জল—সমুদ্র—নদী

জল-সমুদ্র-নদী

জল অতি তরল বস্তু; স্রোত বহিয়া যায় এবং একপাত্র হইতে আর এক পাত্রে ঢালিতে পার যায়। পৃথিবীর অধিকাংশ জলে মগ্ন। ষে জলরাশি পৃথিবীকে বেষ্টন করিয়া আছে তাহার নাম সমুদ্র। সমুদ্রের জল অতিশয় লোণা ও এমত বিস্বাদ যে কেহ পান করিতে পারে না।

 সমুদ্রের জল সকল স্থানে সমান লোণা নহে; কোন স্থানে অল্প লোণা, কোন স্থানে অধিক। সমুদ্রের জলের উপরি ভাগে বৃষ্টি ও নদীর জল মিশ্রিত হয় এই জন্যে ভিতরের জল যত লোণা উপরের জল তত নয়। উত্তর সমুদ্র অপেক্ষা দক্ষিণ সমুদ্রের জল অধিক লোণা।

 সমুদ্রের জল লোণা হইল কেন এ বিষয়ে অনেকে অনেক তর্ক বিতর্ক করিয়াছেন, কিন্তু কেহ কিছুই উত্তম রূপে স্থির করিতে পারেন নাই। এই মাত্র স্থির বলিতে পারা যায়, ঈশ্বর সমুদ্রের জল লোণ সৃষ্টি করিয়াছেন, সেই অবধি চিরকাল লোণা আছে ও চিরকাল এই রূপ লোণা থাকিবেক।

 অল্প পরিমাণে সমুদ্রের জল লইয়া পরীক্ষা করিলে, দেখিতে পাওয়া যায় উহার কোন রঙ নাই। কিন্তু সমুদ্রের রাশীকৃত জল নীলবর্ণ দেখায়। নীলবর্ণ দেথায় কেন, তাহার কারণ এপর্যান্ত স্থির হয় নাই।

 সমুদ্র কত গভীর তাহার নিশ্চয় হয় নাই। কিন্তু ইহা নিশ্চিত বটে গভীরতা সকল স্থানে সমান নয়। কেহ কেহ অনুমান করেন, যে স্থানে অত্যন্ত গভীর সে থানেও আড়াই ক্রোশের বড় অধিক হইবেক না। অনেকে সমুদ্রের জল মাপিবার চেষ্টা করিয়াছেন, কেহ ৩১২০ হাত, কেহ ৪৮০০ হাত, কেহ ১৮৪০০ হাত লম্বা মানরজ্জু সমুদ্রে ক্ষেপণ করিয়াছিলেন, কিন্তু কোন রজ্জুই তল স্পর্শ করিতে পারে নাই; সুতরাং সমুদ্রের জলের ইয়ত্তা করা ছুঃসাধ্য! লাপ্লাস নামক এক ফরাসিদেশীয় অদ্বিতীয় পণ্ডিত কহিয়াছেন, এক্ষণে সমুদ্রের যত জল আছে যদি আর তাহার চতুর্থ ভাগ অধিক হয়, তবে সমুদায় পৃথিবী জলপ্লাবিত হইয়া যায়; আর যদি তাহার চতুর্থ ভাগ কম হয়, তাহা হইলে সমুদায় নদী খাল প্রভূতি শুকাইয়া যায়।

 যথা নিয়মে প্রতি দিন সমুদ্রের জলের যে হ্রাস বৃদ্ধি হয় তাহাকে জোয়ার ভাটা বলে; অর্থাৎ সমুদ্রের জল যে সহসা স্ফীত হইয়া উঠে তাহাকে জোয়ার কহে; আর ঐ জল পুনরায় যে ক্রমে ক্রমে অম্প হইতে থাকে তাহাকে ভাটা কহে। সূর্য্য ও চন্দ্রের আকর্ষণে এই অদ্ভূত ঘটনা হয়।

 লোকে জাহাক্তে চড়িয়া,সমুদ্রের উপর দিয়া এক দেশ হইতে অন্য দেশে যায়। যদি জাহাজ ঝড় ও তুফানে পড়ে, অথবা পাহাড়ে কিম্বা চড়ায় লাগে, তাহা হইলে বড় বিপদ্; জাহাজের সমুদায় লোকেরই প্রাণ নষ্ট হইতে পারে।

 সমুদ্র এমত বিস্তৃত যে কতক দূর গেলে পর আর তীর দেখা যায় না; অথচ জাহাজের লোক পথ হারা হয় না। তাহার কারণ এই যে, জাহাজে কোম্পাস নামে একটা যন্ত্র থাকে; ঐ যন্ত্রে একটী সূচী আছে; জাহাজ যে মুখে যাউক না কেন, সেই সূচী সর্ব্বদাই উত্তর মুখে থাকে। উহা দেখিয়া নাবিকেরা দিক্ নির্ণয় করে।

 প্রাতঃকালে যে দিকে সূর্য্য উদয় হয় তাহাকে পুর্ব্ব দিক্‌ কহে। ষে দিকে সূর্য্য অস্ত যায় তাহাকে পশ্চিম দিকৃ কহে। পূর্ব্ব দিকে ডানি হাত করিয়া দাঁড়াইলে, সম্মুখে উত্তর ও পশ্চাতে দক্ষিণ দিক্ হয়। এই পূর্ব্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ বিবেচনা করিয়া লোকে, কি স্থলপথে কি জলপথে, পৃথিবীর সকল স্থানেই যাতায়াত করে।

 নদীর ও অন্যান্য স্রোতের জল সুস্বাদ, সমুদ্রের জলের ন্যায় বিস্বাদ ও লবণময় নহে। যাবতীয় নদীর উৎপত্তি স্থান প্রস্রবণ। গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্ত্র প্রভৃতি যত বড় বড় নদী আছে সকলেরই এক এক প্রস্রবণ হইতে উৎপত্তি হইয়াছে। বর্ষাকালে সর্ব্বদাই বৃষ্টি হয়; এজন্য ঐ সময়ে সকল নদীরই প্রবাহ বৃদ্ধি হইয়া থাকে।

 সমুদয় প্রধান প্রধান নদীর জল সমুদ্রে পড়ে। কিন্তু তাহাতে সমুদ্রের জল বৃদ্ধি হয় না। যেহেতু নদীপাত দ্বারা সমুদ্রের যত জল বাড়ে, সেই পরিমাণে সমুদ্রের জল সর্ব্বদাই কুজঝটিকা ও বাষ্প হইয়া আকাশে উঠিতেছে। ঐ সমস্ত বাষ্পে মেঘ হয়। মেয সকল যথাকালে জল হইয়া ভূতলে পতিত হয়। সেই জল দ্বারা পুনর্ব্বার নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি হয়।

 সমুদ্রে ও নদীতে নানা প্রকার জলজন্তু ও মৎস্য আছে। জালিয়েরা জাল ফেলিয়া মৎস্য ধরিয়া আনে এবং সেই সকল মৎস্য বিক্রয় করিয়া আপনাদিগের জীবিকা নির্ব্বাহ করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *