ফটিকচাঁদ – অধ্যায় ১১
ওরা দু’জন এখন চিৎপুরের একটা দোকানে বসে রুটি-মাংস খাচ্ছে। ও জানে, এরকম জায়গায় এসে ও কোনওদিন খায়নি, হারুনদার সঙ্গে না এলে হয়তো কোনওদিন আসত না। হারুনদা এতক্ষণ ওকে জিজ্ঞেস করে করে সব জেনে নিয়েছে। ইস্কুল থেকে ফেরার সময় লোকগুলো কী করে ওকে রাস্তা থেকে ছিনিয়ে তুলে নিল, তাও বলেছে।
‘লাউডন স্ট্রিটে তোর বাড়িতে পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবি?’ হারুন জিজ্ঞেস করল। ‘ও তল্লাট আমার চেনা নেই।’
ও হেসে উঠল।—‘আরেব্বাস, খুব সহজ।’
‘হুঁ…’
হারুন একটু ভাবল। তারপর বলল, ‘আজ রাত করে যাবার দরকার নেই। আর তোর চেহারাটাকেও একটু ফিরিয়ে নিতে হবে। চুলটা আর একটু বড় হলে ভাল হত, কিন্তু উপায় নেই। কাল পরিষ্কার প্যান্ট-শার্ট পরে রেডি থাকবি। আমি সক্কাল সক্কাল এসে পড়ব। উপেনদাকে এখন কিছু বলার দরকার নেই। আমি পরে ম্যানেজ করব।’
ও এখনও কিছুই ভাল করে ভাবতে পারছে না। বাড়ি তো যেতেই হবে। বাবা আছে, ঠামা আছে, হরিনাথ বুড়ো চাকর আছে। হরিনাথ ওর সব কাজ করে দেয়। ও চায় না, তাও করে দেয়। ওর রাগ হয়, কিন্তু হরিনাথ বুড়ো বলে কিছু বলে না। তারপর ইস্কুল আছে, রাম খেলাওন দারোয়ান, মিস্টার শুকুল হেডমাস্টার, পি-টি মাস্টার মিঃ দত্ত, ওর ক্লাসের বন্ধুরা—অঞ্জন, প্রীতম, রুসি, প্রদ্যোত, মনমোহন। একবার সেই চাঁদপাল ঘাট থেকে স্টিমার করে বোটানিক্স-এ পিকনিক…
ওর হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল, আর তক্ষুনি সেটা হারুনদাকে না বলে পারল না।
‘আমাদের বাড়ির একতলায় একটা ঘর আছে, কেউ থাকে না হারুনদা! খালি একটা পুরনো আলমারি আর একটা পুরনো ভাঙা টেবিল রয়েছে। ওগুলো সরিয়ে দিলেই তুমি থাকতে পারবে।’
হারুন একবার আড়চোখে ওর দিকে দেখে নিল। তারপর রুটির আধখানা ছিঁড়ে নিয়ে মুখে পুরে বলল, ‘আমার বস্তির ঘরের মতো করে সাজিয়ে নিতে দেবে তোর বাবা?’
বাবার চেহারাটা মনে করে ও যে খুব ভরসা পেল, তা নয়; কিন্তু তা হলে কী হয়? মানুষ তো বদলাতে পারে! তাই ও বলল, ‘কেন দেবে না? নিশ্চয়ই দেবে।’
‘ভেরি গুড,’ বলল হারুন, ‘তা হলে বলব, তোর বাবা খাঁটি আর্টিস্ট। খলিফ হারুনের খেয়ালগুলো আর্টিস্ট ছাড়া কেউ বুঝবে না।’