বাল্মীকিপ্রতিভা – ৪

চতুর্থ দৃশ্য

বনদেবীগণের প্রবেশ

রিম্‌ ঝিম্‌ ঘন ঘন রে বরষে।
গগনে ঘনঘটা, শিহরে তরুলতা,
ময়ূর ময়ূরী নাচিছে হরষে।
  দিশি দিশি সচকিত, দামিনী চমকিত,
চমকি উঠিছে হরিণী তরাসে!

[প্রস্থান

বাল্মীকির প্রবেশ

কোথায় জুড়াতে আছে ঠাঁই–
কেন প্রাণ কেন কাঁদে রে।
           যাই দেখি শিকারেতে, রহিব আমোদে মেতে,
ভুলি সব জ্বালা, বনে বনে ছুটিয়ে–
কেন প্রাণ কেন কাঁদে রে।
আপনা ভুলিতে চাই, ভুলিব কেমনে,
কেমনে যাবে বেদনা।
দলবল লয়ে মাতিব।
              কেন প্রাণ কেন কাঁদে রে।
শৃঙ্গধ্বনিপূর্বক দস্যুগণকে আহ্বান

দস্যুগণের প্রবেশ

দস্যু।

                 কেন রাজা ডাকিস কেন,এসেছি সবে।
                 বুঝি আবার শ্যামা মায়ের পুজো হবে।

বাল্মীকি।

            শিকারে হবে যেতে,আয় রে সাথে।

প্রথম দস্যু।

          ওরে,রাজা কী বলছে শোন্‌।

সকলে।

              শিকারে চল তবে।
                 সবারে আন্‌ ডেকে যত দলবল সবে।

[ বাল্মীকির প্রস্থান

                 এই বেলা সবে মিলে চল হো,চল হো
                 ছুটে আয়,শিকারে কে রে যাবি আয়,
                        এমন রজনী বহে যায় যে!
                 ধনুর্বাণ লয়ে হাতে,আয় আয় আয় আয়।
                 বাজা শিঙ্গা ঘন ঘন,শব্দে কাঁপিবে বন,
                 আকাশ ফেটে যাবে,চমকিবে পশু পাখি সবে,
                 ছুটে যাবে কাননে কাননে,চারি দিকে ঘিরে
                        যাব পিছে পিছে, হো হো হো হো!

বাল্মীকির প্রবেশ

বাল্মীকি।

            গহনে গহনে যা রে তোরা,নিশি বহে যায় যে।
                 তন্ন তন্ন করি অরণ্য,করী বরাহ খোঁজ গে,
                                              এই বেলা যা রে।
                 নিশাচর পশু সবে,এখনি বাহির হবে,
                 ধনুর্বাণ নে রে হাতে, চল্‌ ত্বরা চল্‌।
                 জ্বালায়ে মশাল-আলো,এই বেলা আয় রে।

[ প্রস্থান

প্রথম দস্যু।

         চল্‌ চল্‌ ভাই,ত্বরা করে মোরা আগে যাই।

দ্বিতীয় দস্যু।

        প্রাণপণ খোঁজ্‌ এ বন সে বন,
                 চল্‌ মোরা ক-জন ওদিকে যাই।

প্রথম দস্যু।

          না না ভাই, কাজ নাই
                 হোথা কিছু নাই, কিছু নাই,
                 ওই ঝোপে যদি কিছু পাই।

দ্বিতীয় দস্যু।

         বরা বরা–

প্রথম দস্যু।

          আরে দাঁড়া দাঁড়া, অত ব্যস্ত হলে ফসকাবে শিকার,
                 চুপি চুপি আয়,চুপি চুপি আয় অশথতলায়,
                         এবার ঠিকঠাক হয়ে সব থাক্‌,
                 সাবধান ধর্‌ বাণ, সাবধান ছাড়্‌ বাণ,
                 গেল গেল, ঐ ঐ, পালায় পালায়,চল্‌ চল্‌।
                         ছোট্‌ রে পিছে আয় রে ত্বরা যাই।
বনদেবীগণের প্রবেশ

কে এল আজি এ ঘোর নিশীথে,
সাধের কাননে শান্তি নাশিতে।
মত্ত করী যত পদ্মবন দলে
বিমল সরোবর মন্থিয়া,
ঘুমন্ত বিহগে কেন বধে রে
সঘনে খর শর সন্ধিয়া।
তরাসে চমকিয়ে হরিণ-হরিণী
স্খলিত চরণে ছুটিছে।
স্খলিত চরণে ছুটিছে কাননে,
করুণ নয়নে চাহিছে–
আকুল সরসী, সারস-সারসী
শর-বনে পশি কাঁদিছে।
তিমির দিগ্‌ ভরি ঘোর যামিনী
বিপদ ঘন ছায়া ছাইয়া–
তরাসে প্রাণ ওঠে কাঁপিয়া।
প্রথম দস্যুর প্রবেশ

প্রথম দস্যু।

          প্রাণ নিয়ে ত সট্‌কেছি রে করবি এখন কী।
                 ওরে বরা করবি এখন কী।
                 বাবা রে,আমি চুপ করে এই কচুবনে লুকিয়ে থাকি।
                 এই মরদের মুরদখানা,দেখেও কি রে ভড়কালি না,
                 বাহবা শাবাশ তোরে, শাবাশ রে তোর ভরসা দেখি।
খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে আর-একজন দস্যুর প্রবেশ

অন্য দস্যু।

           বলব কী আর বলব খুড়ো– উঁ উঁ।
                 আমার যা হয়েছে বলি কার কাছে–
                 একটা বুড়ো ছাগল তেড়ে এসে মেরেছে ঢুঁ।

প্রথম দস্যু।

          তখন যে ভারি ছিল জারিজুরি,
                 এখন কেন করছ বাপু উঁ উঁ উঁ–
                 কোন্‌খানে লেগেছে বাবা,দিই একটু ফুঁ।
দস্যুগণের প্রবেশ

দস্যুগণ।

             সর্দার মহাশয় দেরি না সয়,
                 তোমার আশায় সবাই বসে।
                 শিকারেতে হবে যেতে,
                 মিহি কোমর বাঁধো কষে।
                 বনবাদাড় সব ঘেঁটে ঘুঁটে,
                 আমরা মরব খেটে খুটে,
                 তুমি কেবল লুটে পুটে
                 পেট পোরাবে ঠেসে ঠুসে।

প্রথম দস্যু।

          কাজ কী খেয়ে তোফা আছি,
                 আমায় কেউ না খেলেই বাঁচি,
                 শিকার করতে যায় কে মরতে,
                 ঢুঁসিয়ে দেবে বরা মোষে।
                 ঢুঁ খেয়ে তো পেট ভরে না–
                 সাধের পেটটি যাবে ফেঁসে।
হাসিতে হাসিতে প্রস্থান ও শিকারের

পশ্চাৎ পশ্চাৎ পুনঃপ্রবেশ

বাল্মীকির দ্রুতপ্রবেশ

বাল্মীকি।

            রাখ্‌ রাখ্‌ ফেল্‌ ধনু ছাড়িস নে বাণ।
                 হরিণ-শাবক দুটি প্রাণভয়ে ধায় ছুটি,
                 চাহিতেছে ফিরে ফিরে করুণ নয়ান।
                 কোনো দোষ করে নি তো সুকুমার কলেবর,
                 কেমনে কোমল দেহে বিঁধিবি কঠিন শর।
                 থাক্‌ থাক্‌ ওরে থাক্‌,এ দারুণ খেলা রাখ্‌,
                 আজ হতে বিসর্জিনু এ ছার ধনুক বাণ।

[ প্রস্থান

দস্যুগণের প্রবেশ

দস্যুগণ।

             আর না আর না,এখানে আর না,
                 আয় রে সকলে চলিয়া যাই।
                 ধনুক বাণ ফেলেছে রাজা,
                 এখানে কেমনে থাকব ভাই!
                           চল্‌ চল্‌ চল্‌ এখনি যাই।
বাল্মীকির প্রবেশ

দস্যুগণ।

             তোর দশা, রাজা, ভালো তো নয়,
                 রক্তপাতে পাস রে ভয়,
                            লাজে মোরা মরে যাই।
                 পাখিটি মারিলে কাঁদিয়া খুন,
                 না জানি কে তোরে করিল গুণ,
                             হেন কভু দেখি নাই।

[ দস্যুগণের প্রস্থান

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *