জাদুর লাটিম – দৃশ্য ৫

দৃশ্য : ৫ 

চরিত্র: পুলিশ প্রধান ও মেহেরজান 

মঞ্চের এক কোণায় পুলিশ প্রধান অস্থির হয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অন্য প্রান্ত থেকে মেহেরজান প্রবেশ করবে। মেহেরজানকে দেখে পুলিশপ্রধান একটু শান্ত হয়ে দাঁড়াবে। মেহেরজানের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি।) 

মেহেরজান : অবশেষে জনাবের দেখা পাওয়া গেল। 

পুলিশ প্রধান : কি করব বলো। এত বড় দায়িত্ব নিয়ে বসেছি। সারা শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার কাঁধের উপর। কোনদিক দিয়ে সময় চলে যায় টেরই পাই না। 

মেহেরজান : শুধু কি শহরের নিরাপত্তা দিলেই হবে নিজের দিকে একটু তাকান মহামান্য পুলিশ ভাই। 

পুলিশ প্রধান : এই কথা কেন বলছ? 

মেহেরজান : তুমি নগর রক্ষা করছ অন্য দিকে নগরকর্তা তোমার মনের মানুষকে ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে। 

পুলিশ প্রধান : কি যা তা বলছ তুমি? 

মেহেরজান : গভর্নর আমাকে তার প্রাসাদে ডেকে পাঠিয়েছিল। 

পুলিশ প্রধান : আবার? 

মেহেরজান : হ্যাঁ। সেই একই প্রস্তাব। আমাকে বিয়ে করতে চায়।

পুলিশ প্রধান : আমি এই গভর্নরকে খুন করব। আহ! মাথায় আগুন জ্বলে যাচ্ছে। কত বড় সাহস। 

মেহেরজান : মাথা গরম করো না। দেখো কি সুন্দর বাতাস বইছে। দাজলা নদী থেকে বয়ে আসা বাতাসে কি সুন্দর মিহি ঘ্রাণ। 

পুলিশ প্রধান : তুমি আমার পাশে থাকলে সুন্দর বাতাস আর নদী কোন কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। 

মেহেরজান : চলো আমরা দুজন মিলে নদীতে ঝাঁপ দেই। 

পুলিশ প্রধান : পাগল হয়েছ? এই সন্ধ্যের সময় পানিতে নামব?

মেহেরজান : (জোরে জোরে হাসতে থাকবে) আমি কি সত্যিই পাগল?

পুলিশ প্রধান : কিছু পাগলামিতো আছেই। 

মেহেরজান : তোমার তাই মনে হয়? 

পুলিশ প্রধান : হ্যাঁ। তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের কথাটা ভুলে গেলে? পাগল না হলে কেউ অমনটা করে। তুমি মেয়ে হয়ে রাত বিরাতে ছেলেদের পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাঘুরি করো। 

মেহেরজান : ঐ পাগলামোটা না করলে কি আর তোমার সাথে দেখা হতো।

পুলিশ প্রধান : সেটা ঠিক। তোমার ঐ পাগলামোর কারণে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীর সন্ধান পেয়েছিলাম। 

মেহেরজান : ওরে বাপরে পুলিশ দেখি কবি হয়ে উঠছে। 

পুলিশ প্রধান : এমন সুন্দরী পাশে থাকলে তাই হয়। 

মেহেরজান : তোমার সুদৃঢ় বাহুতে শুয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি সবচেয়ে নিরাপদ মানুষটার হাতে শুয়ে আছি। তুমিই আমাকে নিরাপদ রাখতে পারবে আর ভালোবাসতে পারবে। 

পুলিশ প্রধান : আমি কি তোমাকে নিরাপদ রাখতে পারছি না মেহেরজান?

মেহেরজান : তাতো পারছই। কিন্তু কতদিন পারবে সেটা হলো চিন্তার বিষয়। গভর্নর যেভাবে আমার পিছনে লেগেছে কতদিন তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারব খোদা ভালো জানেন। 

পুলিশ প্রধান : ইবলিশ গভর্নরকে আমি খুন করব। গুম করব ওকে। তরবারি দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করব। 

মেহেরজান : তুমি আইনের লোক হয়ে কিভাবে এই কাজ করবে? এই গভর্নরই তোমাকে বিশ্বাস করে সাধারণ একজন নগররক্ষী থেকে আজকের পুলিশ প্রধান বানিয়েছে। কিভাবে তুমি এই লোকটার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? 

পুলিশ প্রধান :  তার বিনিময়ে আমার সমস্ত আস্থা আর নির্ভরতা দিয়ে ওই লোকটাকে আমি রক্ষা করে চলেছি। তার নির্দেশে অনেক অন্যায় কাজও করেছি। আর করব না। যথেষ্ট হয়েছে। 

মেহেরজান : কি করবে তুমি? চাকরি ছেড়ে দিবে? 

পুলিশ প্রধান :  চাকরি ছেড়ে দিলে গভর্নর আমাকে আস্ত রাখবে না। তার অনেক গোপন বিষয় আমি জানি। 

মেহেরজান : কি করতে চাও তুমি তাহলে? 

পুলিশ প্রধান :  একটা না একটা পথ ঠিক বের করবো। 

মেহেরজান : বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চাইছিল। তুমি বাবার সাথে দেখা করবে। ভালো করে শোনো বাবা কি বলেন। সুযোগ বুঝে আমাদের কথাটাও বাবাকে বলবে। 

পুলিশ প্রধান :  খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে আমার ঘরে তুলে নিয়ে আসব।

(ঘনিষ্ঠ হবে, তারপর হাসতে হাসতে মঞ্চ ত্যাগ করবে।) 

দৃশ্য : ৬ 

চরিত্র: অসুস্থ সানান, চিকিৎসক ইব্রাহিম, ব্যবসায়ী জলিল, নাপিত উগার, পণ্ডিত কাদির ও তার পুত্র সাদিম কোটিপতি কারাম এবং জ্বিন সিনগাম। 

(ইমরিসের কফিখানা। চার পাচজন লোক কফিখানায় বসে আছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ইব্রাহিম, ব্যবসায়ী জলিল, নাপিত উগার, পণ্ডিত আব্দুল কাদির, তার পাশে বসে থাকবে তার যুবক ছেলে সাদিম, কোটিপতি কারাম। শুধু মাত্র কোটিপতি কারামের সামনে এক কাপ কফি থেকে ধোয়া উড়ছে। চিকিৎসক তার চিকিৎসার বাক্সটা নাড়াচাড়া করছে। ব্যবসায়ী একটা কাগজে কিছু লিখছে। পণ্ডিতের সামনে একটা বই খোলা। নাপিত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধনকুবের কারামের মাথাটা টিপে দিচ্ছে। তাদের মধ্যে জ্বিন ইফরিদ এসে উপস্থিত হবে। সে যেহেতু অদৃশ্য থাকবে তাই তাকে কেউ দেখতে পাবে না। সে আড্ডার মাঝে মাঝে কারো কারো কান ফিসফিস করে অন্য কারো গোপন কথা বলবে। কফিখানায় তার ঘুরে বেড়ানোটা হবে একটু অদ্ভুত। সে কফিখানায় একটা হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার পাশাপাশি কফিখানার ভেতরে একটা বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি করবে। এই পরিবেশেই কোটিপতি কারাম খুন হবে। তাদের আড্ডার মধ্যখানে ব্যবসায়ী সানান প্রায় টলতে টলতে উদভ্রান্ত অবস্থায় পানশালায় ঢুকবে। কারো দিকে না তাকিয়ে এক কোণায় বসে এক গ্লাস কড়া পানিয়ের কথা বলবে। তারপর নিজের মনেই সে পান করতে থাকবে। সবাই অবাক হয়ে তার বিষয়টা লক্ষ্য করবে। চিকিৎসক ইব্রাহিম উঠে তার কাছে যাবে।) 

চিকিৎসক ইব্রাহিম : সানান তোমার খবর কি? 

সানান : খবর ভালো না। 

চিকিৎসক ইব্রাহিম : আমার ওষুধে কি কোন কাজ হয়নি? 

(সানান লুকিয়ে তার হাতটা দেখাবে। হাত দেখে চিকিৎসক ইব্রাহিমের চোখে মুখে ভয় ফুটে উঠবে।) 

সানান : তোমার ঔষধ খেয়ে আমার হাতের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।

চিকিৎসক ইব্রাহিম : এমনতো হওয়ার কথা না। আমার ঔষধে কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা অব্যর্থ। ভালো হবেই। 

সানান : কুকুরে কামড়ালেতো সেটা ভালো হবে।

চিকিৎসক ইব্রাহিম : তোমাকে তাহলে কিসে কামড়েছে?

সানান : একটা পাগলা জ্বিন আমাকে কামড়েছে। 

চিকিৎসক ইব্রাহিম : পাগলা কুকুরে কামড়ালে মাথায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তুমি রাতের বেলা আমার কাছে এসো। আমি মাথা শান্ত করার ঔষধ দিয়ে দেব। 

ব্যবসায়ী জ্বলিল : কি হে সানান ফিসফিস করে শুধু ইব্রাহিমের সাথে কথা বললেই হবে। আমাদেরকেও কিছু বলো। কি হয়েছে তোমার? তোমাকে আজ বড্ড অস্থির লাগছে। 

(সানান সে কথার জবাব না দিয়ে আবার হুরমুরিয়ে পানশালা থেকে বের হয়ে যাবে।)

চিকিৎসক ইব্রাহিম : সানানকে একটা পাগলা কুকুর কামড়েছে। 

(সবাই হৈ হৈ করে উঠবে।) 

ব্যবসায়ী জলিল : বলেন কি কখন কিভাবে? 

ধনকুবের কারাম : এই জন্যই আজ তাকে এমন অস্থির লাগছিল? তুমি চিকিৎসা করছো ঠিক মত? 

পণ্ডিত আব্দুল কাদির : উফ শহরে কুকুরের উৎপাত বড্ড বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ী জলিল : শুধু কুকুরের উৎপাত? শহরের মানুষ কি খুব সুখে আছে। চারপাশে চুরি, ডাকাতি, লুটপাট। যে যা ইচ্ছে তাই করছে। যারা রক্ষক তারাই আজ ভক্ষকের ভূমিকায়। 

(জ্বিন ইফরিদ-কুফরিদ এর মধ্যেই ফিসফিস করে তার উস্কানিমুলক কথাবার্তা বলা শুরু করবে। প্রথমে বলবে ব্যবসায়ী জলিলের কানে। যেহেতু সে অদৃশ্য ফলে কফিখানার কেউ তাকে দেখবে না।) 

জ্বিন কুফরিদ : পাজি গভর্নরটা ঠিক মত দায়িত্ব পালন করছে না।

ব্যবসায়ী জলিল : অ্যাই পাজি গভর্নরটা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছে না। 

কোটিপতি কারাম : দেখো গভর্নরকে নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না।

জ্বিন ইফরিদ : তুমি জানো ঘোড়ার ডিম। তুমিতো আবার গর্ভনরের বন্ধু। কাছের মানুষ। 

ব্যবসায়ী জলিল : তুমিতো গভর্নরের কাছের মানুষ তাই এমনটা বলছ। সে আমরা বুঝি। 

চিকিৎসক ইব্রাহিম : আহা কথা হচ্ছিল সানানকে কুকুরে কামড়েছে তা নিয়ে আর তোমরা রাজনৈতিক আলাপ শুরু করে দিলে। 

জ্বিন কুফরিদ : পাগলা কুকুরের কামড় থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু গভর্নরের কামড় থেকে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। 

ব্যবসায়ী জলিল : গভর্নর কি পাগলা কুকুরের চেয়ে কোন অংশে কম?

কোটিপতি কারাম : দেখো বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। গভর্নরকে নিয়ে এইভাবে কথা বলা সত্যিকার অর্থেই ধৃষ্টতার শামিল। 

জ্বিন ইফরিদ : এই উজবুক কোটিপতি কারাম। তুই প্রতিদিন বউ পেটাস, না? (নাপিত উগার কোটিপতি কারামের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তার মাথা টিপে দিচ্ছিল। হঠাৎ করে মুখ ফসকে সে একটা কথা বলে ফেলবে।) 

নাপিত উগার : হুজুর আপনি নাকি প্রতিদিন বউ পেটান।

(কথা শেষ করে সে জিভে কামড় দিবে।) 

(কোটিপতি কারাম রেগে ফেটে পড়বেন।) 

কোটিপতি কারাম : ‘এত বড় সাহস তোর। সামান্য নাপিত হয়ে তুই আমার মত সমাজের উঁচু স্তরের একজন মানুষ নিয়ে এত বড় কথা বললি। বের হ। বের হ দোকান থেকে। 

জ্বিন কুফরিদ : (পণ্ডিত আব্দুল কাদের কানে কানে বলবে) নাপিত কি মানুষ না। প্রতিদিন বড় বড় মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাদের অপ্রয়োজনীয় চুলগুলো কেটে আসে। ওর কাছে সকলের বাড়ির আসল খবরটাই থাকে। 

পণ্ডিত আব্দুল কাদের : (বই থেকে মুখ তুলে) নাপিত উগারের কথা সত্য। অন্দরমহলের খোঁজ খবর ঠিকই তার কাছে থাকে। 

জ্বিন ইফরিদ : আপনার ঝোলার ভেতর যে বেড়ালটা আছে সেটাও কিন্তু ইঁদুর খায়।

(কোটিপতি কারামের কানে ফিসফিসিয়ে 

কোটিপতি কারাম : এই যে বুদ্ধিজীবী সাহেব খুব যে সত্য কথা বলছেন। আপনার ঝোলার ভেতরে যে বেড়ালটা আছে ওটাও কিন্তু ইঁদুর খায়।

হাকিম আব্দুল কাদের : কেন আমি আবার কি করলাম। সত্য কথা বললেই শুধু লাগে। জগতের নিয়মই এটা। 

জ্বিন কুফরিদ : আহারে পণ্ডিতজীবী। তুমি সব সময় স্তুতি বাক্য লিখে গভর্নরের আত্মাকে শান্তিতে রাখো। তোমার গুণধর যুবক ছেলে তোমার ঘরের দাসির সাথে অসৎ কর্ম করতে গিয়ে তাকে মেরে ফেলল। গভর্নরের সহায়তায় সেই লাশ তুমি গুম করে ফেললে।

(কোটিপতি কারামের কানে কানে বলে) 

কোটিপতি কারাম : তোমার নামে বাজারে অনেক কথা চাউর আছে পণ্ডিত আব্দুল কাদের। শুনলাম তোমার ছেলে নাকি তোমাদের ঘরের দাসিকে খুন করে গুম করে ফেলেছে। 

পণ্ডিত আব্দুল কাদের : (আমতা আমতা করে) এই কে বলছে তোমাকে এই সব কথা। সব ফালতু বাত। কোন প্রমাণ আছে? সমাজের আমার মত একজন বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে তুমি এইভাবে কথা বলছ। এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।

জ্বিন ইফরিদ : (পাশে বসে থাকা হাকিম আব্দুল কাদেরের যুবক ছেলের কানের কাছে গিয়ে বলবে) 

এই বোকার হদ্দ সাদিম। কি করছিস গাধা এখানে বসে। কারামের মাথায় একটা বাড়ি দে। ও আজ তোর সব গোপন খুনের খবর বলে দেবে। পণ্ডিত পুত্র সাদিম : বাবা শয়তানের বাচ্চা কারাম চাচা এই সব কি বলছে। ওই ব্যাটাকে থামান। নাহলে আমিই কিন্তু থামিয়ে দেব। 

কোটিপতি কারাম : এই বেয়াদব ছেলে তুই আমাকে থামিয়ে দিবি কিভাবে। কত বড় সাহস তোর। বাড়িতে বসে ফূর্তি করবি, মানুষ খুন করবি আর কফিখানায় বসে বড় বড় কথা বলবি। তোর এই জারিজুরির কথা আমি ফাঁস করে দেব। 

পণ্ডিত পুত্র : (পেতলের জগটা হাতে নিয়ে) যথেষ্ট হয়েছে কারামের বাচ্চা কারাম, চাচার বাচ্চা চাচা, উজবুক কারাম চাচা।এইবার তোর মুখ বন্ধ করে দিলাম। যাঃ যাঃ। 

(পেতলের জগ দিয়ে সজোরে কোটিপতি কারামের মাথায় আঘাত করবে। সবাই এই করো কি করো কি বলে হই হই করে উঠবে। কফিখানার ভেতর একটা হুলস্থুল লেগে যাবে। জ্বিন সিনগাম অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে। হাসতে হাসতে সে কফিখানা থেকে বের হয়ে যাবে।) 

গান 

আমি ইফরিদ আমি কুফরিদ 
প্রাণের বন্ধু মোরা 
মরু আর সাগর পেড়িয়ে 
সারা দুনিয়া মারিয়ে
পাবে না এমন জোড়া 
আমাদের রাত
আমাদের দিন 
রবে অমলিন 
আহা চিরদিন 

আমি ইফরিদ আমি ইফরিদ 
যাদুর দানব আমি 
রাজা মহারাজা সাধু দরবেশ 
সব ধুলায় এসেছে নামি 

আমি কুফরিদ আমি কুফরিদ
কালো যাদুর মহারানী 
শিরায় শিরায় ঘুড়ে বেড়াই আমি 
জানি সবকিছু আমি জানি 

আমি ইফরিদ আমি কুফরিদ
আমরা আঁধারের যাদুকর
সুখের শত্রু আমরা 
ভাঙি শান্তি সুখের ঘর।

আমি ইফরিদ, আমি কুফরিদ
করি তোদের জীবন গুম 
কালো যাদুর আবেশে তোদের
চোখে নেই কোনো শান্তির ঘুম 

আমি ইফরিদ আমি ইফরিদ
আমি কালো যাদুর জ্বিন
আমাদের রাত আমাদের দিন
রবে অমলিন আহা চিরদিন 

আমি কুফরিদ আমি কুফরিদ
কালো যাদুর রানী 
শিরায় শিরায় ঘুরে বেড়াই আমি
জানি সব কিছু তোদের জানি। 

দৃশ্য : ৭ 

চরিত্র: সানান, জ্বিন ইফরিদ, ও অপরিচিত কম বয়স্ক তরুণী। 

(একটু রাত করে সানান বাড়িতে ফিরছে। তার মাথার ভেতর তখনো কড়া পানীয়ের নেশায় ভরপুর। বাইরে বাতাস বইছে। এর মধ্যেই জ্বিন ইফরিদ সানানের কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলে তাকে উত্তেজিত করবে।) 

জ্বিন ইফরিদ : সানান দেখছ কি সুন্দর বাতাস বইছে চারদিকে। আহ কি মিষ্টি বাতাস। এই বাতাসে আশি বছরের বুড়োর শরীরেও ত্রিশ বছরের যুবকের শক্তি ফিরে আসে। তুমিতো এখনো পঞ্চাশ বছরের তাগড়া যুবক।

সানান : (নিজের মনে কথা বলবে) আহা বাতাসটা সত্যিই আজ দারুন। মনের ভেতরে কেমন ফুরফুর ফুরফুর করছে। কি জানি করতে ইচ্ছে করছে। কাকে যেন কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। 

জ্বিন ইফরিদ : কতদিন কোন তরুণির শরীর তুমি ছুয়ে দেখো না। সানান তোমার বউটা অনেক বুড়ো হয়ে গেছে। 

সানান : আহ একজন ডগমগো ডগমগো তরুণিকে কাছে পেলে খুব ভালো লাগত। কি সুন্দর বাতাস চারপাশে। বড্ড প্রেমময়। বউটা এখন আর ভালো লাগে না। 

(সানান তার মনে মনে কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখবে অন্ধকার গলি থেকে ছোট্ট একটা কিশোরী মেয়ে বের হয়ে আসছে। মেয়েটাকে অপরিচিত মনে হচ্ছে। সানান খুব মনোযোগ দিয়ে মেয়েটাকে দেখবে। জ্বিন ইফরিদ আবারো সানানের মাথার ভেতর কথা বলবে।) 

জ্বিন ইফরিদ : সানান এইতো সুযোগ। যা তোর মনের বাসনা পূরণ করে আয়। এমন সুযোগের রাত আর খুঁজে পাবি না। 

(সানান মেয়েটার কাছে যাবে। তারপর খুব আদুরে গলায় তার সাথে কথা শুরু করবে।) 

সানান : এত রাতে কোথায় যাচ্ছ তুমি? তোমাকে নতুন দেখছি 

তরুণি : আমি এই শহরে নতুন। পথ হারিয়ে ফেলেছি। 

সানান : আহাঃ ভয় পাচ্ছো কেন? ভয় নেই আমি তোমাকে পথ দেখিয়ে দিব। কোথায় যাবে তুমি? 

তরুণি : বাড়ির রাস্তাওতো ভুলে গেছি। 

সানান : কোন বাড়িতে এসেছ তুমি? 

তরুণি : গভর্নরের বাড়িতে এসেছি। আমার মা গর্ভনরের চাচাতো বোন।

(এই কথা শুনে সানান একটু থমকে যাবে। তারপর আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে। এর মধ্যেই জ্বিন তার কানে কথা ঢালতে থাকবে।) 

জ্বিন ইফরিদ : সানান এইতো সুযোগ। গভর্নর তোর জীবনটা ছারখার করে দিবে। তোর মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। তার আগে তুই গর্ভনরের ভাতিজিকে যা করার করে নে। দুনিয়াতেই স্বর্গসুখ ভোগ কর। ঈশ্বর তোর জন্যই ভোগ পাঠিয়েছে। যা যা (সানান হাত বাড়িয়ে তরুণির হাত ধরবে। তারপর তাকে জোর করে কাছে টেনে আনবে।) 

সানান : চলো আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব। ঐযে বাগানের ভিতর দিয়ে পথ। চলো চলো… আমার বুক হবে তোমার নিরাপদ বিছানা।

(মেয়েটা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইবে। কিন্তু পারবে না। সানান মেয়েটার হাত টানতে টানতে তাকে মঞ্চের বাইরে পর্দার আড়ালে নিয়ে যাবে। মেয়েটা চিৎকার করতে থাকবে। মঞ্চের বাইরে পর্দার আড়ালে ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দ হবে। তারপর এক সময় সব চুপ। সারা মঞ্চ জুড়ে নিরবতা। কিছুক্ষণ পর মঞ্চের অপর প্রান্ত দিয়ে সানান হন্ত দন্ত হয়ে ঢুকবে। সে ভীত ত্রস্ত অসহায় আর অনুতপ্ত।)

জ্বিনদের প্রবেশ।

হাস্যরস সানান : এ আমি কি করলাম। কেন আমি এমনটা করলাম। আমার বাড়িতে মেয়ে আছে। তার বয়সি আরেকটা মেয়ের আমি সর্বনাশ করলাম। খুন করলাম তাকে। ও! 

(সানান কাঁদতে থাকবে। জ্বিন ইফরিদ এইবার প্রকাশ্যে তার সামনে আসবে।)

জ্বিন ইফরিদ : সানান তুই আমার মাথা পাড়িয়েছিলি না? তার শাস্তি তোকে পেতেই হবে। 

সানান : এত বড় শাস্তি আমাকে দিও না। 

জ্বিন ইফরিদ : তোর মুক্তির পথ একটাই। গভর্নরকে খুন করতে পারলেই তুই মুক্ত হয়ে যাবি। সব পাপ থেকে মুক্ত। ওই আকাশে ঈশ্বরের কোলে বসে দোল খাবি। যা যা। খুন কর। 

সানান : সেটা আমি করতে পারব না। 

জ্বিন ইফরিদ : তোকে পারতেই হবে। আমি আছি তোর সাথে। 

সানান : হায় ঈশ্বর এ কোন পরীক্ষায় আমি পড়লাম। 

(সানান কাঁদতে কাঁদতে মঞ্চ ত্যাগ করবে।) 

দৃশ্য : ৮ 

চরিত্র: পুলিশ প্রধান, রহস্যময় নারী কণ্ঠ, ব্যবসায়ী সানান, গভর্নর ও তার পেয়াদা, জ্বিন সিনগাম। 

(নগরীর পুলিশ প্রধান শহরের বাজারের রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটবে। সব কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকবে। একটু পরই এই রাস্তা দিয়ে শহরের গভর্নর যাবেন। নগর পুলিশ গামাস আল বালতি তাই বাজারের রাস্তা দিয়ে একটু সাবধানে পায়চারি করছেন আর সবদিকে নজর রাখছেন। পায়চারি করছেন আর নিজের মনে কথা বলছেন) 

পুলিশ প্রধান গামাস : উফ শহরে হঠাৎ করে অন্যায় অনাচার বেড়ে গেছে। খুন খারাবি একটু বেশি হচ্ছে। চুরিটা ঠেকানোই যাচ্ছে না। কারা যে এই সব করছে। এর মধ্যেই আবার গর্ভনরের ভাতিজিকে খুন করা হলো। কিভাবে যে এত চাপ সামলাব। বুঝতে পারছি না। চাকরিটা মনে হয় এই দফায় আর রক্ষা করা যাবে না। নাহ যেভাবেই হোক রাস্তার মোড়ে মোড়ে টহল বাড়িয়ে দিতে হবে। গভর্নর কখন ডেকে বসে তার ঠিক নেই।

(নিজের মনে কথা শেষ হওয়ার আগেই তার কানের কাছে কোন একটা নারী কণ্ঠ কথা বলা শুরু করবে।) 

অদৃশ্য নারী কণ্ঠ : গামাস এত অস্থির হচ্ছ কেন সোনা? তোমার মাথাটা কেন যে গরম সে তো বুঝতে পাচ্ছি। ব্যবসায়ী সানানের মেয়েটাকে তুমি ইচ্ছে করলে বিয়ে করতে পার। মেয়েটার প্রতি তোমার বিশেষ টান আছে। তাহলে কেন দেরি করছ বোকা গামাস। ওকে বিয়ে করে ফেল নয়ত বুড়ো গভর্নর হবে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমিক। 

(কথা শেষ করেই আবার হাসির শব্দ শোনা যাবে) গামাস এবার ভয় পেয়ে যাবে।

গামাস : কে কে কথা বলে? 

নেপথ্য কণ্ঠস্বর : এত দ্রুত আমাকে ভুলে গেলে বোকা গামাস? 

গামাস : ও তুমি। কেন আমাকে এভাবে বিরক্ত করছ। এই কি তোমার উপকারের নমুনা। 

নেপথ্য কণ্ঠ : তুমি আমাকে বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করেছ। আমি অনেক কৃতজ্ঞ। সে জন্যই বলছিলাম মেহেরজানকে দ্রুত বিয়ে করে ফেল। 

গামাস : কিভাবে বিয়ে করি বলো। শহরের অবস্থা খারাপ। চারদিকে এত চুরি-ডাকাতি, বিশৃংখলা, কোনভাবেই কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।

নেপথ্য কণ্ঠ : তুমি আমাকে মুক্ত করেছ ঠিক। কিন্তু বন্দি জীবন থেকে মুক্ত হয়ে দেখি আমার প্রাণের বন্ধু আরেক শয়তানের কাছে বন্দি। কিভাবে শহরে শান্তি আসবে বলো। 

গামাস : তুমি এখন যাও। গভর্নর আসবেন একটু পরেই এই রাস্তা দিয়ে আমার উপকার করতে চাইলে ভাগো এখান থেকে। 

(নেপথ্য কণ্ঠের রিনরিনে হাসি আস্তে আস্তে বাতাসে মিলিয়ে যাবে। গামাস বাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সানানের দোকানে ঢুকবে। সানান মন খারাপ করে দোকানে বসে আছে। উদভ্রান্ত চেহারা।) 

গামাস : (গামাস মনে মনে বলবে) কি হয়েছে সানান চাচার? বড্ড আনমোনা লাগছে তাকে। গভর্নর কি তাহলে সত্যি সত্যি সানান চাচাকে মেহেরজানের বিয়ের কথা বলেছে। 

(মনে মনে কথা শেষ করে গামাস গলা খাকারি দিয়ে আবার কথা বলা শুরু করবে।)

গামাস : সানান চাচা আপনার শরীর ভালোতো? 

সানান : শরীর মন দুটোই খারাপ। ব্যবসাটা ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে নানা রকম উৎপাত। 

(গামাস কৌতূহলি হয়ে উঠবে) 

গামাস : কি ধরনের উৎপাত। বলেন আমাকে। এই শহরে কোন উৎপাত সহ্য করা হবে না। 

সানান : তোমার কি অবস্থা বলো। বাসার সবাই ভালো আছে? তোমার সাথে আমি নিজেই দেখা করতে যেতাম। 

গামাস : কিভাবে ভালো থাকি চাচা। এত উৎপাত শুরু হয়েছে শহরে। আবার কয়েক দিন হলো কে বা কারা গভর্নরের ভাতিজিকে গুম করে ফেলেছে। তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

(এই কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ব্যবসায়ী সানান অস্বাভাবিকভাবে কাশতে শুরু করবে। এটা হলো ভয়ের কাশি।) 

গামাস : চাচা আপনি ঠিক আছেন তো? 

সানান : আমি ঠিক আছি। তোমার সাথে দুটো বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। 

গামাস : চাচা বলুন। 

সানান : আমার ছেলেটার দিকে একটু নজর দিয়ো। ও কি কোন নিষিদ্ধ বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে ওঠা বসা করে? তোমার চোখে এমন কিছু কি পড়েছে?

গামাস : চাচা আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। আপনার ছেলে খুব ভালো। শহরের কোন ধরনের অন্যায়ের সাথেই তার সম্পর্ক নেই। খুব ভদ্র ছেলে ফাদিল।

সানান : শুনে বেশ শান্তি পেলাম মনে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

গামাস : আমি এখন যাই। গভর্নর আসছেন। 

(গামাস দ্রুত বাইরে বের হয়ে যাবে। গভর্নর হেঁটে হেঁটে বাজার পরিদর্শন করবেন। সবাই গভর্নরকে কুর্নিশ করবে। সানানের দোকানের সামনে দিয়ে গভর্নর যাওয়ার সময় সানান দেখেও না দেখার ভান করবে। বিষয়টা গভর্নরের চোখ এড়িয়ে যাবে না। গভর্নর চলে যাওয়ার পর কয়েকজন সেপাই আর পেয়াদা সানানের দোকানে ঢুকবে।)

পেয়াদা : সানান কি খবর তোমার? 

(সানান কোন কথার উত্তর দিবে না।) 

পেয়াদা : ব্যবসা করে কয়টা টাকা হওয়ায় তুমি খুব বেড়ে গেছ। ধরাকে সরা জ্ঞান করো। কারো কথার উত্তর দিতে চাও না। আজ সন্ধ্যায় গভর্নর সাহেব তোমাকে দেখা করতে বলেছেন। 

সানান : কেন দেখা করতে বলেছেন? 

পেয়াদা : কেন দেখা করতে বলেছেন সেই কৈফিয়ৎ কি তোমাকে দিতে হবে? সেটা গভর্নরই ভালো জানেন। তুমি সন্ধ্যার সময় গর্ভনরের দরবারে হাজির হবে। ঠিক মত উপঢৌকন নিয়ে যেতে ভুলো না। 

(পেয়াদারা দোকান থেকে বের হয়ে যাবে। তখন অদৃশ্য কণ্ঠস্বর যেটা আসলে জ্বিন সিনগামের কণ্ঠস্বর সে সানানের কানে কথা বলতে থাকবে।) 

জ্বিন ইফরিদ : সানান এটাই তোমার সুযোগ গভর্নরকে খুন করার।

সানান : তুমি আবারও আমাকে প্ররোচিত করছ। আমি পাগল হয়ে যাব। 

জ্বিন ইফরিদ : তাহলে তুমি মরবে। এই গভর্নর তোমার পরিবারের প্রতিটি মানুষকে ধ্বংস করবে। তোমার মেয়েকে সে কামনা করছে। ছেলেকে জেলে ঢোকাতে চাচ্ছে। 

সানান : কি বলছ তুমি এই সব। 

জ্বিন ইফরিদ : তুমি যদি গভর্নরকে খুন করে আমাকে তার কালো যাদু থেকে রক্ষা না করো তাহলে আমি তোমার ক্ষতি করবো। আমার মাথা পাড়িয়ে তুমি রক্ষা পাবে না। আর ঐ দেখো, সুন্দরী পরীরা তোমার জন্য আসমানের উপরে পানপাত্র হাতে অপেক্ষা করছে। আঃ মজারে মজা…

সানান : ঠিক আছে আমি যাচ্ছি ওর বাড়িতে। 

জ্বিন ইফরিদ : ভয় নেই। সব কিছু আমি ঠিক করে দিব।

(অদৃশ্য থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠের অট্ট হাসি ভেসে আসবে।) 

দৃশ্য : ৯ 

চরিত্র: গর্ভনর, ব্যবসায়ী সানান, জ্বিন ইফরিদ। 

(গভর্নরের বাসা। গভর্নর বসে আছেন তার চেয়ারে। সানান ঢুকবে তখন। গভর্নরের সামনে নানা রকম খাবার সাজানো। দেখে মনে হচ্ছে গভর্নর সানানকে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে এসেছে।) 

গভর্নর : স্বাগতম, স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? 

(সানান কিছু না বলে খুব চিন্তিতভাবে চারপাশটা দেখবে) 

সানান : আমি ভালো আছি। আপনি আমাকে ডেকেছেন এটা আমার সৌভাগ্য। 

(গভর্নর দুটো গ্লাস পানীয় দিয়ে পূর্ণ করবে। একটা সানানের দিকে এগিয়ে দিবে। তারা দুজনেই পানীয় পান করবে। পানীয় খাওয়ার পর দুজনকেই বেশ চনমনে দেখাবে।) 

গভর্নর : আজকের গ্রীষ্মের রাতটা দারুন মুগ্ধকর। কেমন মিহি বাতাস চারদিকে। গ্রীষ্মকাল আপনার কেমন লাগে সানান সাহেব? 

সানান : আমার সব ঋতুই ভালো লাগে। 

গভর্নর : বাহ দারুণ রসিক মানুষ। আপনিতো ব্যবসায়ী, দারুণ উন্নতি করছেন দিন দিন। 

(গভর্নর আরেক গ্লাস পানীয় ভরে সানানের দিকে এগিয়ে দিবে। সানান তার চারপাশটা আবার ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখবে সতর্কতার সাথে। দরজার পাশে দুজন প্রহরী দাঁড়িয়ে আছে। প্রহরী দুজনকে দেখে সানান কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়বে।) 

সানান : কিভাবে ব্যবসা করি বলেন। শহরে যেভাবে চুরি ডাকাতি বেড়ে যাচ্ছে। 

গভর্নর : মোটেও চিন্তা করবেন না। সব ঠিক করে ফেলব। শহরের পুলিশ প্রধান কে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

(গভর্নর তার গ্লাসে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে একটু গলা খাকারি দিয়ে কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিবে।)

গভর্নর : আপনাকে বিশেষ একটা প্রয়োজনে আজ ডেকেছি। 

(কথা শেষ করে গভর্নর ইশারায় তার প্রহরীদের চলে যেতে বলবে। প্রহরীরা চলে যাবে।) 

গভর্নর : সানান আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আশা করি আপনি অমত করবেন না। আপনার জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি। আপনার ছেলের জন্য খুব ভালো একটা বিয়ের ব্যবস্থা আমি করব। তাকে রাজদরবারে কাজের ব্যবস্থাও করব। 

সানান : (গলা খাকারি দিয়ে বলবে), এটাতো আমার জন্য খুব সৌভাগ্যের বিষয়। 

গভর্নর : আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না সানান সাহেব।

(সানান একটু চিন্তিত হয়ে চারপাশ দেখবে। তখনই তার কানের কাছে নেপথ্য থেকে জ্বিন সিনগাম কথা বলা শুরু করবে।) 

জ্বিন ইফরিদ : এই দেরি করছিস কেন। তোর জামার আস্তিনে যে ছোরাটা লুকিয়ে রেখেছিস সেটা এখনি বের কর। বসিয়ে দে গভর্নরটার বুকে। জলদি কর। এখনি প্রহরিরা চলে আসবে। 

(কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সানান উঠে দাঁড়াবে।) 

সানান : হেঃ হেঃ হেঃ আসুন আমরা এই শুভক্ষণে কোলাকুলি করে।

(গভর্নর কোলাকোলির জন্য কাছে আসবে। ঠিক তখনি সানান তার আস্তিনের ভেতর থেকে ছোরাটা বের করবে। গভর্নর ছুরি দেখে ফেলবে।) 

গভর্নর : ওকি আপনার হাতে ছুরি। ছুরি নিয়ে আপনি এখানে এসেছেন? সানান : তোর মত বুড়ো শয়তানকে আমি খুন করতে চাই। তুই এই শহরের মূল সমস্যা। আজ তোকে খুন করে সব সমস্যার সমাধান করব আমি।

গভর্নর : কি এত বড় সাহস! বাঘের গুহায় এসে বাঘকে হত্যা করার হুমকি। এই কে কোথায় আছিস? 

(কথা শেষ হওয়ার আগেই সানান গভর্নরের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি হবে। প্রহরীরা চলে আসবে। ধ্বস্তাধ্বস্তির মধ্যেই সানানের ছুরিটা সানানের বুকের মধ্যে গেথে যাবে। সানান মারা যাবে।) 

গভর্নর : (ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে প্রহরীদেরকে বলবে) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস ভীতুর দল। এটাকে এখান থেকে নিয়ে বাইরে ফেলে আয়। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *