জাদুর লাটিম – দৃশ্য ১০

দৃশ্য : ১০ 

চরিত্র : একজন পরহেজগার তসবি হাতে মানুষ, একজন সুন্দরী বাইজি, তৃতীয় রহস্যময় লোক। 

অন্ধকার রাস্তা দিয়ে একজন পরহেজগার মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। তার হাতে তসবি মাথায় টুপি। তসবি জপতে জপতে সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এক অন্ধকার গলির কাছে আসতেই সে নূপুরের ঝুমুর ঝুমুর শব্দ শুনতে পাবে। কান খাড়া করে সে গলির দিকে তাকাবে। সেখান থেকেই নূপুরের শব্দ ভেসে আসছে। লোকটা সেদিকে কৌতূহলি হয়ে যাবে। গলির ভেতর যেতেই আধো আলো আধো অন্ধকারে সে একজন অনিন্দ সুন্দরী তরুণিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে। তরুণির মুখটা ঢাকা। শরীরে ঝলমলে পোশাক। দ্বিধা গ্রস্থভাবে কৌতূহলি হয়ে সে একবার গলির মুখে যেতে চাইবে আবার ফিরে আসবে। গলির ভেতরের তরুণি তখন আবার হেসে উঠবে। হাসির শব্দ শুনে লোকটা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারবে না। সে গলির ভেতর ঢুকে যাবে।) পরহেজগার : কে কে হাসে ওখানে? 

রহস্যময়ি সুন্দরী : কে আর হাসবে। এখানেতো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। 

পরহেজগার : আপনি এখানে? কি করছেন? 

সুন্দরী : পথ হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে পথ দেখিয়ে দিতে পারবেন? এই শহরে আমি একদম নতুন। 

(সুন্দরী পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। পরহেজগার লোকটার ভেতর কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে। উত্তেজনায় তার হাতের তসবিও দ্রুত নড়তে থাকবে।) 

পরহেজগার : কোথায় বাড়ি আপনার? এখানে কিভাবে? 

সুন্দরী : আমি একজন বাইজি। নেচে গেয়ে রাতের আসর জমাই। 

(বাইজি নাম শুনেই পরহেজগার লা হাওলা ওলা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ পড়া শুরু করবে বিড়বিড় করে। ঠিক তখনি বাইজি সুন্দরী মুখ ঘুরিয়ে তাকাবে। তার অনিন্দ সুন্দর মুখটা দেখে পরহেজগারের হাত থেকে তসবিটা পড়ে যাবে। সে হা করে তাকিয়ে থাকবে। বাইজি সুন্দরী আস্তে আস্তে তার কাছে হেঁটে আসবে। তার ঠোটে রহস্যময়ী হাসি।) 

সুন্দরী : আমাকে সাহায্য করবেন? 

পরহেজগার : বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করাই আমার কাজ। বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। 

সুন্দরী : আমার হাতটা একটু ধরবেন? আমার পায়ে খুব ব্যথা। হাঁটতে পারছিনা। 

(ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে সুন্দরীর কাছে এসে তার হাত ধরবে। সুন্দরীর হাত ধরেই লোকটা কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকবে। কি কোমল হাত। সুন্দরী তখন গলা খাকারি দিয়ে ভদ্রলোককে সচেতন করবে।) 

সুন্দরী : এই! চলুন না! 

পরহেজগার : নিশ্চই নিশ্চই। 

(সুন্দরীর হাত ধরে তারা দু এক কদম পা টিপে টিপে সামনে যাবে।) 

ভদ্রলোক : বাড়ি কোথায়? নাম কী? 

সুন্দরী : (হাসতে হাসতে) অনেক দূরের নগরীতে। চিনবেন না। 

নাম? কুমকুম। কুমকুম সুন্দরী। 

ভদ্রলোক : (কয়েকবার সে মুখে বিড়বিড় করে কুমকুম বলবে।) বাহ এত সুন্দর নাম আগে কখনো শুনিনি। মনে হচ্ছে কোন জ্বিনপুরি থেকে অচিন এক সুন্দরী পরি নেমে এসেছে আমাদের শহরে। 

সুন্দরী : তাই মনে হচ্ছে? 

ভদ্রলোক : হ্যাঁ কুমকুম সুন্দরী। ইচ্ছে করছে এই হাতটুকু সারাজীবন ধরে রাখি। তোমার পাশে পাশে থাকি। 

সুন্দরী : কিন্তু একটু আগেইতো আমার বাইজি পরিচয় শুনে লা হাওলা পড়ছিলেন। 

ভদ্রলোক : মনের ভুলে পড়েছিলাম। 

সুন্দরী : থাক, থাক। আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। 

 ভদ্রলোক : সারাজীবন এই হাতটুকু ধরে রাখার অনুমতি আমাকে দাও। আঃ কী নরম। কোমল হাতদুটো আমি আর কোনোদিন ছাড়তে চাই না।

সুন্দরী : আপনারতো বাসায় সুন্দরী স্ত্রী আছে। ফুটফুটে একটা মেয়ে আছে।

ভদ্রলোক : অ্যাঁ? তুমি কিভাবে জানো? 

সুন্দরী : (রহস্যময় হাসি দিয়ে বলবে) আমি জানি। আমি সব জানি। 

ভদ্রলোক : ধ্যাত্ ওদেরকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসব। তোমার জন্য পৃথিবীর সবকিছু ছাড়তে রাজি আছি। 

(বুকের কাছে টেনে নিতে চেষ্টা করবে। হঠাৎ করেই কুমকুম সুন্দরীর মুখটা শক্ত হয়ে যাবে। সে এক ঝটকায় তার হাতটা ভদ্রলোকের কাছ থেকে সরিয়ে নিবে।)

সুন্দরী : অ্যাই! আপনি অত্যন্ত ভণ্ড একজন মানুষ। আবার কোন সুন্দরীর সাথে দেখা হলে আপনি আমাকে ছাড়তেও পিছপা হবেন না। আপনাকে বিশ্বাস নাই। মানুষ অত্যন্ত খারাপ। এদেরকে কখনো বিশ্বাস করতে নেই। আপনার এই ভণ্ডামির শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। 

ভদ্রলোক : (হঠাৎ করে সে ভয় পেয়ে যাবে। আমতা আমতা করে বলবে) কি বলছ এই সব। কে তুমি? 

সুন্দরী : (খিলখিল করে হাসতে থাকবে।) 

(এর মধ্যেই সে গলিপথে অন্য আরেকজন লোক চলে আসবে। তার হাতে একটা পাত্র। পাত্রের মধ্যে কিছু একটা আছে। সে হাঁটতে হাঁটতে তাদের কাছে আসবে।)

সুন্দরী : (কুমকুম সুন্দরী লোকটার কাছে ছুটে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে তাকে বলবে) ভাইজান রক্ষা করেন। এই লোকটা আমাকে রাস্তায় একা পেয়ে কি সব যা তা করার চেষ্টা করছে। আমাকে রক্ষা করুন। 

রহস্যময় লোক : কি বিষয়। সুন্দরী দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। বাড়িতে কি বউ ঝি নেই। তোর মত মানুষগুলো সমাজটাকে নষ্ট করছে। 

পরহেজগার ভদ্রলোক : কি বলছেন ভাই এই সব। আমিতো ওনাকে সাহায্য করতে চাইছিলাম। 

রহস্যময় লোক : সবাই এই কথাই বলে। তারপর ছলে বলে কাজ হাসিল করে নেয়। 

সুন্দরী : ভাই এই দুষ্ট লোকটার হাত থেকে রক্ষা করুন। 

রহস্যময় লোক : বেটা বদমাশ। শাস্তি তোকে পেতেই হবে। 

(রহস্যময় লোকটা তার হাতের পাত্রটা নিয়ে ভদ্রলোকের কাছে যাবে। হাতের পাত্রে এক গামলা গুরো আটা থাকবে। পাত্রটা ভদ্রলোকের মাথায় ঢেলে দিবে।) 

ভদ্রলোক : (রাস্তা থেকে তার তসবিটা হাতে তুলে নিবে। বিড় বিড় করে বলবে) হে আল্লাহ আমি ভুল করে ফেলেছিলাম, আমাকে ক্ষমা করো।

(গলির মাথায় তাকিয়ে দেখবে কুমকুম সুন্দর আর সেই রহস্যময় লোকটা হাত ধরাধরি করে হাসতে হাসতে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। গলির মাথায় কুমকুম সুন্দরীর রিনঝিনি হাসির প্রতিধ্বনি হতে থাকবে।) 

দৃশ্য : ১১ 

চরিত্র: দুইজন তরুণ সালিম আর হামদানি, একজন রহস্যময় লোক। 

(দুইজন তরুণ একটা গোপন জায়গায় বসে আছে। একজন হলো শহরের গভর্নরের ভাতিজা। আর অন্যজন তার সহচর। দুজনের বন্ধুত্ব প্রগাঢ়। তাদের মাঝে কথা বার্তা হবে। গভর্নরের ভাতিজার নাম হামদানি, বন্ধুর নাম সালিম) 

সলিম : হামদানি, তোমার চাচার কারণে আমরা এখন শহরের রাজা। কেউ আমাদেরকে কিছু বলার সাহস পায় না। 

হামদানি : হ্যাঁ। যা ইচ্ছে আমরা তাই করতে পারি। 

সলিম : বন্ধু শুনলাম শহরে একজন সুন্দরী বাইজি এসেছে। আমাদেরকে বখরা না দিয়েই কিভাবে কাজ শুরু করল বুঝতে পারলাম না।

হামদানি : আমিও শুনলাম। সুন্দরীকে একদিন বাজিয়ে দেখতে হবে।

সলিম : চলো আজকের রাতটা তাহলে ওর সাথেই কাটিয়ে আসি। 

(তাদের কথা বার্তার মাঝেই তৃতীয় আরেকজন লোক এসে হাজির হবে। তার কথা বার্তা বড্ড রহস্যময়।) 

রহস্যময় লোক : কি করছ তোমরা এখানে। 

সলিম : তা দিয়ে তোমার কাজ কি? যাও ভাগো এখান থেকে। 

হামদানি : তোমাকেতো আগে এই শহরে দেখিনি, কে তুমি? কি চাও আমাদের কাছে? 

রহস্যময় লোক : তোমরাই আমার কাছে কিছু চাইতে পারো। সুন্দরী এক তরুণীর গোপন খবর আছে। 

(সুন্দরীর নাম শুনে তরুণদ্বয় একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করবে।)

হামদানি : এই শহরের সব খোঁজ খবরই আমাদের কাছে আছে। 

(কথা শেষ করে সলিমের দিকে তাকিয়ে হামদানি মুখ টিপে হাসবে।) 

সলিম : তুমিতো আমাদেরকে চেনো না। যদি জানতে আমরা কে তাহলে এতক্ষণে আমাদের কাছে এসে পা ধরে সালাম করতে। 

(রহস্যময় লোকটা সলিমের কাছে আসবে। মাথা ঝুকে তার মুখটা দেখবে। চেনার চেষ্টা করবে সলিমকে। তারপর খিক খিক করে হেসে উঠবে।) 

হামদানি : কি হাসছ কেন? আমরা কি কোন মজার কথা বলেছি? 

রহস্যময় লোক : না মজার কথা বলোনি। আমি তোমার বন্ধুকে ঠিকই চিনতে পেরেছি। সে জন্য হাসছি। 

(হামদানি কৌতূহলি চোখে সলিমের দিকে তাকাবে। সলিম কাধ ঝাকিয়ে ইশারায় বলবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। রহস্যময় লোক সলিমের দিকে তাকিয়ে বলবে)

রহস্যময় লোক : কি ভাইজান আমাকে চিনতে পারছেন না? 

সলিম : আমি তোমাকে কিভাবে চিনব? 

রহস্যময় লোক : গতকাল রাতে তো আপনি আমার সাথেই ছিলেন। আমার কাছ থেকে সুন্দরী বাইজির নিরাপত্তার জন্য দশ হাজার দিরহাম বখরা নিলেন। বললেন, আপনার বন্ধু হামদানি গভর্নরের ভাতিজা। আপনাদেরকে বখরা না দিলে এই শহরে থাকা যাবে না। ও আচ্ছা তাহলে এই ভদ্রলোক হামদানি? 

(হামদানির দিকে তাকিয়ে বলবে) 

আপনার বন্ধু গতকাল রাতে আমার কাছে এতগুলো টাকা নিয়ে আসল আপনার কথা বলে তারপর সারা রাত সেই সুন্দরীর সাথে থাকল। কালকে আমি আর কাউকেই নিমন্ত্রণ করতে পারিনি। আর এখন বলছে তিনি আমাকে চেনেন না। 

(হামদানি অবিশ্বাস্য চোখে সলিমের দিকে তাকাবে।) 

হামদানি : বন্ধু হয়ে তুই এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলি? আমার সাথেই নিমকহারামি। 

সলিম : বিশ্বাস করো এই লোকটাকে চিনি না। তার সাথে আমার দেখাও হয়নি। কাল রাতে তোমার সাথে শারাবখানা থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম। 

হামদানি : মিথ্যে কথা। তুই আমার বন্ধু না, বিশ্বাসঘাতক! 

সলিম : আহা! ভুল বোঝো না। আমি বিশ্বাসঘাতক নই। 

(সলিম তখন রহস্যময় লোকটার দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বলবে) 

এই লোকটা সাক্ষাৎ শয়তান। আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধানোর জন্য এখানে এসেছে। আমি তোকে খুন করব। 

(সলিম তার আস্তিনের ভেতর থেকে চকচকে ভোজালি বের করবে লোকটাকে খুন করার জন্য। রহস্যময় লোকটা তখন হামদানির কাছে চলে যাবে। অনুনয় বিনয় করে বলবে) 

রহস্যময় লোক : আমাকে রক্ষা করুন। ও একজন বিশ্বাসঘাতক, আপনাকেও খুন করতে পারে। 

(হামদানি তার আস্তিনের ভেতর থেকে ছোরা বের করে বলবে) 

হামদানি : সলিম, আমি তোকে খুন করব। 

(সে ছোরা নিয়ে সলিমের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। দুই বন্ধুর মধ্যে ছোরা হাতে ধস্তাধস্তি হবে। একজন অপরজনের হাতে দুজনেই খুন হবে। মাটিতে ছোরা বুকে নিয়ে শুয়ে তারা দেখবে রহস্যময় লোকটা হাসতে হাসতে রাস্তার শেষ মাথায় চলে যাচ্ছে।) জ্বিনদের গান 

ইফরিদ কুফরিদ দুইজন পাজি বাঁধিয়েছি নগরে ভেলকিবাজি আমাদের নাই কোনো ধৰ্ম ভালোর আড়ালে কু-কর্ম মগজের কোষে কোষে চলি কানে কানে ভালো কথা বলি ফাঁদে ফেলে করি সব জয় আমাদের নাই ডর-ভয় মানুষেরা বড় বোকা বটে ফট করে তেড়ে যায় চটে ইফরিদ কুফরিদ জ্বিনের কবলে ধরা দেয় মানুষেরা সুক্ষ্ণ জালে কপচিয়ে বুলি ভালো ভালো সাদাকে করে দেই কালো। 

দৃশ্য : ১২ 

চরিত্র: পুলিশ প্রধান, জ্বিন কুফরিদ। 

(নদীর তীরে নিরব জায়গায় পুলিশ প্রধান গামাস আলবালতি বসে থাকবে। পাশেই নদীর কুলু কুলু শব্দধ্বনি। তার মন খুব খারাপ। সে চুপচাপ বসে থেকে এক সময় মনে মনে জ্বিন কুফরিদকে ডাকবে।) 

পুলিশ প্রধান : কুফরিদ, জ্বিন কুফরিদ। 

(কয়েক মুহূর্ত নদীর শব্দ থেমে যাবে। এর মধ্যেই নূপুরের ধ্বনি আর নানা রকম আওয়াজ করে ধোয়ার কুণ্ডুলি পাকিয়ে জ্বিন কুফরিদ এসে হাজির হবে।) 

জ্বিন কুফরিদ : মান্যবর, বলেন কি অবস্থা? 

পুলিশ প্রধান : তোমার বন্দিত্ব ঘুচিয়ে ছিলাম। আমাকে তুমি সহায়তা করো। 

জ্বিন কুফরিদ : সাহায্যের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। 

পুলিশ প্রধান : আমি পারছি না। তুমি আমাকে সাহায্য করো। 

(জ্বিন জ্বিন কুফরিদ খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলবে) 

জ্বিন কুফরিদ : কেন পারছ না বোকা পুলিশ? 

পুলিশ প্রধান : সেটা তো বুঝতে পারছি না। 

জ্বিন : এই গভর্নরের মত দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন মানুষ থাকলে কিছুতেই শহরের চুরি ডাকাতি বন্ধ হবে না। 

(কথা শেষ করে জ্বিন কুফরিদ খিলখিল করে হাসতেই থাকবে। হাসতেই থাকবে।) (পুলিশ প্রধান কয়েক মুহূর্ত জিন কামকামের দিকে তাকিয়ে থাকবে।) 

পুলিশ প্রধান : আমি এখন বুঝতে পারছি কেন এই শহরের অপরাধ কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। 

জ্বিন কুফরিদ : (হাসতে হাসতেই বলবে) বুঝতে পারছ তাহলে? 

পুলিশ প্রধান : তুমিই হলে সেই দস্যুদের গুরু। এই জন্যই অপরাধীদের কিছুতেই ধরতে পারছি না। 

জ্বিন কুফরিদ : এই তো মাথা খুলেছে। 

পুলিশ প্রধান : আমাকে কেউ কখনো সৎ বুদ্ধি বা ভালো কাজের জন্য পরামর্শ বা সহযোগিতা করেনি। 

জ্বিন কুফরিদ : তুমি কি চাও? 

পুলিশ প্রধান : আমাকে কষ্ট না দিয়ে তোমার ক্ষমতাটা আমার সাহায্যে ব্যবহার করতে পার। 

জ্বিন কুফরিদ : কিভাবে? 

পুলিশ প্রধান : এই শহরের দুষ্ট লোকগুলোকে, চোর ডাকাতগুলোকে গ্রেফতার করতে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পার। আমি যেন সৎ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শাসন করতে পারি সে বিষয়ে সাহায্য করতে পার।

(জ্বিন কুফরিদ বেশ ভরাট গলায় হেসে উঠবে) 

জ্বিন কুফরিদ : তুমি আমার অনেক বড় একটা উপকার করেছ। তবে সীমা অতিক্রম করে আমি তোমার জন্য কিছু করব না। 

পুলিশ প্রধান : তুমি বলো আমাকে কি করতে হবে? 

জ্বিন কুফরিদ : তুমি খুব ভালো করেই জানো এই শহরের নাটের গুরু কে?

পুলিশ প্রধান : গর্ভনরের কথা বলছ? (উত্তরে জ্বিন আবারো হেসে উঠবে) তাকে খুন করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? 

জ্বিন কুফরিদ : তোমার হৃদয় জানে তোমাকে এই মুহূর্তে কি করতে হবে। কান দিয়ে হৃদয়ের কথা শোনো। গভর্নরকে খুন করতে পারলে ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। তুমি সরাসরি ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র হবে। তোমার ঠাই হবে স্বর্গের পবিত্র স্থানে। তোমার প্রেয়সী মেহেরজান স্বর্গনারীদের রানী হবে। ঐ যে আকাশে দেবদূতরা তোমাকে আশিবচন দিচ্ছে। যাও যাও… দুষ্ট লোকের বিনাশ কর। 

পুলিশ প্রধান : হ্যাঁ এই দুশ্চরিত্র দুর্নীতিবাজ গভর্নরকেই খুন করতে হবে। সেই সবচেয়ে বড় শয়তান। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে? 

(জ্বিন ইফরিদ উত্তর না দিয়ে শব্দ করে হাসতেই থাকবে। তারপর বলবে) 

জ্বিন কুফরিদ : আমি তোমার হৃদয়ের সাথেই আছি। সময় বলে দিবে কখন কি করতে হবে? 

(জ্বিন চলে যাবে। পুলিশ প্রধান একা একা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকবে।) 

দৃশ্য : ১৩ 

স্থান ও চরিত্র: গভর্নরের বিলাসবহুল বাসা: গভর্নর, প্রহরী, পুলিশ প্রধান, সানানের ছেলে ফাদিল, সানানের মেয়ে মেহেরজান। 

(শহরের গভর্নরের বাড়ি। চারদিকে ঝকমকে। চেয়ার, কুশন, রঙিন কার্পেট গালিচায় চারপাশ বেশ একটা সম্ভ্রান্ত ভাব। গভর্নর অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন। তার মেজাজ বেশ খারাপ। প্রহরীরা দাঁড়িয়ে ভয়ে কাপছে। দরজার বাইরে থেকে এক প্রহরী এসে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানাবে।) 

প্রহরী : হুজুর পুলিশ প্রধান গামাস আল বালতি এসেছেন। তাকে ডাকব? (অত্যন্ত গম্ভীরভাবে হাতের ইশারায় প্রহরীকে সম্মতি প্রদান করবে। প্রহরী চলে যাবে। তারপরই পুলিশ প্রধান এসে হাজির হবে। 

পুলিশ প্রধান : মহামান্য গভর্নর আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। 

(উত্তরে গভর্নর ভয়ানকভাবে ক্ষেপে উঠবে) 

গভর্নর : শান্তি? আমার উপর? তোমার উপস্থিতিতে? 

মূর্খ! তুমি যা করছ তাতে কেবল অশান্তিই বয়ে নিয়ে আসছে।

পুলিশ প্রধান : আমি আপনার শান্তির জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাব। 

গভর্নর : তুমি কাজ করে যাবে আর চোর এসে আমার ঘরের সব কিছু লুট করে নিয়ে যাবে। আমার ভাতিজা আর তার বন্ধুকে রাস্তার মধ্যে খুন করে ফেলে যাবে। 

(ধমক শুনে পুলিশ প্রধান থতমত খেয়ে যাবে। তার চোখে মুখে ভয় ফুটে উঠবে।)

পুলিশ প্রধান : দেখুন… আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। 

গভর্নর : তোমার বুঝতে পারার কথাও না। তুমি একটা অপদার্থ। চোর বাটপারদের সহকারি। 

পুলিশ প্রধান : মাননীয় গভর্নর, আমি নগরীর পুলিশ প্রধান… 

গভর্নর : খামোশ বাটপার। আর একটি কথা বললে এই মুহূর্তে তোমার গর্দান যাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে খুনিদের বের করতে না পারলে, শহরে কারা অরাজকতা তৈরি করছে সেটা বন্ধ করতে না পারলে তোমার গর্দান যাবে। যাও। 

পুলিশ প্রধান : ঠিক আছে। যাচ্ছি। তবে… 

গভর্নর : যাও। 

(পুলিশ প্রধান মাথা নিচু করে চলে যাবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেখবে সানান আল জামিলের ছেলে ফাদিল ও পুলিশের হবু স্ত্রী মেহেরজান গভর্নরের ঘরের ভেতর ঢুকছে। পুলিশ প্রধান সন্দেহ করে পর্দার আড়ালে চলে যাবে গভর্নর আর ফাদিলের কথা বার্তা শোনার জন্য।) 

ফাদিল : মহামান্য গভর্নর, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। 

(গভর্নর উল্টো দিক মুখ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। ফাদিলের কথায় তিনি মুখ ঘুরিয়ে তাকাবেন। ফাদিলকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠবে।)

গভর্নর : কেমন আছ ফাদিল। মেহেরজান তুমি কেমন আছ। বসো। তোমাদের উপর যে বিপদ নেমে এসেছে, সে জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।

ফাদিল : আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনারই দয়ায় আমরা এখনো বেঁচে আছি। নিরাপদেও আছি। 

গভর্নর : আরো নিরাপদে থাকতে যদি উজবুক গামাস আল বালতি এই শহরের পুলিশ প্রধান না হতো।

(মেহেরজান উঠে দাঁড়াবে।) 

মেহেরজান : আমার তো মনে হয়, আপনি যদি এই শহরের গভর্নর না হতেন তাহলে আরো বেশি নিরাপদে থাকতে পারতাম। 

(গভর্নর নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন। বেশ শান্ত মাখা সুরে বলবেন)

গভর্নর : মেহেরজান আমি বুঝতে পারছি এমন বিপদে তোমার মাথা ঠিক নেই। তোমাদের নিরাপত্তা, সুখ শান্তি সব কিছুই আমাকে দেখতে হয়।

মেহেরজান : সেজন্যই বুঝি আপনি আমার বাবাকে হত্যা করেছেন। ছলে- বলে কৌশলে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। 

গভর্নর : শান্ত হও মেহেরজান। তোমার বাবা আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। ছোরা নিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে জন্য আমি তোমাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারি। কিন্তু তোমার মুখের দিকে চেয়ে আমি সেটা করিনি। তোমার ভাই এখনো যে অন্যায় করছে শুধু সেজন্য আমি তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারি। 

মেহেরজান : আমার ভাই আবার কি করল।

(মেহেরজান অবাক হয়ে ফাদিলের দিকে তাকাবে।) 

গভর্নর : তোমার ভাই ফাদিল শহরের বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে হাত মিলিয়েছে আমাকে হত্যা করার জন্য। বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায় সে। কি ফাদিল তুমি হাত মেলাওনি? আমার কাছে সব খবর আছে। 

ফাদিল : মান্যবর শহরের নিষিদ্ধ কোন গ্রুপের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি চাই শহরে শান্তি থাকুক। আমার পরিবারকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। 

গভর্নর : আমার কাছে সব খবর আছে। শোনো মেহেরজান যদি পরিবারকে রক্ষা করতে চাও, ভাইকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচাতে চাও তাহলে আমার কথা শুনতে হবে। 

(মেহেরজান গভর্নরের কথা শুনে কাঁদতে শুরু করবে।) 

মেহেরজান : আর কোন কঠিন পরীক্ষায় ফেলবেন না। আমার মা, আমার ভাই আমার পরিবারকে রক্ষা করুন। আপনি যা বলবেন তাই হবে।

গভর্নর : শোনো ফাদিল আমি তোমার বোন মেহেরজানকে বিয়ে করতে চাই। আমার সাথে তোমাদের আত্মিয়তা হলে শহরে থাকতে তোমাদের আর কোন ভয় থাকবে না। তোমরা সব কিছু থেকে নিরাপদ থাকবে।

(কথা শুনে ফাদিল কয়েক মুহূর্ত থমকে যাবে। মনে মনে বলবে আল্লাহ আমি এখন কি করি, পুলিশ প্রধান আমার বোনকে বিয়ে করতে চাইছে। গভর্নর বিয়ে করতে চাইছে।) 

গভর্নর : কি ভাবছ ফাদিল? প্রস্তাব কি তোমার পছন্দ হয়নি? 

ফাদিল : মহামান্য গভর্নর, আপনি যা বলবেন তাই হবে। 

গভর্নর : ঠিক আছে তোমরা এখন যাও। কেউ তোমাদের ছায়া মারাতেও সাহস করবে না। মেহেরজান বাড়ি যাও। সব কিছুর প্রস্তুতি নিতে থাকো।

(মেহেরজান আর ফাদিল চলে যাবে। পুলিশ প্রধান আবার পর্দার আড়ালে লুকাবে। যেন তাকে দেখা না যায়। পর্দার আড়ালে পুলিশ প্রধান আমিরের কথা শুনে রাগে দাত কামড়াতে থাকবে। বিড়বিড় করে বলবে শালা গভর্নর তুই হলি এই শহরের সবচেয়ে বড় চোর বাটপার। তোর মত গভর্নরই দেশের অশান্তি আর নৈতিক বিপর্যয়ের কারণ। তোকে খুন করতে পারলেই শহরে শান্তি চলে আসবে। তারপর সে আবার গর্ভনরের কক্ষে প্রবেশ করবে।) 

পুলিশ প্রধান : মহামান্য গভর্নর, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। 

গভর্নর : আবার তুমি এসেছ? তোমার উপস্থিতি আমাকে কখনোই শান্তি দেয় না।

পুলিশ প্রধান : এবার আকাশ থেকে আপনার উপর প্রবলভাবে শান্তি বর্ষিত হবে। 

গভর্নর : আহঃ। আমার ভাতিজার খুনিদের ধরতে পেরেছ? চোরগুলোকে ধরেছ? 

পুলিশ প্রধান : আমি তো সেই উদ্দেশ্যেই এখানে এসেছি। 

গভর্নর : নালায়েক তোমার কি ধারণা চোরগুলো আমার ঘরের ভিতর লুকিয়ে আছে? 

পুলিশ প্রধান : আছেইতো! ঐ তো সে ওখানে। নির্লজ্জের মত কথা বলছে আমার সাথে। শহরের সবচেয়ে বড় অপরাধিতো তুই! 

গভর্নর : তুমি পাগল হয়ে গেছ গামাস আল বালতি। এর পরিণাম সম্পর্কে জানো না। 

পুলিশ প্রধান : তোর নিজের পরিণাম নিয়ে চিন্তা ভাবনা কর মহামান্য আমির। 

(গভর্নর তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াবে। মদের রেশে তার মাথা টালমাটাল করছে। হাতের ধাক্কায় টেবিলের পানিয়ের গ্লাস পড়ে যাবে।) 

গভর্নর : গামাস তুমি কি করতে চাও? মাথা ঠাণ্ডা রাখো। 

পুলিশ প্রধান :  আমি দায়িত্ব পালন করছি। 

গভর্নর : তুমি পাগল হয়ে গেছ গামাস। বাস্তবতায় আসো। নয়ত জল্লাদ তোমার গর্দানটা শরীর থেকে পৃথক করে ফেলবে। 

পুলিশ প্রধান : আগে নিজের গর্দানটা ঠিক জায়গায় থাকে কি না দেখ্‌।

গভর্নর : রক্ষীদল ওকে বন্দী কর। হত্যা কর বদমাসটাকে। 

পুলিশ প্রধান : কেউ আসবে না। সব পথ আমি রুদ্ধ করেছি শয়তান।

গভর্নর : গামাস (চিৎকার) 

পুলিশ প্রধান : চোপ হারামজাদা গভর্নর। 

(পুলিশ প্রধান তার খোপ থেকে তলোয়ার বের করবে। তারপর সেটা গভর্নরের বুকে বসিয়ে দিবে। নেপথ্য থেকে একটা নারী কণ্ঠের আর একটা পুরুষ কণ্ঠের হাসি ভেসে আসবে। গভর্নরের চিৎকারে প্রহরীরা ঘরে ঢুকে পুলিশ প্রধান কে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকবে।) 

দৃশ্য : ১৪ 

স্থান ও চরিত্র: সুলতানের বিচার দরবার। সুলতান, পুলিশ প্রধান, তার সভাসদ। 

(মহামান্য সুলতান তার দরবারে বসে আছেন। সামনে লাল গালিচা। দুই পাশে সভাসদ। তিনি বিশেষ এক ধরনের আলখেল্লা পরে আছেন। বিচার কার্যে তিনি এই পোশাকটা পরে থাকেন। তার সামনে লোহার বেরি পড়ানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ প্রধান। সুলতান ক্রুদ্ধ চোখে গামাসের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করবে) 

সুলতান : আমি তোমার উপর যে করুণা করেছিলাম তুমি কি তা স্বীকার করো গামাস? 

পুলিশ প্রধান : অবশ্যই মহামান্য সম্রাট। 

সুলতান : গভর্নর খালিল হামদানিকে তুমি খুন করেছ? 

পুলিশ প্রধান : করেছি- মহামান্য সম্রাট। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এই কাজটা করেছি। 

সুলতান : তাঁর ইচ্ছাটা কি? তা কি তুমি জানো? 

পুলিশ প্রধান : প্রবাহমান ঘটনাই আমাকে এই কাজের দিকে নিয়ে গেছে। এটাইতো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। 

সুলতান : তুমি কি বলতে চাও? বুঝিয়ে বলো। 

পুলিশ প্রধান : গভর্নরদের মূল হাতিয়ার ছিলাম আমি। তাদের হাতের পুতুল। আমাকে দিয়েই তারা অন্যায় অপকর্ম করছিল। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নিজেদেরকে রক্ষা করছিল আমাকে দিয়েই। একদিন নদীর তীরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি পাত্রের সন্ধান পাই আমি। সেই পাত্রের জ্বিনকে উদ্ধার করি। আমি অনুতপ্ত হয়ে তার সাথে কথা বললে সে আমাকে এই দুষ্ট গভর্নরকে খুন করতে রাজী করায় এবং সাহায্য করে। 

সুলতান : আফসোস আমরা এমন এক সময় বাস করছি যখন জ্বিনরা ধর্মের নামে শহরের গভর্নরদেরকে খুন করতে সহায়তা করে। কবে যে দেশের সুলতানকে জ্বিনরা এসে মেরে ফেলবে ঈশ্বরই ভালো জানেন। হয়ত গামাস তুমি নিজেই আমাকে খুন করবে। 

পুলিশ প্রধান : মহামান্য সম্রাট আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি আপনাকে রক্ষা করব। তবে গভর্নরকে খুন করায় আমার কোন আফসোস নেই। 

সম্রাট : গভর্নরকে হত্যা করে তুমি কি অনুতপ্ত নও? 

পুলিশ : না হুজুর! আমি মোটেও অনুতপ্ত নই। একজন দুষ্ট গভর্নর সমাজের কীট যিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভুমিকা পালন করেন তার পরিণতি এমনটা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। 

সম্রাট : গামাস তুমি আমার দক্ষ কর্মীবাহিনীর একজন ছিলে। আমি যতদূর জানি এই গভর্নর তোমাকে অনেক পছন্দ করতেন। তার জন্যই তুমি আজ পুলিশ প্রধান হয়েছ। 

পুলিশ প্রধান : তিনি আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। তবে আমাকে নয় আমার কাজ আর আনুগত্যকে পছন্দ করতেন। তাই আমাকে দিয়ে তিনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য যা ইচ্ছে তাই করিয়েছেন। 

সম্রাট : আর সেজন্যই তুমি একজন জ্বিনের কথা শুনে সেই গভর্নরকে খুন করলে? হত্যা করে অন্যায়ের প্রতিকার করা যায় না। তা শুধু প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। 

পুলিশ প্রধান : ব্যবসায়ী সানানও তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। 

সম্রাট : তার জিঘাংসার শাস্তি সে পেয়েছে। ঐ একই ভুল তুমিও করেছ। গভর্নরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছ। 

পুলিশ প্রধান : আমি ঠিক কাজটিই করেছি। 

সম্রাট : ভুল পথ। মহাভুল করেছ তুমি। দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা রাখতে পারোনি। 

পুলিশ প্রধান : তার অন্যায় অবিচারের শাস্তি দিয়েছি মহামান্য সম্রাট।

সম্রাট : তুমি শাস্তি দেবার কে? আইনের রক্ষক হয়ে আইন লঙ্ঘন করেছ। দুষ্ট জ্বিনের হীন স্বার্থ চরিতার্থে সহায়ক হয়েছো। নিজ স্বার্থে চমকপ্ৰদ বাণী প্রচার করে তোমাকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে চেয়েছে তারা। বিচারের স্বাভাবিক পথকে রুদ্ধ করে বাঁকা পথে পরিচালিত হতে তোমাকে প্ররোচনা দিয়েছে। ওরা ধার্মিক নয়, ধর্মের নামে অপকর্মে উৎসাহিত করে। 

পুলিশ প্রধান : শক্তিশালী জ্বিনেরা সবসময় আমাকে রক্ষা করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। আমি ওদের কথাই মান্য করি। ওরাই আমাকে স্বর্গের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। 

সম্রাট : না। শয়তান কখনো বিনা স্বার্থে কাউকে রক্ষা করে না। করবেও না। তুমি হত্যাকারী। মহা অন্যায় করেছ। তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তোরা এই উদ্ধত খুনিটাকে পাথর ছুড়ে হত্যা কর। 

(চারদিকে ঢাক ঢোল বেজে উঠবে। সম্রাট সভা ত্যাগ করবেন।) 

দৃশ্য : ১৫ 

স্থান, চরিত্র : আসামি, প্রথম রহস্যময় নেপথ্য কণ্ঠ, দ্বিতীয় রহস্যময় নেপথ্য নারী কণ্ঠ।

 (অন্ধকার মঞ্চ। মাঝে এক টুকরো ফ্লাস আলো এসে পড়েছে। সামনে শিকল দিয়ে বাঁধা একজন দাঁড়িয়ে। চারদিকে লোকজন পাথর ছুড়ে মারবে) 

প্রথম রহস্যময় পুরুষ কণ্ঠ : গামাস এই গামাস বোকার হদ্দ আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস? 

(ফাঁসির আসামি গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় চারদিকে তাকায়) 

দ্বিতীয় রহস্যময়নারী কণ্ঠ : এই হাদারাম গামাস কিছু খেতে ইচ্ছে করছে? একটু শারাব এনে দিব? 

ফাঁসির আসামি : ও তোমরা? 

প্রথম কণ্ঠ : চিনতে পারছিস তাহলে? 

ফাঁসির আসামি : তোমরা সবসময় আমাকে খারাপ কাজ করার জন্য প্ররোচিত করেছো। 

দ্বিতীয় কণ্ঠ : মরার সময় তোর মাথাটাও গেছে। উজবুক, নাদান, নেমকহারাম। 

ফাঁসির আসামি : তোমাদের জন্যই আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। তোমাদের জন্যই আমার জীবনের এই পরিণতি। তোমরা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির কথা বলে আমাকে দিয়ে গভর্নরকে খুন করিয়ে নিয়েছো। বিনিময়ে তোমরা আমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলে। 

দ্বিতীয় নেপথ্য কণ্ঠ : তুই কি চাস আমরা তোকে মুক্ত করে দেই? ফাঁসির আসামি : এখন আমি আর কিছুই চাই না। 

প্রথম পুরুষ কণ্ঠ : তাহলে তুই মর। মৃত্যুই তোর নিয়তি। হা হা হা। দ্বিতীয় নারী কণ্ঠ : মৃত্যুই তোর নিয়তি। হা হা হা। 

ফাঁসির আসামী : বিদায় পৃথিবী! এই ধরনীর রূপ রস গন্ধ মেখে বেঁচে থাকার যে আকুলতা আর তৃষ্ণা ছিল তা নিয়েই আমাকে চলে যেতে হচ্ছে আজ। মেহেরজান প্রিয়তমা আমার নীলনদের তীরে কোন সবুজ গাছের নিচে বসে তোমার হাত দুটো ধরে খুব বলতে চেয়েছিলাম ভালোবাসি, কেবল তোমাকে ভালোবাসি। তা আর বলা হলো না মেহেরজান প্রিয়তমা আমার। চলে যাচ্ছি আমি এই ধরনীর সমস্ত মায়া ভালোবাসা ত্যাগ করে উর্ধ্বলোকে। হে মানব সমাজ আমি কী এমন করেছিলাম যে আমাকে পাথর ছুড়ে তোমরা হত্যা করছ আজ? আমিতো কেবল সমাজের এক জঘন্য কীট গভর্নরকে হত্যা করেছিলাম। তাই আজ তোমরা আমাকে হত্যা করছ? জেনে রেখো এই সব গভর্নররা আবার ফিরে আসবে মানব সমাজে। তোমাদের মাঝে ইফরিদ আর কুফরিদ রয়ে গেছে। তাদের মায়াজালে আরো কত নিষ্পাপ আত্মা কুলষিত হবে, কত নিষ্পাপ ব্যবসায়ী কিশোরি ধর্ষণে মেতে উঠবে, কত নিরপরাধ তরুন ঈশ্বরের নামে ন্যায় দণ্ড প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মাহুতি দিবে কে বলতে পারে?। এই সব জ্বিনেরা শহর থেকে শহরে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে হাজারো মুখোশে, লাখো কোটি চেহারায়। মানুষের মগজের কোষে কোষে বিচরণ করে বিভেদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দুনিয়া জুড়ে কাল্পনিক রাজ্য প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠেছে ইফরিদ আর কুফরিদরা। সতর্ক থেকো নগরবাসি, সতর্ক থেকো মানব সমাজ। বিদায়, বিদায় বিদায়, আঃ আঃ আঃ। 

(নেপথ্য কণ্ঠ দুজনই অট্ট হাসিতে মেতে উঠে। একটা নারী কণ্ঠ, আরেকটা পুরুষ কণ্ঠ। হাসি চলতেই থাকে। পুরো মঞ্চ কাঁপতে থাকে সেই হাসিতে। হঠাৎ করেই মঞ্চ জুড়ে সাদা ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। হাসির শব্দ আস্তে আস্তে মিলাতে মিলাতে নূপুরের শব্দের সাথে মিলে যাবে। ধীরে ধীরে নূপুরের শব্দ আর নানা রকম মিউজিক ভেসে আসতে থাকবে। লোকজন গামাস আল বালতিকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে) 

܀܀܀ 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *