প্রথম দৃশ্য
অরণ্য
বনদেবীগণ
সহে না সহে না কাঁদে পরাণ।
সাধের অরণ্য হল শ্মশান।
দস্যুদলে আসি শান্তি করে নাশ,
ত্রাসে সকল দিশ কম্পমান।
আকুল কানন, কাঁদে সমীরণ,
চকিত মৃগ, পাখি গাহে না গান।
শ্যামল তৃণদল, শোণিতে ভাসিল,
কাতর রোদন-রবে ফাটে পাষাণ।
দেবী দুর্গে, চাহো, ত্রাহি এ বনে,
রাখো অধীনী জনে, করো শান্তি দান।
[প্রস্থান
প্রথম দস্যুর প্রবেশ
আঃ বেঁচেছি এখন।
শর্মা ওদিকে আর নন।
গোলেমালে ফাঁকতালে পালিয়েছি কেমন।
লাঠালাঠি কাটাকাটি, ভাবতে লাগে দাঁতকপাটি,
(তাই) মানটা রেখে প্রাণটা নিয়ে সটকেছি কেমন।
আসুক তারা আসুক আগে, দুনোদুনি নেব ভাগে,
স্যান্তামিতে আমার কাছে দেখব কে কেমন।
শুধু মুখের জোরে গলার চোটে, লুট-করা ধন নেব লুটে,
শুধু দুলিয়ে ভুঁড়ি বাজিয়ে তুড়ি করব সরগরম।
লুটের দ্রব্য লইয়া দস্যুগণের প্রবেশ
প্রথম দস্যু।
আজকে তবে মিলে সবে করব লুটের ভাগ,
এ সব আনতে কত লণ্ডভণ্ড করনু যজ্ঞ-যাগ।
দ্বিতীয় দস্যু।
কাজের বেলায় উনি কোথা যে ভাগেন,
ভাগের বেলায় আসেন আগে (আরে দাদা)।
প্রথম দস্যু।
এত বড়ো আস্পর্ধা তোদের, মোরে নিয়ে এ কী হাসি-তামাশা।
এখনি মুণ্ড করিব খণ্ড খবরদার রে খবরদার।
দ্বিতীয় দস্যু।
হাঃ হাঃ, ভায়া খাপ্পা বড়ো এ কী ব্যাপার!
আজি বুঝিবা বিশ্ব করবে নস্য, এম্নি যে আকার।
তৃতীয় দস্যু।
এমনি যোদ্ধা উনি, পিঠেতেই দাগ,
তলোয়ারে মরিচা, মুখেতেই রাগ।
প্রথম দস্যু।
আর যে এ-সব সহে না প্রাণে,
নাহি কি তোদের প্রাণের মায়া?
দারুণ রাগে কাঁপিছে অঙ্গ।
কোথা রে লাঠি কোথা রে ঢাল?
সকলে।
হাঃ হাঃ,ভায়া খাপ্পা বড়ো এ কী ব্যাপার।
আজি বুঝিবা বিশ্ব করবে নস্য, এম্নি যে আকার।
বাল্মীকির প্রবেশ
সকলে।
এক ডোরে বাঁধা আছি মোরা সকলে।
না মানি বারণ,না মানি শাসন,না মানি কাহারে।
কে বা রাজা, কার রাজ্য, মোরা কী জানি?
প্রতি জনেই রাজা মোরা, বনই রাজধানী!
রাজা প্রজা,উঁচু নিচু, কিছু না গনি!
ত্রিভুবন মাঝে আমরা সকলে কাহারে না করি ভয়,
মাথার উপরে রয়েছেন কালী, সমুখে রয়েছে জয়!
প্রথম দস্যু।
(বাল্মীকির প্রতি) এখন করব কী বল্।
সকলে।
এখন করব কী বল্।
প্রথম দস্যু।
হো রাজা, হাজির রয়েছে দল।
সকলে।
বল্ রাজা,করব কী বল্,এখন করব কী বল্।
প্রথম দস্যু।
পেলে মুখেরি কথা,আনি যমেরি মাথা।
করে দিই রসাতল!
সকলে।
করে দিই রসাতল!
সকলে।
হো রাজা, হাজির রয়েছে দল,
বল্ রাজা,করব কী বল্, এখন করব কী বল্।
বাল্মীকি।
[ বাল্মীকির প্রস্থান
সকলে।
ত্রিভুবন মাঝে আমরা সকলে কাহারে না করি ভয়,
মাথার উপরে রয়েছেন কালী, সমুখে রয়েছে জয়!
তবে আয় সবে আয়,তবে আয় সবে আয়,
তবে ঢাল্ সুরা,ঢাল্ সুরা,ঢাল্ ঢাল্ ঢাল্!
দয়া মায়া কোন্ ছার,ছারখার হোক!
কে বা কাঁদে কার তরে,হাঃ হাঃ হাঃ!
তবে আন্ তলোয়ার, আন্ আন্ তলোয়ার,
তবে আন্ বরশা,আন্ আন্ দেখি ঢাল!
প্রথম দস্যু।
আগে পেটে কিছু ঢাল্,পরে পিঠে নিবি ঢাল।
হাঃ হাঃ, হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ!
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ, হাঃ হাঃ!
সকলে।
(উঠিয়া) কালী কালী কালী বলো রে আজ
বলো হো,হো হো,বলো হো,হো হো,বলো হো!
নামের জোরে সাধিব কাজ,
বলো হো,হো,বলো হো, বলো হো!
ওই ঘোর মত্ত করে নৃত্য রঙ্গ মাঝারে,
ওই লক্ষ লক্ষ যক্ষ রক্ষ ঘেরি শ্যামারে,
ওই লট্ট পট্ট কেশ,অট্ট অট্ট হাসে রে;
হাহা হাহাহা হাহাহা!
আরে বল্ রে শ্যামা মায়ের জয়,জয় জয়,
জয় জয়,জয় জয়,জয় জয়,জয় জয়,
আরে বল্ রে শ্যামা মায়ের জয়,জয় জয়,
আরে বল্ রে শ্যামা মায়ের জয়!
[ গমনোদ্যম
একটি বালিকার প্রবেশ
বালিকা।
ওই মেঘ করে বুঝি গগনে।
আঁধার ছাইল, রজনী আইল,
ঘরে ফিরে যাব কেমনে!
চরণ অবশ হায়, শ্রান্ত ক্লান্ত কায়
সারা দিবস বন ভ্রমণে।
ঘরে ফিরে যব কেমনে!
বালিকা।
এ কী এ ঘোর বন!– এনু কোথায়!
পথ যে জানি না, মোরে দেখায়ে দে না।
কী করি এ আঁধার রাতে।
কী হবে মোর হায়।
ঘন ঘোর মেঘ ছেয়েছে গগনে,
চকিত চপলা চমকে সঘনে,
একেলা বালিকা
তরাসে কাঁপে কায়।
প্রথম দস্যু।
(বালিকার প্রতি)
পথ ভুলেছিস সত্যি বটে? সিধে রাস্তা দেখতে চাস?
এমন জায়গায় পাঠিয়ে দেব, সুখে থাকবি বারো মাস।
সকলে।
হাঃ হাঃ হাঃ, হাঃ হাঃ হাঃ!
দ্বিতীয় দস্যু।
(প্রথমের প্রতি) কেমন হে ভাই!
কেমন সে ঠাঁই?
প্রথম দস্যু।
মন্দ নহে বড়ো,
এক দিন না এক দিন সবাই সেথায় হব জড়ো।
সকলে।
হাঃ হাঃ হাঃ!
তৃতীয় দস্যু।
আয় সাথে আয়, রাস্তা তোরে দেখিয়ে দিই গে তবে,
আর তা হলে রাস্তা ভুলে ঘুরতে নাহি হবে।
সকলে।
হাঃ হাঃ হাঃ!
[সকলের প্রস্থান
বনদেবীগণের প্রবেশ
মরি ও কাহার বাছা, ওকে কোথায় নিয়ে যায়।
আহা ঐ করুণ চোখে ও কাহার পানে চায়।
বাঁধা কঠিন পাশে, অঙ্গ কাঁপে ত্রাসে,
আঁখি জলে ভাসে, এ কী দশা হায়।
এ বনে কে আছে, যাব কার কাছে,
কে ওরে বাঁচায়।