বাল্মীকিপ্রতিভা – ৩

তৃতীয় দৃশ্য

অরণ্য

বাল্মীকি

বাল্মীকি।

            ব্যাকুল হয়ে বনে বনে,
                  ভ্রমি একেলা শূন্যমনে।
                  কে পুরাবে মোর কাতর প্রাণ,
                  জুড়াবে হিয়া সুধাবরিষণে।

[প্রস্থান

দস্যুগণ বালিকাকে পুর্নবার ধরিয়া আনিয়া

         এমন শিকার ছাড়ব না।
হাতের কাছে অম্‌নি এল,অম্‌নি যাবে!
        অম্‌নি যেতে দেবে কে রে।
রাজাটা খেপেছে রে,তার কথা আর মানব না।
        আজ রাতে ধুম হবে ভারি,
          নিয়ে আয় কারণ বারি,
জ্বেলে দে মশালগুলো,মনের মতন পুজো দেব–
নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে– রাজাটা খেপেছে রে,
         তার কথা আার মানব না।

প্রথম দস্যু।

         রাজা মহারাজা কে জানে,আমিই রাজাধিরাজ।
                 তুমি উজীর,কোতোয়াল তুমি,
                 ওই ছোঁড়াগুলো বরকন্দাজ।
                 যত সব কুঁড়ে আছে ঠাঁই জুড়ে
                 কাজের বেলায় বুদ্ধি যায় উড়ে।
                 পা ধোবার জল নিয়ে আয় ঝট্‌,
                 কর্‌ তোরা সব যে যার কাজ।

দ্বিতীয় দস্যু।

        আছে তোমার বিদ্যে-সাধ্যি জানা।
                 রাজত্ব করা এ কি তামাশা পেয়েছ।

প্রথম দস্যু।

          জানিস না কেটা আমি।

দ্বিতীয় দস্যু।

        ঢের ঢের জানি– ঢের ঢের জানি–

প্রথম দস্যু।

         হাসিস নে হাসিস নে মিছে,যা যা–
                 সব আপন কাজে যা যা,
                 যা আপন কাজে।

দ্বিতীয় দস্যু।

        খুব তোমার লম্বাচওড়া কথা!
            নিতান্ত দেখি তোমায় কৃতান্ত ডেকেছে!

তৃতীয় দস্যু।

        আঃ কাজ কী গোলমালে,
                 না হয় রাজাই সাজালে।
                 মরবার বেলায় মরবে ওটাই,থাকব ফাঁকতালে।

প্রথম দস্যু।

          রাম রাম হরি হরি,ওরা থাকতে আমি মরি!
                 তেমন তেমন দেখলে বাবা ঢুকব আড়ালে।

সকলে।

             ওরে চল্‌ তবে শিগ্‌গিরি,
                          আনি পূজোর সামিগ্‌গিরি।
                 কথায় কথায় রাত পোহাল,এমনি কাজের ছিরি।

[প্রস্থান

বালিকা।

             হা কী দশা হল আমার!
                 কোথা গো মা করুণাময়ী,অরণ্যে প্রাণ যায় গো!
                মুহূর্তের তরে মা গো,দেখা দাও আমারে,
                             জনমের মত বিদায়!
পূজার উপকরণ লইয়া দস্যুগণের প্রবেশ

ও কালী-প্রতিমা ঘিরিয়া নৃত্য

এত রঙ্গ শিখেছ কোথা মুণ্ডমালিনী!
তোমার নৃত্য দেখে চিত্ত কাঁপে চমকে ধরণী।
ক্ষান্ত দে মা,শান্ত হ মা,সন্তানের মিনতি।
রাঙা নয়ন দেখে নয়ন মুদি,ও মা ত্রিনয়নী।
বাল্মীকির প্রবেশ

বাল্মীকি।

            অহো আস্পর্ধা এ কী তোদের নরাধম!
                 তোদের কারেও চাহি নে আর আর না রে–
                 দূর দূর দূর,আমারে আর ছুঁস নে।
                 এ-সব কাজ আর না,এ পাপ আর না,
                 আর না আর না, ত্রাহি,সব ছাড়িনু!

প্রথম দস্যু।

          দীন হীন এ অধম আমি কিছুই জানি নে রাজা।
                 এরাই তো যত বাধালে জঞ্জাল,
                 এত করে বোঝাই বোঝে না।
                 কী করি দেখো বিচারি।

দ্বিতীয় দস্যু।

        বাঃ– এও তো বড়ো মজা, বাহবা!
                 যত কুয়ের গোড়া ওই তো,আরে বল্‌ না রে।

প্রথম দস্যু।

          দূর দূর দূর,নির্লজ্জ আর বকিস নে।

বাল্মীকি।

             তফাতে সব সরে যা। এ পাপ আর না,
                 আর না,আর না,ত্রাহি,সব ছাড়িনু।

[দস্যুগণের প্রস্থান

বাল্মীকি।

            আয় মা আমার সাথে কোনো ভয় নাহি আর।
                 কত দুঃখ পেলি বনে আহা মা আমার!
                 নয়নে ঝরিছে বারি, এ কি মা সহিতে পারি।
                 কোমল কাতর তনু কাঁপিতেছে বার বার।

[প্রস্থান

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *