তরু

তরু

সবাই বোলবে গাছ। বোলবে গাছ কি? কিন্তু গাছ। গাছের আর একটি নাম আছে বৃক্ষ। অর এক নাম তরু। আমি এই পর্যন্ত গাছের ইতিহাস জানি। আমি গাছকে বহুভাবে দেখেছি। কিন্তু গাছকে গাছ বলি। কেউ বৃক্ষ! কেউ তরু! হঠাৎ মনে হলো আমি ভুল কোরছি। অনেক নাম আছে গাছের অনেক রকম গাছ। পৃথিবীর স্থলভাগের চারিপাশে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির গাছ আছে। আমি যেমন একটি মানুষ। কিন্তু অনেক রকম মানুষ আছে। অনেক প্রকৃতিতে বিভক্ত। কেউ গাড়ী চড়তে ভালোবাসে। কেউ কৃষি কাজে মগ্ন। কেউ নেকটাই উড়িয়ে দালালী করে। কেউ ফল বিক্রেতা। আর কেউ ভ্ৰামণিক, যেমন আমি। তোমাকে নওয়াবপুর রেল ক্রসিংএ দেখেছিলাম। তুমি ফলের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে। কিন্তু আমি আসলে দেখেছিলাম একটি গাছ, গাছের মধ্যে অনেক ধরনের গুণ থাকে। আমার মাত্র সেদিন অপরূপ একটি দৃষ্টিগুণ কাজ করছিল।

কিন্তু তুমি দেখতে পাওনি। তোমার চুলের কম্পন পর্যন্ত আমি দেখেছিলাম। কিন্তু তুমি বাস্তবে তৎপর ছিলে। সভ্যতায় মগ্ন ছিলে। অনেক লোকোমোটিবের শহরে অনেক দৃষ্টি অনেকের অগোচরে থেকে যায়।

তোমাকে একবার আমি সেই কবে দেখেছি। মনে নেই। কেবল মনে আছে তুমি সাদা শাড়ী পরেছিলে। চোখে অপর্যপ্ত মায়া, তুমি বোলেছিলে আসুন না।

একটি দেয়াল ঘেরা বাড়ী। চারদিকে নরোম কলার বাগান। দু একটি আম গাছ। লাল পিঁপড়ের একটি স্তূপ ছিল কোথাও। আমি দেখে ফেলতেই তুমি বোলেছিলে পিঁপড়ে থাকা ভালো জানেন। সংসারের লক্ষ্মীর আভাষ। তখোন আমি চোখ দিয়ে তোমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম।

কিন্তু সে অনেক দিনের কথা। একবার বৃষ্টি হলে হয়তো আবার ঠিক মনে পড়তো সব। তুমি তো জানোনা প্রকৃতি মানুষের মনে কী প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের শরীরে প্রকৃতির কি পরিমাণ প্রভাব!

যেমন বহুদিন পরে তুমি আমাকে চিনতে পারবে না। ঠিক বলেছি চিনতে পারবে না। মশারী টানানোর মতো ভঙ্গি করে হয়তো একবার তাকাবে যেমন স্ত্রী শোবার আগে স্বামীর দিকে তাকায়। কিন্তু তুমি আমাকে চিনতে পারবে না। আমি অনেক বদলে গেছি।

হয়তো তোমার কাছ থেকে নয়। অন্য যে কেউ এখন বলতে পারে, বলবে।

: আপনি কত বদলে গেছেন।

: আমি বলবো : প্রকৃতির প্রভাব।

অন্য কেউ বোলবে, রাখেন প্রকৃতি। প্রকৃতি না ছাই! প্রকৃতি আমরা চিনি! প্রকৃতি হলো আমাদের শরীর।

শরীর শব্দটা হঠাৎ আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে?

: তুমি শরীর কথাটাকে বাদ দিয়ে এমন নম্র ভাবে বোলতে।

: আপনি কি ভালোবসেন?

: আমি বলতাম, আমি শরীর ভালোবাসি।

: হয়তো এখন তোমাকে চেনা মনে হবে। এ রকম কোরে হয় তো।

এই চেনার পটভূমি ও একদিন বিকেল বেলা তোমাদের বাড়ীতে গেলাম। তোমার স্বামীর সাথে দেখা। কাগজ পড়ছেন। বিশ্ব লেহন কোরছেন। আমি কাগজের খবরে বিশ্বাসী নই। মিথ্যা কথায় ভরা কাগজে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না। যেমন বিশ্বাস রাখা যায় না সৌহার্দে। কিন্তু তুমি তখোনও বোলবে : অনেক দিন পর এলেন, আসুন।

: কতদিন?

: তা তিন বছর!

: আমি বলি এক হাজার বছর।

: আমি বলি আমাদের সন্ধির পর তো আমাদের সাথে কারোরই দেখা হয়নি।

: আপনি মিথ্যে বলেন। কিন্তু মিথ্যা কত সুন্দর। তুমি একথা হয়তো তখন বোলেও বোলবেনা। বোলবে–

: পরিচয় করিয়ে দেই ইনি জনাব..

আর ইনি আমার স্বামী।

আচ্ছা;

কেমন মিহি ভাবে দিন বদলে যায়। এই সেই দিনের কথা। তোমার কথায় একদিন আমার বাড়ী থেকে চলে এসে আর যাওয়া হলোনা। শূন্য একটি কাঠের বাড়ী। কাঠের দোতলা সিঁড়ি। সেখানে একটি বাস ইস্টিশন আছে। একটি ছোট্ট খাল। দুটি কাঠের পুল। একটি বাজার। একটু এগোলেই সেখানে একটি নামকরা কলেজ। আমি সেখানে থাকি। খুব কোনো একটা অসুবিধা হয়না। পাজামা পরে কলেজে যাই। শার্ট পরে কলেজে যাই। একসঙ্গে অনেকগুলো পোষাক পরে আমাদের উল্লেখযোগ্য জায়গায় কেন যে যেতে হয়। আমার ভিতরে উলঙ্গতা ভালো লাগতো। তোমাকে তখন নিশ্চয় আর ঢেকে রাখা যেতনা। শাড়ী উপরের জিনিষ। আসলে আবরণ হলো মন। তোমাকে তখন একটি দেবীর মতো নগ্ন কোরে নিতাম। সামনে গিয়ে কেন যেন বলে উঠতাম,

: বিজ্ঞান ক্লাস কয়টায় জানেন?

: তুমি হেসে বলতে? কেন আমি কি রুটিন?

: রুটিন ইতো!

: কিসের?

আমি হেসে বোলতাম মহাকালের; হয়তো কোনো নাটকীয় হতো বলাটা! কিন্তু তুমি শুনে হাসতে।

বিকেলের সোনালী চায়ের কাপে সবুজ চায়ের ধোঁয়ার মতো হঠাৎ চোখের কোনায় তোমার বাম্প দেখা দিত। তুমি হাসতে না গুম মেরে থাকতে না কান্না চেপে রাখতে!

: আপনি কিছু বোঝেন না?

: কী বিজ্ঞান?

: ইস্! কি বোলছি! কী বলে!

: ওহ!

আমি বুঝে নিতাম ঠিকই। কিন্তু তোমার কথাগুলিই অন্য রকম ছিল। ভালো লাগতো। শুনে নিতাম। তোমার কথাগুলি আমি খুব বেশি ভাবে শুনতে চাইতাম।

.

এক একদিন জ্যোৎস্না রাতে হঠাৎ এরকম মনে হতো। যেমন দরোজা জানালা সব খোলা। বাইরে লাল সুরকির রাস্তা। একটি হিন্দু বাড়ীর পাঁচিল। সুন্দর দুটি মেয়ে আছে বাড়ীতে। জ্যোত্সা রাতে সারসের মতো ছাদের উপর উড়তো তাদের শাড়ী। চুল বাধতে তোমার মতো। আমের বোলের গন্ধে আমার রক্ত দেখি ভীষণ অনুভূতিশীল। একদিন তুমি টেবিলের ধুলো মুছতে গিয়ে আঙ্গুল দিয়ে লিখেছিলে?

অনুভুতি : অনু

তোমার নাম। তোমাকে হঠাৎ ঠোনা দিয়েছিলাম। এই প্রথম। এরকম কোরে চিবুকে ঠোনা দিয়ে আমি অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আমাকে হতভম্ব কোরে দিয়েছিলে।

: তা হলে কী এই?

: কি?

আমি কথাটা অন্য ভাবে ঘুরিয়ে নিলাম। বোলতে চেয়েছিলাম অন্য কিছু। বোলোম তুমি ধুলোর অনু?

: না, রক্তের।

: আমার রক্ত ভীষণ কালো।

: আমি কালো জিনিস খুব ভালোবাসি। খু-উ-ব? এমন ভাবে ঘাড় বাকিয়ে বোললে যে হঠাৎ আমার জ্যোত্সার কথা মনে পড়ে গেল।

তোমাকে কখন কী বলি? তুমি একবার বিকেলে রিকশায় কোথাও যাচ্ছিলে। জেলা শহরে সব দেখা যায়। তা ছাড়া এরকম সুন্দর জায়গায় সৌন্দর্যের আলাদা প্রকরণ। আলাদা ব্যবহার। তোমার সব মনে পড়ে?

সিঁড়ি দিয়ে নাবছিলে
তুমি আমার হাত ধরেছিলে।
আমি তোমাকে কোনো দিন ভুলবোনা
আমি তোমাকে কোনো দিন ভুলবোনা।
দেখি দেখি তোমার আঙ্গুল।

: কেমন?

: খুব সুন্দর।

তোমার পা দুটে দেখি।

তোমার খরগোসের মতো পা। হাতে তুলে নিলাম। তুমি আমার।

খরগোশ। তুমি আমার শয়তান। হঠাৎ বোলে উঠলে দুষ্টু কোথাকার।

যাহ! কোনো কিছু তো ঘটেনি। অন্ধকার সিঁড়ি তোমাদের বাড়ীতে কেউ নেই। বাইরে জ্যোৎস্না সারসের গলারমতো ধবধবে এক চিলতে জ্যোৎ উড়ছিল রেলিং এর ধার ঘেসে। তুমি আমাকে বাইরে ইজিচেয়ার এনে দিলে। ঘড়িতে তাকালে। বোললে। সময় কত ছোট্ট। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে। মানুষের সময় এত ছোট্ট এত সংক্ষিপ্ত কেন?

: আমি উত্তরে কী বোলেছিলাম মনে নেই। তবে তোমাকে বোলেছিলাম। সৌন্দর্য আর সময় এ দুটি ভীষণ প্রতারক! তুমি তখন আমার আঙ্গুল ঝেকে দিয়েছিলে। চলো বাইরে কোথাও যাই। কোথায়? পুকুর ঘাটে। তোমাদের বাড়ীর সুন্দর পুকুর আছে। পাশে আবার কৃষ্ণচূড়ার গাছ। চৈত্রের জ্যোত্স। কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর শুয়ে আছে রোদের মতো।

: তুমি আমাকে একটি ফুল দেখিয়ে দিলে,
: পরীর বুকের কোন জায়গাটার মতো ঐ ফুলটা?
: তুমি বুকের কাপড় আঁটসাট কোরলে।
তৎপর তাকিয়ে বোললে দিন দিন এসব কী হচ্ছে!
আমি বুঝিনা, না? এই এদিকে এসো তো, দেখি,
তুমি আমার চিবুক তুলে ধরে হঠাৎ চুমু খেলে ইস দুধের গন্ধ যায়নি! দুষ্ট!

এখন আমার এ অবস্থা। দুষ্টু, তোমার কথাটা এখন আমার কাছে অন্যরকম। কোনো নির্দোষ শব্দকে আর নির্দোষ ভাবে রাখতে পারিনা। অনেক নারীর সংস্পর্শে এসে এই হয়েছে। তোমার মতো কোথায় পাই। তোমাদের বাড়ীর মতো ওরকম নির্জন বাড়ী পৃথিবীর আর কোথায় আছে? তোমার চিবুকের মতো এমন সুন্দর চিবুক? তোমার পায়ের মতো অমন সুন্দর পা। তুমি খরগোশের চেহারা ভালোবাসতে। তোমাকে আমি একটি কচি খরগোশের বাচ্চা কিনে দিয়েছিলাম। তোমার টেবিল ঘড়ির মতো নীল ডায়ালের তারা দুলছিল আকাশে। তখন তুমি আবার খরগোশটাকে আমার কাছে দিয়ে বোলেছিলে দিলাম প্রত্যুপহার। একে যত্নে রেখো। আবার কী ভাবে না কি ঘটে যায়। যে সাহস! তুমি একে যত্নে রেখো।

তোমার বুকের কাপড়ে তখোন আমার সারা হাত মুখ ঢেকে গিয়েছিল।

.

তুমি আমাকে একবার তোমার এ্যালবাম দেখিয়েছিলে। একটি ছবি আমার খুব ভালো লেগেছিল। যেটাকে তুমি সবুজ বই বাবলার নীচে বাবলা কুড়োচ্ছো। সাদা সাদা কপরা। কপালে লাল টিপ। তোমার হাতগুলি তখোন একটু লাজুক ধরনের ছিল। ফটোতে তাই মনে হলো। তুমি উবু হয়ে আছো। কেবল বয়স হচ্ছে। তার রেশ বেশ স্পষ্ট।

আমি তোমার ওখানটায় আঙ্গুল রেখে হঠাৎ তোমার বুকের দিকে তাকালাম। হঠাৎ জিভ থেকে বেরিয়ে গেল প্রকৃতির কী শক্তি! সব বদলে দিতে পারে! সব বদলে যায়।

আমার আঙ্গুল আর উঠছেনা দেখে তুমি আমার আঙ্গুল উঠতে গিয়ে হঠাৎ তোমার ওষ্ঠে আঘাত পেলে ও দস্যু! তুমি কৃত্রিম রোষে ঘড়ি নিয়ে নাড়া চাড়া কোরলে।

: এরকম তোমার কাছে থাকতে চাই আজীবন! আমি তখোন সবেমাত্র কবিতা পড়া শিখেছি। অনেক দিনের কথা।

: তুমি আমার হাত উঠিয়ে বোললে, জাহাপনা এবার উঠুন। কেমন হয়ে যায় সব। এমন একদিন আসবে। যখোন আমাদের সবাই এক কোঠায় এসে দাঁড়াবে। তুমি শিমুল গাছকে বোলতে শিউলী। শিউলীকে শিমুল। কারণ জেনেছিলাম কিছুদিন পরে। বোলেছিলে ক্ষণস্থায়ীকে কিছুদিন স্থায়ী করা আমার স্বভাব।

: আমার তখনো স্বস্তি লেগেছিল।

কেনা জানে, আমাদের সংসারে ক্ষণস্থায়ী ধর্মী লোকই বেশী?

.

একদিন তোমার ওখানে গিয়ে উঠবে আবার। আমাদের তো অনেক দিন কেটে গেল। এখন আর ওসবের বালাই থাকবে কি? কিন্তু থেকে যায়। কাগজে লেখার মতো স্বচ্ছ, অঙ্গারের মতো রক্তে একটা কিছু আমাদের বাস করে। শত বার বয়স আমাদের বাড় ক। পৃথিবীতে আরো নগরের পত্তন হোক। আরো পেশা বৃদ্ধি পাক। আরো চাকুরীজীবীদের ভীড় হোক। টাইপরাইটার। ব্যাঙ্ক। বড় বড় দালান। সভ্যতা। সব কিছুতে ঢেকে দিয়ে যাক পৃথিবী। ভূগর্ভের ভিতর দিয়ে ট্রেন ছুটে যাক। বাড়ী বসত নির্মিত হোক। বোমার বিস্ফোরণ চলুক। বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ।সাহিত্যের নুতন আঙ্গিক। দুঃখ দুর্দশার মোচন উন্মোচন। যতই কিছু হোকনা কেন। যতই আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যের রুচি পাল্টে যাক। শন ব্যবস্থা অন্য হোক। একই নিয়মে উঠুক বসুক ছোট থেকে বড় ব্যক্তি। কিন্তু তবু রক্তের কোনো পরিবর্তন হবেনা। রক্তে আমাদের সেই সুন্দর সর্বনাশ থাকবে। মনে পড়বে। যেমন মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে তুমিও কি মনে করোনা? ধরো সস্প্যান তুলে রাখছো আলমিরায়। মশারী খাটাচ্ছো। সুন্দর সবুজ চাদরে ঢাকা পরিপাটি শয্যা। মিহি পর্দা। ফুটফুটে দিন বাইরে। সকালে একক বরাদুরে বসে তুমি আর তোমার স্বামী চা খাচ্ছো। ফ্লেভারে ভরে উঠছে আঙ্গিনা। দু একটি তামাক পাতার গন্ধ। তোমার স্বামী ভার্জিনিয়া টোবাকো খান। কৌটা ভরা। নিজে সিগ্রেট তৈরী করেন। মাঝে মাঝে পাইপ টানেন। ইনসিওরেন্সের বড় দালাল। অনেক টাকা। তবু রক্তের মধ্যে সুন্দর সর্বনাশ উড়িয়ে নিয়ে যায় নাকি সুন্দর মিহি পর্দা? টেরেলিনের সবুজ শার্ট? সিল্কের মশারী? মাংসের চৌকিতে আমি আজকাল শুয়ে থাকি। সেদিন একজন সদ্য বিবাহিত পুরুষ হঠাৎ বোলে ফেলেছিলেন। তোমার স্বামীটিও কি তাই?

.

আমার অযথা সময় নষ্ট। আমি একটি গাছকে গাছ বোলতে গিয়ে হঠাৎ তরু বলে উঠি। বৃক্ষ নয় গাছ নয়, কেবল তরু। মানুষের ভিতর অনেক শুচিবাইগ্রস্থতা থাকে। আমার একম শুচিবাইগ্রস্থতা রয়েছে ছোট বেলা থেকে। মাকে ভালোবাসার প্রয়োজনএদখি সবাই ভালোবাসে। আমার মাকে কোনোদিন ভালোবাসা হয়ে উঠলোনা। পিতাকে খুন করার অবদমিত বাসনা একবার ছিল। এখন ভদ্রলোকের প্রতি আমার দয়া হয়ে গেছে। কারণ আমি তার কোনো উপকারেই এলামনা বোলে।

.

একটি পরিবারের কত রকম সমস্যা। তার ছিটে ফোঁটা আমার এক একটি ব্যক্তি সত্তার মধ্যে এখনো বিদ্যমান; মনে আছে তোমার? না হলে শোনো আমার একটি বোন আছে। সুন্দর নিজের বোন বলে নয়। যে কোনো লোকের হলে আমি ঐ কথাই বলতাম। ভালো গলা। হারমোনিয়ামে আষাঢ় শ্রাবণ মানেনাতো মন গেয়েছিল এক শ্রাবণ রাতে। আমি তাকে আমার কাছে আসতে দেইনি আর। সংক্রমিত হয়ে গিয়েছিলাম বলে। সংক্রমন বড় মারাত্মক রোগ। যার দ্বারা সংক্রমিত হয় তাকে আর সহ্য হয়না পরে। সে এখন আরো সুন্দরী হয়ে উঠছে। খবর এসেছে। গ্রামের বাড়ীতে কী পড়াশুনা হয়? দু একটা চিঠিও আমাকে লিখেছে। দরিদ্রের যে অভ্যাস। তাই ও এখন থেকে ধারণ কোরে নিয়েছে। প্রতি চিঠিতে সাংসারিক ফিরিস্তি বর্ণনা। দাদা তোমাকে কত আশা করিয়া.. আমার প্রতি তুমি একবারও ফিরিয়া তাকাওনা। তুমি কি আমার সেই গলার চেনটা বিক্রি করিয়া দিয়াছ? মা তোমার কথা বলিয়া কাঁদেন। তিনি ভীষণ অসুখী হইয়া পড়িয়াছেন। আমাদের সংসারে কত অভাব। দাদা তুমি কি বুঝিয়াও বোঝনা, ইত্যাদি ধরনের লিখন ভর্তি, কয়েকটি পত্র তার, এখনো আমার খয়েরী ডায়েরীতে যথারীতি রক্ষিত আছে। আর আমিও তেমন। কোনো কাজে আমি স্থাপিত নেই আর। কোনো সত্য মিথ্যায়। আমি যে কোনো সময়ে যে কোন প্রকার ঘটনাকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছি। মানুষের মনস্তত্ব একে কী বলে আমার জানা নেই। তুমি একবার জ্যোৎস্নায় একটি বিড়াল দেখে হঠাৎ হো হো কোরে হেসে উঠছিলে আমি বোলেছিলাম কী হাসলে ক্যানো?

তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বোলেছিলে এমনি, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল তুমি আরো কিছু একটা বোলেও আর বোললেনা। পরে কোনো এক বইয়ে জেনেছিলাম মানসিক অবদমনের কথাটা এবং বিভিন্ন বিভিন্ন জিনিসে মানসিক প্রতিক্রিয়ার কথা। তোমার তখন যৌন বোধ জেগেছিল। তুমি তা লুকিয়ে গিয়েছিলে।

.

আমিও অনেক কিছু অমন লুকিয়ে যাই। খামাখাই কোনো কার্যকরণ সূত্র নেই। এমনি। ইচ্ছে হলো। হঠাৎ হয়তো একটি প্রচণ্ড রকমের মিথ্যা কথা বোলে ফেললাম। কোনো মানে হয়না যদিও। তবু অনেক কিছুরই তো মানে হয় না। আমার পরিবারবর্গের দারুণ দারিদ্রের কথা এই যে তোমাকে বোলোম। এর মানে হয়? বন্ধুকে একবার বোলেছিলাম মা অনেক আগে মারা গেছেন। তখন আমার মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়নি। কারণ একটি কথা তখনো বার বার মনে এসেছিল, অনুপস্থিতি। এখান থেকে একশো মাইল তার দক্ষিণে একশো মাইল। তারপর পূর্ব পশ্চিমে এগিয়ে একটি নদী। একটি ইস্টিশন। সেখানে লঞ্চ ভেড়ে। সেখান থেকে অল্প কিছু দূর। একটি বাদাম গাছের তলায় একটি কবর। তারপর দু একটি ঘর এগিয়ে একটি সুন্দর স্বপ্নীল ঘর। টিন শেড দেয়া। বাগান চারিদিকে। আমগাছ রয়েছে গোটা কতক। টিউবঅয়েল। ফিলিপস রেডিওতে কোথাকার খবর শোনা যায়। সেখানে হয়তো এ মুহূর্তে মা আয়না দেখছেন। এত বয়সের উত্তরাধিকারিণী। আমার মা। সুন্দরী এখনো। সোনার ঘড়ি সোনার চেন ক্ষয়ে যায় ব্যবহারে। কিন্তু রূপ থেকে যায়। ঘর্ষণে ব্যবহারে ফুরায় না। মা আছেন। তেমন রূপে আর বাকী ঘর্ষণে যা ফুরিয়েছে। এখনো রয়েছে অনেক। তোমার মতোন কোঁকড়া নয় তার চুল। লম্বা। এখনো খোঁপা করলে দু মুঠোয় ভরা যাবে না। তোমার গ্রীবার মতো সাদা গ্রীবা। নাক। আমাকে তো দেখেছ? এরকম চোখ আমার মতো! পা, রং গড়ন আমার মতো। অনেকে বলে মার চেহারা পেলে সন্তান ভাগ্যবান হয়। কথাটা সত্যি। তুমি শুনে হাসবে। কিন্তু কিছু করি না। চাকরী নেই। পড়া ছেড়ে দিলাম। কোনো পার্থিব কার্যে আমার হাত পাকা হলোনা। কিন্তু তাতে কি। আমি কত ভাগ্যবান। তুমি ভেবে দেখোনি। আমি গাছকে কত সুন্দর ভাবে চেয়ে দেখি। একটি ফুল। এক রকম প্রজাতি আছে তাদের ঘ্রাণশক্তি ভীষণ প্রখর। তারা ফুলের গন্ধ চিনে তারপর সেখানে বসে। আমার ইন্দ্রিয়ের শক্তি তেমন প্রজাপতির মতো। আমি কত ভাগ্যবান। আমি তোমার সাথে তোমার নিজস্ব পাপড়িতে ঠিক গন্ধ বর্ণ চিনে বসতে পেরেছিলাম একদিন।

ঢাকা শহরের আয়তন তুমি জানো? ভূগোলের আয়তন? একটি বৃক্ষের ব্যাস কত? তুমি একবার কাছে এসেছিলে। তোমার কোথায় কোন তিল আছে আমি এখনো বোলে দিতে পারি। তোমার সেই তিলটি কী নরোম আর লাল! আমি বলতাম আমার আর পাথরের অভাব হবে না।

: কেমন

: পাথরের অভাব হবে না বলছি?

: কি পাথর? এবং কিসের জন্যই বা?

তুমি বুঝতে পারছিলেনা। আমি বোললুম। অনেকেই তো কত দামী দামী পাথরের অঙ্গুরি হাতে নেয়। তিব্বত হিমালয়ের পাদদেশ থেকে পাথর আনিয়ে নেয়। লাল নীল বর্ণের। দামী পাথর। আংটি পরে। আমি দেখো সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গুরি পরবো। সবচেয়ে মূল্যবান পাথরের। তুমি তবুও বুঝতে পারছিলেন। তোমার রাগ হচ্ছিল। আঙ্গুল ঝকাচ্ছিলে। তোমার বুকের কাপড়ের নিচে সরে আসছিল ছায়া। ব্লাউজের উপর থেকে লজ্জা সরে গিয়েছিল; তুমি রাগত স্বরে বোলে উঠেছিলে রাখো তোমার হেঁয়ালি।

আমি আস্তে তোমার বুকের তিলটার উপর আঙ্গুল রেখে বোলোম : এই, এই আমার তিব্বত এই আমার রক্তিম পাথর। এই আমার মহামূল্যবান অঙ্গুরি।

তুমি তাড়াতাড়ি ঢেকে দিয়েছিলে। দিন দিন কী হচ্ছো তুমি। কপট ভাষণ কোরে আবার স্বাভাবিক হয়ে পড়েছিলে!

.

তুমি অনেক জায়গায়ই তো যাওনি? একবার সিনেমায় গ্যান্ডোলার সার দেখে ভাসমান নদীর উপর বাজার দেখে হংকং এর উপর তোমার নজর পড়ে গিয়েছিল। তুমি আমার নাকটা বোচা করে দিতে শুরু কোরলে। উঃ কী পাগলামিতেই না দিন কেটেছে! এখন অনেক বছর হয়ে গেল। এখন যদি যাই। আমার তো সেই গোপন সংক্রমণগুলি আর নেই। ক্ষয় হয়ে গেছে নিত্য ব্যবহারে। অথচ নারী শরীরের কত অক্ষত গোপন রহস্য। কিন্তু কী আশ্চর্য! শুধু বাড়ে আর বাড়ে। এখন বুঝি একটা লোক একটা মেয়ে বিয়ে করে কেন অন্য নারী গমন না কোরেও সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।

একবার দেখা হতে যদি। আমাদের এ নগর মহানগর হবে একদিন। অনেক রকমের দালান স্থাপিত হবে। অনেক আত্মহত্যা। অনেক সাইকিয়াট্রিস্ট বাড়বে। মোড়ে মোড়ে লন্ড্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। মাঝে মাঝে এক একবার আমার মনে হয় আমাদের সভ্যতা মানেই লন্ড্রী আর সেলুন আর ওষুধের দোকান কারণ যেখানেই যাই আর কিছু চোখে না পড়ুক ও তিনটি চিনিস চোখে পড়বেই পড়বে। যাকগে ভালো হলো, আবার যদি দেখা হয়। তোমার সুন্দর বাড়ীতে। অবশ্য বাড়ীতে আমি কোনোদিন যেতে পারবোনা। আমার কুকুর দেখলে সঙ্গমের কথা মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে টাকা থাকেনা। তখোন সিগ্রেট বাসের উপর খুব যত্নসহকারে খানকিপাড়া লিখে বাসনা নিবৃত্তি করি। তুমি হঠাৎ কোরে ভাববে যে লোক তরু শব্দের মতো সুন্দর কোমল, স্নিগ্ধ শব্দ ভালোবাসে সে ওরকম যথেচ্ছাচারী কর্কশ দুরগন্ধযুক্ত শব্দটিকে কি কোরে লিখতে পারে। আমারও তাই মনে হয়। অথচ আশ্চর্য, আমি লিখতে বা কোরতে বসলে আর দ্বিধা করি না। মানুষের গোপনে কত অতিক্রমণ ঘটে যায়। সে বুঝতে পারে না। সে কী কোরছে। প্রভু যীশু খালি খালি কী আর বোলেছিলেন! থাক কথাটা বড় ব্যবহার দুষ্ট। তুমি অনেক কিছুই ইশারা দিলেই বুঝতে; এটা বুঝে নিও। একবার কি আমাদের দেখা। হবে না? এ শহর আরো কত বড় শহর হবে। এরোড্রাম। সুন্দর সভ্যতার শো শো আওয়াজ শুনছি আমি। চারিদিকে দেয়ালে দেয়ালে কত বিপ্লবের সুন্দর পোস্টার। গাছ। বৃক্ষ। আত্মহত্যা। কবি হলে ভালো ভালো লিখে নিতে পারতাম সব। হেঁকে নিতে পারতাম। বোধ ও বোধ। কত রকম ভাবে জীবনযাপন করে। এ নিয়ে কত গল্প লেখা হয়। কত গল্পকার আসে আর ছিটে ফোঁটা অভিজ্ঞতা ঢেলে দেয়। ঢেলে দেয় কেন বলি তারা দলে দণ্ডিত হয়। তুমি কতবার আমাকে এমন ধারায় দণ্ডিত কোরেছ এখন কী আর তা মনে আছে।

মনে আছে কেবল জোৎস্না! মনে আছে কেবল লাল দালান মনে আছে কেবল আমের বোলের গন্ধ। কোকিল আমাদের বিশ্ব সংসার থেকে যেনো কোথাও পালিয়ে গেছে। তুমি একদিন কোকিলের স্বর নকল কোরে শুনিয়েছিলে। অবিকল সে রকম। তখন হঠাৎ ঘরে বসন্ত এসেছিল। যদিও ছিল সেটা শীতকাল। তবুও কেন জানি বসন্তু এসে গিয়েছিল। আমি তোমার চোখের উপর চোখ রেখে বোলেছিলাম এমন কাউকে পেলে আজীবন কত কোকিল ডাকে! আর, আর কত বসন্ত আসে।

তুমি বোলেছিলে মাথা খারাপ হলো নাকি তোমার! এটা তো শীতকাল। গলায় মাফলার জড়িয়েও টের পাওনা।

তোমার গায়ে সাদা স্কার্ফ! তুমি সাদা স্কার্ফ ভালোবাসো। আমি বোলোম। হা হা শীতকাল।

কিন্তু তুমিও তো জানতে আমি কী বুঝাতে চেয়েছিলাম! বাস্তবের নামে কত হেয়ালীই যে তুমি কোরেছ!

আজ যদি দেখা হয়। আমি তো গল্প লিখতে পারিনে। অনেকেই দেখি গল্পের প্রারম্ভে একটি ট্রেন ইস্টেশন দেয়। কতগুলি ভীড়। তারপর নায়ক হয়তো কোথাও চলে যায় সমুদ্রে না হলে কাছাকাছি কোথাও। আমার আবার ও সব ধাতে সয়না। আমি একবারই বোধ হয় সমুদ্রে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে অন্য কারণে। তোমার জন্য। আমার অসুখ হয়েছিল। হাওয়া বদলের জন্যে বোলেছিলে। নগদ টাকা দিয়েছিলে। আমি তোমার কপালের, মাথায় ছুঁয়ে তারপর একবার এক হাস্যমুখী পূর্ণিমায় কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। আর একবার একটি ছোট খাটো বনের মতোন জায়গায়। তোমার সঙ্গে। তাও পিকনিক কোরতে। আমাদের মনে আছে একটি পুরো মুরগীর রোস্ট খেতে হয়েছিল? কী সুগন্ধ ছিল সেদিনের মাংসে। তুমি মাংসে কামড় দিতে গিয়ে হঠাৎ বোলেছিলে না তুমিই খাও! একটু পরে কলা রুটি খেয়ে নেবো; ভালোলাগছে না।

আমি বুঝেছিলাম তোমার মানসিক প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হয়ে গেছে। এক ধরনের মেয়ে আছে নাকি যারা নির্জনে একলা পুরুষের সামনে মাংস খেতে পারে না। তুমি বোধ হয় সেরকমের। কিন্তু হয়তো তাও নয়। তুমি আমাকে একা নির্জনে পেয়ে মাংস খাওয়ার নামে অন্যকিছু ইশারা কোরেছিলে। আমি বুঝতে পারিনি। না হলে ফিরে আসার পথে এ রকম বোকা শব্দটি একশো বার তোমাকে বানান কোরতে হবে…এ রকম ভিক্টোরিয়া মার্কা আদেশ কেউ দেয় নাকি?

.

আমি এখন আর ডায়েরী লিখিনা। কোনোদিন লিখতাম না। তবে কয়েক দিন একটি পাতায় তোমার পরিচয় পত্রটা লিখে রেখেছিলাম। আমাদের এই ঢাকা। আমরা যেখানে থাকি। এই নগর কত বদলাবে। আমাদের মতো। তুমি যে রাস্তা দিয়ে অনেক দূর হাঁটতে। তোমার যে গাছটা ভালোলাগতো! তুমি হয়তো দেখবে অনেক বদলে গেছে আমাদের সংসার। আমাদের সম্ভাষণ, আমাদের সমস্যা। কত বড় দোতলা বাস এসে গেছে ইতিমধ্যে। মেয়েরা সব চুল খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। কত মেয়ে পুরুষের ভীড়। জীবন যাপন দ্রুত চলছে। হৃদয় লয় পাচ্ছে। রোদে পোড়া ভালোবাসার এখন কতটুকুই বা আর জ্যোৎস্নার প্রয়োজন। এখন আমের বোল গন্ধ দেয় না। সেটা প্রয়োজন। আম ফলে প্রয়োজনের আম। যাই হয় প্রয়োজনের হয় সব কিছু। ভবিষ্যতে আমি হয়তো যে বাসায় থাকবে। তারই পাশে এক ভদ্র মহিলা। ধরো এমনও তত হতে পারে অবিবাহিতা, কোনোদিন বিয়ে করবেন না। কিন্তু অনেকে আবার বিয়ে না করেও বিবাহিত রাত্রি যাপন করে শুনেছি। এ রকম নারী পুরুষ এখনও তো আছে লোকালয়ে! সে রকম হয়তো হতে পারে মহিলাটি! ঠুকঠাক আওয়াজ বাড়বে তারপর মধ্যরাতে। কিন্তু হয়তো আমারই ভুল। একদিন হয়তো আবিষ্কার কোরলাম। তিনি শিল্পী। মূর্তি গড়েন কাঠের। নিঃসঙ্গ নির্জন। এ রকম একটি নগর যদি হয় এই ঢাকা। প্যারিসে কত ক্যাফে রোস্তার। আড়। আমাদের এ আর হয়ে উঠছেনা। কবে হবে? অপেক্ষায় আছি। সে রকম মানুষের ভীড়। উচ্ছল উজ্জ্বল মানুষ। যুক্তিসম্মত। ম্যাটেরিয়ালিস্ট। প্রতি রবিবারে সেট কোরে বের হয়ে গেল ফ্রেন্ডদের সাথে। আড্ডা দেয়। কাজে যায়। এ রকম একবার যদি আমার এই নগরের চেহারা দেখতে হয়। তখন আমি তোমকে একটি রেস্তোরাঁয় আবিষ্কার কোরবো। তুমি বসে আছো। আমারও তখনো বয়স হয়ে গেছে। চিরকাল স্বপ্নেরপুষ্টি ছাড়া শরীরে আমার আর কিছু নেই। দেখতে পেলে, বসে আছি। আমি তোমাকে দেখতে পেলাম। অনেক লোকজন।

কে কার খেয়াল রাখে? সবাই লাঞ্চের পিরিয়ডে লাঞ্চ সেরে নেয় রেস্তোরাঁয়। আড্ডা দেয়, বাড়ীতে আর মন বসে না। মানুষ বড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাবে তখোন। মানুষের বাড়ীতে আর মন বসবে না। রাজনৈতিক আলাপ চালাবে। দন্তসুলের, হৃদরোগের আলাপ চালাবে। বোলবে, কতদিন ভোরে উঠলে স্বাস্থ্য হয়? তবু কিছুতেই কিছু হয় না। এক ভাই অন্য ভাইয়ের খোঁজ না নিলে যেমন সম্পত্তির অবস্থা, কিছুতেই কিছু হয় না। সব পাল্টে গেলেও সেই যে গাছ। গাছ তেমন থাকবে। আমি তখোন হয়তো গাছকে তরু বোলবো। তরু শব্দটি তখোন একমাত্র আমার মূলধন। আমার একটি নীল নোটবুক থাকবে। যাতে আমি কোনোদিন কোনো কিছু লিখিনি। তোমাকে দেখবো। মনোময় ভঙ্গিতে তুমি তোমার এক পুরুষের সাথে বসে আছো!

নারীর চেহারা থেকে তোমার উত্তরণ ঘটেছে। নির্বিকার সুন্দরের অধিষ্ঠাত্রীতে। তোমাকে সুন্দর বোলে ডেকে উঠবো। কিন্তু তোমার সাথে পুরুষ। তা ছাড়া বয়স কত হলো? ষাট? সত্তর? আশি? হাজার? কত হলো? কিন্তু বয়স কি? অনুভূতি কি? ভালোবাসা কি? জীবন কি? মানুষ তার প্রয়োজনের সংসারে আপনাপন বিকৃতি ও দর্শন নিয়ে সুখী। আমি সেই যে একবার গাছকে তরু বোলেছিলাম। একমাত্র সেই তরুই জেনে নেবে আমাদের সবকিছু। আর আমরা জানি আমরা শুধু নিমিত্ত!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *