চাঁদের গায়ে ছায়া
ঘটনাটি শুনলে অনেকেরই বিশ্বাস নাও হতে পারে। কারণ ঘটনাটি অনেক অনেক বছর আগের। বহু দূরের এক গ্রামের। এতটাই দূরের সেই গ্রাম, যেখানে পৃথিবীর অনেক কিছুই পৌঁছাতে পারেনি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন নাম ধরে ডাকার প্রচলন শুরু হয়নি সেখানে। শুরু হয়নি সভ্যতা বা প্রযুক্তির বিকাশ। বরং সেকেলে ধরনের গ্রামটি ছিল ক্যানভাসে আঁকা কোনো ছবির মতো পরিপাটি, সুন্দর। সেখানে সবকিছু সবুজের চেয়েও বেশি সবুজ। পথগুলো পুরোপুরি মসৃণ নয় বরং কিছুটা বন্ধুর। তবে সেখানের গাছ-গাছালি ফুল ও ফলে ভরা থাকত সারা বছর। নদীর পানি শরবতের মতোই ছিল মিষ্টি। আর আলো-বাতাস খুব আরামদায়ক। বেশ অল্প কিছু মানুষ ছিল বসবাসের জন্য। তারা অতটা সামাজিক কিংবা আধুনিক হয়ে ওঠেনি। তাদের জানা ছিল না ছয় ঋতু কিংবা আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলের নাম, কিংবা দিন তারিখের শিক্ষা। তারা ছোট ছোট গুচ্ছের মতো একত্রে থাকত কেবল। বরং একটু ঘুম কিংবা ভালো কিছু খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা ছাড়া পৃথিবীর জাগতিক বিষয়গুলো নিয়ে খুব কমই ভাবতে হতো তাদেরএভাবেই হয়তো দিন চলতে পারত কিন্তু একটি ক্ষুদ্র পরিবর্তন ঘটল হঠাৎ করেই। এক ঝলমলে সকালে বাদামি চোখের এক ফুটফুটে শিশু জন্মগ্রহণ করল। আর জন্মের পরপরই চিৎকার করে নিজের অস্তিত্ব জানান না দিয়ে সে মৃদু নিশ্বাস ফেলে হাসল, নিঃশব্দে। মানব শিশুর জন্ম নেওয়া তখন নতুন কিছু নয়, কিন্তু এমন পানির মতো স্বচ্ছ চোখের হাস্যোজ্জ্বল শিশু সেই মানবগোষ্ঠীতে প্রথম।
শুধু তাই নয় ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তাহ দুই পরেই, এক মেঘময় বিকালে শিশুটি তার ছোট্ট বিছানায় হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে অস্ফুট স্বরে বলল, আ। তার উচ্চারিত ধ্বনি শুনে তার মাও একই রকম শব্দ করতে শুরু করল। তা শুনে শিশুটি চঞ্চল হয়ে আরও বেশি শুরু করল হাত-পা নাড়তে। নাম দেওয়ার প্রচলনটি হয়তো গ্রামটিতে তখন থেকেই শুরু। সময়ের সাথে সাথে আ-এর চোখের মণি দিন দিন বড় হতে শুরু করল। তার চুলগুলো হলো লম্বা। চোয়ালটা বিশাল। তবে অন্যান্য শিশুদের চাইতে তুলনামূলকভাবে সে ছিল দুর্বল। দৌড়াতে কিংবা কিছু আনতে দিলে সবসময়ই সে পড়ত পিছিয়ে। যা নিয়ে তার মনে কোনো খেদ না থাকলেও তার বাবা-মার ছিল অনেক অভিযোগ। আ-এর বাবা যখন চাষাবাদ করতে কিংবা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে চলে যেত, সে তখন নদীর পাশে হেঁটে বেড়াত। উষ্ণ বালিতে পা ডুবিয়ে আরাম নিত। আর যখন রাস্তা দিয়ে সে হেঁটে যেত তখন তার দৃষ্টি থাকত আকাশমুখি। এক টুকরা রুটি কিংবা মাংসের জন্য আ কখনোই বাকি শিশুদের মতো মারামারি করেনি। তারস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির উঠানে গড়াগড়িও খায়নি। বরং নিজের অতিকায় চোয়াল আর ক্ষীণকায় দেহ নিয়ে তাকে নিজের জগতে থাকতে দেখা যেত। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে নিথর গাছগুলো যখন আবেশে ডুবে থাকত, আ তখন নিঃশব্দে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত। আর তারপর বাগানের গাছের পাতা থেকে জিভ দিয়ে শিশির খেত চেটে। রাতের আঁধার ফুড়ে এগিয়ে আসা রোদে যখন মনুষ্য কর্মচাঞ্চল্য শুরু হতো, সে তখন লাল পিঁপড়ের সারির সাথে পায়ে পায়ে হারিয়ে যেত বহুদূরে।
আরেকটু বড় হওয়ার পর সে দিন দিন শরীরে বল পেতে শুরু করল। বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করা শুরু করে দিল। সেই সুবাদে পেশিবহুল হলো তার শরীর। তবে মন ছিল আগের মতোই। কখনো উদাস কখনো বা নিস্ফুপ। একদিন সে দেখল খুব সকালে গ্রামের সকলে ভিড় করেছে এক জায়গায়। খয়েরি চাদরে শুয়ে আছে গ্রামের সবচেয়ে বৃদ্ধ লোকটি। মুহূর্মুহূ নিশ্বাস নিচ্ছে সে। মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে। বুকটা যেন যেকোনো সময় নিথর হয়ে যাবে যাবে করেও যাচ্ছে না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ভয়ংকর ছোঁয়াচে এক অসুখে আক্রান্ত সে। সারা গা থেকে মোমের মতো গলে গলে পড়ছে আঠালো রস আর চামড়া। সাপের খোলস নয়, বরং দেখে মনে হবে সত্যিই কেউ তাকে মাটি দিয়ে বানিয়েছিল। সেই মাটিতে ক্ষয় ধরেই সে হারিয়ে যাচ্ছে।
আ কৌতূহলী চোখে ভয় আর আগ্রহের হাতছানি নিয়ে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকল। ওদিকে গ্রামবাসীদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। তারা এই মৃতপ্রায় বৃদ্ধকে নিয়ে কী করবে? প্রথমে ঠিক করা হলো কেউ একজন তাকে বহু দূরের শহরে নিয়ে যাবে। কিন্তু পুরো গ্রামবাসীর মাঝে কেউই রাজি হলো না এমন ভয়ংকর অসুস্থ কারও সফরসঙ্গী হতে। নানা চিন্তা-ভাবনার পর কেউ একজন বুদ্ধি দিল, সফরসঙ্গী কেন মানুষই হতে হবে? সাথে সাথেই সহমত জানাল সকলে। যেন কোনোক্রমে দায়িত্বের মুক্তি। একটা মাঝারি আকারের চন্দনগাছ কেটে ফেলা হলো অচিরেই। তারপর অসুস্থ বৃদ্ধকে কোনোক্রমে চন্দনগাছের সাথে বেঁধে, অল্প কিছু শুকনা খাবার আর পানি দিয়ে, একটা পুরাতন নৌকায় তুলে ভাসিয়ে দেওয়া হলো গ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘ নদীতে। ততক্ষণে সূর্য উঠে যাচ্ছে মাথার ওপর। ছত্রভঙ্গ হয়ে গ্রামবাসী নিজ নিজ কাজে চলে যাচ্ছে। শুধু আ বসে রইল নদীর পাড়ে। একটু পর পর তার মনে হলো, যেকোনো সময় হয়তো বুড়োর নৌকাটি ফিরে আসবে।
সারাদিন আ ব্যস্ত থাকত। মাঠে কাজ করার সময় একা একা কথা বলত মাটির সাথে। গাছে পানি দিত। কাটত কাঠ। তারপর দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরত আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। মধ্যরাতে ঘুম না এলে সে জেগে থাকত একাকী। যেন রাতের সাথে ওর না বলা হাজার গল্প আছে। ততদিনে গ্রামের আরও বেশ কিছু বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধাকে চন্দনগাছের সাথে বেঁধে নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছোঁয়াচে রোগটা একের পর এক প্রাণ সাবাড় করেই যাচ্ছে। কেউ কোনো ওষুধ বা সমাধান খুঁজে বের করতে পারেনি। এক যুবক অবশ্য সবার অমতে জেদ করে নিজের অসুস্থ বাবাকে পাতলা কাপড়ে মুড়ে, পিঠে করে শহরের পথে রওনা হয়েছিল, তবে মাঝপথেই তাকে ফিরে আসতে হয়েছে মৃত পিতাকে কবর দিয়ে। ফিরে এসে সেই যুবকটি অনবরত কেঁদেছে। তার কান্না দেখে আ-এর বুকের ভেতরটা যেন কেমন কেঁপে কেঁপে উঠেছে।
একরাতে আ স্বপ্ন দেখল গ্রামের চন্দনগাছগুলোর গা থেকে সোঁদা ঘ্রাণ বের হয়েছে। আকাশে বৃষ্টি নেই অথচ গাছগুলো ভিজে যাচ্ছে। না, না… আসলে চন্দনগাছগুলো কাঁদছে। নীরবে কাঁদছে। গ্রামের পরিবারগুলো যেমন করে ভয়াবহ এক অসুখে তাদের প্রিয়জনকে হারাচ্ছে, একইভাবে চন্দনগাছগুলোও তো নিজেদের পরিবার হারাচ্ছে। এই হারানোর শেষ কোথায়? আ স্বপ্নের মাঝেই শুনতে পেল ক্রন্দনরত চন্দনগাছের পাতাগুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁপছে। যেন কান্নার বেগ আর সামলে নিতে পারছে না। তার মনে হলো সে যেন কোন আদি-অন্তের মাঝে বিচরণ করছে স্বপ্নের ভেতর। কী যেন পাচ্ছে আবার কী যেন। হারাচ্ছে। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতির আবরণ সেখানে। না মোড়ক না মুখোশ। তার মনে হলো, এমন কেন হচ্ছে? তা হলে কি স্বপ্নের মাঝেই তার মৃত্যু ঘটে যাবে? এমন সময় ভোরের আলো ফুটে উঠল আলগোছে। আ জেগে উঠল। এরপর থেকে বুকের ভেতর এক হিমধরা শূন্যতা নিয়ে বেঁচে থাকল সে।
বৃদ্ধদের সেই ভয়ানক অসুখটা এবার এলো আরও ভয়াবহ আকারে। এবার শুধু বৃদ্ধ নয় সাথে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদেরকেও আক্রান্ত করে ফেলল। তাদের হাত থেকে চামড়া খসে পড়তে শুরু করল। ভেতরের হালকা সাদাটে মাংস বের হয়ে এলো। আঠালো রসে ভরে উঠল তাদের বুক, কাঁধ, হাত। শান্তিপূর্ণ গ্রামটিতে আর শান্তি থাকল না। বরং মনে হলো কোনো এক অদৃশ্য দানব ক্রুর হাসি হেসে যাচ্ছে আড়াল থেকে। যার হাতগুলো সাপের মতো। তা দিয়েই ছোবল মেরে যাচ্ছে গ্রামের অতীত ও ভবিষ্যৎকে। যেখানে অতীত নেই, ভবিষ্যৎ নেই, সেখানে বর্তমান দুর্বল। সেই দুর্বলতাকেই অস্ত্র বানিয়ে যেন কেউ পুরো গ্রামটিকেই মুছে ফেলতে চাইছে। অন্তহীন এক পতনের সুর বাজতে থাকল যেন গ্রামটিতে। সারাদিন বাড়িগুলো থেকে শুধু কান্নার সুর ভেসে বেড়াত। খসে যাওয়া চামড়া ও অসুস্থতার কটু ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল সারা গ্রামের ঘরময়। শিশুগুলো ছিল এতই ছোট ও দুর্বল যে তাদেরকে নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। ছোটখাটো অসুখের জন্য যে নিরাময় ব্যবস্থা ছিল তা দিয়ে শিশুদেরকে সুস্থ করার কোনো পন্থাও ছিল না। সম্পূর্ণ গ্রামটিতে হতাশা এবং এক অচিন দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে গেল।
এসব দেখে আ ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠল। হিমধরা শূন্যতা বেড়ে গেল তার বুকে তুমুলভাবে। জগৎ-সংসার অন্ধকার হয়ে আসল তার। সে আর নদীর কাছে যায় না, ফুলের কাছে যায় না। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটে না। অসহ্য এক অনুভূতির ব্যাপ্তি ছড়াতে থাকে তার ওপর। তার মনে হয় প্রতিটি শিশু যেন একেকটি চন্দনগাছ। যারা তার স্বপ্নে কাঁদছিল নিঃশব্দে। সে বুঝতে পারে অচিরেই গ্রামটি মরে যাবে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সব। তার গগনবিদারী চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। তার মনে হয় পৃথিবীর সুন্দর সব মুহূর্ত গলে গলে পড়ছে। বুকের ভেতরে কেউ করাত কাটছে অবিরত। বেশ কিছু রাত সে জেগে থাকল নিঘুম। জেগে থাকল পুরো গ্রামটিও। বৃদ্ধদের আহাজারি, শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক ক্রন্দন, পরিবারের সকলের আর্তনাদে রাতভর ডুবে থাকে গ্রামটি। সেখানে আর পাখির কলকাকলি শোনা যায় না। কান্না, শুধু কান্না থেকে থেকে উপস্থিতি জানিয়ে যায়।
তারপর একদিন সকালে হঠাৎ আকাশের গাম্ভীর্য বিপুল আকার ধারণ করে। যেন বা কোনো মল্লযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গ্রামবাসী তখন প্রাণপণে প্রার্থনা করতে থাকে যেন বৃষ্টির দেবতা এসে সকল রোগশোক ধুয়ে নিয়ে যায়। খানিকবাদে আকাশে তখন তুমুল ঝড় আসে। কালো হয়ে আসে চারপাশ। যেন প্রকৃতি দারুণ কোনো মরণ খেলায় মত্ত হবে এখনই। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে দিয়ে ধূলিঝড় বাদে কিছুই হয় না। বরং ঝড়ের পর অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে আসে গ্রামে। গম্ভীর। বিষণ্ণ। এবার যেন ঝড় আসে আ-এর বুকে। সে আর চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বাবার কুড়াল নিয়ে ছুটে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। তারপর গ্রামের সবচেয়ে বড় গাছটিতে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। কাটতে থাকে। আ-এর বাবা ছুটে আসে। তারপর জিজ্ঞেস করে সে কী করবে? আ জানায় একটা বড় নৌকা লাগবে। সে গ্রামের সকল বৃদ্ধ আর শিশুদের নিয়ে পাড়ি জমাবে অন্যখানে। অন্য কোথাও। তাও সে এভাবে মরে মরে বেঁচে থাকা দেখতে পারবে না। চন্দনগাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষগুলো। এভাবে কি টিকে থাকা যায়? প্রকৃতি তাকে ডেকেছে। সে ডাক সে উপেক্ষা করতে পারবে না। তাকে যেতেই হবে। আর যাবেই যখন সকল জরাগ্রস্ত প্রাণকে সে নিয়ে যাবে সাথে করে। নতুন কিছুর আশায়। সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তার বাবা। তারপর ধীর পায়ে বাড়ি ফিরে যায়। আ-এর মা সব শুনে দাওয়ায় বসে কাঁদতে থাকে। গ্রামে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আ-এর এই সিদ্ধান্তের কথা। একে একে সবাই এসে যোগ দেয় তার সাথে নৌকা বানানোর কাজে। এক এক করে প্রায় ঊনচল্লিশ দিন পর বিশাল বড় ছইযুক্ত একটি নৌকা বানানো শেষ হয়। পাল লাগানো হয় মস্তবড়। সবচেয়ে মজবুত মাস্তুল, দড়ি, বৈঠা আর গুণ দেওয়া হয় নৌকায়। নৌকাটি হয় বিশাল। যেন নুহের আরেক নৌকা। অতঃপর একচল্লিশতম দিনে গ্রামের অবশিষ্ট শিশু ও বৃদ্ধদেরকে পাতলা কাপড়ে ঢেকে নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। সাথে দেওয়া হয় পানি, শুকনা খাবার আর ফল। গ্রামবাসী সকলে একযোগে দাঁড়িয়ে থাকে নদীর তীরে। কাঁদতে থাকে নিঃশব্দে। কাঁদে আ-এর মাও। তার মনে পড়ে যায় ছোট্ট আ কীভাবে নিঃশব্দে হেসেছিল। সে হাসির কি আসলেই কোনো নিগূঢ় অর্থ ছিল? সে ভাবে। ভেবে ভেবে চোখের পানি মোছে বার বার।
এক রোদের দিনে বহু দূরের, অনেক আগের গ্রামের প্রায় সকল অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আ নামের যুবকটি নদীপথে যাত্রা শুরু করে। যে নদী গিয়ে মিশেছে অচেনা এক সাগরের সাথে। ঢেউয়ের তালে তালে তার চুল নাচতে থাকে। তার লম্বা চোয়াল দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। সে বৈঠা চালায় দ্রুত। পানিতে শব্দ হয় ছলাত ছলাত। ছইয়ের ভেতর থেকে দুর্বোধ্য শব্দ করে কাঁদতে থাকে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। আ সব শুনে নীরবে এগিয়ে যায় আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে। তার বাদামি চোখ দেখে তখন মনে হয় নীল। কারণ তার চোখে আকাশের ছায়া পড়েছে। আ তার যাত্রাপথে কতদূর এগিয়েছে তা আজও সকলের অজানা। শুধু জানা যায় আকাশের পূর্ণ চাঁদের সাথে মাঝে মাঝে আ-এর সেই মস্তবড় নৌকার দেখা হয়ে যায়। আর যখন এমন হয়,চাঁদের গায়ে নৌকার ছায়া পড়ে। আর চাঁদটি দেখতে হয়ে যায় মস্তবড় বাঁকা একটি নৌকার মতো।