[ ২০ ]
জনৈকা পাঞ্জাবী বেগম সাহেবা নিন্মলিখিত গল্প কোন উর্দ্দু কাগজে লিখিয়াছেনঃ
আমরা একটা গ্রামে কিছুকাল ছিলাম। একবার তত্রত্য কোন সম্ভ্রান্ত লোকের বাড়ীতে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে গিয়া কুমারী মেয়েদের প্রতি যে অত্যধিক জুলুম হইতে দেখিলাম, তাহাতে আমি প্রাণে বড় আঘাত পাইলাম।
আমরা যথাসময় তথায় পৌঁছিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, বাড়ীর মেয়েরা কোথায়? শুনিতে পাইলাম তাহারা সকলে রান্নাঘরে বসিয়া আছে। আমি তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহিলে, কেবল একা আমাকে সেইখানে ডাকিয়া লইয়া হইল। রান্নাঘরে ভয়ানক গরম, আর স্থানও অতিশয় অল্প। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখিয়া সেইখানে বসিয়া সেই “মজলুম” কিন্তু মিষ্টভাষিণী বালিকাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতে লাগিলাম।
একজন দয়াবতী বিবি আমাদের প্রতি কৃপাপরবশ হইয়া বলিলেন, “তোমরা সাবধানে লুকাইয়া উপরে চলিয়া যাও।”
আমি মনে করিলাম, সম্ভ্ববতঃ পুরুষমানুষদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাই সাবধানে লুকাইয়া যাইতে বলিলেন। কিন্তু পরে জানিলাম, এ পর্দ্দা সাধারণ অভ্যাগতা মহিলাদের বিরুদ্ধে ছিল। উক্ত বিবি সাহেবার হুকুমে দুইজন মেয়েমানুষ মোটা চাদর ধরিয়া পর্দ্দা করিল, আমরা সেই চাদরে অন্তরাল হইতে উপরে চলিয়া গেলাম।
উপরে গিয়া আমি আরও বিপদে পড়িলাম। আমি মনে করিয়াছিলাম, ছাদের উপর আরামে বসিবার কোন কামরা হইবে, অথবা কমপক্ষে বর্ষাতি চালা হইবে। কিন্তু সেখানে কিছুই ছিল না। একে ত প্রখর রৌদ্র, দ্বিতীয়তঃ বসিবারও কিছু ছিল না। সমস্ত ছাদ জুড়িয়া অর্দ্ধ শুষ্ক ঘুঁটে ছড়ান ছিল; তাহার দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত হইতেছিল। বহু কষ্টে একজন চাকরাণী একটা খাটিয়া আনিয়া দিল, আমরা অগত্যা তাহাতেই বসিলাম। নীচে বাজনা বাজিতেছিল, উৎসব হইতেছিল। কিন্তু অভাগিনী অনূঢ়া বালিকা কয়টি অপরাধিণীর ন্যায় রৌদ্রে বসিয়া ঘুঁটের দুর্গন্ধে হাঁপাইতেছিল। কেহই ইহাদের আরামের জন্য একটুকু খেয়াল করিতেছিল না।