1 of 3

প্রতিবেশি দেশ

প্রতিবেশিদের ভালোবাসতে হবে, তাদেরকেই সবচেয়ে আপন মানুষ হিসেবে মানতে হবে- প্রায় সব ধর্মই এমন কথা বলেছে। অতি ধার্মিক মানুষও ঈশ্বরের এই আদেশ সবসময় পালন করতে পারেনি। প্রতিবেশির সঙ্গে মনে যদি না মেলে, তবে কি ঈশ্বরের আদেশ বলেই তা মাথা পেতে বরণ করতে হবে? মনের কোনও দাম নেই?

প্রতিবেশি এমন এক জিনিস, যাদের না হলে আমাদের চলে না, আবার হলেও ঝামেলা। বিপদে আপদে তারা সহায় হয়, আবার ব্যক্তিগত বিষয় আশয়ে তাদের নাক গলানোটা সীমা ছাড়িয়ে যায়। যত যাই বলি, মানুষের তবু মানুষ প্রয়োজন। ধুধু কোনও জনমনুষ্যহীন এলাকায় কেউ কি বাস করতে চায়? মনে না মিলুক, রুচি আদর্শে যোজন দূরত্ব থাকুক, তারপরও মানুষ মানুষের আশেপাশেই বাস করে স্বস্তি পায়। প্রতিবেশি অনেক রকম, কারও সঙ্গে তুমুল ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ, আবার কারও প্রেমে কেউ দিওয়ানা। আমাদের কালে যে মেয়েটিকে বা ছেলেটিকে দেখা যেত পাশের বাড়ির জানালায় বা ছাদে, তার প্রেমে পড়ারই রেওয়াজ ছিল।

প্রতিবেশি সে যে ধর্মেই বিশ্বাসী হোক, আপাদমস্তক নাস্তিক হোক, ভিন্ন ভাষার হোক, ভিন্ন বর্ণের হোক, সে প্রতিবেশি। বুদ্ধি হলে এই বিভেদগুলো কেউ মানে না। বুদ্ধি হওয়ার আগ অবদি বিভেদ নিয়ে সহিংস হয়ে ওঠে। মনের মিল হওয়ার জন্য ভিন্ন ভাষা ভিন্ন ধর্ম ভিন্ন বর্ণ কোনও বাধা কখনই নয়। নিজের গোত্রের মানুষ যদি ভিন্ন মন মানসিকতার হয়, তবে তার সঙ্গে গোত্র বলেই মিলতে হবে, এ কথা আজ কজন মানবে! মন জিনিসটা সবার প্রথম। একে বাদ দিয়ে সম্পর্ক করতে গেলে সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না। কেউ অবশ্য আপোস করে করে সবকিছুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। মাথা নাড়ে সবার বেলায়। এরা চরিত্র ব্যক্তিত্ব সব বিসর্জন দিয়ে সহাবস্থান করবে বলেই সহাবস্থান করে। আমার আবার মনের মিল না হলে হয় না।

আমার প্রতিবেশিদের কারও সঙ্গে আমার খুব বেশি আলাপ নেই। অনেকের নাম জানি না, মুখ চিনি না। বেশির ভাগের সঙ্গেই সম্ভাষণের ঈষৎ হাসি, অথবা কী কেমন আছেন, ভালো তো? সম্পর্ক। আগ বাড়িয়ে ভাব করতে গেলে কী না কী বিপদ ঘটে কে জানে। আমাকে তো কেউ এখানে আর এখানকার মানুষ বলে ভাবে না, ভাবে বিদেশি। ভাবে মুসলমান। এই যে আপাদমস্তক ধর্মহীন মানুষ আমি, তারপরও যেহেতু আমার নামটি হিন্দু নাম নয়, তাই আমাকে মুসলমান বলেই অধিকাংশ বোধবুদ্ধিহীন মানুষ মনে করে।

এই শহরকে এত ভালোবেসেও এই শহর আমার শহর হয়ে ওঠে না। যাদের সঙ্গে এর মধ্যে বেশ বন্ধুত্বও হয়ে গেছে, তারাও বিশ্বাস করে আমি এই শহরে বা এই ভারতবর্ষে ক্ষণিকের অতিথি। অনেকে আমার সাময়িক বাসের অনুমতি নিয়ে জিজ্ঞেস করে। ছ মাস বাড়ানো হয়েছে অনুমতি। আগস্টের সতেরো তারিখে মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমার আবেদন যদি মঞ্জুর না হয়? মঞ্জুর না হলে এ দেশ ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে শোনার পরও কারও মুখে কোনও উদ্বেগ আমি দেখি না। প্রতিবাদের ভাষা তো কারও মুখে ফোটেই না। আমার চলে যাওয়ার আগের দিন জুৎসুই একটা ফেয়ারওয়েল দেবার পরিকল্পনাও হয়তো মনে মনে করে। আমাকে যে তারা ভালোবাসে না, তা নয়। তবে আমার স্থায়ী বাসের অনুমতি বা নাগরিকত্ব না পাওয়া সম্পূর্ণ রাজনীতির ব্যাপার এবং সরকারি ব্যাপার এবং আমার কপাল বা ভাগ্যের ব্যাপার বলেই তারা অনুমান করে এবং অনুত্তেজিত থাকে।

ভারতে থাকার অনুমতি না পেলে আমি কোথায় যাবো, আমি জানি না। দূরে কোথাও কোনও বরফের দেশে আবারও আমাকে আশ্রয় খুঁজতে হবে- এরকম ভাবা আর মৃত্যুর কথা ভাবা আমার কাছে অনেকটা একইরকম। আমি তো আরও একটি দেশে ফিরতে পারতাম, যে দেশটি এখন আমার প্রতিবেশি দেশ! কিন্তু ফিরবো কী করে, সে দেশে আর যে কারওরই অধিকার থাকুক পা দেবার, আমার নেই। আমি যেন দেশটির ভীষণ শত্রু, তাই আমার জন্য এর দরজা চিরকালের মতো বন্ধ। মানবতার কথা বলা বা সমানাধিকারের দাবি করাকে তো অন্যায় হিসেবে জানি নি কোনওদিন। শাসকের চোখে, কট্টরপন্থী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধদের চোখে তা ভীষণ অন্যায়। আমাকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়েছে সেই কবে, যুগ পেরিয়ে গেল। যাবজ্জীবনেরও তো একটা শেষ থাকে। আমার এই দণ্ডের কোনও শেষ নেই। সম্ভবত মৃত্যু ছাড়া এই নির্বাসন থেকে মুক্তি নেই আমার।

প্রতিবেশি দেশটির দিকে উদাস তাকিয়ে থাকি, সামনে কাঁটাতার। মেঘ উড়ে যায় পশ্চিম থেকে পূবে। মনে মনে তাকে ক ফোঁটা চোখের জল দিয়ে দিই, যেন কোনও এক গোলপুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। পাখিরা পাখা মেলছে, পূবের দিকে যাচ্ছে। মানুষ হয়েছি বলে যত বাধা, তার চেয়ে পাখি হওয়াই হয়তো ভালো। কোনও সীমানা মানার দায় নেই। কোনও পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা নেই। নাগরিকত্বের বালাই নেই।

তুমি আর তোমার অন্তরে নেই। তুমি অন্তর থেকে বাহিরে। তোমার এখন বাহিরে বাস। বাহিরে বসবাস। কে যেন এরকম বলে যায় ঘুম আর জাগরণের মাঝখানে স্পর্শ করলে মিলিয়ে যাওয়া তুলোর মতো সময়টায়। যেখানে আমার জন্ম, আমার বড় হওয়া, যেখানে অন্তর আমার সেখান থেকে আচমকা ছিটকে দূর দূরান্তে ভেসেছি। এখন থিতু হতে বাংলায় ফিরেছি। বাংলা তো একই ছিল। অথচ বাংলা নিজেরই নিজের প্রতিবেশি এখন। যদি বাংলা অখণ্ড থেকে যেত, তাহলে নিশ্চয়ই নির্বাসন দণ্ড হত না আমার। তাহলে নিজেকেই নিজের প্রতিবেশি হতে হত না। দেশটি নিজের, অথচ নিজের নয়। নিজের হলে কি দরজায় কড়া নাড়তে হয় বারো বছর? নিজের দেশটিই এখন প্রতিবেশি, কিন্তু ঠিক প্রতিবেশিও নয়। প্রতিবেশি হলে কেউ না কেউ এসে দরজা খুলে দিত। এ কথা মানি না যে কেউ আমাকে চায় না। যারা চায়, তারা কেন খুলছে না! এই প্রশ্ন আমার অনেক বছরের। অদ্ভুত জীবন আমার! নিজ দেশের প্রতিবেশি, আবার প্রতিবেশিরও প্রতিবেশি। দেশ তবে কোথায় আমার? আমি জানি, দেশ জানে, আমার অন্তরে সে দেশ।

আমি কি কেবল নিজেরই প্রতিবেশি! আমার বাবা মা, ভাইবোন, আত্দীয় বন্ধু সবারই প্রতিবেশি। দীর্ঘকাল তো ছিলাম বিদেশ বিভুঁয়ে, অতলান্তিকের ওইপারে, দেশ থেকে সহস্র মাইল দূরে, ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবু এই ভালো প্রতিবেশি হয়েছি নিজের দেশের। অন্তত এইটুকু স্বস্তি তো পাই, দেশটি আছে, কাছেই আছে, পাশেই আছে। দেশটির নিঃশ্বাস শুনতে পাই। দেশটির ঘ্রাণ পাই। সবাই ঘুমিয়ে গেলে, আমিও কি নৈঃশব্দের মতো জেগে কাটাই না রাতের পর রাত! আমার মাকে আমি স্পর্শ করতে পারছি না, অথচ যেন তার শিয়রে বসে আছি। মার খুব কাছে যেতে এখন না হয় পারছি না, কিন্তু যে কোনও সময় হয়তো সেই সময়টি আসবে যে সময়টি আমাকে নির্বিঘ্নে নিয়ে যাবে তার কাছে, উঠোন পেরিয়ে ঘরে উঠবো, আমার জন্ম জন্ম চেনা ঘরে- এরকম একটি স্বপ্ন আমাকে ভীষণভাবে জীবন্ত রাখে। এটি কম কিছু!

বেঁচে থাকতে সেই সময়টি আমার জীবনে আদৌ আসবে কি? ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাই আমি। স্মৃতির ছুরি এসে রক্তাক্ত করে আমাকে প্রতিদিন। হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়, প্রায় এমন দূরত্বে আমার ইস্কুলের বন্ধুরা। আমার কলেজ, কলেজ-ক্যান্টিন, করিডোর। আমার ডাক্তার বন্ধুরা। কবি বন্ধুরা। এমন দূরত্বে আমার মামাখালারা, জন্ম থেকে চেনা আমার স্বজন, আমার ভিটেমাটি, আমার বাড়িঘর, আমার কড়ুইতলা, আমার ব্রহ্মপুত্র। আমার লেখার ঘর। একত্রিশ বছর যাপন করা দীর্ঘ একটি জীবন। আমার সুখ আমার দুঃখ। আমার প্রতিবাদ। ধর্মহীন কুসংস্কারহীন বৈষম্যহীন সুস্থ সুন্দর একটি সমাজের জন্য আমার আপোসহীন লড়াই করার সেই জীবন। হাত বাড়িয়ে আছি, কিন্তু ছুঁতে আমি কাউকে পাচ্ছি না। সকলে আমার প্রতিবেশি, গাছগুলো, বাড়িগুলো, মানুষগুলো, ভালোবাসাগুলো। কাউকেই স্পর্শ করার ক্ষমতা নেই আমার। মাঝখানে শক্ত দেওয়াল। দেওয়াল যদি ইট পাথরের হতো, ভাঙা যেত। দেওয়াল তো ধর্মের, রাজনীতির দুর্নীতির, হিংসের, জেহাদের। এই দেওয়ালের গায়ে আমি অাঁচড় কাটতে পারি, কিন্তু ভাঙার সাধ্য তো আমার নেই। আমি সামান্য মানুষ। লেখালেখি করি। বাঁচার জন্য লিখি, অথবা লেখার জন্য বাঁচি।

দেশ না হয় প্রতিবেশি হয়ে উঠলো, প্রতিবেশি কি দেশ হয়ে উঠছে, উঠবে? না সে সম্ভাবনা নেই। সব দেশেই আমি পরবাসী। নিজের দেশেও পরবাসীর মতো বাস করতে হয়েছিল। পরবাসেও পরবাসী। আর এ দেশে, প্রতিমুহূর্তেই আমারই ভাষায় কথা বলা, দেখতে আমারই মতো, আমার সংস্কৃতির মানুষই আচার-আচরণে বুঝিয়ে দেয় আমি তাদের কেউ নই, আমি আলাদা, আমি ভিনদেশি। মানুষ যদি আমাকে আপন করে নিতে না পারে, তবে আমি একা আপন করতে চাইলেই কি আপন করতে পারবো!

দেখা হতেই পরিচিতজনেরা জিজ্ঞেস করে, কলকাতায় কবে এসেছো?

আমি তো থাকি কলকাতায়। আমার উত্তর।

তা, আমাদের কলকাতা কেমন লাগছে তোমার?

হেসে বলি, খুব ভালো।

এবার কদিন আছো?

অপ্রস্তুত হই, বলি, এ শহরে বাস করি আমি। আমার বাড়িঘর আছে, ঠিকানা আছে।

থাকবে তো কিছুদিন?

আমি তো থাকছিই।

যাচ্ছো কবে?

যাচ্ছি না।

ও।

আমার কথা শুনে কেউ খুব একটা খুশি হয় না। হঠাৎ হঠাৎ আমি তাদের কলকাতায়, তাদের দেশে আসবো অতিথির মতো, গুণগান গাইবো সবার, শেকড় গাড়তে চাইবো, কিন্তু গাড়বো না, এরকম হলেই যেন ভালো। থেকে গেলে আর দাম থাকে না, যতক্ষণ অতিথি, ততক্ষণই আদর। দূরে কোথাও থাকবো, খুব দূরে, অচেনা কোনও দেশে, সে যেমনই থাকি। যখন বেড়াতে আসবো, হৈ রৈ করে ঘিরে ধরবে সবাই। আর যখনই বসবাস করার ইচ্ছে প্রকাশ করছি, যারা ঝাঁপিয়ে পড়তো, তারাই মুখ ফিরিয়ে রাখছে, আগ্রহ হারাচ্ছে। কম কম দেখা হলে অকুণ্ঠ প্রশংসা, শহরময় হেঁটে বেড়ালে কানে কানে নিন্দে। থেকে যাওয়া মানুষটি, যতই সে উদার হোক, আন্তরিক হোক, সৎ ও নিষ্ঠ হোক, পছন্দের মানুষ নয় আর। হবে কেন! মনে তো হয় যেন পাশের বাড়ির কেউ!

একটি মানুষ, যার নিজের কোনও দেশ নেই, শুধু সেই জানে সে কেমন করে বাঁচে। হারিয়েছি নিজের দেশ, সাজানো ঘর দুয়োর, শখের বাগান, হারিয়েছি বন্ধু স্বজন, হারিয়েছি যা ছিল সব।

কেঁদেছি অনেক। এখন আর কান্না আসে না। হারাতে হারাতে আমি হারিয়েছি হারাবার সব বেদনাকে। দেশ নেই বলে পৃথিবীটাই আমার দেশ, এরকম কথা বলে এক ধরনের সান্ত্বনা পাই। আবার এরকমও বলি, সত্যিই অনুভব করি বলেই বলি, যে, দেশ বলে কিছু থাকতে নেই কারও, মানুষের হৃদয়ই হতে পারে এক একটি নিরাপদ স্বদেশ। মাঝে মাঝে বড় বিষণ্ন কণ্ঠে বলি, দেশ মানে যদি নিরাপত্তা, তবে নারীর নিজের কোনও দেশ নেই, কারণ জগতের কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। যদি আমার কথা বলি, কোনও অর্থেই আমার কোনও দেশ নেই। নারীর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছি বলে নেই, নারী বলে নেই। দেশের কথা ভাবলেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। ধনেখালি শাড়ি পরা মা, ভালোবেসে নিঃস্ব হওয়া মা, নির্যাতিতা মা, অবজ্ঞা অবহেলা পেয়ে জীবন পার করা মা। প্রতিদিনই আমার প্রিয় স্বপ্নটি দেখি, দেখি যে আমি দেশে ফিরছি, মা আমাকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর কাঁদছেন। মুখে তুলে খাওয়াচ্ছেন। সামান্যও চোখের আড়াল করছেন না। চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন, গল্প শুনতে শুনতে, কত যে গল্প জমে আছে মার, ঘুমিয়ে যাচ্ছি। আহা, মাকে কত দিন দেখি না। কত সহস্র বছর মার সঙ্গে দেখা হয় না আমার। উড়োজাহাজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আর চোখের জল ফেলতে ফেলতে তো মার অসুখ করেছিল। আকাশে উড়োজাহাজ দেখলেই মার মনে হতো, এই বুঝি আমি এলাম। প্রতিদিন মনে হতো মার। আমার দুঃখিনী মার। আর সবাই দূরে ঠেলে দিলেও মা কোনও দিন আমাকে দূরে ঠেলেনি, সবাই ভুলে গেলেও মা ভোলেনি, কেউ না ভালোবাসলেও মা বেসেছে। মার মতো বড় আশ্রয় আমার কোনও দিনই কিছু ছিল না। এখন, মা আর দেশ কেমন যেন একাকার হয়ে গেছে। মা নেই, মাকে যেমন আর মা মা বলে জড়িয়ে ধরতে পারবো না এ জীবনে, দেশও তেমন। মাএর মতো দেশটিও হারিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার খুব কাছে ওরা, তারপরই টের পাই ওরা আসলে লক্ষ যোজন দূরে।

দেশে দেশে আমি ভেদ মানি না, ভাগ মানি না। নিজেকে পৃথিবীর সন্তান ভাবি। কিন্তু আমার মতো করে তা তো অন্যরা ভাবছে না! নিজেদের একটি গণ্ডির মধ্যে বন্দি রাখতে তাদের ভালো লাগে। আমার ভুবন যত বিস্তৃত হয় দেশ বলে বা প্রতিবেশি দেশ বলে কিছু আমার থাকে না। একবার যদি পাখির চোখে তাকাই, সবকিছুকে কেমন ক্ষুদ্র মনে হয়। উঁচু উঁচু দালানগুলো ক্ষুদ্র, মানুষগুলো ক্ষুদ্র, কলকারখানাগুলো, ধর্মের মিনারগুলো ক্ষুদ্র। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে নিজেই তো কত ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণের জন্য, যে কোনও দিন যেটি ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবে, কী ভীষণ ছিঁড়ে খাওয়া, বীভৎসতা।

দেশ বলে কিছুই না থাকলো, প্রতিবেশি-দেশ বলেও কিছু না থাকলো, আমার নিজের বলে কিছুই না হয় না-ই রইল। তাতে আমার দুঃখ নেই। পৃথিবীর এখানে ওখানে মনে মেলে এমন কিছু বন্ধু থাকলেই জীবন চমৎকার কেটে যাবে। আমি না হয় পরবাসী হয়েই সবখানে রইলাম। পৃথিবীতে সবারই কি আর মাটি জোটে, সবারই কি আর মা বেঁচে থাকে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *