চতুর্থ পরিচ্ছেদ – ধনদাস গোয়েন্দার কথা
কিয়দ্দুর অগ্রসর হইতে-না-হইতেই কে সহসা পশ্চাদ্দিক্ হইতে আসিয়া আমার হস্ত ধারণ করিল। আমি তাঁহার দিকে ফিরিয়া দেখিবামাত্রই তিনি আমায় বলিলেন, “ধনদাস! তুমি আসিয়াছ, ভালই হইয়াছে—কোথায় যাইতেছ?”
আমি দেখিলাম, রাজীবলোচনবাবু—এ কার্য্যে আমার গুরু—আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান। ব্যগ্ৰভাবে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “ব্যাপার কি?”
রাজীব। সে ত তুমি বুঝিতে পারিয়াছ; নতুবা বাড়ীর দিকে যাইতেছ কেন?
আমি। মিস্ মনোমোহিনী কি এখনও জীবিত আছেন?
রাজীব। আছেন—কিন্তু আর কিয়ৎক্ষণ পরে না থাকিতে পারিত। ঠিক সময়ে তুমি আসিয়া পড়িয়াছ।
আমি। আপনি কোথায় যাইতেছিলেন?
রাজীব। তুমি যেখানে যাইতেছিলে, আমিও সেইখানে যাইতেছিলাম। বোধ হয়, তুমি দেখিয়াছ, মিঃ কুক্ বাগানে মিস্ মনোমোহিনীর জন্য গোর খুঁড়িতেছে।
আমি। হ্যাঁ দেখিয়াছি।
রাজীব। তোমার সঙ্গে আর একজন লোক ছিলেন, দেখিলাম। তিনি কে?
আমি। ডাক্তার ওগিলভি সাহেব।
রাজীব। তাঁহাকে কোথায় রাখিয়া আসিলে?
আমি। কুক্কে চৌকী দিবার জন্য তাঁহাকে বাহিরে রাখিয়া আসিয়াছি। যদি কুক্ বাড়ীর দিকে আসিবার চেষ্টা করে, তাহা হইলে ডাক্তার ওগিলভি সাহেব তাহাকে বাধা দিবেন।
রাজীব। বাড়ীর ভিতরে এখন কি হইতেছে, তাহা বোধ হয় তুমি অনুমান করিয়াছ?
আমি। হ্যাঁ, আর যদি না বুঝিয়া থাকি, এখনই সব কথা পরিষ্কার হইয়া যাইবে।
রাজীব। আমার বিশ্বাস, মিঃ কুক্ বাড়ীর এই দিকের কোন দরজা দিয়া উদ্যানে আসিয়াছে। তাহা হইলে নিশ্চয় সে দরজা খোলা আছে।
আমি। খুব সম্ভব—আমিও সেই আশা করিয়াই যাইতেছিলাম।
রাজীব। এ বাড়ীতে কুকুর আছে কিনা বল দেখি।
আমি। আমার বোধ হয় নাই। থাকিলে এতক্ষণে জানিতে পারা যাইত।
রাজীব। না, কুকুর নাই। থাকিলে আমাদের কাজের বড় বিঘ্ন ঘটিত।
আমি। আপনি যখন ভিতরে যাইতেছেন, তখন আর আমি গিয়া কি করিব? মিঃ কুকের কার্য্যকলাপের উপর লক্ষ্য রাখিবার জন্য আমি ডাক্তার ওগিলভি সাহেবকে রাখিয়া আসিয়াছি;আমি সেখানে থাকিতে পারিলে ভাল হয়।
রাজীব। সেই ভাল। তুমি ফিরিয়া গিয়া তাঁহাকে আমার কাছে পাঠাইয়া দাও।
আমি আর কোন কথা না বলিয়া ডাক্তার ওগিলভি সাহেবের কাছে ফিরিয়া গেলাম। তিনি আমাকে দেখিয়া প্রথমে চিনিতে না পারায় সরিয়া গিয়া একটা গাছের আড়ালে লুকাইবার চেষ্টা করিতেছিলেন। আমি নিকটবর্ত্তী হইবামাত্র আমায় চিনিতে পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি, ফিরিয়া আসিলেন যে?”
আমি তাঁহাকে দুই-চারি কথায় সকল বুঝাইয়া দিলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ রাজীবলোচন বাবুর উদ্দেশে প্রস্থান করিলেন।