নবোঢ়ার পত্র
নম্বর এক
সৈ,
তোমায় চিঠি লিখতে কেমন বাধ-বাধ ঠেকছে ভাই। কথায় বলে, হেলে ধোত্তে পারে না কেউটে ধোত্তে যায়। আমারও হোয়েচে তাই। দাদার অত মার কানমলা খেয়েও আমার দ্বিতীয়ভাগ শেষ করা হোলো না, অথচ তোমার মতো ইস্কুলে-পড়া মেয়েকে এই প্রকাণ্ড চিঠিখানি লিখচি। তা তোমারই দোষ। কেন অমন হাতে ধরে বোলেছিলে। আমি যত মুস্কিলে পড়ি বানান নিয়ে ভাই। তা প্রথম ভাগ আর দ্বিতীয় ভাগে যতটুকু পড়েচি তার মধ্যে ভুল হোলে রাগ কোরো। না হলে কোরো না ভাই।
বিয়ের রাত্তিরে আমার মনে মনে যা যা হোয়েছিলো তোমায় তো বোলেইছি, আর বাসর-ঘরের কথা তো জানোই। তারপর কি হোলো বলি শোনো। না ভাই, তোমাদের বোসজা বড় বেহায়া লোক ভাই। ভিড় হোয়েছিলো বলে আমরা মেয়ে-গাড়িতে উঠেছিলুম। ও প্রত্যেক ইষ্টিশানে চা খাবার কি জল খাবার নাম করে নেমেচে। তুমি বোধ হয় বোলবে, এ আর কি বেহায়াপনা হোলো। বেটাছেলে কি আমাদের মতো ঘোমটা টেনে থাকবে। কিন্তু ভাই ঠিক মেয়ে গাড়ির সামনেই কি যত রাজ্যির সব পান-ওলা চা-ওলা আর জল-ওলা আসে, যে ওখানে না দাঁড়িয়ে আর ডাকা যায় না! তা আমিও সেয়ানা মেয়ে। যেমন বাঘা ওল তেমনি বুনো তেঁতুল। ইষ্টিশান আসছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে একগলা ঘোমটা টেনে নিয়ে বোসে আছি। দেখো কাকে দেখবে। ও ভাই না পেরে শেষকালে কোল্লে কি জানো? একটা ইষ্টিশানে এসে এক্কেবারে আমার জানলাটির কাছে এসে দাঁড়ালো। বোললে, ঝি দেখ তো তোমাদের ট্রাংকে আমার কোটটা ভুলে চলে গেছে কি না। আমার ভাই বড্ডই হাসি পেয়েছিল কিন্তু। আচ্ছা তুমি বিচার করো, ওর জামা আমার বাক্সে কি করে আসবে ভাই। আমিও নাছোড়বান্দা। কাল রাত্তিরে জিজ্ঞেস করেছিলুম। বললে, ভগবানের কাছে পেরারথনা করি, আজ্জন্মে বেটা ছেলে হোয়ে জন্মাও। তা হোলে সব টের পাবে। কি যে কথার ছিরি! অমন আবার হয় নাকি? এক জন্মে বেটাছেলে আর জন্মে মেয়েমানুষ। যদি হোতো তা হোলে সতীরা শতো শতো জন্ম ধরে এক সোয়ামিকে পায় কি করে? এ কথাটা আমি জিগ্যেস করেছিলুম। তাতে আমার মুখের দিকে চেয়ে হাসতে লাগলো। তোকে একটা কথা বলি, কাউকেও বলিস নি সৈ। ওর হাসিটা বড্ড মিষ্টি ভাই।
ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতে একজন বললে, নাও না গো, বউ কোলে কোরে নাও না। কথাটা বোধ হয় শাশুড়িকে বোললে। তিনি বললেন, এস মা। হ্যাঁ ভাই সৈ, আমি কি কচি খুকি যে হাত বাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে কোলে উঠতে যাবো? আমি ভাই লজ্জায় আধমরা হোয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন দু পা এগিয়ে তিনিই আমাকে কোলে তুলে নিলেন আর বোললেন, পেরথোম কথাটাতেই অবাধ্য হলে মা? সৈ, তুমিই বিচার করো ভাই, আমার অবাধ্যটা হোলো কোনখানে! মনে ভাই কষ্ট হোলো, কিন্তু অমঙ্গল হবে বলে তাঁর মুখটা- আর বোলব না ভাই, তুমি বোধ হয় হাসচো। কিন্তু এরকম অবস্থায় ওঁর মুখ মনে করতে তুমিই শিকিয়েছিলে, তা মনে থাকে যেন। উটোনে বরন আরম্ভ হোলো। উনি তো ছট্ফট শুরু কোরে দিলেন। পেটের জ্বালা, তার ওপর আবার রাত্তিরে ঘুম হয়নি। সেই শাঁকের শব্দ উলু উলু, হাসি আর ছেলেদের কান্নার সঙ্গে আমার মনের অবস্থা কি হোচ্ছিল ঠিক মনে নেই। তবে একটু আনন্দও হোচ্ছিল। এখন যে বলা হচ্ছে, ঘুম হয় নি শিগগির সেরে নাও, তা কে তোমায় সমস্ত রাত জেগে ফিকির কোরে আমার গাড়ির জানলার কাছে ঘুর ঘুর করে বেড়াতে বোলেছিল মশাই? ঠিক হয়েছে। যেমন কম্ম তেমনি ফল।
তারপর মুখ দেখবার পালা। এ যে কি জ্বালা, তুমি কখনো বুঝতে পার নি। তোমায় ভগবান সুন্দর কোরে পাটিয়েছেন। পেরথোমে দিদি-শাশুড়ি দেখলেন, দেখে বোললেন, যা হোগ ছিরি আছে। শাশুড়িও মুখটা তুলে ধোরে দেখলেন। মাথায় একটা টায়রা গুঁজে দিয়ে বোললেন, হ্যাঁ, বোলতে নেই, তবে দু হাজারের মোদ্যে পার করবার মেয়ে নয়। আমার ভাই, গা-টা কাঁটা দিয়ে উঠলো। এত সাধের শোশুরবাড়ি—এই! পাড়া-পড়সিরাও দেখল সব। এ পজ্জন্ত যে-সব খুঁত কেউ দেখতে পায় নি, সে-সব একে একে সবাই বের করতে লাগলো। একজন বোললে, সেজদাদা যে রকম সৌখিন তাতে মনে ধরলে হয়! ইনি হচ্ছেন আমার ছোট ননোদ। একফুটে দেখতে, কিন্তু কি চেটাং চেটাং বাক্যি ভাই! পেরথোমে তিনজন সঙ্গি নিয়ে ভাব কোরতে বোসলো। তোমার নাম কি ভাই? তুমি কি পড় ভাই? তোমার কটি বোন ভাই? একজন বোললে, কথা কও না কেন ভাই? বর পচন্দো হয় নি বুঝি, তাই রাগ হয়েছে। আমার সৈ বড় লজ্জা করতে লাগলো, কথা কইলে নিশ্চয়ই ছল ধোরবে। অমনি আমার ক্ষুদে ননদটি গোমড়া মুখ করে বলে উটলেন, চল লো চল, অত ঠেকার সয় না। হ্যাঁ, ভাই সৈ, তুমিই বিচার করো। তোমরা তো আমায় চিরকালটা দেখে আসছো। আমি কি ঠেকারে? শেষে ভাই কথা কইতে হোলো। সব কথা বললুম। অনেক গপ্পসপ্প হোলো। আমার বাঘিনী ননোদিনীর কিন্তু এত সৈল না। গা দুলিয়ে উঠে যাওয়া হোলো, আবার বলা হোলো, কি বাচাল মেয়ে বাবা, এমনটা দেখি নি।
কি জায়গা ভাই! এখানে চুপ করে থাকলে হয় ঠেকারে। কথা কইলে হয় বাচাল। দেরি করে খেলে বলে নবাবের মেয়ে। তাড়াতাড়ি খেলে বলে হ্যাংলাটে। হাসলে বোলে বাপের বাড়ির কথা একদিনে ভুলেছে। কাঁদলে বলে কি প্যানপেনে ঘ্যানঘেনে। সৈ, তুই তো শোশুরবাড়ি গেছিস। আর সব বোলে দিলি, এখানে কি কোরে থাকতে হয় সেইটুকু বোলে দিলি না কেন? আমি ভাই এযন হাঁপিয়ে উটলুম। খাওয়া-দাওয়ার পর যখন বিছানায় গিয়ে পোড়লুম তখন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলুম। লোকে কেন ভাই যমের বাড়ি যা না বলে শোশুরবাড়ি যা বলে না সৈ?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সৈ তোমায় স্বপ্ন দেখছিলুম। যেন ঘোষেদের পুকুরে দুজনে ঝাঁপাই জুড়চি। হঠাৎ আমি তলিয়ে গিয়ে একটা বিজোন পাতালপুরিতে চোলে গেচি আর তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্চি। মনটা কি যে কোরছিল সৈ কি বোলবো! সেখানে না আছে হাওয়া, না আছে মানুষ। শুন্নো বাড়ি যেন রাক্কোসের মতন গিলতে আসছে। আমার ছোট দেওরটি বেঁচে থাক। তার পড়ার চেঁচানির চোটে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। যেন নিশ্যেস ফেলে বাঁচলাম। হ্যাঁ, এ দেওরটির কথা তোমায় বলি নি। আমি এসেছি পজ্জন্ত এর পড়ার ধুম পড়ে গেচে, তাও নিজের ঘরে নয়। আমি যেখানে বসব সেইখানে এসে পড়া চাই। একবার একলা পেয়ে গট গট কোরে এসে জিগ্যেস করলে, এটা পড়িয়ে দিতে পারো বৌদি? সে ইংরিজি বই। কি সব হিজিবিজি নেকা। কোথ্যেকে বোঝাব ভাই। বোললুম, আমি যে ইংরিজি জানি না ভাই। অমনি বুকটা একটু উঁচু কোরে বোললে, হুঁ, বড় শক্ত এটা, কেউ বোলে দিতে পারে না। বাহাদুরি দেখে আমার বড় হাসি পেলো। কেউ ছিল না দেখে জিগ্যেস করলুম, তোমার দাদাও কি পারে না? দুষ্টু অমনি বোললে, কোন্ দাদা? যে তোমার বর? ও তো ফেল হোয়ে গেছে। বড়দাদাও পারে না। এ বড় শক্ত পড়া। কথাগুলো আমার ভাই বড় মিষ্টি লাগছিলো। ঘাঁটাবার জন্যে বোললুম, আমি এসব কথা তোমরা সেজদাদাকে বোলে দেবোখন। সে বোললে, তুমি তো ওর সঙ্গে কথা কও না কি কোরে বলবে? এ কথার কি জবাব দেবো। বেটাছেলেরা সৈ ছেলেবেলা থেকেই দুষ্টু। ওদের কথার জবাব দেওয়া যায় না।
এমন সময় খুড়-শাশুড়ি ঘরে ঢুকে বললেন, কি গো, নবাব খাজা-খাঁর ঝি, ঘুম ভাঙলো? সুজ্যি ঠাকুর যে পাটে বোসলেন! সঙ্গে সঙ্গে সেই খুদে ননোদটিও এসে দাঁড়ালেন। বোধহয় এতক্ষণ নিজে ঘুমোচ্ছিলেন। ফুলো ফুলো চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে বোললেন, তোমাদে বউটি একটি ছোটখাট কুম্ভকর্ণ খুড়িমা।—তাই না তাই—বলে খুড়- শাশুড়ি চলে গেলেন। তুমিই বিচার কর সৈ। সমস্ত রাত গাড়িতে এলে ঘুম পায় কি না। তবু আমি ওঁর দাদার মতন হৈ হৈ কোরতে যাই নি। সৈ ভাই, তোমায় যদি সঙ্গে পেতুম, এই রায়-বাঘিনিকে দু কথা বেশ শুনিয়ে দিতুম। খোঁতা মুখ ভোঁতা কোরে দিতুম। না ভাই সত্যি, আমার বড় রাগ হোচ্ছে। ননোদ কি আর কারু হয় না!
সেই দিন ফুলসজ্জে ছিল। তোমার কথা মতো আমি চেষ্টা করেছিলুম কথা না কইতে, কিন্তু শেষ পজ্জন্ত কথা কওয়ালে তবে ছাড়লে। আমি তো বোলেইছি ওদের সঙ্গে পারবার জো নেই। না ভাই তুমি রাগ কোরো না। ফুলসজ্জের কথা আমার একটিও মনে পড়ছে না যে তোমায় লিকবো।
যখন যাবো পারি তো মনে কোরে কোরে বোলবো, এখন স্বপ্নের মতন আবহাওয়া আবছাওয়া এলোমেলো মনে পড়ছে শুধু। সেসব গুচিয়ে নেকা ভাই আমার বিদ্যেয় কুলোবে না। তবে একটা কথা বোলতে পারি। বাসরঘরে চুপ কোরেছিলো বোলে ভেবো না যেন তোমাদের বোসজা একটি গোবেচারি। বেহায়ার একশেষ ও। আর কাকেই বা দোষ দোবো ভাই। ওদের জাতটাই ওই রকম। এই পোরসু রাত্তিরে বউভাত ছিল। খাওয়া-দাওয়ার পর ওরা বন্ধুরা মুখ দেখতে এলো। তা বাপু ভালো মানুষের মতন মুখ দেখে চলে যা, তা নয়। নানান রকম তামাশা কোরে আমায় হাসিয়ে তবে গেলো। কাকে দুষে কাকে ভালো বলবো ভাই। ও চোর বাছতে গাঁ উজোড়। কাল সকালে শরীরটা বড় খারাপ ছিল। আর শরীরেই বা দোষ দি কি কোরে! শুয়ে শুয়ে এলিয়ে এলিয়ে বেড়িয়েছি সমস্ত সকালটা। তবে ভাগ্যি বোলতে হবে যে কেউ তেমন লোক্ষ্যো কোরছিলো না। আগের রাত্তিরে খেটে সবারই এই দশা হোয়েছিল। আর আমার খুদে ননোদ তো দশটার আগে উঠতেই পারেন নি। বাবা ননোদ নয় তো, যেন কি! যাই বোলিস সৈ, ওর কথা মনে হোলেই একটা গাল দিতে ইচ্ছে করে আমার।
এইবার সৈ তোকে একজনের কথা বোলবো সে রকম লোক আর ভূ-ভারতে খুঁজে পাওয়া যায় না। অবিশ্যি তুমি ছাড়া। আমি অকাতরে দুপুরবেলা ঘুমুচ্ছি এমন সময় আস্তে আস্তে আমার গা ঠেলে জাগালে। পেরথোমে মনে হল তোমাদের বোসজা। ও আজকাল সুবিধে পেলেই ঘরে ঢুকে ওই রকম জ্বালাতন করে। অসজ্জি। কিন্তু চোখ চাইতে দেখি তা তো নয়, এ যে এক নতুন লোক। আমার মুখের দিকে কি একরকম ভাবে চেয়ে আচে। আমিও পেরথোমটা কিছু বলতে পারলুম না। তার পরে সে নিজেই কথা কইলে। পেরথোম কথা, বাঃ, তোমার মুকখানি তো বড় সুন্দর ভাই। শোশুর-বাড়িতে এ কথা দ্বিতীয়বার শুনলুম। কিন্তু ভাই সৈ, বলতে কি, পেরথোমবার যার মুখে শুনেছিলুম তার মুখেও এত মিষ্টি লাগে নি। লজ্জায় আর চাইতে পারলুম না। তখন মুখটা তুলে নিয়ে বললে, দেখি, রাগ করবে না তো ভাই। কাঁচা ঘুমে তুললুম। রাগ আর কি কোরব সৈ। এই চারিদিকের গন্জনার মোদ্যে এঁর আদরের কথাগুলোয় আমার মনে যে কি হোচ্ছিল তা অন্তোজ্জামিই জানেন। আমি বললুম, না, কেউ থাকে না তাই ঘুমুই। আপনারা যদি মাঝে মাঝে একটু আসেন। তিনি বোললেন, আমায় আর আপনি বোলে ডেকো না ভাই। তোমায় দেখে আমার বডড ভালো লাগছে। আপনি বোলে ডাকলে কেমন পর পর বোধ হয়। আমার ভাই মনে হোচ্ছিল এ কি এক পৃথিবীর লোক! এক কথায় এত আপন করে নিতে কেউ তো পারে না। আর কি পিরতিমের মতন চেহারা ভাই। আমার হাতটা মুঠোর মোদ্যে নিয়ে বললেন, আমাদের বাড়ি কাছেই। কদিন থেকে আসবো আসবো কোরছি কিন্তু হোয়ে উঠেছে না। বোলতে বোলতে চোখ ছলছল কোরে উঠলো। কি একরকম হয়ে গিয়ে খপ কোরে চোখে কাপড় দিয়ে বোললেন এই চোখের জল এক পোড়া আপোদ হোয়েছে। আমি তো একেবারে কিম্ভূতকিমাকার হোয়ে গেলুম। এ রকম কক্ষনও দেখি নি। একটা কথাও কইতে পারলুম না। চোখ দুটো মুছে জিজ্ঞেস কোরলেন, তোমার নামটি কি ভাই? আমি নাম বললুম। তিনি বললেন, শৈল, তা বেশ নামটি, সৈ বলে ডাকলে হয় ভাল। তবে তোমায় ও নামে ডাকবো না ভাই। এস আমরা একটা কিছু পাতাই। আবার সেই আমুদে ভাব দেখে আমার সাহস হল। বোললুম, বেশ তো আমিও একটা আপনজন পেলে বাঁচি। একেবারে মন টেকে না। হেসে তিনি বোললেন, কেন ভাই লুকোচ্চো? দিনের বেলা যেটুকু কষ্ট হয়, রাত্তিরের আপনার জন কি সেটুকু পুষিয়ে দেয় না? আমি লজ্জায় আর হ্যাঁ না কিছুই বোলতে পারলুম না। হাতটা একটু টিপে মুখটা এগিয়ে নিয়ে বোললেন, উত্তোর দাও ভাই। কথা না কইলে কি কিছু পাতানো যায়? আমি বোললুম, জানেনই তো সমস্ত রাত ঘুমুতে না দিলে দিনের কষ্ট বাড়ে কি কমে। আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে ভারি আওয়াজে বললেন, আমি জানি নে ভাই, আর এ জন্মে জানবোও না, তাই নারীজন্মের এই সাথ্যক সুখের কথা দুটো শুনতে তোমার দারস্ত হোয়েছি। আমি বয়েসটার আন্দাজে কথাটা বোলেছিলুম, এখন দেখলুম মাথায় সিঁদুর নেই। আমি ধিক্কারে যেন মাটিতে মিশিয়ে গেলুম। কেন না দেখে- শুনে কথাটা বোললুম? কিন্তু কিছু বুঝতে পারলুম না। বিয়ে হয় নি, দুদিন পরে হবে। কিন্তু অমন কথা বোললেন কেন। তিনি গলাটা ঝেড়ে সামলে বোসলেন। বোললেন, পোড়াকপালি আমি যার কাছে দু দণ্ড বোসি তার কাছেই অশান্তি আনি। তুমি কিছু মনে কোরো না ভাই। পৃথিবীতে হাসা অনেকের কাছেই যায় কিন্তু কাঁদা সবার কাছে যায় না। তোমার ঘুমন্ত মুখখানা দেখে যেন বোধ হোলো তুমি আমার কান্না বুঝবে। তাই আর চোখের জল মানা মানছে না। কে জানে কেন এমনটি হয়! আমি বোললুম, কিন্তু আপনার এ কান্না কিসের জন্যে? আমারও বুকের ভেতরটা কি রকম করছে যে। কিছু তো বুঝতে পারছি না। তিনি আমার কাঁধে হাত দিয়ে বোললেন, কি বোলব আর ভাই। যে দয়া কোরে তোমার সিঁথিটি সিঁদুর দিয়ে রাঙা কোরে দিয়েছে, সে নিষ্ঠুর হোয়ে আমার চোখে জল ভোারিয়ে দিয়েছে। কত জল সে দিয়েছে বোলতে পারি নে। যেন ফুরোতে চায় না। আমি আর থাকতে পারলুম না সৈ। হাত দুটো ধরে মিনতি কোরে বোললুম, আমায় বোলতেই হবে কি হোয়েছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি নে। তিনি খানিকক্ষণ ধোরে আমার মুখের দিকে চেয়ে রোইলেন। কি সে আদরমাখা চাউনি ভাই! আমি যে কোথায় আছি তা সে চাউনিতে আমায় ভুলিয়ে দিয়েছিল। তারপর বোললেন, সে সব কথা তোমার যে ভালো লাগবে না ভাই। আমি জিদ কোরতে লাগলুম তিনি বোললেন, বেশ বোলবোখন একদিন। এখন আমাদের পাতানোটা হোয়ে যাক। বোলে রাঙা মুখটা আর চোখ দুটো আঁচল দিয়ে মুছে এবার আমার দিকে চেয়ে হাসলেন। যেন সে মানুষই নয়। আমি বোললুম, বেশ তো। তিনি বোললেন, তুমি ভাই আমার পথের কাঁটা, আমিও তোমার তাই, কেন না তোমার সুখের পথে মাঝে মাঝে ফুটবো—বোলে হাসতে লাগলেন। কিন্তু সে হাসি কি কান্না ঠিক কোরতে পারলুম না।
এমন সময় আমার শাশুড়ি আর কে একজন দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেন। দুজনেই বোলে উটলেন, এই যে। আর আমরা সমস্ত বাড়ি এক কোরে বেড়াচ্ছি। তারপরে শাশুড়ি আমায় বোললেন, বোলি বড় মানুষের ঝির নিদ্রে হোলো? এসব অলুক্ষুনে ওব্যেশগুনো ছাড়ো বাছা। কি বেয়াড়া রীত দেখ তো ভাই। বাপ-মা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল। এগুনোও শেখাতে পারে নি। শেষের কথাগুলো সঙ্গির দিকে চেয়ে বললেন। সঙ্গি বললেন, কে জানে দিদি আজকালকার মেয়েদের ধাত বুঝতে নারি। তবে এ বাড়িতে থাকলে সব শুধরে যাবে। কিন্তু ভয় হয় আমাদের উনি আবার জুটেচেন। বোলি হ্যালা ছিষ্টির পাট সব পোড়ে রয়েছে আর দিব্যি নিশচিন্দি হয়ে কোনে-বউয়ের সঙ্গে কোনে-বউ সেজে বোসে আছিস। আমার যে আর সয় না। হাড় ভাজা ভাজা হয়ে গেল। আমার তো সৈ মনে হোচ্ছিল, মা ধরনি দিধা হও। আমার পথের কাঁটা কিন্তু হেসে বললে, চল আমি যাচ্ছি। ওরা দুজনে রাগে গনগন করতে করতে চলে গেলেন। আমার গলাটা জড়িয়ে চুমো খেয়ে পথের কাঁটা বললে, কিছু দুঃখু কোরো না, এ আমার অঙ্গের ভূষণ। আজ তবে এখন আসি ভাই।
তিনি চলে গেলেন। সমস্ত দিন আমরা মনটা কি রকম যেন হোয়ে রইল। আমি ঠিক কিছুই বুঝতে পারলুম না। তবে মনে নানান রকমের কথা উটতে লাগলো। রাত্তিরে সমস্ত কথা বোলে তোমাদের বোসজাকে জিগ্যেস করলুম। সে একটু যেন কি রকম হয়ে গেল। অন্যমনস্কো হয়ে হাতের ফুটন্ত গোলাপ ফুলের পাপড়িগুনো ছিঁড়তে লাগলো। তারপর একটা নিশ্যেস ফেলে হঠাৎ পাপড়িগুনো আমার মুখে ছড়িয়ে বোললো, ও কিছু নয়। তুমি ছেলেমানুষ শুনতে নেই। সে রাত্তিরে কিন্তু সবই যেন বিস্যাদ লাগতে লাগলো। হাজার চেষ্টা করেও জমাতে পারলে না। কথায় কথায় কেবলই ভুল হতে লাগলো। একবার বোললে, আজ একটা ভালো গোলাপ ফুল এনেচি। তোমার মুখের কাছে ধরে দেখবো কোনটা বেশি সুন্দর। বোলে বিছানাটা হাতড়াতে লাগলো। আমি বললুম, সেটা তো ছিঁড়ে আমার মুখে ছড়িয়েচো, আর পাবে কোথায়? অপ্রোসতুত হয়ে বললে, হ্যাঁ ঠিক কথা। তা যাই হোক তোমার মুখের কাছে কিছুতেই মানাতো না। সৈ এবার আমার চিঠি বন্দ করি ভাই। পেরকাণ্ডো হয়ে পড়ল। এখন এক আনার ডাকে গেলে বাঁচি। আমরা এখানে ভালো আছি। তোমরা সব কেমন আছ লিখবে। তুমি আমার ভালোবাসা জেনো আর মিনি বেড়ালটাকে আমার হোয়ে গুনে গুনে একশোটা চুমো খেও। সেটার জন্যে বড়ই মন-কেমন করে ভাই।
ইতি—তোমার সৈ
.
নম্বর দুই
ভাই সৈ,
আজ বারো দিন হোলো নদীতে বান এসে সমস্ত দেশ ভাসিয়ে দিয়েছে। ও বোললে, এখন চিঠিপত্তর যাওয়া বন্ধ। কাজেই তোমার পেরথোম চিঠিটাও পাটানো হয় নি। এইখানেই পড়ে রয়েছে। আর চিঠির লিখনে-ওলারই যাওয়া হোলো না তো চিঠির। এই গেল-সোমবার যাওয়ার দিন হয়েছিলো। কিন্তু কথায় বলে বিধি যদি হোলো বাম, কেই বা পুরে মনস্কাম। কয়েক জায়গায় নাকি রেলের লাইন ভেঙে গেছে। গাড়ি বন্দ। তা যেখানে চিরজন্মটা থাকতে হবে সেখেনে পেরথোমবার না হয় দুদিন বেশিই থেকে গেলাম তাতে দুঃখু নেই। কিন্তু ভাই ঠাট্টা না কর তো বোলি। আজ আট দিন হোলো তোমাদের বোসজা চলে গিয়েছে পজ্জন্ত মনটা যেন আইঢাই করছে। আমি ভাই তোমাদের ভালোবাসা না বাসা অতশত বুঝি নে। তবে এ বাড়িতে ওরই মুখে একটু হাসি দেখতুম। আর সব যেন তোলো হাঁড়ি নামিয়ে বসে আছেন। বিশেষ করে ননোদটি। বাবা বাবা বাবা—সাজ্জম্মে কারুর যেন ননোদ না হয়!
তা ভাই এক হিসেবে আমার কোনো দুঃখু নেই, কেননা উনি গেছেন খুব ভালো কাযে। বন্নেতে যাদের ঘর-বাড়ি পড়ে গেছে, গোরু-বাছুর ভেসে গেছে, খাবার পরবার সংস্থান নেই তাদের দেখতে শুনতে ওঁরা সব দল বেঁধে গেছেন। আমি গোড়ায় এত জলের কথা শুনেই শিউরে গিছলুম। ওঁর পা দুটো জড়িয়ে বলেছিলুম, কোনোমতেই যেতে পারবে না। কিন্তু ভাই এমন করে গরিবদের কথা সব বলতে লাগলেন যে আমা হেন পাষাণেরও চোখে জল এল। পা দুটো ছেড়ে দিলুম। মনে করলুম মা জগদম্বা যদি ইচ্ছে করেন তো আমার সিঁথির সিঁদুর বজায় রাখবেনই। ভালো কাজে বাধা দিতে নেই। যাবার সময় মার দেওয়া ছিখেত্তোরের ফুল আর পেসাদ পকেটে রেখে দিলুম।
না ভাই আর যাই বলো পুরুষদের এটা বড় দোষ। ঠাকুর-দেবতায় মোটেই বিশ্যেস নেই। এ ফুলে কি হবে বলে হাসতে লাগলো। আমিও তেমনি কড়া মেয়ে। খুব কোষে এক ধমক দিয়েছি। তুমি বিচার কর সৈ হিদুর ঘরে এত বাড়াবাড়ি কি ভালো? ঠাকুর-দেবতার কাছে অপরাধ কোরে কি একটা বিগ্নি ঘটাতে হবে শেষে? আমার দিনগুলো যে কি কোরে যাচ্ছে তা আমিই জানি। আজ আট দিন গিয়েছে। পথের কাঁটার শরীরটা তেমন ভালো না। তবুও বেচারী পেরায় রোজ দুপুরবেলায় আসে। ওইটুকু সময় যা একটু অনমনোস্ক থাকি। ওর পেট থেকে কিন্তু সেই কথাটা বের করতে পারছি না। বললেই বলে, নিরিবিলি পেলে একদিন বোলবোখন। সেদিন চেপে ধরতে আমার গাল দুটো টিপে ধরে বললে, একে তোমার বিরহের কষ্ট, তার ওপর দুঃখুর কথা সইবে কেন কাঁটা এই তো কচি মুকখানি! আমি বললুম বেশ তো বিষে বিষোক্ষয় হয়ে যাবেখন। বল তুমি। আমার গলা জড়িয়ে বললে, তোমার বরের নামে নালিস। আগে আসামি আসুগ জজসাহেব, তবে তো মোকদ্দমা হবে। আমি সৈ কিছু বুঝতে পারছি না। উনি তো অমন লোক নন। তবে কেন পথের কাঁটা অমন অমন কথা বলে। আমার বুকটা ভাই বড় ভারি হয়ে থাকে। ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে সৈ তোমার গলাটা জড়িয়ে তিন ঘণ্টা ধরে কাঁদি কাঁদি আর কাঁদি। কাল কেঁদে কেঁদে বালিস ভিজিয়েছি, তবু মনটা হালকা হয় নি! একবারটি ভাব তো সৈ কি কঠিন প্রাণ আমার! ওর কোনো খবর নেই। পথের কাঁটাও রোজ আসে না। ননোদিনী কাল-সাপিনীর তো ওই দশা! বাড়িতে কেউ একটু আদর করে না। তার পর ওঁদের ছেলে খবর পাঠান না—সেও আমারই দোষ। কাল দিদি-শাশুড়ি আমায় শুনিয়ে শুনিয়েই বললেন, বোধ হয় বউ পচন্দ হয় নি বলে বিবাগি হোয়ে গেছে। অমংগলের কথা শুনে আমার বুকটা ধড়াস করে উটল। আগে এই দিদি-শাশুড়ি কাছে ডেকে ঠাট্টা তামাসা করতেন, একথা সেকথা রোজ জিগ্যেস করতেন। কিন্তু এদান্তি এঁরও ধরন বদলে গেছে। তা সৈ সত্যিই কি আমি এতই কুচ্ছিত? শুনেছি আজকাল টাকা না ঢাললে রূপ হয় না। তা ভাই বাবা কমই বা কি দিয়েছেন? কলিতে কি কিছুতেই যশ নেই? কাল সন্দের সময় ননোদ এসে বললে, কি গো দাদার কোনো চিঠিপত্তর এসেছে? আমরা তো পর হয়ে গেছি। বোঝো সৈ কথাটার ধরন বোঝো। তাই বলছিলুম পোড়া প্রাণ এতোতেও বেরোয় না। রূপকথার কোন্ ভোমরার বুকে আমার এ প্ৰাণ গচ্ছিত আছে বলতে পারিস সৈ?
আজকাল রোজ এইরকম কোরেই কাটছে। সমস্ত দিন হতছেদ্দা লাঞ্ছোনা সই। রাত্তিরে সবাই যখন শোয় তোমায় বোসে বোসে একটু কোরে লিকি। এইটুকু আমার শান্তিতে কাটে। তবুও ভয়ে ভয়ে লিকতে হয় ভাই। মেঝেতে ঝি শুয়ে রয়েছে আর বিছানায় আমার সেই ননোদ। সাক্ষাৎ যম। কেউ উটলেই আমার মাথায় বজ্রাঘাত। তবে ভগবান দয়া কোরে দুজনের চখ্যেই কুম্ভকন্নের ঘুম দিয়েছেন। আর নয় ভাই, শুইগে। চোখ ঢুলে আসছে, কাল আবার লিকবো অখন।
শনিবার। সৈ ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। আজ ওর একখানা চিটি এসেছে। একখানা কেন বলি দুখানা চিটি এসেছে। একখানা বাড়িতে দিয়েছে আর একখানা আমায়। না ভাই, আমার বড়ই লজ্জায় লজ্জায় দিনটা কেটেছে। ঝি পোড়ারমুখী আবার সব্বার সামনে চিটিটা দিয়ে বকসিস চায়। আহা কি উবগারই করেচে তার আবার বকসিস। যদি খেমতা থাকতো তো এ রকম কোরে লজ্জা দেবার দরুন হেঁটোয় কাঁটা সিয়রে কাঁটা দিয়ে পুঁততুম তোমায়। কিন্তু কি করবো ভাই, শেষ পজ্জন্ত একটা টাকা আদায় কোরে ছেড়েছে। আবার ভয় হচ্ছে কাউকে বোলে না দেয়।
আচ্ছা, আমায় তোমাদের বোসজার এ রকম কোরে বিব্রত করা কেন ভাই? কে মাথার দিব্যি দিয়ে ঢং কোরে চিঠি লিখতে বোলেছিলো আমায়? সে আবার কাব্যি দেখে কে! সেখানে খাবার দাবার কষ্ট সে কথা সোজা কোরে বোললেই হয়। তা নয়।—তোমার অধরসুধা আমায় অমর করিয়া রাখিয়াছে নহিলে এ কঠোর ক্লেশ এ জীবন সহিতে পারিত না।—বেশ বেশ বাবু বুঝেচি। এখন তুমি ফিরে এস। না হয় সে সুধা আরও একটু দেওয়া যাবে। কি বল সৈ! সেখানে বোসে বোসে খালি পেটে কাব্যি লিখতে হবে না। হ্যাঁ ভাই সৈ, মৃণাল মানেই বা কি আর ভুজ মানেই বা কি ভাই? কতকগুলো পদ্মের ডাঁটা ভেসে যাচ্ছিল দেখে নাকি আমার মৃণাল ভূজের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় মশায়ের ঘুম হয় নি। আমার তো বিশ্যেস কিছু ঠাট্টা করেছে। ওসব লোককে পেত্তয় নেই। তাই যদি হয় তো নিজের ঘাড়েই উল্টে পড়বে। কেন না আমি তো বুঝতে পারচি না। কি বল সৈ। যা হোক ভাই শিগগির শিগগির ফিরে আসবে লিকেচে এই আমার পুণ্যির বল। এলে যার ভাই তার হাতে সঁপে দোবো। আঁচলে বেঁধে রাখবেখন। আর বোলতে পারবে না যে আমি পর কোরেচি।
ভাই পথের কাঁটা আজ দুদিন আসে নি কেন। কাকে যে জিগ্যেস করি। প্রাণটা তার জন্যে বড় উতলা হোয়েচে। আহা বেচারার মা নেই। সৎমার হাতে কি শাসনটাই না ভোগ করে। এখন ভাই আসি তবে।
সোমবার। সৈ ন দিন পরে আবার কলম ধরেছি। কিন্তু লিখতে কলম আর সরে না ভাই। সৈ সত্যি আমার পোড়া কপাল ভাই। নৈলে আজন্ম শিবপুজো কোরে পাওয়া এমন সাদের শোশুরবাড়িই বা এমন শত্রুরপুরি হোয়ে দাঁড়াবে কেন। আর কেনই বা ভগবান যা একটু হাত তুলে দিয়েছিলেন তাও কেড়ে নেবেন। কি কোরে কথাটা তোমায় বোলবো সৈ। আমার যেন সব এলোমেলো হোয়ে আসছে। ও আজ পাঁচ দিন হোলো এসেছে। সকালে এল। বিকেলবেলা ঘরে বোসে আমার সঙ্গে গল্প কোরচে এমন সময় পথের কাঁটা দোরে এসে দাঁড়ালো। ওর গপ্পসপ্প একেবারে বন্ধ হোয়ে গেল। আমি ঘোমটাটা টেনে দিয়ে ভেতর থেকে দেখতে লাগলুম কাঁটা ঢলঢলে চোখ দুটি দিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে আছে। আর ও মাথাটা নামিয়ে আমার বালাটা আস্তে আস্তে ঘুরুচ্চে। আমার একটু হাসি পেলো। তিন জনকেইকে যেন মন্তোর পড়ে পাথর কোরে দিয়েছে। আমি ওর হাতটা টিপে দিলুম, দিতেই ওর যেন সাড় হোলো। তাড়াতাড়ি উঠে কাঁটাকে বোললে, এসো বসো। এই দুই কথা বোলতে আওয়াজ এত জড়িয়ে যেতে আর কখনো আমি দেখি নি। ও চোলে যেতে কাঁটা এসে বোসলো। আমার ঘোমটাটা খুলে দিলে। গাল দুটো টিপে বললে, দুজনের মুখ দুটি একসঙ্গে দেখলেও একটু তৃপ্তি হোতো তাতেও বাদ। মুখটি ঢেকে রাখলে। তোমার পথের কাঁটা নাম দেওয়াই ঠিক হোয়েচে। আমি বোললুম, এদ্দিন কোথায় ছিলে ভাই? যখন ভোলো তখন একসঙ্গে সক্কলেই ভোলো। এদেশের কি ধরনই এই। কাঁটা বললে, তোমার বিমর্ষ শুকনো মুকখানির দিকে আর আমি চাইতে পারতুম না ভাই। আর আপসোসের কথাও সব ফুরিয়ে এসেছিলো। তা ভিন্ন আমার শরীরটাও ভালো থাকতো না। অবিশ্যি সেটা কিছু নয় তেমন। আমি বোললুম কি হোতো আবার? শরীরকে যে শরীর বলো না তুমি, তা আমি জানি। সে বোললে, বিশেষ কিছু নয়, শুধু তোমার বিরহরোগের আঁচ লেগেছিলো। অসুখের মতন এটাও ছোঁয়াচে কিনা। বোলে তার সেই হাসিকান্নার হাসি হাসতে লাগলো। আমি চেপে ধোরলুম। বোললুম, না ভাই আজ আর ছাড় নেই। তোমাদের মধ্যে একটা কিছু হোয়েছে নিশ্চয়ই। বোলতেই হবে আজকে। তখন নিরুপায় হয়ে কাঁটা তার দুঃখের জীবনের কথা বোলতে লাগলো। কি যে দুঃখু ভাই আমি নিজের কথাই পাঁচ কাহন করচি, কিন্তু ওর তুলনায় আমি তো সঙ্গে আছি। জোর কোরে বলালুম বটে, কিন্তু শুনে এতই কষ্ট হোলো। মনে হোলো না শুনে ছিলুম ভালো।
সৈ, পুরুষকে তুমি ভাই ভালো বলো। অমন ভালো অতিবড় শত্তুরের হোয়ে কাজ নেই। ও গরিব বেচারি ছেলেবেলা মা হারিয়ে মামার বাড়ি পড়ে ছিলো। আর কিছু না হোক মাতাল বাপ আর ডাকিনি সৎমার হাত থেকে তো বেঁচেছিলো। সন্ধান নিয়ে নিয়ে দরদ দেখিয়ে এখানে আনানো হোলো কেন, আর কেনই বা মিছে আশা দিয়ে ওর এত দুগগতি করা হলো, তুমিই বিচার কর সৈ। ও কি পায়ে ধোরে বোলতে গিয়েচিলো, ওগো আমার আপন বলতে কেউ নেই। আমায় পায়ে রাখ। তা তো নয়। তোমারই ঘাড়ে চাপলো, কত নভেলিয়ানা কোরলে, চিটি লিখলে, উপহার দিলে, এমন কি বিয়ের সমস্তো কথা পজ্জন্ত ঠিক হোলো। তারপর অকসসাৎ সব উলটে দিলে। তোমার মনের মধ্যে কি হোলো তুমিই জানো, বাইরে দেখালে আমায় দেখে বড় পচন্দো হয়েছে। আমায় না হোলে আর চলবে না। এই হোলো বিচার। ধিক তোমার কলেজে পাস করা আর ধিক তোমার পুরুষত্ত। সৈ পাস করানো যদি আমার হাতে থাকতো তো এমন সব লোককে পেরথোম ভাগের গণ্ডি পেরুতে দিতুম না। সত্যিই ভাই আমার বড্ডই কষ্ট হয়েছিলো। সেদিন গল্প বলতে বলতে কাঁটা এক এক বার তার সেই হাসি হাসে আর আমার বুকের পাঁজরাগুলা যেন খোসে যায়। মনে হয় এই যে আমায় ওর এত আদর অভ্যত্তনা এ যেন সবই ভুয়ো। একদিন এও শেষ হোয়ে যেতে পারে। কাঁটা উঠে যাবার সময় আমার গলা জড়িয়ে বোললে, এসব কথা একটিও বরের কানে তুলো না যেন। পুরুষমানুষের মন কোন দিক দিয়ে ভাঙে বলা যায় না, আর বোলেও তো আমার কোনা উবগার কোরতে পারবে না। বিধির নেকোন। আমার পোড়া কপাল পুড়িয়েছেন, তুমি আর কি কোরবে বোন। আমার কিন্তু সৈ রাগে শরীর গিসগিস কোরছিলো। মনে মনে ঠিক কোরলুম এ অন্যায়ের একটা বিহিত কোরবই তবে আমার নাম শৈলদাসী।
রাত্তিরে ঘুমের ভান করে পড়ে রইলুম। ও তাসের আড্ডা থেকে রাত করেই আসে। সে রাত্তিরে এসে পেরথোম আস্তে আস্তে ঠেলতে লাগলো তারপরে জোরে নাড়া দিতে লাগলো। কিন্তু শম্মা জেগে ঘুমুচ্ছে তুলবেন কাকে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বোধ হয় বুঝতে পারলে যে এ সোজা ঘুম নয়। তখন খোসামোদ শুরু করে দিলে। ছি ছি সে খোসামোদ দেখলে বোধ হয় নেহাত যে বেহায়া তারও লজ্জা হোতো সৈ। আমার তো লজ্জাও হোলো, কষ্টও হোলো, আবার রাগও হোলো। তখন ঘুম ভাঙার ভান করে পাশ ফিরলুম। ভাবলুম একটা কপট ধমক দি, কিন্তু কইতে লজ্জা করে, পোড়া মুখে হাসি এসে গেলো। ভাই সৈ আমার এই হাসিটা হয়েছে কাল। সময় নেই অসময় নেই বেরিয়েই আছে। লোকে সুখের সময়ই হাসে কিন্তু রাগে গা রি রি করছে সে সময়ও যে কোথা থেকে আমার এ পোড়া হাসি উদয় হয় তা জানি নে। গম্ভির হতে গিয়ে ওর কাছে একেবারে খেলো হয়ে গেলাম। তখনও ও পেয়ে বোসলো আর আমায়ও সব কথা বলতে হোলো। আমার গল্প শেষ হয়ে গেলে ও অনেকক্ষণ একভাবে চুপ করে পড়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে উটে গিয়ে বাকসো থেকে একটা চিটি নিয়ে এসে আমার হাতে দিলে। আলোটা উস্কে দিয়ে বললে, পড়। বলে বাইরে চলে গেল। এক নিস্যেসে আমি সমস্তটা পড়ে গেলুম। পড়তে পড়তে আমার গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উটল। সে সব কথা আর তোমায় কি লিকবো ভাই। বুঝতে পারলুম ওর কোনো দোষ নেই। কাঁটার সত্মা মিছে কলংক দিয়ে কাঁটার চিরজন্মটা নষ্টো করে দিয়েছে। না হোলে আমি আজ যে যায়গা জুড়ে বসেছি সেখানে কাঁটাই রানি হোয়ে থাকত। একটা ছোট্ট চিটিতে বেচারার সুখের নেশা ভেঙে দিয়েছে রাক্কুসি। এখন একবারটি চোখের দেখা দেখবার জন্যে যেন কি কোরতে থাকে। আর একবারটি দেখতে পেলে যেন হাতে সগ্গ পায়। আমার যেন মনে হোতে লাগলো ওরই ধন আমি কেড়ে নিয়ে আছি। যেন সত্যিই ওর সুখের পথে কাঁটা হোয়ে আছি। মনে মনে বোললুম, হে বিধাতা পুরুষ ত্রিসংসারে তোমার এমন কি কোনো বিধান নেই যাতে কোরে ওর জিনিস ওকে ফিরিয়ে দিতে পারি!
এই সব ভাবছি এমন সময় ও ফিরে এলো। ওমা দেখি কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো এরই মোদ্যে রক্তজবা কোরে তুলেছে। আমি তো দেখে অবাক হয়ে গেলুম। এত কড়া এরা, আবার এত নরম। বুকে ধন কোরে একটা চোট লাগল। সে মুখ যদি দেখতিস সৈ। কিন্তু তক্ষুণি মনকে কড়া করলুম—না পুরুষমানুষের ওপর এত দুর্বল হোলে চলে না তো। আমি ওকে দেখিয়েই হাতের চিটিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলুম আর জিগ্যেস কোরলুম, অমন মানুষের নামে এই সব বিশ্যেস কর। দেখি ওর চোখ দুটো আবার জলে ডব ডব কোরে উটল। আমার গলাটা জড়িয়ে বোললে, দেখ আমি বিশ্যেস করি নি বড় একটা। তবে ভয় হোলো যদি ওকে বিয়ে করি তো এ রাক্কুসি এই সব কলংক রটাতে ছাড়বে না। সত্যি বলতে কি পেরথোম চিটিটা পেয়ে আমি যে কি কোরব কিছুই ঠিক কোরে উটতে পারি নি। এক দিকে ওর ভালোবাসা আর এক দিকে এই অগাধ কলংকের ভয়। এই দোটানায় পড়ে আমি হাবুডুবু খাচ্চি এমন সময় একদিন তোমায় দেখলুম। শুনছি তোমাদের মোধ্যে পথের কাঁটা না কি একটা পাতানো হোয়েছে। তা ঠিকই হোয়েচে, কেন না তোমায় যদি না দেখতুম তো শেষ পজ্জন্তো ওই ছোট চিটিটার ভয় থাকতো কিনা বলা যায় না।
সৈ হোন সোয়ামি কিন্তু এ কথাগুনো আমার তেমন ভালো লাগলো না। খুব মুখ ভার কোরে বোললুম, তা পথের কাঁটা সরতে আর কত দেরি হয়। বেশ বুঝতে পারলুম কথাটা শুনে ও মনে মনে চমকে উঠলো। আমায় বুকের মোদ্যে চেপে বোললে, ছিঃ ও কথা বলে না। যা হবার হোয়ে গেচে। আর তো ফিরবে না। আমি মনে মনে বোললুম, একবার দেখবো ফেরে কিনা। সৈ এখন তোমায় বলি সেই থেকে আমার মনে পাপ ঢুকলো। ভাবলুম যাকে এত ভালোবেসেছি তার জন্যে যদি তুচ্ছ জীবনটা যায়ই তো খেতি কি। আমি তো সরি। তারপর পুরুষের মন, উনি নিশ্চয় কাঁটাকে তুলে নেবেনখন! দুদিন পরে আমার কাঁটা ওঁর ফুল হোয়ে উঠবেখন। ভাবলুম যা হোক আমার নারীজন্ম তো সাথ্যক হোয়েচে। এখন আমার এ দেবতার কোলে ও অভাগিনীকে তুলে দিয়ে ওর নারীজন্মটা সাথ্যক করে দি। যা কোরতে যাচ্ছি তাতে অশেষ পাপ বটে। কিন্তু যিনি এত সব দেখছেন বুঝছেন সেই অন্তোজ্জামি আমার এ তুচ্ছ অন্তরের ব্যথা কি বুঝবেন না? অনেকক্ষণ এই রকম ভেবে মনটাকে মুক্ত কোরে ওর বুকের মোদ্যে থেকে মুখটা বার কোরে নিলুম। কিন্তু ওর মুখের দিকে চেয়ে বুকটা গুমরে উঠতে লাগলো। মনে হোতে লাগলো এ অমূল্য রত্ন আর বেশি দিন দেখতে পাবো না তো। তাই এসব কথা ভুলিয়ে সমস্ত রাত ধোরে ওকে কত গল্প বললুম। যত চুমো চাইলে যেন শেষ দেওয়ার মতন দিলুম। বেহায়ার মতন আমিও গোটা কতক চেয়ে নিলুম। তার পর শেষ রাত্তিরে যখন ঘুমিয়ে পড়ল জন্মের শোধ পা দুটো জড়িয়ে পড়ে রইলুম। মনে মনে বললুম, দেবতা আমার তুমি। মেয়েমানুষ ধম্মের জন্যে পরের জন্যে চিরকাল আত্ত-জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছে, তাই আমিও চোললুম। অপরাধ নিও না।
ওর বোধহয় সন্দেহ হোয়েছিলো। পরের দিন আমায় চোখে চোখে রাখতে লাগলো। আমার দুঃখও হোলো আবার হাসিও পেলে। দুকুর বেলা যখন সবাই শুয়েছে আমি বিছানায় শুয়ে রোইলুম আর ঝি এলে বোললুম, ঝি কপালটা ধোরেছে একটু আপিন কিনে এনে দিতে পারিস? পোড়ারমুখি বোললে কি, কিনতে হবে কেন? মা খান তো চেয়ে এনে দিগে। আমি ব্যস্ত হয়ে বোললুম, না না, নতুন মানুষ আমি সামান্য মাথাব্যথা নিয়ে একটা হৈ চৈ হবে। তার চেয়ে তুই চুপি চুপি বাজার থেকে এনে দে বাছা। এই নোটটা নে। আমায় টাকা খানেক এনে দিয়ে বাকীটা তুই রেখে দিস। বুড়ো মানুষ এতটা পথ যাবি। টাকার লোভ বড় লোভ। ঝি চোলে গেল। সমস্ত ঘরটার দিকে চেয়ে যেন আমার কান্না আসতে লাগলো। এ সগগো ছেড়ে যাওয়া কি শক্তো সৈ। এক একটা জিনিস বুকের এক একটা পাঁজরা যেন টেনে ধোরছে। যে শশুরবাড়ি অজগরের মতো হাঁ কোরে ছিল সেটা এইটুকুতে মার মতো কোলে জড়িয়ে ধোরে রইল। মনে হতে লাগলো সুখে হোক দুঃখে হোক নারীজন্মের এই বৈকুণ্ঠ। ননোদটা থেকে আরও যারা যারা যন্তোন্না দিয়েছে সবাইয়ের জন্যে প্রাণটা আইঢাই কোরতে লাগলো। মনে হোলো তারা যেন কত জন্মের আপনার লোক। যেন তাদের যন্তোন্না দেওয়াটাই কত সুখের কত গরবের জিনিস। এত আপনার যারা তাদের ছেড়ে থাকা কি সম্ভব। মনে মনে বোললুম, ভগবান এ বেরতো উজ্জাপোন কোরতে তুমিই আমায় খেমতা দাও প্ৰভু।
বিকেল বেলা শেষ বার ঝেড়ে ঝুড়ে ঘরটাকে পরিষ্কার কোরছিলুম। পালং-এর কাছে যেতেই কালকের চিটিটার কথা মনে পোড়ে গেল। রাগের মাথায় সেই যে ফেলে দিয়েছিলুম আর তুলি নি তো। তবে গেল কোথায়? ঠিক পাগলের মতন হোয়ে গেলুম আমি। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন কোরে খুঁজতে লাগলুম। কোথাও সে চিটি নেই। কে নিলে সে চিটি। যত ঠাকুর আছেন সবার পায়ে মাথামুড় খুঁড়তে লাগলুম। কত মানত কোরলুম, কিন্তু কিছুতেই কিছু হোল না। আমার মনে যে তখন কি হোচ্ছিল কি বোলব সৈ। হাত পা ভয়ে যেন পেটের মোদ্যে সেঁদিয়ে যেতে লাগলে। শেষকালে আর দাঁড়াতে পারলুম না। যেন কত দিনের রুগির মতন অবশ হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পোড়লুম। এমন সময় আমার সেই ছোট দেওরটি ঘরে এসে হাসতে হাসতে বোললে, বউদি বেশ মজা হয়েছে। আজ তোমার একটা চিটি ছোড়দি গিয়ে ওপাড়ায় অনুদিকে দিয়ে এসেছে। খুব মজা হবে। আমি তো ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেলুম। মুখে আর রা সরছিল না, শুধু জিগ্যেস কোরলুম, তুমি দেখেছ দিয়ে দিয়েছে? বললে, হ্যাঁ দিয়ে দিয়েছে বইকি। ছোড়দি ভারি মজার লোক। খোকা হাততালি দিতে দিতে চোলে গেল। আর কি যে হোয়ে গেলুম বোলতে পারি না। প্রকাণ্ড বাড়িটাতে পিঞ্জরাবধ্যো পক্ষির মতন ছটফট কোরতে লাগলুম।
তারপর যে কি হয়েছিলো মনে পড়ে না। ঝি বলে আমি অগ্যান হয়ে গিয়েছিলুম। যা হোক সন্দের সময় দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আর দিদিশাশুড়ি আস্তে আস্তে আমার রগ দুটো টিপে দিচ্ছেন। এক ঘর লোক। অনেকক্ষণ পরে এক এক করে সবাই যখন যে যার কাযে গেল আমি ঝিকে একলা পেয়ে জিগ্যেস করলুম, আপিন কৈ? ঝি বোললে, আনছিলুম। মিত্তিরদের বাড়ি হোয়ে আসতে ওদের অনু বসিয়ে তোমার কথা জিগ্যেস কোরলে তারপর বোললে আমায় দে। শুধু আপিনে হয় না, আমি ভালো ওসুদ ওর জানি। তোয়ের কোরে নিয়ে আসছি। তাই আমি দিয়ে এসেছি। কিন্তু কৈ এখনও তো এলো না! বোধহয় অনেক জিনিস যোগাতে হবে। আমার সৈ গা ঝিম ঝিম কোরে এলো। ওই কলংকের চিটি পাবার পর আপিন দিয়ে দুখিনি যে কার ওসুদ তোয়ের কোরেচে তা আর আমার বুঝতে বাকি রইল না। ঝি বলে আমি আবার অগ্যান হয়ে পড়েছিলুম। সৈ ভাই সমস্ত রাত যে কি কোরে কাটল তা অন্তোজ্জামি বই আর কেউ জানে না। রাত্তিরে যা ভেবেছিলুম সকালে সেই খবরটাই সমস্ত পাড়াটায় রাষ্টো হোয়ে গেল। সে আমারই অস্তোর কেড়ে নিয়ে বড় প্রবোঞ্চনা কোরে আমায় ফাঁকি দিয়ে গেল। আজ ৫ দিন হোয়ে গেছে। পাষাণি আমি, খাচ্চি দাচ্চি বেশ ভালোই আছি। আর কাঁদিও না, অগ্যানও হোয়ে পড়ি না। পথের কাঁটা আমার পথ ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সোয়ামি যখন আদর কোরে জড়িয়ে ধরে— বুকে কোথায় যেন একটা কাঁটা খচ খচ কোরতে থাকে। কেবলই মনে হয় এ যেন কার জিনিস কেড়ে নিয়েছি।
তুমি আমার ভালোবাসা জেনো। ইতি—
তোমার অভাগিনি
সৈ