কুমারী মাটি – পুলককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সতীর ডাঙার বৃত্তান্ত :
এক বিস্তীর্ণ অনাবাদী প্রান্তর। রুক্ষ পাথুরে ভূমি। কোনও অতীত সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ। গোছে। সেখানে সূর্যের আলো ঝলকায়। বর্ষার জলে উদোম বুক ঠায় ভেজে। দুরে পলাশের জঙ্গল ঋতুকালে অগ্নিবর্ণ হয়। সতীর ডাঙায় তথাপি ছিটেফোঁটা সবুজের বিস্তার ঘটে না।
জ্ঞান হওয়া ইস্তক সতীর ডাঙার এই চিত্রটা দেখে আসছে মন্মথ। সময় এসে তো কবারই ভাঙচুর করে দিয়ে গেছে জীবনের জ্যামিতি, সতীর ডাঙা তবু বদলায়নি। দুরে দুরে বসতি গড়ে উঠেছে। তাদের গ্রাম বাজেনীলপুর। কয়েকশো দেহাতি মানুষের ভিড়ে গ্রাম জমজমাট। প্রতি বছরই অঘ্রাণের বাতাসে যখন করাতের। ধার ফোটে, তখন এক ঘোর কৃষ্ণবর্ণ রাত্তিরে একদল মানুষ জমায়েত হয় সতীর ডাঙায়। মেলা বসে। সতীমায়ের পুজো হয়। হোম-যজ্ঞবলিদান কত কী হয়! ও এক মহাধন্দের ব্যাপার। সতী মা না মেয়ে? কেউ বলে, অঘোর চাটুজ্জের সধবা মেয়ে সতী একটা ছেলের কামনায় আজীবন অপেক্ষা করে শেষ-মেশ পাথরে মাথা ঠুকে মরেছিল। আর কেউ বলে, সতীর আসলে বিয়েই হয়নি। বিয়ে না করেই গর্ভধারণের লোভ হয়েছিল মেয়েটার। কী সাংঘাতিক আদিখ্যেতা! কুকর্মের বোমা ধরিত্রী বহন করেননি। এই ডাঙাতেই মা মনসার বিষে মরণ হয়েছিল তার। আসলে, মনে পাপ ঢুকেছিল যে! সেই পাপে আজও সতীর ডাঙায় শস্য ফলে না। ইত্যাকার নানা কিংবদন্তী এলাকার বাতাসে ঘুরছে। তাই অঘ্রাণের শেষ অমাবস্যায় সতীর নামে উৎসব। পুজো, মেলা, জনসমাগম সবই হয়। বাজেনীলপুরের মানুষজন বচ্ছরকার দিনে সেখানে ভিড় করে।
সতীর ডাঙায় এখন অপর এক জনসমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। কদিন পরেই মন্ত্রী আসবেন, সঙ্গে বি.ডিও সায়েব। সামিয়ানার নিচে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করবেন ওঁরা। এর আগেও অনেকবার সরকারি গাড়ি এসেছিল। মাটি পরীক্ষা হয়েছে। মেশিন বসিয়ে তেল খোঁজাখুঁজি হয়েছে। লোকজন ছুটে গিয়ে ভিড় করেছিল। সেসব দৃশ্য দেখতে। ইদানীং মন্ত্রী আসার খবরটা এলাকায় মুখে-মুখে ফিরছে। বাজেনীলপুরের ধস খাওয়া। স্কুলের উন্নতির বিষয়টিও এই প্রসঙ্গে জড়িত। এখন মন্মথর ওপরে একটা বড় কাজের। দায়িত্ব চেপেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে চাঁদা আদায় করছে সে। তাই ওর ব্যস্ততা তুঙ্গে। আপ্যায়নের খরচও তো বড় কম নয়। স্কুলের ব্যাপারে সরকারি সাহায্য আর সেই সঙ্গে সতীর ডাঙায় হাসপাতাল তৈরির সুপারিশ নিয়ে স্থানীয় মানুষের জমায়েত হওয়ার সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি। মন্ত্রী আসার দিনক্ষণও ঠিক। বাজেনীলপুরের মানুষরা তাই এখন প্রহর গুনছে। কেউ কেউ মন্মথকে সামনে পেয়ে ধাঁ করে জিজ্ঞেসও করে বসছে—হ্যাঁ গো, মন্ত্রী ঠিক আসবে তো?
মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত ভাষণ
আজ আমরা আপনাদের এলাকায় এসে এখানকার প্রত্যেকটি মানুষের অপরিসীম আন্তরিকতায় সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। ভাবতে ভালো লাগছে যে, আদর্শ গ্রাম গড়ার শপথ নিয়ে আপনারা এগিয়ে এসেছেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমৃদ্ধিই আমাদের স্বপ্ন, সার্বিক উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য। দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো মজবুত করার জন্যে প্রয়োজন যথার্থ গ্রামীণ বিকাশ। সেটাই উন্নত্রি সূচনা। আপনাদের স্কুলটির অবস্থা আমি দেখেছি। নিদারুণ দৈন্যদশায় জর্জরিত। এই স্কুলটির উন্নতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি আমি আপনাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া, আর একটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর হল, সতীর ডাঙা নামের এই অনাবাদী জমি নিয়ে সরকারি চিন্তাভাবনা ফলপ্রসূ হতে চলেছে। উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে একটি সরকারি কৃষিখামার গড়ে তোলা হবে। বিভিন্ন দপ্তরের সিদ্ধান্তসাপেক্ষেই এই অনুমোদন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে এর কাজে। অনাবাদী, অচ্ছুৎ হিসেবে পরিত্যক্ত এই জমিতে একদিন বুজের বিপ্লব আসবেই। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক যে, সরকারি কৃষিখামার তৈরি হলে এই এলাকার অধিকাংশ কৃষিমজুরই সারাবছরের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারবেন। আপনারা এগিয়ে আসুন এই কর্মযজ্ঞে। শ্রম দিয়ে, সহযোগিতা দিয়ে, নিষ্ঠা দিয়ে এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সার্থক করুন।
মন্মথ-সুভদ্রার দাম্পত্য জীবন
মন্মথর বিয়ে হয়েছে সাত বছর। যে পুরুষালি চেহারার একটা আলাদা দম্ভ থাকে, মন্মথ সেদিক থেকে ত্রুটিযুক্ত। গলার স্বরে কেমন যেন নরমভাব। অনেকসময় ইনিয়ে-বিনিয়ে ন্যাকা-ন্যাকা সুরে কথা বলে। তবু বেশ করিকর্মা। সতীর ডাঙার প্রসঙ্গ নিয়ে মন্ত্রী এবং বিডিও সায়েবের ভাষণ সে একেবারে গিলে খেয়েছে। এরপর হয়তো সরকারি মহলের আরও লোকজন আসবে। কত যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম আসবে। কৃষিখামার তৈরি হলে পাথুরে অজন্মা জমিতে জেগে উঠবে প্রাণের জোয়ার। সে-মাটি সোনা হবে।
মন্মথ বি.এ. পাশ। একটা চাকরিও করে। স্বামী হিসেবে সুভদ্রার কাছে আস্থাবানও। সুভদ্রার বাবা পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষগুলির একজন। স্কুলে পড়ার সময়েই সুভদ্রার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শ্বশুরবাড়ি আসার দিন থেকেই দু’মানুষের এই সংসারে সে সর্বেসর্বা।
ঝাঁ-ঝাঁ রোদ্দুর মাথায় নিয়ে মন্মথ বাড়িতে ঢুকল। এখন শুখার মরশুম, বাতাসে আগুনের হলকা। তেষ্টায় গলা ফাটছে মন্মথর। জল দেওয়ার একান্ত মানুষটি ঘরে নেই। সুভদ্রা ফিরল একটু পরে, মন্মথকে বসে থাকতে দেখে বিড়ম্বিত গলায় জিজ্ঞেস করল কখন এলে?
–এসেছি তো অনেকক্ষণ। এক গেলাস জল—তাও হাতের কাছে পাই না।
—ঘরে কি জলের আকাল? নিয়ে খেলেই তো পারতে!
—তার চেয়ে বলো, রান্নাটাও না হয় নিজেই করে খাই। আর তুমি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াও। এমন সংসারের মাথায় কাটা মারি।
—চেঁচিও না তো! আমি কখন পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে বেড়ালাম? দিনান্তে একবারও বুঝি বাইরে যাওয়ার জো নেই! এই সবে একবার কুন্তলাদির বাড়িতে পা দিয়েছি কী দিইনি, এদিকে মহাপুরুষের রাগ মাথায় উঠেছে।
সুভদ্রার দেওয়া জল শেষ করে মন্মথ আগুন-চোখে তাকাল—ফের তুমি ওদের বাড়িতে গিয়েছিলে? ওই প্রফুল্লদের বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করিনি আমি?
–কুন্তলাদি ভালবাসে, যেতে বলে, তাই যাই।
–সবসময় কুন্তলাদি, কুন্তলাদি করে হাঁফিও না তো! সেদিন তোমার ওই কুন্তলাদিকে বিধবা করে ছাড়তাম। তাতে জেল, পুলিশ যা হওয়ার হত। আমার প্রতিবেশী হয়ে আবার আমারই নামে মামলা করবে বলেছে! প্রফুর স্বভাব-চরিত্র জানো?
জানে সুভদ্রা। কুন্তলাদির স্বামী মদ খায়। খারাপ জায়গায় যায়। কোনও কোনওদিন রাত্তিরে বাড়িও ঢোকে না। বদ লোকের সঙ্গে মেশে। তার জন্যে। কুলাদির অবশ্য কোনওরকম অভিযোগ নেই। প্রফুল্প রেশনের ডিলারশিপ নিয়ে দিনদিন পয়সায় একেবারে কেঁপে ফুলে উঠছে। চারিদিকে যখন চালের আকাল তখন সে জানিয়ে দিল দিনের দিন রেশন না তুললে পরের দিন আর পাওয়া যাবে না। গরিব-গুর্বো মানুষগুলো ঠিকসময়ে পয়সা যোগাড় করতে পারে না। তাতে প্রচুর লাভ যোলো আনা। রেশনের চাল বেশি দামে বিক্রি করে ফয়দা তুলেছে সেসময়টায়। সেই নিয়ে মন্মথর সঙ্গে একদিন হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম। লক্ষ্মীর ফসল খুঁটে খুঁটে যে দুখবর্ণ চাল বেরোয় তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা! কিন্তু কুন্তলা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। পুরুষের বিবাদ পুরুষদের মধ্যেই থাকুক। তাই কুশুলাদির কাছে যায় সুভদ্রা। অথচ মন্মথ বারণ করে, প্রফুর স্বভাব-চরিত্র নিয়ে সাবধান করে দেয়। সুভদ্রা শাদা-মাটা। গলায় বলে জানি। সেইজন্যেই বুঝি ওদের বাড়িতে গেলে তোমার ভয় হয় গাছে কুন্তলাদির স্বামীর কুনজর পড়ে আমার ওপরে! তা, হওয়াটাই স্বাভাবিক। তোমার মতো একজন বিচক্ষণ পুরুষের মাথায় এরকম চিন্তা তো সবার আগে আসবে। আহা, ভাবনাচিন্তাটুকু যদি সাতবছর আগে করতে! কেন যে তখন বিয়ে করার শখ হয়েছিল!
–সুভদ্রা, তুমি খুব অসুখী, তাই না! মন্মথর গলা হঠাই খাদে নেমে গেল। হাসল সুভদ্রা, অথচ হাসিটুকু একেবারেই নিষ্প্রভ, বলল—অসুখী কেন? দুঃখের বোঝায় চাপাপড়া এক কন্যাদায়গ্রস্ত ব্রাহ্মণকে তুমি উদ্ধার করেছিলে, এবড় মনুষ্যত্ব কজনের আছে! …..কুন্তলাদির বাড়িতে যাওয়া নিয়ে অনেকবার অশান্তি করেছ, নানসন্দেহ করেছ, আজও করছ। বু আমি কথা শুনি না। কেন জানো? কুন্তলাদির ওই ফুটফুটে ছেলেটা আমাকে বড় চিনেছে, তাই না গিয়ে থাকতে পারি না।
এরকম পারিবারিক অশান্তি গত সাবছরে অনেকবার হয়েছে। তা সত্ত্বেও মিলজুল করে দিব্যি কেটে যাচ্ছে ওদের দাম্পত্যজীবন। মন্মথর রক্তে এক ধরনের সন্দেহপ্রবণতা আজন্ম প্রতিপালিত। অথচ, সুভদ্রা সাময়িক রাগারাগি, অশান্তি করলেও পরক্ষণেই জুড়িয়ে যায়।
একই সংসারের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ থাকলে অস্বস্তি বাড়ে। সেই পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্যে একসময় সুভদ্রাই বলল-যাদের পিছুটান থাকে না তারা মাঝে মাঝে বাইরে বেড়াতে যায়, তাহলে মনটাও হাকা হয়।
–যাবে? চলল, দিনকয়েক না হয় কোথাও চলে যাই। মন্মথ ঠাণ্ডগলায় বলল।
-–থাক, ওকথা অনেকবার শুনিয়েছ, কান পচে গেছে আমার।
–সত্যি বলছি। আমারও খুব একঘেয়ে লাগে। চলো, সামনের মাসে দেওঘর থেকে ঘুরে আসি। জায়গাটা ভালো। স্বাস্থ্যকরও।
সারাদিন ওদের সংসারে যে গুমোট আবহাওয়া চলছিল, একসময় সেখানে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। সুভদ্রার চুলে বিলি কাটছে মন্মথ। তার সোহাগ চুল থেকে মুখে। গালে। ঠোঁটে। সুভদ্রার মাংসল শরীরের উত্তাপে তৃপ্তি পাচ্ছে মন্মথ। তার যুবতী বউ এই আদরটুকু পেয়েই পরম শান্তিতে চোখ বুজে আছে।
.
একটি নিঃসংকোচ স্বীকারোক্তি
প্রফুল্ল জরুরি কাজে বাইরে গেছে। রাত্তিরে ফিরবে না। কুন্তলা বাড়িতে একা। ছেলেটা সন্ধে থেকেই কাদছে। কী হয়েছে কে জানে, কিছুক্ষণ থামে তো আবার কাঁদে।
কুন্তলা একসময় ভীষণ ভয় পেয়ে সুভদ্রাকে ডাকল—একবার এসো ভাই, : কেন যে ছেলেটা কাঁদছে জানি না, তোমাকে দেখলে যদি থামে।
মন্মথ বাড়িতে নেই। সতীর ডাঙায় গেছে। সেখানে এখন সারি সারি তাবু পড়েছে। লোকজনের ভিড়ে এলাকা জমজমাট। পাথুরে জমির ওপরকার কঠিন আস্তরণ সরিয়ে ফেলে সুপ্ত প্রাণের সন্ধানে শুরু হয়ে গেছে বিরাট কর্মজ্ঞ। সারারাত্তির আলো জ্বলে। বাজেনীলপুরের প্রচ্ছন্ন বেকার মানুষগুলো সেখানে ঠিকে কাজ পেয়েছে। কুমারী মাটির গর্ভে নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি।
সুভদ্রা এল। ছেলেটাকে কোলে নিয়ে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে দূরের আলো দেখাল, আকাশের চাঁদ দেখাল। গুনগুন করে গান শুনিয়ে ভোলাতে চাইল শিশুকে। কুন্তলা অসহায়ভাবে বলল-পেটে লাগছেনা তো?
—আমিও সেটাই ভাবছি। অম্বল হতে পারে। কী দুধ খাইয়েছিলেন দিদি?
—কৌটোর। ওর বাবা বাড়িতে নেই, আমি তো ভয়ে আধমরা হয়ে আছি। বাড়িতে একা থাকলে কার না ভয় করে!
অনেকক্ষণ পরে ছেলেটা ঘুমোল। সুভদ্রা বলল—আপনি বিছানা করে দিন, আমি শুইয়ে দিচ্ছি। বাচ্চাদের কিছু হলেই জ্বালা, মুখে বলতে পারে না।
কুন্তলা আপ্লুতস্বরে বলল—ছেলেটা আগের জন্মে তোমার কে ছিল কে জান! কেবল তোমাকেই চিনেছে, আমি শুধু গর্ভেই ধরেছি।
সুভদ্রা চুপ করে আছে।
–এবার তোমার কোলে একটা আসুক সুভদ্রা। অনেকদিন তো হল, এমন কোলশূন্য মানায় না।
বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুভদ্রা-ভগবান তো সে ভাগ্য দেননি দিদি।
—ছিঃ, অমন কথা বলতে নেই। মা ষষ্ঠীকে ডাকো, ঠিকই হবে। ডাক্তার টাক্তার দেখাচ্ছে না কেন?
—দেখিয়েও কোনও লাভ নেই। আনমনে বলল সুভদ্রা।
—তাই কি হয়! এখন কতরকম চিকিৎসা বেরিয়েছে, কাগজে পড়ো না!
–বললাম তো দিদি, কোনও চিকিৎসাই আমার কিছু করতে পারবে না। সাধ্য মানুষেরও নেই, ভগবানেরও নেই।
এবার কুন্তলার অবাক হওয়ার পালা–তার মানে?
সুভদ্রা যেন হঠাৎ দমে গেল, তারপর স্বীকারোক্তি করার মতো বলে ফেলে লোকটা আসলে
একমুহূর্তের জন্যে ঘরের মধ্যে থমকানো পরিবেশ। কুন্তলার মাথা ঘুরছে, নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। শুধু কোনওরকমে বলল—এতদিন ধরে…
—সেই ফুলশয্যার রাত্তিরেই আমি জেনেছি, তবু আমরা সুখী, বিশ্বাস করুন। সুভদ্রার গলার স্বর ভীষণ স্পষ্ট আর ধারালো, কোনওরকম আড়ষ্টতা নেই সেখানে। কুন্তলার লু ভাবতে অবাক লাগছিল। তার মনে হচ্ছিল, সুভদ্রা যেন ভাসছে। তীব্র কামনার প্লাবনে সেই ভরা যুবতী এখন নিঃশব্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।