দ্বিতীয় পরিশিষ্ট – সাংকৃত্যায়ন-আবিষ্কৃত চর্যাগান

দ্বিতীয় পরিশিষ্ট – সাংকৃত্যায়ন-আবিষ্কৃত চর্যাগান

**১

॥ বিনয়শ্রী ॥

নিমূল তরুবর ডাল ন পাতী

নিভর ফুলিল্ল পেখু বিআতী ॥ ধ্রু ॥

ভণএঁ বিনয়শ্রী নোখৌ তরুঅর

ফুল্লএ করুণা ফলই অণুত্তর।

করুণামোদে সএলবি তোসএ

ফল-সংপতিএঁ সে ভব নাশএ।

সে চিন্তামণি জে জইস বাসএ

সে ফল মেলএ বাহিএ সাঁসএ।

বরগুরুভত্তিএঁ চিত্ত প্রবোহী

তহি ফল লেহু অণুত্তরবোহী।

গেল্লিঅহুং গিরিসিহর রি জাত্তেঁ

ওহিঁ ঝম্পাবিল্লি কলিকে আন্তে ॥ধ্রু॥

হল কি করমি সহিএঁ একেল্লি।

বিসরে রাউলে হইলি সুপেল্লী

তহিঁ ঝম্পই ঠেল্লি হেরুঅ মেলে

বিসঅ বিসইল্লি মা ছাড়িঅ হেলে।

ভণএ বিনয়শ্রী বরগুরু-বঅণে

নাহ ন মেল্লঅ..গমণে ॥

পৃষ্ঠা ২ক আরম্ভ । পাঠ ‘চিন্তামুনি’। ঐ ‘জাওেঁ’। ঐ ‘অন্তে’। ঐ ‘লইলি’। সুপেন্তী’। এই পাঠ গ্রহণ করিলে পূর্ব চরণের শেষপদ ‘একেস্তি’ ধরিতে হইবে। পাঠ ‘ট্‌ঠেল্লি’।

**২

॥ বিনয়শ্রী ॥

রাহুত্রঁ চান্দা গরসিঅ জাবেঁ

গরুঅ সংবেঅণ হল সহি তাবেঁ ॥ধ্রু॥

ভণএ বিনয়শ্রী নোখ বিনাণা

রবি-সাঁজোএ বান্ধ গহণা।

চান্দ গরসিল্লে আন্ত ন দিশই

সএল বি একরূঅ পড়িহাসই।

সাব্ব গরাসিউ আধ রাতী।

ন তহি ইন্দীবিসঅ বিআতী।

কইসো আপুব গহণা ভইল্লা

সম গরাসেঁ অথবণ গইল্লা ॥

পাঠ ‘বান্থ’। ঐ ‘বান্দ’।

**৩

গিরিবর-সিহরেহি নালা লাম্বএ

তহি সে কেবটিণি নিভর জাগএ।

অরে ভল্লি কেবটিণি জাল বিচারঅ

মাআ মাচ্ছ নিরন্তর মারঅ।

বতিশ নালা সাব্ব নিরুন্ধী

মারঅ মাচ্ছা নিসর বান্দী।

মাআ মাচ্ছা আগে মবি ভাক্‌খী

আছই চউমুহ জালা রাক্‌খী।

অইসি কেবটিণি সো পড়িহা [ই]

পাঠ ‘লালা’। ঐ ‘রিভর’। ঐ ‘জান’। ঐ ‘দ্বতিশ’। পৃ ২খ শেষ। চর্যা অসম্পূর্ণ ।

**৪

খানে পানে জো কোই রাতা

সঅরহিঅ বট ভমই উমতা ॥ধু ॥

ভন্তিএঁ রে ভন্তিএঁ জগ অইসে বহিউ

আপণু রচি রচি বান্ধণ লাইউ।

চউকোড়ি রহিঅ এ সুখসালা

তথতা বহিঅ মূঢ় ভমন্তি তে কালা।

মান ছড়িআ সদগুরু সেবহ

জে সো তথতা সরূএ পাবহ।

চউক খলভলি আএল বিবহিউ

সদগুরু পুচ্ছিয়া আপন ন চাহিউ ॥

৪ক পৃষ্ঠার আরম্ভ। পাঠ ‘তথত’। ঐ‘সে কহ’।

**৫

॥সরুঅ॥

রাগ বলাড়ী

জিম অন্ধারেঁ রজ সসা মাপা

তিম সো মুণহু রে সএলবি আপা ॥ধ্রু॥

পরম বিরম মাঝেঁ জো কোই লাগা

আহ বাণিঅ জিম বোহিতে ভাগা।

জিম নউ ভাসই বিবির পসি উদধি

তিম লোঅ ভাসই তথতা রিদ্ধি।

চউ খশমু হলহু রে ঠাএ এক বি ঠাণা।

তাবেঁ জই পাবহু সিরি-মাহাজাণা।

সরুঅ ভণই হঁসু মুঅই সে নাই

পণ্ডিত-বএণেঁ হত্থুত হমেঁ থাক

পাঠ ‘বনডী’। ঐ ‘মায়া’। ‘জোই’ হইবে ? ‘থাই’ হইবে ?

**৬

॥অবধূ॥

কিসে…ভেঅ ভাবাভাব

পড়িবখ রহিআ সহজসহাব

চউ ধাউ পাঞ্চ কান্ধ ছত্র বিসয়া

সএল বি অমণেসি-করি রে মায়া ॥ধ্রু॥

গাহ্য গাহক রহিঅ তিহুণ বিলসই

সহজ মুণেন্ত পড়িবখ নাসই।

শুনাসুন ভণিব ন জাই।

সহজ সহাবে সো পড়িহাই।

গাহ্য গাহক জই এক ন ঠাণা

সাবগ কইসে জিণধর বাণা।

অবধূ ভণই অইস মগুল চাকা।

এ জগ সএলবি সহজনিবিতা

পাঠ ‘সএল বিসহ জনি বিতা’।

**৭

॥সরুঅ॥

তিহুণ ফারিউ এবউ চাকেঁ

পড়িবখ কম্ম মুণি সহজ রে জাকেঁ ॥ধ্রু॥

অইসি চণ্ডালী তিহুণে দিট্‌ঠ

অহনিসি করুণা পীবই বইট্‌ঠ।

জ্ঞান সমরোগ নিবাণেঁ অতিনি

সএল সাহারে সহজ ভতিনি।

জাব সো গএণে দাঢ়া

পডিবখ ধাম তবে সএল বি ভাগা।

অইস চণ্ডালিনি জই হিঅহি পসই

পখাপখ সএল বিনাসই।

সরুঅ ভণই দে বহুবিহ ভাঙ্গে

সদগুরু পুচ্ছি জাণহু চাঙ্গে॥

পাঠ ‘চণ্ডালিহি’। ঐ ‘সএ হেল’।

**৮

॥ বিনয়শ্রী ॥

খমণা খমণিএ বালা বালী

খমণএঁ খমণ্ডল ভাগ অফালী

বিরহী খমণী অইসু পমাণেঁ

খুধী পইসই ঘোর মসাণেঁ।

ভণই বিনয়শ্রী খমণি দিঠী

খমণা চ্ছড়ি ন খণবি সংতুঠী।

সিহরত লাম্বী চউমুহ আঘাটা

তহি নই ধোবিত্র পড়িল পাটা।

ভণই বিনয়শ্রী ধোবিনি সেঠী

সরুঅ পক্‌খালে সম্ভোগে পইঠী ॥ধ্রু॥

পৃষ্ঠা ৬ক আরম্ভ। পাঠ ‘ভাগঅ হালী’। ঐ ‘বোধিএ’। ‘পাড়িল’ হইবে ।

**৯

॥ বিনয়শ্রী ॥

ভৈরম্ভেহেঁ পীউ সোহই চৌয়স

পাঞ্চে বান্নে পখালই সমরস

ধোএ অসেস বি না লই মূল

থুল সরুঅ নিখারঅ তুল্য।

গাণ্ডী অচ্ছাড়ীআ সমূহ ত বোলয়

জান্ত হিডীঅ বিসেসেঁ গালঅ। ১৯।

উহ্লসীঅ ঘোর মসাণ বি সাজঅ

অণহা ঘণহণ কীবিড বাজঅ।

ভণএ বিনয়শ্রী সাম্ভোএ নাচঅ

জিনগুণ সুন্দরি কাণ্ঠে ন মূচঅ।

ঘোর বীর সরি গোন্দল বাটঅ

সাম্বই নিভর চাক পএটঅ।

নিহর রমহু সো গুঞ্জ ন তুটঅ

তহি বল খাজই নিরাংসুঅ রজিঅ।

সুদ্ধ কলিঞ্জর দুদুর বজিঅ ॥

পাঠ ‘স্মরস’। ঐ ‘বিনা’। পাঠ ‘গাল্লী অ চ্ছাড়ীআ’। ঐ ‘কীবিউ’। ঐ ‘এ ভল্ল’। অতঃপর একটি পদের অভাব।

**১০

॥ বিনয়শ্রী ॥

আলি কালি জে করিআ দবড়ী

মাথে গোআলিনি বেনিঅ, ঝোড়ী ॥ধ্রু॥

দুট্‌ঠ গোআলিনি দেই ন বিকএ

ভণই বিনয়শ্রী আপণে ভখএ।

এ ঘোল পাণী করিআ আসার

লেই সিণেহা একাকার।

আপুব মঠাণেঁ গোআলিণি ডোলঅ

বিবরিঅ করণে ণবণী তোলঅ।

আন সে মান্থঅ ভেদ্দে নালী

অহন্নিশি সসহর বহু একণালী॥

পাঠ ‘সহঠাণে’।

**১১

॥ বিনয়শ্রী ॥

নগরবাহরেঁ তম্বোলিণী পাড়া

চউপহ মাঝে তাব পসারা ॥ধ্রু॥

বইঠী পসারএ দেই ন বিকএ

ভণএ বিন[য়]শ্রী আপণে ভাখঅ।

সহিএ তাম্বোলী তম্বোল বি লইআ

ঘরবি পোশই পসরা দইআ।

সএঁ বিকএ সএঁ আপণে কীণঅ

সএঁ কুআ পান সো সএঁ সমাণঅ।

বিশএর মাঁঝে মে পবরাণা

সদগুরু বোহে তা সাম্ভেএঁ জাণা॥

সম্ভবত ‘তাম্বোল’, অথবা ‘তার’। ‘তাম্বোলিনী’ হইবে। পাঠ ‘পগরা’। ‘গুআ’ হইবে।

**১২

॥ বিনয়শ্রী ॥

মেহলি চণ্ডালী ঘরবি বামণ

জগ বিটালন্তি তে দুই লাম্বল ॥ধ্রু॥

হল সহি কা মঞি অচাভুঅ দিট্‌ঠা

বাহ্মণ মণুস চণ্ডালিএঁ তুট্‌ঠা।

অইসি নিরাজক মান ন দিশই

মাউগ চণ্ডালী বাহ্মণেঁ পইসই!

দেখু চণ্ডালীর বাহ্মণ জার

পাঞ্চ বন্ন ভইল্ল একাকার।

তে দুই নাসন্তি সম সাঁজোএ

ভণই বিনয়শ্রী সদগুরু বোহেঁ ॥

পৃষ্ঠা ৭ক আরম্ভ। পাঠ ‘কামঞ্চি’।

**১৩

॥ বিনয়শ্রী ॥

হে হেরু[অ] ন জানমি লাজ্জ

শুন্‌নে অচ্ছিল্লাএঁ কিস কাজ্জ ॥ধ্রু॥

উঠ [উঠ] রাউল মাণ্ডল রাজ

তুঞি বিণু হেরু[অ] ন সিজ্‌ঝএ কাজ্জ।

পঞ্চঅ ডাকিনি জে পঞ্চমঅ সংজোএঁ

অলল সাদেঁ হেরুঅ বোহএ।

বিশ ডাঞিনি জে বিশএঁ রাতী

হেরুঅ বোহএ লে বিআতী

বেন্নি ডাঞিনি মীলি করন্তি সো ঠার

উঠ হুংভব হীহীকার।

ভণই বিনয়শ্রী হেরুঅ লাঙ্গা

ধনু সুর হাথ কবাল খটংঙ্গা॥

পাঠ ‘কিম’। ঐ ‘তাঞ্চি’। ঐ ‘সংযোএ’। অথবা ‘বি আতী’। পাঠ ‘লাঙ্কা। ঐ ‘পর’।

**১৪

॥ বিনয়শ্রী ॥

অহিরা রাগ

আঙ্‌(?) নাবেরী খাণ্ঠিণি বাণী

হেলে বাহই উজ্‌ঝাই পানী ॥ধ্রু॥

অণহা ঘণহণ বাজই তুর

পইসই খাণ্টণী পরচক-পুর।

ভজর ভেলো সহি সাসেঁ চড়িল্লী

সমুদ্র মাঝে খেলই না বাহেল্লী

কাচ্ছি কন্থিলা করিআ উখাড়া

জিণিকা পইট্‌ঠোলি চউমুহ ডাঢ়া।

ভণই বিনয়শ্রী খাণ্ডিণি লইআ

সুহ ভুঞ্জহুঁ নিরালএ হোইআ ॥

পাঠ ‘দেব’। ঐ ‘খানি ণিবাণী।’ ঐ‘হোল’ । পাঠ ‘নাবা হেল্লী’।

**১৫

॥ বিনয়শ্রী ॥

হল সহি ঘোর মসাণ বিহারী

তহি পইসি নাচ নৈরামণি দারী ॥ধ্রু॥

ভণএ বিনয়শ্রী পেখ রে পেখুণ

লাখন লাখক নোখ বিলাসন।

নাচএ দারী করণ বিসেসে

ইন্দী পাঞ্চ ভূত সমতোসেঁ।

সুহ বস লোলী না লেন্তে সোহঅ

বিসঅ বিসইন্না সমরস বোহএ।

সোন্নে রূপে বিভূসিঅ নারী

নাচ বিহারেঁ সে কুলদারী

চন্দা আদিত জে সমসরস জোএ

পাঠ লাখ ‘খ’। ঐ ‘কনো খ’। ঐ ‘নাবএ’। —নালে তেঁ ? =বিষইল্লা ? এইখানে পৃষ্ঠা খ শেষ। চর্যা অসম্পূর্ণ।

**১৬

॥ বিনয়শ্রী ॥

মল্লার রাগ

হউ বাহ্মণ গিরি কুঞ্জ নিবাসী

দুঠ চণ্ডালী এ লইল্লাহু পইসী ॥ধ্রু॥

ভণএ বিনয়শ্রী একলী কালে

সমরস ভইল্লাহু বাহ্ম[ণ] চণ্ডালেঁ।

বহিলি সমিরণেঁ কুঞ্জএ স পইসঅ

সে আচ্ছে পিণে মো কুল নাসঅ।

হল সহি আপুব পেখু ইন্দিআলী

হউ বাহ্মণ সে মেহলি চণ্ডালী।

সে আনুরাতী চণ্ডালীরে দেখ

বেনি সংজোএ অসেস বি এক ॥

পাঠ ‘স্মরস’। ঐ ‘কুংজঅ’।

**১৭

॥ বিনয়শ্রী ॥

গবরী রাগ : শবরী

একৈ তামৈ নব গঢ়িল্লা

পাঞ্চ জন বাহিবা কএল্লা ॥ধ্রু॥

ভণই বিনয়শ্রী হমু কণ্ডাহর

জিণেআঁ জাএব ম চউমুহ পার।

ললনা রসনা বেনি পাতাকা

নেহা ঘাল্ল লাইল চউচাকা।

খর সোআণহি নরু বঢ়িঅ

অলি কলি দুই গুণে কঢ়িঅ।

হমু কণ্ডাহর ণ ভিড়ি নলাধম

পাঞ্চ নবাহি তিণ আবাহম

সোন রুপে হুং ভরল্লি নাব

কুঞ্জত বই ণিঅরূপ মলাব ॥

পাঠ ‘গদিল্লা’। =চড়িঅ ? পাঠ ‘তিণ আবা হম’। ঐ ‘কুঞ্জ তবই ণিঅ রূপ’।

**১৮

॥ বিনয়শ্রী ॥

বাহড়ী রাগ

সর সাংজোইঅ বিন্ধহু লাখ

তুট পাএ পাখাপাখ ॥ধ্রু॥

ভণই বিনয়শ্রী পখ বিলাখণ

বেহন বেহক সমসুহ লাখণ।

নীচ ণ বিনাণী লাখ তবে জাএ

গরুঅ সংবেঅণ আন কি সিজ্‌ঝএ।

অইস বিনাণী সো পড়িহাসঅ

হলখ বিন্ধী অল্প সবি তোসঅ।

=বাবাড়ী ? পাঠ ‘তুট উপাএ’। ঐ ‘পবিলাখণ’। ঐ ‘নীচণ’। ঐ ‘অলখ’ ?

**১৯

॥ লুই ॥

গুজরী রাগ

এ বধু বাথু বস জনরে জাহা

ণিএ সআণ ন হোই

তবে সে পঞ্চহু আস চেবর হোই

বাএর গণ্ঠি জই পাই।

অচ্ছি বঞ্চু রে বসন্ত বখাণ্ডী চাহী

পাস পড়েসি হমেঁ বসন্ত ন দেখল

জচুজা ন মোড়ি মোড়ি খাই ॥ধ্রু॥

অচল কুল দল সমুদ সাএর

অচলেঁ দশ দিশি ধাই

এহেঁ বাএঁ বিলসই সিদ্ধা

পাছগু ঘরিআঁ বুলাই ॥ধ্রু॥

বাবেঁ উপজই বাবেঁ নিঅজই

চাউখণ্ডী ডোলিআ সমাই

বাবের বণিজারা বাব ন সঝাইআ

বাবেঁ সে মুদিল জাই।

নিঅম বরত হর হরে লোউ

পুস্ট জমে রে আহী।

লুই বোলন্তি অমে, বাব খণ্ডে ভূসহু

সঙ্গ জাঅ সে পুলিন বশেই ॥

**২০

॥ কাহ্নিল ॥

বেঁঞ্চি ভব পাঁজর তোড়িঅ হেলে

সো করুণ বেল মাঠই লীলে।

ডমরুহি হুকারে বাজই।

বজ্রযোগিনি লেই হেরুঅ নাচই ॥ধ্রু॥

ফাড়িঅ গণ চাম পসাহিউ

ভৈরব কালরাতিতণে পাড়িউ।

বামে খটাঙ্গ দহিণ করে ডমরু

নাচই হেরুঅ আলম্বই কমল।

টরিঅ মেরু তরন্তরু মমতা কিউ।

আঠ মসাণ পঅ ভ[রে] চাপিউ।

যাসু পয়ভারে মেদিনি কাঁপই

হেরুঅ রঅ ঘরি কান্থিল নাচই।

সন বসহিঁ রে তথতা পাহারী

বোহ ভংডারি লই সব রাঅ ফরী।

ঘুমই নাচই বইস পর বিভাগ

সহজ নিদালু মেম কান্থিল লাগ।

চেবই ন বেবই ভন-নিদা গেলা

সঅল মূকল করি সূহ সূতলা।

সোঅণে দেখিল ইঞু তিহুঅণ সূনো

ঘোরি পড়ই অবাগমনে বিহূণো।

সাখি করহু গুরু জালন্ধরি বাজ

মোহে ন বুঝই পণ্ডিঅ আ(ঞ্জ)।

সদ্‌গুরু বএণা।

মূল সুন্ন বাপ্প সএল বাসণা॥

=ডমরুলি ? =গজ ? এই দশ ছত্র ৩৬ সংখ্যক চর্যাগানের বিকৃত রূপ। পৃ ৮৪ দ্রষ্টব্য। পাঠ ‘হঞ্চু’ ।

টিপ্পনী

এই চর্যাগানগুলি হিমালয়ের কোন বৌদ্ধমঠের গ্রন্থাগারে রক্ষিত কয়টি তালপাতার পুথির পত্র হইতে উদ্ধার করিয়া রাহুল সাংকৃত্যায়ন মহাশয় তাঁহর দোঁহাকোশের পরিশিষ্টরূপে ছাপাইয়াছিলেন। প্রথম আঠারোটি চর্যাগান ছিল পাঁচটি পত্রে আর বাকি দুটি ছিল অন্য দুটি পত্রে। সাতটি পত্রের মধ্যে ছয়টির ফোটোপ্লেট দেওয়া আছে। কিন্তু ফোটোপ্লেটগুলি মোটেই পরিষ্কার নয়। সেইজন্য সেগুলি হইতে খুব বেশি সাহায্য মিলে না। তালপত্রগুলির লিপি খুব পুরানো নয়, বড় জোর তিনশ বছর। চর্যাপদগুলির ভাষাতেও পরবর্তী কালের ছাপ পড়িয়াছে। চর্যাপদগুলি অধিকাংশই কৃত্রিম, অর্থাৎ পুরানো চর্যাগীতিগুলির ভাব ও বাক্‌ভঙ্গি অনুকরণ করিয়া লেখা। শেষ গানটি কাহ্নের একটি চর্যাগানের ভাঙা ভাঙা রূপান্তর।

দুই তিনজন নৃতন (এবং অর্বাচীন) চর্যাগান-রচয়িতার সন্ধান এগুলির মধ্যে পাওয়া গেল। একজন হইলেন বিনয়শ্রী, ইঁহার ভনিতা পাই তেরটি গানে। আর একজন হইলেন সরুঅ (অর্থাৎ স্বরূপ)। ইহার গান দুইটিমাত্র । তৃতীয় ভনিতায় একটি গান আছে—অবধূ (অর্থাৎ অবধূত)। এটি ঠিক নাম নয়। তিনটি গানে ভনিতা নাই, সম্ভবত খণ্ডিত বলিয়া। এগুলির রচনা বিনয়শ্রীর গানের মতোই।

**১

১-২ ‘তরুবর মূলহীন, না ডাল না পাতা (কিন্তু) প্রচুর ফুল ধরিয়াছে। দেখুক (বা দেখ)। নির্লজ্জ নারী।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলে, তরুবর স্বর্গীয়। (সে) ফুল ধরে—করুণা, ফল ধরে—নির্বাণ।’ নোখৌ < লোখউ < লোক্য অর্থাৎ দর্শনীয়।

৫-৬ ‘করুণা সুগন্ধে সকলকেই তুষ্ট করে, ফল সম্পত্তিতে সে সংসার নাশ করে।’

৭-৮ ‘সে চিন্তামণি। যে যেমন বাসনা করে সে ফল (তাহার) মিলে। সংশয় নাই।’

৯-১০ ‘বরগুরুকে ভক্তি করিলে চিত্ত প্রবুদ্ধ হয়। তাহাতে অনুত্তর বোধি ফল লাভ কর।’

১১-১২ ‘গেলুম আমি গিরি শিখরের প্রান্তে (?)। সেখানে ঝাঁপ দিলে (বা দিলুম) কলির জন্য (?) শেষে।’

সিহর রি জাওেঁ=সিহ্‌রে জান্তেঁ ?

১৩-১৪ ‘ওলো সখি, কী করি একলা। কর্তা ভুলিয়া আছে, (আমি) ঘুমে আছি।’

১৫-১৬ ‘তখন ঠেলিয়া ঝাঁপে হেরুকের মেলায়। বিষয় বিষয়েন্দ্রিয় হেলায় ছাড়িও না।’

বিসইল্লি=বিসইন্দি?

১৭-১৮ ‘বিনয়শ্রী বলে বরগুরুর বচন অনুসারে, নাথ মিলে না..গমনে॥

**২

১-২ ‘রাহুতে চাঁদ গ্রাস করিল যখন, সখি, তখন(ই) গুরুতর সংবেদন হইল।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলে, আশ্চর্য বিজ্ঞান। রবি-সংযোগে বাঁধিল গ্রহণ।’

‘বান্ধ’ স্থানে ‘চান্দ’ পড়া যাইতে পারে। তখন অর্থ হইবে, ‘রবিসংযোগে চন্দ্রগ্রহণ (হইল)।’

৫-৬ ‘চাঁদ গ্রাস করিলে অস্ত দেখা যায় না। সকলই একরূপ প্রতিভাত হয়।’

৭-৮ ‘সর্বগ্রাস হইল অর্ধ রাত্রিতে। নাই সেখানে ইন্দ্রিয় বিষয়, (ওগো) নিলর্জ নারী।’ ৯-১০ ‘কেমন অপূর্ব গ্রহণ হইল। সম্যক্‌ গ্রাসে অস্তগমন হইল॥

**৩

১-২ ‘গিরিবর শিখর হইতে নালা নামে। সেখানে কেওটনী নির্ভর জাগে।’

৩-৪ ‘ওরে, ভালো কেওটনী জাল বিস্তার করে (অথবা পরীক্ষা করে)। মায়া মাছ (সে) নিরন্তর মারে।’

৫-৬ ‘বত্রিশ নালা সব নিরুদ্ধ। মারে মাছ সব (সে) ঠায় আটকাইয়া।’

৭-৮ ‘মায়া মাছ আগে আমি খাইয়াছি। চৌমোহানায় জাল রাখা আছে।

মবি=মই, মুই।

৯ ‘এই রকম সে কেওটনী প্রতিভাত হয়..’

**৪

১-২ ‘খাদ্যে পানীয়ে যে যোগী (অথবা যে কেউ) অনুরক্ত, স্বরূপবিরহিত মূর্খ সে পাগলের মতো বেড়ায়।’

‘কোই’ সম্ভবত ‘জোই’-র ভ্রান্ত পাঠ ।

৩-৪ ‘ভ্রান্তিতে, ওরে ভ্রান্তিতে, জগৎ এইমত বাহিত হয়। নিজে গড়িয়া গড়িয়া বন্ধন নেয়।

৫-৬ ‘এই চার কোটি (বা চতুষ্কোটি) সুখশালা (রহিয়াছে)। তথতার বাহিরে মূঢ় তিন কাল ঘুরিয়া বেড়ায়।’

৭-৮ ‘মান ছাড়িয়া সদ্‌গুরু সেবা কর ; সেই যে তখতা (তা) স্বরূপে পাও।’

১০ ‘সদ্‌গুরুকে জিজ্ঞাসা করিয়া (চল), আপনি খুঁহিও না।’

**৫

১-২ ‘যেমন অন্ধকারে অন্ধকার (বা ধূলা) নির্ণয় করা, তেমনি ওরে চিন্তা কর।’

৩-৪ ‘পরমানন্দ ও বিমানন্দের মাঝে যে যোগী লগ্ন, (সে) ভগ্ন পোতে হতাশ বণিকের মতো।’

আহ=আশাহুত, দুর্দশাগ্রস্ত।

ভাগা=ভাঙ্গা।

৫-৬ ‘যেমন পোঁত ভাসে…প্রবেশ করিয়া সমুদ্রে, তেমনি লোক ভাসে তথতা ঋদ্ধির উদ্দেশে (?)।’

নউ=নাউ‘নৌকা’?

৭-৮ ‘চতুঃখসম…ওরে একই স্থানে, তবে যদি পাও শ্রীমহাযান’।

৯-১০ ‘স্বরূপ বলে, হংসে ছাড়ে সে নৌকা (?)। পণ্ডিত বচনে…থাকে।’

**৬

১-২ ‘কিসে…ভেদ ভাবাভাব। সহজ স্বভাব প্রতিপক্ষ-রহিত।’

৩-৪ ‘চার ধাতু পাঁচ স্কন্ধ ছয় বিষয়,—(এ) সকলই অমনসিকার, ওরে মায়া।’

৫-৬ ‘গ্রাহ্য-গ্রাহক রহিত ত্রিভুবন বিলাস করে; সহজ চিন্তা করিলে প্রতিপক্ষ নষ্ট হয়।’

৭-৮ ‘শূন্য অশূন্য বলা যায় না। তা সহজ স্বভাবে প্রতিভাত হয়।’

৯-১০ ‘গ্রাহ্য-গ্রাহক যদি এক ঠাঁইয়ে না (করা যায়, তবে) শ্রাবক কিসে জিনচিহ্ন ধরতে পারে?’

জিণ ধর বাণা=জিণ বাণা-ধর।

১১-১২ ‘অবধূত বলে, এইরকম মণ্ডলচক্র। এ জগৎ সকলই সহজ-নির্বৃত।’

**৭

১-২ ‘ত্রিভুবন ষ্ফারিত এমনই চক্রে। প্রতিপক্ষ কর্ম চিন্তা করা হউক সহজ জাঁকে।’

৩-৪ ‘এমন চণ্ডালী ত্রিভুবনে দেখা গেল। অহর্নিশি উপবিষ্ট (সে) করুণা পান করে।’

৬ সকল সংহারে (?) সহজ ভর্ত্রিণী (?)।’

৭-৮ ‘যখন সে গগনে দৃঢ়, (তখন) প্রতিপক্ষ ধাম (অথবা ধর্ম) সকলই ভগ্ন (হইল)।’ ৯-১০ ‘এমন চণ্ডালিনী যদি হৃদয়ে প্রবেশ করে, পক্ষাপক্ষ সকল বিনষ্ট হয়।’

১১-১২ ‘স্বরূপ বলে, দেহ বহুবিধ ভঙ্গীযুক্ত (?)! সদ্‌গুরুকে জিজ্ঞাসা করিয়া সুন্দরভাবে জানো।’

**৮

১-২ ‘ক্ষপণক ক্ষপণকা (দুই জনে) বল্লভ বল্লভা (অথবা বালক বালিকা)। ক্ষপণক আকাশ মণ্ডল ভাঙ্গিল ফাল ফাল করিয়া (অথবা আস্ফালন করিয়া)।’

৩-৪ ‘বিরহিত ক্ষপণকা এই অনুসারে ক্ষুধিত হইয়া ঘোর মশানে প্রবেশ করে।’

৫-৬ ‘বিনয়শ্রী বলে, ক্ষপণকা দেখা গিয়াছে। ক্ষপণককে ছাড়িয়া (সে) ক্ষণের জন্যেও সন্তুষ্ট নয়।’

৭-৮ ‘শিখর হইতে নামিল চৌমুহন আঘাটা (অথবা চৌমুহানি ঘাট)। ‘সেখানে নব (?) ধোবিনী পাটা পাড়িল।’

৯-১০ ‘বিনয়শ্রী বলে, ধোবিনী শ্রেষ্ঠী মহিলা, স্বরূপ (সরু কাপড়) প্রক্ষালন (রূপ) সম্ভোগে প্রবিষ্ট।’

**৯

১-২ ‘…শোভা পায় চৌরস ; পাঁচ বর্ণে প্রক্ষালন করে সমরস।’

৩-৪ ‘সবই ধোয়া হয়, মূল্য নেওয়া হয় না। মোটা সরু সমানভাবে নিষ্কালিত হয়।’

৫ ‘গাণ্ডীব ছাড়িয়া…’

৭-৮ ‘উল্লসিত (হইয়া) ঘোর মশানেই সাজে ; অনাহত কেরোয়াল ঘন ঘন বাজে।’

৯-১০ ‘বিনয়শ্রী বলে, সম্ভোগে নাচে। জিণগুণ (অর্থাৎ জিন-মালা) সুন্দরীর কণ্ঠ হইতে ঘুচে না।’

১১-১২ ‘ঘোর বীরস্বরে গোন্দল বাটা হইতেছে ; সামায় নির্ভরে চক্র…।’ গোন্দল=কুন্দুরূ। (মুখ্য অর্থ গন্ধতৃণ বিশেষ)।

১৩-১৪ ‘সে নির্ভর রমণ করুক, গুঞ্জা যেন টুটে না।’

১৫-১৬ ‘তথা বল খাওয়া হয় ; (যা) নিরংশুক (তা) রঞ্জিত।’

১৭ ‘শুদ্ধ কলিঞ্জর, দুদ্দুর বাজিতেছে।’

হেবজ্রতন্ত্রের একটি ছড়ার সঙ্গে (বাগচী, দোহাকোষ পৃ ৩৬ ) মাঝে মাঝে বেশ মিল আছে।

**১০

১-২ ‘আলি-কালিকে দড়ী করা হইল (অথবা করিয়া) গোয়ালিনী মন্থন করে দুটি ঝুড়িতে (অর্থাৎ পাত্রে)।’

৩-৪ ‘দুষ্ট গোয়ালিনী দেয়ও না বেচেও না। বিনয়শ্রী বলে, (সে) নিজে খায়।’

৫-৬ ‘ঘোল জল অসার করিয়া একাকার স্নেহ (নবনীত, মাখম) নেয়।’

৭-৮ ‘অন্য সে মন্থন করে…নালী (বা নাড়ী); অহর্নিশি শশধর প্রবাহিত হয়…।’

**১১

১-২ ‘নগর বাহিরে তালিনীর (অর্থাৎ তাম্বুল-বিক্রয়কারিণীর) পাড়া। চতুষ্পথ মাঝে তার। (অথবা তাম্বুলের) পসার।’

৩-৪ ‘উপবিষ্ট সে পসার মেলে, দেয় না বেচেও না। বিনয়শ্রী বলে, (সে) নিজে খায়।’

৫-৬ ‘এ সখি, তাম্বুলিনী তাম্বুলই লইয়া পসরা দিয়া গৃহপতিকে পোষণ করে।’

৭-৮ ‘নিজে বেচে নিজে নিজেই কিনে ; নিজে গুয়া পান, সে নিজেকে সম্মান করে।’

৯-১০ ‘বিষয়ের মাঝে…। সদ্‌গুরু বোধে তা সম্ভেদে জানা (যায়)।’

**১২

১-২ ‘গৃহিণী চণ্ডালী গৃহপতি ব্রাহ্মণ । তাহারা দুইজনে…জগৎ দূষিত করিতেছে।’

৩-৪ ‘ওলো সখি, আমি কী অত্যদ্ভুত দেখিয়াছি ; ব্রাহ্মণ মানুষ চণ্ডালীতে তুষ্ট।’

৫-৬ ‘এইরকম নির্লজ্জ মানুষ দেখা যায় না ; চণ্ডালী নারীতে ব্রাহ্মণ উপগত হয় !’

৭-৮ ‘দেখা হউক (বা দেখ) চণ্ডালীর উপপতি ব্রাহ্মণ। পঞ্চবর্ণ একাকার হইল।’

৯-১০ ‘সম সংযোগে তাহারা দুই জনে নষ্ট হইতেছে। বিনয়শ্রী বলে সদ্‌গুরুর উপদেশে।’

**১৩

এই চর্যাগানটি অংশত একটি বজ্রগীতি অবলম্বনে রচিত (বাগচী, দোহাকোষ পৃ ৩৪-৩৫)।

১-২ ‘হে হেরুক, লজ্জা জানি না। কিসের কাজে শূন্যে ছিলে ?

৩-৪ ‘উঠ, প্রভু, মণ্ডল-রাজ। তোমা বিনা, হেরুক, কার্য সিদ্ধ হয় না।’

৫-৬ ‘ডাকিনী পঞ্চক পঞ্চক সংযোগে অলল শব্দে (অর্থাৎ হুলুধ্বনি দিয়া) হেরুককে জাগায়।’

৭-৮ ‘বিশ ডাকিনী বিশ রাত্রিতে হেরুককে জাগায় লইয়া…।’

৯-১০ ‘দুই ডাকিনী মিলি করে সে ঠার । উঠ, হুংভব, হীহীকার (করিয়া)।’

১১-১২ ‘বিনয়শ্রী বলে, হেরুক উলঙ্গ (বা মল্ল); হাতে ধনু শব কপাল খট্টাঙ্গ।’

**১৪

১-২ ‘..নৌকা, খাইনী (অর্থাৎ মেয়ে ডাকাত)…। হেলায় বাহিতেছে উজাইয়া পানি।’

৩-৪ ‘ঘনঘন অনাহত তুর্য বাজিতেছে, পরচক্রপুরে খান্টনী প্রবেশ করিতেছে।’

৫-৬ ‘সখি, সাহসে চড়িল। সমুদ্র মাঝে খেলা করে নৌকা বাহিতে বাহিতে (অথবা নৌকা খেলায়)।’

৭-৮ ‘কাচ্ছি…উৎখাত করিয়া। জয় করিয়া প্রবেশ করিল চউমোহানী দৃঢ়ভাবে (?।)’

৯-১০ ‘বিনয়শ্রী বলে, খাণ্টনী লইয়া সুখ ভোগ করি নিরালয় হইয়া।’

**১৫

১-২ ‘ওলো সখি, ঘোয় মসাণ বিহার ; সেখানে প্রবেশ করিয়া নাচে নৈরামণি দারিকা।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলে, দেখুক রে বা না দেখুক (?),—লক্ষণ লক্ষকের আশ্চর্য বিলাস কর্ম।’

৫-৬ ‘দারিকা নাচিতেছে বিশেষ ক্রিয়ায়, ইন্দ্রিয় পঞ্চভূত (সে) সমান পরিতৃপ্তিতে।’

৭-৮ ‘সুখরস লোলা…শোভা পায় (?) ; বিষয়—বিষযুক্ত (?), সমরস জাগ্রত হয়।’

৯-১০ ‘সোনায় রূপায় বিভূষিত নারী । সে কুলদারিকা বিহারে (অর্থাৎ আনন্দে) নাচিতেছে॥

১১ ‘চন্দ্ৰ আদিত্য যে সমরস যোগে।’

**১৬

১-২ ‘আমি ব্রাহ্মণ গৃহস্থ, কুঞ্জনিবাসী। দুষ্ট চণ্ডালীকে লইলাম (তাহার ঘরে) ঢুকিয়া।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলে, একই কালে ব্রাহ্মণ চণ্ডালেঁ সমরস হইল।’

৫-৬ ‘সমীরণ বহিলে সে কুঞ্জে প্রবেশ করে ; …কুল নাশ করে।’

৭-৮ ‘ওলো সখি, দেখ অপূর্ব ইন্দ্রজাল খেলা ; আমি ব্রাহ্মণ আর গৃহিণী চণ্ডালী।’

৯-১০ ‘চণ্ডালীর সে অনুরক্তি দেখ ; দুইয়ের সংযোগে অশেষই এক।’

**১৭

১-২ ‘এক পদ্মপুকুরে (?) নৌকা গড়িল ; পাঁচজন বাহিবার জন্য নিযুক্ত হইল।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলেন, আমি কাণ্ডারী, জয় করিয়া যাইব আমি চৌমোহানি পাব।’

৫-৬ ‘ললনা রসনা দুই পতাকা ; …চার চাকা লইল।’

৭-৮ ‘খাড়া সোপানে (অথবা খর স্রোতে)… ; আলি কালি দুই দড়া কাড়া হইল॥

৯-১০ ‘আমি কাণ্ডধারী, ভিড়ি নাই, নরাধমকে (?)। পাঁচ নৌবাহিক, তিন…।’

১১-১২ ‘সোনায় রূপায় আমি ভরিলাম নৌকা। কুঞ্জের বাহিরে নিজরূপ লইলাম।’

**১৮

১-২ ‘শব সংযোজন করিয়া বিন্ধি আমি লক্ষ্য ; পক্ষাপক্ষ টুটিয়া পড়ে (?)।’

৩-৪ ‘বিনয়শ্রী বলে, পক্ষ বিলক্ষণ ; বেধন বেধের (?) সমসুখ লক্ষণ।’

৫-৬ ‘নীচ না (?) বিজ্ঞানী, লক্ষ্য তবে যায় ; গুরুতর সংবেদন কি অন্য (উপায়ে) সিদ্ধ

৭-৮, ‘এইরকম বিজ্ঞানী সে প্রতিভাত হয় ; অলক্ষ্য বিন্ধিয়া আত্মাকে নিজে (?) তুষ্ট করে।’

**১৯

১-২ ‘এ বস্ত্তুর বাস্ত্তু বশ (সর্ব) জন, ওরে, যাবৎ (?) নিজে সজ্ঞান না হয় তাবং সে পাঁচ..হয় বায়ুর (?) এছি যদি পায়।’

৪ ‘পার্শ্ব প্রতিবেশী আমি বাস করিতে দেখি নাই ;..খায়।’

৫-৬ ‘পর্বত সমুদ্রকৃল মাড়াইয়া সমুদ্র সাগর (পার হইয়া) অচল ব্যক্তি দশ দিকে ধাইতেছে। এই বায়ুতে বিলাস করে সিদ্ধা, পশ্চাদগামী গৃহবাসীকে ডাকিয়া (?)।’

৭-৮ ‘বায়ুতে উৎপন্ন হয়, বায়ুতে ঝরিয়া পড়ে, চউস্খণ্ডী দুলিয়া (?) প্রবেশ করে। বায়ুর বাণিজ্যকাৰ্য, বায়ু না সুঝিয়া (?) বায়ুতে মুদ্রিত হয়।’

৯-১০ ‘নিয়ম ব্রত হর হরি (?) লোক…। লুই বলেন, আমরা বায়ু…।’

**২০

৩-৪ ‘ডমরু হুঙ্কার করিয়া বাজিতেছে ; বজ্রযোগিনী লইয়া হেরুক নাচিতেছে।’

৫-৬ ‘ফাড়িয়া গজ-চর্ম প্রসাধিত হইল ; ভৈরব কালরাত্রির জন্য (তাহা) পাড়িল।’

৭-৮ ‘বাম করে খট্টাঙ্গ, ডাহিন করে ডমরু ; হেরুক নাচে কমল অবলম্বন করিয়া।’

১০ ‘আট মশান পদভরে পিষ্ট হইল।’

১১-১২ ‘যাহার (?) পদভরে মেদিনী কাঁপে ; হেরুক রতগৃহে কাহিল নাচে।’

১৩-২২ এই কয়ছত্রের শুদ্ধ পাঠ ও অর্থের জন্য ৩৬ সংখ্যক চর্যাগান (পৃ ৮৪) দ্রষ্টব্য।

‘সন’=শূন্য। ‘বেবই’=বেই < বেদয়তি।

‘বাজ’=বজ্র (গুরু)। ‘আজ’-আর্য।

২৪ ‘মূল শূন্য,…সকল বাসনা।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *