অবাঞ্ছিত উইল – ৭

পরের দিন শাকিল নাস্তা খেয়ে শাকিলাদের বাড়িতে গেল। সে গত রাত্রে ফোন করে আসার কথা জানাতে গেলে ইয়াসিন সাহেব ফোন ধরেছিলেন। সেইজন্যে তিনি আজ অফিসে যান নি। শাকিল এসে ওনার সঙ্গে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করল।

ইয়াসিন সাহেব বললেন, তোমাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। তোমার চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আমি তোমার মা বাবার মতামত নিয়েছি। তারা জানিয়েছে, তোমার মতামতই তাদের মত। শাকিলা আমাদের একমাত্র সন্তান। তাই একটু বেশি আদর পেয়ে একরোখা স্বভাবের হয়েছে। তবে ওর মন খুব সরল। যাই হোক, তোমাদের উইলের ব্যাপারে নিস্পতি করার জন্যে সে যা যা বলবে, মেনে নিও। বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেব। এখন আমি বাইরে যাচ্ছি ফিরতে দেরি হতে পারে। একটা ভিজিটিং কার্ড তার হাতে দিয়ে বললেন, প্রয়োজন মনে করলে এখানে চলে এস। অথবা ফোনে আলাপ করতে পার। তারপর তিনি ভিতরে গিয়ে স্ত্রীকে শাকিলের জন্য চা নাস্তা পাঠাবার কথা বলে শাকিলাকে শাকিলের আসার খবর জানাতে বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

মাহমুদা বেগম স্বামীর কাছে তার বন্ধুর ছেলের গুনাগুন অনেক শুনেছেন। উইলের কথা এবং ছেলেটাকে মেয়ের বিয়ে করার অমতের কথাও জেনেছেন। সেই ছেলে এসেছে শুনে আয়াকে নাস্তার অর্ডার দিয়ে ড্রইংরুমে এসে নিজের পরিচয় দিলেন।

শাকিল আব্বার বন্ধুর পত্নীকে সালাম দিয়ে কদমবুসি করে নিজের পরিচয় বলল।

মাহমুদা বেগম দোয়া করে বললেন, থাক বাবা থাক, বস। তোমার বাবা-মা ভাল আছেন?

আমি মেহেরপুর থেকে আসছি। মাস খানেক আগের খবর ভাল।

আয়া চা নাস্তা নিয়ে এলে মাহমুদা বেগম তাকে খেতে বলে যাওয়ার সময় বললেন, তুমি খাও, আমি শাকিলাকে ডেকে দিচ্ছি। ভিতরে গিয়ে শাকিলাকে শাকিলের আসার কথা বলে নিজের রুমে এসে চিন্তা করলেন, অত সুন্দর ছেলে কি করে চরিত্রহীন হয়।

শাকিলা যখন ড্রইংরুমে এল তখন শাকিলের চা নাস্তা খাওয়া হয়ে গেছে। সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?

শাকিলা সালামের জওয়াব দিয়ে বলল, ভাল। তারপর জিজ্ঞেস করল, কোথায় উঠেছেন? আমি তো চিঠিতে আপনাকে আমাদের বাসায় উঠতে লিখেছিলাম।

তাতে কি হয়েছে। আমার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি।

কি রকম আত্মীয়?

বোন।

কি রকম বোন?

কথাটা শুনে শাকিল মনে আঘাত পেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, আমাকেই যখন বিশ্বাস করতে পারছেন না, তখন আমার কোন কথাই আপনার বিশ্বাস হবে না। এ প্রসঙ্গ বাদ দিলে খুশি হব।

ঠিক আছে, এখন কাজের কথায় আসি কি বলেন?

তাই বলুন।

আমি চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এক বছরের কন্ট্যাক্টে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব। কথাটা বলে শাকিলা তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুখের কোন পরিবর্তন হয় কিনা লক্ষ্য করল। কোন পরিবর্তন দেখতে পেল না।

শাকিলা তার মুখের দিকে তাকিয়েছিল, শাকিল চাইতে চোখে চোখ পড়ল। সেই অবস্থাতে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে বলল, তারপর বলুন।

তবে একটা শর্ত আছে। শর্তটা হচ্ছে, বিয়ের পর আপণি আপনার কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। আমি এখানে থেকে এম.এ. পরীক্ষাটা দেব। পরীক্ষার পর অর্থাৎ এক বছর পর যা হয় হবে। এই এক বছরের মধ্যে স্বামীর দাবী নিয়ে আমার সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ রাখবেন না। এক বছর পর আমিই যোগযোগ করব। আর বিয়ের ব্যাপারটা কারো কাছে প্রকাশ করবেন না।

কথাগুলো শুনে শাকিলার অভিসন্ধি বুঝতে পেরে শাকিল মনে মনে হাসল। বলল, আমি তো একদিন আপনাকে বলেছিলাম, আপনি যা করবেন, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। এখনও সেই কথা বলব। তবে আমারও একটা শর্ত আছে। আশা করি তা আপনিও মেনে নেবেন?  

আগে শর্তটা বলুন, তারপর মানা না মানার কথা।

এই এক বছরের মধ্যে আল্লাহ না করুন, যদি আমার হায়াৎ শেষ হয়ে যায়, তা হলে মৃত্যুশয্যায় শেষ বারের মতো আপনাকে যদি একবার দেখতে চাই।

শাকিলের কথাগুলো শাকিলার কানে খুব করুণ শোনাল। বলল, ঠিক আছে, আমি রাজি। দু’একদিনের মধ্যে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে আপনার কোন আপত্তি আছে?

না নেই।

তা হলে আগামীকাল ব্যবস্তা করতে বাবাকে বলি?

বলুন। তারপর বিদায় নিয়ে আনিসাদের বাসায় ফিরে এল।

গুলজার আজ অফিসে যাই নি। জিজ্ঞেস করল, কিরে মিমাংসা হল।

আজ কিছু অগ্রসর হয়েছে, কাল ফাইনাল হবে।

পরের দিন ব্যারিস্টার মোস্তাকের তত্ত্বাবধানে কোর্ট ম্যারেজের পর কাজী অফিসে গিয়ে শরামতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হল।

ইয়াসিন সাহেব মেয়েকে বললেন, আজ অন্ততঃ শাকিল আমাদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করুক, তারপর না হয় চলে যাবে।

শাকিলা বলল, তা হয় না বাবা, তোমাকে তো আমাদের দু’জনের চুক্তির কথা বলেছি।

ইয়াসিন সাহেব বললেন, তোরা স্বামী স্ত্রী হওয়ার চুক্তি করেসিস। আমার সাথে ওর কোন চুক্তি হয়নি। জামাই হিসাবে আমার বাসায় না গেলেও বন্ধুর ছেলে হিসাবে যাবে। তারপর শাকিলকে বললেন, তুমি কি তোমার বাবার বন্ধুর কথা রাখবে না?

শাকিল বলল, বাবার বন্ধু বাবার সমান। আপনার কথা অমান্য করে বেয়াদবি করতে পারব না।

সেদিন শাকিলাদের বাসায় খেয়ে দেয়ে শাকিল বোনের বাসায় ফিরে এল। রাতে গুলজারকে বলল, আমি কাল চলে যাব।

তা না হয় যাবি, কিন্তু উইলের ব্যাপারে আজ ফাইনাল মিমাংসা হওয়ার কথা ছিল না?

ছিল, হয়েও হল না। তবে একটা ব্যবস্থ্যা অবশ্য হয়েছে, যার নিষ্পত্তি একবছর পর হবে।

বুঝলাম না, খুলে বল।

তোদের বোঝার দরকার নেই। এখন খুলে বলতেও পারব না।

পরের দিন শাকিল বাড়ি গেল।

সুরাইয়া খাতুন এবার ছেলের মন ভার ভার দেখে একসময় জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তোর মন খারাপ কেন? অসুখ বিসুখ করেনি তো?

শাকিল মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, না মা, ওসব কিছু হয়নি।

তা হলে তোর মন খারাপ কেন? নিশ্চয় চিন্তা করছিস।

কি আবার চিন্তা করব।

তা না হয় কিছু চিন্তা করছিস না; উইলের ব্যাপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করেছিস?

আমি আর কি ভাবব? যাদের ভাবনা তারা ভাববে।

তোর আব্বার বন্ধু তোকে জামাই করবে বলে চিঠি দিয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। আমরা মত দিয়েছি। ছেলের কপালে চিন্তার রেখা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তুই কি অসন্তুষ্ট হলি?

তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব, একথা ভাবতে পারলে আম্মা?

ভাবিনি বলেই তো তোকে জিজ্ঞেস না করে মতামত জানিয়েছি। তা ছাড়া তোর দাদিকে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন, তুই তাকে বলেছিস, মেয়ে তোর পছন্দ। আমার কথা শুনে তোকে চিন্তা করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম।

কি জান আম্মা, আব্বার বন্ধু চাইলেও শাকিলা, মানে ওনার মেয়ে আমাকে পছন্দ করে না।

কেন? তুই তো কোন মেয়ের অপছন্দ করার মতো ছেলে না। তা হলে মেয়ে কি কোন ছেলেকে ভালবাসে?

আমার তা মনে হয় না। অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।

মেয়ের অমতের কথা তার বাবা জানে?

জানে।

তবু কেন সে তোকে জামাই করতে চায়?

তা আমি কি করে বলব।

আচ্ছা, তুই এত খবর জানলি কি করে?

উইল হাতে পাওয়ার পর সে একবার মেহেরপুরে গিয়ে কয়েকদিন ছিল। তখন উইলের কথা তুলে আমাকে বলেছিল।

সে কথা এতদিন বলিসনি কেন?

দরকার মনে করিনি বলে বলিনি। তবে এবার ঢাকা গিয়ে একটা ফাইনাল ব্যবস্থা করে এসেছি।

কি করেছিস শুনি?

সে কথা এখন আমি বলতে পারব না। আব্বার বন্ধু নিশ্চয় দু’চার দিনের মধ্যে জানাবেন।

দু’তিন দিন বাড়িতে থেকে শাকিল মেহেরপুরে এল।

একদিন চেয়ারম্যানের একজন লোক এসে শাকিলকে ডেকে নিয়ে গেল।

চেয়ারম্যান তাকে যথেষ্ট সম্মান দেখিয়ে বসালেন। তারপর বললেন, আমার শালা দু বছর আগে বি.এ. পাশ করে বেকার রয়েছে। অনেক চেষ্টা চরিত্র করেও চাকরি পায়নি। সে পেপারে চৌধুরী মেমোরিয়াল বিদ্যাপীঠে একজন শিক্ষক দরকার এই বিজ্ঞাপন দেখে আমাকে এসে ধরেছে। আপনি যদি তাকে এই প্রতিষ্ঠানে উক্ত শিক্ষকের পদে নিয়োগ করতেন, তা হলে বড় উপকৃত হতাম।

শাকিল বলল, আমি তো নিয়োগ করার কেউ না। কমিটি যা করবে তাই হবে। তারা ইন্টারভিউ নেবেন। ইন্টারভিউতে এলাও হলে নিশ্চয় উনি চাকরি পাবেন।

চেয়ারম্যান বললেন, সে তো অফিসিয়াল ফর্মালিটি। আজকাল ফর্মালিটি মেনে কোথাও কোন কাজ হয় না। আনঅফিসিয়ালি সব কিছু হচ্ছে। আপনি কমিটিকে সুপারিশ করলে তারা না নিয়ে পারবে না।  

শাকিল বলল, আপনার কথা হয়তো ঠিক। কিন্তু যাকে আমি চিনি না, জানি না, তার জন্য কি করে সুপারিশ করব? তা ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে কারুর সুপারিশ চলবে না। সে কথা সংবিধানে লেখা আছে। এক কাজ করুণ, ওনাকে অফিস থেকে দশ টাকা দিয়ে একটা ফর্ম নিয়ে দরখাস্ত করতে বলুন। তারপর ইন্টারভিউ দেওয়ার পর কমিটি যা করার করবে।

চেয়ারম্যান আমজাদ এই এলাকায় প্রায় পনের বছর চেয়ারম্যানি করছেন। ওনার আগে ওনার বাবাও চেয়ারম্যান ছিলেন। উনি খুব অবস্থাপন্ন লোক ছিলেন। ধর্ম কর্মও মেনে চলতেন। ওনার চার মেয়ে হবার পর আমজাদ। তারপর আর কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। তাই আমজাদ সকলের আদর পেয়ে মানুষ হয়েছেন। আই.এ. পাশ করে আর পড়েন নি। গ্রামের খারাপ ছেলেদের সঙ্গে বেলাইনে চলাফেরা করতেন। ওনার বাবা জানতে পেরে বিশ বছর বয়সে ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর কিছুদিন একটু ভালভাবে চলেছিলেন তারপর আগের মতো চলাফেরা করতেন। বাবা মারা যাবার পর। বাবার সুনামের জোরে এবং টাকা পয়সার জোরে এতদিন চেয়ারম্যানি করে আসছেন। সরকারের টাকা পয়সা অল্পকিছু দেশের কাজে ব্যয় করে বাকিটা নিজে খেয়ে খেয়ে আরো ধনী হয়েছেন। কেউ ওনার বিরুদ্ধে ‘একটা কথা বলতে সাহস করত না। চৌধুরী স্টেটের নায়েবের সঙ্গে ওনার যোগাযোগ ছিল। শাকিল ম্যানেজার হয়ে আসার পর একচেটিয়া প্রভাব নষ্ট হয়েছে। শাকিল শিক্ষিত অশিক্ষিত যুবকদের নিয়ে একটা সংগঠন করেছে। একটা লাইব্রেরীও করেছে। সেখানে গ্রামের অশিক্ষিত লোকদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতিদিন এশার নামাযের পর কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা ও ধর্মের অনুশীলন শিক্ষা দেয়া হয়। সন্ধ্যের পর হীরু সংগঠনের ছেলেদের আত্মরক্ষামূলক সব রকমের কলা কৌশল শিক্ষা দেয়। গ্রামের বিচারে আচারে সংগঠনের ছেলেদের সঙ্গে শাকিলও থাকে। সরকার থেকে যা কিছু সাহায্য আসে, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তা থেকে নিজেরা আর আত্মসাৎ করতে পারে না। সারা ইউনিয়নের ছোট বড় সকলের মুখে শুধু শাকিলের গুণগান। প্রথম দিকে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা সহ্য করতে না পেরে শাকিলকে খুন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ফজুর সতর্কতায় তা করে উঠতে পারে নি। তবু শাকিল বেশ আহত হয়েছিল। সুস্থ্য হবার পর শাকিল খুব বুদ্ধি করে ছদ্মবেশে খুনিদেরকে ডাকাতির প্রলোভন দেখিয়ে একদিন এক জায়গায় জমায়েত করে। তারপর ছদ্মবেশ খুলে বলল, এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কেন আপনাদেরকে এখানে জামায়েত করেছি। শাকিলকে চিনতে পেরে অনেকের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল। তাদের মধ্যে দু’তিন জন শাকিলকে আক্রমণ করার জন্য লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ফজু তৈরি ছিল। সেও তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে দু’হাতে দুটো পিস্তল নিয়ে তাদের দিকে তাক করে বলল, আর একটু নড়াচড়া করলে লাশ বানিয়ে ফেলব। শাকিল ফজুকে নরম মেজাজে ধমক দিয়ে পিস্তল নামিয়ে নিতে বলে তাদের বলল, আপনারা বসুন। এখানে মারামারি করার জন্যে আসিনি। তাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাকিল আবার বলল, কই বসুন। তারা বেগতিক দেখে বসে পড়ল। ফজুও পিস্তল দু’টো যথাস্থানে লুকিয়ে ফেলল। শাকিল বলল, আমরা সকলে মুসলমান। কুরআন হাদিসে আছে, এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। কুরআন হাদিস যদি বিশ্বাস করেন, তা হলে বলুন, এক ভাই কি আর এক ভাইকে খুন করতে পারে? হাদিসে আরো আছে, আমাদের নবী (দঃ) বলেছেন, “এক মুসলমান যদি অন্য মুসলমানকে খুন করে, তাহলে দু’জনেই জাহান্নামে যাবে। আপনাদেরকে আজ বলতেই হবে, আপনারা মুসলমান কিনা? এবং কুরআন হাদিস বিশ্বাস করেন কিনা? তাদেরকে চুপ করে থাকতে দেখে শাকিল কথাটা আবার বলল। খুনীরা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল। দু চার জন সেই অবস্থায় মাথা নেড়ে সায় দিল। শাকিল বলল, তা হলে আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞেস করে দেখুন, যা আগে করেছেন এবং এখন কেউ কেউ করতে যাচ্ছিলেন, সেটা ন্যায় না অন্যায়? যাদেরকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ জাতি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যারা শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত। তারা যদি সামান্য কটা টাকার জন্য মানুষ খুন করেন, তা হলে তাদের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে না কেন? আজ মুসলমানরা নিজেদের স্বার্থের জন্য আল্লাহ ও রসুলের (দঃ) বাণী ত্যাগ করে অন্যায় অবিচার, অত্যাচার, জুলুমের পথে ধেয়ে চলেছে, তাই তারা পৃথিবীতে যেমন ঘৃণিত, তেমনি অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত হচ্ছে। আপনারা গরিব। তাই বলে সামান্য টাকার জন্যে আল্লাহ ও রসুলের কথা অমান্য করে মানুষের কথায় আর একজন মানুষকে অন্যায় ভাবে খুন করবেন? আল্লাহর উপর ভরসা করে মেহনত করে হালাল রুজী রোজগারের চেষ্টা করুন। আল্লাহপাক অসীম দয়ালু। কোনো জীবকে তিনি না খাইয়ে রাখেন না। আপনাদের অভাব-অভিযোগ সুবিধে-অসুবিধে আমাকে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ আমি তা যতটা পারি দূর করার চেষ্টা করব। এখন আসুন আমরা আল্লাহ পাকের কাছে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করি। জামাতের সঙ্গে দোয়া চাইলে আল্লাহ কবুল করে থাকেন। তারপর তাদেরকে তওবা পড়িয়ে আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার বলল, আপনাদেরকে ইচ্ছা করলে আমি পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারতাম, কিন্তু করি নাই কেন শুনবেন? আপনারা গবির, খেটে খাওয়া মানুষ। আপনারা জেলে গেলে আপনাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে না খেয়ে থাকবে। তাদের অনেক কষ্ট হবে। তাই তা না করে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (দঃ) বাণী শুনিয়ে সৎপথে আনার চেষ্টা করলাম। আর এই রকম করতে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দঃ) বলেছেন। তাদের সেই হুকুম মানার চেষ্টা করলাম। এবার আপনাদের তকৃদ্বীর। তবে আপনারা যদি আবার এরকম কাজ করেন, তা হলে তখন আর ছেড়ে দেব না। এই ঘটনা তাদের মধ্যে দু’একজন চেয়ারম্যানের কাছে বলেছিল। তারপর থেকে চেয়ারম্যান খুব বুঝেসুঝে চলেন। এখন শালার ব্যাপারে শাকিলের ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথা শুনে খুব রেগে গেলেও সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে সামলে নিলেন। মনে মনে চিন্তা করলেন, সুযোগ পেলে তোমাকে ছেড়ে কথা কইব না।

চেয়ারম্যানের শালা মুজিব ফর্ম এনে ফিলাপ করতে গিয়ে ঘাবড়ে গেল। ফর্মে আছে নামায রোযা কর কিনা? সব কলেমা অর্থসহ জান কি না? দৈনিক কতটা সত্য মিথ্যা কথা বল, তার হিসাব। এ ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে; যা সে জানে না। আবার ফর্মের নিচে বিঃদ্রঃ দিয়ে লেখা আছে, যদি উপরের প্রশ্নগুলো আপনি না জানেন অথবা জেনেও অনুশীলন না করে থাকেন, তা হলে ইন্টারভিউ দেয়ার আগে সেই সব শিখতে হবে এবং তার অনুশীলনও করতে হবে।

ফর্মটা দুলাভাইয়ের হাতে দিয়ে বলল, পড়ে দেখুন, এতকিছু করতেও পারব না। আর চাকরিও আমার হবে না।

চেয়ারম্যান ফর্মটা একবার পড়ে শুধু হু বলে চুপ করে রইলেন। তিনি জানতেন এভাবে আপটুডেট শালার চাকরি হবে না। তাই শাকিলকে ধরেছিলাম। কিন্তু সে আমার কথা শুনল না। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, আমিও তাকে একদিন না একদিন দেখে নেব।

চৌধুরী সাহেবের কথায় শাকিল যে প্রতিষ্ঠান গড়েছে, সেখানে বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও আরবি এই চারটি ভাষা সমানভাগে শিক্ষা দেয়া হয়। এটাকে একটা নিউস্কীম মাদ্রাসা বলা যায়। তবে মাদ্রাসায় যেমন শুধু মুসলমান ছেলে মেয়ে পড়ে এবং মুসলমান শিক্ষক শিক্ষকতা করেন, এখানে তেমন না। হিন্দু ছাত্র ছাত্রীরাও পড়ে। আর দু। তিনজন হিন্দু শিক্ষকও আছেন। হিন্দু ছাত্রদের সংস্কৃত পড়াবার জন্য একজন পণ্ডিত মশাইও আছেন। প্রতিষ্ঠানটা প্রথমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়। এ বছর দশম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার জন্য কমিটির মেম্বারদের সঙ্গে শাকিলও চেষ্টা চরিত্র চালাচ্ছে। সেই ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য শাকিল ঢাকায় এল। ছোট বোনের বাসায় থেকে সে শিক্ষা বোর্ডে ছুটাছুটি করতে লাগল।

একদিন গুলজার বলল, চল আজ চিড়িয়াখানা দেখতে যাই। সেখানে আনিসা ছিল। স্বামীর কথা শুনে বলল, সেই কবে একবার দেখেছিলাম, আমিও যাব। তাদের এখনও কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। দুপুরে খেয়েদেয়ে জোহরের নামায পড়ে তিনজনে একটা বেবীটেক্সী করে চিড়িয়াখানা দেখতে গেল। দেখতে দেখতে তারা যখন বিলের ধারে একটা বেঞ্চে বসে অতিথি পাখি দেখছিল তখন গুলজার বলল, তোরা বসে গল্প কর, আমি ল্যাপটিন থেকে আসি।

শাকিল বলল, এখানে আসার প্রোগ্রাম তো সকালে হয়েছিল, দুপুরে কম করে খেতে পারলি না। খাবার সময় মুড়িঘণ্ট ভাল হয়েছে বলে পুরো হাড়ি সাফ করে দিলি। তুই সেই আগের মতো পেটুক রয়ে গেছিস।

আনিসা বলল, বল বল, আরো বল। জান ভাইয়া, যেদিন বিরানী বা মোরগ পোলাও হবে, সেদিন এত খাবে যে, ওকে বেশ কয়েকবার পায়খানায় দৌড়াতে হয়।

গুলজার চোখ পাকিয়ে স্ত্রীকে বলল, ভাইয়াকে পেয়ে সাহস খুব বেড়ে গেছে না? বাসায় গিয়ে মজা দেখাব।

শাকিল বলল, তোরও তো সাহস কম না? আমি থাকতে আমার বোনকে মজা দেখাবি। আমি তোকে মজা দেখাব। এখন যেথা যাচ্ছিস যা। দেরি করলে মুড়িঘণ্ট নিচের দিক থেকে বেরিয়ে কাপড় না খারাপ হয়ে যায়। কথা শেষ করে শাকিল হেসে উঠল। সেই সঙ্গে আনিসাও হাসতে লাগল।

তাদের হাসতে দেখে গুলজার রেগে মেগে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কারণ তখন তার পায়খানার বেগের খুব জোর হয়েছে। আমিও এই অপমানের শোধ তুলবো বলে পায়খানার দিকে দ্রুত হাঁটা দিল।

গুলজার চলে যাওয়ার পর শাকিল আনিসাকে স্কুল লাইফের বনভোজনের কথা বলে খুব হাসাহাসি করছিল। বনভোজনে খেতে খেতেই গুলজার কাপড় খারাপ করে ফেলেছিল। সেই কথা শুনে আনিসা হাসি চেপে রাখতে পারছিল না। শাকিল যত তাকে ধমকায়, আনিসা তত হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।

ঐ দিন শাকিলা চৈতীর জিদে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছে। জলহস্তি দেখে তারাও বিলে অতিথি পাখী দেখার জন্য সেদিকে আসতে আসতে ওদের দুজনের হাসি শুনে শাকিলা থমকে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকাতেই শাকিলকে চিনতে পারল। তখন আনিসা হেসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে, আর বারে বারে শাকিলের গায়ে ঢলে পড়ছে। শাকিল তাকে ধরে মিষ্টি ধমক দিয়ে হাদিসের কথা উল্লেখ করে বলছে, “আল্লাহ পাকের রসুল (দঃ) নারী পুরুষ সবাইকে জোরে হাসতে নিষেধ করেছেন। বেশী হাসলে দিলে আল্লাহ’র ভয় কমে যায়।” হাদিসের কথাগুলো শাকিলার কানে গেল না। সে তখন আনিসার দিকে লক্ষ্য করছে। মেয়েটা বোরখা পরে থাকলেও তার মুখ দেখে বুঝতে পারল, মেয়েটা অপূর্ব সুন্দরী যুবতী। তাকে ধরে শাকিলকে আদরের ধমক দিতে শুনে শাকিলার মন ঘৃণায় ভরে উঠল। তার প্রতি রাগও কম হল না।

বান্ধবী চৈতীও ঘটনাটা দেখছিল। বলল, ওদেরকে চিনিস নাকি?

শাকিলা বলল, ছেলেটাকে চিনি। চল আমরা অন্য দিকে যাই।

সেদিন বাড়িতে ফিরে শাকিলা শাকিলের কথা চিন্তা করতে লাগল। ছেলেটা সত্যি তা হলে চরিত্রহীন। শহরে এসে ফস্টি নষ্টি করে আর কর্মস্থলে বক ধার্মিক। মেহেরপুরে গিয়ে শাকিলের কার্যকলাপ ও গুণাগুন দেখে শুনে শাকিলার মন তার প্রতি যতটা না

নরম হয়েছিল, আজকের ঘটনা দেখে তার চেয়ে শতগুণ বেশি রাগ ও ঘৃণা জন্মাল। ভাবল, কোনোরকমে এক বছর পার করতে পারলেই বাছাধনকে মেহেরপুর স্টেট থেকে কুকুরের মত তাড়িয়ে দেব।

পরের দিন শাকিলা ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় যাদুঘরের গেটে শাকিলকে ও সেই মেয়েটিকে বেবী থেকে নামতে দেখে গেট থেকে একটু দূরে গাড়ি পার্ক করে তাদের দিকে লক্ষ্য রাখল।

শাকিল বেবী ভাড়া দিয়ে রীস্টওয়াচ দেখে বলল, গুলজার তো এখনও আসেনি। চল, আমরা ভিতরে যাই। অফিসের কাজের চাপে ওর হয়তো আসতে দেরি হবে। তারপর আনিসাকে নিয়ে যাদুঘরে ঢুকল।

আজ আনিসার জিদে শাকিল তাকে যাদুঘর দেখাতে নিয়ে এসেছে। গুলজারের সাথে কথা হয়েছে, সে অফিস থেকে এই সময়ে যাদুঘরের গেটে থাকবে।

ওরা নিচ তলা দেখে দোতালায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা উঠেছে, এমন সময় গুলজার যাদুঘরে ঢুকে তাদেরকে দেখতে পেয়ে শাকিল বলে ডাকল।

শাকিল ঘুরে গুলজারের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর ঘড়ির কাঁটা বুঝি আজ স্নো চলছে?

আনিসাও ঘুরে স্বামীর দিকে তাকাবার সময় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল।

ওপর থেকে শাকিল আর নিচ থেকে গুলজার ইন্নালিল্লাহে বলে তাড়াতাড়ি আনিসাকে ধরতে গেল। শাকিল আগে এসে আনিসাকে দুহাতে তুলে দাঁড় করাতে গিয়ে বুঝতে পারল, সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। শাকিল তাকে পাজাকোলা করে তুলে নিয়ে নিচে নেমে গুলজারকে বলল, তুই ধর, আমি গেট থেকে একটা বেবী নিয়ে আসি।

গুলজার আনিসাকে পাঁজাকোলা করে নিল। ততক্ষণ দর্শকরা কি হল ভাই কি হল বলে ভীড় জমিয়েছে। শাকিলাও এতক্ষণ তাদেরকে ফলো করছিল। মেয়েটাকে পড়ে যেতে সেও দেখেছে। শাকিল বেবী আনতে চলে যেতে এগিয়ে এসে গুলজারকে বলল, গেটে আমার গাড়ি আছে। ওখান পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন? তা না হলে দরজার কাছে দাঁড়ান, আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।

গুলজার ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, শাকিল বেবী আনতে গেছে। আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।

শাকিলা জিজ্ঞেস করল, এই মহিলা আপনার কে?

স্ত্রী।

আর যিনি বেবী আনতে গেলেন?

আমার স্ত্রীর বড় ভাই।

কথাটা শুনে শাকিলা চমকে উঠল। মনে মনে খুব লজ্জাও পেল। গতকাল থেকে কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত শাকীলের উপর যে রাগ ও ঘৃণা হয়েছিল, তা উড়ে গিয়ে তার মনে তখন অনুশোচনা হল। না জেনে শাকিলকে চরিত্রহীন ভাবা উচিত হয়নি। ওরা কথা বলতে বলতে দরজার কাছে চলে এসেছে। শাকিলকে বেবী নিয়ে আসতে দেখে শাকিলা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ল।

শাকিল বেবী থেকে নেমে দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে এসে বলল, তুই নিয়ে যেতে পারবি, আমাকে দিবি?

গুলজার বলল, তুই নে, আমি নার্ভাস ফিল করছি।

শাকিল আনিসাকে নিয়ে বেবীর কাছে এসে বলল, তুই উঠে বস। তারপর আনিসাকে বেবীতে বসিয়ে তাকে ধরে রাখতে বলে সে ড্রাইভারের পাশে বসে বলল, তাড়াতাড়ি মেডিকেলে চলুন।

মেডিকেলে ইমার্জেন্সীতে একজন মহিলা ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, ইনি মা হতে চলেছেন, তাই এ রকম হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই। একটু সাবধানে রাখবেন। তারপর একটা ইনজেকসান পুশ করে বললেন, একটু পরে জ্ঞান ফিরে আসবে। আর কোন ওষুধ পত্র লাগবে না।  

আনিসার জ্ঞান ফেরার পর বাসায় এসে শাকিল তাকে বলল, তোর বুদ্ধি শুদ্ধি এখনও হল না। এই সময় কাল চিড়িয়াখানায় গেলি, আবার আজ যাদুঘর দেখতে কোন সাহসে গেলি? তারপর গুলজারকে বলল, তুই একটা নীরেট গাধা। বাপ হতে যাচ্ছিস, সে খবর রাখতে পারিস না? ওর এখন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। ওকে আমি দেশে নিয়ে যাব।

ভাইয়ার কথা শুনে আনিসা খুব লজ্জা পেয়েছে। মাথা নিচু করে বলল, এখানে আমি তো কোনো ভারী কাজ করি না, কাজের মেয়েটাই সবকিছু করে। দেশে গেলে ওর খাওয়া দাওয়ার কষ্ট হবে। যখন অসুবিধে হবে তখন ওর সঙ্গে যাব।

শাকিল একটু রাগের সঙ্গে বলল, আমার কথা যখন শুনবি না তখন যা ইচ্ছা তাই কর। আম্মা শুনলে তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাইনি বলে আমাকেই বকাবকি করবে।  

গুলজার স্ত্রীকে বলল, শাকিলের সঙ্গে গিয়ে কয়েকদিন না হয় থেকে এস না। কাজের মেয়েটা তো রান্নাবান্না সবকিছু করতে পারে।

আনিসা বলল,না আমি যাব না। কাজের মেয়ের কথা যে বলছ, তার হাতের কিছু তুমি খাও?

শাকিল গুলজারকে বলল, তোদের ঝগড়া রাখ। এক কাজ কর, মাস খানেকের ছুটি নিয়ে দুজনে একসঙ্গে দেশ থেকে ঘুরে আয়।

গুলজার বলল, তাই করব।

শাকিল আরো দু’দিন থেকে আনিসাকে সাবধানে থাকতে বলে বাড়িতে এসে মা বাবাকে আনিসার কথা জানাল।

সুরাইয়া খাতুন বললেন, প্রথম অবস্থায় তিন চার মাস খুব সাবধানে থাকতে হয় তুই তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলি না কেন?  

শাকিল বলল, আমি তো আনতে চেয়েছিলাম, গুলজারের অসুবিধে হবে বলে তোমার মেয়ে এল না। গুলজারকে বলে এসেছি, সে যেন এক মাসের ছুটি নিয়ে আনিসাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে বেড়িয়ে যায়।

ঐদিন শাকিলা বাসায় এসে শাকিলের কথা অনেক চিন্তা করল। যতবার তার সঙ্গে কথাবার্তা এবং মেহেরপুরের ও চৌধুরী স্টেটের সমস্ত লোকজন তাকে যে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, সে সব গভীর ভাবে পর্যালোচনা করে ততবারই শাকিলার মনে হয়, শাকিল একটা মহৎ ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে শিশু একাডেমীর ঘটনাটা মনে পড়তে সন্দেহটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। হঠাৎ তার খেয়াল হল, চিড়িয়াখানার ঘটনার মত তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি তো? তখন তার শাকিলের একটা কথা মনে পড়ল-”আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ঘটনা ঘটতে দেখে সত্য বলে মনে করি, অনুসন্ধান করলে অনেক সময় তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। তাহলে শাকিল কি সেদিন ঐ ঘটনাকে উপলক্ষ করে বলেছিল। আর একবার মেহেরপুর গিয়ে তাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *