অপহরণ-২.১১

এগারো

‘চলো দূতাবাসে যাই,’ বলল সারটভ। ‘ওরা তোমাকে ডেকেছে।

একদৃষ্টে সারটভের চেহারা দেখল পিকেরিং। কিছুই বোঝা গেল না, সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত তাই অনেক কিছু ফাঁস করে দেয়। অ্যাসাইনমেন্টের বারোটা বেজে গেছে, চরম ব্যর্থতা। শেষ চেষ্টা করে দেখা হয়েছে নিউআর্কে। যে-কোন সরকারের উঁচু মহলে সহিঞ্চুতা দুর্লভ একটা ব্যাপার; যাওবা একটু ছিল, ভাণ্ডার একেবারে খালি হয়ে গেছে মস্কোর।

না বোঝার ভান করল পিকেরিং। ‘কেন?’

‘জানি না,’ কাঁধ ঝাঁকাল সারটভ। ‘ওরা সম্ভবত তোমাকে বাড়িতে ফেরত পাঠাবে।’

বাড়ি? কোথায় সেটা? মস্কোয়? কৃÌসাগরের তীরে সাজানো একটা বাংলো? সুখস্বপ্ন, কিন্তু মিছে আশা। তাকে আর দরকার নেই মস্কোর। সে যা জানে সব তারা জেনে নেবে, সব বের করে নেবে নিংড়ে, তারপর ছিবড়ের মত ফেলে দেবে। কিংবা আরও খারাপ কিছু ঘটবে। বিশ্বাসঘাতকের মুখোশ উন্মোচিত হলে সে একটা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। একবার দল বদল করলে, আবারও সে তাই করতে পারে। না, পিকেরিঙের মনে কোন মিথ্যে আশা নেই। পরিচয় ফাঁস হওয়ার সাথে সাথে তার প্রয়োজন এবং মূল্য ফুরিয়েছে। অতীতের বিশ্বস্ততার জন্য বর্তমানের ঝুঁকিকে কেউ ছোট করে দেখে না। কে.জি.বি. তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না।

মাথা ঝাঁকাল পিকেরিং। ‘চলো। দাঁড়াও, ব্যাগটা গুছিয়ে নিই।’

নিউআর্কে ব্যর্থ হবার পর এই অ্যাপার্টমেন্টে এসে উঠেছে ওরা। নিউআর্ক থেকে চলে এসেছে ওয়াশিংটনে, পিকেরিঙের বাসা থেকে এই অ্যাপার্টমেণ্ট খুব বেশি দূরে নয়।

প্লেনে নেই জানার পর, বহু চেষ্টা করেছে কোথায় সে থাকতে পারে জানার জন্যে। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। রানার কোন খবর তারা সংগ্রহ করতে পারেনি।

এখন আর তাতে বিশেষ কিছু এসে যায় না।

অ্যাসাইনমেন্টটা সম্পর্কেও পিকেরিঙের কোন ভুল ধারণা নেই। মস্কোর সিদ্ধান্তই ঠিক, ওরা ব্যর্থ হয়েছে। অনেক দিন কোন যোগাযোগ নেই সি.আই.এ-র সাথে, এর কোন ব্যাখ্যা জেফ রিকার্ডকে দিতে পারবে না সে। এখন জেফ রিকার্ড শুধু সন্দেহ করছেন না, তিনি জানেন। না, তার আর ফিরে যাবার পথ নেই। ল্যাংলি এখন আর তার অফিসের ঠিকানা নয়। নয় দযেরঝিনস্কি স্কয়্যারও।

পাশের ঘরে চলে এল পিকেরিং। মনটা স্বভাবতই খারাপ। তাড়াহুড়ো করে কয়েকটা জিনিস সুটকেসে ভরে নিল সে। তারপর পিস্তলটা নিল।

ফিরে এসে পিকেরিং দেখল, চেয়ারে বসে একটা পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছে সারটভ। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সে, উঠে দাঁড়াতে গেল।

গুলি করল পিকেরিং।

বিস্মিত হবার সুযোগটাও পেল না সারটভ। দু’চোখের মাঝখানে ঢুকল বুলেটটা, মাথার পিছনটা বিস্ফোরিত করে দিয়ে বেরিয়ে গেল। বুলেটের ধাক্কায় আবার চেয়ারে বসে পড়ল সারটভ। বসেই মারা গেল লোকটা, কি ঘটেছে না বুঝেই।

ব্যাগটা তুলে নিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে এল পিকেরিং। কোথায় যাবে জানে না। কিন্তু জানে কি করতে হবে। অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে এখনও তার একমাত্র ভরসা টিউলিপ কনওয়ে। প্রেসিডেন্টের মেয়েকে জিম্মি রাখতে পারলে সে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনা চালাতে পারবে।

সে যা যা জানে, জেফ রিকার্ড সব জানতে চাইবে। কিন্তু টিউলিপ হাতে থাকলে আলোচনাটা হবে তার সুবিধেমত। জানতে চাও জানো সব, কিন্তু বিনিময়ে চাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমা এবং রাশিয়ার হিংস্রতা থেকে নিরাপদ আশ্রয়।

একজন জিম্মি দরকার তার। টিউলিপ কনওয়ে। কিন্তু টিউলিপকে পেতে হলে রানাকে পেতে হবে আগে। ইশ, কেন যে এই লোকটাকে বাছাই করেছিল সে!

.

ওভাল অফিসের বাইরে দাঁড়ানো সেক্রেটারির উদ্দেশে মাথা ঝাঁকালেন জেফ রিকার্ড। তারপর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। ডেস্কের পিছনে বসে আছেন রিচার্ড কনওয়ে। বন্ধুকে ঢুকতে দেখে মুখ তুলে তাকালেন তিনি।

জেফ রিকার্ড হ্যালো বললেন না। দরজার কাছ থেকে এগিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসলেন। ‘পামেলাকে ফোনে ডেকে পাঠাও,’ বললেন তিনি। ‘তোমাদের দু’জনের সাথেই আমার জরুরী কথা আছে।’

‘কি কথা?’ জিজ্ঞেস করলেন প্রেসিডেণ্ট।

‘একটা বুদ্ধি পেয়েছি,’ বললেন জেফ রিকার্ড। ‘রানাকে আটকাবার জন্যে ফাঁদ পাতব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *