মাজোরকা দ্বীপে ফ্রান্সিস – ১

ফ্রান্সিস আর ওর দুঃসাহসী বন্ধুরা কত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে অসীম ধৈর্য, অটল সঙ্কল্পে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়ে এসেছে বিরাট সোনার ঘণ্টা, হাঁসের ডিমের মতো বড়ো মুক্তো আরো মূল্যবান কত কিছু। চিন্তা করে বুদ্ধি খাঁটিয়ে নক্শা, ছড়ার সূত্র ধরে উদ্ধার করেছে। গুপ্তধন-ভাণ্ডার। ফ্রান্সিসদের এই বীরত্বের কাহিনী নিয়ে ঐ দেশের চারণকবিরা গান বেঁধেছে। সারা দেশে ওরা সেই গান গেয়ে বেড়ায়।

ফ্রান্সিসদের জাহাজ চলেছে। নির্মেঘ আকাশ বাতাস বেগবান। জাহাজের পালগুলো ফুলে উঠেছে। দাঁড় বাইতে হচ্ছে না ভাইকিংদের। শান্ত সমুদ্রের ওপর দিয়ে ছোটো ছোটো ঢেউ ভেঙে দ্রুত চলেছে ফ্রান্সিসদের জাহাজ। ওদের দেশের দিকে।

দিন তিনেক কাটল। সেদিন বিকেলবেলা। তখনও সূর্য অস্ত যায়নি। মাস্তুলের ওপর নিজের জায়গায় ছিল নজরদার পেড্রো।

হঠাৎ পেড্রো চেঁচিয়ে বলল–ডাঙা–ডাঙা দেখা যাচ্ছে। জাহাজের ডেক-এ যে কয়েকজন ভাইকিং শুয়ে-বসে বিশ্রাম করছিল তাদের একজন ছুটল নীচে নামার সিঁড়ির দিকে। ফ্রান্সিসকে খবরটা দিতে হবে।

খবর পেয়ে ফ্রান্সিস, মারিয়া আর হ্যারি জাহাজের ডেক-এ এসে দাঁড়াল। তাকাল দূর দিগন্তের দিকে। দিগন্তে সূর্যাস্তের লালচে আলো। তার নীচে ছোটো ছোটো টিলার মতো দেখা গেল। সেসবের রং এখন বোঝার উপায় নেই।ফ্রান্সিস হ্যারির দিকে তাকাল। বলল–কী করবে এখনি?হ্যারি বললজায়গাটা কোনো দ্বীপনা দেশ তা তো বুঝতে পারছি না। এক্ষুণি অন্ধকার নামবে। এখান থেকে আর কিছুই দেখা যাবে না।

মারিয়া বলল–কিন্তু আমরা কোথায় এলাম টো জানতে হলে তো নেমে খোঁজ নিতে হবে।

–হুঁ। ফ্রান্সিস মুখে শব্দ করল। তারপর বলল–রাত হয়ে ভালোই হল। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে নৌকো নিয়ে ডাঙায় নামবো। মানুষজন কাউকে তো পাওয়া যাবে। তা হলেই জানা যাবে আমরা কোথায় এলাম। আমাদের দেশই বা কতদূরে।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ফ্রান্সিস পোশাক পরে তৈরি হল। ঢোলা হাতা হাঁটুঝুল পোশাক। কোমরে চামড়ার ফেট্টি। তলোয়ার গুজল কোমরের ফেট্টিতে। এবার মারিয়া বলল–আমিও যাবো। ফ্রান্সিস বলে উঠল–পাগল হয়েছে। কীরকম জায়গা কীরকম লোকজন থাকে কিছুই জানি না। এ অবস্থায় তোমাকে নিয়ে যাওয়া যায়? মারিয়া মাথা নেড়ে বলল–দেখো, এটা ভূমধ্যসাগর এলাকা। যতদূর জানি–এই এলাকায় কোনো বন্য জাতি বাস করে না।

ফ্রান্সিস বলল–বন্য জাতির মানুষ অনেক ভালো। তারা সভ্যজাতির মতো হিংস্র হয় না।

–তা হোক। তোমাদের ভাগ্যে যা ঘটবে আমার ভাগ্যেও তাই ঘটবে। মারিয়া বলল। ফ্রান্সিস বুঝল মারিয়াকে না নিয়ে গেলে দুঃখ পাবে। ভাবল–আমরা তো যুদ্ধ। করতে যাচ্ছি না। শুধু জায়গাটার নাম জানতে যাচ্ছি। বলল–বেশ চলো।

মারিয়া খুশিতে বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে দাঁড়াল।

জাহাজ থেকে দড়ি বেয়ে বেয়ে ফ্রান্সিসরা একে একে জাহাজের গায়ে বাঁধা একটা নৌকোয় নেমে এলো। মারিয়া আর হ্যারি নৌকোটার মাঝখানে বসল। দাঁড় হাতে একদিকে বসল ফ্রান্সিস অন্যদিকে শাঙ্কো।শাঙ্কো তির-ধনুক খুলে রাখল। দাঁড়টা হালের মতো ধরল। নৌকোর গতি ঠিক রাখতে হবে। জাহাজে বাঁধা দড়ি খুলে দিল ফ্রান্সিস। জাহাজের গায়ে দাঁড় দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নৌকোটা সরিয়ে আনল। দাঁড় বাইতে লাগল। নৌকো চলল তীরভূমির দিকে।

নৌকো চলেছে। আকাশে সাদাটে মেঘের মন্থর চলাফেরা। চাঁদের আলো খুব উজ্জ্বল নয়। সেই অল্প আলোয় কিছুদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। বাতাসে ঠাণ্ডার আমেজ। ছোটো ছোটো ঢেউয়ের দোল খেতে খেতে নৌকো তীরের কাছাকাছি এলো। দেখা গেল তীরের কাছে একটা জাহাজ নোঙর করা। জাহাজটার সিঁড়ির মুখে কাঁচটকা আলো জ্বলছে। তবে ডেক জনশূন। তীরভূমির বালিয়াড়ি টানা গিয়ে উঁচু হয়ে গেছে। কয়েকটা খুঁটিতে জাল টাঙানো। শুকোতে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটা মাছ ধরার নৌকোও আছে। ফ্রান্সিস দাঁড় টানা বন্ধ করল। বলল, হ্যারি, মনে হচ্ছে জাহাজটায় কেউ নেই। তবু এদিক দিয়ে তীরে উঠবো না।

–জাহাজটায় কোনো পতাকা উড়ছেনা। কোন্ দেশের কাদের জাহাজ বোঝা যাচ্ছে না। হ্যারি জাহাজটা দেখতে দেখতে বলল।

–বাঁ দিকে ছোটো টিলাটা ঘেঁষে আমরা তীরে উঠবো। ফ্রান্সিস বলল।

নৌকো বাঁ দিকে ঘোরানোহল। টিলাটার কাছে এসে দেখা গেল এবড়ো-খেবড়ো পাথরের মধ্যে দিয়ে ছোট্ট একটা খাঁড়িমতো। ফান্সিস খাঁড়ির মধ্যে নৌকো ঢোকাল। একটু এগোতেই দেখা গেল সামনে বিস্তৃত বেলাভূমি। বেশ দূরে খুব অস্পষ্ট কিছু বাড়িঘর দেখা গেল। বোঝা গেল ওটা জেলেপাড়া। ফ্রান্সিস বলল, চলো, ঐ জেলেপাড়ায় গিয়ে খোঁজখবর করি। হ্যারি মাথা নেড়ে বলল, না ফ্রান্সিস। খোলা বালিয়াড়ি দিয়ে আমরা যেতে গেলে জাহাজের লোকদের নজরে পড়ে যাবো।

–কিন্তু জাহাজে তো কোনো মানুষজনই দেখা গেল না। মারিয়া বলল।

উঁহু, তবু সাবধান হতে হবে। ফ্রান্সিস বলল। শাঙ্কো বলল, এক কাজ করি। তির ধনুক নিয়ে আমি একা যাই। বালির ওপর দিয়ে বুক ঘষে ঘষে যাবো। জাহাজে কেউ থাকলেও দেখতে পাবে না।

–ঠিক আছে। শাঙ্কোই যাক। হ্যারি বলল। শাঙ্কো নৌকোয় উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে তির-ধনুক নিচ্ছে তখনই মারিয়া একটু গলা চড়িয়ে উঠলো–দ্যাখো তো, কয়েকজন লোক বালিয়াড়ির ওপর দিয়ে ছুটে এদিকে আসছে। ফ্রান্সিসরা অস্পষ্ট চাঁদের আলোয় দেখল–একজন লোক বালির ওপর দিয়ে ছুটতে ছুটতে এদিকেই আসছে। ওর পেছনেও ছুটে আসছে কয়েকজন। একটু এগিয়ে আসতেই দেখা গেল সামনের লোকটা প্রাণপণে ছুটে আসছে। ওর হাতে কোনো অস্ত্র নেই। ওর পেছনে তিনজন লোক খোলা তলোয়ার হাতে ছুটে আসছে। এবার ওদের চিৎকার শোনা গেল। দেখা গেল ওদের গায়ে বর্ম। সৈনিকের পোশাক পরনে। ওরা কৃষ্ণকায়। মাথার চুল কেঁকড়া। বলিষ্ঠদেহী। হ্যারি বলল–ফ্রান্সিস এরা বোধহয় মূর সৈনিক। যে লোকটাকে ওরা আক্রমণ করেছে সে বোধহয় এ দেশীয় নিরীহ জেলে। পরনে এখানকার জেলেদের ঢোলা পোশাক। মূল সৈন্যরা জেলেটাকে হয় মেরে ফেলবে নয়তো মারাত্মকভাবে আহত করবে। জেলেটাকে বাঁচাও। ফ্রান্সিস ডাকলো–শাঙ্কো। শাঙ্কো সঙ্গে সঙ্গে তির ধনুক তুলে নিল। ধনুকেতির পরিয়ে ছিলা টানলো। কিন্তু নৌকোটা বেশ দুলছে। নিশানা ঠিক রাখা মুশকিল। ফ্রান্সিস বলল–মেরো না। আহত করো। শাঙ্কো তির ছুঁড়ল। তিরটা জেলের পেছনেই প্রথম সৈন্যটির ডান কাঁধে বিধে গেল। সৈন্যটি তলোয়ার ফেলে দিল। বাঁ হাতে কঁধ চেপে বালির ওপরে বসে পড়ল। শাঙ্কো আর একটা তির ছুঁড়ল। কিন্তু নিশানা ফসকে গেল। আবার ছুঁড়ল। তির বিধল পরের সৈন্যটির ডান। পায়ের উরুতে। সেও বসে পড়ল। পরের সৈন্যটি দাঁড়িয়ে পড়ল। চারদিকে তাকাতে লাগল। বুঝে উঠতে পারল না, কোন দিক থেকে কে তির ছুঁড়ছে। তবু ভয় পেল। দাঁড়িয়ে রইল। আর এগিয়ে এলো না। দ্বিতীয় সৈন্যটি উরু থেকে তিরটা টেনে খুলে ফেলল। তারপর বালিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। প্রথমটিও তির টেনে খুলে বালিতে শুয়ে পড়ল।

জেলেটি ছুটতে ছুটতে একবার পেছন ফিরে দেখল। তারপর ছুটতে ছুটতে ফ্রান্সিসদের দিকে আসতে লাগল। ফ্রান্সিসরা যে ছোট্ট খাড়িটায় নৌকো ঢুকিয়েছিল–সেই খাঁড়িটায় ঢুকল জেলেটা। ছুটে এসে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সাঁতরাতে সাঁতরাতে কিছুটা এসেই ফ্রান্সিসদের নৌকোটা দেখে হাত বাড়িয়ে নৌকোটা ধরতে গেল। ফ্রান্সিস ঝুঁকে পড়ে ওর বাড়ানো হাতটা ধরে ফেলল। লোকটা ভেবেছিল নৌকোটা খালি। ও চমকে উঠে হাত ছাড়াতে গেল। ফ্রান্সিস হাতটা জোরে চেপে ধরে স্পেনীয় ভাষায় বলল–ভয় নেই–আমরা তোমার বন্ধু। লোকটা বুঝল। আর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করল না। হ্যারি বলল–তুমি কে? লোকটা তখনও ভীষণ হাঁপাচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে স্পেনীয় ভাষায় বলল–আমি সালভা। আমাকে বাঁচান।

–কোনো ভয় নেই–নৌকোয় উঠে এসো। ফ্রান্সিস বলল।তারপর টেনে সালভাকে নৌকোয় তুলে নিল। অল্প চাঁদের আলোয় দেখা গেল সালভার গায়ে এখানকার জেলেদেরই পোশাক তবে বুকের সামনেটা কাটা। খোলা বুকে তলোয়ারে কাটার দাগ। হাঁপাতে হাঁপাতে সালভা বলে উঠল–শিগগির নৌকো ছেড়ে দিন। ঐ সৈন্যরা এখুনি এসে পড়বে।

–ভয় নেই। দু’জন সৈন্যকে আমরা তির ছুঁড়ে আহত করেছি।

ওরা এক্ষুণি আসতে পারবে না। হ্যারি বলল।

–কিন্তু ওদের দুর্গ কাছেই। ওরা নিশ্চয়ই খবর দেবে। তখন আরো সৈন্য আসবে। সালভা বলল।

–হুঁ, ফ্রান্সিস মুখে শব্দ করল। তারপর হাতের দাঁড়ে পাশের এবড়ো-খেবড়ো পাথর ঠেলে নৌকো ছোট্ট খাড়িটা থেকে বের করে আনল।

নৌকো চলল ফ্রান্সিসদের জাহাজের দিকে। হ্যারি বলল–ওরা মূর সৈন্য তাই না?

–হ্যাঁ, সালভা বলল। তারপর বলল–আপনারা আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের পরিচয়

–আমরা ভাইকিং। ফ্রান্সিস নৌকো চালাতে চালাতে বলল।

–ও আপনারা তো বীরের জাতি। এবার জানলাম আপনাদেরমনও উদার। সালভা বলল। তারপর বেশ চিন্তিত স্বরে বলল–আমি তো এখন তীরে যেতে পারবো না।

–একটু দূরেই আমাদের জাহাজে নোঙর করা আছে। তুমি ঐ জাহাজেই থাকবে। ফ্রান্সিস নৌকো চালাতে চালাতে বলল।

হ্যারি বলল–আচ্ছা সালভা–এটা কি একটা দ্বীপ না কোনো দেশ?

–এটা মাজোরকা দ্বীপ–বালেরিক দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ। এই তীরভূমির নাম পালমা নোভা। এখানে জেলেদের বস্তীতে থাকি। সালভা বলল।

নৌকো চলেছে। রাত শেষ হয়ে আসছে। সমুদ্রের জল ছুঁয়ে জোর ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে গেল। ভেজা পোশাকে সালভা দু’হাত বুকে জড়িয়ে ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠল। মারিয়া লক্ষ্য করল সেটা।

যে কম্বলমতো মোটা কাপড়টা মারিয়া বসেছিল সেটা তুলে নিয়ে ও সালভার গায়ে জড়িয়ে দিল। সালভা মুখ তুলে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসল। তখনই শাঙ্কো বলে উঠল–ফ্রান্সিস আগুন। দুরে তীরভূমি ছাড়িয়ে আগুনের হল্কা উঠছে। দেখা গেল। সালভা ফুঁপিয়ে উঠল, বলল–হ্যাঁ মেরী–মূর সৈন্যরা আমাকে ধরতে না পেরে আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কাঠ আর পাথরে তৈরি আমাদের বস্তিটাই পুড়িয়ে দেবে ওরা। সালভা মাথা নিচু করে ফোঁপাতে লাগল। ওদিকে দ্বীপের ধোঁয়াটে আকাশ আগুনের আভায় লাল হয়ে উঠেছে।

আস্তে আস্তে নৌকো জাহাজের কাছে এলো। রেলিঙ ধরে বিস্কোওরা ফ্রান্সিসদের একে একে জাহাজে তুলে নিল। ফ্রান্সিস বলল–বিস্কো, এরনাম সালভা। একে তোমাদের কেবিন-ঘরে নিয়ে যাও। শুকনো পোশাক দাও। গরম কিছু খেতে দাও।বিস্কো সালভাকে কি ডেকে নিল। চলল ওদের কেবিন-ঘরের দিকে। পুব দিকের আকাশ তখন লাল হয়ে উঠেছে। একটু পরেই সূর্য উঠল।

একটু বেলায় ফ্রান্সিসদের ঘুম ভাঙল। মারিয়ে জেগেই ছিল তখন। খাবার নিয়ে এলো। দু’জনে খাচ্ছে তখন হ্যারি এলো। ফ্রান্সিস বলল–সালভা কেমন আছে?

–ভালো। খেয়েদেয়ে, জাহাজটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। হ্যারি বলল।

–সালভাকে একবার ডাকো তো হ্যারি।মূর সৈন্যরা ওকে আক্রমণ করেছিল কেন সেটা জানতে হয়। ফ্রান্সিস বলল। হ্যারি চলে গেল। একটু পরেই সালভাকে নিয়ে এলো। ফ্রান্সিস হেসে বলল–বসো সালভা। সালভা বিছানাতেই বসল। মারিয়া হেসে বলল–এখন কেমন আছো? সালভাও হাসল। বলল–আপনাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ রইলাম। ফ্রান্সিস বলল-ওসব কথা থাক। তোমাকে মূর সৈন্যরা আক্রমণ করেছিল কেন? তোমার বুকই বা তলোয়ারে কাটা কেন? সালভা একটু চুপ করে থেকে বলল–ঐ মূর সৈন্যদের রাজাই বলুন–অথবা দলপতিই বলুন–তার নাম আল আমিরি। সে কিন্তু জাতিতে মূর নয়–আরবী। দিন পনেরো আগে আল আমিরি জাহাজে চড়ে ঐ মূর সৈন্যদের নিয়ে এই পালমা নোভার দুর্গা দখল করে নেয়।

–আগে দুৰ্গটা কার অধিকারে ছিল? হ্যারি বলল।

–মাজোরকার বর্তমান রাজা তৃতীয় জেমসের। আল আমিরি এমনভাবে সৈন্য দিয়ে পালমা নোভা ঘিরে রেখেছে যে রাজা জেমস এখনও জানেন না যে এই দুর্গটা আল আমিরি দখল করে নিয়েছে। একটু থেমে সালভা বলতে লাগল–আমি রামন লালের শিষ্য ছিলাম। রামন লাল আমাদের ঘরে মারা যান। তার মৃতদেহ কবরের ব্যবস্থার জন্যে আমি গাড়িতে নিয়ে রাজধানী পালমায় যাচ্ছিলাম। দুর্গের কাছেই ধরা পড়লাম আল আমিরির সৈন্যদের হাতে। আল আমিরি খবর পেয়ে এলো। মৃত রামন। লালের জোব্বার পকেটে রামন লালের পাণ্ডুলিপির দ্বিতীয় খণ্ডটা পেল। সন্দেহ করল আমি প্রথম খণ্ডটা লুকিয়ে রেখেছি। চাইল প্রথম খণ্ডটা। প্রাণ বাঁচাতে বললাম বাড়িতে আছে। তিনজন সৈন্যের পাহারায় বাড়িতে এলাম। তারপর ওদের চোখে ধুলো দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালালাম। ছুটলাম সমুদ্রের দিকে। ঠিক করেছিলাম নৌকোয় চড়ে পালাবো। এই বেলাভূমিতেই আমরা মানুষ। বালির ওপর দিয়ে আমাদের মতো দ্রুত কেউ ছুটতে পারে না। কিন্তু সৈন্য তিনজনের নজরে পড়ে গেলাম। ওরা তলোয়ার খুলে চিৎকার করতে করতে আমাকে ধাওয়া করলো। তার পরের ঘটনা তো জানেনই। ফ্রান্সিস একটু চুপ করে থেকে বলল-রামন লাল কে? তার পাণ্ডুলিপি–মানে সমস্ত ব্যপারটা বলো তো। সালভা বলল–সে অনেক কথা। প্রথমে বলি আমি কি করে রামন লালের শিষ্য হলাম। একটু থেমে বলতে লাগল–জেলের ছেলে আমি। কিন্তু জেলেবস্তির অন্য ছেলেদের মতো আমি ছিলাম না। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশুনোর প্রতি ভীষণ আগ্রহ বোধ করতাম। এখানকার দুর্গ ছাড়িয়ে বেশ দূরে একটা ভাঙাচোরা ঘরে একজন মৌলভী থাকতেন। তাঁর কাছেই আমি আরবী ভাষা শিখতে শুরু করি। একদিন মৌলভী বললেন–আমি যা জানি সবই তোমাকে শিখিয়েছি। যদি সত্যিকারের জ্ঞান লাভ করতে চাও তাহলে রাজধানী পালমা যাও। যদি রামন লালের শিষ্যত্ব লাভ করতে পারো তাহলে গ্রীক, ল্যাটিন, আরবী সমস্ত শাস্ত্রেই তুমি জ্ঞানী হবে। একটু থেমে সালভা বলতে লাগল–রাজধানী পালমা গেলাম। কত দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে শিক্ষাগুরু রামন লালের নজরে পড়লাম–সে এক কাহিনী। যা হোক–শিক্ষাগুরু রামন লাল আলমুদাইনা রাজপ্রাসাদের একটি অংশে তার শিষ্যদের পড়াতেন। একুট থেমে সালভা বলতে লাগল– এই রামন লালের জীবন বড়ো বিচিত্র। সামান্য ফাইফরমাস খাটার চাকর ছিলেন বালকবয়সে। পরে তিনি নিজের যোগ্যতায় রাজা দ্বিতীয় জেমসের রাজসভার সম্মানিত অমাত্য হয়েছিলেন। গ্রীক শাস্ত্র আরবী ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। মহাপণ্ডিত বলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজা দ্বিতীয় জেমস আরো জ্ঞানলাভের জন্যে তাকে সিরিয়া মিশর পূর্ব দেশেও পাঠিয়েছিলেন। বেশ কিছুকাল পরে ফিরে এলেন। পালমায় রইলেন বছর কয়েক। তারপর হঠাৎ একদিন দেশত্যাগ করলেন সব সম্মান যশ অর্থ পেছনে ফেলে। সালভা থামলা।

–তারপর? হ্যারি বলল। সালভা বলল–

–রামন লাল নানা শাস্ত্র চর্চার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালকেমি অর্থাৎ অপ-রসায়নেরও চর্চা করতেন।

মারিয়া বলল- হ্যাঁ, আমাদের দেশেও কেউ কেউ এই অপ-রসায়নের চর্চা করেন। সীসা, তামা, পারদ সোনায় রূপান্তরিত করা যায় কীভাবে–এই অ্যালকেমির গবেষকরা তারই গবেষণা করেন।

–আপনি ঠিক বলেছেন। সালভা বলল–প্রথমবার রামন লাল অনেক কিছু লিখে আনেন। এটাকেই বলা হয় রামন লালের পাণ্ডুলিপির প্রথম খণ্ড। কিন্তু সেই পাণ্ডুলিপি কোথায় গোপন রেখে তিনি দেশত্যাগ করেন এটা তিনি কাউকে জানিয়ে যাননি। সালভা থামল। ফ্রান্সিস এতক্ষণে বেশ আগ্রহ বোধ করল। বলল–এই প্রথম পাণ্ডুলিপিটা কি অনুসন্ধান করা হয়েছে?

–হ্যাঁ হ্যাঁ–রাজা দ্বিতীয় জেমস তো বটেই এখনকার রাজা তৃতীয় জেমসও পণ্ডিতদের দিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। কারণ, রামন লাল নাকি পণ্ডিতমহলে বলেছিলেন যে এই প্রথম পাণ্ডুলিপিতে তিনি অ্যালকেমির বেশ কিছু সূত্র লিখে রেখেছেন।

–হুঁ, তাহলে তো ওটা বেশ মূল্যবান। হ্যারি বলল।

–তারপর? ফ্রান্সিস বলল।

–রামন লাল চলে গেলেন। আমি এখানে ফিরে এলাম। নিজে নিজেই পড়াশুনো চালালাম। বাবার বয়েস হয়েছে। আমি মাছ ধরার কাজে বাবাকে সাহায্য করতে লাগলাম। সালভা থামল।

রামন লালের আর কোনো খবর পেলেন না? মারিয়া বলল?

–না। বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। কয়েকদিন আগের কথা। সেদিন বিকেলে নৌকো থেকে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবো। হঠাৎ দেখি একটা নৌকো সমুদ্রে দোল খাচ্ছে।

নৌকোটা ঠিক জেলে নৌকো না। কৌতূহল হল। নৌকো চালিয়ে ঐ নৌকোটার, কাছে গেলাম। দেখি একটা কাপড় ঢাকা মাথা অল্প দেখা যাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি কাদা-ধুলো-বালিতে নোংরা কালো জোব্বা গায়ে একটি লোক শুয়ে আছে। মাথা মুখ কাপড়ে ঢাকা। নৌকোটায় উঠলাম। মুখের কাপড়ের ঢাকনা সরিয়েই ভীষণভাবে চমকে উঠলাম–এ যে আমার শিক্ষাগুরু রামন লাল। মুখের কঁচাপাকা দাঁড়িয়ে মাথার লম্বা লম্বা চুলে রক্তের ছোপ কালো হয়ে গেছে। নাকে কপালে মুখে ক্ষত। জোব্বার হাতার বাইরে হাত দুটোয় কালশিটে দাগ। রক্তের ছোপ। তাড়াতাড়ি বুকের ওপর কান চেপে ধরলাম। নাঃ-বেঁচে আছেন। নাকের নীচে হাত রাখলাম। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। একটা কালো রঙের দাঁড় পড়ে আছে নৌকোটায়। নৌকোটা আমার নেকোর সঙ্গে বেঁধে তীরে নিয়ে এলাম। ছুটে এলাম বস্তীতে। কয়েকজন বন্ধ ক ডেকে নিয়ে ছুটলাম সমুদ্রের ধারে। রামন লালকে ধরাধরি করে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। মা গরম জলে মুখের গায়ের ক্ষত মুছে দিল। জল খাওয়াল। তখনও উনি চোখ বন্ধ করে আছেন। একটু থামল সালভা। তারপর বলতে লাগল–বৈদ্যির চিকিৎসায় কয়েকদিনের মধ্যে রামন লাল একুট সুস্থ হলেন। আস্তে আস্তে বললেন যে অনেক দেশ ঘুরে তিউনেসিয়ার সমুদ্র উপকূলে এসেছিলেন। ওখানকার আরবীয়রা তাকে পাথর ছুঁড়ে মারছিল। কোনোরকমে একটা নৌকোয় উঠে পালিয়ে আসেন। খাদ্য নেই, জল নেই। একা একা দাঁড় বেয়েছেন। দূরত্ব খুববেশি না হলেও আহত শরীর নিয়ে মাঝে মাঝেই কষ্টে যন্ত্রনায় দাঁড় টানার পরিশ্রমে, ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় অজ্ঞান হয়ে গেছেন। আবার জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। কথাগুলো বলতে বলতে সালভার গলা ভারী হয়ে এলো। চোখ ছলছল করতে লাগল। একটু থেমে বলতে লাগল কিন্তু উনি আর সুস্থ হলেন না। শরীরের ক্ষতগুলো বিষিয়ে উঠল। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এদিকে আল আমিরির সৈন্যদের চোখ এড়িয়ে রামন লালকে যে রাজধানী পালমায় নিয়ে যাবো তারও উপায় নেই।

একদিন সন্ধে থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হল। ঐ শ্বাসকষ্টের মধ্যে ইঙ্গিতে কাগজ কলম চাইলেন। আমি তাড়াতাড়ি পার্চমেন্ট কাগজ আর উটপাখির পালকের কলমে কালি লাগিয়ে দিলাম। কাঁপা কাঁপা হাতে অনেক কষ্টে একটা নক্শামতো কী আঁকলেন। অনেক কষ্টে ফ্যাসফেসে গলায় শুধু বললেন–আল-মুদা-ই-লা-য়। কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলে নকশাটা দেখালেন। শ্বাসকষ্টে পাগলের মতো মাথাটা এপাশ ওপাশ করতে করতে স্থির হয়ে গেলেন। বৈদ্যি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে চলে গেল। আমি শিশুর মতো কাঁদতে লাগলাম। সালভা থামল। ফ্রান্সিসরা কেউ কোনো কথা বলল না। একটু পরে ফ্রান্সিস বলল–আলমুদাইলা কী? সালভা বলল–রাজধানী পালমার রাজপ্রাসাদের নাম।

হ্যারি বলল–ওঁর পোশাকে কিছু পেয়েছিলে?

–হ্যাঁ, জোব্বার পকেটে এক গোছা পাণ্ডুলিপি। গ্রীক ভাষায় লেখা। মন শান্ত হলে পড়লাম পাণ্ডুলিপিটা। লিখেছেন কোথায় কোথায় গেছেন–বন্দি হয়েছেন কয়েদ খেটেছেন–মানে ভ্রমণ কাহিনীর মতো। সবশেষের পাতায় যেটা লিখেছিলেন–সেটা বেশ কৌতূহল জাগায়। লিখেছিলেন–আমার প্রথম পাণ্ডুলিপিতে বেশ কিছু অ্যালকেমির সূত্র আছে। সেই সূত্রগুলো নিয়ে বিভিন্ন দেশের পণ্ডিত অভিজ্ঞ রসায়নবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বুঝলাম আমার সূত্রগুলো নির্ভুল। ভাবছি ফিরে গিয়ে এসব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। একু থেমে সালভা বলল–সেটা আর পারলেন না।

মাজোরকা দ্বীপে ফ্রান্সিস

-তারপর? ফ্রান্সিস বলল।

–দুর্বল হাতে যে নকশাটা উনি এঁকেছিলেন সেটা ভালো করে দেখে আমি বুঝেছিলাম যে প্রথম পাণ্ডুলিপিটা তিনি কোথায় গোপনে রেখে গেছেন তার নির্দেশ আছেনকশাটায়। কিন্তু সেই নির্দেশ আমি কিছুই বুঝলাম না। ফ্রান্সিস বেশ আগ্রহের সঙ্গে বলে উঠল সেই নকশাটা কোথায়?

–ওটা আমি ঘরে বালির মধ্যে পাথরের পাটাতন দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছি। ঘর তো পুড়ে গেছে। জানি না নকশাটাও পুড়ে গেছে কিনা। সালভা বলল।

না–পোড়ে নি–মারিয়া বলল–আগুনে বালি পোড়ে না বরং বালি আগুন নেভায়। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামল। ধীর পায়ে মেঝেয় পায়চারি করতে লাগল। ওর মাথায় ঘুরছে–নকশারামন লালের প্রথম পাণ্ডুলিপি। হ্যারি বলল– সালভার পরে কী ঘটলো বলো। সালভা বলতে লাগল–আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারলাম না। রামন লালের মতো একজন শ্রদ্ধেয় দেশবরেণ্য মানুষকে সমাধিস্থ করবো এরকম একটা অখ্যাত জায়গায়? কিছুতেই মন মানল না। পরদিন ভোরেই বন্ধুদের সাহায্যে মৃতদেহ দুটো খচ্চরে টানা শস্যবওয়া গাড়িতে তুললাম। নিজেই চালিয়ে নিয়ে চললাম রাজধানী পালমার দিকে। দুর্গের পাশ দিয়ে রাস্তা। যাচ্ছি। কয়েকজন মূর সৈন্য ঘিরে ধরলো। ওরা কাউলে পালমা যেতে দিচ্ছে না। পাছে দুর্গ দখলের খবরটা রাজার কানে ওঠে। ওরা মৃতদেহ দেখল। ওদের মধ্যে একটি সৈন্য রামন লালকে চিনে ফেলল। ওরকম একজন খ্যাতিমান মানুষকে না চেনাই অশ্চর্য। খবর গেল দুর্গে। আল আমিরি ঘোড়ায় চড়ে এলো। মৃতদেহ দেখেই চিনল। সেনাপতিও এসেছে পেছনে পেছনে। সেনাপতিকে বলল মৃতদেহের পোশাক খুঁজে দেখতে। দামি কিছু আছে কিনা। সেনাপতি খুলে নিল গলায় ঝোলানো সোনার কুশটা আঙ্গুলের হীরের আংটি। এক পকেট থেকে পূর্বদেশীয় কিছু মোহর। এবার ঝোলা পকেট থেকে বের করল পাণ্ডুলিপিটা। আল আমিরি পাণ্ডুলিপিটা হাতে নিল। এক পাতা পড়ে আমাকে বলল–এটা পড়েছিস্ তুই? বললাম হ্যাঁ।

–অ্যালকেমির সূত্র আছে এতে? আল আমিরি বলল। বুঝলাম আল আমিরিকে যতটা অশিক্ষিত ভেবেছিলম সে ততটা অশিক্ষিত নয়। রামন লালের পাণ্ডুলিপিতে অ্যালকেমির সূত্র আছে এটা সে জানে। বললাম–

“জানি না। আল আমিরি তলোয়ারের হাতির দাঁতে বাঁধানো হাতলে হাত দিল। চিৎকার করে বলল–

–সত্যি কথা বল্। বললাম–শেষ পাতায় শুধু লেখা আছে যে প্রথম পাণ্ডুলিপিতে সূত্রগুলো লেখা আছে। আল আমিরি দ্রুত হাতে পাতা উলটিয়ে শেষ পাতাটা পড়ে ফেলল। বলল–প্রথম পাণ্ডুলিপি কোথায়?

–সে আমি জানি না। আমি বললাম।

–রামন লাল তোকে কোনো হদিশ দিয়ে যায় নি? আল আমিরি বলল।

 –না। আমি বললাম। আল আমিরি বিশ্বাস করল না।

ঝনাৎ করে তলোয়ার কোষমুক্ত করল। আমার মাথার ওপর তলোয়ার উঁচিয়ে ধরে বলল–মিথ্যে কথা। বল্ কোথায় সেই পাণ্ডুলিপি?

–আমি সত্যি জানি না। কথাটা বলতেই তলোয়ারটা রোদে ঝলসে উঠে দ্রুত আমার বুক ছুঁয়ে গেল। পোশাক কেটে গেল। বুক লম্বালম্বি কেটে গেল। রক্ত পড়তে লাগল।

–বল–আবার তলোয়ার তুলল আল আমিরি। বুঝলাম বাঁচতে হলে অন্য পথ নিতে হবে। বললাম হ্যাঁ, মৃত্যুর সময় রামন লাল, আমাকে একটা নক্শামতো এঁকে দিয়ে গেছেন। আল আমিরি বলল–কোথায় সেটা? বললাম–আমার ঘরে রেখে এসেছি। আল আমিরি তলোয়ারের ইঙ্গিতে তিনজন সৈন্যকে বলল–তোরা ওর সঙ্গে যা। ও যা দেবে নিয়ে আসবি। ওকেও সঙ্গে নিয়ে আসবি। খবরদার–পালায় না যেন। সালভা তামল। ফ্রান্সিস পায়চারি থামিয়ে বলল–শোন সালভা–আজ রাতে তোমার পোড়া ঘরে যাবো। নক্শাটা পেলে রামন লালের প্রথম পাণ্ডুলিপিটা উদ্ধার করবো। মারিয়া বলে উঠল–কিন্তু আমরা তো দেশে ফিরবো এখন। ফ্রান্সিস ঘুরে দাঁড়িয়ে মারিয়ার মুখের দিকে তাকাল। আস্তে বলল–ঠিক আছে। তোমরা জাহাজ নিয়ে চলে যাও। আমি, হ্যারি আর শাঙ্কো এই মাজোরকা দ্বীপে থাকবো। পাণ্ডুলিপি খুঁজে বের করবো। মারিয়া বুঝল– ফ্রান্সিস যা করবে স্থির করে তা করবেই। মৃদুস্বরে মারিয়া বলল–আমাকে মাফ করো ফ্রান্সিস। অনেকদিন দেশ ছাড়া তাই আমি তোমার সঙ্গেই থাকবো।

হ্যারি আর সালভা নিজেদের কেবিনে চলে গেল। ফ্রান্সিস আস্তে আস্তে কেবিন ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে লাগল।