[ ৩০ ]
কোন একটী কুলে শীলে ধন্য সৎ পাত্রের সহিত এক জমীদারের বয়োপ্রাপ্তা কন্যার বিবাহ ঠিক হইয়াছিল। কি কারণে বরের পিতার সহিত কন্যাকর্ত্তার ঝগড়া হওয়ায় বিবাহের সম্বন্ধ ভাঙ্গিয়া গেল। ইহাতে পাত্রী যাহার পর নাই দুঃখিতা হইল।
কন্যার পিতা তাড়াতাড়ি অন্য বর না পাইয়া নিজের এক দুরাচার ভ্রাতুস্পুত্রের সহিত কন্যার বিবাহ দিতে বসিলেন। সে বেচারী তাহার খুড়তাতো ভাইয়ের কুকীর্ত্তির বিষয় সমস্তই অবগত ছিল,-কত দিন সে নিজেই ঐ মাতালটাকে তেঁতুলের শরবত খাওয়াইয়া এবং মাথায় জল ঢালিয়া তাহার মাতলামী দূর করিতে চেষ্টা করিয়াছে। সুতরাং এ বিবাহে তাহার ঘোর আপত্তি ছিল।
কিন্তু পাত্রী ত মূক,-তাহার বাকশক্তি থাকিয়াও নাই। তাহার একমাত্র সম্বল নীরব রোদন। তাই সে কেবল কাঁদিয়া চক্ষু ফুলাইয়াছে, আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়াছে। কিন্তু নিষ্ঠুর পিতামাতার ভ্রক্ষেপ নাই,-তাঁহারা ঐ মাতালের সহিত তাহার বিবাহ দিবেনই দিবেন। এইরূপেই আমাদের কাঠমোল্লা মুরুব্বিগণ শরিয়তের গলা টিপিয়া মারিয়া ইসলাম ও শরিয়ত রক্ষা করিতেছে।
বিবাহ-সভায় বসিয়া পাত্রী কিছুতেই “হুঁ” বলিতেছিল না। মাতা, পিতামহী প্রভৃতির অনুনয়, সাধ্য-সাধনা, মিষ্ট র্ভৎসনা,-সবই সে দুই চরে জলে ভাসাইয়া দিতেছিল। অবশেষে একজনে অতর্কিতে কন্যাকে খুব জোরে চিমটি কাটিল; সেই আঘাতে সহসা “উহু-!” বলিয়া সে কাতর ধ্বনি করিয়া উঠিল। সেই “উহু” কে “হুঁ” বলিয়া ধরিয়া লইয়া তাহার বিবাহ ক্রিয়া সমাপ্ত হইল। সোবহান আল্লাহ্! জয়, অবরোধের জয়!