পৃথিবীর শেষ গান

পৃথিবীর শেষ গান

ভীষণ বৃষ্টিদিন। আকাশ যেন নিজের সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলতে অবিরাম বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আর জল ডাকাতের মতো উৎপাতে ভরে উঠেছে চারপাশ। এমন দিনে হলুদ রঙের ছেঁড়া রেইনকোট গায়ে চাপিয়ে নর্থ স্ট্রিটে আসবে একটি লোক। সেই লোকটি যার নিজের নাম মনে নেই, ফলে কিছুদিন পর সবাই তাকে ডাকবে মিস্টার ইয়োলো। বৃষ্টি নামবে আর গাছে গাছে পাতার নৃত্য দেখে গল্পে মেতে উঠবে কিশোরীরা। জানালার বাইরে শব্দ হবে রিমঝিম-ঝিমঝিম… সেই অবিরত জলধারায় ছেঁড়া রেইনকোটের ভেতরে ভিজতে থাকবে আমাদের গল্পের মূল চরিত্র মিস্টার ইয়োলো। তার মাথায় কাঁচাপাকা চুল। শুকনো আবহাওয়ার সেই চুলের দিকে তাকালে মনে হবে, ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর ভুল করে সাদা চকের গুঁড়ো পড়েছে।

মিস্টার ইয়োলোর হাতের তালু বৃষ্টির পানিতে হয়ে উঠবে সংকুচিত, তার চোখের দৃষ্টি হয়ে উঠবে বিষণ্ন। বেঁচে যাওয়া স্মৃতি কুড়াতে ব্যস্ত মেঘগুলো তখন থেমে থেমে গর্জন করবে গম্ভীরভাবে। মিস্টার ইয়োলো তাকাবে আকাশের দিকে মেঘেদের দিকে। মেলে দেবে নিজের করতল। তারপর বিড়বিড় করে বলবে, একদিন এই পৃথিবীতে কোনো গান থাকবে না।

নর্থ স্ট্রিটে টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ভিজে যখন সে পথের ধারে পড়ে থাকবে, তখন একটি বালিকা ও তার মা এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। বাইরে তখনো বৃষ্টি ঝিরিঝিরি। হাসপাতালের পরিপাটি ওয়েটিংরুমে বসে সেই বালিকাটি ও তার মা মনে মনে প্রার্থনা করবে যেন রোগীটি সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু তাদেরকে হতাশ করে জ্ঞান ফেরার পর রোগী তাকিয়ে থাকবে শূন্য দৃষ্টিতে। নার্স কোমল স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করবে,

কেমন লাগছে আপনার?

রোগী উত্তরে অল্প করে মাথা নাড়বে।

আপনার নামটা বলবেন কী?

এবার রোগী কিছুক্ষণ শূন্য চোখে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে বলবে, ঠিক মনে করতে পারছি না।

নার্স তখন কণ্ঠস্বর আরও মোলায়েম করে বলবে, আপনার পরিবারের কারো নাম বলতে পারবেন? কিংবা ফোন নম্বর?

রোগী ঘরের ছাদের সাদা রংগুলোকে ধোঁয়াশা ভেবে ভুল করতে করতে বলবে, না তো!

নার্স উদ্বেগ ঢেকে বলবে, আপনি এখন কী ভাবছেন আমাকে একটু জানাবেন?

রোগী এবার ছাদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সরাসরি নার্সের দিকে তাকিয়ে জানাবে, একদিন এই পৃথিবীতে কোনো গান থাকবে না।

সেই ছোট্ট বালিকাটি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার আগে রোগীর সাথে দেখা করবে এবং বিদায় নেওয়ার আগে বলবে, গুডবাই মিস্টার ইয়োলো। তার মা মনে করবে হয়তো লোকটির গায়ে হলুদ রঙের রেইনকোট ছিল বলেই তার মেয়েটি এই নামে ডেকেছে। কিন্তু আমরা জানব, লোকটি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে বলেই বালিকাটি তাকে বলেছে ইয়োেলো, অর্থাৎ, ইউ অনলি লিভ ওয়ানস…

সপ্তাহখানেক পর পুলিশ মিস্টার ইয়োলোকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসবে, জানতে চাইবে তার নাম, ঠিকানা, পরিবারের কথা, সে তখনো কোনো সদুত্তর দিতে পারবে না। এমনকি নিজের পরিচয় দিতে না পারার কোনো ব্যাখ্যাও থাকবে না তার কাছে। সে কোথা থেকে এসেছে, কোথায় থেকেছে তারও থাকবে না কোনো জবাব! কীভাবে সে নর্থ স্ট্রিটের পথে এক বৃষ্টির দিনে আটকা পড়েছিল জানবে না কেউ। বৃষ্টির জলধারায় যেন তার প্রায় সব স্মৃতিই গিয়েছে মুছে। এভাবেই মাস পেরুবে, যাবে বছর। ঋতুবদলের ফলে তার মাথার চুল থেকে মুছতে শুরু করবে ব্ল্যাকবোর্ডের রঙ। মিস্টার ইয়োলো শুধুই একটি বিষাদগ্রস্ত, হতাশাজনক প্রশ্নচিহ্ন হয়ে সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে থেকে যাবে।

সরকারি বৃদ্ধাশ্রমটির অবস্থা আসলে ভালো ছিল না। সেখানে তারাই থাকত যাদের এই শহরে কিংবা বলা ভালো এই পৃথিবীতে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই বৃদ্ধাশ্রমটি পথের পাশে পড়ে থাকা অসুস্থ কুকুরের মতো ধুঁকে ধুঁকে দিন পার করে। কিছুদিন পরপরই সেখানে বেঁচে থাকার স্পৃহা ভুলে কেউ কেউ ঝুলে পড়ে ফ্যানের সাথে কিংবা সকালে হাঁটতে যাওয়ার নাম করে হয়ে যায় নিরুদ্দেশ। মিস্টার ইয়োলো শুধু এদের মাঝে সকালের আলোতে, চোখেমুখে রোদের পারদ মেখে ব্যালকনিতে বসে থাকে। সন্ধ্যা নেমে এলে একা একাই চেনা লাইন বিড়বিড় করে যায়। তখন দূর থেকে তাকে দেখে যে কারো মনে হবে, হয়তো এই আশ্রমের চেয়ে আরামের জায়গাই আর হয় না।

এমনি করে কেটে যাবে অনেকগুলো বছর। বৃদ্ধাশ্রমের ভবনটি যখন মলিন থেকে প্রায় শতছিন্ন পোশাকের মতো হয়ে যাবে, যখন ভবনটির ছাদ থেকে অহরহ পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করবে, জানালাগুলোর কাঁচ যাবে ভেঙেচুরে আর মৃতপ্রায় বৃদ্ধদের প্রতিধ্বনিত হওয়া হাহাকারে ভরে উঠবে প্রতিটি দেয়াল, ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটবে। যা একদিন ঘটার কথাই ছিল।

ঠিক কবে থেকে এই ঘটনাটি শুরু হয়েছিল তা বলতে পারবে না কেউ। প্রথমদিকে তেমন কেউই খেয়াল করেনি। গ্রিন হাউজ এফেক্ট, মহামারি, একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ে মানুষের জীবনে বিপদ কম ছিল না। তাই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে আর খাদ্য সংকট না থাকলে আসলে এই বিষয়টা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা হওয়ার কথাও না। প্রথম খবরটি ছড়িয়েছিল কোনো এক জায়গা থেকে। এরপর সবাই জেনেছিল শহরে আর কোনো গান নেই। কোনো এক চেনা পথের সকল চিহ্ন মুছে যাওয়ার মতো করেই হঠাৎ সব গান মুছে গিয়েছে। এরপর খবর এলো, সমস্ত পৃথিবী থেকেই আসলে গান গেছে হারিয়ে। পৃথিবীর সব মানুষ বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করল, তারা পরস্পরের সাথে কথা বলার শব্দ শুনতে পাচ্ছে, শুনছে নদীর পানির কুলকুল ধ্বনি, বাতাসের শনশন, শুকনো পাতাদের উড়ে যাওয়ার মসৃণ আওয়াজ, শুনছে শিশুর কান্না, পশুপাখিদের ডাক, কিন্তু কোথাও কোনো সুর নেই বা গান নেই। সংগীত শিল্পীরা গান গাইতে চেয়েও গাইতে পারল না। বিজ্ঞানীরা জানাল, মানুষের শ্রবণক্ষমতার ঘটেছে এক বিচিত্র পরিবর্তন। ফলে, মানুষ আগের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পেলেও কোনো একটা কারণে তারা হারিয়েছে সাধারণ কম্পাঙ্কের শব্দ শোনার ক্ষমতা।

গান খুঁজে না পাওয়ার বেশ কিছুদিন পর যখন পৃথিবীর একটা অংশ রোজকার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু অন্য অংশটি হয়ে যাচ্ছে মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত ও হতাশ, তখন এক সন্ধ্যায় মিস্টার ইয়োলো বৃদ্ধাশ্রম থেকে বের হয়ে গেল। অনেকেই ধরে নিল সে হয়তো আত্মহত্যা করেছে। তার মৃত্যু নিয়ে কারোই খুব বেশি মাথাব্যথা ছিল না, যতদিন না বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করা এক মহিলা এক মিউজিক চ্যানেলের কর্মীকে জানাল, মিস্টার ইয়োলো বহু বছর আগে থেকেই জানত, একদিন পৃথিবী থেকে সব গান হারিয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ঠিক তখনই মনে হলো, গান না থাকার সাথে এই রহস্যময় মানুষটির কোনো না কোনো যোগসূত্র আছে। বিচিত্র কোনো রহস্য সন্ধান করার জন্য তখন সবাই খুঁজতে শুরু করল মিস্টার ইয়োলোকে। এত বছর পর অনেকেরই মনে হলো তাই তো! লোকটি কোথা থেকে এসেছিল? আর গেলই বা কোথায়? কেউ বলল হয়তো সে ছিল কোনো অচিন গ্রহের প্রাণী। কেউ বলল, অন্য কোনো দেশের অ্যাসাইলাম থেকে পালিয়ে আসা বিকারগ্রস্ত মানুষ ছিল সে। পত্রিকার বিনোদনের পাতা ও মিউজিক চ্যানেলগুলো ঘন ঘন তার ছবি দেখাতে শুরু করল এবং নানারকম কাহিনি শুরু করল সাজাতে। একটা সময়ে এমন অবস্থা হলো অনেকেই দাবি তুলল, গান না থাকার বিষয়ে দেশের বাইরের চরমপন্থীদের সাথে সরকারের সম্ভবত কোনো যোগসাজশ আছে। নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র করে সমস্ত গান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নয়তো কোনো এক গোপন ভাইরাসের মাধ্যমে গান বা সুর নিয়ে মানুষের শ্রবণক্ষমতা নষ্ট করা হয়েছে। একে একে অনেকেই এই দাবিতে সম্মতি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করল। এমনকি আজীবন সংগীত ঘৃণা করা ব্যক্তিটিও তখন গণমাধ্যমে বলতে শুরু করল, পৃথিবী থেকে গান সরিয়ে দেওয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে তখন সংস্কৃতি মন্ত্রী মিস্টার ইয়োলোকে খুঁজে আনার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করলেন। এবং মিডিয়াকে জানালেন, সরকার এ বিষয়ে অবুঝ শিশুর মতো নিষ্পাপ। সবকিছুর জন্য দায়ী মিস্টার ইয়োলো। সে-ই সব গান চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন আত্মগোপন করে সরকারকে বিপদে ফেলে সরকারের পতন চাইছে। এসব আসলে খুব বড় একটি যুদ্ধের আভাস। যেকোনো মূল্যেই তাই লোকটিকে খুঁজে আনতে হবে। যে তাকে খুঁজে আনতে পারবে তার জন্য থাকবে বিরাট অংকের পুরস্কার।

১০

মিস্টার ইয়োলোকে খুঁজে বের করতে এরপর অজস্র মানুষ হয়ে থাকবে মরিয়া। কিন্তু আমি বাদে কেউ খুঁজে পাবে না তাকে। শুধু আমিই জানব সে কোথায় আছে। লোকালয় থেকে বহুদূরে গহন অরণ্যের ভেতরে, পাহাড়ের কাছাকাছি এক সন্ধ্যায় আমি মুখোমুখি হব তার। মিস্টার ইয়োলোর গায়ে সেদিন জড়ানো থাকবে একটা ঘিয়ে রঙের চাদর। তার মাথার ধবধবে সাদা চুলে সন্ধ্যাবেলার শিশির ঝরে পড়বে খুব নিঃশব্দে। সে বিষণ্ণ ভঙ্গিতে বসে থাকবে বিশাল বড় একটি গাছের নিচে। সেদিন আকাশে কোনো পাখি থাকবে না। থাকবে না ঝিঁঝি পোকাদের ডাক। আমি আড়াল থেকে তার পাশে গিয়ে বসব। আমার উপস্থিতির চেনা ঘ্রাণে মিস্টার ইয়োলো ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলবে,

কখন এলে? মাঝে কিছুদিন তোমাকে দেখিনি।

তার কথাটা এড়িয়ে গিয়ে আমি প্রশ্ন করব,

কাউকে শেষ পর্যন্ত বললে না কেন আমার কথা?

আমাকে কোনো উত্তর না দিয়ে মিস্টার ইয়োলো কিছুক্ষণ তার ঘিয়ে রঙের চাদরের ভেতরে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। তারপর যখন আমি প্রায় হাল ছেড়ে দেব, সে হয়তো আমার কথার কোনো জবাব দেবে না, ঠিক তখনই সে বলবে,

কারণ আমি চেয়েছিলাম, তোমাকে কেউ খুঁজে বের করুক। নতুন করে আবিষ্কারের মতো। কারণ আর কিছু তো অবশিষ্ট নেই। শুধু তুমিই টিকে আছ। পৃথিবীর একমাত্র জীবন্ত গান। এত সহজে তোমাকে তুলে দিই কীভাবে বলো…?

আমি তখন তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলব, দীর্ঘদিন ধরে আমি তোমাকে একটা কথা বলিনি। আজ বলতে চাই।

কী কথা?

এতদিন তুমি জেনে এসেছ পৃথিবীতে একটি মাত্র গান টিকে থাকবে। কিন্তু আসলে এই তথ্যটা পুরোপুরি ঠিক না। আমার মাঝে আসলে একটি গানেরই দুইটি সুর আছে। অনেকটাই শ্রোয়েডিঙ্গারের বিড়ালের থিওরির মতো। বাক্সে আটকে থাকা বিড়ালটির পরিণতি যেমন দুই রকম হতে পারে, একইভাবে আমার বিষয়টিও তাই। যখনই কেউ আমাকে একবার শুনে ফেলবে, তখনই অন্য সুরটি যাবে মুছে।

আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দূরে কোথাও যেন মেঘ ডাকল। মিস্টার ইয়োলো তৃষ্ণার্তের মতো সেদিকে সমস্ত মনোযোগ ঢেলে দিল। তারপর, হঠাৎ কিছু মনে পড়ে যাওয়ার মতো ভঙ্গিতে বলল,

শেষ পর্যন্ত কোন গানটি টিকে গেল আমি নিজেও তো সেই উত্তরটা জানি না। তুমি কি আমাকে তা জানাতে চাও?

আমি শান্ত স্বরে বললাম, আফ্রিকার খুব ছোট্ট একটি দেশের গান। লোকসংগীত। গভীর রাতে শিশুদের ঘুম পাড়াতে হলে এই গানটি দ্রুতলয়ে গাইত ওদের মা। তখন গানটি শুনলে যে কারো মন শান্ত হয়ে যেতে বাধ্য। কেউ মারা গেলেও সেখানে এই একই গান গাওয়া হতো। কিন্তু একটু ভিন্নভাবে। আরেকটু ধীরে। থেমে থেমে। তখন সেই গানটা শুনলে মনে জেগে উঠত তীব্র বেদনা। মনে হতো, বেঁচে থেকে এই গান শোনার চেয়ে হয়তো মৃত্যুই ভালো।

এটুকু শুনে মিস্টার ইয়োলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আবার কোথাও যেন মেঘ ডেকে উঠল। চারপাশে জেগে উঠল বৃষ্টি নামার কোমলতা। আমি তখন মিস্টার ইয়োলোকে বললাম,

একবার কেউ আমাকে শুনে ফেললে কিন্তু অন্য সুরের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তুমি এখন আমাকে বলো, তুমি কি আসলেই পৃথিবীর শেষ গানটা শুনতে চাও?

গহন অরণ্যে, মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশ থেকে হঠাৎ তখন বৃষ্টি পড়া শুরু হলো–টুপটাপ। আর মনোযোগী কোনো শ্রোতার মতো শুভ্র চুলের বিষণ্ন এক বৃদ্ধ তখন আমাকে ব্যাকুল হয়ে বলল,

হ্যাঁ, আমি গানটা শুনতে চাই…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *