৩
মূর সৈন্যদের পাহারায় ওরা ঘরের বাইরে এলো। পাথুরে চত্বর দিয়ে চলল কয়েদঘরের দিকে। ফ্রান্সিস মারিয়ার থমথমে মুখের দিকে তাকাল। বুঝল–মারিয়া রাগ করেছে। হাঁটতে হাঁটতে আস্তে ডাকল–মারিয়া। মারিয়া বেশ বিরক্ত গলায় বলল–তোমার এক কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে বলল–সঠিক মুহূর্তে বুঝতে পারবে শর্তে রাজি হয়ে আমি ভুল করেছি না ঠিক করেছি। মাথা ঠাণ্ডা রাখো। এখন রাগারাগির সময় নয়। মারিয়া কিছু বলল না। হাঁটতে লাগল।
মারিয়া নিজের কয়েদঘরে ঢুকে পড়ল। ফ্রান্সিসরাও নিজেদের ঘরে ঢুকল। শাঙ্কো প্রায় পিঠে করে সালভাকে নিয়ে ঢুকল। সালভা দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। শুয়ে পড়ল। কালমা দরজা বন্ধ করে দিল। ফ্রান্সিস ঘাসের বিছানায় শুয়ে পড়ল। বাঁধা হাত মাথার নীচে রাখল। অনেক চিন্তা মাথায়।
ঠাং-ঠঠাং শব্দ তুলে দরজা খুলে গেল। একজন পাকা দাড়ি গোঁফঅলা বৃদ্ধ ঢুকল। মাথায় হলদে কাপড়ের ফেট্টি। গলায় নীলরঙের পাথরের মালা। কাঁধে একটা ছোটো কাপড়ের বোঁচকামতো ঝোলানো। কালমা বলে উঠল–বৈদ্যি। বৈদ্যি বোঁচকা নামিয়ে বসল সালভার কাছে। সালভা উঠে বসল। বৈদ্যি ওর পিঠের দিকে পোশাকটা তুলল। দেখা গেল পিঠে চাবুকের কালশিটে দাগ। কয়েকটা জায়গা বেশ কেটে গেছে। চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে। বৈদ্যি বোঁচকা থেকে একটা কাঠের ছোটো বাটি বের করে রাখল। শাঙ্কোর দিকে তাকিয়ে জল আনতে ইঙ্গিত করল। শাঙ্কো উঠে কোণা থেকে জল নিয়ে এলো। বৈদ্যি বোঁচকা থেকে একটা লাল কাপড়ের টুকরো বের করল। একটা কাঠের ছোটো লম্বা কৌটো বের করল। কৌটো থেকে কীসের গুঁড়ো নিয়ে জলে ফেলল। জলটা কালো হয়ে গেল। কাপড়ের টুকরোটা সেই জলে ভিজিয়ে সালভার ক্ষতস্থানে বুলিয়ে দিতে লাগল। সালভা প্রথমে একটু ঝাঁকিয়ে উঠল। তারপর চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ ওষুধটা লাগাল বৈদ্যি। তারপর কী বলে চলে গেল। কালমা দরজায় তালা লাগাতে লাগাতে বলল-”বৈদ্যি আবার সন্ধেবেলা আসবে।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর ফ্রান্সিস নক্শাটা নিয়ে বসল। অনেকক্ষণ ধরে দেখে দেখে বুঝল যে জায়গাটা খুব কম টানে কাগজে আঁকা হয়েছে। সেই জায়গাটা রামন লাল আর সালভা দু’জনেরই খুব পরিচিত। জায়গাটা পালমার রাজপ্রাসাদেরই কোনো জায়গা। ফ্রান্সিস ডাকল–সালভা। সালভা শোয়া অবস্থায়ই ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল। ফ্রান্সিস বলল–সালভা তোমরা কোথায় থাকতে? পড়শুনো করে?
–আলমুদাইলা রাজপ্রাসাদের দক্ষিণকোণে। সালভা বলল।
–রামন লালও কি ওখানেই থাকতেন? ফ্রান্সিস জানতে চাইল।
–হ্যাঁ–আরো কয়েকজন পণ্ডিতও থাকতেন। সালভা বলল।
তারাও কি রামন লালের মতোই পণ্ডিত ছিলেন? ফ্রান্সিস বলল।
–না-না। রামন লাল ছিলেন অলৌকিক শক্তির অধিকারী। দেশের লোক তার নাম দিয়েছিল–ডক্টর ইলিউমিনাডো।
–তাহলে তো এ দেশের খুব সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে বলল।
নিশ্চয়ই। সালভা বলল।
সন্ধে হ’ল। বৈদ্যি আবার এলো। ওষুধ দিয়ে গেল। ফ্রান্সিস বলল–সালভা– এখন কেমন লাগছে? সালভা দুপুর থেকেই উঠে বসে ছিল। হেসে বলল–অনেকটা ভালো।
রাত হতেই ফ্রান্সিস বেশ চঞ্চল হয়ে উঠল। ঘাসের বিছানায় পায়চারি করতে লাগল। শাঙ্কো বুঝল ফ্রান্সিস পালাবার ফন্দি আঁটছে। ফ্রান্সিস লোহার দরজার কাছে গেল। দেখল কালমা খোলা তলোয়ার হাতে বারান্দায় পাহারা দিচ্ছে। মারিয়ার ঘরের সামনেও একজন মূর পাহারাদার। ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে ডাকল–
কালমা? কালমা এগিয়ে এলো।
–খেতে-টেতে দাও। ফ্রান্সিস বলল।
–এখনও সময় হয়নি। কালমা বলল।
কী মুস্কিল। ভীষণ খিদে পেয়েছে যে। ফ্রান্সিস বলল।
–হুঁ।কালমা মারিয়ার ঘরের দিকে গেল। ওখানকার মূর পাহারাদারটিকে কী বলল। চলে গেল। এবার ঐ পাহারাদারটি দুটো ঘরের সামনেই খোলা তলোয়ার হাতে পাহারা দিতে লাগল।
ফ্রান্সিস দেখল–মুস্কিল। এই মূরটাকে তো সরাতে হয়। ফ্রান্সিস দরজার কাছে মুখ নিয়ে নিজেদের দেশীয় ভাষায় চিৎকার করে বলল–মারিয়া শুনতে পাচ্ছো? মারিয়ার কানে ডাক পৌঁছল। ও চম্কে চেঁচিয়ে বলল–
–হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। ফ্রান্সিস আবার চেঁচিয়ে বলল
–চিৎকার কান্নাকাটি জুড়ে দাও। তাড়াতাড়ি। মারিয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো তারপরই গলা ছেড়ে কান্না জুড়ে দিল। মূর পাহারাদারটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। ও জাতিতে মূর। ফ্রান্সিসদের কথার বিন্দুবিসর্গও বুঝল না। ও একবার ফ্রান্সিসদের ঘরের সামনে আর একবার মারিয়ার ঘরের সামনে ছুটোছুটি করতে লাগল। এবার ফ্রান্সিসদের শেখানোমতো সালভা আরবীতে বলল–শিগগির দেখো ঐ রাজকুমারীর কী হয়েছে? যদি রাজকুমারীর কিছু হয় আল আমিরি তোমার মুণ্ডু উড়িয়ে দেবে। পাহারাদারটি ছুটে গেল মারিয়ার ঘরের দিকে। এত জোরে মারিয়া জীবনেও চাঁচায়নি। ওর গলা ভেঙে গেল। তবু চাঁচাতে লাগল। কাঁদতে লাগল।
ফ্রান্সিস এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। চাপাস্বরে বলল শাঙ্কো-ছোরাটা। শাঙ্কো ছুটে এলো ফ্রান্সিসের কাছে। মাথাটা নিচু করল। ফ্রান্সিস ওর পোশাকের মধ্যে দিয়ে বাঁধা হাত দুটো গলিয়ে দিয়ে ছোরাটা বের করে আনল। শাঙ্কো ওর বাঁধা হাতদুটো এগিয়ে ধরল। ফ্রান্সিস বাঁধা হাতে দ্রুত শাঙ্কোর হাতবাঁধা দড়িতে ছোরাটা ঘষতে লাগল। তাড়াহুড়োয় ছোরার মুখটা এদিক-ওদিক সরে যেতে লাগল। ছোরার খোঁচা লেগে শাঙ্কোর হাত কেটে ছড়ে গেল। রক্ত বেরোলো। শাঙ্কো চুপ করে রইল। দড়ি বেশ কিছুটা কেটে যেতেই শাঙ্কো এক ঝটকা টানে দড়িটা ছিঁড়ে ফেলল। খোলা হাতে ফ্রান্সিসের হাতবাঁধা দড়ি কাটতে লাগল। এবার দড়ি তাড়াতাড়ি কেটে গেল। শাঙ্কো যখন সালভার হাতের দড়ি কাটছে তখন ফ্রান্সিস চেঁচিয়ে বলে উঠল–মারিয়া চুপ। মারিয়া কান্না চাঁচামেচি থামাল। ওদিকে দু’তিনজন সৈন্য ছুটে এসেছে মারিয়ার ঘরের সামনে। ওখানকার পাহারাদারটি হড়বড় করে সৈন্যদের কী বলল। ফ্রান্সিসরা লম্বা দড়ি হাতে পেঁচিয়ে চুপ করে ঘাসের বিছানায় বসে রইল। ও ঘরের পাহারাদারকে নিয়ে সৈন্য ক’জন ফ্রান্সিসদের ঘরের সামনে এলো। দেখল–কয়েদীরা শান্তভাবে বসে আছে। হাতে দড়ি বাঁধা। সৈন্য ক’জন চলে গেল। মূর পাহারাদারটি আবার খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিতে লাগল।
কালমা ছোটো বড়ো কাঠের থালায় খাবার নিয়ে এলো। মারিয়ার ঘরের দরজা খুলে দিল। মূর পাহারাদারটি খাবার দিল মারিয়াকে। কালমা ফ্রান্সিসদের ঘরের দরজা খুলে খাবার নিয়ে ঢুকল। কালমার কোমরের খাপে তলোয়ার গোঁজা। নিচু হয়ে কালমা থালা নামাচ্ছে তখনই ফ্রান্সিস চাপাস্বরে ডাকল–শাঙ্কো। কালমা সরে উঠে দাঁড়িয়েছে। শাঙ্কো এক লাফে ছুটে গিয়ে কালমার গলায় ছোরাটা চেপে ধরল। কালমা তো অবাক। ফ্রান্সিসও লাফিয়ে উঠে কালমার তলোয়ারটা এক হ্যাঁচকা টানে খুলে নিল। তলোয়ারের ডগাটা কালমার গলায় চেপে ধরল। দাঁতচাপাস্বরে বলল–টু শব্দটি করেছো কি মরেছো। শাঙ্কো ছোরা দিয়ে কালমার বর্মের চামড়ার ফিতে কেটে দিল। খোলা ভারী বর্মটা আস্তে আস্তে ঘাসের বিছানায় নামিয়ে রাখল যাতে কোনো শব্দ না হয়। খোলা পাথরের মেঝেয় পড়লেই শব্দ হত। পাশের ঘরের মূর পাহারাদারটি কানে শব্দ পৌঁছতো।
ফ্রান্সিস চাপাস্বরে বলল–শাঙ্কো–কালমাকে সামলাও। ফ্রান্সিস তলোয়ার নামাল। শাঙ্কো কালমার বুকে ছোরা চেপে ধরল।
ফ্রান্সিস কয়েদঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পাথরের দেয়ালে গা ঘেঁষে মারিয়ার কয়েদঘরের দিকে চলল। আসতে আসতে দেখল সামনের চত্বরে কোনো সৈন্য নেই। চত্বরের পরে কাঠের সদর দরজার কাছে মশাল জ্বলছে। তার আলোয় দেখল কয়েকজন মূর সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে।
মারিয়ার ঘরের দরজার কাছে উঁকি দিয়ে দেখল মূর পাহারাদারটি জল ঢেলে দিচ্ছে। মারিয়া আঁজলা ভরে জল খাচ্ছে। পাহারাদারটি বেশ তাগড়াই জোয়ান। ওর সঙ্গে তলোয়ারের লড়াই চালানো যাবেনা। শব্দ হবেই। লড়াই করতে করতেমূর পাহারাদারটিও দরজার কাছে দাঁড়ালো। মূর সৈন্যদের চেঁচিয়ে ডাকতে পারে। না–অন্যভাবে ওকে ঘায়েল করতে হবে যাতে টু শব্দটিও গলা দিয়ে না বেরোয়। দেয়ালের আংটায় আটকানো দুটো মশাল জ্বলছে। মশালের আগুন হাওয়ায় কাঁপছে। পাহারাদারটি ঘর থেকে বেরোলেই ওকে দেখে ফেলবে। ফ্রান্সিস পাথরের দেয়ালে যেন সেঁটে রইল। পাহারাদারটি মারিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দিচ্ছে তখনই ফ্রান্সিস এক লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পাহারাদারটির ওপর। আচমকা প্রচণ্ড ধাক্কায় পাহারাদারটির লোহার দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ফ্রান্সিস সঙ্গে সঙ্গে ওর মাথার পেছনে তলোয়ারের বাঁট দিয়ে জোরে ঘা মারল। পাহারাদারটি লোহার দরজায় ঘাড় গুঁজে পড়ল। তারপর জ্ঞান হারিয়ে বারান্দায় গড়িয়ে পড়ল। আর উঠল না! ফ্রান্সিস চাপাস্বরে ডাকল–মারিয়া। মারিয়া অবাক চোখে এই কাণ্ড দেখছিল। ডাক কানে যেতেই ছুটে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। দু’জনে ছুটে এলো শাঙ্কোদের ঘরে। ফ্রান্সিস হাতের ইশারায় শাঙ্কো আর সালভাকে ডাকল। কালমার পিঠে ছোরা চেপে ধরল শাঙ্কো। বলল, চলো। ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ফ্রান্সিস আংটায় রাখা জ্বলন্ত মশালটা তুলে ছুঁড়ে ফেলল ঘাসের বিছানায়। শুকনো ঘাসে আগুন লেগে গেল।
বারান্দা দিয়ে নিঃশব্দে চলল ওরা। ফ্রান্সিস বারান্দার একটা জ্বলন্ত মশাল ছুঁড়ে ফেলল মারিয়ার কয়েদ ঘরটায়। ও ঘরেও আগুন লেগে গেল। অজ্ঞান মূর পাহারাদারটি তখনও বারান্দায় পড়ে আছে। ওকে ডিঙিয়ে পার হ’ল সবাই। এবার ফ্রান্সিস কালমার পিঠে তলোয়ারের ডগা ঠেকিয়ে বলল কালমা-মরণজলা দিয়ে পালাবো আমরা। মরণজলায় নিয়ে চলো। কালমা চমকে উঠল। ভয়ার্তস্বরে বলে উঠল–না-না-মরণজলা পার হতে পারবে না। মারা পড়বে।
-এখানে থাকলেও মরবো। ফ্রান্সিস বলল।
–কিন্তু–কালমা কী বলতে গেল।
–কোনো কিন্তু না। –তিনজন বন্দি ঐ পথে পালিয়েছিল। ফ্রান্সিস বলল।
–পরে ওদের কেউ দেখেনি। কালমা বলল।
–পলাতকরা কি পালানোর গপপো বলে বেড়ায়। নিশ্চয়ই ওরা পালাতে পেরেছিল। তাড়াতাড়ি চলো। ফ্রান্সিস তাড়া লাগাল।
ওদিকে কয়েদঘরে ধোঁয়া আগুন ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে। মূর সৈন্যরা হৈ হৈ করে উঠল। বারান্দার পরেই বাঁ দিকে অন্ধকার ঢালু পাথুরে জমি। ফ্রান্সিসরা সেই পাথুরে জমিতে ততক্ষণে নেমে পড়েছে। অল্প চাঁদের আলোয় ওরা দ্রুত চলেছে।
বেশ কিছুটা নেমে শুরু হল এবড়ো-খেবড়ো পাথর জংলা গাছ ঘাস ঢাকা জায়গা। কালমা সবার আগে নামতে লাগল। পেছনে ফ্রান্সিসরা। ওদিকে মূর সৈন্যদের হৈ হল্লা চলছে তখন। আগুন নেভানো চলছে। ফ্রান্সিস চাপাস্বরে বলল–কালমা জলদি।
একটু পরেই সামনে বিরাট দেয়াল। কালো রঙের পাথরের। কালমা দেয়ালের নীচে একটা ছোটো কাঠের দরজার সামনে এসে হাঁপাতে লাগল। দরজায় একটা তালা ঝুলছে। এখন হাঁপাচ্ছে সকলেই। অস্পষ্ট চাঁদের আলোয় কালমা চাবির গোল রিং-এ চাবি খুঁজতে লাগল। মারিয়ার দু’হাত তখনও বাঁধা। শাঙ্কো ছোরা দিয়ে তাড়াতাড়ি বাঁধা দড়ি কেটে দিল। মারিয়া মরণজলা কথাটা শুনে পর্যন্ত ভীষণ চিন্তায় পড়েছে। ও আর থাকতে না পেরে ফ্রান্সিসকে বলল–মরণজলা পার হতে পারবে?
–পারতেই হবে। নইলে এই দুর্গে পচে মরতে হবে। ফ্রান্সিস বলল। কালমার দুটো চাবি লাগল না। তার পরেরটা ঢুকিয়ে চাপ দিতেই কড়াৎ-তালা খুলে গেল। শাঙ্কো ছোটো দরজাটা খুলে দিল। প্রথমে শাঙ্কো ঢুকে গেল। তারপর সালভা মারিয়া। ফ্রান্সিস যখন ঢুকছে তখন শুনল কালমা বিড় বিড় করে বলছে–যীশু তোমায় রক্ষা করুন। ফ্রান্সিস একবার কালমার দিকে তাকিয়ে দরজা পার হল।
ছপ ছপ হাঁটুর নিচ অব্দি কাদাজলে ডুবে গেল সকলের। চারদিকে চাঁদের অনুজ্জ্বল আলো। এখানে অন্ধকার কাটেনি তাতে।
ফ্রান্সিস সামনে তাকিয়ে দেখল–লম্বা লম্বা বুনো ঘাসের জঙ্গল। আশ্চর্য!
ঘাসগুলো সবুজ নয়। মরা ঘাসের মতো হলুদ ঘাসের বনের এখানে-ওখানে ঘন কুয়াশা জমে আছে। বুনো ঘাসের জঙ্গলের উপরে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সাদাটে কুয়াশা ঢাকা। বোঝাও যাচ্ছে না–এই বন কতদূর বিস্তৃত। ওদিকে দুর্গের মধ্যে মূর সৈন্যদের চিৎকার চাঁচামেচি কমে এসেছে। ফ্রান্সিস বলল–সালভা–মূর সৈন্যরা কি আমাদের ধাওয়া করতে পারে?
–পাগল হয়েছেন। এই মরণজলার কথা ওরা এরমধ্যেই ভালো করে জেনে গেছে। সালভা বলল।
–জলাটা কতদুর ছড়িয়ে আছে? ফ্রান্সিস বলল।
-বড়ো রাস্তা থেকে তো বহুদিন দেখে আসছি। জলাটা ডাইনে বাঁয়ে লম্বাটে। কিন্তু পাশে কম। উত্তরমুখো গেলে পার হতে কম সময় লাগবে। সালভা বলল। ফ্রান্সিস তলোয়ার হাতে ঘাসের বনের মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে গলা চড়িয়ে বলল–উত্তরমুখো চলো। আমার পেছনে পেছনে এসো। সবাই ঘাসের বনে ঢুকল।
জলকাদা ভেঙে চলল। উঁচু উঁচু ঘাসের জঙ্গলে ওরা ঢাকা পড়ে গেল। শুধু মাথার ওপরে সাদাটে মেঘের আকাশ আর অনুজ্জ্বল চাঁদ। দিক ঠিক রেখে ফ্রান্সিস এগিয়ে চলল। পেছনে মারিয়া, শাঙ্কো, সালভা। কাদাজলের নীচে পাথরকুচি রয়েছে। ওরা এগিয়ে চলল। ফ্রান্সিস তলোয়ার চালিয়ে ঘাস কাটতে কাটতে এগিয়ে যেতে লাগল। তলোয়ারের কোপে হলুদ ঘাসগুলো বেশি কাটছে না। যতখানি কাটা পড়ছে তার মধ্যে দিয়েই ওরা চলল। শুধু জলকাদা ভাঙার ছপছপাৎ শব্দ। চারদিকে আর কোনো শব্দ নেই। চারপাশের ঘাসগুলো ওদের গায়ে মুখে হাতে ঘষে যাচ্ছে। ফ্রান্সিস হাতে জ্বালা। অনুভব করল। চাঁদের অল্প আলোয় দেখল-ধারালো ঘাসের ঘষায় হাত আঁচড়ে গেছে। সেই জায়গাগুলোয় জ্বালা শুরু হ’ল। মারিয়া বলে উঠল–ফ্রান্সিস হাতে-মুখে ভীষণ জ্বালা করছে। শাঙ্কো সালভাও বলে উঠল–হাতমুখ জ্বালা করছে। ফ্রান্সিস অস্পষ্ট চাঁদের আলোয় দেখল–মারিয়ার সারা মুখে ঘাসের আঁচড়ের দাগ। অল্প রক্তেরও দাগ এখানে-ওখানে। হাতে-মুখে জ্বালা সহ্য করতে করতে ফ্রান্সিস বুঝল–কেন এটাকে মরণজলা বলে।
জলকাদা ঠেলে চলতে চলতে তখন ভীষণ হাঁপাচ্ছে সবাই। একদিকে পা সাবধানে ফেলতে হচ্ছে। দু’হাতে সরাতে হচ্ছে ঘাসের বাধা। তারপর প্রায় অন্ধকারে হাঁটতে হচ্ছে। তার ওপর আঁচড়কাটা হাতে-মুখে জ্বলুনি।
কতদূর এলো। আরো কতদূর যেতে হবে কিছুই বুঝতে পারছে না ওরা। মারিয়া আর সহ্য করতে পারল না। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল–ফ্রান্সিস–সারা গা জ্বলে যাচ্ছে। ফ্রান্সিস হাঁটতে হাঁটতে বলল–ভাবো যে, দেশের রাজধানীর পাথরবাঁধানো পরিষ্কার পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছো, দেখবে পারছো। মারিয়া মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে এলোমেলো পা ফেলে চলল। আর পারল না। ভীষণ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল–প্রান্সিস আমি পড়ে যাচ্ছি। ফ্রান্সিস সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল। তলোয়ারটা কোমরে গুঁজল। দু’হাত নিচু করে একহ্যাঁচকা টানে মারিয়াকে তুলে কাঁধে শুইয়ে দিল। তারপর বাঁ হাতে মারিয়াকে চেপে ধরে হাঁটতে লাগল। আস্তে আস্তে সকলেরই সারা গায়ে জ্বলুনি শুরু হল। শাঙ্কো মুখ বুজে সহ্য করতে লাগল। একে সালভা চাবুকের মার খেয়ে আহত। বৈদ্যির ওষুধে একটু সুস্থ হয়েছিল। এখন এই পরিশ্রম সারা শরীরে জ্বলুনি। ওর মুখ থেকে গোঙানির শব্দ শোনা গেল। ফ্রান্সিস ডান হাত বাড়িয়ে সালভাকে চেপে ধরে রাখল যাতে পড়ে না যায়। সালভা এলোমেলো পা ফেলে চলল।
হঠাৎ ঘাসের জঙ্গল পাতলা হয়ে এলো। অল্পক্ষণের মধ্যেই পায়ের নীচে শক্ত পাথুরে জমি ঠেকল। সালভা অনেক কষ্টে সামনের দিকে তাকাল। ঘাসের বন শেষ। আবছা দেখল একটা ঘাসে ঢাকা টিলা। সালভা সমস্ত গায়ের শক্তি একত্র করে চিৎকার করে উঠল–ফ্রান্সিস–অমরা এসে গেছি। সামনে–টিলা।
আস্তে আস্তে হেঁটে ওরা পাথুরে জমিতে উঠল। প্রায় ভেঙে পড়া শরীর নিয়ে টলতে টলতে গিয়ে সালভা পাথুরে জমিতে শুয়ে পড়ল। শাঙ্কোও বসল। তারপর শুয়ে পড়ল। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে কাঁধ থেকে মারিয়াকে নামিয়ে দিল। মারিয়া শুয়ে পড়ল। চোখ বোজা ফ্রান্সিস মারিয়ার এই অসাড় অবস্থা দেখে চমকে উঠল। ডাকল—মারিয়া?মারিয়া চোখ মেলে তাকাল। একটু হাসল। ফ্রান্সিস হেসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আস্তে আস্তে পাথুরে জমিতে বসে পড়ল। তাকিয়ে রইল মরণজলার দিকে। তারপর শুয়ে পড়ল।
পুব আকাশ লাল হয়ে উঠল। একটু পরেই সূর্য উঠল। আস্তে আস্তে রোদের তেজ বাড়তে লাগল। এতক্ষণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে থাকা ফ্রান্সিসরা যেন শরীরে একুট সাড় পেল। প্রথমে ফ্রান্সিসই উঠে বসল। দেখো রোদ পড়েছে টিলার গায়ে মরণজলায় দূরের দুর্গের মাথায়। হাতে মুখের জ্বালাভাবটা এখনও আছে। এ যে বাড়ে নি। ও তাকাল পায়ের দিকে। প্রায় হাঁটু পর্যন্ত জলকাদায় মাখামাখি। গায়ের পোশাকেও জলকাদার ছিটে। পায়ের কালো কাদা এখনও শুকোয় নি। শাঙ্কোদের দিকে তাকাল। ওদেরও এক অবস্থা। ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে ডাকল–শাঙ্কো, সালভা–ওঠো। ডাক শুনে মারিয়া উঠে বসল। এবার শাঙ্কো আর সালভা উঠল। ফ্রান্সিস নিজের ঢোলা পোশাকটার মধ্যে ঢোলা গলা দিয়ে হাত ঢোকাল। নকশাটা বের করে আনল। যাক–নকশাটা ঠিকই আছে। জলকাদা লেগে আঁকা মুছে যায়নি।
সালভা বলল–ফ্রান্সিস টিলাটার ওপাশে চাষিদের বসতি আছে। ফ্রান্সিস বলল– ওখানে বৈদ্যিটদ্যি পাওয়া যাবে। সবারই হাত মুখ ঘাসের ঘষায় যেভাবে আঁচড়ে গেছে। জ্বালা জ্বালাভাব। ওষুধ চাই।–খোঁজ নিয়ে দেখি। চলুন। সালভা উঠে দাঁড়াল।ফ্রান্সিসও উঠে দাঁড়াল। বলল–শাঙ্কো–মারিয়া চলো।
ওরা আস্তে আস্তে হেঁটে চলল টিলাটার পেছন দিকে। একটু এগিয়ে যেতেই দেখল কিছু গাছপালা। তারই পরে দেখা যাচ্ছে পাথরের কিছু বাড়িঘর।
ওরা বাড়িগুলোর কাছে আসতেই বাড়ির বাইরে স্ত্রীপুরুষ যারা ছিল তারা ওদের দেখল। জলকাদামাখা মানুষগুলো কোত্থেকে এলো? সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কে চেঁচিয়ে বলল–কারা আসছে গো? বাড়িঘর থেকে আরো মেয়েপুরুষ বেরিয়ে এলো। হঠাৎ সালভা ওদিকে ছুটতে ছুটতে ডাকল–বাবা-আ। দেখা গেল জেলেদের পোশাক পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক দু’হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। সালভা ছুটে গিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরল। একটি ছোটো ছেলে আর একটি অল্পবয়সী মেয়েও ছুটে এসে সালভাদের ঘিরে দাঁড়াল। দুটি ছেলেমেয়েই খুশির হাসি হাসছে। বোঝা গেল সালভার ভাই বোন। সালভা ওর বাবার সঙ্গে কথা বলতে লাগল। ফ্রান্সিসরা এসে ওখানে দাঁড়াল। সালভা বলল–ফ্রান্সিস–আমার বাবা ভাইবোন বেঁচে আছে। মূর সৈন্যরা আমাদের বস্তীতে আগুন লাগিয়েছিল। অনেকেই পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
-তোমার মা? মারিয়া বলল।
কয়েক বছর আগে মাকে হারিয়েছি। সালভা বলল।
–বাবা–এখানে কোনো বৈদ্যি আছে?
হা হা। তোরা স্নানটান করে আয়–আমি বৈদ্যিবুড়োকে ডেকে আনছি। সালভার বাবা চলে গেল।
সালভার বোনটি তখনও মারিয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মারিয়ার হাতে সারা মুখে আঁচড়ের মতো দাগ। জলকাদা মাখা পোশাক। মারিয়া বেশ অস্বস্তিতে পড়ল। চলল বাড়িগুলোর পেছন দিকে। সালভা বলল-ফ্রান্সিস চলো স্নান সেরে নিই।শরীরের যা অবস্থা। সালভা চলল–ঢালু উপত্যকার দিকে। ফ্রান্সিস শাঙ্কোও চলল। ওর পেছনে পেছনে নেমে আসতেই দেখল–দুতিনটে পাথরের গা বেয়ে ছোটো ঝর্ণার জল নেমে আসছে। ঝিরঝির ঝর্ণার জল পাথর-ঘেরা একটা জায়গায় হাঁটু অব্দি জমে আছে। ফ্রান্সিস আর শাঙ্কো স্নান করতে লাগল। সালভার পিঠের চাবুকের ঘা তখনও তো সারে নি। সালভা হাঁটু পর্যন্ত ভালো করে ধুলো। মাথায় বুকে জল দিল। ঐ যা স্নান হল ওর।
স্নান সেরে ওরা ফিরে এলো। দেখল একটা ঘরের সামনে একটা পাথরের ওপর মারিয়া স্নান সেরে চাষি মেয়েদের পোশাক পরে বসে আছে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে একজন বুড়ো। হাতের একটা পুঁটুলি খুলছে। বোঝা গেল–বৈদ্যিবুড়ো। একটা ছেঁড়া ন্যাকড়ায় বৈদ্যি একটা কাঠের বাটি ভর্তি জল তুলে নিল। পুঁটুলিটা জলে নাড়তে লাগল। আস্তে আস্তে জলের রঙ হলুদ হয়ে গেল। এবার বৈদ্যিবুড়ো ঐ পুঁটুলিটা মারিয়ার আঁচড় কাটা হাতে মুখে গলায় বুলোতে লাগল। কয়েকবার বুলোতেই মারিয়া হেসে ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল। বলল–আঁচড়গুলোর জ্বালা অনেক কমে গেছে। মারিয়ার পর ফ্রান্সিসদেরও বদ্যিবুড়ো ওষুধ লাগিয়ে দিল। সবাইয়ের জ্বালা কমে গেল। সালভা পিঠের ঘা-এর কথা বলল। পোশাক খুলে দেখাল। বৈদ্যিবুড়ো ওষুধ তৈরি করতে বসল। ওদিকে বাড়ির মেয়েরা ফ্রান্সিসদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগল।
সালভাকে ওষুধ দিয়ে বৈদ্যিবুড়ো ওষুধের ঝোলা গোছাতে লাগল। ফ্রান্সিস বলল– সত্যি আপনার ওষুধে অনেক উপকার হল। জ্বালাভাবটা প্রায় নেই বললেই হয়। বদ্যিবুড়ো ফোকলামুখে হাসল। বলল–মরণজলার মতো লম্বা লম্বা ঘাস এখানে অনেক জায়গায় আছে। এই ঘাস শুকিয়ে ঘরের ছাউনিতে লাগে। ঘাস কাটতে গিয়ে ধারালো ধারগুলোয় লেগে হাতমুখ নখের আঁচড়ের মতো কেটে যায়। জ্বালা করে। এই ওষুধেই সেরে যায় সেসব।
তবে মরণজলার ঐ নাম হয়েছে কেন? ফ্রান্সিস জানতে চাইল। বৈদ্যিবুড়োর মুখ গম্ভীর হল। বলল –তোমরা ভিনদেশী জানো না। মরণজলার ঘাসের আঁচড় সেরে যায়। কিন্তু মরণজলার মারাত্মক জলকাদায় তুমি যদি একবার পড়ে যাও–ঐ আঁচড়কাটা জায়গা বিষিয়ে উঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি জ্ঞান হারাবে–তারপর। বৈদ্যিবুড়ো চুপ করে গেল। তারপর আনমনে হেঁটে চলে গেল। সে কি! মারিয়া ভীত মুখে ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল। ভয়ার্ত স্বরে বলল–ফ্রান্সিস–আমরা–মানে–আমরা– ফ্রান্সিস মারিয়ার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসল। বলল–হ্যাঁ–আমরা বেঁচে আছি। শাঙ্কো দু’হাতে মুখ ঢেকে মাটিতে বসে পড়ল। কী সাংঘাতিক! মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে ওরা।
ফ্রান্সিসরা সেই রাতটা ঐ চাষিদের বস্তিতেই কাটাল। ওদের একটা ঘর চাষিরা ছেড়ে দিয়েছিল।
পরদিন সকালে ফ্রান্সিস শাঙ্কোকে বলল সালভাকে ডেকে আনতে। সালভা এলো। দেখা গেল সালভা ওর তলোয়ার কাটা চাবুকে ছেঁড়া পোশাটা পাল্টে নতুন পোশাক পরেছে। ফ্রান্সিস বলল সালভা তোমার শরীর এখন কেমন? সালভা বলল–এমনিতে ভালোই। তবে বৈদ্যিবুড়ো বলল–পিঠের ঘা এখনো সম্পূর্ণ সারে নি। আর দু’দিন ওষুধ পড়লেই সেরে যাবে।
–কিন্তু আমরা তো বেশি দেরি করতে পারবো না। তাড়াতাড়ি জাহাজে ফিরতে হবে আমাদের। বন্ধুরা চিন্তায় পড়বে নইলে। ফ্রান্সিস বলল।
–ঠিক আছে। আপনারা এখন কি করবেন? জাহাজে ফিরে যাবেন? সালভা বলল।
–না না। এখন রাজধানী পালমায় যাবো।
আলিমুদাইনা রাজপ্রাসাদে রামন লালের প্রথম পাণ্ডুলিপি খুঁজে বের করবো। ফ্রান্সিস বলল।
–বেশ চলুন। সালভা বলল।
–কিন্তু তুমি তো এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নও। মারিয়া বলল।
–ওষুধ নিয়ে যাবো লাগাবো। আমি যেতে পারবো। সালভা বলল। ফ্রান্সিস বলল–এবার বলো তো রাজধানী পালমাতে আমরা কোন্ পথ দিয়ে যাবো?
–একটা তো রাস্তা, মানে বড়ো রাস্তা। পালমা নোভার ঐ দুর্গের পাশ দিয়েই রাস্তাটা এসে এখান থেকে একটু দূর দিয়ে সোজা রাজধানী পালমাতে চলে গেছে। সালভা বলল। ফ্রান্সিস একটু চুপ করে থেকে বলল
–কিন্তু আল আমিরির মূর সৈন্যরা নিশ্চয়ই রাস্তাটা পাহারা দিচ্ছে যাতে কেউ রাজধানীতে যেতে না পারে।
হ্যাঁ তা বটে। ঠিক আছে আমি যাচ্ছি গোপনে খোঁজ-খবর করে আসছি। সালভা বলল। তারপর চলে গেল।
দুপুরের আগেই সালভা ফিরে এলো। ও তখন বেশ হাঁপাচ্ছে। বলল-দুর্গের পর থেকেই অনেকদূর রাস্তার ধারে ধারে আল আমিরির মূর সৈন্যরা ঘাঁটি গেড়েছে। ফ্রান্সিস বলল–পালমার দিকে শেষ ঘাঁটিটা কোথায়?
–কিছু দূরে একটা কাঠের সাঁকোর পাশে। সালভা বলল।
–তাহলে ঐ একটা ঘাঁটি পার হতে পারলেই নিশ্চিন্ত। ফ্রান্সিস বলল। সালভা চলে গেল। মারিয়া বলল কী করে সাঁকোটা পার হবে?
–তাই ভাবছি। ফ্রান্সিস ছোটো ঘরটার মেঝেয় পায়চারি করতে করতে বলল। ফ্রান্সিস ভেবে চলেছে। হঠাৎ ও দাঁড়িয়ে পড়ল। শাঙ্কো বলে উঠল কী হল? ফ্রান্সিস বলল–সব ছক কষা হয়ে গেছে।
–শিগগির সালভাকে ডাকো। সালভাকে ডাকতে হল না? ও তখনই ডুমুরের ঝোল আর ক’টা গোল রুটি নিয়ে এলো কাঠের থালায় করে। সবাই খেতে লাগল। ফ্রান্সিস বলল
–সালভা–এখানে তো চাষবাস হয়?
–হ্যাঁ হা-বেশ কিছু ক্ষেতখামার আছে এখানে। সালভা বলল।
–কী কী বেশি চাষ হয়? ফ্রান্সিস জানতে চাইল।
ডুমুর বাদাম খুবানি এসব। সালভা বলল।
–ঐসব চাষিরা কোথায় বিক্রি করে? ফ্রান্সিস জানতে চাইল।
–এখান থেকে পালমা যাওয়ার রাস্তার ধারে কোস্তা বন্দর থেকেই এসব মজোরকা আর্মিনিয়া চালান যায়। সালভা বলল।
–এসব ফসলটসল কী করে কোস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়? ফ্রান্সিস বলল।
–খচ্চরের টানা গাড়িতে করে। সালভা বলল।
–বেশ বর্ধিষ্ণু চাষি–খচ্চর টানা গাড়িটাড়ি আছে।
মালপত্র চালান দেয়–তোমার চেনা এমন কেউ আছে এখানে? ফ্রান্সিস জানতে চাইল।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ। সালভা বলল।
–চলো–তার সঙ্গে আমি কথা বলবো। ফ্রান্সিস বলল।