প্ৰথম খণ্ড - আদি পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
দ্বিতীয় খণ্ড - চতুর্থ পর্ব

কীর্তিহাটের কড়চা – পরিচয়

পরিচয়

সুরেশ্বরের পরিচয় মনে পড়ল সুলতার। কীর্তিহাটের কড়চার রেখাচিত্রশিল্পী সুরেশ্বরকে না জানলে ওর কথার মানে ধরা যাবে না, সুলতার মনের আশঙ্কারও স্বরূপ নির্ণয় হবে না। কীর্তিহাটের কড়চারও স্বাদ পাওয়া যাবে না।

এই যে কংসাবতী বারিবিধৌততট—বনচ্ছায়াশীতল কীর্তিহাট গ্রাম—ওই গ্রামেরই জমিদার বংশের সন্তান। সেই কোম্পানীর আমলের পারমানেন্ট সেটেলমেন্টের কাল থেকেই ওরা জমিদার। ওদের বংশে যিনি প্রথম জমিদারী অর্জন করেছিলেন তাঁর নাম ছিল সোমেশ্বর রায়। তাঁর বয়স তখন ষোল। দশ বছর বয়সেই জমিদার হয়েছিলেন সোমেশ্বর রায়। তাঁর বাপের নাম কুড়ারাম ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন গোমস্তা শ্রেণীর মানুষ। তবে যার তার গোমস্তা নয়—গোমস্তা ছিলেন কোম্পানির দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ-সিংহের খাস গোমস্তা মুহুরী। দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের সঙ্গে কাগজ নিয়ে কলকাতায় কোম্পানির সেরেস্তাখানায় কাজ করেছেন, দেওয়ানের পিছনে পিছনে বুড়ো লর্ড কর্নওয়ালিশের ঘরে গিয়েছেন—কাগজ এগিয়ে দিয়েছেন। পারমানেন্ট সেটেলমেন্টের আগে বাংলা বিহার উড়িষ্যার পরগণা-লাট-মৌজার তালিকা করেছেন—তাতে নম্বর বসিয়েছেন; সে সব লাট মৌজার রাজস্ব নির্ধারিত করেছেন।

দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধ বাংলাদেশে মহাসমারোহের শ্রাদ্ধ। বাংলাদেশের জমিদারেরা এসে তাঁর কান্দীর বাড়ীতে শুধু আতিথ্যস্বীকার করে ধন্য হননি—শ্রাদ্ধে তদ্বির তদারক করে নিজেদের মাথা বাঁচিয়েছেন। দেওয়ানজী সরষের তেল রাখবার জন্যেও একটা ডোবা পুকুর কাটিয়ে তাতে তেল ঢেলে রেখেছিলেন। ঘিয়ের কারবার তখন টিনে নয়-বড় বড় হাঁড়ির প্রচলন ছিল—দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধে একটা ঘর ঘিয়ের বড় বড় জালায় ভর্তি ছিল। কুড়ারাম ভট্টাচার্য ছিলেন ঘিয়ের ভাঁড়ারে। সেখান থেকে দেওয়ান তাঁকে হঠাৎ তলব করে বলেছিলেন কুড়োরাম, ও ভার নিয়ে তোমার আটকে থাকা চলবে না। তোমাকে নিযুক্ত করলাম কৃষ্ণনগরের কুমার শিবচন্দ্র রায় আসছেন তাঁর পরিচর্যার জন্যে। সাবধান —পান থেকে চুন না খসে। শোনা গিয়েছিল কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অসুস্থ বলে আসতে পারবেন না। তিনি মার্জনা চেয়ে পত্র লিখেছিলেন—“দরবার অসাধ্য পুত্র অবাধ্য-ভরসা কেবল গঙ্গাগোবিন্দ।” কিন্তু তারপর কুমার হঠাৎ রাজি হয়ে এসেছিলেন নিমন্ত্রণ রাখতে। দেওয়ানজীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় কুড়ারাম ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। দেওয়ানজী বলেছিলেন—কি কুমার, কেমন আয়োজন দেখছেন? কুমার শিবচন্দ্রের জিহ্বা ছিল প্রখর। ক্ষুরের মতো তীক্ষ্ণধার। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন-দেখলাম। প্রায় দক্ষযজ্ঞ!

অর্থাৎ লণ্ডভণ্ড হয়ে পণ্ড হবে এই ইঙ্গিত করেছিলেন। কিন্তু দেওয়ানজী তার উপরেও প্রখর—তিনি বলেছিলেন—ভুল হল কুমার। দক্ষযজ্ঞের চেয়েও বেশী!

ভ্রূকুঞ্চিত করে শিবচন্দ্র বলেছিলেন—বলেন কি দেওয়ানজী, দক্ষযজ্ঞের চেয়েও বেশী? অর্থাৎ ঔদ্ধত্য তো কম নয়। কিন্তু দেওয়ানজী তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়েছিলেন—নিশ্চয়। বিবেচনা আপনিই করুন কুমার; দক্ষযজ্ঞে শিব আসেননি প্রথমে—আমার যজ্ঞে স্বয়ং শিব উপস্থিত-যজ্ঞের আদিতেই।

অর্থাৎ কুমার শিবচন্দ্র নিজে এসেছেন। এসেছেন দেওয়ানজীকে মান্য করেই এটা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

আসেননি শুধু বর্ধমানের মহারাজা। বলেছিলেন—কি, আমি ক্ষত্রিয় হয়ে লালা—অর্থাৎ কায়েতের বাড়ী যাব নিমন্ত্রণ রাখতে? তার শোধ দেওয়ানজী নিয়েছিলেন। অন্য জমিদারদের খাজনা ধার্য তিনি করেছিলেন এগারো ভাগের দশ ভাগ। বর্ধমানের মহারাজার পাঁচ হাজার বর্গমাইল জমিদারী—তার উপর খাজনা ধার্য হয়েছিল ষোল আনা-অর্থাৎ এগার ভাগের পুরো এগার ভাগ। অঙ্ক নিজে বসিয়েছিলেন কুড়ারাম ভট্টাচার্য মশায়। বাহান্ন লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার টাকা।

কুড়ি লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল এই শ্রাদ্ধে। হ্যাঁ, তার আগে শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দে মাতৃশ্রাদ্ধে ন লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের দেববিগ্রহদের নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন ব’লে দেব উপাধি পেয়েছিলেন। সে গৌরব ম্লান করে দিয়েছিলেন দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ। এ সমস্ত কিছুর মধ্যে কুড়ারাম ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁর বিশ্বাসভাজন কর্মচারী। সেখান থেকেই তিনি প্রচুর উপার্জন করেছিলেন। পাকা বাড়ী করিয়েছিলেন; জমিজেরাত অনেক কিনেছিলেন। কিন্তু জমিদারী কেনেন নি। জমিদারী কিনেছিলেন শেষ জীবনে—পুত্র সোমেশ্বরের নামে। সেটা আঠারশো এক সাল। জমিদারী তখন কেনা গেলেও চালানো সহজ ছিল না। এগার ভাগ আদায়ের দশ ভাগ দিতে হত কোম্পানীকে। কিস্তি ছিল বারো মাসে বারো কিস্তি।

প্রজা খাজনা বাকী ফেলত। ইস্তফার পত্র লিখে জমিদারী কাছারীতে দিয়ে যেত, জমিদার নিতে চাইত না-প্রজা ফেলে দিয়ে পালাত। তাছাড়া পারমানেন্ট সেটেলমেন্টের পর কোম্পানী সরকার জমিদারদের প্রজার উপর জুলুমবাজীর অধিকার খর্ব করে আইন তৈরি করায় জমিদারী কিনে খাজনা সুসারে আদায় করা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। ফলে পুরনো জমিদারদের জমিদারী রাজস্ব বাকীর দায়ে সূর্যাস্ত আইনে নিলেম হয়ে গেল। বীরভূমের মুসলমান আমলের নবাবদের জমিদারী নিলেম হল। বর্ধমানের মহারাজার মণ্ডলঘাট পরগণা নিলেম হয়ে গেল। এক বর্ধমানের রাজার এস্টেট থেকে তিরিশ হাজার বাকী খাজনার নালিশ দায়ের হল। তখন লর্ড কর্নওয়ালিশ দেশে গিয়েছেন—লাটসাহেব হয়ে এসেছেন লর্ড ওয়েলেসলী। সব দেখেশুনে তিনি সপ্তম আইন—রেগুলেশন সেভেন তৈরি করে জমিদারদের ক্ষমতা দিলেন যে, বাকী খাজনার দায়ে জমিদার ক্ষেতের ফসল ক্রোক করে নিলেম করাতে পারবে। সেটা ইংরিজী ১৭৯৯ সাল। সেই সময় কুড়ারাম ভট্টাচার্য একদিন দেওয়ানজীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।

দেওয়ান তাকে দেখে বলেছিলেন—কি খবর ভট্টাচার্য?

—অধীনের একটা আর্জি আছে।

—বল!

—হুজুরের মেহেরবানিতে সবই হয়েছে অধীনের। শুধু একটি সাধ পূর্ণ হতে বাকী।

—কি সে সাধ? ব্যক্ত কর।

—হুজুর, ভেবেছি মায়ের সেবা প্রতিষ্ঠা করব—

—এ তো সাধু সংকল্প হে! করে ফেল। তোমার অর্থের অভাব আছে বললে তো আমার অবস্থাই ফকিরের অবস্থা দাঁড়ায় হে।

—আজ্ঞে—তা নয়। তবে মা কি আমার কারুর অধীনস্থ রায়ত হয়ে আসবেন মাথা হেঁট করে?

—বেশ তো, লাখরাজ করে দিচ্ছি তোমার সম্পত্তি।

—আজ্ঞে ওর সঙ্গে আর একটুকু চাই।

—সেটা কি?

—কিছু জমিদারী না হলে মায়ের মাথায় মুকুট পরাব কোন্ লজ্জায়? গ্রামের লোকের উপর তাঁর হুকুম কায়েম হবে কি করে?

—বেশ, বল কোন্ লাট কিনবে? ষোলশো ষাট পরগণার হস্তবুদ কালেকটারি খাজনা তো তোমার কণ্ঠস্থ। টাকারও তোমার অভাব আমি রাখিনি। বল!

—আজ্ঞে না হুজুর, সামান্য ব্যক্তি আমি, সাধ্য কম। তবে আমার গ্রাম কীর্তিহাট —লাট কীর্তিহাটের সামিল—ওই স্বগ্রামটুকু তার চারপাশে চারখানা গ্রাম—

—বেশ, তা হবে। কীর্তিহাট এবার নিলামে উঠবে।

উঠতে বেগ বিশেষ পেতে হয়নি। কীর্তিহাটের জমিদারদের পাঠানো রাজস্ব সেবার পথেই লুঠ হয়েছিল। নিলাম ডেকে নিতেও প্রতিদ্বন্দ্বী জোটেনি। নিলাম ডাক হয়েছিল কুড়ারামের নামে নয়। পুত্র সোমেশ্বরের নামে। এবং উপাধি তাঁর ভট্টাচার্য নয়, হয়েছিল রায়। লেখা হয়েছিল নিলাম ক্রেতা শ্রীসোমেশ্বর রায়—পিতা, শ্রীকুড়ারাম রায় ওরফে ভট্টাচার্য। তাই সুরেশ্বরদের বংশের জমিদারী জীবনের ইতিহাসে আদি পুরুষ সোমেশ্বর রায়। তাঁর উপাধির ক্ষেত্রে ওরফে ভট্টাচার্যও আর লেখা হত না। সোমেশ্বর তারপর বিস্তৃত জমিদারী কিনেছিলেন। সোমেশ্বরের পর বীরেশ্বর রায়, তারপর রত্নেশ্বর রায়—তাঁর তিন ছেলে—বড় দেবেশ্বর রায়। তাঁর দুই ছেলে- বড় যজ্ঞেশ্বর, ছোট যোগেশ্বর রায়। সুরেশ্বর যোগেশ্বর রায়ের একমাত্র সন্তান। সে আমলের বিচারে বেশী বয়সের ছেলে সুরেশ্বর, জন্মেছিল ৫ই মার্চ ১৯১০ সাল।

সুরেশ্বর পুরনো জমিদার বাড়ীর ছেলে হলেও জন্মকাল থেকেই ওর কোন সংস্রব ছিল না জমিদারীর সঙ্গে। সুরেশ্বরের বাবা যোগেশ্বর রায় জমিদারের ছেলে হয়েও পেশায় ছিলেন জার্নালিস্ট। তারও জন্ম কলকাতায়। ছাত্রজীবনে তিনি উজ্জ্বল ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা দেবেশ্বর রায়—রত্নেশ্বরের জ্যেষ্ঠপুত্র—জমিদারিতে ছ-আনা অংশ পেয়েছিলেন, কিন্তু জমিদারী তাঁর ভাল লাগেনি। তিনিও ইংরিজি শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। হয়তো সম্পত্তির ক্ষেত্রে দেবতার সঙ্গে বাঁধা না থাকলে দেবেশ্বর ব্রাহ্মই হয়ে যেতেন। অনেকে বলে ক্রীশ্চান হতেও তাঁর আপত্তি ছিল না। কিন্তু সম্পত্তি দেবত্র বলে তিনি তা পারেননি। তিনি নামে জাত ও ধর্ম বজায় রেখে সম্পত্তির অধিকারই অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। এবং ধর্মকর্ম ক্রিয়াকলাপের ঝঞ্ঝাট থেকে দূরে থাকবার জন্য কলকাতাবাসী হয়েছিলেন। যাতে তাঁর ইচ্ছামতো আচরণ বিচরণের পথে কোন বাধা না-দাঁড়ায়। কলকাতায় তিনি ব’সে ব’সে ভোগ করেননি, কর্ম করেছিলেন। জমিদারীর সঞ্চিত অর্থে ব্যবসা করেছিলেন। অবশ্য চাল ডালের গদী গুদাম নয়, বড় স্টোরস নয়। করেছিলেন কলিয়ারী কিনে কয়লার ব্যবসা। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তার আগে কারঠাকুর কোম্পানি করেছিলেন। রাণীগঞ্জ অঞ্চলে তাঁর খনি ছিল। দেবেশ্বর তাঁর পরবর্তীকালের মানুষ, তাঁর সময়ে কয়লার নতুন ফিল্ড বেরিয়েছে—ঝরিয়া ফিল্ড। সেই ঝরিয়া ফিল্ডে তিনি কলিয়ারী কিনে কুঠীতে সাহেব ম্যানেজার এবং কলকাতার আপিসে সাহেব অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট রেখে ব্যবসা চালাতেন। ব্যবসা ভালই করেছিলেন। এর সঙ্গে তাঁর ইচ্ছে ছিল তিনি একখানা খবরের কাগজ করবেন। ইংরিজী খবরের কাগজ। এ ইচ্ছে তাঁর উৎসারিত হয়েছিল যোগেশ্বরের ছাত্র জীবনের কৃতিত্ব থেকে। যোগেশ্বর ইংরিজীতে এম.এ. পরীক্ষায় বেশ ভাল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। চেষ্টা করলে অনায়াসে ডেপুটি হতে পারতেন, কিন্তু তার বদলে দেবেশ্বর ছেলেকে নিয়ে গিয়ে অমৃতবাজারের শিশিরকুমারের হাতে দিয়েছিলেন। দেবেশ্বর রায় ছিলেন সে আমলের নামী লোক। ল্যান্ড হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, বৃটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়া লীগ প্রভৃতি সমিতির সভ্য এবং কলকাতার অভিজাত সমাজে সমাদৃত মানুষ ছিলেন।

রত্নেশ্বর রায় বড় ছেলের প্রকৃতি বুঝেই তাকে কলকাতার জানবাজারের বাড়ীখানাও দিয়ে ছিলেন। অন্য ছেলেদের জন্যে স্বতন্ত্র বাড়ী কিনে দিয়েছিলেন—অপেক্ষাকৃত ছোট বাড়ী। দেবেশ্বর ব্যবসায়ে ব্যর্থ হন নি, তিনি ব্যবসায় করে কয়েকটা কলিয়ারী এবং বেশ কিছু অর্থ সঞ্চয় ও করেছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল তাঁর অকস্মাৎ-কিন্তু দেবেশ্বর তার আগেই উইল ক’রে রেখেছিলেন, বড় ছেলেকে দিয়েছিলেন কলিয়ারী এবং ছোট যোগেশ্বরকে দিয়েছিলেন জানবাজারের বাড়ী এবং নগদ এক লক্ষ টাকা, যা থেকে যোগেশ্বর একখানা ইংরিজী কাগজ বার করতে পারবে।

যোগেশ্বর তখন নবযুবক। কালের দিক থেকে তখন ঊনবিংশ শতাব্দী সবেমাত্র শেষ হয়েছে। বড় ভাই যজ্ঞেশ্বর কলিয়ারী ব্যবসায়ীর কন্যাকে বিয়ে করেছেন—তাঁর চালচলন—রুচির সঙ্গে যোগেশ্বরের রুচির তফাৎ হয়ে গেছে, তিনি স্বতন্ত্র হয়ে গেলেন; যোগেশ্বর অমৃতবাজার ছেড়ে ইংলিশম্যানে নিজের জায়গা করে নিয়ে দস্তুরমতো সাহেব হয়ে উঠেছেন।

জানবাজারের বড় বাড়ীটায় প্রেস করবে যোগেশ্বর কল্পনা করেই দেবেশ্বর বাড়ীটা ওঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু যোগেশ্বর বাড়ির সামনের যেটা পোশাকী মহল সেটা নিজের জন্যে রেখে বাকীটা ভাড়া দিয়েছিলেন—বেছে বেছে সম্পন্ন ফিরিঙ্গী টেনেন্ট দেখে। তাঁর নিজের বাড়িতে তিনি নিজে চাকর বাবুর্চি নিয়ে থাকতেন। বিবাহ অনেক দিন পর্যন্ত করেননি। অবশ্য সেকালের বিচারে অনেক দিন। নইলে একালে সাতাশ বছর বয়সকে কে বেশী বয়স বলবে। লোকে নানান কথা বলত। এমন কি তাঁর ভাই এবং জ্ঞাতিবর্গেরা প্রমাণ প্রয়োগ সংগ্রহ করতেও শুরু করেছিল যে যোগেশ্বর ধর্মহীন বা জাতিচ্যুত হয়েছেন। যাতে তাঁদের দেবোত্তরের এজমালী সম্পত্তির সেবায়েত স্বত্ব থেকে আইন আদালত করে বঞ্চিত করা যায়। ঠিক এই সময়েই যোগেশ্বর বিয়ে করলেন—করলেন একেবারে ব্রাহ্মণের কন্যাকে—খাঁটি হিন্দুধর্ম মতে—টোপর চেলী প’রে বর সেজে নারায়ণ শিলা সম্মুখে রেখে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *