১
ছোট্ট স্টেশন, প্লাটফর্মটা একেক সময় মানুষজনের ভিড়ে গিসগিস করে, হঠাৎ হঠাৎ আবার একেবারে ফাঁকা। আমার ভিড়ও ভালো লাগে, নির্জনতাও বেশ পছন্দ। আমি পাখার তলায় একটা বেঞ্চে বসবার জায়গা পেয়ে গেছি ভাগ্যক্ৰমে। অবশ্য পাখাটা ঘুরছে খুবই যেন অনিচ্ছের সঙ্গে আস্তে আস্তে, মাঝে মাঝে কটা কটাং শব্দ হচ্ছে। এমন শ্লথগতি পাখা শুধু বুঝি রেলস্টেশনেই দেখতে পাওয়া যায়। তবু যা হোক, মাথার ওপর একটা পাখা নড়াচড়া করছে দেখলেও কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়ার কথা। বড্ড গরম আজ।
এরকম যে একটা বেঞ্চ পেয়ে যাব, তাও আশা করিনি। কিছু কিছু লোক সব রেলস্টেশনে, পার্কে, নদীর ধারের সিটগুলোতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে রাখে। গঙ্গার ধারে আমি ঘোর দুপুরবেলা গিয়েও একটা খালি বেঞ্চ দেখিনি। এর আগে, অন্তত বছর পাঁচেকের মধ্যে আমি কোনো স্টেশনের প্লাটফর্মে বসতে পেরেছি বলে তো মনে পড়ে না। এই স্টেশনে, দু’ পাশের খোলা জায়গায়, গাছের নীচে যে বেঞ্চ পাতা ছিল, তার একটাও নেই। অর্থাৎ সেই বেঞ্চের দখলদাররা ওগুলো খুলে বাড়িতে নিয়ে গেছে, সেখানেও বসবে।
ছাউনির নীচে গোটা তিনেক বেঞ্চ মাত্র অবশিষ্ট আছে। তার একটাতে চাদর মুড়ি দিয়ে কেউ একজন ঘুমোচ্ছে। সে জ্যান্ত, না মড়া তা বোঝার উপায় নেই। আমি অন্তত ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে তাকে একবারও নড়াচড়া করতে দেখিনি। এই গরমে চাদর মুড়ি দিলে কোনো মৃতদেহেরও এক-আধবার ছটফট করে ওঠার কথা।
আমার বেঞ্চটার মাঝখানে আমি গ্যাঁট হয়ে বসে আছি, দু’ পাশে সম্পূর্ণ দু’জন বিপরীত স্বভাবের মানুষ। একজন লোকের নাক খোঁটা বাতিক, সে একমনে নাক খুঁটে যাচ্ছে, যেন নাক খোঁটাতেই স্বর্গসুখ, মাঝে মাঝে সে খোয়াক খোয়াক শব্দ তুলছে, যেন তার গলায় একটা কাঁটা ফুটে আছে। অন্য পাশের লোকটি নিঃশব্দে পড়ে চলেছে হিন্দি গীতা। এই উভয় ব্যক্তির সঙ্গেই আলাপ জমাবার যোগ্যতা আমার নেই।
পায়ের কাছে আমার ব্যাগটা, তার ওপর দু’ পা চাপিয়ে রেখেছি। মাঝে মাঝে একটু ঝিমুনি এসে গেলেও ঘুমোনো চলবে না। চারপাশটায় তাকালে কোনো লোককেই চোর বলে মনে হয় না, তবু আমি ঘুমিয়ে পড়লেই ব্যাগটা হাপিস হয়ে যেতে পারে। কোনো রেলস্টেশনেই ব্যাগেরা নিরাপদ নয়। আমার ব্যাগটা নিলে চোরেরা অবশ্য মর্মাহত হবে, তার মধ্যে হাতি ঘোড়া কিছু নেই, কিন্তু আমার তো ক্ষতি হবেই। যেমন, আমার একজোড়া পুরোনো চটির কোনো দাম নেই চোরের কাছে, কিন্তু আমি সেটা আরও মাস তিনেক পায়ে দিতে পারতুম!
আজ দুপুরের রোদ্দুরটা লাল রঙের!
এটা কি একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল? আমার চোখটাই আসলে এত গরমে তেতে-পুড়ে লাল হয়ে গেছে?
ঠিক তা নয়। এই স্টেশনের একদিকেই শুধু প্লাটফর্ম, অন্য দিকটা ফাঁকা। রেল লাইনের ধারে ধারে কয়েকটা কৃষ্ণচূড়া গাছ, দূরে পাহাড়ের রেখা। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো থেকে দমকা হাওয়ায় ঝরে পড়ছে অসংখ্য লাল তুলতুলে পাপড়ি। এত গরম না থাকলে এখন মাঠের মধ্য দিয়ে খানিকটা হেঁটে আসা যেত। আমার ট্রেন কখন আসবে তার কোনো ঠিক নেই।
আমার খিদে পায়নি কিন্তু চা তেষ্টা পাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। বেশির ভাগ রেলস্টেশনেই প্লাটফর্মে একটা অন্তত পাকা চায়ের দোকান থাকে, যেখান থেকে কাপ-ডিশে চা পাওয়া যায়। এখানে সেটা বন্ধ। ভাঁড়ের চাওয়ালা অনেকক্ষণ আগে একবার ঘুরে গেছে। ট্রেন না এলে বোধহয় সে আর আসবে না। স্টেশনের বাইরে দোকান আছে, কিন্তু উঠে গেলেই যদি বেঞ্চের জায়গাটুকু বেদখল হয়ে যায়?
রেলের লাইনেও এসে পড়ছে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি। এই স্টেশনটিকে এমনিতে বেশ সুন্দরই বলা যেতে পারত। কিন্তু আমি অনেকক্ষণ বসে আছি, তাই মনের মধ্যে জমা হচ্ছে বিরক্তি। সুন্দরের কাছাকাছি বেশিক্ষণ থাকতে নেই। যেমন কোনো সুন্দরী রমণী, তার ভোরবেলা সদ্য ঘুম ভেঙে ওঠা মুখখানা যতই অপরূপ মাধুর্য মাখানো মনে হোক, কিন্তু তার দাঁত মাজার দৃশ্যটা দর্শনযোগ্য নয় মোটেই। অথচ সুন্দরীদেরও তো দাঁত মাজতে হয়!
হঠাৎ দাঁত মাজার কথাটা মনে এলো কেন?
মনের যে কী রহস্যময় গতি। কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি দেখতে দেখতে রোদ্দুরের মধ্যে ফুটে উঠল একখানা মুখ। মাথায় বর্ষার মেঘের মতন চুল, গভীর দুটি চোখ, মাখন দিয়ে গড়া একটা নাক, টোল পড়া গাল, চিবুকটি লক্ষ্মীপ্রতিমার মতন, কিন্তু সেই নারীমূর্তির মুখে একটা টুথব্রাশ, ঠোটের পাশ দিয়ে টুথপেস্টের ফেনা গড়াচ্ছে, ওঃ কী ভয়ঙ্কর! হ্যাঁ, এরকম মুখ আমি কোথাও দেখেছি। তখন বড্ড মনে আঘাত লেগেছিল!
সব টুথপেস্টের কোম্পানির বিজ্ঞাপনে, সিগারেট প্যাকেটের সাবধানবাণীর মতন, লিখে দেওয়া উচিত, মেয়েরা অবশ্যই বাথরুমের দরজা বন্ধ করিয়া দাঁত মাজিবেন! সে সময়ে আয়নাও দেখিবেন না!
এক হাতে বড় কেৎলি, পিঠে মাটির খুরির বোঝা নিয়ে একজন চাওয়ালা একটু দূরে এসে দাঁড়াল। তারপর কোথা থেকে এলে একজন বাদামওয়ালা। আর একজনের ঝুড়িভর্তি পেয়ারা। এরা কী করে আগে থেকেই টের পায় যে ট্রেন আসছে?
চায়ে চুমুক দিতে দিতেই আমি শুনতে পেলাম ঢং ঢং শব্দ। চারদিক একটা চাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেল। এত লোক কোন গর্তে লুকিয়ে ছিল, বেরিয়ে এল হুস করে? আমি আড়মোড়া ভাঙলুম। এবার তো বেড়াতে আসিনি, এসেছিলাম একটা কাজে, তাই কলকাতা মন টানছে। কী যেন একটা গণ্ডগোলে আজ প্রায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ। এখন পৌনে চারটে বাজে। এরপর ট্রেন যদি ঠিক মতন রান করে তা হলে রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারব হাওড়ায়।
ও হরি, এ যে আশার ছলনা!
ট্রেনটা আসছে উল্টো দিক থেকে, অর্থাৎ কলকাতা থেকেই। এ ট্রেন আমার নয়! আমি উঠে দাঁড়িয়েও ধপ করে বসে পড়লুম আবার। যাই হোক, একদিক থেকে যখন আসতে শুরু করেছে, তখন অন্য দিকেরটাও আসবে।
ঝমঝমিয়ে ট্রেন ঢুকল প্লাটফর্মে।
অন্যের সম্পত্তির দিকে মানুষ যেমন নিরাসক্তভাবে তাকায়, আমি সেইভাবে দেখতে লাগলুম ট্রেনটা। কিছু লোক জায়গা পাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে, কেউ ঠেলাঠেলি করছে দরজায়, ভেতরের লোকদের নামতেই দিচ্ছে না। বহুকালের পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ওঃ লোকগুলো এত অধৈর্য কেন, ট্রেনটা পাঁচ মিনিট থামবে, ট্রেনে ওঠা-নামার জন্য পাঁচ মিনিট অনেক লম্বা সময়।
আমার দু’ পাশের দু’জন, নাক-খোঁটা সুখী লোকটি এবং হিন্দি গীতা পাঠক একটুও বিচলিত হয়নি। কী ব্যাপার, ওরা কি বেঞ্চের জায়গা ছাড়তে হবে বলে ট্রেন ধরতেও আগ্রহী নয়? কিংবা, এরা শুধু নাক খুঁটতে আর গীতা পড়তেই স্টেশনে আসে?
ট্রেনটি থেকে একজন কালো কোট পরা চেকার, সঙ্গে হলুদ ফ্রক পরা দশ—এগারো বছরের একটি মেয়ে, আর দু’ তিনজন কৌতূহলী লোক কী যেন বলাবলি করতে করতে এগিয়ে গেল। একটা কামরা থেকে নামল দু’ চাঙ্গারি আম, অমনি পাকা ভুরভুর গন্ধে ও মাছিতে জায়গাটা ভরে গেল।
এত ছোট স্টেশনে পাঁচ মিনিটের বেশি দাঁড়াবার কথা নয়, কিন্তু ট্রেনটা এখনো ছাড়ছে না। ট্রেনটাতে আগে যেমন ভিড় ছিল, এখনও তাই, ঠিক যেন হিসেব করে লোকজন উঠেছে আর নেমেছে। আমার সামনের কামরাটায় বেশ কিছু লোক বসবার জায়গা পায়নি। একটা ঝাঁঝালো তর্কাতর্কি শোনা যাচ্ছে সে কামরা থেকে।
চোখের সামনে এই অকারণ ট্রেনটা থেমে থাকতে দেখে বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে, এটা না গেলে বিপরীত দিক থেকে আমারটা আসতে পারবে না। ট্রেনের স্বভাবই এই, একটা একবার লেট করতে শুরু করলে, তারপর আরও ইচ্ছে করে লেট করতেই থাকবে। যেন, একবার চুরি করলে পরে আর চুরি সম্পর্কে কোনো লজ্জা-ভয় থাকে না! এবার যা না বাবা এখান থেকে!
একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে আমার হঠাৎ অস্বস্তি বোধ হলো। দু’এক মিনিটের মধ্যে কী যেন একটা গণ্ডগোল ঘটে গেছে। আমি কিছু একটা ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু আমি তো এই বেঞ্চেই বসে আছি, আর কিছু তো করিনি। এই ট্রেনটা আমার নয়। না, হতেই পারে না, কলকাতার ট্রেন এদিকে মুখ করে থাকবে কেন?
তবু আমি চাওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলুম, ভাই, এই ট্রেনটা কোথায় যাচ্ছে?
সে বলল, এটা করমণ্ডল এক্সপ্রেস!
তবে তো ঠিকই আছে। তা হলেও অস্বস্তিটা যাচ্ছে না কেন? চা খেয়ে পাঁচ টাকার নোট দিয়ে খুচরো নিইনি? বুক পকেট চাপড়ে দেখলুম, না, পয়সা-নোট আছে। লোকটা একটা খুব ময়লা এক টাকার নোট দিয়েছিল, সেটা আমি বদলে নিলুম পর্যন্ত।
আর কী ভুল হতে পারে?
চেকারের সঙ্গে যে কিশোরী মেয়েটি গেল, পাশ থেকে ওর মুখটা দেখেছি, ওকে একটু চেনা মনে হলো না? কোথায় দেখেছি আগে? ওর সঙ্গে আর যারা ছিল, তারা কেউ আমার চেনা নয়।
এতক্ষণ বাদে একদল লোক ছুটতে ছুটতে এলো ট্রেন ধরতে। ওদের জন্য নিশ্চয়ই ট্রেনটা লেট করছিল না। মন্ত্রী-টন্ত্রিও কেউ নয়, এই নবাগতরা সেকেণ্ড ক্লাশের যাত্রী, একটা কামরার বন্ধ দরজা খোলার জন্য কাকুতি-মিনতি করছে।
আর একটা কামরা থেকে একজন ছোকরা একটা ওয়াটার বটল নিয়ে নেমে দৌড়ে এল টিউবওয়েলের দিকে। এতক্ষণ পর ওর জল নেওয়ার কথা মনে পড়ল। আমার বাঁ পাশের হিন্দি গীতার পাঠকমশাই হঠাৎ বেশ জোরে নাক ডেকে উঠলেন।
এইবার গার্ড সাহেব সবুজ পতাকা নেড়ে হুইল বাজালেন। সামনের ইঞ্জিনটা তীক্ষ্ণ সিটি দিয়ে উঠল। আমি চমকে গেলুম। সেই সিটি যেন আমার মর্মে বিদ্ধ হলো, আমি চমকে উঠলুম। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, ঐ কিশোরী মেয়েটিকে আমি ভালোই চিনি! ওর নাম মুমু। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই মুমু। টিকিট চেকার ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কেন?
মুমুর সঙ্গে আর কেউ নেই, সে একা একা ট্রেনে কোথাও যাবে, এটা অসম্ভব কথা। ঠিক মুমুর মতন দেখতে অন্য কেউ? কিন্তু আমার একবার যখন খটকা লেগেছে, তখন দেখা দরকার। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকার কোনো মানে হয় না!
বেঞ্চের মায়া এবার ত্যাগ করা উচিত। আমিও যদি একটা জায়গা সবসময় দখল করে থাকি, তবে আমিও তো অন্যদের মতনই হয়ে গেলুম। ব্যাগটা তুলে নিয়ে এগোলুম স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে।
সেখানে এখন বেশ আট-দশ জন লোকের ভিড় জমেছে। ঠেলেঠুলে একটু জায়গা করে নিলুম। স্টেশন মাস্টারমশাই একজন মাঝবয়সি সৌম্য ধরনের মানুষ, মুখভর্তি পান। অল্পবয়েসি চেকারটির হাতে সিগারেট। এদের মাঝখানে একটা টুলের ওপর বসে আছে হলুদ ফ্রক-পরা কিশোরী মেয়েটি মুখ গোঁজ করে।
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, তোমার কোনো ভয় নেই, মা। তুমি ঠিক করে বলো, তুমি কোথায় যাচ্ছিলে? তোমার টিকিট কোথায় গেল?
মেয়েটি জেদি গলায় বলল, বললুম তো, টিকিট হারিয়ে গেছে। আমার এই বাঁ হাতের মুঠোয় ছিল। একবার বাদাম খাওয়ার জন্য জানলার ওপর রেখেছি। স্টেশন মাস্টারমশাই জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বললেন, উহু, টিকিট কি আর এমনি হারিয়ে যায়? ঐকথা বার বার বললে চলবে কেন?
ভিড়ের মধ্যে একজন বলল, হ্যাঁ, স্যার, ওর হাতে একটা টিকিট ছিল, আমরা দেখেছি। হাওয়ায় উড়ে গেছে।
স্টেশন মাস্টার ধমক দিয়ে বললেন, আপনারা চুপ করুন, আপনাদের সাক্ষী দিতে বলিনি। টিকিট ডানা মেলে হাওয়ায় উড়ে গেছে না অদৃশ্য হয়ে গেছে, তা আমরা জানতে চাই না। প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে টিকিট আছে কি নেই, এটাই সবচেয়ে বড় কথা!
টিকিট চেকারটি বললে, দেখে মনে হচ্ছে ভদ্রঘরের মেয়ে, অথচ বিনা টিকিটে এতদূর যাচ্ছে, সেটাই তো সন্দেহের ব্যাপার।
স্টেশন মাস্টার আবার মুখ ঝুঁকিয়ে নরম গলায় বললেন, তুমি ঠিক করে বলো তো, মা, তুমি একলা একলা কোথায় যাচ্ছিলে।
মেয়েটি আবার বলল, কেন, একলা একলা ট্রেনে বুঝি চাপা যায় না? কত লোক তো একলা যায়! আমাদের স্কুলের একটা মেয়ে রোজ ট্রেনে করে আসে!
-সে তো কাছাকাছি। কিন্তু তুমি এতদূরে কোথায় যাচ্ছিলে?
–একবার ট্রেনে চাপলে কাছে যাওয়াও যা, দূরে যাওয়াও তা!
—ওরে বাবা, এ মেয়ের সঙ্গে যে কথায় পারার উপায় নেই! তাহলে একে নিয়ে কী করা যায়, বলো তো চক্রবর্তী?
টিকিট চেকারটি বলল, ও যদি পুরো ভাড়া আর আড়াই শো টাকা ফাইন দিতে পারে, তাহলে ওকে ছেড়ে দিতে আমরা বাধ্য। আর না হলে ওকে জেলে আটকে রাখতে হবে।
মেয়েটি বলল, আমি পাঁচ টাকা দিতে পারি
—তবে তুমি জেলেই থাকো!
এই সময় আমি চঞ্চল হয়ে উঠলুম। আমার মনের একটা অংশ বলল, পালাও পালাও, নীলুচন্দর, এই ঝামেলার মধ্যে জড়িয়ে পড়ো না! এ তো চন্দনদা’র মেয়ে মুমু অবশ্যই! একা একা ট্রেনে চেপে কোথায় পালাচ্ছে? বম্বেতে হিন্দি সিনেমার নায়িকা হতে? তাহলে ম্যাড্রাসের ট্রেনে চেপেছে কেন? তাছাড়া নায়িকা হবে কী করে, মুমুর বয়েস এখন এগারো-বারোর বেশি কিছুতেই হতে পারে না। চন্দনদার সঙ্গে নীপাবৌদির বিয়েই তো হলো সেভেন্টি সিক্সে, হ্যাঁ খুব ভালো করেই আমার মনে আছে তারিখটা। সেভেন্টি সিক্সের ১০ই ডিসেম্বরে আমার পাঁচখানা বিয়ের নেমন্তন্ন ছিল, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বিয়ে হয়েছিল সেই একটা দিনে। একসঙ্গে পাঁচ পাঁচখানা নেমন্তন্ন, কোনো মানে হয়? এক রাত্তিরে কি পাঁচবার খাওয়া যায়? চন্দনদা বলেছিলেন, আর যত জায়গাতেই তোর নেমন্তন্ন থাক, তোকে আমার বিয়েতে আসতেই হবে, তুই মিষ্টির ঘর পাহারা দিবি, চুরি করে কত মিষ্টি খেতে পারিস দেখব!
সুতরাং মুমুকে এখনো কিশোরীও বলা চলে না, নেহাত বালিকাই বলা উচিত। একটু বাড়ন্ত চেহারা তা ঠিক, কিন্তু সিনেমার নায়িকা হওয়ার চিন্তা তো এই বয়েসেই মাথায় আসবার কথা নয়।
সে যাই হোক, মুমুর যেখানে ইচ্ছে, যে-কারণেই পালাতে যাক না কেন, আমার তাতে কী? মুমুর সঙ্গে কখনো আমার মোটেই ভাব জমেনি। সে কনভেন্টে পড়া মেয়ে, এই বয়েসেই ফরফর করে ইংরিজি বলে, আমি বাংলা ইস্কুলে পড়া বলে আমাকে ও পাত্তাই দিতে চায় না। আমাকে ও নীলু আংকল বলে ডাকা শুরু করেছিল, আমি বলেছিলুম এই, আংকল কি রে, আমি কি সাহেব নাকি? তাতে ও ঠোঁট উল্টে বলেছিল, এঃ নীলুকাকা, গাঁইয়া গাঁইয়া শোনায়, রিডিকুলাস! নীপাবৌদি বলেছিলেন, নীলুকাকাটা সত্যি বুড়োটে বুড়োটে লাগে। মুমু, তুই ওকে নীলকাকা বল, সেটা কিন্তু বেশ মর্ডান। নীলকাকা, ব্লু আংকল! মুমু সেটাও ঠিক মানল না, সে আমাকে বানিয়ে দিল রুকাকা!
মোট কথা, মুমু অতি বিচ্ছু মেয়ে, ওর ভয়েই আমি চন্দনদাদের বাড়িতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। অন্তত ছ’ মাস যাইনি। ও বাড়িতে গেলেই মুমু আমাকে শক্ত শক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। জিম্বাবোয়ের ক্যাপিটাল কী? জিরাফ কেন অত বড় গলা নিয়েও শব্দ করতে পারে না, হিরোসিমায় প্রথম যে অ্যাটম বোমটা পড়েছিল, তার ডাকনাম কী ছিল, এইসব যা-তা জিনিস। আমি না পারলেই হি হি করে হেসে হাততালি দেয়। আমাকে জব্দ করেই যেন ও একটা হিংস্ৰ আনন্দ পায়।
সেই মুমুর পাল্লায় পড়ার কী দরকার সেধে সেধে? এমনও তো হতে পারত যে আমি মুমুকে দেখতেই পাইনি। কিংবা এতক্ষণ এই স্টেশনে আমার বসে থাকার কথাও ছিল না। টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠেছে, এখন তার ফল ও ভোগ করুক। আমার তো তাতে কোনো দায়িত্ব নেই। আমার আজই কলকাতায় ফিরতে হবে, খুব জরুরি কাজ আছে।
ভিড় থেকে কিছুটা সরে এলুম, এখন কোনো একটা লুকোবার জায়গা খুঁজতে হবে। আমার ট্রেনটা এসে পড়লেই এক লাফ দিয়ে—
আমার মনের আর একটা অংশ ঘাড় ধরে টেনে বলল, নীলুচাঁদ, এটা কি তোমার উচিত হচ্ছে? তুমি ওকে দেখে ফেলেও পালাচ্ছ? তোমার আবার জরুরি কাজ কী হে?
দেখে ফেলা আর না-দেখা,কি কখনো এক হতে পারে? মনে করো, তোমার প্রেমিকাকে অন্য একজন চুমু খাচ্ছে সেটা তুমি দেখে ফেললে, আর যদি না দেখতে, তার মধ্যে অন্তত এক হাজার মাইলের তফাত নেই? কিংবা তুমি পরীক্ষায় বসে একটা অঙ্ক কিছুতেই পারছ না, তারপর তোমার পাশের ফার্স্ট বয়ের খাতাটা দেখে নিলে…কিংবা একটা ডিটেকটিভ গল্পের প্রথমটা পড়বার আগেই শেষ পাতাটা তোমার চোখে পড়ে গেল…কিংবা তুমি এই পৃথিবীটাই দেখোনি, তারপর মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এসে চোখ মেলে পৃথিবীটা প্রথম দেখলে…
সবাই জানে, আমি মানুষটা আসলে দুর্বল, শেষ পর্যন্ত মনের জোর বজায় রাখতে পারি না। অগত্যা আমাকে ফিরতেই হলো।
চন্দনদা একবার তার একটা ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট আমাকে দিয়েছিল, নীপা বৌদি আমাকে অন্তত পাঁচবার ডবল ডিমের চিকেন ওমলেট খাইয়েছে, ওরা যদি কখনো ঘুণাক্ষরেও জেনে ফেলে যে, আমি একটা দূরের অচেনা স্টেশনে মুমুকে দেখেও, তাকে বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়েছি…না, আমি এতটা নিমকহারাম হতে পারি না!
এবারে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে বললুম, এই মুমু, এখানে কী করছিস? টিকিট চেকারটি একটা খাতা খুলে কী যেন লিখতে যাচ্ছিল, বেশ চমকে উঠে মুখ তুলে বলল, আপনি? আপনি তো ঐ কম্পার্টমেন্টে ছিলেন না। আপনি কোত্থেকে এলেন?
কনভেন্টে পড়া মেয়ে মুমু এখনও বিশেষ ভয় পেয়ে টস্কায়নি। আমাকে দেখে মোটেই অবাক কিংবা খুশির ভাব দেখাল না, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে পাল্টা প্রশ্ন করল, তুমি এখানে কী করছ?
স্টেশন মাস্টারমশাই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই মেয়েটিকে চেনেন? আমি বললুম, আজ্ঞে হ্যাঁ। ওকে হঠাৎ এখানে…
-ওর নাম কী বলুন তো? এ মেয়ে তো কিছুতেই নিজের নাম, বাবার নাম বলছে না।
-ওর ডাক নাম মুমু, আর ভালো নাম, ভালো নাম, (এই রে, ভালো নামটা কী যেন একটা সংস্কৃত শব্দ, একটা বইয়ের নাম থেকে নেওয়া, সব সময় মনে থাকে না)…
মুমু এমনভাবে আমার দিকে চেয়ে আছে যেন মজা দেখছে। আমি ওর ভালো নামটা ঠিক মতন বলতে পারি কি-না তার পরীক্ষা নিচ্ছে।
পেটে আসছে মুখে আসছে না গোছের অবস্থা, হঠাৎ মনে পড়ে গেল। আমি বললুম, এর নাম রম্যাণি! ওর বাবা চন্দন ঘোষালকে আমি অনেকদিন চিনি, মানে, তিনি আমার দাদার মতন।
-আপনি অন্য কম্পার্টমেন্টে ছিলেন? এইটুকু মেয়েকে একা একা ছেড়ে দিয়েছেন?
-আজ্ঞে না, আমি ঐ ট্রেনেই আসিনি। এখানেই এতক্ষণ বসে আছি।
-কেন বসে আছেন?
—সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। কলকাতার ট্রেন কেন আসছে না, তা আমি কী করে বলব বলুন!
–ও, আপনি কলকাতায় যাবেন। আর এই মেয়েটি কলকাতা থেকে বিনা টিকিটে আসছে—
মুমু বাধা দিয়ে বলল, আমি টিকিট কেটেছিলুম। সাম হাউ ইট ইজ লস্ট! আমাকে ঢুকতে দেখে আরও কিছু কৌতূহলী লোক ঢুকে পড়েছে স্টেশন মাস্টারের ঘরের মধ্যে। ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গেছে।
স্টেশন মাস্টারমশাই রেগে উঠে বললেন, এ কী, এ কী! নো ক্রাউডিং! নো ক্রাউডিং! সব বাইরে যান! প্লিজ ক্লিয়ার আউট!
পাছে আমাকেও তিনি বার করে দেন তাই আমি টেবিলের উল্টোদিকে ঘুরে চলে এলুম।
দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে তিনি আর একটা পান মুখে পুরলেন। টিকিট চেকারটিও আর একটা সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলেন।
স্টেশন মাস্টারমশাই মুমুকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মা এই ভদ্রলোককে চেনো?
মুমু আমার মুখের দিকে বেশ কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে বলল, একটু একটু!
ওঃ, কী এচোড়ে পাকা মেয়ে! সাধে কি আমি এই ঝঞ্ঝাটে জড়াতে ভয় পেয়েছিলুম! কোথায় মুমু কাঁদো কাঁদো মুখ করে দৌড়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে বলবে, নীলকাকা, ব্লুকাকা, দ্যাখো না, এই লোকগুলো আমায় বকছে!
তা নয়, মিটিমিটি হেসে বলে কিনা, একটু একটু!
যদি বলত চিনি না, তাহলে নির্ঘাত এই লোকগুলো আমায় মেয়ে-চোর বলে সন্দেহ করত! মেয়ে-চোরদের লোকে পুলিশেও দেয় না, পিটিয়ে মেরে ফেলে! স্টেশন মাস্টারমশাইও মুমুর উত্তরটা ঠিক বুঝতে না পেরে সন্দেহের চোখে তাকালেন টিকিট চেকারের দিকে।
ওরা আর কিছু বলার আগেই আমি মুমুকে জিজ্ঞেস করলুম, তুই ট্রেনে করে কোথায় যাচ্ছিলি?
মুমু বলল, বাবার কাছে।
আমি অবাক হয়ে বললুম, বাবার কাছে মানে? বাবা কোথায়? ম্যাড্রাসে? মুমু বলল, না। ছোটপাহাড়ীতে। ট্রান্সফার হয়ে এসেছে বাবা, দু’ মাস আগে। এই স্টেশন থেকেই মাইল দশেক দূরে ছোটপাহাড়ী। বাসে যেতে হয়। চন্দনদা এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন, জানতুমই না আমি। এখানে আমি দুটো দিন কাটালুম, অনায়াসে চন্দনদার সঙ্গে আড্ডা মেরে আসা যেত!
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, ছোটপাহাড়ীতে ওর বাবা থাকে? সে কথা এতক্ষণ বলেনি কেন? দেখুন মশাই, ওর ভালোর জন্যই তো ওকে আটকে রেখেছিলুম, ঐটুকু মেয়ে, একা একা বেরিয়েছে, কোনো বদলোকের পাল্লায়ও তো পড়ে যেতে পারে।
টিকিট চেকারটি এমনভাবে আমার দিকে তাকাল যেন সে বলতে চায়, এখনো যে কোনো বদলোকের পাল্লাতেই পড়েনি, তারও কি কিছু ঠিক আছে?
স্টেশন মাস্টারটি একটু উদার প্রকৃতির। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ওকে ওর বাবার কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন?
কিছু না ভেবেই আমাকে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতে হলো।
স্টেশন মাস্টারমশাই টিকিট চেকারবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, তা হলে, চক্রবর্তী, আর কী, ছেড়ে দেওয়া যাক!
চক্রবর্তী বলল, বিনা টিকিটে এসেছে—
মুমু আবার জোর দিয়ে বলল, আমি টিকিট কেটেছি। জানলা দিয়ে উড়ে গেছে।
চক্রবর্তী মুমুর কথা অগ্রাহ্য করে আমাকে বলল, টিকিটের দাম আর আড়াইশো টাকা ফাইন না নিয়ে তো আমরা ছাড়তে পারি না। আইন হচ্ছে আইন!
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, মেয়েটার কাছে মোট পাঁচ টাকা আছে বলছে যে!
চক্রবর্তী থুতনিটা আমার দিকে তুলে বলল, তাহলে এনাকে নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিতে বলুন! ইনি যখন মেয়েটির গার্জেন!
টিকিট চেকারটিকে আড়াইশো টাকা আর টিকিটের দাম না দেবার অন্তত সাতখানা যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে, তার মধ্যে তৃতীয় কারণটি এই যে, আমার পকেটে আড়াইশো টাকা নেই। এমন কি একশো টাকাও নেই!
আমি বললুম, দেখুন, ও যখন বলছে, টিকিট কিনেছিল, তাহলে সেটা মিথ্যে নয়। এই বয়েসের মেয়েরা এতটা মিথ্যে কথা বলে না।
টিকিট চেকারটি চোখ প্রায় কপালে তুলে বলল, আপনি আমাকে মেয়েদের চরিত্র শেখাবেন? আমার নিজের মেয়ে, ওরই সমান হবে, গাদা গাদা মিথ্যে কথা বলে আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়।
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, থাকগে থাক, যেতে দাও!
টিকিট চেকার বলল, আমি স্যার, এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না! টিকিট উড়ে গেছে বলে আমরা কি হাওয়ার পেছনে ছুটব?
মুমু বলল, বাবার কাছে টাকা চেয়ে কালকে তাহলে দিয়ে যাব!
টিকিট চেকারটি মুমুর বদলে আমাকেই সব কথা শোনাবে ঠিক করেছে। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, রেল কোম্পানি কি মুদির দোকান? এখানে ওসব ধারটার চলে না।
আমিও টিকিট চেকারের বদলে স্টেশন মাস্টারমশাইয়ের সহৃদয়তার কাছে আবেদন জানিয়ে বললুম, লালবাহাদুর শাস্ত্রী কী বলেছিলেন জানেন? তিনি একবার বলেছিলেন, ভারতে যত লোক ট্রেনে চাপে, তাদের সকলের কাছ থেকে যদি ঠিক ঠিক ভাড়ার টাকা আদায় হতো, তাহলে এদেশে সোনার রেল লাইন হতো! তা এই একটা ছোট মেয়ের কাছ থেকে জোর করে দু’বার ভাড়া আদায় করে সেই সোনার রেল লাইন কি তৈরি করতেই হবে! তাছাড়া ভেবে দেখুন, সোনার রেল লাইন তৈরি করলে আপনাদের আবার সেটা পাহারা দেবার ঝামেলা কত বাড়বে! কম্পার্টমেন্টগুলোর পাখা, আলো, এই সবই পাহারা দেওয়া যায় না!
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, তা ঠিক, তা ঠিক!
টিকিট চেকারটি বলল, ভাড়া না নিয়ে ছেড়ে দেওয়াটাও স্যার, বেআইনী!
স্টেশন মাস্টারমশাই বললেন, তা ঠিক, তা ঠিক!
আমি তাঁর টেবিলে ঝুঁকে পড়ে বললুম, রবীন্দ্রনাথ একবার কী করেছিলেন জানেন?
রবীন্দ্রনাথ খেতে বসেছেন, তাঁর হাতে একজন নতুন কবির কবিতার বই। সামনে মিষ্টি দইয়ের প্লেট। রবীন্দ্রনাথ কবিতার বইটি পড়তে পড়তে মিষ্টি দই খাচ্ছেন আর বলছেন, বেশ ভালো, বেশ ভালো! তাঁর সেক্রেটারি অমনি দুখানা সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দিলেন, একখানা তরুণ কবিকে, কবিতার বইটি বেশ ভালো। আর একটা দইয়ের দোকানে, মিষ্টি দই বেশ ভালো! আপনিও কি স্যার সেই স্টাইলে কথা বলছেন?
স্টেশন মাস্টারমশাইটি তাঁর অদৃশ্য দাড়ি চুলকে হেসে উঠলেন।
আমি পকেট থেকে আমার টিকিটটা বার করে টিকিট চেকারকে বললুম, এটা কলকাতায় যাবার। এই মেয়েটির কলকাতা থেকে আসা আর আমার কলকাতা যাওয়ার ভাড়া নিশ্চয়ই এক। তাহলে এই টিকিটটা আপনাকে জমা দিলুম। সব শোধবোধ কাটাকাটি হয়ে গেল? আপনি এবার বুঝে নিন!
তারপর মুমুর হাত ধরে বললুম, চল রে, মুমু!
ওঁদের আর কথা বলার একটুও সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলুম দরজা খুলে একদল লোক তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, তারা জিজ্ঞেস করল, কী হলো? কী হলো?
ওদের সঙ্গেও কোনো কথা নয়। পরিত্রাতার ভূমিকায় আমি গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে হাঁটা দিলুম বাসস্ট্যাণ্ডের দিকে।