কাল

কাল।

প্রভাত ও সন্ধ্যাকাল কাাহাকে কহে তাহা সকলেই জানে। যখন আমরা শয্যা হইতে উঠি, সূর্য্যের উদয় হয়, তাহাকে প্রভাত কহে। আর সূর্য্য অস্ত যায়, অন্ধকার হইতে আরম্ভ হয়, তাহাকে সন্ধ্যাকাল বলে। প্রভাত অবধি সন্ধ্য পর্যন্ত যে সময় তাহাকে দিবা ভাগ কহে। আর সন্ধ্যা অবধি প্রভাত পর্য্যন্ত যে সময় তাহাকে রাত্রি কহে। দিবা ভাগে সকল জীব জন্তু জাগরিত থাকে ও আপন আপন কর্ম্মে ব্যস্ত থাকে। রাত্রিকালে সকলে আরাম করে ও নিদ্রা যায়; দিবা ভাগের প্রথম ভাগকে পূর্ব্বাহ্ন, মধ্য ভাগকে মধ্যাহ্ন, ও শেষ ভাগকে অপরাহ্ন কহে।

 দিবা ও রাত্রি এই দুয়ে এক দিবস হয়; অর্থাৎ এক প্রভাত অবধি আর এক প্রভাত পর্য্যন্ত যে সময় তাহাকে দিবস কহে। দিবসকে ষাটি ভাগ করিলে ঐ এক এক ভাগকে এক এক দণ্ড কহে। আড়াই দণ্ডে এক হোর হয়। তিন হোরাতে অর্থাৎ সাড়ে সাত দণ্ডে এক প্রহর। দিন চারি প্রহর, রাতি চারি প্রহর। পনর দিবসে এক পক্ষ হয়। দুই পক্ষ,শুক্ল ও কৃষ্ণ। যখন চন্দ্রের বুদ্ধি হইতে থাকে তাহাকে শুক্ল পক্ষ কহে; আর যথম চন্দ্রের ক্ষয় হইতে থাকে তাহকে কৃষ্ণপক্ষ বলে। দুই পক্ষে অর্থাৎ ত্রিশ দিনে এক মাস হয়।

 বার মাস। মাসের নাম এই; বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র; দুই মাসে এক ঋতু হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত সমুদায় এই ছয় ঋতু। তন্মধ্যে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্ম ঋতু; আষাঢ়, শ্রাবণ বর্ষা; ভাদ্র, আশ্বিন শরৎ; কার্ত্তিক, অগ্রহায়ণ হেমন্ত; পৌষ, মাঘ শীত; ফাল্গুন, চৈত্র বসন্ত। বার মাসে অর্থাৎ ৩৬৫ দিনে এক বৎসর হয়।

 সচরাচর সকলে কহে, ত্রিশ দিনে এক মাস হয়; কিন্তু সকল মাস সমান হয় না; কোন কোন মাস ত্রিশ দিনে, কোন কোন মাস ঊনত্রিশ দিনে, কোন কোন মাস একত্রিশ দিনে কোন কোন মাস বত্রিশ দিনে হয়। এই ন্যূনাধিক্য প্রযুক্তই বৎসরে তিন শত পঁয়ষট্টি দিন হইয়া থাকে। সকল মাস ত্রিশ দিন হইলে ৩৬০ দিনে বৎসর হইত। পূর্ব্ব কালের লোকের ৩৬০ দিনে বৎসর গণনা করিতেন; সেই অনুসারে অদ্যাপি সামান্য লোকে তিন শ ষাটি দিনে বৎসর কহে। মাসের শেষ দিবসকে সংক্রান্তি কহে। চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে বৎসর সমাপ্ত হয়। বৈশাখ মাসের প্রথম দিবস নূতন বৎসর আরম্ভ। চির কালই বৎসরের পর বৎসর আসিতেছে ও যাইতেছে। এইরূপ এক শত বৎসরে এক শতাব্দী হয়।

 কোন সুপ্রসিদ্ধ রাজার অধিকার, অথবা কোন সুপ্রসিদ্ধ ঘটনা, অবলম্বন করিয়া বৎসরের গণনা হইয়া থাকে। এইরূপে যে বৎসর গণনা করা যায় তাহাকে শাক কহে! আমাদিগের দেশে দুই শাক প্রচলিত আছে, সংবৎ ও শকাব্দ। বিক্রমাদিত্য নামে এক অতি প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন; তিনি যে শাক প্রচলিত করিয়া গিয়াছেন তাহার নাম সংবৎ। আর শালিবাহন রাজা যাহা প্রচলিত করেন তাহার নাম শকাব্দাঃ। বিক্রমাদিত্যের উনবিংশ শতাব্দী অতীত হইয়াছে; এক্ষণে বিংশ শতাব্দী চলিতেছে। এখন সংবৎ ১৯০৮, অর্থাৎ বিক্রমাদিত্যের সময় অবধি ১৯০৭ বৎসর গত হইয়াছে। এই রূপ শালিবাহনের সতর শতাব্দী অতীত হইয়াছে, অষ্টাদশ চলিতেছে; এক্ষণে শকাব্দাঃ ১৭৭৩। এই রূপ ইঙ্গরেজ, ফরাসী, জর্ন্মন্ প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিরা য়িশুখ্রীষ্টের জন্ম অবধি শাক গণনা করে; উহাকে খ্রীষ্টীয় শাক কহে; এক্ষণে খ্রীষ্টীয় শাক ১৮৫২। মুসলমানেরাও মহম্মদের মদীনা পলায়ন দিবস অবধি এক শাক গণনা করে; ঐ শাক এক্ষণে?৫৮ ইহার নাম সাল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কাল

কাল

কাল

কী দেবে দাও, এক্ষুণি দাও
কালের জন্য তুলে রেখো না
প্রতিটি আগামী মুহুর্তে অতীত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি ফুলই ঝরে যায়, প্রতিটি পাতাই
প্রতিটি মানুষ
একদিন আমি, একদিন তুমি।

হৃদয় দিতে চাইলে দাও
না চাইলে সেও দাও, না চাওয়াটি দাও।

কালের জন্য আমি কিছু রেখে দিই না,
আজ যদি ইচ্ছে করে দিতে, আজই দিই
তুমি না চাইতেই যা কিছু আছে দিচ্ছি
না চাইতেই আমার যশ বিত্ত না
চাইতেই সুচারু শরীর
না চাইতেই হৃদয়।

কী নেবে নাও
কালের জন্য তুলে রেখো না।
কাল হয়ত লুঠ হয়ে যাবে আমার সকল সম্পদ
কাল হয়ত নষ্ট হবে শরীর
ঘুণে খাবে হৃদয়।

কাল হয়ত ঝরে যাবে তুমি, ঝরে যাব আমি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *