মাজোরকা দ্বীপে ফ্রান্সিস – ৬

শিক্ষাগুরুদের বাসস্থানের এলাকায় এলো ওরা। সালভা ওদের নিয়ে এলো পর পর কয়েকটা আলাদা আলাদা বাড়ির কাছে। বাড়িগুলো পাথরের দেয়াল ঘেরা। কয়েকটা বাড়ির পরে একটা বাড়ির সামনে সালভা দাঁড়াল। বাড়িটার সাধারণ কাঠের দরজায় তালা ঝুলছে। সালভা পকেট থেকে চাবি বের করতে করতে বলল–শ্রদ্ধেয় ম্যাস্ত্রোর কাছ থেকে আমি চাবিটা নিয়ে রেখেছি। জানি আপনারা এখানে আসবেন। রামন লালের আবাসস্থল দেখতে চাইবেন।

দরজা খোলা হল। ভেতরে ঢুকল সবাই। সামনেই একটু বাঁধানে জায়গা। তার পরে ঘর। ওরা ঘরটার কাছে এলো। দরজা ভেজানো ছিল। ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। ঘরে ঢুকল সবাই। ঘরের একপাশে মেঝেয় বিছানা রয়েছে। অন্যপাশে দেয়ালে পাথরের তাক। তাতে হাতে লেখা চামড়া বাঁধানো পাণ্ডুলিপি। পরপর সাজানো। সবই পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। বোঝা গেল–নিয়মিত ঘরটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা আছে। ঘরটা বেশ বড়ো। পেছনের দেয়ালের ওপরের দিকে তিনটি চ্যাপ্টা লোহার গরাদ বসানো জানলামতো চৌকোণো ফোকর। আলো হাওয়া আসছে। সালভা বলল–এখানেই মহামতি রামন লাল থাকতেন।

ফ্রান্সিস ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখতে লাগল। বলল–সালভা–তুমি তো অনেকবার এখানে এসেছো।

–হ্যাঁ হা। ঐ যে জানলার নীচে একটা বড়ো চৌকোণো পাথর আর তার পাশে নিচুতে একটা পাথর ওটাই ছিল মহামতি রামনের লেখাপড়ার জায়গা। ফ্রান্সিস ওখানটায় গেল। দেখল ওপরের জানলা দিয়ে এখানে যথেষ্ট আলো আসছে। এবার ফ্রান্সিস পাথরের তাকে রাখা পাণ্ডুলিপির পাতা উল্টে দেখতে লাগল। মারিয়াকে ডেকে বলল–

–এই পাণ্ডুলিপিগুলো দেখো তো। আমার বিদ্যে তো জানো। মারিয়া এগিয়ে এলো। পাতা উল্টে দেখতে লাগল। দেখে নিয়ে বলল–গ্রীক আরবী আর ল্যাতিন ভাষায় লেখা। এটুকু বুঝতে পারছি। তার বেশি বোঝার বিদ্যে আমারও নেই। সালভা বলল– এসব পুরোনো সংগ্রহের কিছু কিছু আমার পড়ার কাজে লেগেছে। দর্শন, রয়াসন আর জ্যোতির্বিদ্যার ওপরেই লেখা বেশি।

–আচ্ছা–গ্রীক ভাষায় লেখা রামন লালের কোনো পাণ্ডুলিপি এখানে আছে? মারিয়া বলল। ফ্রান্সিস বলে উঠল-আমিও ঠিক এই কথাটাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। সালভা সেই পাথরপাতা জায়গাটায় গেল। পাশেই পাথরের তাকটার দিকে তাকিয়ে বলল–রামন লালের নিজের পাণ্ডুলিপিগুলো সব এখানেই থাকতো। এখন দেখছি না। শ্রদ্ধেয় ম্যাস্ত্রো হয়তো বলতে পারবেন।

–চলো তো। ফ্রান্সিস বলল। ওরা বাড়ির বাইরে এলো। দরজায় তালা লাগিয়ে সালভা চলল ম্যাস্ত্রোর ঘরের দিকে। যেতে যেতে সালভা বলল–শ্রদ্ধেয় ম্যাস্ত্রো এখানকার ছাত্রাবাসের দায়িত্বে আছেন। তাই শুধু উনিই ছাত্রাবাসের ঘরে থাকেন। কিন্তু ম্যাস্ত্রোর ঘরের সামনে এসে দেখল ঘরে তালা ঝুলছে। ম্যাস্ত্রো নেই। সালভা ছাত্রদের ঘরে গিয়ে জেনে এলো যে রমন লালের পবিত্র দেহ সমাধিস্থ করার আয়োজনে উনি এখন ব্যস্ত।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার সময় ম্যাস্ত্রো এলেন। তখন সালভা ফ্রান্সিসকে নিয়ে গেল। ম্যাস্ত্রোকে ফ্রান্সিস বলল–মহামতি রামন লালের নিজের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি একটু দেখতে চাই। ম্যাস্ত্রো পাশের দেয়ালের তাক থেকে চারটে পাণ্ডুলিপি বের করলেন। মরক্কো চামড়ায় বাঁধানো বড়ো বই মতো বেশ মোটা ভারী। ফ্রান্সিস বইটার লেখাগুলো দেখল। তারপর মারিয়ার হাতে দিল। মারিয়াও দেখল–গ্রীক ও আরবী ভাষায় লেখা। বাকিগুলোও দেখল ওরা। খুব পরিচ্ছন্ন হস্তাক্ষর। ফ্রান্সিস ভাবল এমনি হাতে লেখা একটা পাণ্ডুলিপি নিখোঁজ। এখন সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। ভরসা শুধু নকশাটা।

ফেরার সময় সালভা বলল–দর্শনশাস্ত্র নিয়ে ঐ পাণ্ডুলিপিগুলোতে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আছে।

 ওদিকে প্রাসাদসংলগ্ন রাজপরিবারের সমাধিভূমিতে রামন লালের মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হচ্ছে। বহুলোক জড়ো হয়েছে সেখানে। মারিয়া বলল–ফ্রান্সিস–এরকম একটা অনুষ্ঠান তো বড়ো একা দেখা যায় না। আমি যাবো দেখতে। ফ্রান্সিস বলল–তোমার সঙ্গে শাঙ্কোও থাক।

–তুমিও চলো না। মারিয়া বলল। ফ্রান্সিস মাথা নাড়ল। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ল।

রামন লালের পবিত্র দেহ সমাধিস্থ হওয়ার পরেও লোকের আসার বিরাম নেই। বিকেল নাগাদ সমাধিভূমি জনশূন্য হয়ে গেল।

সন্ধেবেলা ফ্রান্সিস সালভাকে বলল তুমি বলেছিলে এই প্রাসাদের চৌহদ্দির মধ্যে একটা ছোটো গীর্জা আছে। —-শিক্ষাগুরুদের বাড়িগুলোর ওপাশে। এই গীর্জাটা ছাত্র আর শিক্ষাগুরুদের জন্যে। সালভা বলল।

–রামন লালও কি ঐ গীর্জায় উপাসনা করতে যেতেন? ফ্রান্সিস বলল।

–না। তার থাকার ঘরের পাশে আছে একটা ছোটো ঘর। সেখানে যীশুর মূর্তি আছে। তিনি সেই ঘরেই নিয়মিত উপাসনা করতেন। সালভার কথাটা শেষ হতেই ফ্রান্সিস সাগ্রহে বলল–এরকম একটা ঘর আছে নাকি?কিন্তু তুমি তো আমায় বলোনি।

–রামন লাল শুধু উপাসনার সময় আধঘণ্টার জন্যে ঐ ঘরটায় যেতেন। সালভা বলল। ফ্রান্সিস বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। বলল চলো তো আর একবার রামন লালের ঘরগুলো দেখবো।

–কিন্তু অন্ধকারে এখন–সালভা বলল।

–মোমবাতির আলোয় দেখবো। ফ্রান্সিস বলল। মারিয়া বলে উঠল–কোথায় ভাবলাম পালমানগরটা আজকে সন্ধেবেলা একটু ঘুরেটুরে দেখবো–ফ্রান্সিস হাসল। বলল–

তুমি আর শাঙ্কো যাও–ঘুরে এসো তো। শাঙ্কো বলল–তুমিও চলো না।

–না শাঙ্কো–নকশার রহস্যটাই এখন আমার চিন্তায়–আর কিছু ভাবতে পারছি না। ফ্রান্সিস বলল। মারিয়া কিন্তু নগরে বেড়াতে গেল না। ফ্রান্সিস আর সালভার পিছু পিছু চলল। শাঙ্কোও চলল সঙ্গে।

তালার চাবিটা সালভাই নিজের কাছে ম্যাস্ত্রোর কাছ থেকে চেয়ে রেখেছিল।

রামন লালের ঘরের কাছে সবাই। সালভাদুটো মোমদানিতে দুটো বেশ মোটা লালচে রঙের মোম এনেছিল। মোম জ্বালাল। একটা মোমদানি নিজে নিল। আর একটা ফ্রান্সিসের হাতে দিল।

রামন লালের থাকার ঘরটা মোমবাতির আলোয় ফ্রান্সিস আবার খুঁটিয়ে দেখল। সেই ওপরের দিকে ফোকর মতো জানলা। চ্যাপ্টা লোহার গরাদ বানানো। নকশার রহস্যভেদে কাজে লাগবে এমন কিছুই পেল না। বলল–সালভা উপাসনার ঘরটায় চলো। সালভা আলো নিয়ে ঘরের বাঁদিকের কোণায় এলো। দেখা গেল একটা ছোটো সাধারণ কাঠের দরজা। সালভা কয়েকটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। মাথা নিচু কী করে সবাইকে ঘরটায় ঢুকতে হল।

মোমবাতির আলোয় ফ্রান্সিসরা দেখল অন্য ঘরগুলোর মতো এই ঘরেও উঁচুতে দেয়ালের দুটো চ্যাপ্টা লোহার গরাদ বসানো চৌকোণো জানলামতো। তার নীচে দেয়ালে গায়ে যীশুর কাঠের একটা মূর্তি। একটা হালকা নীল সার্টিন কাপড়ে ঢাকা চৌকোণো লম্বাটে বেদীর ওপর মূর্তিটা রাখা। মূর্তির নীচে মেঝেয় একটা পশমের আসন এখনও পাতা রয়েছে। আলো নিয়ে ফ্রান্সিস ছোট ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখল। তারপর বলল সালভা–এই উপাসনার ঘরে কি তুমি আসতে?

–হ্যাঁ হ্যাঁ–কত এসেছি। সকালবেলা রামন লাল উপাসনা করতেন ঐ আসনে বসে। আমিও মাঝে মাঝে আসতাম। দেখতাম রামন লাল চোখ বুজে মাথা নিচু করে আসনে বসে আছেন। আমিও চুপ করে তার পেছনে বসে প্রার্থনা করতাম। উপনাস সেরে আমাকে দেখে খুশি হতেন। একটু থেমে সালভা বলল–উনি আমাকে পুত্রের মতো স্নেহ করতেন। সালভার দু’চোখ জলে ভরে উঠল। ও হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছল। মারিয়া বলল-যীশুর মূর্তিটা কী সুন্দর। সালভা বলল-রামন লাল যখন প্রথম পরিভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তখনই মূর্তিটা এনেছিলেন। জুডিয়ার এক গ্রাম্য মিস্ত্রির হাতে তৈরি।

ফ্রান্সিস কয়েকবার সমস্ত ঘরটা দেখল। তারপর বলল–চলো সব। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

রাতে সবাই শুয়ে পড়েছে তখন। ফ্রান্সিস ডাকল–সালভা। সালভা ওর দিকে তাকাল। ফ্রান্সিস বলল–দেখো নকশাটা প্রথম দেকে আমি যা অনুমান করেছিলাম এখন সেটা আর অনুমান নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস–রামন লাল নকশায় যে জায়গাটা নির্দেশ করেছেন সেই জায়গাটা তোমার খুবই পরিচিত।

–কিন্তু আমি তো সেই জায়গাটা কোথায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সালভা বলল।

–সেটা আমিই তোমাকে বোঝাবো। আমার মনে হচ্ছে আমি সমাধানের কাছাকাছি এসেছি। ফ্রান্সিস বলল। তারপর বলল–রামনের দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা তুমি পড়েছে। সবশেষের পাতায় যা লেখা আছে তুমি কি সেদিন সেটা ঠিক ঠিক আমাকে বলতে পেরেছিলে? সালভা একটু ভেবে বলল তখন আমার যা মনের অবস্থা–ঠিক ঠিক মনে রাখা সম্ভব ছিল না।

–যা হোক–দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা রাজার কাছে রয়েছে। কাল সকালে তুমি আমাদের রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দাও। ঐ পাণ্ডুলিপিটা আমি চাইবো। রাজা দিলে পড়বো মানে তুমি পড়ে আমাকে অর্থ বলবে। রামন লাল ঠিক কী বলতে চেয়েছেন সেটা আমি জানতে চাই। ফ্রান্সিস বলল।

পরদিন সকালে সালভা রাজপ্রাসাদে গেল। একটু পরেই ফিরে এলো। বলল– রাজা নিজেই তোমাকে দেখা করবার জন্যে একজন প্রহরীকে পাঠিয়েছেন।

তাহলে তো ভালোই হল। ফ্রান্সিস বলল।

প্রহরীর সঙ্গে ফ্রান্সিসরা রাজার সাক্ষাতের জন্যে রাজপ্রাসাদের দিকে চলল। প্রহরী ফ্রান্সিসদের রাজার মন্ত্রণাকক্ষে নিয়ে এসে বসাল।

কিছু পরে রাজা এলেন। ফ্রান্সিসরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাল। রাজা বললেন– তোমরা পাণ্ডুলিপি খোঁজার ব্যাপারে কতদূর এগিয়েছো?

মহামান্য রাজা–ফ্রান্সিস বলল–আমরা অনেকটা এগিয়েছি।

–খুশি হলাম। রাজা বললেন। তারপর মারিয়াকে বললেন–শুনলাম তুমি নাকি রাজকুমারী?

ফ্রান্সিস বলল হা মহামান্য রাজা-উনি আমাদের দেশের রাজকুমারী।

-কী আশ্চর্য তোমার পোশাক দেখে আমি ভেবেছিলাম তুমি এই দেশের গ্রামের লোক। রাজা বললেন। মারিয়া বলল–আমি এই পোশাক স্মারক হিসেবে আমাদের দেশে নিয়ে যাবো। রাজা একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন–সত্যিই আমি প্রীত হলাম। এবার ফ্রান্সিস বলল

মাননীয় রাজা–একটা অনুরোধ ছিল।

বলো। রাজা বললেন।

–মহামতি রামন লালের দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা কিছুক্ষণের জন্যে আমি পড়তে চাই– বিশেষ করে শেষাংষটুকু।

–বেশ তো। সালভা নিয়ে যাবে তোমাদের পড়ে বুঝিয়ে দেবে। রাজা উঠলেন। ভেতরে গেলেন। সালভাকে রেখে ফ্রান্সিসরা চলে এলো।

কিছুক্ষণ পরে সালভা ফ্রান্সিসদের ঘরে এলো। হাতে রামন লালের দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা। মারিয়া হাত বাড়িয়ে নিল ওটা। গ্রীক ভাষায় লেখা। ওর বোঝার কথা নয়। ফ্রান্সিস বলল–সালভা-কালিকলমের ব্যবস্থা করতে পারো? সালভা হাসল। বলল–এটা লেখাপড়ারই পীঠস্থান। আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন। ফ্রান্সিস হাসল। মাথা নেড়ে বলল–সত্যিই ভুলে গিয়েছিলাম। সালভা চলে গেল। মারিয়া পাণ্ডুলিপিটা ফ্রান্সিসদের হাতে দিল। একটু পরেই সালভা রুপোর দোয়াতদানি আর পালকের কলম নিয়ে এলো। ফ্রান্সিসদের বিছানায় বসল। ফ্রান্সিস বিছানার তলা থেকে নকশাটা বের করল।–নকশাটা মারিয়াকে দিয়ে বলল–সালভা পাণ্ডুলিপির শেষাংশটুকু স্পেনীয় ভাষায় অনুবাদ করে বলবে তুনি নকশার কাগজের পেছনে সেটা লিখবে। মারিয়া বসল। নকশার উল্টোপিঠে শেষ পাতাটা বের করল। অনুবাদ করে বলতে লাগল। মারিয়া লিখতে লাগল। পাণ্ডুলিপির পার্চমেন্ট কাগজগুলো খোলা। তখনও বাঁধানো হয় নি।

লেখা শেষ হলে ফ্রান্সিস পড়তে লাগল–গ্রীস, মিশর, মেসোপটেমিয়া আরো নানা জায়গায় ঘুরে আমি নানাভাবে যেসব জায়গার অ্যালকোমিচর্চার তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম এবং যেসব তথ্য সূত্রাকারে লিখে রেখেছিলম সেসব আমার পরিভ্রমণকালে লেখা প্রথম পাণ্ডুলিপিতে।

এবার পরিভ্রমণে বহির্গত হবার পূর্বে সেই পাণ্ডুলিপি এক পবিত্রস্থানে গোপনে রেখে এসেছিলাম।

এবারের পরিভ্রমণকালে আমি অনেক কষ্টে কখনও জীবন বিপন্ন করে আরো তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখন মাজোরকা ফিরে যাবো। সব তথ্য সূত্র একত্র করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। যদি সত্যিই আমি নিকৃষ্ট ধাতু সীসে দস্তা আর পারদ সোনায় রূপান্তরিত করতে পারি তাহলে সমস্ত সূত্র তথ্য ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র অগ্নিতে নিক্ষেপ করবো।” এই পর্যন্ত পড়ে ফ্রান্সিস আশ্চর্য হয়ে গেল। ও একবার সালভার মুখের দিকে তাকাল। মারিয়ার দিকে তাকাল। তারপর আবার পড়তে লাগল–”পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করবো যে মানুষও পারে বিপুল স্বর্ণসম্পদ সৃষ্টির অধিকার লাভ করেও তা তুচ্ছজ্ঞানে পরিত্যাগ করতে।”

পাণ্ডুলিপি এখানেই শেষ। ফ্রান্সিস কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলি। তারপর আস্তে আস্তে বলল–সালভারামন লাল শুধু মনস্বীই ছিলেন না–মহামতিও ছিলেন। এককথায় খাঁটি মানুষ ছিলেন। তারপর মাথা নিচু করে বলল–আমি তাকে নতমস্তকে আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সবাই চুপ করে রইল।

একটু পরে সালভা উঠে দাঁড়াল। বলল–সৈন্যদের ছাউনিতে আল আমিরির বিচার চলছে। আমাকে যেতে হবে। আমাদের আগুনে পোেড়া বস্তির পুননির্মাণের খরচ আল আমিরির কাছ থেকে আদায় করবো। সালভা চলে গেল।

ফ্রান্সিস বিছানায় আধশোয়া হ’ল। রামন লালের সংকল্পটা আবার পড়তে লাগল।

হঠাৎ দরজার কাছে কাদের পায়ের শব্দ শোনা গেল। শোনা গেল–ফ্রান্সিস ফ্রান্সিস ডাক। ফ্রান্সিস উঠে বসল। মারিয়া উঠে দাঁড়ল। ঘরে ঢুকল হ্যারি। পেছনে বিস্কো। হ্যারি আর ফ্রান্সিসকে উঠতে দিল না। বসা অবস্থাতেই ফ্রান্সিসকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল। ফ্রান্সিসের গায়ে হাত বুলোতে লাগল। ওর দু’চোখ জলে ভরে উঠল। ফ্রান্সিস বুঝল সেটা। ধমক লাগাল–এই হ্যারি–কী ছেলেমানুষি হচ্ছে। বিস্কো তখন মারিয়াকে বলছে–দিন কয়েক আমরা অপেক্ষা করলাম। যেদিন রাতে রাজার সৈন্যবাহিনী পালমা নোভার দুর্গ দখল করল, আল আমিরিকে বন্দি করল সেদিনই আপনাদের জন্যে ভীষণ চিন্তা হল। পরদিনই এলাম। আগুনে পোড়া জেলেবস্তিতে তখন কয়েকটা পরিবার ফিরে এসেছে। সালভার কথা জিজ্ঞেস করতে ওরা সালভার বাবার কাছে আমাদের নিয়ে গেল। তার কাছেই আপনাদের সব সংবাদ পেলাম। বিস্কো থামতেই হ্যারি বলে উঠল–ফ্রান্সিস তোমরা মরণজলা পার হয়েছিলে? মারিয়া বলে উঠল–আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম। ফ্রান্সিস মুখে শব্দ করল। বলল–তারপর তোমরা জাহাজ চালিয়ে পালমা বন্দরে এলে। হ্যারি বলল–হ্যাঁ। আজ খুব ভোরে এসেছি। জাহাজ থেকে নেমে সোজা ছুটে এলাম এখানে। আমি রামন লাল এখানে থাকতেন। তোমরা এখানেই আসবে। কিন্তু দ্বাররক্ষীরা আটকাল। ভিনদেশি আমাদের রাজপ্রাসাদে ঢুকতে দেবে না। অগত্যা প্রধান ফটকের বাইরে আমরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম যদি তোমরা কেউ বেরিয়ে আসো বা তোমাদের কাউকে যদি দেখতে পাই।

সে কি ফ্রান্সিস বলল–সেই ভোর থেকে দাঁড়িয়ে আছো! মাথা নেড়ে হ্যারি হাসল। বলল–সালভাকে প্রধান ফটকের দিকে আসতে দেখে আমরা চাঁচামেচি শুরু করে দিলাম। সালভা ছুটে এলো। তারপর এখন–হে বন্ধু তোমার সম্মুখে। হ্যারির বলার ভঙ্গী শুনে ফ্রান্সিস মারিয়া হেসে উঠল। ফ্রান্সিস বলল–শোনো হ্যারি–এখন আমি জাহাজে যাবো না। মারিয়া আর শাঙ্কো যাক। মারিয়াকে দেখিয়ে বলল–মারিয়ার পোশাকের চেহারা দেখেছো?মারিয়া বলে উঠল–পোশাক পাল্টাতে নয়। আমি জাহাজে যাবো আমার বন্ধুদের দুশ্চিন্তা দূর করতে।

কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে মারিয়া শাঙ্কো হ্যারিদের সঙ্গে জাহাজঘাটার দিকে চলে গেল।

ফ্রান্সিস রামন লালের লেখাটা পড়তে পড়তে হঠাৎ ডাকল–সালভা। সালভাদরজার কাছে সেই ন্যাড়া ছেলেটাকে বলছিল–কীরে তুই এখানে কবে থেকে কাজ করছিস্? ছেলেটা কী বলতে যাচ্ছিল ফ্রান্সিসের ডাক শুনে থেমে গেল। সালভা ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল–কী হল? ফ্রান্সিস দ্রুত পায়ে দরজার কাছে এলো। বলল-রামন লালের উপাসনা ঘরে চলো।

–কেন? সালভা আশ্চর্য হয়ে বলল। ফ্রান্সিস বলল–

–রামন লাল তার লেথায় বলেছেন–”পবিত্রস্থান’-এ তিনি পাণ্ডুলিপি গোপনে রেখে গেছেন। উপাসনা ঘরের মতো পবিত্রস্থান আর কী আছে। চলো। যেতে যেতে। বলল–সালভানক্শার রহস্যের কুয়াশা কেটে যাচ্ছে।

দু’জনে রামন লালের উপাসনা ঘরে এলো। ফ্রান্সিস ঘরটার চারদিকেতাকাতে লাগল। এখন দিনের বেলা। ওপরের চ্যাপ্টা লোহার গরাদ বসানো দুটো জানলা দিয়ে ঘরটায় আলো আসছে। জানলাটা দেখতে দেখতে ফ্রান্সিস বলল–সালভা এখানকার শিক্ষাগুরুদের ঘরগুলো সব একদিকে আর সব ঘরেই এরকম জানলা আছে–তাইনা?

–মনে তো হয়। লক্ষ্য করি নি তেমন। সালভা বলল।

এখন যাও–সব ঘরে ক’টা করে জানলা আছে আর ক’টা করে গরাদ আছে। দেখে এসো। ফ্রান্সিস বলল।

–আপনার মাথায় বোধহয় ভূত চেপেছে। বিড় বিড় করে কথাটা বলতে বলতে সালভা চলে গেল।

কিছুক্ষণ কাটাল। ফ্রান্সিস তাকিয়ে আছে যীশুর মূর্তি আর বেদীর দিকে।

সালভা ফিরে এলো। বলল–তিনটে করে জানলা আর ছ’টা করে গরাদ। তাতে হলটা কী? ফ্রান্সিস বলল।

–এ ঘরে জানলা দুটো আর গরাদ পাঁচটা করে দেখো। সালভা জানলা দুটো দেখল। গরাদগুলো গুনল। পাঁচটা।বলল–হ্যাঁ। ফ্রান্সিস হাতের নকশাটা ওকে দেখিয়ে বলল– এই দেখো এই দুটো জানলা আঁকা। সালভা দেখল। বলল–কিন্তু গরাদ তো পাঁচটা আঁকা নেই।

–যেটা আঁকা আছে সেটা রোমান অক্ষরে পাঁচ কিনা। দেখো ভালো করে। ফ্রান্সিস বলল! সালভা দেখে বলল হ্যাঁ পাঁচই তো! ফ্রান্সিস বলল–

–ভুলে যেও না–রামন লাল যখন নক্শাটা আঁকেন তখন তার মৃত্যুকাল উপস্থিত। অসাড় হয়ে আসতে থাকা হাতে পাঁচটা দশটা টান দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। তাই রোমান ‘দ্দ” এঁকেছেন। এই ঘরের জানলার গরাদও পাঁচটা। মিলে গেল কিনা। সালভা বলেউঠল–সত্যিই তো। ফ্রান্সিস বলল–এবার শেষ সূত্র। দেখো নীচে একটা লম্বাটে চৌকোণা দাগ আছে কিনা।

-হা আছে তো। সালভা বলল। ফ্রান্সিস বলল–

যীশুর মূর্তির নীচে বেদীটা কাপড়ে ঢাকা। তাই বুঝতে পারছি না ওটা পাথরের না কাঠের। তুমি কাপড়টা একটু সরিয়ে দেখো–ওটা কীসের? সালভা বেদীর সামনে গেল। বুকে ক্রশ এঁকে মাথা নুইয়ে যীশুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আস্তে কাপড়টা কিছু সরিয়ে দেখল–লম্বাটে কাঠের দেরজামতো। ফ্রান্সিস দেখল সেটা। আরও দেখল সামনেটায় কাঠের ঢাকনা মতো। সালভা কাপড়টা ছেড়ে দিল। দেরাজ ঢাকা পড়ে গেল। পেছনে ফিরে সালভা দেখল–ফ্রান্সিস মাথা নিচু করে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে। একটুক্ষণ। চোখ মেলে ফ্রান্সিস বলে উঠল–মহামতি রামন লাল–আপনার আশীর্বাদে আমি আপনার পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করতে পারলাম। সালভা তো অবাক। বলল–কিন্তু পাণ্ডুলিপি কোথায়? ফ্রান্সিস দরজার দিকে যেতে যেতে বলল–সব বলবো মহামান্য রাজাকে।

তুমি এক্ষুণি রাজাকে গিয়ে বলে তিনি যেন এখানে একবার দয়া করে আসেন। কারণ পাণ্ডুলিপি পাওয়ার অধিকারী একমাত্র তিনিই।

নিজের ঘরে ফিরে এলো ওরা। ফ্রান্সিস কলমে কালি নিল। তারপর নকশাটায় কী লিখতে লাগল। লেখা শেষ হলে ফ্রান্সিস সেই উপাসনা ঘরে গিয়ে রাজার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল।

অল্পক্ষণের মধ্যেই রাজা এলেন। সঙ্গে মন্ত্রীমশাই। পেছনে সালভা আর ম্যাস্ত্রো। ফ্রান্সিস মাথা নুইয়ে দু’জনকেই সম্মান জানাল। রাজা বললেন–পাণ্ডুলিপি কোথায়? ফ্রান্সিস রাজার হাতে নকশাটা দিল। উল্টোপিঠটা দেখিয়ে বলল–মহামতি রামনের শেষ সংকল্পটা আপনি আর একবার পড়ুন–এই অনুরোধ। রাজা একবার ফ্রান্সিসের দিকে তাকিয়ে নিয়ে অনুবাদটা পড়লেন। মন্ত্রীমশাইকে দিলেন। মন্ত্রীমশাইও পড়লেন। ফ্রান্সিস বলল–মহামতি রামনের অ্যালকেমিচর্চার আগ্রহ ছিল। কিন্তু তার শেষ সংকল্প তো জানেন। এরপরও কি প্রথম পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা আছে মাননীয় রাজা? রাজা একটু চুপ করে থেকে বললেন–দেখোনিকৃষ্ট ধাতুকে সোনায় রূপান্তরিত করার আগ্রহ নিয়ে আমি প্রথম পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের চেষ্টা করিনি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম তিনি দেহরক্ষা করেছেন। তার পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবেই প্রথম পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের চেষ্টা করেছি।

–তাহলে–আপনিই ঐ বেদীর ঢাকনার কাপড়টি দয়া করে সরান। ফ্রান্সিস বলল । রাজা একবার ফ্রান্সিসের দিকে তাকিয়ে নিয়ে যীশুর মূর্তির বেদীর সামনে এলেন। মাথা নিচু করে বুকে ক্রশ আঁকলেন। তারপর আস্তে আস্তে বেদী তক কাপড়টা সরালেন। সেই ওক কাঠের লম্বাটে দেরাজমতো।

–ঢাকনাটা দয়া করে খুলুন। ফ্রান্সিস বলল। রাজা দেরাজের ঢাকনাটা আস্তে আস্তে খুললেন। ভেতরে দেখা গেল একটা মরোক্কো চামড়ায় বাঁধানো পাণ্ডুলিপি। রাজা পাণ্ডুলিপিটা আস্তে আস্তে বের করে আনলেন। সামান্য ছাইরঙা পার্চমেন্ট কাগজের পাণ্ডুলিপির পাতা ওল্টালেন। কিছুটা পড়লেন। তারপর মন্ত্রীমশাইর দিকে তাকিয়ে বললেন–হ্যাঁ–এটাই প্রথম পাণ্ডুলিপি। তারপর ফ্রান্সিসের দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন–তুমি নশার সমাধান বের করলে কী করে? ফ্রান্সিস রাজার হাতে নটা দিয়ে বলল–মাননীয় রাজা-মহামতি রামন লাল মৃত্যুকালীন দুঃসহ কষ্টের মধ্যেও যা আঁকতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি আমি সেটাই সম্পূর্ণ করে এঁকে এবং লিখে দিয়েছি। রাজা নকশাটা দেখলেন–

আনন্দিত রাজা বললেন, “আমি নিজে এবং মাজোরকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” রাজা পাণ্ডুলিপি নিয়ে ঘরের বাইরে এলেন। প্রাসাদের দিকে চললেন। পেছনে মন্ত্রী।

ফ্রান্সিসরা নিজেদের ঘরে এলো। তখনই সালভা ঘরে ঢুকল। বলল, “ফ্রান্সিস, আপনার বন্ধুরা জাহাজ চালিয়ে পালমা বন্দরে এসেছে। ওরা রাজপ্রাসাদের বাইরে অপেক্ষা করছে।”

 ফ্রান্সিস বলে উঠল, “আমাদের কাজ শেষ।মারিয়া, শাঙ্কো, চলো আমাদের জাহাজে।”

ওরা রাজপ্রাসাদের বাইরে আসতে হ্যারি, বিস্কো, পেড্রো ছুটে এলো। হ্যারি ফ্রান্সিসকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, “তোমাদের সব কথা আমরা শুনেছি।” বন্ধুরা আনন্দের ধ্বনি তুলল, “ও হো-হো।” পালমার লোকেরা ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। ভাইকিংরা এত আনন্দের কারণ বুঝল না।

ফ্রান্সিসরা দলবেঁধে এগিয়ে চলল জাহাজঘাটার দিকে। নকশাটা ভালো করে দেখে রাজা ফ্রান্সিসের দিকে তাকালেন। বললেন–সত্যি তুমি যথেষ্ট বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির পরিচয় দিয়েছে। তারপর রাজা মন্ত্রীমশাইকে বললেন মহান রামন লালের পরিভ্রমণের দুটি পাণ্ডুলিপিই এই পবিত্রস্থানে রাখা হবে। ফ্রান্সিস মাথা নুইয়ে সম্মান জানিয়ে বলল

–মহামান্য রাজা–যদি অভয় দেন তাহলে আমি বিনীতভাবে একটা অনুরোধ করছি।

-বলো। রাজা বললেন। ফ্রান্সিস বলল সালভা দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা পড়েছে। প্রথম পাণ্ডুলিপির বিষয়ে সে জানে। সে বলেছে মহামতি রামন দেশে দেশে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা এই দুটি পাণ্ডুলিপিতে লিখেছেন। শুধু অ্যালকেমির তথ্য ও সূত্র আলাদা করে এই পবিত্রস্থানে রাখুন। কিন্তু তার পরিভ্রমণের মূল্যবান কাহিনী থেকে এখানকার শিক্ষাগুরু ও ছাত্রদের বঞ্চিত করবেন না। মহামতি রামন লালের রচনা তাদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুক একটা কি মহামান্য রাজা চান না? রাজা ফ্রান্সিসের কথা মন দিয়ে শুনলেন। বললেন–তোমার কথাটা ভেবে দেখবো। ফ্রান্সিস মাথা নুইয়ে সম্মান জানিয়ে বলল মহামান্য রাজা–আমার কর্তব্য শেষ। আমাকে আমাদের জাহাজে ফিরে যেতে হবে। আপনি অনুমতি দিন। রাজা বললেন—

আমি নিজে এবং মাজোরকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ফ্রান্সিস মাথা নুইয়ে সম্মান জানিয়ে ঘরের বাইরে এলো। সালভা ছুটে এল। বলল–চলুন–আপনাকে জাহাজঘাটায় নিয়ে যাই। ফ্রান্সিস হেসে বলল–ধন্যবাদ সালভা–আমি একাই যেতে পারবো। তুমি রাজা ও মন্ত্রীমশাইয়ের কাছে থাকো।

বন্দরে যখন ফ্রান্সিস পৌঁছল তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে। বেশ কটা জাহাজ রয়েছে বন্দরে। নিজেদের বহু পরিচিত অনেক সুখ-দুঃখের সঙ্গী সেই জাহাজ খুঁজে নিতে দেরি হল না।

ফ্রান্সিস যখন পাতা পাটাতন দিয়ে জাহাজে উঠছে রেলিঙে দাঁড়ানো বন্ধুরা চেঁচিয়ে বলল–ফ্রান্সিস এসেছে। মুহূর্তে বন্ধুরা অনেকেট ডেক-এ উঠে এলো। ফ্রান্সিস জাহাজের ডেক-এ পা ফেলা মাত্র ওরা ছুটে এলো। সবাই ফ্রান্সিসকে জড়িয়ে ধরতে চায়। আনন্দের ধ্বনি তুলল ওরা—ও হো হো। মারিয়া আর হ্যারি ছুটে এলো। মারিয়া বলল পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করতে পেরেছো? ফ্রান্সিস হেসে বলল–হ্যাঁ। মারিয়া বলে উঠল– আমাকে তো থাকতেই দিলে না। ফ্রান্সিস মারিয়া–তোমার অনেক ধকল গেছে। পরিচিত পরিবেশে তোমার বিশ্রামের দরকার ছিল। তাই তোমাকে জহাজে পাঠিয়েছিলাম। মারিয়া আর কিছু বলল না। ফ্রান্সিস হেসে দু’হাত ছড়িয়ে বলল–মারিয়া–এবারও আমার হাত শূন্য। আমি কিছুই আনতে পারিনি। মারিয়া মাথা নেড়ে বলল– তাতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। শাঙ্কো বলল–সবাই জানতে চাইছে তুমি কী করে পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করলে।

ফ্রান্সিস বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল–ভাইসব–সব তোমাদের বলবো কিন্তু। তার আগে আমাকে খেতে দাও। বড্ড খিদে পেয়েছে।

বন্ধুরা ফ্রান্সিসকে প্রায় পাঁজাকোলা করে নিয়ে চলল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *