জীবনীপঞ্জী
জন্ম :— ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার আহিরিটোলার মামারবাড়িতে। ভালো নাম রাখা হয় অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। দাদামশাই নাম রাখেন ‘উত্তম’।
শিক্ষা :— চক্রবেড়িয়া হাইস্কুলে শুরু করে সাউথ সুবার্বণ মেন স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। স্কুলে থাকতে ১০ বছর বয়সে প্রথম ‘গয়াসুর’ নাটকে অভিনয় ও মেডেল লাভ। এছাড়া, ইস্কুলেই পড়াকালীন প্রথম বাইরে শখের থিয়েটারে অভিনয় করেন ‘মুকুট’ নাটকে।
উপনয়ন :— ১৯৩৯-এ ১৩ বছর বয়সে।
সঙ্গীতশিক্ষা :— প্রখ্যাত গুণী সঙ্গীতজ্ঞ নিদানবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ১৯৪২ সালে।
চাকরি :— ১৯৪৪ সালে পোট কমিশনার্স-এ কেরানী হিসেবে যোগদান। গৌরী দেবী (গৌরীরানী গাঙ্গুলি)-র সঙ্গে প্রথম দেখা। এই বছর কিছুদিন চক্রবেড়িয়া (সাউথ) মনোরমা স্কুলে গান শেখান।
প্রথম স্যুটিং :— ১৯৪৭ সালে হিন্দি ‘মায়াডোর’ ছবিতে ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে। ছবিটি মুক্তি পায়নি।
প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি :— ১৯৪৮ সালে নীতিন বসু পরিচালিত ‘দৃষ্টিদান’ ছবি।
প্রথম নায়ক :— ১৯৪৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত নব্যেন্দুসুন্দর ব্যানার্জি পরিচালিত ‘কামনা’ ছবিতে। নায়িকা ছিলেন ছবি রায়। এই ছবিতে নাম নেন ‘অরুণকুমার’। ১৯৫০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দিগম্বর চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘মর্য্যাদা’ ছবিতে নাম নেন ‘অরূপকুমার’। সম্ভবত, ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজেন চৌধুরি পরিচালিত ‘ওরে যাত্রী’ ছবি থেকে নাম নিলেন— ‘উত্তমকুমার’।
বিবাহ :— ১৯৫০-এর ১ জুন গৌরী দেবীর সঙ্গে বিয়ে। এই বছরেই এম. পি প্রোডাকসন্সের স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান। ১৯৫১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম।
প্রথম সাফল্য :— ১৯৫২ সালে মুক্তি পাওয়া নির্মল দে পরিচালিত ‘বসু পরিবার’ ছবিতে। এই বছর পোর্ট কমিশনার্স-এর চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে প্রথম ছবি :— ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে। প্রথম পেশাদার মঞ্চে অভিনয় করেন ‘স্টার’ থিয়েটারে ‘শ্যামলী’ নাটকে। ১৯৫৩ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে ১৯৫৫ সালের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৮৪ রাত্রি, এই নাটকে নায়ক অনিলের চরিত্রে অভিনয় করেন। সঙ্গে ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সরযূবালা দেবী, অনুপকুমার প্রমুখ বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীবর্গ।
—রোম্যান্টিক ‘স্টার’ ইমেজ পান ‘অগ্নিপরীক্ষা’ (১৯৫৪) ছবিতে। নায়িকা ছিলেন সুচিত্রা সেন।
—‘নবজন্ম’ (১৯৫৬) ছবিতে নচিকেতা ঘোষের সুরে ৬ খানি কীর্তনের পদ অভিনয়সহ নিজের গলায় গেয়েছিলেন। রেকর্ডে গানগুলি ছিল না। সম্ভবত, আর কোনো ছবিতে তাঁর গলায় গান শোনা যায় নি।
—‘হারানো সুর’ (১৯৫৭) উত্তমকুমারের প্রথম প্রযোজিত ছবি। পরিচালক ছিলেন অজয় কর। উত্তমকুমারের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন সুচিত্রা সেন।
—‘তাসের ঘর’ (১৯৫৭)-এ প্রথম দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয়।
—‘পথে হলো দেরী’ (১৯৫৭)-তে প্রথম রঙিন ছবিতে অভিনয়। ছবিটি গেভা কালারে তোলা।
—১৯৫৯ সালের ৭ ডিসেম্বরে পিতৃবিয়োগ।
—‘শুধু একটি বছর’ (১৯৬৬) প্রথম পরিচালিত ছবি হিসেবে মুক্তি পায়।
—‘কাল তুমি আলেয়া’ (১৯৬৬) ছবিতে প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
—সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’-এ অভিনয়সূত্রে তাঁরই সঙ্গে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে যান। এটাই উত্তমকুমারের প্রথম বিদেশযাত্রা।
—১৯৬৭ সালে নিজেরই প্রযোজনায় প্রথম অভিনীত হিন্দি ছবি হিসেবে ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবিটি মুক্তি পায়। নায়িকা ছিলেন বৈজয়ন্তীমালা।
—১৯৬৭ সালে ভারত সরকার প্রথম চালু করেন ‘ভরত পুরস্কার’। প্রথমবারই, ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ হিসেবে যথাক্রমে ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি’ ছবির জন্য এই পুরস্কার পান উত্তমকুমার।
—‘অভিনেতৃ সংঘ’-এর সভাপতিত্ব ছেড়ে ১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করলেন ‘শিল্পী সংসদ’। আজীবন সভাপতি ছিলেন এই সংস্থার। বেশকিছু ছবি প্রযোজনা থেকে আরম্ভ করে চলচ্চিত্র জগতের নানারকম উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কাজ করতো এই সংস্থা।
—১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতা পুরসভা নাগরিক সংবর্ধনা দেন উত্তমকুমারকে।
—দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মেয়ে ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মা অপর্ণা রায়ের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক নির্মিত তথ্যচিত্রে ভাষ্যকারের ভূমিকা নিয়েছিলেন উত্তমকুমার।
—চিরপরিচিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জায়গায় ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে কলকাতা বেতারে সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’ নামে গীতিআলেখ্য। এই অনুষ্ঠানে অন্যতম ভাষ্যপাঠে ছিলেন উত্তমকুমার।
—১৯৭৮ সালের ১ মার্চ পুত্র গৌতমের বিয়ে।
—১৯৭৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নাতনির জন্ম। দিনটি দুর্গাপূজার নবমীর দিন হওয়াতে, উত্তমকুমার তাঁর নাতনীর নাম দেন ‘নবমীতা’।
—১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, রাত ৯-৩০ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে প্রয়াত হন উত্তমকুমার।
কর্মপঞ্জী
উত্তমকুমার অভিনীত বাংলা ছবির তালিকা
মুক্তির তারি ছবির নাম পরিচালক নায়িকা
২৪.৪.১৯৪৮ দৃষ্টিদান নীতিন বসু —
৪.৩.১৯৪৯ কামনা নব্যেন্দুসুন্দর ছবি রায়
২২.১২.১৯৫০ মর্যাদা দিগম্বর চ্যাটার্জি মনীষা দেবী
২.২.১৯৫১ ওরে যাত্রী রাজেন চৌধুরী করবী গুপ্তা
৯.৩.১৯৫১ সহযাত্রী অগ্রদূত ভারতী দেবী
২৪.৮.১৯৫১ নষ্টনীড় পশুপতি চ্যাটার্জি সুনন্দা দেবী
৮.২.১৯৫২ সঞ্জীবনী সুকুমার দাশগুপ্ত সন্ধ্যারানী
১১.৪.১৯৫২ বসু পরিবার নির্মল দে সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১৫.৮.১৯৫২ কার পাপে কালীপ্রসাদ ঘোষ মঞ্জু দে
২০.২.১৯৫৩ সাড়ে চুয়াত্তর নির্মল দে সূচিত্রা সেন
১০.৭.১৯৫৩ লাখ টাকা নীরেন লাহিড়ী সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১১.৯.১৯৫৩ নবীন যাত্রা সুবোধ মিত্র মায়া মুখার্জি
৯.১০.১৯৫৩ বউ ঠাকুরানীর হাট নরেশ মিত্র মঞ্জু দে
১৯.১.১৯৫৪ মনের ময়ূর সুশীল মজুমদার ভারতী দেবী
৫.২.১৯৫৪ ওরা থাকে ওধারে সুকুমার দাশগুপ্ত সুচিত্রা সেন
২.৪.১৯৫৪ চাঁপা ডাঙ্গার বৌ নির্মল দে সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৭.৫.১৯৫৪ কল্যাণী নীরেন লাহিড়ি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১৬.৭.১৯৫৪ সদানন্দের মেলা সুকুমার দাশগুপ্ত সুচিত্রা সেন
৩.৮.১৯৫৪ অন্নপূর্ণার মন্দির নরেশ মিত্র সুচিত্রা সেন
৩.৯.১৯৫৪ অগ্নিপরীক্ষা অগ্রদূত সুচিত্রা সেন
১.১০.১৯৫৪ বকুল ভোলানাথ মিত্র অরুন্ধতী মুখার্জি
১২.১১.১৯৫৪ গৃহপ্রবেশ অজয় কর সুচিত্রা সেন
১৭.১২.১৯৫৪ মন্ত্রশক্তি চিত্ত বসু সন্ধ্যারানী
২৫.৬.১৯৫৪ মরণের পরে সতীশ দাশগুপ্ত সুচিত্রা সেন ও প্রণতি ভট্টাচার্য
২৮.১.১৯৫৫ সাঁঝের প্রদীপ সুধাংশু মুখার্জি সুচিত্রা সেন
১৮.২.১৯৫৫ অনুপমা অগ্রদূত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৮.৩.১৯৫৫ রাইকমল সুবোধ মিত্র কাবেরী বসু
৮.৪.১৯৫৫ দেবত্র হরিদাস ভট্টাচার্য সবিতা চ্যাটার্জি
২৭.৫.১৯৫৫ শাপমোচন সুধীর মুখার্জি সুচিত্রা সেন
১.৭.১৯৫৫ বিধিলিপি মানু সেন সন্ধ্যারyনী
২৯.৭.১৯৫৫ হ্রদ অর্ধেন্দু সেন সন্ধ্যারানী
১২.৮.১৯৫৫ উপহার তপন সিংহ মঞ্জু দে
১২.৮.১৯৫৫ কঙ্কাবতীর ঘাট চিত্ত বসু সন্ধ্যারানী
২১.১০.১৯৫৫ রাতভোর মৃণাল সেন সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২১.১০.১৯৫৫ ব্রতচারিণী কমল গাঙ্গুলি সন্ধ্যারানী
১.১২.১৯৫৫ সবার উপরে অগ্রদূত সুচিত্রা সেন
১.২.১৯৫৬ সাগরিকা অগ্রগামী সুচিত্রা সেন
৯.৩.১৯৫৬ সাহেব বিবি গোলাম কার্তিক চ্যাটার্জি অনুভা গুপ্তা ও সুমিত্রা দেবী
১৩.৯.১৯৫৬ লক্ষহীরা চিত্তরঞ্জন মিত্র মঞ্জু দে
১৪.৪.১৯৫৬ চিরকুমার সভা দেবকীকুমার বসু অনিতা গুহ
১৯.৫.১৯৫৬ একটি রাত চিত্ত বসু সুচিত্রা সেন
১.৬.১৯৫৬ শঙ্করনারায়ণ ব্যাঙ্ক নীরেন লাহিড়ি কাবেরী বসু
১৬.৬.১৯৫৬ শ্যামলী অজয় কর কাবেরী বসু
২৮.৬.১৯৫৬ ত্রিযামা অগ্রদূত সুচিত্রা সেন ও অনুভা গুপ্তা
৫.১০.১৯৫৬ পুত্রবধূ চিত্ত বসু মালা সিনহা
৩০.১১.১৯৫৬ শিল্পী অগ্রগামী সুচিত্রা সেন
২৮.১২.১৯৫৬ নবজন্ম দেবকীকুমার বসু সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১৮.১.১৯৫৭ হারজিত মানু সেন অনিতা গুহ
২৩.১.১৯৫৭ বড়দিদি অজয় কর সন্ধ্যারানী
১৯.৪.১৯৫৭ যাত্রা হলো শুরু সন্তোষ গাঙ্গুলি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৩.৪.১৯৫৭ পৃথিবী আমারে চায় নীরেন লাহিড় মালা সিনহা
১৪.৮.১৯৫৭ তাসের ঘর মঙ্গল চক্রবর্তী সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৮.৬.১৯৫৭ সুরের পরশে চিত্ত বসু মালা সিনহা
২.৮.১৯৫৭ পুনর্মিলন মানু সেন সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৬.৯.১৯৫৭ হারানো সুর অজয় কর সুচিত্রা সেন
২০.৯.১৯৫৭ অভয়ের বিয়ে সুকুমার দাশগুপ্ত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১৪.১১.১৯৫৭ চন্দ্রনাথ কার্তিক চ্যাটার্জি সুচিত্রা সেন
৫.১২.১৯৫৭ পথে হল দেরী অগ্রদূত সুচিত্রা সেন
২৫.১২.১৯৫৭ জীবনতৃষ্ণা অসিত সেন সুচিত্রা সেন
২৮.২.১৯৫৮ রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত হরিদাস ভট্টাচার্য সুচিত্রা সেন
২৮.২.১৯৫৮ বন্ধু চিত্ত বসু মালা সিনহা
১৪.৩.১৯৫৮ মানময়ী গার্লস স্কুল হেমচন্দ্র চন্দ্র অরুন্ধতী মুখার্জি
৮.৮.১৯৫৮ ডাক্তারবাবু বিশু দাশগুপ্ত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৫.৯.১৯৫৮ শিকার মঙ্গল চক্রবর্তী অরুন্ধতী মুখার্জি
১০.১০.১৯৫৮ ইন্দ্রাণী নীরেন লাহিড়ি সুচিত্রা সেন
১৪.১১.১৯৫৮ যৌতুক জীবন গাঙ্গুলি সুমিত্রা দেবী
২১.১১.১৯৫৮ সূর্যতোরণ অগ্রদূত সুচিত্রা সেন
১২.২.১৯৫৯ মরুতীর্থ হিংলাজ বিকাশ রায় সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৭.২.১৯৫৯ চাওয়া পাওয়া যাত্রিক সুচিত্রা সেন
১২.৩.১৯৫৯ বিচারক প্রভাত মুখার্জি অরুন্ধতী মুখার্জি
২৫.৬.১৯৫৯ পুষ্পধনু সুশীল মজুমদার অরুন্ধতী মুখার্জি
১৭.৭.১৯৫৯ গলি থেকে রাজপথ প্রফুল্ল চক্রবর্তী সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৪.৯.১৯৫৯ খেলাঘর অজয় কর মালা সিনহা
৮.১০.১৯৫৯ সোনার হরিণ মঙ্গল চক্রবর্তী সুপ্রিয়া চৌধুরী
৬.১১.১৯৫৯ অবাক পৃথিবী বিশু চক্রবর্তী সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১.১.১৯৬০ মায়ামৃগ চিত্ত বসু সন্ধ্যা রায়
৮.১.১৯৬০ রাজাসাজা বিকাশ রায় সাবিত্রী চ্যাটার্জি ২৩.১.১৯৬০ কুহক অগ্রদূত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১২.২.১৯৬০ উত্তর মেঘ জীবন গাঙ্গুলি সুপ্রিয়া চৌধুরী
১৪.৪.১৯৬০ হাত বাড়ালেই বন্ধু সুকুমার দাশগুপ্ত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৮.৪.১৯৬০ খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন অগ্রদূত সুমিতা সান্যাল
৩০.৬.১৯৬০ সখের চোর প্রফুল্ল চক্রবর্তী বাসবী নন্দী
২৩.৯.১৯৬০ শহরের ইতিকথা বিশু দাশগুপ্ত মালা সিনহা
৯.১২.১৯৬০ শুন বরনারী অজয় কর সুপ্রিয়া চৌধুরী
২.৩.১৯৬১ সাথীহারা সুকুমার দাশগুপ্ত মালা সিনহা
১৪.৪.১৯৬১ অগ্নিসংস্কার অগ্রদূত সুপ্রিয়া দেবী
৮.৬.১৯৬১ ঝিন্দের বন্দী তপন সিংহ অরুন্ধতী মুখার্জি
৭.৭.১৯৬১ নেকলেস দিলীপ নাগ সুনীতা দেবী
২০.১০.১৯৬১ সপ্তপদী অজয় কর সুচিত্রা সেন
২০.১০.১৯৬১ দুই ভাই সুধীর মুখার্জি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৬.১.১৯৬২ বিপাশা অগ্রদূত সুচিত্রা সেন
২৩.২.১৯৬২ শিউলিবাড়ি পীযূষ বসু অরুন্ধতী মুখার্জি
১২.৪.১৯৬২ কান্না অগ্রগামী নন্দিতা বসু
১.২.১৯৬৩ শেষ অঙ্ক হরিদাস ভট্টাচার্য শর্মিলা ঠাকুর
৮.৩.১৯৬৩ নিশীথে অগ্রগামী নন্দিতা বসু ও
সুপ্রিয়া দেবী
২৬.৪.১৯৬৩ উত্তরায়ণ অগ্রদূত সুপ্রিয়া দেবী ও সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৩১.৫.১৯৬৩ ভ্রান্তিবিলাস মানু সেন সাবিত্রী চ্যাটার্জি ও
সন্ধ্যা রায়
২৪.১০.১৯৬৩ সূর্যশিখা সলিল দত্ত সুপ্রিয়া দেবী
২৪.১০.১৯৬৩ দেয়া নেয়া সুনীল ব্যানার্জি তনুজা
১৪.২.১৯৬৪ বিভাস বিনু বর্ধন ললিতা চ্যাটার্জি
২০.৩.১৯৬৪ জতুগৃহ তপন সিংহ অরুন্ধতী দেবী
১৪.৮.১৯৬৪ নতুন তীর্থ সুধীর মুখার্জি সুলতা চৌধুরী
২.১০.১৯৬৪ মোমের আলো সলিল দত্ত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৬.১১.১৯৬৪ লাল পাথর সুশীল মজুমদার সুপ্রিয়া দেবী
১২.২.১৯৬৫ থানা থেকে আসছি হীরেন নাগ মাধবী মুখার্জি
২.৪.১৯৬৫ রাজকন্যা সুনীল ব্যানার্জি রীণা ঘোষ
১.১০.১৯৬৫ সূর্যতপা অগ্রদূত সন্ধ্যা রায়
২৫.২.১৯৬৬ রাজদ্রোহী নীরেন লাহিড়ি অঞ্জনা ভৌমিক
১.৪.১৯৬৬ শুধু একটি বছর উত্তমকুমার সুপ্রিয়া দেবী
৬.৫.১৯৬৬ নায়ক সত্যজিৎ রায় শর্মিলা ঠাকুর
২০.১০.১৯৬৬ শঙ্খবেলা অগ্রগামী মাধবী মুখার্জি
৩০.১২.১৯৬৬ কাল তুমি আলেয়া শচীন মুখার্জি সুপ্রিয়া দেবী
১৭.২.১৯৬৭ নায়িকা সংবাদ অগ্রদূত অঞ্জনা ভৌমিক
১৪.৪.১৯৬৭ জীবন মৃত্যু হীরেন নাগ সুপ্রিয়া দেবী
৫.৫.১৯৬৭ গৃহদাহ সুবোধ মিত্র সুচিত্রা সেন
২৯.৭.১৯৬৭ চিড়িয়াখানা সত্যজিৎ রায় কণিকা মজুমদার
৬.১০.১৯৬৭ অ্যান্টনী ফিরিঙ্গী সুনীল ব্যানার্জি তনুজা
২০.৯.১৯৬৮ চৌরঙ্গী পিনাকী মুখার্জি সুপ্রিয়া দেবী ও
অঞ্জনা ভৌমিক
২০.৯.১৯৬৮ তিন অধ্যায় মঙ্গল চক্রবর্তী সুপ্রিয়া দেবী
১.১১.১৯৬৮ গড় নাসিমপুর অজিত লাহিড়ি মাধবী মুখার্জি
১২.১২.১৯৬৮ কখনো মেঘ অগ্রদূত অঞ্জনা ভৌমিক
৩.১.১৯৬৯ সাবরমতী হীরেন নাগ সুপ্রিয়া দেবী
২৪.১.১৯৬৯ চিরদিনের অগ্রদূত সুপ্রিয়া দেবী
১৬.৫.১৯৬৯ শুকসারী সুশীল মজুমদার অঞ্জনা ভৌমিক
২.১০.১৯৬৯ কমললতা হরিসাধন দাশগুপ্ত সুচিত্রা সেন
১০.১০.১৯৬৯ মন নিয়ে সলিল সেন সুপ্রিয়া দেবী
৫.১২.১৯৬৯ অপরিচিত সলিল দত্ত অপর্ণা সেন
১৫.৫.১৯৭০ কলঙ্কিত নায়ক সলিল দত্ত অপর্ণা সেন
২৪.৭.১৯৭০ দুটি মন পীযূষ বসু অপর্ণা সেন
২.১০.১৯৭০ রাজকুমারী সলিল সেন তনুজা
২৩.১০.১৯৭০ নিশিপদ্ম অরবিন্দ মুখার্জি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৭.১১.১৯৭০ মঞ্জরী অপেরা অগ্রদূত সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৫.৬.১৯৭০ বিলম্বিত লয় অগ্রগামী সুপ্রিয়া দেবী
২২.১.১৯৭১ এখানে পিঞ্জর যাত্রিক অপর্ণা সেন
১২.৩.১৯৭১ জয়জয়ন্তী সুনীল বসুমল্লিক অপর্ণা সেন
৪.২.১৯৭১ নবরাগ বিজয় বসু সুচিত্রা সেন
২৬.১১.১৯৭১ ছদ্মবেশী অগ্রদূত মাধবী চক্রবর্তী
১২.৩.১৯৭১ ধন্যি মেয়ে অরবিন্দ মুখার্জি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
১৫.১০.১৯৭১ জীবন জিজ্ঞাসা পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
১৭.৩.১৯৭২ আলো আমার আলো পিনাকী মুখার্জি সুচিত্রা সেন
১৮.২.১৯৭২ বিরাজ বৌ মানু সেন মাধবী চক্রবর্তী
৭.৭.১৯৭২ অন্ধ অতীত হীরেন নাগ সুপ্রিয়া দেবী
১৮.৮.১৯৭২ স্ত্রী সলিল দত্ত আরতি ভট্টাচার্য
১৩.১০.১৯৭২ ছিন্নপত্র যাত্রিক মাধবী চক্রবর্তী ও সুপ্রিয়া দেবী
১৬.১০.১৯৭২ মেমসাহেব পিনাকী মুখার্জি অপর্ণা সেন
২৯.১২.১৯৭২ হার মানা হার সলিল সেন সুচিত্রা সেন
৯.২.১৯৭৩ বনপলাশীর পদাবলী উত্তমকুমার সুপ্রিয়া দেবী ১৩.৪.১৯৭৩ কায়াহীনের কাহিনী অজয় কর অপর্ণা সেন
২২.৬.১৯৭৩ রাতের রজনীগন্ধা অজিত গাঙ্গুলি অপর্ণা সেন
২০.৭.১৯৭৩ সোনার খাঁচা অগ্রদূত অপর্ণা সেন
২৮.৯.১৯৭৩ রৌদ্রছায়া শচীন অধিকারী অঞ্জনা ভৌমিক
১৫.২.১৯৭৪ রক্ততিলক বিশ্বজিৎ সুপ্রিয়া দেবী
১৫.২.১৯৭৪ আলোর ঠিকানা বিজয় বসু অপর্ণা সেন
১.৩.১৯৭৪ যদি জানতেম যাত্রিক সুপ্রিয়া দেবী
২১.৩.১৯৭৪ যদুবংশ পার্থপ্রতিম চৌধুরী অপর্ণা দেবী
৫.৪.১৯৭৪ রোদনভরা বসন্ত সুশীল মুখার্জি বাসবী নন্দী
৬.৯.১৯৭৪ বিকেলে ভোরের ফুল পীযূষ বসু সুমিত্রা মুখার্জি
১৮.১০.১৯৭৪ অমানুষ শক্তি সামম্ত শর্মিলা ঠাকুর
১৩.৬.১৯৭৫ অগ্নীশ্বর অরবিন্দ মুখার্জি মাধবী মুখার্জি
২৭.৬.১৯৭৫ নগর দর্পণে যাত্রিক কাবেরী বসু
১১.৪.১৯৭৫ আমি সে ও সখা মঙ্গল চক্রবর্তী কাবেরী বসু ও
আরতি ভট্টাচার্য
২৯.৮.১৯৭৫ কাজললতা বিকাশ রায় অপর্ণা সেন
১৯.১২.১৯৭৫ বাঘবন্দী খেলা পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
৩.১০.১৯৭৫ সন্ন্যাসী রাজা পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
১০.১.১৯৭৫ মৌচাক অরবিন্দ মুখার্জি মিঠু মুখার্জী
৩.১০.১৯৭৫ প্রিয় বান্ধবী হীরেন নাগ সুচিত্রা সেন
৩০.৭.১৯৭৬ সেই চোখ সলিল দত্ত সাবিত্রী চ্যাটার্জি ও
মহুয়া রায় চৌধুরী
১৪.৪.১৯৭৬ হোটেল স্নো ফক্স যাত্রিক মিঠু মুখার্জি
২৩.৪.১৯৭৬ আনন্দমেলা মঙ্গল চক্রবর্তী সুপ্রিয়া দেবী
১৮.৬.১৯৭৬ মোমবাতি যাত্রিক সুপ্রিয়া দেবী ও
নন্দিতা বসু
২৪.১.১৯৭৬ নিধিরাম সর্দার রবি ঘোষ অপর্ণা সেন ও
নন্দিতা বসু
২৬.১১.১৯৭৬ বহ্নিশিখা পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী ও
অলিভিয়া
৩১.১২.১৯৭৬ চাঁদের কাছাকাছি যাত্রিক মিঠু মুখার্জি
১৮.২.১৯৭৭ অসাধারণ সলিল সেন আরতি ভট্টাচার্য
১৪.১০.১৯৭৭ আনন্দ আশ্রম শক্তি সামন্ত শর্মিলা ঠাকুর
৭.১.১৯৭৭ রাজবংশ পীযূষ বসু আরতি ভট্টাচার্য
২৯.৪.১৯৭৭ সিস্টার পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
২১.১.১৯৭৭ সব্যসাচী পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
২৬.৮.১৯৭৭ জাল সন্ন্যাসী সলিল সেন আরতি ভট্টাচার্য
১৪.৪.১৯৭৭ ভোলা ময়রা পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
২৪.৪.১৯৭৭ দুই পুরুষ সুশীল মুখার্জি সুপ্রিয়া দেবী
২৪.২.১৯৭৮ বন্দী আলো সরকার সুলক্ষণা পণ্ডিত
১৪.৪.১৯৭৮ নিশান এস এস বালান আরতি ভট্টাচার্য
২৯.৯.১৯৭৮ ধনরাজ তামাং পীযূষ বসু সন্ধ্যা রায়
ব্রজবুলি পীযূষ বসু সাবিত্রী চ্যাটার্জি
২৩.৩.১৯৭৯ দেবদাস দিলীপ রায় সুমিত্রা মুখার্জি
৩.৮.১৯৭৯ সুনয়নী সুখেন দাস শকুন্তলা বড়ুয়া
২৮.৯.১৯৭৯ শ্রীকান্তের উইল দীনেন গুপ্ত সুমিত্রা মুখার্জি
৩০.১১.১৯৭৯ সমাধান জয়ন্ত বসু সুমিত্রা মুখার্জি ও
গায়ত্রী মুখার্জি
২১.৯.১৯৭৯ নবদিগন্ত পলাশ ব্যানার্জি সুমিত্রা মুখার্জি
১.২.১৯৮০ পংখীরাজ পীযূষ বসু নন্দিতা বসু
৭.৩.১৯৮০ রাজনন্দিনী সুখেন দাস সুমিত্রা মুখার্জি
৪.৪.১৯৮০ আরো একজন সৃজন সুমিত্রা মুখার্জি
২৭.৬.১৯৮০ দর্পচূর্ণ দিলীপ রায় সন্ধ্যা রায়
২৭.৬.১৯৮০ দুই পৃথিবী পীযূষ বসু সুপ্রিয়া দেবী
২৯.৮.১৯৮০ রাজাসাহেব পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যা রায়
৬.২.১৯৮১ ওগো বধূ সুন্দরী১ সলিল দত্ত সুমিত্রা মুখার্জি ও
মৌসুমী চ্যাটার্জি
২৯.৫.১৯৮১ খনা-বরাহ বিজয় বসু সন্ধ্যা রায়
৩.৭.১৯৮১ সূর্যসাক্ষী অগ্রদূত মহুয়া রায়চৌধুরি
৩১.৭.১৯৮১ প্রতিশোধ সুখেন দাস সাবিত্রী চ্যাটার্জি
৭.৮.১৯৮১ কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী২ উত্তমকুমার সুপ্রিয়া দেবী
২১.৫.১৯৮২ ইমন কল্যাণ শান্তিময় ব্যানার্জি সুপ্রিয়া দেবী
৬.১২.১৯৮৫ তিল থেকে তাল৩ শান্তিময় ব্যানার্জি সাবিত্রী চ্যাটার্জি
হার মানিনি৪ ইন্দর সেন
অগ্নিবিন্দু৫ গৌর চৌধুরি
হব ইতিহাস৬ শুভেন্দু চ্যাটার্জি
অগ্নিতৃষ্ণা৭ মৃণাল চক্রবর্তী সুপ্রিয়া দেবী
১. এই ছবিতেই শেষবারের মতো অভিনয় করেন উত্তমকুমার।
২. এই ছবিটি প্রথমে পরিচালনা শুরু করেন পীযূষ বসু। অল্প কয়েকদিন স্যুটিং-এর পর পীযূষবাবু প্রয়াত হওয়ায়, পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন উত্তমকুমার। মাত্র ৫-৬ দিন স্যুটিং বাকি থাকাকালীন উত্তমকুমারও ইহলোক ত্যাগ করেন।
৩. খুব অল্পদিন স্যুটিং করতে পারার কারণে, সম্ভবত ছবিটি উত্তমকুমারের অংশ বাদ দিয়ে ছবিটি মুক্তি পায়।
৪. ও ৫. সম্ভবত ছবি দুটি মুক্তি পায়নি।
৬. এই ছবিটি মুক্তি পায়নি। মাত্র দু’দিন স্যুটিং করেছিলেন উত্তমকুমার। কয়েকবছর পরে, একই গল্প নিয়ে অঞ্জন চৌধুরির পরিচালনায় ‘শত্রু’ নামে ছবিটি মুক্তি পায়। যা, সুপার-হিট হয়। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন রঞ্জিত মল্লিক।
৭. মৃণাল চক্রবর্তীর কাহিনিনির্ভর এই ছবিটিতে খুব অল্পদিন স্যুটিং করেছিলেন উত্তমকুমার। অনেক বছর পরে ২৮.৪.১৯৮৯ তারিখে সম্পূর্ণ নতুন শিল্পী সংবলিত হয়ে ছবিটি মুক্তি পায়। পরিচালক ছিলেন প্রভাত রায়।
উত্তমকুমার অভিনীত হিন্দি ছবির তালিকা
মুক্তি ছবির নাম পরিচালক নায়িকা
১৯৪৭ মায়াডোর১
১৯৬৬ ছোটিসি মুলাকাত আলো সরকার বৈজয়ন্তী মালা
১৯৭৫ অমানুষ শক্তি সামন্ত শর্মিলা ঠাকুর
১৯৭৭ আনন্দ আশ্রম শক্তি সামন্ত শর্মিলা ঠাকুর
১৯৭৮ বন্দী আলো সরকার সুলক্ষণা পণ্ডিত
১৯৭৮ নিশান এস এস বালান আরতি ভট্টাচার্য
১৯৭৯ কিতাব গুলজার বিদ্যা সিনহা
১৯৮১ দুরিয়াঁ ভীম সেইন
১৯৮১ প্লট নাম্বার ফাইভ
তিন বান্দর২
১৯৮২ দেশপ্রেমী
দাবেদার৩
১. ভোলা আঢ্য প্রযোজিত এই ছবিতেই প্রথম চলচ্চিত্রাবতরণ ঘটে উত্তমকুমারের। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি।
২. সম্ভবত ছবিটি মুক্তি পায়নি।
৩. এই নামে ছবিটি মুক্তি পায়নি। অনেক পরে ১৯৮৭ সালে ‘মেরা ধরম মেরা করম’ নামে ছবিটি মুক্তি পায়। [এই তথ্যটি দিয়েছেন রেকর্ড সংগ্রাহক শ্রীজয়দীপ চক্রবর্তী।]
উত্তমকুমার প্রযোজিত ছবি
১। হারানো সুর
২। সপ্তপদী
৩। ছোটিসি মুলাকাত (হিন্দি)
৪। ভ্রান্তিবিলাস
৫। গৃহদাহ
৬। উত্তর ফাল্গুনী১
৭। জতুগৃহ
১. অসিত সেন পরিচালিত এই ছবিতে উত্তমকুমার অভিনয় করেননি। দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন সুচিত্রা সেন।
উত্তমকুমার পরিচালিত ছবি
১। শুধু একটি বছর
২। বনপলাশীর পদাবলী
৩। কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী
উত্তমকুমার সুরারোপিত ছবি
১। কাল তুমি আলেয়া
২। সব্যসাচী
দ্বৈত ভূমিকায় উত্তমকুমার
১। তাসের ঘর ৭। ছিন্নপত্র
২। ভ্রান্তিবিলাস ৮। কায়াহীনের কাহিনি
৩। ঝিন্দের বন্দী ৯। আমি সে ও সখা
৪। দুটি মন ১০। বন্দী
৫। রাজবংশ ১১। নিশান
৬। উত্তরায়ণ
উত্তমকুমারের পুরস্কৃত ছবির তালিকা
১৯৫৫ : হ্রদ : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B.F. J. A. পুরস্কৃত করেন।
১৯৫৭ : হারানো সুর : : সাটিফিকেট অব মেরিট—ভারত সরকার প্রদত্ত পুরস্কার।
১৯৬১ : সপ্তপদী : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B.F. J. A. পুরস্কৃত করেন।
১৯৬৬ : নায়ক : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B. F. J. A. পুরস্কৃত করেন।
১৯৬৭ : চিড়িয়াখানা ও অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতার ‘ভরত’ পুরস্কার লাভ। এই সালেই ভারত সরকার ‘ভরত’ পুরস্কার ঘোষণা করেন।
১৯৬৭ : গৃহদাহ : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B. F. J. A. পুরস্কার দেন।
১৯৭১ : এখানে পিঞ্জর : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B. F. J. A. প্রদত্ত পুরস্কার।
১৯৭৩ : স্ত্রী : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—‘প্রসাদ’ পত্রিকা এই পুরস্কারে সম্মানিত করেন।
১৯৭৪ : অমানুষ : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কৃত করেন।
১৯৭৪ : অমানুষ : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—রাজ্য সরকার কর্ত,ক পুরস্কৃত হন।
১৯৭৬ : বহ্নিশিখা : : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা—B. F. J. A. প্রদত্ত পুরস্কার।
* উত্তমকুমারের বিদেশ ভ্রমণ *
১৯৬৬ সালে ‘নায়ক’ ছবির জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রণে যোগদান।
১৯৭৯ সালে উত্তরকুমার আমেরিকা পরিভ্রমণ করেন, সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। গিয়েছিলেন টেগোর সোসাইটির আমন্ত্রণে।
নাটকে উত্তম
ইস্কুলজীবনে প্রথমে মাত্র ১০ বছর বয়সে অভিনয় করেন ‘গয়াসুর’ নাটকে। এরপর, ছোটো থাকতেই বা একটু বড়ো হয়ে ‘ব্রজের কানাই’, ‘মুকুট’ ইত্যাদি যাত্রা ও নাটকে অভিনয় করেন। পাড়ার লুনার ক্লাবের হয়ে ‘কর্ণার্জুন’ (কৃষ্ণ), ‘দুই পুরুষ’ (সুশোভন) ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেন উত্তমকুমার।
প্রথম দিকে অনেক অ্যামেচার থিয়েটারে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। এর মধ্যে ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’ নাটকের কথা বলা যায়। এতে, উত্তমকুমারের সঙ্গে মঞ্চে অভিনয় করতেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীবর্গ।
শিল্পী সংসদের তহবিল বাড়ানো, যাতে নানারকম সেবামূলক কাজকর্ম করতে সুবিধা হয়, তার জন্য, এই সংস্থার পক্ষ থেকে অনেকগুলি নাটক-গীতিনাট্য মঞ্চস্থ করা হয়। এর মধ্যে আছে— ‘পণরক্ষা’, ‘নীলদর্পণ’, ‘সাজাহান’ ইত্যাদি। এর কোনোটিতে অভিনয় বা কোনোটির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন উত্তমকুমার। একবার ১৯৬৯ সালে কলকাতার রবীন্দ্রসদনে হয়েছিল, ‘অলীকবাবু’ নাটক ও গীতিনাট্য ‘অভিসার’। শেষোক্ত এই গীতিনাট্যের নায়ক ছিলেন উত্তমকুমার। তাঁর সঙ্গে তিন নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন যথাক্রমে, বাসবী নন্দী, লিলি চক্রবর্তী ও জ্যোৎস্না বিশ্বাস। এই গীতিনাট্যের গীতিকার ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও সুরকার শ্যামল মিত্র। শিল্পী সংসদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক হয়েছিল ক্ষীরোদপ্রসাদের ‘আলিবাবা’।১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১ কি ২ তারিখে এই নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্র সদনে। নাটকে ‘বাবা মুস্তাফা’-র চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন উত্তমকুমার। ‘মর্জিনা’ চরিত্রে ছিলেন প্রখ্যাত নৃত্যপটিয়সী অভিনেত্রী জয়শ্রী সেন। নাটকটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার কারণে, এটি পুনরায় মঞ্চস্থ হয় ১৯৭০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।
পেশাদার মঞ্চে সম্ভবত একবারই উত্তমকুমার অভিনয় করেছিলেন। নাটকের নাম—‘শ্যামলী’। অভিনীত হয় ‘স্টার’ থিয়েটারে। নিরুপমা দেবীর গল্প অবলম্বনে নাট্যরূপ দেন দেবনারায়ণ গুপ্ত। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে শিশির মল্লিক ও যামিনী মিত্র। নায়ক ‘অনিল’-এর চরিত্রে রূপদান করেন উত্তমকুমার। বোবা মেয়ে ‘শ্যামলী’-র চরিত্রের অসামান্য চিত্রণ করেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া, এই নাটকে ছিলেন সরযূবালা দেবী, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একরাশ বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীকুল। ‘শ্যামলী’ স্টারে প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৩ সালের ১৫ অক্টোবর। অচিরেই এই নাটক অসম্ভব জনপ্রিয় হয়। ব্রিটিশ থিয়েটারের অভিনয়জগতের দম্পতি স্যার জন লুই কেসন এবং সিরিল থ্রনডাইন কলকাতায় থাকাকালীন, ‘শ্যামলী’ নাটক দেখে অভিভূত হন। বিশেষ করে তাঁরা মুগ্ধ হন ‘অনিল’ চরিত্রে উত্তমকুমারের অভিনয় দেখে। ১৯৫৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই নাটক চলেছিল। ৪৮৪ রাত্রি অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। অনেক বছর পরে, ১৯৬৮ সালে একদিন টেলিফোনে দেবনারায়ণ গুপ্ত-র কাছে আবারও থিয়েটারে অভিনয় করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন উত্তমকুমার। তিনি দেবনারায়ণবাবুকে বলেছিলেন এমন একটি নাটক লিখতে, যেখানে প্রথম থেকে শেষ দৃশ্য মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ বার উত্তমবাবুর প্রবেশ থাকে। যাইহোক, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
সংকলন : অভীক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা বেতারে উত্তম
১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় নির্দেশে কলকাতা বেতারে মহালয়ার ভোরে দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রচারিত চিরপরিচিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-কে সরিয়ে, দেবী দুর্গার আবাহনমূলক গীতিআলেখ্য ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’ সম্প্রচারিত হয়, ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোর ৪টে থেকে। গীতিআলেখ্যটিতে অন্যতম ভাষ্যকার হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন উত্তমকুমার। যাঁরা এর নির্মাণে ছিলেন—
রচনাকার — ধ্যাণেশনারায়ণ চক্রবর্তী
চণ্ডীপাঠ — গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়
ভাষ্যপাঠ— উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরি, পার্থ ঘোষ, ছন্দা সেন প্রমুখ।
গীতিকার — শ্যামল গুপ্ত।
সংগীত পরিচালনা — হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
গানে — লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, মান্না দে, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সহ একঝাঁক তারকা।
এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতারা এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। চারিদিক থেকে ধিক্কারধ্বনি শোনা যেতে লাগল। একগাদা আক্রমণাত্মকচিঠি এসে জড়ো হল বেতার কেন্দ্রে। এইসময়, ‘সবিনয় নিবেদন’ অনুষ্ঠান মারফত চিঠির উত্তর দিতেন মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়। এহেন পরিস্থিতিতে পড়ে, তৎকালীন কলকাতা বেতার-কেন্দ্রের কেন্দ্র-অধিকর্তার পরামর্শ নিতে গেলে, তিনি মিহিরবাবুকে এই প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে উত্তমকুমারের মতামত টেলিফোন মারফত জানতে বলেছিলেন। মিহিরবাবু নির্দেশ মেনে ফোন করাতে উত্তমকুমার যা বলেছিলেন, তাকে অত্যন্ত ছোটো বাক্যে এক অমোঘ উক্তি বলা যায়। উত্তমকুমার প্রথমে কিছু বলতে চাননি, শুধু বলেছিলেন, তাঁর হয়ে যেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং পঙ্কজকুমার মল্লিকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হয় (প্রসঙ্গত, সেই সময় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র তিন মূল স্থপতি—বাণীকুমার-পঙ্কজ মল্লিক-বীরেন্দ্রকৃষ্ণর মধ্যে শেষের দুজন জীবিত ছিলেন। প্রথমজন প্রয়াত হন ১৯৭৪ সালে)। মিহিরবাবু আবারও জিজ্ঞেস করাতে মহানায়ক যা বলেছিলেন, সেটাই আসল। তিনি বলেছিলেন — ‘ঠাকুরঘরকে রেনোভেট করে ড্রয়িংরুম বানালে যা হয়, তাই হয়েছে। তার ফলেই, শ্রোতাদের এই সংগত বিরূপ প্রতিক্রিয়া।’
সংকলন : অভীক চট্টোপাধ্যায়
সহায়তা : মিহিরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সংগীতে উত্তমকুমার
বাঙালির আদরের দুলাল, কিংবদন্তি এক ব্যক্তিত্ব, মহানায়ক উত্তমকুমার। অপরূপ রূপ, অসামান্য অভিনয়, আজ সকলের সুপরিজ্ঞাত। কিন্তু তাঁর সুরেলা কণ্ঠও, সে ছিল এক বিপুল সম্পদ এ-খবর কজনই বা জানে আজ। স্বয়ং গায়ক, এই নিরহঙ্কারী নায়ক, কত যে ছায়াছবিতে অপরের গলায় ঠোঁট মিলিয়ে এক ঐকতান সৃষ্টি করে গেছেন, সে ইতিহাসও এক গৌরবের কথা ও গাথা। অনেক গানই আজ স্মৃতিতে চিরায়ত। তাঁর স্বকষ্ঠে গীত, বেশ কিছু গানের পদ, একটি ছবির ‘সাউন্ড ট্র্যাকে’ এ ধরে রাখা আছে। কয়েকটি গ্রামোফোন রেকর্ডেও আছে তাঁর কণ্ঠে কিছু কথা, শায়েরি প্রভৃতি। ব্যক্তিগত সংগ্রহেও অনেক অনুরাগী হয়তো-বা ধরে রেখেছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর কণ্ঠে ভাষণ, গান। এ সবেরই কিছু কথা বলতে আমার এ-লেখনী ধারণ—অনুসন্ধিৎসু অনুরাগীদের কাছে হতে পারে এ এক অজানা তথ্যের আস্বাদন।
আমি লেখক নই—ক্ষুদ্র এক রেকর্ড-সংগ্রাহক মাত্র—স্মৃতির অতলে চলে যাওয়া ৭৮ ঘূর্ণন এর গ্রামোফোন রেকর্ড-এ ধরে রাখা সিনেমার গান, বুকলেট বিভিন্ন সময়ের গান ইত্যাদি সংগ্রহে রেখেছি। সহৃদয় পাঠকের কাছে আশাকরি, এই প্রবন্ধের ত্রুটি তাই ক্ষমার্হ হবে।
সিনেমায় আত্মপ্রকাশের প্রবল আকাঙ্ক্ষায় এবং তৎকালীন রীতি অনুযায়ী, সিনেমাশিল্পীদের গান জানার প্রয়োজন ছিল। বিশেষ কণ্ঠশিল্পীর কণ্ঠে, টেপ-এ ধরে রাখা গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে ছবি ‘পিকচারাইজ’ করার কারণেই তা দরকার হতো। তাই অভিনয়জীবনের শুরুতেই গান শেখার জন্য উত্তমকুমার প্রবল আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কে এল সায়গল, কানন দেবী, রবীন মজুমদার, অসিতবরণ, পাহাড়ী সান্যাল-এর সংগীত প্রতিভা, গায়কি ঢং, মিষ্টি গলা, গান শেখার ব্যাপারে তাঁকে দেয় অনুপ্রেরণা। সে যুগের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী নিদান বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছে এক শুভ দিনে, তিনি তালিম নেওয়া শুরু করেন উচ্চাঙ্গ সংগীতে—চলতে থাকে নিয়মিত গানের সাধনা। সময়টা ১৯৪২ সালের আশেপাশে। ম্যাট্রিক পাশের পর সাংসারিক কারণে চাকরির চেষ্টা, আর অন্যদিকে অভিনয় ও গান শেখাও চলতে থাকে। ক্রমে বন্ধুমহলে, গায়ক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ঘটে।
১৯৪৫ সালে নেতাজির জন্মদিনে ‘প্রভাত ফেরি’র মিছিলের নায়ক হিসেবে, একটি গান রচনা করে সুরারোপ করেন তিনি, সমবেত কণ্ঠে গানটি ছিল—
‘সুভাষেরই জন্মদিনে গাইব নতুন গান,
সেই সুরেতে জাগবে মানুষ,
জাগবে নতুন প্রাণ।’
মেজোমামা গৌরীশঙ্কর মুখোপাধ্যায়-এর সুপারিশে, পোর্ট কমিশনার্স অফিসে, মাসিক ২৭৫ টাকা বেতনের চাকরিতে যোগ দিলেন উত্তমকুমার—চাকরি, ক্যাশ ডিপার্টমেন্ট-এ।
বাড়িতে একদিন, গানের রেওয়াজ-এর সময়, বোন অন্নপূর্ণার বান্ধবী গৌরীরানী গাঙ্গুলিকে দেখে ভালো লেগে যায়। পরবর্তীকালে, ল্যান্সডাউন রোডের অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, সংগীত অনুরাগিণী এই গৌরী দেবীর সাথেই তাঁর পরিণয় হয়।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিচিত্রানুষ্ঠানে, কর্তৃপক্ষের কাছে গান গাইবার জন্য ধরনা আর স্টুডিয়োর দরজায় অভিনয়ের জন্য উমেদারি, চাকরির সাথে চলতে থাকে।
কালীঘাটের একটি বাড়িতে দুটি মেয়েকে গান শেখানোর টিউশনিও করেন তিনি। এ ছাড়া সাউথ চক্রবেড়িয়ার ‘মনোরমা’ স্কুলেও কিছু দিন গান শেখাতে থাকেন।
বাল্যবন্ধু ডাঃ লালমোহন মুখোপাধ্যায়-এর সৌজন্যে জানা যায় মহানায়কের সংগীত সৃষ্টির কথা। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় নিজের কথায় ও সুরে এই গানটি তিনি অনেক জায়গায় গাইতেন—
হিন্দুস্থান মে কেয়া হ্যায় তুমারা
ও ব্রিটিশ বেচারা
আভি চলে যাও ইংল্যান্ড বাজা কর ব্যান্ড।
মন্দির মসজিদ মে পূজাআরতি সে শুনো আজান পুকারতি
দিলকে দিলাও মিল হিন্দু মুসলমান
সারি হিন্দুস্থানমে আয়ি তুফান
গরিবোঁ কে দুখো কি হোগি আসান।
বিয়ের পর গানের ব্যাপারে স্ত্রী গৌরী দেবীর কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি, ছায়াছবির মধ্যে শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও। পারিবারিক কোনও উৎসবের দিনে, যেমন কারও জন্মদিন, দোল প্রভৃতিতে তিনি বসে যেতেন হারমোনিয়াম নিয়ে গান গাইতে। গান ছিল তাঁর অন্তরের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ আর অবসরের সঙ্গী।
এই গানের সুবাদেই ‘নবজন্ম’ (১৯৫৬) ছবিতে নেপথ্যে গান গাওয়ার সুযোগ ঘটে। দেবকী বসু পরিচালিত, নায়িকা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে কাজ করেন উত্তমকুমার। সুরকার নচিকেতা ঘোষ, উত্তমকুমারকে স্বকণ্ঠে প্রায় সাতটি গানের ছোটে ছোটো পদ গাইয়েছিলেন—সাউন্ডট্র্যাকে থাকা গানগুলি হল—
—‘কানু কহে রাই, কহিতে ডরাই, ধবলী চরাই মুই’
—‘ও সজনী, ও ধনি, কী কহ পথে’
—‘চলে নীল শাড়ি নিঙাড়ি নিঙাড়ি’
—‘থির বিজুরি বরণ করিতে’
—‘সখি রে…’
—‘ও রসে বঞ্চিত গোবিন্দদাস…’
—‘লঙ্ঘিব গিরি পর্বতরাজি…’
‘চলে নীল শাড়ি’ পদটি তিনি, প্রখ্যাত অভিনেতা জহর গাঙ্গুলির সাথে দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছিলেন। এই গানের স্মৃতি তাঁকে আনন্দ দিয়েছে বহুদিন।
সেই সময়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গায়ক হিসেবেও আমন্ত্রিত হতেন তিনি। সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ও চর্চা, তাঁকে পরবর্তীকালে ‘কাল তুমি আলেয়া’ (১৯৬৬) ছবিতে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রস্তুতি দিয়েছিল। একই সময়ে চলছিল ‘ছোটি সি মুলাকাত’-এর কাজ—নাচের রিহার্সাল-এর পর, একনিষ্ঠভাবে বসে যেতেন ‘কাল তুমি আলেয়া’র গানগুলো সুরে সাজাতে। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, অভাবনীয় সুর করলেন উত্তমকুমার। লতাজি, আশাজি এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে গানগুলো গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হল। মহিলাকন্ঠে ২টি গানের দু’রকম গায়কী। লতাজি জানালেন তাঁর কণ্ঠে ২টি গানই দিতে হবে, নচেত নয়। আশাজিরও একই কথা। শেষে, সুরকার উত্তমকুমারেরই সিদ্ধন্ত অনুযায়ী, আশাজিই ২টি গান রেকর্ড করলেন।
ছবির সুরকার উত্তমকুমার, আশাজির ফ্ল্যাটে গেলেন গান তোলাতে। সুরকার হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর-এর সামনে হারমোনিয়াম-এর রিড-এ আঙুল চালিয়ে উত্তমকুমার গানের সুর বাজিয়ে শোনান। বিস্মিত হৃদয়নাথ জানতে চান যে, সুরকার কোনওদিন শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করেছেন কিনা। সারল্য মাখা হাসিই ছিল তাঁর একমাত্র উত্তর। নিষ্ঠা আর ধৈর্য দিয়ে ‘কাল তুমি আলেয়া’র ২টি গান রেকর্ডিং করেন আশাজি। গান দুটি হল—(১) ‘পাতা কেটে চুল বেঁধে’ (২) ‘মনের মানুষ ফিরল ঘরে’। আর হেমন্তবাবুর কণ্ঠে ‘যাই চলে যাই’ তো এক ইতিহাস। সুরের অভিনবত্বে গানগুলো আজও সমাদৃত।
১৯৭৭ সালে পীষূষ বসু পরিচালিত ছবি ‘সব্যসাচী’তে তাঁকে আমরা আবার পাই সুরকার রূপে। ‘ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক’ বা আবহ সংগীতে, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতির সুরের সার্থক ব্যবহারে যথেষ্ট মুনশিয়ানার ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
১৯৬৮ সালে অজিত লাহিড়ী পরিচালিত ‘গড় নাসিমপুর’ ছবিতে মুঘল সেনাপতি মীরজুমলার চরিত্রে উর্দু শায়েরি বলেছিলেন তিনি চোস্ত মুসলমানি ঢঙে। হলে, ছবিটির ওই অংশে, দর্শকরা বাহবা জানাতো পয়সা ছুঁড়ে। শ্যামল মিত্র ছিলেন ছবিটির সুরকার। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘যে গোলাপ কাঁটার ঘায়ে’ গানটির সাথে, ওই উর্দু শায়েরির কিছু অংশ উত্তমকুমারের কণ্ঠে ধরা আছে। GE30708 নম্বরযুক্ত কলম্বিয়া কোং থেকে প্রকাশিত একটি ৭৮ স্পীড গ্রামোফোন রেকর্ডে এটি মুদ্রিত হয়েছিল। রেকর্ড লেবেলে লেখা হল—‘উত্তমকুমার এবং গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।’
এর আগে ১৯৬৩ সালে উত্তমকুমার প্রযোজিত ও মানু সেন পরিচালিত ‘ভ্রান্তিবিলাস’ ছবির একটি গানের রেকর্ডে, তাঁর কণ্ঠে কিছু কথা বলা আছে। ছবিটির সুরকার ছিলেন শ্যামল মিত্র। GE30542 নম্বরযুক্ত কলম্বিয়া রেকর্ডে সন্ধ্যা মুখ্যোপাধ্যায়-এর কণ্ঠে ‘না না না যেওনা এখনি’ গানের সাথে তা আছে। মনে হয় পরবর্তীকালে, এই দৃশ্য ও গানটি, ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পী-সংসদ-এর ব্যানারে প্রথম ফাংশন হয় রবীন্দ্রসদন-এ—নাট্যাভিনয় ‘অলীকবাবু’ ও গীতিনাট্য ‘অভিসার’। এই ‘অভিসার’ গীতিনাট্যের গানগুলি লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও সুরারোপে ছিলেন শ্যামল মিত্র। তিন নায়িকা বাসবী নন্দী, লিলি চক্রবর্তী ও জ্যোৎস্না বিশ্বাস-এর বিপরীতে নায়ক ছিলেন সভাপতি উত্তমকুমার। খুবই প্রশংসিত হয় অভিনয়। নায়কের কণ্ঠে গানগুলি কি উত্তমকুমার স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন! জানা যায় না।
ছায়াছবিতে গানের সঙ্গে ‘লিপ’ মেলানোর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়, অনুশীলন ও দক্ষতা—গান জানা তো বটেই। উত্তমকুমার ছিলেন এ ব্যাপারে, অবিশ্বাস্য রকমের পারদর্শী। সফল অভিনেতা ভাই তরুণকুমার এক জায়গায় লিখেছেন—‘গান ছিল দাদার জীবনে প্রাণ। ঘরোয়া আসরে এমনকি হলের ফাংশনে হারমোনিয়াম সামনে বসিয়ে দিলে একের-পর-এক গান গেয়ে মাত করে দিতেন।’
শিল্পী সংসদের পক্ষে ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানে, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বাসবী নন্দীর গানের পরে উত্তমকুমারও অবলীলাক্রমে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে মোহিত করে তুলেছেন দর্শক শ্রোতাদের। অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, উত্তমকুমার গায়ক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন।
অভিনয়ে সাফল্যের মুখে, ভবানীপুরের বাড়িতে লক্ষ্মীপূজার আয়োজন বা চল শুরু করেন তিনি। বাংলার ছায়াছবির জগতের বহু মানুষ আসতেন এই পুজোয়। খাওয়া-দাওয়া ছাড়া বসত গানের আসর। বিভিন্ন শিল্পীরা গানে গানে ভুবন ভরিয়ে দিতেন। তবলচির অভাবে, হেমন্তবাবুর হারমোনিয়াম বাজানোর সাথে অনেকসময়ই উত্তমকুমার তবলা নিয়ে সঙ্গত করতেন।
রবীন্দ্রসদনের এক অনুষ্ঠানে উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় চারজনে সমবেতকণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গেয়েছিলেন। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন—‘উত্তমবাবুর বেশ ভালো গলা ছিল। আর উনি তো নিয়মিত গানের চর্চা করতেন বাড়িতে। সুচিত্রা সেনও সুন্দর গলা মিলিয়েছিলেন।’
সুরকার নচিকেতা ঘোষ, তাঁর গুরুদেবের আশ্রমের সাহায্যের জন্য মহাজাতি সদনে আয়োজন করেন এক অনুষ্ঠানের। সেখানে উত্তমকুমার ও সুপ্রিয়া দেবী একটি ডুয়েট গেয়েছিলেন।
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে মন্টু বসুর বসুশ্রী সিনেমা হলে আসর বসত বাংলা গানের। সেখানে উপস্থিত থাকতেন বাংলার সংগীত জগতের দিকপালরা। ছবির নায়ক-নায়িকারা আসতেন—উত্তমকুমার তো বটেই। কলকাতার এক বিখ্যাত অনুষ্ঠান ছিল এটি। সংগীতপিপাসু ও ‘ফ্যান’ (অনুরাগী)-রা অধীর আগ্রহে সারা বছর অপেক্ষা করতেন এই অনুষ্ঠানটির জন্য। গানের শিল্পীরা মঞ্চেই বসে থাকতেন। একজনের গানের পর উঠে আসতেন আর একজন। সেবারে বারীন ধর ও মন্টু বসু প্রায় জোর করেই উত্তমকুমারকে পাঠিয়ে দিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ দ্বৈতকণ্ঠে গাইবার জন্য। ‘সপ্তপদী’ মুক্তি পেয়ে গেছে তখন। তবলায় ছিলেন রাধাকান্ত নন্দী আর হারমোনিয়াম-এ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে। ‘তুমিই বলো, না না তুমি বলো’ বলার সাথে সাথে দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। গানের এই জায়গাগুলো বারবার গাইতে থাকেন দুজনে—দর্শক-শ্রোতাদের সে এক বিহ্বল অবস্থা—যা আজও রয়ে গেছে স্মৃতির মণিকোঠায়।
গায়ক হিসেবে মহানায়কের উপস্থিতি বহু বিচিত্রানুষ্ঠানে আজ সুখস্মৃতি মাত্র। মনে পড়ে দক্ষিণ কলকাতার ল্যান্সডাউন রোডে সাদার্ন সমিতির কালীপুজোর পর রাতভর জলসার কথা—যা ছিল OPEN AlR FUNCTlON—আজকের দিনে তারকাসম্মেলনে ওরকম অনুষ্ঠান অকল্পনীয়। উত্তমকুমার এসেছিলেন হাতা-গোটানো সাদা ফুল শার্ট ও সাদা প্যান্ট পরে। কোমরে কালো সাপের মতো সরু চকচকে বেল্ট। ২ স্ট্র্যাপ দেওয়া কোলাপুরি চপ্পল শোভা পাচ্ছে ফরসা দুটি শ্রীচরণে। স্টেজে উঠে নমস্কার জানাতেই, করতালিতে ফেটে পড়ল রাস্তায়, বাড়ির ছাদে, অলিন্দে ভরে থাকা মানুষজন। ডানহাতে মাইকটি ধরে শুরু করলেন—‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে’ ও পরে ‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’। রাতের নিস্তব্ধতায় সেদিনের সে কণ্ঠস্বর আজও আমার স্মৃতিতে তোলে অনুরণন।
১৯৬৭ সালে ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি’র জন্য শ্রেষ্ঠ নায়ক হিসেবে ‘ভরত পুরষ্কার’ লাভের পর, আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, বেতারে প্রচারিত হয়েছিল তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত—‘অয়ি ভুবন মনোমোহিনী’। সে রেকর্ডিং-এর হদিশ জানা যায়না।
২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ ভোর চারটে। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-এর সুরে প্রচারিত হয়েছিল এক বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান—‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’। বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে মহানায়কও অংশ গ্রহণ করেছিলেন বিশেষ অনুরোধে। তবে, এই অনুষ্ঠানটি বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল।
১৯৭৮ সালে টেগোর সোসাইটির আমন্ত্রণে উত্তমকুমার আমেরিকা সফরে যান। নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ওয়াশিংটন, টরন্টো, ক্যালিফর্নিয়া প্রভৃতি শহরে বিপুল সম্বর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই তাঁকে ভাষণ দিতে ও গান গাইতে হয়েছিল—এরপর থাকত বিরাট পার্টির আয়োজন। ‘গীতবিতান’ যাঁর চিরসাথী, ব্যস্ত দিনের শেষে গানই যাঁর অবসর-বিনোদন তিনি গেয়েছিলেন— ‘আলো আমার আলো ওগো আলো ভুবন ভরা’ ও ‘তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী’।
২৪ জুলাই ১৯৮০ সালে তাঁর নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে যাবার পর, সহধর্মিণী শ্রীমতী গৌরী দেবীর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসাবে, একটি স্বল্পসংখ্যক মাইক্রোগ্রুভ রেকর্ড প্রকাশ করেন মেগাফোন রেকর্ড-এর শ্রী কমল ঘোষ।
JlNGS 6356 নম্বরযুক্ত এই রেকর্ডটির একপিঠে আছে উত্তমকুমার-এর স্বকণ্ঠে গান ‘এই মোম জোছনায়’—কথা-গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার; সুর-নচিকেতা ঘোষ। ঘরোয়া পরিবেশে গাওয়া, এই রেকর্ডিংটি পাওয়া গিয়েছে, অনিতা মুখোপাধ্যায়-এর সৌজন্যে। রেকর্ডটির অপর পিঠে আছে, সুচিত্রা সেন ও উত্তমকুমার অভিনীত শ্রীমতী পিকচার্স-এর ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ (১৯৫৮) ছায়াছবির সংলাপের অংশবিশেষ।
উল্লেখ্য, মহানায়কের মহাপ্রয়াণের পর, প্রিয় বন্ধু শিল্পী শ্যামল মিত্র একটি গানের রেকর্ড করলেন—‘বন্ধু আমার চলে গেছে’ (কথা : শ্যামল গুপ্ত সুর, শিল্পী) রেকর্ড নং S/7EPE 3342। উত্তমকুমার স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন শিল্পী শ্রীদীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। কবিতা সিনহার কথায় ২টি গানে সুরারোপ করেছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। ‘মিউজিক ইন্ডিয়া’র 2222867 নম্বরযুক্ত এই রেকর্ডটির কভারে, রত্নগর্ভা মাতা চপলা দেবীর স্বাক্ষরযুক্ত আশীর্বাণী দেওয়া আছে—‘উত্তম ছোটো থেকেই গান গাইত; সুর করত। শেষে তো ছবিগুলোতে সুন্দর সুর দিয়েছিল। উত্তমের সুরে দীপঙ্করের গাওয়া এই গান ২টি নিশ্চয়ই সবার ভালো লাগবে, আর তার কথা বারবার মনে করিয়ে দেবে।’—চপলা দেবী (স্বাক্ষর)। ‘হে মহানায়ক’ নামে একটি রেকর্ডে, শিল্পী রবীন্দ্র জৈন, নিজের সুরে ও ভবেশ গুপ্তর কথায় ২টি গানে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন—‘জীবন যখন শুরু’ ও ‘হে মহানায়ক’—রেকর্ড নং S/45 QC1028 (S-2)-PRESTlGE-SAHANA RECORDS।
গ্রামোফোন কোং-র তরফে শ্রদ্ধা জানানো হয় ECLP 2617 নং যুক্ত একটি দীর্ঘবাদন মাইক্রোগ্রুভ রেকর্ডে, সংলাপ ও চিত্রগীতি দিয়ে সাজানো এই রেকর্ডটিতে কণ্ঠ ছিল—উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর ও অনিল চট্টোপাধ্যায়-এর। বিভিন্ন চিত্রগীতি ছিল হেমন্ত, গীতা দত্ত, সন্ধ্যা, মান্না, শ্যামল ও কিশোরকুমার-এর কণ্ঠে। পরে এটি ক্যাসেট হয় 6TCS 02135087 নম্বরে। রেকর্ড কভারে ছবি ছিল মহানায়কের ভূবনভোলানো হাসির আর রেকর্ডটির সাথে দেওয়া হয়েছিল একটি বেশ বড়ো সাদাকালো ছবি—‘নমস্কাররত উত্তমকুমার’।
আবার, যশস্বী যন্ত্রশিল্পীরা যেমন বটুক নন্দী, ভি বালসারা প্রমুখ, তাঁর অভিনীত ছবির চিত্রগীতির সুর, অর্কেস্ট্রায় বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রেকর্ডে বা ক্যাসেটে।
গানের জগতে উত্তমকুমার-এর উপস্থিতির কথা, স্বল্প পরিসর এই আখ্যানের, এবারে শেষ করি তাঁর কথায়,—‘গঙ্গার যেমন উৎস আছে কোথাও না কোথাও, তেমনি আমার মনে যেদিন থিয়েটার-গানের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগের অঙ্কুর দেখা দিয়েছিল, সেদিন সেই বীজ বপনের দায়িত্ব কে নিয়েছিলেন নীরবে, তার হিসেব কষে দেখেছি। দেখেছি সেখানেও উৎস আছে। আমার মা। আমার মা হলেন এই শিল্পীজীবনের মূলে মুখ্য উৎস। ভালো গাইতেন তিনি। আমি তাই বোধহয় গানকে ভালোবেসেছিলাম সেই কিশোর বয়স থেকে। মায়ের অনুপ্রেরণা আমাকে প্রতিষ্ঠার এই স্বর্ণ-সোপানে পৌঁছে দিয়েছে।’
সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়
তথ্যসহায়তা :
১. ‘আমার আমি’ (ভাদ্র, ১৩৭৯)।
২. ‘আমার দাদা উত্তমকুমার’—তরুণকুমার।
৩. ‘ওগো মোর গীতিময়’—গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
উপরের রচনাটি লেখকের অনুমতিক্রমে ‘তেহাই—উত্তমকুমার সংখ্যা’ (জানুয়ারি ২০১০) থেকে পুনর্মুদ্রিত হল।
কিছু সংযোজন :—
১৯৬২ সালের ১৪ জানুয়ারি পৌষ-পার্বণ উৎসবে শ্রীমতী কানন দেবীর বাড়িতে ‘পূর্ণ’ সিনেমার ম্যানেজারের জন্মদিন উপলক্ষে গান গেয়েছিলেন উত্তমকুমার। [ এই তথ্যটি দিয়েছেন চলচ্চিত্র গবেষক শ্রীদেবীপ্রসাদ ঘোষ।]
১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা বেতারে ‘এ মাসের গান’ অনুষ্ঠানে কবিতা সিংহের কথায় ও উত্তমকুমারের সুরে ‘কলকাতা কলকাতা …’ গানটি গেয়েছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সেই মাসের ‘বেতার জগৎ’ পত্রিকায় গানটি স্বরলিপিসহ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রসঙ্গত এই গানটি সম্পর্কে উত্তমকুমারের মা চপলা দেবী দীপঙ্করবাবুকে একটি আশীর্বাণী লিখে দিয়েছিলেন। [এই তথ্যটি স্বয়ং শিল্পী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।]
বইটি নির্মাণে যেসমস্ত গ্রন্থ ও পত্র—পত্রিকার সাহায্য নেওয়া হয়েছে—
১। সংসদ চরিতাভিধান (সাহিত্য সংসদ, জুলাই ২০১০)
২। ‘প্রসাদ’ পত্রিকা (‘অভিনেতা’ সংখ্যা, জুন ১৯৭৩)
৩। ‘প্রসাদ’ পত্রিকা (‘অভিনেত্রী’ সংখ্যা, অগস্ট ১৯৭৩)
৪। ‘সাতরঙ’ — রবি বসু (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, দেজ পাবলিশিং জানুয়ারি ১৯৯৮)
৫। ‘আমার আমি’ — উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায় (দেজ পাবলিশিং, ভাদ্র, ১৩৭৯)
৬। ‘প্রসাদ’ (‘সঙ্গীত’ সংখ্যা আষাঢ়, ১৩৭৭)
৭। ‘বাংলার নটনটী’ — দেবনারায়ণ গুপ্ত (তৃতীয় খণ্ড, নিউ বেঙ্গল প্রেস, সেপ্টেম্বর, ১৯৯২)
৮। ‘নবকল্লোল’ পত্রিকা (বৈশাখ—চৈত্র, ১৩৬৭; বৈশাখ—চৈত্র, ১৩৬৮; বৈশাখ, ১৩৬৯)
৯। ‘প্রসাদ’ (‘উত্তমকুমার’ সংখ্যা আষাঢ়, ১৩৭৫)
১০। ‘পরিবর্তন’ পত্রিকা (১৬ অগস্ট, ১৯৮০)
১১। ‘জনমন জনমত’ পত্রিকা (সেপ্টেম্বর, ১৯৯১)
১২। ‘নট—নাট্য চলচ্চিচত্রকথা’ — পশুপতি চট্টোপাধ্যায় (দেজ পাবলিশিং, জানুয়ারি, ১৯৯৬)
১৩। ‘তেহাই’ পত্রিকা (‘উত্তমকুমার সংখ্যা’, জানুয়ারি ২০১০)।
১৪। ‘সাতাত্তর বছরের বাংলা ছবি’ — সম্পাদনা ও গ্রন্থনা : তপন রায় (বাপী প্রকাশনী, অগস্ট ১৯৯৬)
এছাড়া ‘উল্টোরথ’, ‘রূপমঞ্চ’, ‘আনন্দলোক’ ইত্যাদি পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা।
যেসব ব্যক্তির কাছে কৃতজ্ঞ :
মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস গুপ্ত, সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, মিহিরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, মানসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, আশিস পাঠক, এলা দাস, জয়গোপাল সাহা, তপন মুখোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ ঘোষ, ড. দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষ।