উই আর অল ফ্রেন্ডস। একটা সংস্কৃত সাপ্লাই কর।
কুসি।। মিত্র।
মেজ।। দারুণ, মিত্তির পরিবারে আমরা সবাই মিত্র।
রেখা।। মেজদা আমায় ডিপ্লোম্যাট বললে কেন?
মেজ।। তুই কী সুন্দর বললি, বড়দা আর মেজদার পয়সা, এককথায় তুই প্রমাণ করে দিলি। তুই আমাদের দলে। একেই বলে সলিডারিটি, একেই বলে স্ট্রেংথ। (ন’ভাইকে উদ্দেশ করে) মহাপ্রভু বারবার তিনবার, এই তৃতীয় প্রচেষ্টার চাটি ওষ্ঠলগ্ন করে উদরে চালান করো। ঘড়ি দেখেছ তোমার সময় হয়েছে খাজনা জমা দেবার। যদি আটকে যায় তাহলে ত্রিফলা চূর্ণ। অতিশয় সুস্বাদু।
রেখা।। [স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে] এইবার যদি চা না খাও, সকলের সামনে তাহলে আমি তোমার টাকে এই চা ঢালব।
ন।। [বিস্ফারিত চোখে] শুনলে, ল্যাঙ্গোয়েজটা শুনলে?
মেজ।। গাধা, এটা যে কতবড় প্রেমের ভাষা, আমি বিয়ে না করেও বুঝতে পারছি আর তুই ব্যাটা এক মেয়ের বাপ হয়ে বুঝতে পারছিস না। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে নারীর অধিকারবোধ। বলতে চাইছে আমার পাঁঠা আমি লেজাতেও কাটতে পারি, মুড়োতেও কাটতে পারি। ।[মুখভঙ্গি করে] আই লাভ ইউ। এটা হল কেতাবি প্রেম। অ্যাই মিনসে—এটা হল বাস্তব প্রেম।
কুসি।। মিনসে শব্দটা?
মেজ।। ওটা আমি পালটাতে পারছি না ভাই, ব্যাকরণ দ্যাখ মনুষ্য থেকে মানুষ, মানুষ থেকে মিনসে, সমগ্র মানবজাতি হল মানুষ্য, পাড়ার পকেটে তারা মানুষ। আর স্ত্রীর অঞ্চলের বন্ধনে তারা একটি গ্রাম্য শব্দ মিনসে। হেঃ হেঃ।
ন।। তুমি আমাকে পাঁঠা বললে।
মেজ।। রেগে গেলে মানুষের বুদ্ধিভ্রংশ হয়। আমি আমার পাঁঠা বলেচি? বলেচি স্ত্রীর পাঁঠা। পাঁঠা জিনিসটা উপেক্ষার নয়। একটা ভালো ওজনদার পাঁঠার দাম তোমার চেয়ে অনেক বেশি। তোর ওজন কত?
ন।। বাহান্ন কেজি।
মেজ।। একটা বাহান্ন কেজি পাঁঠার দাম হিসাব কর। বাহান্ন ইনটু একশো, লিভার যেটাকে আমরা মেটে বলি তার দাম আরও বেশি। এইবার ছাল, টোটাল মার। কুসি কত হল?
কুসি।। অঙ্কে আমি কাঁচা, ক্যালকুলেটর লাগবে।
রেখা।। স্বামীকে ছাগল বলতে নেই, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা একটা মাথামোটা রামছাগল।
মেজ।। ছিঃ বউমা, স্বামী হল গুরু। শোনো পরে একটু গোবর খেয়ে নিয়ো।
রেখা।। ও ফুলকপি খেলেই গোবর খাওয়া হবে। এমনি গোবর নয় গোবর সার। ফুল হয়ে ফুটে আছে। নাও চাটা ধর, ওয়ান, টু, থ্রি।
[ন চায়ের কাপটা নিয়ে নিল]
মেজ।। লেড়কা লোক তালি বাজাও।
।[দরজার বাইরে থেকে সত্যি সত্যি তালির আওয়াজ পাওয়া গেল]
মেজ।। ওরে বাঁদর দুটো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেন। ভিতরে আয়, ভিতরে আয়।
।[দুষ্টু দুষ্টু মুখে দুটো বাচ্চা খুশির হাওয়া নিয়ে ভিতরে ঢুকে এল এবং ঢুকেই নাচতে লাগল হারে রে রে রে তোরা দে রে আমায় ছেড়ে।]
।[বাইরে ফট করে একটা শব্দ হল। ঘরে ঢুকছেন সেই আশ্রিত বৃদ্ধ বুড়োটি।
হাতে ট্রে, তার ওপর চায়ের কাপ।]
মেজ।। এ কী আপনি। বাইরে কীসের শব্দ হল।
বৃদ্ধ।। জন্মদিনের বড়ো বেলুন ফেটে গেল।
মেজ।। তার মানে বিয়ে হল। জন্ম হয়েছিল যার, সে আবার বড়ো হল তার বিয়ে হল, বিয়ের পর প্রেমের বেলুন ফাটল।
।[আদালতে দাঁড়ানো উকিল সাহেবের মতো মেজ বলে উঠল]
মি লর্ড দ্যাটস হোয়াই আই অ্যাম এ ব্যাচেলার, আই অ্যাম এ প্রিন্স।
কুসি।। জজসাহেব বলছেন, শুনতে পাচ্ছ। ব্যাচেলার লিভস লাইক এ প্রিন্স, ডাইস লাইক এ ডগ।
মেজ।। পয়সা ফেললে সব সার্ভিসই পাওয়া যায়।
কুসি।। স্ত্রীর স্নেহ পাওয়া যায় না, স্ত্রীর সেবা পাওয়া যায় না।
মেজ।। সে তুই সেকালের স্ত্রীর কথা বলছিস। একালের মিসেসরা অন্যরকম।
রেখা।। প্রতিবাদ করছি। স্ত্রীদের সেকাল, একাল নেই। এই ছোকরা যদি চা না খেত, তাহলে আমি জলগ্রহণ করতাম না। দেখিয়ে দিতুম তোমার রোখ বেশি না আমার রোখ বেশি।
বৃদ্ধ।। চা—টা গ্রহণ করো। বেড টি, এখনও নিশ্চয়ই দাঁত মাজা হয়নি?
মেজ।। আপনি চা নিয়ে এলেন কেন? আরও অনেকে আছে।
বৃদ্ধ।। আমাকে গ্রহণ করবে না! আদর করে বসিয়ে রাখলে আমি এই পরিবারের একজন হই কী করে?
মেজ।। দ্যাটস রাইট, দ্যাটস রাইট। কাল কেমন ঘুমোলেন?
বৃদ্ধ।। নরম বিছানা, নেটের মশারি, আতরের গন্ধ। প্রথমটায় একটু অস্বস্তি হচ্ছিল ঠিকই। পরে মনে হল ভাগ্য কোথায় কখন নিয়ে যায়। পড়ে ছিলুম আস্তাকুঁড়ে, উঠে এলুম রাজপ্রাসাদে। আচ্ছা তোমরা কী দিয়ে তৈরি বলো তো।
মেজ।। হাড়, মাংস, মেদ, মজ্জা, লিভার, পিলে, ফুসফুস, হৃদয়। সব সাধারণ সাধারণ জিনিস দিতে তৈরি।
বৃদ্ধ।। হৃদয়টা?
মেজ।। হৃদয়টা একটা টুলু পাম্প। রক্ত তুলছে, রক্ত নামাচ্ছে। ওই গানটা মনে আছে?
বৃদ্ধ ।। কোনটা?
মেজ।। কাগজে লিখো না নাম।
বৃদ্ধ।। ও প্রত্যেক পুজোয় শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। কাগজে লিখো না নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে। পাথরে লিখো না নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।
মেজ।। লাস্ট লাইনে একালের কারেকশন, হৃদয়ে লিখো না নাম সব বাইপাস হয়ে যাবে।
বৃদ্ধ।। তোমাদের হৃদয়টা সোনার। এটা তোষামোদি নয়, এটা বৃদ্ধের অনুভূতি।
মেজ।। [চায়ে চুমুক দিয়ে] উত্তম। যথেষ্ট ফ্লেভার, কিন্তু শীতল।
বৃদ্ধ।। তোমাদের কথার চোটে ঠান্ডা হয়ে গেল। উষ্ণ এক কাপ আনব কি?
মেজ।। আপাতত থাক। আধ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আবার মিট করব।
।[মেজ চলে গেল, ঘরে বৃদ্ধ, ন ও রেখা]
রেখা।। [বৃদ্ধকে] জ্যাঠামশাই, আপনি অনুগ্রহ করে একটা কাজ করবেন। গান্ধারীকে একবার বলবেন তারে কাপড়গুলো মেলে দিতে।
।[বলতে না বলতেই গান্ধারী রণচণ্ডী মূর্তিতে দরজার সামনে]
গান্ধারী।। [বৃদ্ধকে ঝাঁঝালো গলায়] সাত তাড়াতাড়ি তোমাকে চা কে আনতে বলেছে? বেশি আদিখ্যেতা। ভাবছ এইসব করলেই খাতির বেশি পাবে। বুড়োটা মহা চালাক।
রেখা।। এসব কী বলছিস গান্ধারী। তোর মুখের কোনো রাখঢাক নেই। প্রবীণ এক শ্রদ্ধেয় মানুষ। জানিস একসময় ইনি এত বড়োলোক ছিলেন যে এই মিত্তির বাড়ির সবকটাকে কিনে নিতে পারতেন। তুই খুব বেড়েছিস গান্ধারী।
বৃদ্ধ।। [হাসতে হাসতে] মা ওর কোনো দোষ নেই। ও জগৎ—এর নিয়মেই চলছে। যার টাকা নেই, তার ইজ্জতও নেই। এখানে আমার এত সুখ, তার মধ্যে একটু দুঃখ না থাকলে ব্যাপারটা যে সিনেমার গল্প হয়ে যাবে। গান্ধারীর একটু ঝাঁঝ বেশি, বয়স কম তো, মেয়েটা কিন্তু ভালো। কাল রাত্রে আমার মাথার কাছে জলের গেলাস চাপা দিয়ে রেখে গিয়েছিল। আর বলেছিল রাতে দরকার হলে আমাকে ডেকো। একা একা বেশি বাহাদুরি করতে যেয়ো না। বুড়োরা পড়ে গেলেই কাঠামো খুলে যায়। এ আমাদের ব্যাপার মা। তোমরা কিছু মনে করো না।
গান্ধারী।। [বৃদ্ধকে] মুখে একগাদা পাটের মতো দাড়ি, যাও না গিয়ে কামাও না! লোককে আর নাইবা জানালে তোমার এত দুঃখ।
।[গান্ধারীর নাকটা নেড়ে দিয়ে বৃদ্ধ চলে গেলেন]
গান্ধারী।। [যেতে যেতে] লোকটাকে ঠিক আমার বাপের মতো দেখতে।
রেখা।। [ন’কে] মাথামোটা, কাল রাতে তুমি যা বলেছিলে, যেটা না করায় রেগে গেলে, সেটা করলে কী হত? জানোই তো মেজদা রাতে ঘুমোয় না। সারারাত আপন মনে পায়চারি করতে করতে গুনগুন করে গান গায়। আর বাইনোকিউলার দিয়ে আকাশের তারা দেখে।
ন।। আজ বুঝলুম মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান।
রেখা।। ফট করে রেগে যাবার আগে চিন্তা করবে। রেখা কী বলছে কেন বলছে। তার পিছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।
ন।। কেন বলেছিলাম জানো? পোশাকের ওই নতুন ডিজাইনটা বাজারে ছাড়ার আগে চাঁদের আলোর ব্যাকলাইটে তোমাকে পরিয়ে একটু দেখব। এটা একটা প্রফেশনাল ব্যাপার।
রেখা।। শোবার ঘরে প্রফেশনটা নাইবা ঢোকালে। ওর জন্য তো তোমার দামি দামি মডেলরা আছে।
।[বাইরে থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর]
মহিমা।। পরিমলদা আছেন, পরিমলদা।
পরিমল।। কে?
মহিমা।। আমি সুদেষ্ণা।
পরিমল।। এসো।
।[সুদেষ্ণা ঘরে প্রবেশ করল। পাড়ার মেয়ে কলেজে পড়ে]
পরিমল।। কী সমস্যা তোমার সুদেষ্ণা?
সুদেষ্ণা।। জাস্ট আপনার একটা সাজেশান, আকাশি নীল রঙের শাড়ির সঙ্গে কী ব্লাউজ পরা উচিত?
রেখা।। তুই এইটা জানার জন্য এতটা হেঁটে এলি! তোর বউদি তো বলে দিতে পারত।
সুদেষ্ণা।। বউদি বললে সাদা, পরে দেখলুম মানাচ্ছে না। তাই ভাবলুম ফ্যাশনের জগতের এতবড়ো একজন মানুষ পরিমলদাকে জিজ্ঞাসা করে আসি।
পরিমল।। শোনো, তোমাকে শিখিয়ে দিই। রঙের জগতে দুটো কথা আছে ম্যাচিং আর কনট্রাস্ট। আকাশি নীলের সঙ্গে নীল যেতে পারে। এটা হল ম্যাচিং, কিন্তু একঘেয়ে। এটাকে আমরা কনট্রাস্ট দিয়ে ভাঙতে পারি। নীলের কনট্রাস্ট হল গোলাপি। রংটা যখন আকাশি নীল তখন গোলাপিটাও হবে ফিকে গোলাপি অর্থাৎ পিঙ্ক। তোমার বউদি যে বলেছিলেন সাদা। সাদা হল ডেড কালার অগতির গতি। সবেতেই যেতে পারে। বুঝতে পারলে। তোমাকে একটা কালার হুইল প্রেজেন্ট করব। তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জানবে মূল রং হল তিনটে—লাল—নীল—হলদে। বাকি সব মিলেমিশে। (ন বেরিয়ে গেল।)
।[ঘরে সুদেষ্ণা ও রেখা]
সুদেষ্ণা।। [রেখার পাশে বলে] কানের দুলের পাথর দুটো কী গো? হিরে?
রেখা।। [লাজুক লাজুক মুখে] হিরে হিরে।
সুদেষ্ণা।। মিত্তির বাড়ির বউ, হিরে তো হবেই।
।[ঘরে কুসি আর সেজবউ পরমা ঢুকল]
কুসি।। কতদিন পরে তুই এলি, সুদেষ্ণা?
সুদেষ্ণা।। [অভিমানের গলায়] তোমরা তো একবারও খবরও নাও না, মেয়েটা বেঁচে আছে না মরে গেছে। জানো আমাদের বাড়িতে কী হয়েছিল? চোর এসেছিল।
পরমা।। চোর এসেছিল তো কী হয়েছে? কিছু নিতে পেরেছিল?
সুদেষ্ণা।। কিছুই নিতে পারেনি। বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল।
কুসি।। চোরের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের কী আছে?
সুদেষ্ণা।। বাবার সঙ্গে চোরের পনেরো মিনিট শুভদৃষ্টি।
রেখা।। সে আবার কী। সে তো ছাঁদনাতলায় হয়।
সুদেষ্ণা।। আরে না গো। চোর বারান্দার কাচের জানালার ওপাশে, বাবা জানালার এপাশে ঘরে। মাঝখানে পাতলা কাঠের ব্যবধান। কাচে নাক ঠেকিয়ে বাবা বাইরে তাকিয়ে আছে আর ওপাশে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোর। প্রথমটায় বাবা ভেবেছিল নিজের মুখের প্রতিবিম্ব। তারপর হঠাৎ যেই মনে হল প্রতিবিম্বের ঠোঁটে গোঁফ আর নাকটা চ্যাপটা। বাবার গোঁফ নেই নাকটা টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো টিকলো। বাবা অমনি চো—চো শব্দ করে থ্যাস করে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। চোর লজ্জায় পালিয়ে গেল। আর আমাদের হইচই। লোকজন এসে পড়ল। বাবা তখনও অজ্ঞান। শ্বাস পড়ছে কী পড়ছে না। এসে গেল অ্যাম্বুলেন্স। সেই রাতেই ইনটেনসিভ কেয়ারে।
কুসি।। [উদবেগের গলায়] এখন কেমন আছেন?
সুদেষ্ণা।। আজকে অফিস বেরোবেন। ডাক্তার আমাকে বলেছেন তুমি বাবাকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসবে, আবার তুমিই বাড়ি ফিরিয়ে আনবে।
কুসি।। আর ক’দিন ছুটি নিলে পারতেন।
সুদেষ্ণা।। ছুটি আর পাওনা নেই। বিশাল একটা প্রমোশন ঝুলে আছে। কামাই করলেই ডিমোশন। ওই উঁচু চেয়ারটায় বসার জন্য তিনজন হাঁচোড়—পাঁচোড় করছে। কে ওঠে, কে ছিটকে যায়।
কুসি।। হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল একথা কেউ যেন জানতে না পারে।
সুদেষ্ণা।। আরে আমরা তো চেপে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের কাজের মেয়েটা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এতদিনে বোধহয় ডালহৌসি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
পরমা।। ওরা হল রয়টার।
কুসি।। আমি দেখেছি, যে যতবড়োই বীর হোক, চোর দেখলে চোর চোর করে চিৎকার করতে পারে না। চেষ্টা যে করে না তা নয়, কিন্তু যা বেরোয় তা হল চো—চো।
পরমা।। এই রেখা, তোকে একটা কথা বলতে এলাম। তোর কচি কলাপাতা রঙের শাড়িটা আজ দিবি?
রেখা।। এতে বলার কি আছে। আলমারি খুলে নিয়ে নেবে। তোমাকে আগেই বলেছি। তোমার—আমার বলে কিছু নেই।
পরমা।। জানি, তবে ও শাড়িটা তুই একদিনও পরিসনি তো।
রেখা।। তোমার শরীরেই উদবোধন হোক সেজদি। তবে ওকে জিজ্ঞাসা করে নিয়ো ম্যাচিং ব্লাউজ কী হবে।
[ পরমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। গান্ধারীর প্রবেশ ]
গান্ধারী।। [উত্তেজিত হয়ে] বড়দি, হয়ে গেল, আজ নিরামিষ। বড়দার সেই সাধের হুলো মুজাহিত ওই অতবড় মাছটাকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নিয়ে গেছে পাঁচিলের ওপর। সেখানে বসে একটু একটু করে খাচ্ছে আর কাকের ঠোকরে কোঁক কোঁক করছে। আর গোটাকুড়ি কাক ছেঁকে ধরেছে।
কুসি।। সেকী রে? মাছ গেছে যাক, বেড়ালটাকে বাঁচা। ওকে ঘরে বসে খেতে বল।
গান্ধারী।। আমার কথা শুনবে, কোনো ব্যাটাছেলে কোনো মেয়েছেলের কথা শুনেছে কোনোদিন? কাছে যেতেই দিচ্ছে না। ফ্যাস ফ্যাস করছে।
কুসি।। চল দেখি।
[ কুসি, রেখা, সুদেষ্ণা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ]
গান্ধারী।। [পিছনে যেতে যেতে] এইবার র্যাশনের দোকান থেকে একটা বস্তা আনব। তারপর গোদাটাকে ধরব। তারপর তেপান্তরে ছেড়ে দিয়ে আসব। কাল রাতে একবাটি ক্ষীর খেয়েছে। আমাকে দেখে পালাল না, উলটে জিভ দিয়ে গোঁফ চাটতে লাগল। এদের আদরে বেড়ালও বাঁদর হয়।
[বাইরের দরজা দিয়ে, ভয়ে ভয়ে একজন উঁকি মারছে। মধ্যবয়সি একজন মানুষ।
আর ঠিক সেইসময় ঘরে ঢুকছেন বৃদ্ধ জ্যাঠামশাই। দুজনে মুখোমুখি। ]
বৃদ্ধ।। কী মতলব?
মধ্যবয়সি।। বাড়িতে কেউ নেই?
বৃদ্ধ।। সবাই আছে। খালি ডাক্তারবাবু নেই।
মধ্যবয়সি।। ডাক্তারবাবুকেই আমার দরকার। কম্পাউন্ডারবাবু হলেও চলবে। ভীষণ সমস্যায় পড়েছি।
বৃদ্ধ।। এখনও তো ডিসপেনসারি খোলেনি। এগারোটার সময় খুলবে।
মধ্য।। তাহলে কী হবে? ন’টা যে বেজে গেল।
বৃদ্ধ।। আর তো মাত্র দু’ঘণ্টা।
মধ্য।। [পকেট থেকে একটা ওষুধের শিশি বের করে] ডাক্তারবাবু বলেছিলেন ঠিক ন’টার সময় দু’চামচ খেতে।
বৃদ্ধ।। তাহলে খেয়ে ফেলুন। চামচে কি দেব?
মধ্য ।। খাব কী করে? ছিপির প্যাঁচ ঘুরে গেছে।