দ্বিতীয় দৃশ্য
অরণ্যে কালীপ্রতিমা
বাল্মীকি স্তবে আসীন
বাল্মীকি।
রাঙাপদপদ্মযুগে প্রণমি গো ভবদারা !
আজি এ ঘোর নিশীথে পূজিব তোমারে তারা।
সুরনর থরহর– ব্রহ্মাণ্ডবিপ্লব করো ,
রণরঙ্গে মাতো , মা গো , ঘোরা উন্মাদিনী – পারা।
ঝলসিয়ে দিশি দিশি ঘুরাও তরিত – অসি ,
ছুটাও শোণিতস্রোত , ভাসাও বিপুল ধরা।
উরো কালী কপালিনী , মহাকালসীমন্তিনী ,
লহো জবাপুষ্পাঞ্জলি মহাদেবী পরাৎপরা।।
বালিকাকে লইয়া দস্যুগণের প্রবেশ
দস্যুগণ।
দেখো হে ঠাকুর , বলি এনেছি মোরা।
বড়ো সরেস পেয়েছি বলি সরেস–
এমন সরেস মছলি , রাজা , জালে না পড়ে ধরা।
দেরি কেন ঠাকুর , সেরে ফেলো ত্বরা।।
বাল্মীকি।
নিয়ে আয় কৃপাণ। রয়েছে তৃষিতা শ্যামা মা ,
শোণিত পিয়াও– যা ত্বরায়।
লোল জিহ্বা লকলকে , তড়িত খেলে চোখে ,
করিয়ে খণ্ড দিক দিগন্ত ঘোর দন্ত ভায়।।
বালিকা।
কী দোষে বাঁধিলে আমায় , আনিলে কোথায়।
পথহারা একাকিনী বনে অসহায়–
রাখো রাখো রাখো , বাঁচাও আমায়।
দয়া করো অনাথারে– কে আমার আছে–
বন্ধনে কাতরতনু মরি যে ব্যথায়।
নেপথ্যে বনদেবী।
দয়া করো অনাথারে দয় করো গো–
বন্ধনে কাতর তনু জর্জর ব্যথায়।।
বাল্মীকি।
এ কেমন হল মন আমার !
কী ভাব এ যে কিছুই বুঝিতে যে পারি নে।
পাষাণহৃদয় গলিল কেন রে !
কেন আজি আঁখিজল দেখা দিল নয়নে !
কী মায়া এ জানে গো ,
পাষাণের বাঁধ এ যে টুটিল ,
সব ভেসে গেল গো , সব ভেসে গেল গো–
মরুভূমি ডুবে গেল করুণার প্লাবনে।।
প্রথম দস্যু।
আরে , কী এত ভাবনা কিছু তো বুঝি না।
দ্বিতীয় দস্যু।
সময় বহে যায় যে।
তৃতীয় দস্যু।
কখন্ এনেছি মোরা , এখনো তো হল না।
চতুর্থ দস্যু।
এ কেমন রীতি তব বাহ্ রে।
বাল্মীকি।
না না হবে না , এ বলি হবে না–
অন্য বলির তরে যা রে যা।
প্রথম দস্যু।
অন্য বলি এ রাতে কোথা মোরা পাব !
দ্বিতীয় দস্যু।
এ কেমন কথা কও , বাহ্ রে।।
বাল্মীকি।
শোন্ তোরা শোন্ এ আদেশ ,
কৃপাণ খর্পর ফেলে দে দে।
বাঁধন কর ছিন্ন ,
মুক্ত কর এখনি রে।।
যথাদিষ্ট কৃত