বিপদে বুজুমবুরা – ৪

চাওসিকোর দরজায় নক হলো, ‘ঠক, ঠক, ঠক।’

চাওসিকো দরজা খুলে দেখল আনা আরিয়া।

চাওসিকোর রুমের পাশের রুমটাই আনা আরিয়ার। প্রতিনিধিদলে লিডার ও ডেপুটি লিডার হিসেবে তারা দু’টি পাশাপাশি রুম বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিনিধিদলের অন্য দশজন ভ্যাটিক্যানের কমন ডরমিটরির এই ব্লকেই অন্যান্য রুমে উঠেছে। ছেলেমেয়েদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। কে কোন্ রুম নেবে সদস্যদের চয়েসের উপর তা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সবার জন্যে এই একই সরকারি ব্যবস্থা।

চাওসিকো এই ব্যবস্থার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিল। কিন্তু তার আপত্তি টিকেনি। যুক্তি দেখিয়ে তাকে বলা হয়েছে, জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন এখানে নেই। তাছাড়া চলে আসা এই ব্যবস্থাকে সকলেই ওয়েলকাম করেছে।

‘সালাম আলাই কম। ফিস ফিস কণ্ঠে বলল আনা আরিয়া।

‘ওয়া আলাইকুম সালাম।’ বলল চাওসিকো।

ঘরে প্রবেশ করে আনা আরিয়া বলল, ‘প্রোগ্রাম পেপারস নিয়ে এসেছি, এখন আলোচনা করতে পারি।’

‘ধন্যবাদ আনা, চল আমরা লাউঞ্জে গিয়ে বসি।’ বলল চাওসিকো।

‘ওখানে নিরিবিলি কথা বলা যাবে না। তোমার এখানেই বসি, না হয় আমার বেড রুমে চল।’ আনা আরিয়া বলল।

হাসল চাওসিকো। বলল, ‘এখানে যে সমস্যা ওখানেও তো সেই একই সমস্যা।’ চাওসিকো চোখ নিচু রেখে কথা বলছিল।

আনা আরিয়া বলল, ‘বুঝেছি চাওসিকো। তার মুখে লজ্জার একটা আরক্ত প্রবাহ।

ক্ষণেক থেমেই আনা আরিয়া আবার বলে উঠল, ‘জরুরি হিসাবে অল্পক্ষণ বসারও কি অনুমতি নেই?’

‘কোনো বিকল্প না থাকলে আমরা এক ঘরে রাত কাটাতে পারি, এ অনুমতি আছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে এই বদ্ধ বেডরুমে আমরা কিছুক্ষণও বসতে পারি না।’ বলল চাওসিকো।

হাসল আনা আরিয়া। স্বচ্ছ এক হাসি তার মুখে। বলল সত্যি আল্লাহর এ ধর্ম খুবই বাস্তববাদী। স্বাভাবিক অবস্থায় নীতির প্রশ্নে একচুলও ছাড় নেই, কিন্তু অস্বাভাবিক অবস্থার প্রয়োজন অনুসারে ছাড় দেয়া হয়। আলহামদুলিল্লাহ, তোমার কাছে প্রতিদিনই কিছু করে শিখছি চাওসিকো।’

একটু থেমেই আবার বলল, ‘চল চাওসিকো লাউঞ্জেই যাই।’

দু’জন গিয়ে লাউঞ্জের এক প্রান্তে বসল।

আনা আরিয়া তার হাতের ফোল্ডার থেকে খ্রিস্টান যুব কংগ্রেসের প্রোগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজ-পত্র বের করল। প্রোগ্রামটা তুলে দিতে যাচ্ছিল চাওসিকোর হাতে।

চাওসিকো বলল, ‘তুমি তো পড়েছ। আমিও দেখেছি। আমাদের জন্যে অসুবিধাজনক দিকগুলো নিয়েই এসো আমরা আলোচনা করি।

‘প্রথম দিন প্রার্থনা দিয়েই যুব কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। প্রার্থনা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। প্রথম দিনের দুই অধিবেশনে আমাদের কোনো সমস্যা দেখি না। সমস্যা দাঁড়াবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের অধিবেশনে। দুনিয়ার ১৬০টি প্রতিনিধি দলকে বিশটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। আফ্রিকায় চারটি গ্রুপ। মধ্য আফ্রিকা গ্রুপের নেতা হয়েছ তুমি। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মধ্য আফ্রিকায় খ্রিস্টান ফেইথের সম্প্রসারণের উপর তোমার বিশ মিনিটের একটা রিপোর্ট পেশ করতে হবে। আর তৃতীয় দিনের কর্মসূচির ১০ মিনিটের একটা প্রোগ্রাম সবচেয়ে বিপজ্জনক। দশ মিনিটের এই প্রোগ্রামে যিশুর জীবন নিয়ে কথা বলতে হবে চাওসিকোকে। আনা আরিয়া বলল।

চাওসিকো কথা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু কথা বলা হলো না।

তাদের দিকে আসতে দেখল মধ্য আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদলের নেতাকে। চাওসিকো এবং আনা আরিয়া উঠে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানালো। বসলো তারা। তাদের সবার সাথে পারস্পরিক পরিচয় আগেই হয়েছিল।

তাদের একজন, গ্যাবনের প্রতিনিধিদলের নেতা জিন মেরী বলল, ‘আমরা মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কামেরুন, গ্যাবন, নিরীক্ষীয় গিনি, কঙ্গো, কেনিয়া, উগান্ডার প্রতিনিধিরা আমাদের কান্ট্রি রিপোর্ট নিয়ে এসেছি। দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, নাইজেরিয়ার রিপোর্ট আমাদের মাধ্যমে তারা পাঠিয়েছে। রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রাটিক কঙ্গোর রিপোর্ট তারা সরাসরি আপনাকে দেবে। আঞ্চলিক রিপোর্ট পেশের সময় দেখলাম বিশ মিনিট। বিশ মিনিটে আপনি কীভাবে ১৫টি দেশের কান্ট্রি রিপোর্ট কভার করবেন? আমরা সবাই চাই, আমাদের রিপোর্টের খ্রিস্টান ফেইথের সম্প্রসারণ ও বিরোধিতার প্রকৃতি বিষয়টা হুবহু আসুক।’

‘সবাইকে ধন্যবাদ যে, আপনাদের রিপোর্ট এবং যারা এখানে আসেনি তাদের সবার রিপোর্ট আপনারা নিয়ে এসেছেন। ডেমোক্রাটিক কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার রিপোর্ট যোগাড় করে নেব।’

একটু থামল চাওসিকো। কথা শুরু করল আবার, ‘অধিবেশনে রিপোর্টের প্রেজেন্টেশন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমাদের প্রত্যেকের কান্ট্রি রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। সেগুলোই তারা মূল্যায়ন করবেন। অধিবেশনে রিজিওনাল রিপোর্ট পেশ একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। লাভটা হবে, গোটা দুনিয়ায় খ্রিস্টান ফেইথের সম্প্রসারণ ও বিরোধীদের অবস্থার একটা সামারি আমরা জানতে পারব। আমি…।’

চাওসিকের কথার মাঝখানে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের ডেপুটি লিডার ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত বলে উঠল, ‘সামারিতে তাহলে তো দেশগুলোর নামের জন্যেও জায়গা হবে না?’

হাসল চাওসিকো। বলল, ‘১৫টি কান্ট্রি রিপোর্ট সামনে রেখে আমি একটা রিজওনাল রিপোর্ট তৈরি করব। তাতে শুধু প্রত্যেক দেশের নাম নয়, সব দেশের কাজের একটা সমন্বিত রিপোর্টও থাকবে।’

‘লর্ড জেসাসকে ধন্যবাদ। নিশ্চয় আপনি তা পারবেন। আমি শুনেছি, আপনি খুব প্রতিভাবান ছাত্র। একজন তরুণ বিজ্ঞানীও। আমি আপনার শুভ কামনা করি।’

বলল নিরক্ষীয় গিনীর ডেপুটি লিডার আইমান এলিজাবেথ।

প্রথম যে কথা শুরু করেছিল, সেই জিন মেরীও চাওসিকোকে ধন্যবাদ জানাল এবং সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমার এবং যারা আসেনি তাদের রিপোর্ট আমি চাওসিকোকে দিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের রিপোর্টও আপনারা তার কাছে জমা দিন।’ বলেই জিন মেরী উঠে দাঁড়াল।

নিজ দেশের রিপোর্টসহ অন্যদের রিপোর্ট সে চাওসিকোর কাছে জমা দিল।

জিন মেরী তাকাল পাশের সোফার আনা আরিয়ার দিকে। হাসল। বলল, ‘তোমার পরিবারের কান্ট্রি অব অরিজিন জিজ্ঞাসা করতে পারি মিস আনা আরিয়া?’

‘অবশ্যই মিস জিন মেরী। আর্মেনিয়া। বলল আনা আরিয়া।

‘জান, কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের সিক্রেট রেটিং-এ তুমি সব দিক থেকে ‘গার্ল অব দ্যা কংগ্রেস’ হয়েছ। শ্রীঘ্রই ঘোষণা আসছে। জিন মেরী বলল।

‘দুঃখিত মিস জিন মেরী, আমি পণ্য নই যে আমার রেটিং হবে। আর যারা কোনো কিছুর বহিরাঙ্গ দেখে বিচার করে তারা সব সময় ভুল করে।’ বলল আনা আরিয়া।

‘তুমি ঠিক বলেছ মিস আনা আরিয়া। কিছু মনে করো না তুমি, ওটা মজা করা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে একথা ঠিক যে, আর্মেনিয়ানরা সৌন্দর্যের জন্যে বিখ্যাত।’ জিন মেরী বলল।

‘ওটা স্রষ্টার ব্যাপার মিস জিন মেরী। স্রষ্টার একটা দানকে পণ্য বানানো একটা সামাজিক অপরাধ।’ বলল আনা আরিয়া।

‘ধন্যবাদ মিস আনা আরিয়া। তোমার এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি। জিন মেরী বলল।

চাওসিকো প্রত্যেকের রিপোর্ট নিয়ে ভালো করে দেখে তা আনা আরিয়াকে দিয়ে দিচ্ছিল। মধ্যআফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের রিপোর্ট নেবার সময় ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাতকে এবং নিরক্ষীয় গিনীর রিপোর্ট নেয়ার পর আইমান এলিজাবেথকে একটু অপেক্ষা করতে অনুরোধ করল চাওসিকো।

সবাই চলে গেল, শুধু বসে ছিল ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত এবং আইমান এলিজাবেথ।

আইমান এলিজাবেথ দেহের দিক দিয়েও মিশ্র কাঠামোর এবং রং উজ্জ্বল শ্যামলা। আর ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত দেহের গড়নে নন-আফ্রিকান এবং রংয়ের ক্ষেত্রে খাঁটি আফ্রিকান।

চাওসিকো আনা আরিয়ার হাত থেকে রিপোর্টগুলো নিয়ে গুণে দেখার পর ভাঁজ করে রেখে তাকিয়েছিল এলিজাবেথ ও ব্রুনোর দিকে। মুখ খুলেছিল কিছু বলার জন্যে। বলা হলো না।

বেয়ারা কফির ট্রে এনে সামনের টেবিলে রাখল।

চাওসিকো বিস্ময় নিয়ে তাকাল আনা আরিয়ার দিকে।

‘আমি অর্ডার দিয়েছিলাম। মি. ব্রুনো ও মিস এলিজাবেথ তো এখন তোমার মেহমান।’

‘ধন্যবাদ আনা।’ বলল চাওসিকো। তার মুখ প্রসন্ন।

‘ওয়েলকাম।’ আনা আরিয়া বলল। ওদিক থেকে ব্রুনো ও এলিজাবেথ দু’জনেই বলে উঠল, ‘আমরা মেহমান হলাম কেমন করে? আমরা সবাই এখানে তো একই আয়োজনের অংশ।

‘মেহমান হওয়ায় ক্ষতি নেই। আমাদের কিছু লাভ আছে। উপযুক্ত সময়ে এক কাপ করে কফি খাওয়া হলো। বলল আনা আরিয়া মুখ টিপে হেসে।

সবাই হেসে উঠল। সবাই কফির কাপ হাতে তুলে নিল।

চাওসিকো কফির কাপে একটা চুমুক দিয়ে কফির কাপটা টেবিলে রেখে ব্রুনো ও এলিজাবেথের দিকে চেয়ে বলল, ‘মাফ করবেন মি. ব্রুনো ও মিস এলিজাবেথ, মাত্র একটা কৌতূহলের কারণে আপনাদের কষ্ট করে অপেক্ষা করতে বলেছি।’

‘কোথায় কষ্ট দেখলেন? আমরা তো খুশি। অপেক্ষা না করলে তো এই কফি পেতাম না।’ বলল এলিজাবেথ। হাসি মুখে সমর্থন করল ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত।

‘ধন্যবাদ আপনাদের। আমার কৌতূহলের বিষয় হলো, মি. ব্রুনোর নামের ‘মাহামাত’ শব্দ এবং মিস এলিজাবেথের নামের ‘আইমান’ শব্দ।

ব্রুনো এবং এলিজাবেথ দু’জনের মুখই একটু ম্লান হলো।

মুহূর্তের জন্যে মাথাটাও একটু তাদের নিচু হয়েছিল।

‘আপনার কৌতূহলটা কি মি. চাওসিকো?’ জিজ্ঞাসা করল ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত।

‘মিস এলিজাবেথের নামের ‘আইমান’ অংশ এবং আপনার নামের ‘মাহায়াত’ শব্দ সম্পর্কে আমার কৌতূহল। ‘আইমান’ আরবি শব্দ এবং ‘মাহামাত’ও একটা বিখ্যাত আরবি নামের একটু ভিন্নতর উচ্চারণ। আপনাদের নামে এ শব্দ দু’টো এলো কি করে?’ বলল চাওসিকো।

‘এ দু’টো আরবি শব্দ আপনি বুঝলেন কি করে? আমার নামের এ অংশ নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তুলেনি। আমার মনে হয় মিস এলিজাবেথও এই কথাই বলবেন। তাহলে…।’

ব্রুনো ফ্রান্সিসের কথার মাঝখানেই এলিজাবেথ বলে উঠল, ঠিক। আমার ‘আইমান’ নাম নিয়েও কখনও কারও মধ্যে জিজ্ঞাসা জাগতে দেখিনি।’

‘ধন্যবাদ মিস এলিজাবেথ। আমাদের তাহলে প্রশ্ন মি. চাওসিকো, আপনার মনে প্রশ্ন উঠল কেন?’ ব্রুনো ফ্রান্সিস বলল।

‘কারণ আমারও পিতৃদত্ত আরবি নাম আবিদ ইব্রাহিম। আরবি নামের সাথে তাই আমি পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমার আরবি নাম বদলে যায়।’ বলল চাওসিকো।

‘শুধু নাম নয় আপনিও বদলে গেছেন।’ মিস এলিজাবেথ বলল। বিষয়টাকে এভয়েড করে চাওসিকো বলল, ‘আপনাদের বদলের কাহিনীটা কি ছিল?’ হালকা কণ্ঠ চাওসিকোর।

এলিজাবেথ এবং ব্রুনো ফ্রান্সিস দু’জনেই তাদের বদলে যাবার কাহিনী জানাল। তাদের দু’জনের বাবা-মা মুসলমান ছিল। এলিজাবেথের নাম ছিল আইমান। তার বাবা-মা তাদের গ্রামের পাশের ছোট শহরে খ্রিস্টান মিশন স্কুলের হোস্টেলে মাছ সরবরাহের কাজ করত। আইমানও সেখানে যাতায়াত করত। তারা তাকে এলিজাবেথ বলে ডাকত। স্কুলে

ভর্তির সময় এই নামেই তাকে স্কুলে ভর্তি করে। নাম বদলের পর কখন সে মুসলমান থেকে খ্রিস্টান হয়ে গেছে, তা সে জানে না। লেখা-পড়া শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের সময় সে নিজে এলিজাবেথ নামের সাথে তার আইমান নাম যোগ করে পিতা-মাতা ও নিজ গোত্রের স্মৃতি স্মরণে রাখার জন্যে। আর ব্রুনো ফ্রান্সিসের কাহিনী হলো, তার বয়স যখন নয় দশ বছর, সে সময় তাদের গোত্রের সাথে মিশনারীদের একটা বিরাট সংঘর্ষ হয়। মিশনারীদের মিলিত বিরাট শক্তির কাছে তাদের গোত্র পরাজিত হয়। যুবকরা প্রায় সকলে মারা যায়। অবশিষ্টরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। শিশু-কিশোরদের পালিয়ে যেতে দেয়া হয়নি। মিশনারীরা তাদের ধরে নিয়ে আসে। ব্রুনো ফ্রান্সিস তাদের একজন ছিল। তার নাম ছিল মাহামাত। এ নামের সাথে তারা যুক্ত করে ব্রুনো ফ্রান্সিস। সে কখন বদল হয়েছে সে জানে না।

‘তাহলে আপনাদের দু’জনের কেউ সজ্ঞানে, মানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বদলে যাননি। বলল চাওসিকো।

‘সে ধরনের কোনো প্রশ্ন ওঠানোর সুযোগ দেখা যাচ্ছে আমাদের হয়নি।’ এলিজাবেথ বলল।

‘স্মৃতির কোনো টানতো আপনাদের নেই?’ বলল চাওসিকো।

‘এমন ভাবনা আমাদের মনে কখনও জাগেনি। এলিজাবেথ ও ব্রুনো ফ্রান্সিস দু’জনেই বলল।

‘মাহামাত নামের বিখ্যাত লোকটি কে? যেটা আপনি বললেন। ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত বলল।

‘মাহামাত নামটি আরবির বিখ্যাত নাম ‘মুহাম্মদ’-এর আফ্রিকি রূপ। আর ‘মুহাম্মদ’ হলো ইসলামের নবী বা প্রফেট-এর নাম। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন তাঁরই উপর স্রষ্টার তরফ থেকে নাজিল হয়।’ বলল চাওসিকো।

‘ও গড়, কত বড় লোকের নাম আমার নামের সাথে যুক্ত?’ ব্রুনো ফ্রান্সিস বলল। তার চোখে-মুখে বিস্ময়।

‘আপনার বাবা-মা তার নামেই আপনার নাম রেখেছিলেন। আর দেখ মিশনারীরা তোমার খ্রিস্টান নাম রাখার সময় তোমার এ নামটা ছেঁটে ফেলা উচিত ছিল, তা তারা করেনি বা করতে পারেনি। তোমার এ নামের এটা একটা মিরাকল।’ বলল চাওসিকো।

‘এ মিরাকলটা কেন?’ বলল ব্রুনো ফ্রান্সিস। তার চোখে-মুখে ভাবনার প্রকাশ।

‘এ প্রশ্নটা আমারও! আমার নাম আইমান তারা বাদ দিল, কিন্তু ওর নামের মাহামাত তারা বাদ দিতে পারল না কেন?’ আইমান এলিজাবেথ বলল।

‘এর উত্তর আমি জানি না। সব মিরাকলের মালিক জগৎস্রষ্টাই এর উত্তর জানেন। তবে আমার মনে হয়, ‘মুহাম্মদ’ নামের এক অশরীরী প্রভাব এটা, তার নামের বরকত এটা। মুহাম্মদ নামটি দুনিয়ার পূর্বাপর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী, সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে সফল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অ্যাডাম থেকে শুরু হওয়া এবং আব্রাহামের মধ্যে দিয়ে চলে আসা নবী-রাসুলদের ধারাবাহিকতায় মুহাম্মদ আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসুল। সুতরাং তাঁর নামের একটা মিরাকল তো থাকবেই।’ বলল চাওসিকো।

ব্রুনো ফ্রান্সিস ও এলিজাবেথ গভীর মনোযোগের সাথে শুনছিল চাওসিকোর কথা। ব্রুনো ফ্রান্সিসের মুখ গম্ভীর ও ভারি। এলিজাবেথের মুখেও গভীর চিন্তার প্রকাশ।

চাওসিকোর কথা শেষ হলেও দু’জনের কেউ কথা বলল না। কথা বলল আনা আরিয়া, ‘চাওসিকো তুমি তো সবার কফি ঠাণ্ডা করে দিলে।

এলিজাবেথ ও ব্রুনো ফ্রান্সিস দু’জনেই বলে উঠল, ‘না আমরা কফি খাচ্ছি। খুব গরম আছে।’

বলে দু’জনেই আবার কফির কাপে চুমুক দিল।

কফি খাওয়া শেষে এলিজাবেথ ও ব্রুনো ফ্রান্সিস দু’জনেই বিদায় নিল। বিদায় নেবার সময় দু’জনেই বলল, ‘ধন্যবাদ মি. চাওসিকো, আপনি আমাদের শেকড় ধরে নাড়া দিয়েছেন। আমরা কখনই এভাবে পেছন ফিরে তাকাইনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’

‘চাওসিকো তুমি আমাদের রাসুল (স.)-এর নামের মিরাকল সম্পর্কে বললে, আসলেই সেটা কি?’ জিজ্ঞাসা করল আনা আরিয়া কাগজ-পত্র সব গুছিয়ে নিতে নিতে।

‘আল্লাহ রাসুল (স.)-এর নামের মধ্যে কোনো অলৌকিকত্ব দিয়েছেন বা দিতে পারেন। কিন্তু আমি অলৌকিকত্ব বলতে তাঁর নামের অসীম বরকতের কথা বলেছি। এই বরকতের নানারকম প্রকাশ হতে পারে। ব্রুনো ফ্রান্সিসের নামের ক্ষেত্রে তার একটা সম্মানজনক প্রকাশ ঘটেছে। নামটা তারা হেঁটে ফেলতে পারেনি।’ বলল চাওসিকো

‘অলৌকিকত্ব ও বরকতের প্রকাশ কখনও কখনও সমার্থক হতে পারে। অতএব আমাদের রাসুল (স.) নামের মধ্যে অলৌকিকত্ব আছে বলা যায়।’ আনা আরিয়া বলল।

‘হ্যাঁ এক্ষেত্রে একটা ঘটনার উল্লেখ করা যায় আনা। আমাদের রাসুল (স.)-এর দাদা আব্দুল মোত্তালিব তার নাতির নাম মুহাম্মদ রেখেছিলেন। অথচ এই নাম মক্কায় বা আরবে প্রচলিত ছিল না। নিশ্চয় আল্লাহর ইচ্ছায় এটা ঘটেছে।’ বলল চাওসিকো।

আনা আরিয়া শিশুর মতো হাততালি দিয়ে উঠল। বলল, ‘বলেছি না যে আমাদের রাসুল (স.)-এর নামে আল্লাহ অলৌকিকত্ব দিয়েছেন। অলৌকিকত্ব দিয়েই তো তাঁর নামের শুরু!’ আনা আরিয়ার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠেছিল।

‘আল্লাহর রাসুল (স.)-কে তুমি খুব ভালোবাস না?’ জিজ্ঞাসা চাওসিকোর। ‘ভালোবাসব না! তিনি তো আমাদের ভালোবাসেন। সমস্ত মানুষকে ভালোবাসেন। সমস্ত সৃষ্টিকে তিনি ভালোবাসেন।’ আনা আরিয়া বলল।

‘আলহামদুলিল্লাহ আনা আরিয়া, মানুষের মনে এই ভালোবাসার তৌফিক আল্লাহই দেন, যাকে তিনি ভালোবাসেন।’ বলল চাওসিকো।

‘আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন…।’ কথা শেষ করতে পারলো না আনা আরিয়া আবেগজড়িত কণ্ঠ তার রুদ্ধ হয়ে গেল।

লাউঞ্জে ঢুকছিল যুব কংগ্রেস আয়োজনের একজন কর্মকর্তা, অ্যানজেলা অ্যানি। আনা আরিয়া নিজেকে সামলে নিল।

‘হ্যাল্লো চাওসিকো, আনা আরিয়া তোমরা কেমন আছ? সব ঠিকঠাক চলছে তো?’ লাউঞ্জে ঢুকে চাওসিকো ও আনা আরিয়াকে লক্ষ্য করে বলল অ্যানজেলা অ্যানি।

চাওসিকো ও আনা আরিয়া উঠে দাঁড়িয়েছিল। বলল, ‘ওয়েলকাম মিস অ্যানজেলা অ্যানি। আমরা ভালো আছি। বসুন, প্লিজ।’

‘না বসব না, একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এলাম তোমাদেরকে। আজ পাঁচটার মধ্যে ২০ মিনিটের রিজিওনাল রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এর মধ্যেই কান্ট্রি রিপোর্টগুলোর সমন্বয় করে রিজিওনাল রিপোর্ট তৈরি শেষ করতে হবে।’ বলল অ্যানজেলা অ্যানি।

‘পাঁচটার মধ্যে পেয়ে যাবেন, আশা করি।’ বলল চাওসিকো।

‘ধন্যবাদ চাওসিকো।’

বলেই তাকাল অ্যানজেলা অ্যানি আনা আরিয়ার দিকে। বলল, ‘সময় থাকলে সুন্দরী মিস আনার হাতের এক কাপ কফি খেতাম। কিন্তু তা হবার নয়। আসি মিস আনা আরিয়া, আসি চাওসিকো।

অ্যানজেলা অ্যানি চলে গেল।

আনা আরিয়ার মুখ বিষণ্ন। তাকে সুন্দরী বলা সে পছন্দ করেনি। সে ভাবল, সৌন্দর্য আমার নিজস্ব কোনো বিষয় নয়, একান্তভাবেই স্রষ্টার দেয়া। যার জন্যে আমার বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব নেই। কেন মানুষ আমিত্বের সাথে একে যুক্ত করবে?

চাওসিকো ব্যাপারটা কিছুটা বুঝল।

প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিয়ে সে বলল, ‘আনা, এখানকার কাজ শেষ। চল আমরা যাই।’

‘তোমার তো অনেক কাজ পড়ল। এতগুলো কান্ট্রি রিপোর্ট বিশ মিনিটের টাইম-ফ্রেমে সাজানো সহজ কাজ নয়। আমি কি কোনো কাজে লাগব? কি করে লাগব, তুমি তো আমাকে তোমার ঘরে বসতেই দেবে না।’ আনা আরিয়া বলল। তার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি।

‘বসতে দিলেই কি তুমি আমার ঘরে গিয়ে বসবে। এখানে দরজা খোলা রাখার কালচার নেই।’ বলল চাওসিকো।

আনা আরিয়ার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, ‘আগের অবস্থায় হলে না. ডাকলেও গায়ে পড়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে তোমাকে সহযোগিতা করতাম! সে আনা আরিয়া আর নেই। এখন তুমি ডাকলেও বন্ধ ঘরে গিয়ে তোমার সাথে বসব না। শয়তানের হাত থেকে আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন।’

‘ধন্যবাদ আনা, চল এবার উঠি।’ বলে উঠে দাঁড়াল চাওসিকো।

আনা আরিয়াও উঠল। চলল তাদের ঘরের দিকে। আগে আগে চলছিল আনা আরিয়া। চাওসিকোর দরজাটার পরেই আনা আরিয়ার দরজা। আনা আরিয়া দাঁড়াল চাওসিকোর দরজার সামনে। পেছনে চাওসিকোও দাঁড়িয়েছে। আনা আরিয়া পেছন ফিরে চাওসিকোকে বলল, ‘দেখি, তোমার ঘরের চাবি দাও।

‘কেন?’ বলে চাবিটা চাওসিকো তার হাতে দিয়ে দিল।

আনা আরিয়া চাওসিকোর ঘরের দরজা খুলল।

হাত বাড়িয়ে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল। পেছন ফিরে চাওসিকোকে বলল, ‘তুমি দরজায় অল্পক্ষণ দাঁড়াও।’

ঘরে ঢুকে গেল আনা আরিয়া। বন্ধ করে দিল দরজা।

মিনিট দশেক পর বেরুল ঘর থেকে। চাবিটা চাওসিকোর হাতে দিয়ে বলল, ‘বাড়িতে তোমার ঘর ড্রেসিং করে কে?’

‘মা করেন। মাঝে মাঝে বোনও করেন।’ বলল চাওসিকো।

‘ছেলেরা ভাগ্যবান। আমি কলেজে উঠলে মা কিংবা পরিচারিকা কেউ আমার রুম ড্রেসিং করেনি। মায়ের হুকুমে আমাকেই করতে হয়েছে।’

বলে আনা আরিয়া দৌড় দিল তার নিজের ঘরের দিকে।

চাওসিকো ঘরে ঢুকল। আনা আরিয়া ঘরের আলো বন্ধ করে গিয়েছিল। ঘরের আলো জ্বালল চাওসিকো। উজ্জ্বল আলোয় ঘরটা যেন হেসে উঠল 1

নতুন সাজ পরেছে যেন ঘরটা।

নতুন চাদর, বালিশে নতুন আবরা। টেবিলের বিশৃঙ্খল কাগজ-পত্র ও বই চমৎকার করে সাজানো। কাপড়-চোপড় আলমারির হ্যাংগারে ঝুলানো। ব্যবহৃত কাপড়, চাদর ইত্যাদি সার্ভিস ঝুড়িতে দেখল। ফুলদানিটা ঝেড়ে- মুছে যথাস্থানে সরিয়ে রাখা। হাসল চাওসিকো।

ভাইস চ্যান্সেলরের অতি আদরের একমাত্র মেয়ে এই ছোট্ট বয়সেও তার নারীত্বকে খুব বেশি মনে রেখেছে, পুরুষ হতে চায়নি। পরিবারে প্রয়োজন অনুসারে সবাইকে সব কাজ করতে হবে, এরপরও নারীকে নারী আর পুরুষকে পুরুষ থাকতে হবে। স্রষ্টারই এটা ফায়সালা।

এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই চাওসিকো এগোলো তার টেবিলের দিকে। সময়ের আগেই রিপোর্ট তাকে তৈরি করতে হবে। তৈরি রিপোর্ট আনা আরিয়াকে একবার অন্তত পড়াতে হবে। বসল চাওসিকো চেয়ারে।

টেবিল থেকে লেখার প্যাডটা টেনে নিল।

.

আনা আরিয়া চাওসিকোকে যিশু খ্রিস্টের জীবনের উপর সুন্দর, সত্যনিষ্ট বক্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে তার ঘরে চলে এলো। লম্বা প্রোগ্রামে ক্লান্ত সে।

চাওসিকোর মন তখন এক অপার্থিব প্রশান্তিতে ভরে আছে। বিরাট এক সমস্যা ছিল তার সামনে। কি বলবে সে হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবনের উপর। হযরত ঈসা (আ.) অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের জীবনের উপর খ্রিস্টানরা যা বলে তার মূল কথার সাথে যিশু খ্রিস্টের জীবনের কোনো মিল নেই। সেটা সে বলতে পারবে না। সে যেটা বলবে তা এরা গ্রহণ করবে না। প্রফেট হিসাবে যিশু খ্রিস্টকে তুলে ধরাই কঠিন এবং বিতর্কের সব ব্যাপার এখানেই। শেষ পর্যন্ত সে ঠিক করে, প্রফেট হিসেবে যিশুর পরিচয় সম্পর্কে সে বেশি কিছু বলবে না। তার মিশন, তার কাজ নিয়েই বেশি কথা বলবে। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে প্রফেট যিশুর পরিচয় সম্পর্কে ওপেনিং প্যারাগ্রাফটা লিখেছিল সে এইভাবে:

‘কোটি কোটি মানুষের অপার ভালোবাসা সিক্ত প্রফেট জেসাস ক্রাইস্ট মহান ঈশ্বরের প্রেরিত ও মনোনীত, তার একজন প্রশংসিত বার্তাবাহী। আদি মানুষ আদমের স্বর্গচ্যুতির পর জগৎস্রষ্টা ঈশ্বর আদমকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুগে যুগে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে বার্তা দিয়ে প্রফেট পাঠাবেন। মানুষদের যারা তাদের কথা শুনবে, বিশ্বাস করবে, পালন করবে, তাদের কোনো ভয় ও চিন্তা থাকবে না। মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবী থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তাদের অনন্ত সুখের স্বর্গ লাভ হবে। প্রফেট জেসাস ক্রাইস্ট মহান ঈশ্বর কর্তৃক প্রতিশ্রুত সেই প্রফেটদের একজন। তিনি বহুল আলোচিত প্রফেট নুহ, ইব্রাহিম, মুসা প্রমুখের একজন মহান উত্তরসূরী।’

পকেট থেকে নোট বের করে প্যারাগ্রাফটি আবার পড়ল চাওসিকো। মন তার খুশিতে ভরে গেল। আমাদের রাসুল (স.)-এর পূর্বসুরী প্রিয় নবী হযরত ঈসা (আ.) মানে যিশু খ্রিস্ট নবী হিসেবে যা, সেটাই সে তুলে ধরতে পেরেছে।

চাওসিকো চেয়ার থেকে উঠল বিছানায় একটু গড়িয়ে নেবার জন্যে। তখন দরজায় নক হলো।

চাওসিকো গিয়ে দরজা খুলে দিল। দেখল দরজায় দাঁড়িয়ে যুব কংগ্রেস আয়োজনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যানজেলা অ্যানি এবং গ্যাবন প্রতিনিধিদলের নেত্রী জিন মেরী।

চাওসিকো কিছু বলার আগেই অ্যানজেলা অ্যানি বলল, ‘গুড ইভেনিং চাওসিকো।’

‘গুড ইভেনিং আপনাদের দু’জনকে। ভেতরে আসুন, প্লিজ।’ বলল চাওসিকো। বলে চাওসিকো ঘরের ভেতরে সরে এলো।

‘নিশ্চয়’ বলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। বসল গিয়ে দু’জন সোফায়।

দু’সিটের একটাই সোফা ঘরে। চাওসিকো গিয়ে বসল তার চেয়ারে।

কথা শুরু করল অ্যানজেলা অ্যানি। বলল, ‘প্রভু যিশুর জীবনের উপর একি বক্তৃতা দিলে চাওসিকো? তুমি কি জান, সমন্বয়কৃত ২০ মিনিটের তোমার রিপোর্ট রেটিং-এ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু তুমি কি বক্তৃতা দিলে বলত?

‘কেন কি হয়েছে মিস অ্যানজেলা অ্যানি?’ বলল চাওসিকো।

‘তুমি আবার জিজ্ঞাসা করছ কি হয়েছে? অধিবেশনের পরেই সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তোমার দশ মিনিটের গোটা বক্তব্য অধিবেশনের প্রসিডিংস থেকে এক্সপাঞ্চ হয়েছে।’

‘যেকোনো বক্তব্য কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এক্সপাঞ্চ করতে পারেন। কিন্তু এক্সপাঞ্চ হওয়ার মতো কোনো অসত্য, অসংগত কথা আমি বলিনি। মহান জেসাস ক্রাইস্টের জীবন ও কর্ম নিয়ে অন্যেরা যা বলেছে, আমিও তাই বলেছি।’ বলল চাওসিকো।

‘কিন্তু শুরুটা, যেখানে জেসাস ক্রাইস্টের পরিচয় বলেছ, সেখানে কি বলেছ? তার পরিচয়ের মূল কথাই তো তিনি ঈশ্বরের পুত্র। সেটাই তো বলনি। তুমি যা বলেছ তাতে তিনি অন্যান্য প্রফেটদের মতো একজন প্রফেট হয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি অন্যদের মতো প্রফেট হয়েও তিনি ঈশ্বরপুত্র, সবার চেয়ে ভিন্ন তিনি। ঈশ্বর, ঈশ্বরপুত্র যিশু এবং পবিত্র মাতা মেরী এ তিন নিয়ে ট্রিনিটি, তাও তুমি বলনি।’ অ্যানজেলা অ্যানি বলল।

‘বাইবেলের সব অনুসারীদের মধ্যে এই দুই ব্যাপারে একমত নেই। আমি আমার স্বাধীন মত বলেছি। মতানৈক্য তো থাকতেই পারে, কিন্তু আমি কোনো দিকদিয়েই মহান যিশুকে ছোট করিনি, বরং বড় করেছি। বলল চাওসিকো।

‘দেখ, তুমি তোমাকে ডিফেন্ড করার জন্যেই এসব বলছ। ক্যাথলিক মত কি তুমি জান। সেই কাথলিক যুব কংগ্রেসেই তুমি বক্তব্য দিয়েছো। আর বলতো, তোমার গোটা বক্তব্যে ‘লর্ড যিশু’, ‘প্রভু যিশু’-শব্দ নেই কেন? সত্যি তুমি একটা মহাভুল করেছ চাওসিকো। তোমার বক্তব্য উইথড্র করা উচিত এবং ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ অ্যানজেলা অ্যানি বলল।

আনা আরিয়া বেশ অনেকক্ষণ আগে এসে দরজায় দাঁড়িয়েছিল। সে নীরবে ওদের কথা শুনছিল। এবার সে কথা বলে উঠল, ‘মিস অ্যানি, এটা কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ?’

সবাই তাকাল আনা আরিয়ার দিকে।

‘না, আনা আরিয়া। এটা আমাদের একটা পরামর্শ চাওসিকোকে। অ্যানজেলা অ্যানি বলল।

‘যখন বক্তব্যটা এক্সপাঞ্চই হয়েছে, তখন বিষয়টা আমাদের সবার এড়িয়েই যাওয়া উচিত।’ বলল আনা আরিয়া।

‘তুমি ঠিকই বলেছ আনা আরিয়া। বিষয়টা যৌক্তিক মনে হচ্ছে। কিন্তু সবাই কি এ যুক্তি মেনে নেবার মতো? আমার মনে হয়, উপরে এর একটা বড় রিঅ্যাকশন হয়েছে।’ অ্যানজেলা অ্যানি বলল।

‘হতে পারে মিস অ্যানজেলা অ্যানি। আমরা যিশুকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু তাঁর শিক্ষাকে কয়জন আমরা ভালোবাসি, মেনে চলি? কেউ আমার গালে এক থাপ্পড় দিলে, তার গালে আমি চার থাপ্পড় লাগাই।’ বলল আনা আরিয়া।

‘তুমি মূলে হাত দিয়েছ আনা আরিয়া। আমরা মূলের দিকে কেউ তাকাই না, মাথার ফল নিয়ে আমরা কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত।

বলে হেসে উঠল অ্যানজেলা অ্যানি। বলল, ‘আমরা উঠছি চাওসিকো। গুডলাক তোমাদের দু’জনকে।’

চলে গেল অ্যানজেলা অ্যানিরা।

‘ঘরে ঢুকতে পারি স্যার?’ বলল আনা আরিয়া।

‘দরজা খোলা রেখে এসো। কিন্তু স্যার হলাম কখন?’ চাওসিকো বলল।

সোফায় বসতে বসতে আনা আরিয়া বলল, ‘বড় বিজ্ঞানীরা স্যার হলে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা স্যার হবে না কেন?’

‘দেখ বিজ্ঞানী-টিজ্ঞানী বলো না। সেদিনের অহেতুক প্রশংসাই মনে হয় আমাকে ডেলিগেশনের নেতা বানিয়েছে। নেতা হয়ে এখন দেখ কি ঝামেলা।’ চাওসিকো বলল।

‘না, ঠিক বললে না। আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি নেতা হয়েছো, সেদিনের প্রশংসাকে আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা প্রকাশের একটা মাধ্যম করতে পারেন।’ বলল আনা আরিয়া।

‘ঠিক বলেছ আনা, আল্লাহর অ্যাকশন ইচ্ছা ছাড়া সৃষ্টিতে কিছু ঘটে না, ছোট কিংবা বড়। কিন্তু সমস্যা একটা দাঁড়িয়েই গেল। আমার বক্তব্য এক্সপাঞ্চ করেছে, সেটা তো শুনেছ।’ চাওসিকো বলল।

‘হ্যাঁ, শুনেছি। আল্লাহ করুন ঘটনা যেন এখানেই শেষ হয়ে যায়।’ বলল আনা আরিয়া।

‘কি আর হবে। আমি কিন্তু খুব খুশি। এখন মনে হচ্ছে আনা আমার তোমার এখানে আসা সার্থক হয়েছে। সত্যিকার যিশু খ্রিস্ট (আ.)-কে আমি তুলে ধরতে পেরেছি।’ চাওসিকো বলল।

‘আলহামদুলিল্লাহ। আমার খুব খুশি লাগছে চাওসিকো। আমি প্রার্থনা করি, আল্লাহও খুশি হোন।

কথা শেষ করে আনা আরিয়া আবার বলে উঠল, ‘এখন উঠতে হয় চাওসিকো। ঘরে ঢুকার অনুমতি তুমি আনলিমিটেড সময়ের জন্যে দাওনি।’

‘আমাকে দোষ দিচ্ছ কেন? অনুমতি তো আল্লাহ দেননি।’ চাওসিকো বলল।

‘আল্লাহ সর্বদোষ মুক্ত। তিনি যা করেন, বলেন, তা মানুষের, সৃষ্টির মঙ্গলের জন্যেই। আর দোষ করা মানুষের একটা ফিতরাত। বলল আনা আরিয়া।

‘আলহামদুলিল্লাহ। তুমি অনেক কিছু শিখে ফেলেছ আনা।’ চাওসিকো বলল।

‘শিখব না? কে আমার পাশে আছেন দেখতে হবে তো! সে জন্যেই তো মাঝে মাঝে স্যার বলে ফেলি।’ বলল আনা আরিয়া।

‘আমাকে স্যার বলে স্যারদের বদনাম করো না।’ চাওসিকো বলল।

‘বদনাম হবে কেন? তুমি তো একান্ত আমারই স্যার, আর কারও তো নও।’ বলল আনা আরিয়া।

বলেই দৌড় দিয়ে বেরিয়ে গেল আনা আরিয়া ঘর থেকে।

.

রাত ৯টা। নিরক্ষীয় গিনীর প্রতিনিধি দলের ডেপুটি লিডার আইমান এলিজাবেথ এবং মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি দলের নেতা ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত আনা আরিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

দরজার দাঁড়িয়ে ওদের বিদায় দিয়ে দরজা বন্ধ করে কক্ষে ফিরে এসে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল আনা আরিয়া। তার মুখ শুকনো। তার মুখ জুড়ে উদ্বেগের একটা কালোছায়া। তার মনে নানা চিন্তার আকুলী-বিকুলী। এখানকার কর্তৃপক্ষ চাওসিকোর ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সিদ্ধান্তটি কি হতে পারে? সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যে তারা পরিকল্পনাও করেছে। পরিকল্পনাটি আজ রাত থেকে কালকে ইয়ারপোর্টে পৌঁছা এবং বুরুন্ডি ইয়ারপোর্টে নামা থেকে বাড়িতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মনটি তার আনচান করে উঠল। আজ রাতে তাদের কি পরিকল্পনা রয়েছে? তারা কি চাওসিকোকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করতে পারে? কেঁপে উঠল আনা আরিয়ার বুক।

ভাবনার কোনো কুল কিনারা নেই আনা আরিয়ার। ভেবেই চলল সে।

ভাবনা তাকে অস্থিরই করে তুলল। চাওসিকো কি করছে? কিছু কি ভাবছে? কিছু কি আঁচ করেছে? আর বসে থাকতে পারল না আনা আরিয়া। উঠল। দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। বাইরে আলো ঝলমল করিডোর। সবে রাত দশটা। কোনো ঘরেই কেউ ঘুমায়নি নিশ্চয়।

এ ব্লকের যে লাউঞ্জ তার একটু দূরে লিফট-এর-পাশে সিকিউরিটি সেন্টার। এই ব্লকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব তাদের।

আনা আরিয়া চাওসিকোর কক্ষের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একটু অপেক্ষা করল। তারপর নক করল দরজায়।

নক হওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল।

খুলে দিয়ে এক পাশে সরে দাঁড়িয়েছে চাওসিকো। বলল, ‘ভেতরে এসো।

‘আসছি, কিন্তু বলো, এত তাড়াতাড়ি দরজা খুললে কেন? জিজ্ঞাসা করলে না কেন, কে নক করছে।’ আনা আরিয়া বলল।

‘আমি জানতাম তুমি আসবে।’ বলল চাওসিকো।

‘কেমন করে জানতে?’ আনা আরিয়া বলল।

‘গ্যাবনের জিন মেরী এসেছিল কিছু কথা জানাবার জন্যে।’ বলল চাওসিকো।

ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল আনা আরিয়া। নব চেপে দরজা লাগিয়ে দিল। দ্রুত গিয়ে বসল সোফায়। বলল, ‘দরজার দিক থেকে সরে এসো। চাওসিকো গিয়ে তার চেয়ারে বসল। তার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি বলল, ‘তুমি সিরিয়াস কিছু বলবে মনে হয়?’

‘জিন মেরী কি জন্যে এসেছিল, কি বলেছিল, যার জন্যে তুমি মনে করেছ যে আমি আসব?’ জিজ্ঞাসা আনা আরিয়ার।

একটু গাম্ভীর্য নামল চাওসিকোর চোখে-মুখে। বলল, ‘জিন মেরী আমাকে কয়েকটা কথা জানিয়েছে, এক. এখানকার খ্রিস্টান শীর্ষ কর্তৃপক্ষ ভীষণ ক্ষেপেছে আমার উপর, দুই. আমাকে অনুপ্রবেশকারী মনে করছে এবং তিন. দেশে ফেরা পর্যন্ত আমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে।’ মুহূর্তের জন্যে সে থামল। বলল সে আবার, ‘তৎক্ষণাতই আমি ভাবলাম, এ সব কথা তোমার কাছেও নিশ্চয় পৌঁছেছে। তাই তুমিও আসবে এখানে।

‘ধন্যবাদ চাওসিকো। আমার কাছে এসেছিল আইমান এলিজাবেথ এবং ব্রুনো ফ্রান্সিস মাহামাত। তারা আমাকে এসব কথাই জানিয়েছে। বলেছে তারা, তুমি আজ রাত থেকে বাড়িতে না পৌঁছা পর্যন্ত নিরাপদ নও। আনা আরিয়া বলল।

আনা আরিয়া চেপে গেল চাওসিকোকে কিডন্যাপ করা ও হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা। ‘কিডন্যাপ’, ‘হত্যা’-এসব শব্দ এতোই ভয়াবহ যে তা উচ্চারণ করতেও ভয় পেল আনা আরিয়া।

‘আল্লাহ ভরসা আনা, চিন্তা করো না।’ বলল চাওসিকো।

‘আল্লাহই আমাদের ভরসা চাওসিকো। কিন্তু তোমাকে আমাকে সাবধান হতে হবে। আল্লাহ ভরসার এটা একটা শর্ত আল্লাহর তরফ থেকেই।’ আনা আরিয়া বলল।

‘আমি তোমার সাথে একমত আনা। কিন্তু সাবধানতার অর্থ ভীতু হয়ে পড়া নয়। আল্লাহ ছাড়া ভয়ের যোগ্য আর কেউ নেই, আর কিছু নেই।’ বলল চাওসিকো।

‘আমিও তোমার সাথে একমত।’ আনা আরিয়া বলল।

‘ধন্যবাদ আনা।’ বলল চাওসিকো।

‘ওয়েলকাম। শোনো কাল দুপুর একটায় আমাদের প্লেন। প্লেন বুজুমবুরা ইয়ারপোর্টে পৌঁছবে রাত ৯টায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, তোমার বাড়িতেও নয়, বুজুমবুরায় অন্য কোনো বাসায় তোমাকে উঠতে হবে। আজ রাত থেকে কাল রাতে তোমার আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছা পর্যন্ত তোমাকে খুব সাবধান থাকতে হবে।’ আনা আরিয়া বলল।

‘অবশ্যই আনা। বুজুমবুরায় আত্মীয়ের বাসায় উঠার কথা বলেছ, এটা খুবই যৌক্তিক পরামর্শ। এটা আমার মাথায় আসেনি। ধন্যবাদ আনা।’ বলল চাওসিকো।

‘আর শোন, দরজায় শুধু লক নয়, সিটকিনি লকটাও অন করে রাখবে। কেউ নক করলে কিংবা ধাক্কাধাক্কি করলে তুমি দরজা খুলবে না, আমি না বলা পর্যন্ত। এ ব্যাপারে আমাকে পাকা কথা দিতে হবে যে, তুমি এটা মেনে চলবে। পাকা কথা না পেলে এই ঘর থেকে আমি বেরুব না, এই সোফায় বসে আমি রাত কাটাব।’ আনা আরিয়া বলল।

‘এই বেআইনি কাজ তুমি করবে?’ জিজ্ঞাসা চাওসিকোর।

‘করব। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা এবং আহকামুল হাকেমীন। তিনি জানেন আমি এটা কেন করছি।’ আনা আরিয়া বলল।

‘ধন্যবাদ আনা। তুমি যা বলেছ তাই হবে। এটাই আমার পাকা কথা।’ বলল চাওসিকো।

‘ধন্যবাদ। আরেকটা কথা, কাল ৯টায় ইয়ারপোর্টে যাওয়া ছাড়া সকাল থেকে আমরা ঘর থেকে বেরুব না। আমাদের প্রতিনিধিদলের সাথে একই গাড়িতে আমরা ইয়ারপোর্টে যাব। আমাদের প্রতিনিধিদলের সবাই সতর্ক আছে। সব ব্যাপারে সবাই আমাদের সাহায্য করবে।’ আনা আরিয়া বলল।

‘ঠিক আছে, আনা।’ বলল চাওসিকো।

‘চিন্তা করো না, ঘুমিয়ে পড়। আল্লাহ ভরসা।’

বলে উঠে দাঁড়াল আনা আরিয়া।

‘তুমি আমাকে ঘুমাতে বলে তুমি যেন জেগে থেকো না। বলল চাওসিকো।

‘আল্লাহ জানেন।’ আনা আরিয়া বলল।

‘আল্লাহ সর্বজ্ঞ, তিনি সব জানেন। কিন্তু তুমি আমার কথার জবাব দিলে না।’ বলল চাওসিকো।

‘সব কথার জবাব হয় না, চাইতে নেই। সালাম আলাইকুম।’

বলে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আনা আরিয়া। বাইরে থেকে টেনে দরজা বন্ধ করে দিল।

.

ফাদার শিরাক শেরম্যান তার সুদৃশ্য চেয়ারে বসল। মি. শিরাক শেরম্যান ভ্যাটিক্যানের যুব কংগ্রেস আয়োজনের নিরাপত্তা প্রধান। চাওসিকোর কেসটা ডিল করার দায়িত্ব তার উপরই পড়েছিল।

টেবিল থেকে একটা ফাইল টেনে নিতে যাচ্ছিল মি. শেরমান এ সময় তার ইন্টারকমের কলার সিগনাল সংকেত দিতে শুরু করল।

মি. শেরম্যান ইন্টারকমের স্পিকার বাটন অন করল।

‘গুডমর্নিং মি. শেরম্যান।’ ইন্টারকমে ভেসে আসা কণ্ঠটি ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক প্রধান কার্ডিনাল ফিলিপ জোন্সের। পোপসহ কয়েকজন ছাড়া তিনিই ভ্যাটিকানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি।

ফাদার শিরাক শেরম্যান তার চেয়ারে একটু নড়ে-চড়ে বসল। বলল, ‘গুড মনিং মাই লর্ড।

‘আমাদের রাতটা কিন্তু গুড ছিল না মি. শেরম্যান। নাবালক একজন ছোকরার বিরুদ্ধে আমাদের মিশন ফেল হলো কেন?’ বলল ফিলিপ জোন্স।

‘এক্সিলেন্সি, মাইলর্ড রাতেই প্রাথমিক রিপোর্ট শুনেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট এসে পৌঁছবে আমার অফিসে। আমি আপনাকে পূর্ণ রিপোর্ট পাঠাচ্ছি এক্সিলেন্সি কিছুক্ষণের মধ্যেই। বলল শিরাক শেরম্যান।

‘তা পাঠান। কিন্তু যতটুকু আপনি জানেন, তা বলুন।’ বলল ওপার থেকে ফিলিপ জোন্স।

‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি, বলছি আমি।’

বলে শিরাক শেরম্যান বলা শুরু করল: ‘এক্সিলেন্সি, আপনি জানেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল, চাওসিকোর দরজার লুকিং হোল দিয়ে সুক্ষ টিউব ঢুকিয়ে সংজ্ঞালোপকারী গ্যাস ফায়ার করে চাওসিকোর সংজ্ঞা লোপ করা। পরে তার দরজা খুলে তার ঘরে প্রবেশ করে তাকে নিয়ে আসা। সে অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, এটাই ছিল আমাদের কৌশল তাকে কিডন্যাপ করার। কিন্তু সব বানচাল করে দিয়েছে চাওসিকোর পাশের ঘরের মেয়েটি, আনা আরিয়া। সে সারারাত চাওসিকোর দরজা পাহারা দিয়েছে। যুব কংগ্রেস আয়োজনের একজন কর্মকর্তাকে আমাদের লোকরা পাঠিয়েছিল তার কাছে। সে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘ম্যাডাম কোনো অসুবিধা, আপনি অসুস্থ নন তো? এই ঠাণ্ডার মধ্যে আপনি বাইরে কেন? মেয়েটি বলেছিল, ‘আশপাশের কোনো কক্ষে নাকি আজ রাতে ডাকাত পড়বে। আমি সেটা দেখার জন্যে অপেক্ষা করছি। আশপাশের সবাইকে বলে রেখেছি, তারা যেন সজাগ থাকে। গেটের পুলিশ বক্সও এদিকে নজর রেখেছে।’ মেয়েটা খুব সাহসী। আমাদের লোকরা আশংকা করেছে তার কাছে রিভলভারও আছে। আমরা বুঝলাম ব্যাপারটা কোনোভাবে জানাজানি হয়ে গেছে। কিডন্যাপের কাজটা সবার অলক্ষে সারা যাবে না। আমাদের বলা হয়েছিল যাতে কোনোভাবেই ব্যাপারটা জানাজানি না হয়, এমনভাবে কাজটা সারার জন্যে। আমাদের লোকরা ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সে পরিবেশ পায়নি। সবাই জেগে উঠে বাইরে না আসা পর্যন্ত মেয়েটা চাওসিকোর ঘরের সামনে অপেক্ষা করেছে। সাংঘাতিক মেয়ে মাইলৰ্ড। আমাদের মিশন তার কারণেই বানচাল হয়েছে, মাইলর্ড।’

‘মেয়েটা খুব বড় পরিচয়ের মেয়ে। গোটা মধ্য আফ্রিকার প্রভাবশালী খ্রিস্টান নেতা এবং ‘পোপ ভিক্টর ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল আফ্রিকা’-এর ভাইস চ্যান্সেলর ফাদার স্টিফেন ফোবিয়ানের মেয়ে। যাক, আমাদের…।’

ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক প্রধান ফিলিপ জোন্সের কথার মাঝখানেই ফাদার শিরাক শেরম্যান বলে উঠল, তাহলে তো মাইলৰ্ড মেয়েটা আমাদের ঘনিষ্ঠ। আমাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারল কেমন করে?’

‘সে অনেক কথা। থাক সে সব। গতকাল বিকেলে আমি ফাদার স্টিফেন ফোবিয়ানের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন, তার মেয়ের অজ্ঞাতে কিডন্যাপের কাজটা সারতে। সেটা যখন সম্ভব ছিল না। তখন মিশনটা নিয়ে না আগানো ঠিক হয়েছে। আমি এখন বুরুন্ডিতে সবার সাথে কথা বলব, ব্ল্যাক ক্রস পরিকল্পনার শেষাংশ নিয়ে কি চিন্তা করছে দেখব।’ বলল ফিলিপ জোন্স।

‘পরিকল্পনার শেষাংশটা কি, জানতে পারি এক্সিলেন্সি?’ শিরাক শেরম্যান বলল।

‘সেটা হলো, ইতালিতে যদি কিছু করা সম্ভব না হয়, তাহলে চাওসিকো বুরুন্ডি পৌঁছার সাথে সাথেই তার উপর শেষ আঘাত হানা হবে। তাকে কিডন্যাপ করতে না পারলে, তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

বুরুন্ডি কি এত বড় কাজ পারবে, হঠাৎ করে? ৯টায় তো ওদের প্লেন।’ বলল শিরাক শেরম্যান।

‘বুরুন্ডি করবে না, করবে ব্ল্যাক ক্রস। হঠাৎ করে হচ্ছে কোথায়? গতকাল ওদেরকে বিস্তারিত ব্রিফ করা হয়েছে। তারা রেডি, একথা আমাদের জানিয়েছে। এখন আবার আলোচনা করব।’ ফিলিপ জোন্স বলল।

প্রভু খ্রিস্ট আমাদের সহায় হোন। তাঁর সম্মান রক্ষার জন্যেই তো আমাদের এই কাজ। বলল শিরাক শেরম্যান।

তথাস্তু মি. শেরম্যান, রাখলাম। বাই।’ কথা শেষ করল ফিলিপ জোন্স। ‘বাই এক্সেলেন্সি।’ শিরাক শেরম্যান কথা শেষ করল।

.

ফাদার স্টিফেন ফোবিয়ান টেলিফোনে কথা বলছিল। তার রাগান্বিত উত্তেজিত চেহারা।

তার স্ত্রী শিলা, আনা আরিয়ার মা পাশে বসে আছে। তার মুখ আষাঢ়ে মেঘের মতো পানি ভরা। দু’গণ্ডে তার অশ্রুর দাগ। বুঝা যাচ্ছে, এর আগে সে কেঁদেছে।

ফাদার স্টিফেন ফোবিয়ান তার দু’কান থেকে ইয়ার ফোন সরিয়ে মোবাইল সমেত টিপয়ের উপর রেখে দিয়ে তাকাল স্ত্রী শিলার দিকে। তার মুখ গম্ভীর। তাতে উদ্বেগের কিছু চিহ্ন। বলল, তুমি কাল থেকে বলছ, তোমার মেয়েকে যেন কোনো বিপদে না জড়াই। এর আগে চাওসিকোর ব্যাপারেও একই কথা বলেছ তুমি। কিন্তু দেখেছ তো, সে নিজে ডুবেছে, তার সাথে আমরা যারা তাকে প্রতিনিধিদলে মনোনীত করেছি, তাকে প্রতিনিধিদলের নেতা বানিয়েছি, তাদেরকেও সে ডুবিয়েছে। খ্রিস্টের জীবনী খ্রিস্টানদের মতো করে বলা যেত না? মুসলমানরা যা মনে করে, বিশ্বাস করে সেটা বলতে গেল কেন? এখন তার গ্রেভ কনসিকুয়েন্স তাকে ভোগ করতেই হবে। মাঝখানে আমাদের মেয়েটাকেও সে এর সাথে জড়িয়ে ফেলেছে। এখন মুখ রাখার আমাদের জায়গা নেই। আমি তাকে বিপদে জড়াব কেন? সেই তো বিপদ ডেকে আনছে। জান…।

শীলা, আনা আরিয়ার মা, স্টিফেন, ফোবিয়ানের কথায় বাধা দিয়ে বলে উঠল, ‘কি করেছে আমার মা? আমার মা আনা কোনো অন্যায় করতে পারে না।’

‘কি করেছে, শুনবে? গত সারা রাত সে চাওসিকোর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। পাহারা দিয়েছে তার দরজা সকাল পর্যন্ত। যে কারণে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ চাওকিসোকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এটাও আরেকটা ব্লেম আমার উপর।’ বলল স্টিফেন ফোবিয়ান।

‘অন্যায় কি করেছে আমার মেয়ে। তোমরা নির্দোষ, নিরপরাধ একটা ছেলেকে কিডন্যাপ করবে, হত্যা করার চেষ্টা করবে, আমার মেয়ে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। তার দিক থেকে তো সে অন্যায় কিছু করেনি।’ বলল শীলা, আনা আরিয়ার মা, স্টিফেন ফোবিয়ানের স্ত্রী।.

‘চাওসিকোকে নির্দোষ, নিরপরাধ বলছ? ভরা যুব কংগ্রেসের সম্মেলনে, হাজারও দর্শকের সামনে সে ঈশ্বরপুত্র প্রভু যিশু খ্রিস্টকে ডুবিয়ে দিয়েছে।’ বলল স্টিফেন ফোবিয়ান।

‘চাওসিকো তো খ্রিস্টান যুব প্রতিনিধিদলে যেতে চায়নি। সে পরিষ্কার বলেছে সে মুসলিম, খ্রিস্টান নয়। সে ঐ প্রতিনিধিদলের একজন সদস্যও হতে পারে না, নেতা হওয়া দূরের কথা। কিন্তু তোমরা গোটা বিষয় তার উপর চাপিয়ে দিয়েছো। মুসলিম হিসেবে যা করার, সেটাই তো সে করেছে।’ বলল শীলা, আনা আরিয়ার মা।

‘তুমি সোজা হিসাবের কথা বলছ শীলা, এ হিসাব সবক্ষেত্রে চলে না। সে যখন খ্রিস্টান যুব প্রতিনিধিদলের নেতা হিসাবে ভ্যাটিকানে গেলই, তখন একটু সমঝোতায় তার আসা উচিত ছিল। খ্রিস্টান প্রফেটকে খ্রিস্টানদের মতো করে পেশ করায় কি ক্ষতি ছিল তার। তাকে লর্ড জেসাস, ঈশ্বরপুত্র বললে কি আর এমন হতো। সে বুদ্ধিমান ছেলে। বুদ্ধিমান ছেলের এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য শিলা। তার কেচ্ছা খতম। এখন দেখ, নিজের মেয়েকে বাঁচাবে কি করে! সে চাওসিকোর দিকে কতটা অগ্রসর হয়েছে আমি জানি না। বলল স্টিফেন ফোবিয়ান।

‘আমি জানি না, আমি বলতে পারবো না। তোমরাই তো আমার মেয়েকে তার দিকে ঠেলে দিয়েছ।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ল আনা আরিয়ার মা শীলা, স্টিফেন ফোবিয়ানের স্ত্রী।

.

ভ্যাটিকান এয়ার পোর্টের ডিপারচার লাউঞ্জ মধ্য আফ্রিকার যুব কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সবাই লাউঞ্জে বসে। সবাই এক সংগে ফ্লাই করছে এই প্লেনে। কায়রো বিমানবন্দরে গিয়ে রুট বণ্টন হবে তাদের।

চাওসিকো এক সোফায় বসে। তার বাম পাশে আনা আরিয়া এবং ডানপাশে জিন মেরী, গ্যাবন প্রতিনিধিদলের নেত্রী।

চাওসিকো, আনা আরিয়া দু’জনেই সে দিনের খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর দেখা গেল আনা আরিয়ার হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল, আর আনা আরিয়া সোফায় হেলান দিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন।

চাওসিকো আনা আরিয়ার হাতের কাগজটা গুছিলে সামনে টিপয়ে রেখে দিল।

সে সোজা হয়ে বসতেই জিন মেরী ঝুঁকে এলো তার দিকে। বলল, ‘মি. চাওসিকো আপনি কি জানেন আজ সারারাত আনা আরিয়া ঘুমায়নি?’

‘না জানি না তো!’ বলল চাওসিকো।

‘আপনি কি জানেন, সে সারা রাত জেগে আপনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আপনাকে পাহারা দিয়েছে?’ জিন মেরী বলল।

‘আমার দরজায় দাঁড়িয়ে সারারাত পাহারা দিয়েছে! আমি কিছুই জানি না।’ চাওসিকোর চোখে-মুখে অপার বিস্ময়–

ভাবনার ছায়া চাওসিকোর চোখে-মুখে। তাকাল চাওসিকো জিন মেরীর দিকে। বলল, ‘এই জন্যেই সকালে আমি দেখেছি তাকে উষ্কখুষ্ক, চোখ লাল। এখনও তার দিকে চেয়ে দেখুন, গোসল ও ভালো ব্রেকফাস্টের পরেও তার চোখে-মুখে ক্লান্তি ও ডিপ্রেস্ট ভাব।’

‘সকালে বিভিন্ন ঘরে সবাই ঘুম থেকে উঠলে সে শুতে গেছে তার ঘরে। সারারাত সে ছিল দু’পায়ের উপর দাঁড়িয়ে।’ বলল জিন মেরী।

‘স্যরি, আমি কিছুই জানতে পারিনি। স্যরি।’ চাওসিকো বলল। তার কণ্ঠ ভারি।

‘দুঃখিত হবেন না মি. চাওসিকো। আপনি বড় ভাগ্যবান। এমন মনের মেয়ে খুব কম জন্মায়। বলল জিন মেরী।

‘ঠিক মিস জিন মেরী।’ আবেগপূর্ণ কণ্ঠে চাওসিকো বলল। দু’ফোঁটা বিচ্ছিন্ন অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চাওসিকোর চোখ থেকে।

হঠাৎ পাশ থেকে আনা আরিয়ার কণ্ঠ, ‘লাগানো-ভাঙানো হচ্ছে মেরী, এটা ভালো নয়। চাওসিকোর দু’ফোঁটা অশ্রুর অনেক দাম।’.

চাওসিকো ও জিন মেরী দু’জনেই তাকাল আনা আরিয়ার দিকে।

‘ভাঙাইনি আনা আরিয়া, লাগিয়েছি বলতে পারো। তুমি যেটা গোপন করেছ, আমি সেটা বলে দিয়েছি। আর তাতেই দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরেছে চাওসিকোর চোখ থেকে। এ অশ্রুর মূল্য তো অনেক হবেই। কারণ চাওসিকোর এ অশ্রু তোমার জন্যে। বলল জিন মেরী।

লাউঞ্জ মাইক্রোফোনে ঘোষণা ভেসে এলো, ‘ভ্যাটিকান-কায়রো এয়ার আইতালিয়া ফ্লাইটে বোর্ডিং শুরু হয়েছে।

আনা আরিয়ার আর মুখ খোলা হলো না।

সবাই উঠে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং-এর জন্যে গোছগাছ শুরু করে দিল।

আনা আরিয়া চাওসিকোর কানের কাছে ফিস ফিসিয়ে বলল, ‘বোর্ডিং লাইনে তুমি আমার সামনে থাকবে।’

‘তোমার নির্দেশ নিশ্চয় পালিত হবে। তুমি তো এখন আমার গাইড, সিকিউরিটি, সব। বলল চাওসিকো। মুখে হাসি চাওসিকোর।

‘নির্দেশ নয়, অনুরোধ। আর গাইড, সিকিউরিটি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না। আমি যা করছি, সেটা মহান আল্লাহই বলে দিচ্ছেন আমাকে।’ আনা আরিয়া বলল।

‘আল্লাহ তোমাকে বলে দিচ্ছেন?’ বিস্ময়ভরা জিজ্ঞাসা চাওসিকোর

‘কেন তুমিই তো বলেছ বিবেক মানুষের জন্যে আল্লাহর দেয়া গাইড। এখানে আল্লাহর তরফ থেকে মানুষের জন্যে প্রেরণা, ইলহামও আসে। আর তুমি বলার পর থেকে আমি সব সময় আল্লাহর সাথে কথা বলি। জান, তাতে মনের টেনশন দূর হয়ে যায়, মনে প্রশান্তি আসে।’ বলল আনা আরিয়া।

‘ধন্যবাদ আনা। তুমি আল্লাহকে জানা, ইসলামকে বোঝার ক্ষেত্রে দ্রুত এগোচ্ছ। আল্লাহ তোমাকে আরও তৌফিক দিন। চাওসিকে বলল।

‘আমরা মেয়েরা তো দুর্বল, আল্লাহর দয়া ও সাহায্যই তো আমাদের সম্বল।’ বলল আনা আরিয়া। আবেগে ভারি হয়ে ওঠে তার কণ্ঠ।

গোছগাছ হয়ে গিয়েছিল। সবাই চলতে শুরু করেছে।

‘এবার চলো আমরাও এগোই। তুমি আগে ঢল।’ বলল আনা আরিয়া। কণ্ঠকে তার স্বাভাবিক করার চেষ্টা।

চলতে শুরু করল চাওসিকো।

পেছনে চলছে আনা আরিয়া।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *