• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র ১ – অনুবাদ : মাসরুর আরেফিন

লাইব্রেরি » ফ্রানজ কাফকা, মাসরুর আরেফিন » ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র ১ – অনুবাদ : মাসরুর আরেফিন
ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র ১

ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র ১ – প্রথম খণ্ড
জীবদ্দশায় প্রকাশিত লেখাসমূহ

.

ভূমিকা, অনুবাদ, পাঠ-পর্যালোচনা – মাসরুর আরেফিন

ভয়ংকর এক পৃথিবী আমি বয়ে চলেছি আমার মাথার মধ্যে। কিন্তু কী করে নিজেকে মুক্ত করব, কী করে মাথা ছিঁড়ে-ফেঁড়ে না ফেলে ঐ পৃথিবীকে ছাড়িয়ে আনব? আমার নিজের ভেতর ওগুলো ধরে রাখার কিংবা ওগুলোর কবর দেওয়ার চেয়ে বরং হাজার গুণ ভালো হয় মাথা ছিঁড়ে-কেটে টুকরো করে ফেলা। আসলে এজন্যই আমার পৃথিবীতে আসা, সে বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার।

– ফ্রানৎস কাফকা, ডায়েরি, ২১ জুন ১৯১৩

লেখক হিসেবে আমার নিয়তি কী হবে তা বলা খুব সোজা। নিজের স্বপ্নতুল্য অন্তর্জীবনের ছবি আঁকার আমার যে প্রতিভা তা আর অন্য সবকিছুই পেছনে ঠেলে দিয়েছে; আমার জীবন ভয়ংকর রকম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, আর এই ক্ষয় থামবেও না। অন্য কিছুই আর কোনো দিন আমাকে তৃপ্ত করতে পারবে না। কিন্তু সেই ছবি আঁকার জন্য আমার যে শক্তি তার ওপর ভরসা করা চলে না : সম্ভবত এরই মধ্যে সে শক্তি চিরতরে হারিয়ে গেছে, সম্ভবত আবার তা আমি ফিরে পাব, যদিও আমার জীবনের পরিস্থিতি সেটার অনুকূল নয়। তাই আমি টলতে থাকি, বিরামহীন উড়ে যাই পর্বতের চুড়ার দিকে, কিন্তু খানিক পরেই পড়ে যাই নিচে। অন্যরাও টলে, তবে পর্বতের নিচুর দিকে, আর আমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে; ওরা যদি পড়ে যাওয়ার মতো বিপদের মুখোমুখি হয়, ওদের ধরে ফেলে ওদের আত্মীয়স্বজন, যারা ওদের পাশে পাশে হাঁটে শুধু সেজন্যই। কিন্তু আমি টলি আর দুলি পর্বতের চূড়ার দিকে, উঁচুতে; এর নাম মৃত্যু নয়, মৃত্যুর অনন্ত যন্ত্রণা।

– ফ্রানৎস কাফকা, ডায়েরি, ৬ আগস্ট ১৯১৪

অনুবাদকের কথা

বাইশ বছর শেষে মুক্তি মিলল। ১৯৯০ সালে প্রথম কাফকা পড়া শুরু, তারপর ১৯৯৫ সালে এই একই পাঠক সমাবেশ থেকে বাংলায় ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র প্রকাশের শেষ ধাপে এসে থেমে যাওয়া, তার পরের সতেরোটি বছর আমার নিরলস ব্যক্তিগত কাফকা গবেষণা এবং আবার ২০১২ সালের জুনে এসে পুরোনো অনুবাদগুলো ফেলে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে অনুবাদে হাত দেওয়া, আবার পাঠক সমাবেশের সাহিদুল ইসলাম বিজুর সঙ্গে দুই খণ্ডের ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র ও কাফকার প্রধান উপন্যাস দুর্গর বাংলা অনুবাদ প্রকাশনার চুক্তি স্বাক্ষর –অনেক দীর্ঘ এক পথ।

ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্রর এই প্রথম খণ্ডে থাকছে কাফকার জীবদ্দশায় প্রকাশিত সব লেখা অর্থাৎ ম্যাক্স ব্রডকে কাফকা যে লেখাগুলো পুড়িয়ে ফেলতে বলেননি, বলেছিলেন– যেহেতু ওরা প্রকাশিত হয়েই গেছে– যেন ওগুলোর হাজার খানেক কপি যা বাজারে আছে, তা শেষ হয়ে গেলে কখনো আর পুনর্মুদ্রণ করা না হয়। আর দ্বিতীয় খণ্ডে থাকছে কাফকার মৃত্যুর পরে আলোর মুখ দেখা সব গল্প, প্যারাবল, প্রবচন ও গদ্য স্কেচ, যেগুলো (তার তিনটি উপন্যাস, অজস্র চিঠি ও ডায়েরিসহ) তিনি বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে পুড়িয়ে ফেলার স্পষ্ট আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। কাফকার এই অতি বিখ্যাত চিঠি দুটি সম্পূর্ণ তুলে ধরা হলো এই বইয়ের ভূমিকার আগে নিবন্ধের টীকা অংশে। যা-হোক, এ দুটি খণ্ড মিলে বাঙালি পাঠক পাচ্ছেন তিনটি উপন্যাস, চিঠি আর ডায়েরির বাইরের পুরো কাফকাকে; অন্যভাবে বললে, ফ্রানৎস কাফকার ‘বিখ্যাত লেখার (শুধু বিচার ও দুর্গ উপন্যাস ছাড়া) সবই। নিঃসন্দেহে বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের জন্য এবং কাফকার প্রাসঙ্গিকতা, প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় পুরো বাংলা সাহিত্যের জন্যই এ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

১৯৯৫ সালে, মাত্র একজনের অনুবাদে কাফকা পড়ে (উইলা এবং এডুইন মুইরের প্রশ্নবিদ্ধ অনুবাদ), মূল জার্মানের সঙ্গে একটুও না মিলিয়ে, আমার সেই পুরোনো তৎসম শব্দের আধিক্যে ভরপুর বাংলা গদ্যে ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র বের হলে যতটা ভুল হতো, আজ বুঝি তার চেয়েও বড় ভুল হতো কাফকা বিষয়ে তেমন কোনো পড়াশোনা ছাড়া ঐ কাজটি শেষ করে বসলে। পাঠকের কাফকা এবং অনুবাদকের কাফকা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে কাফকা উপভোগ করার জন্য পাঠকের কোনো পড়াশোনা বা পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন নেই; সমালোচক ফিলিপ রাহ যেমন বলেন : তাঁর সৃজনীশক্তির চরিত্রই এমন যে লেখার বাইরের কোনো জ্ঞান তা উপভোগের জন্য পূর্বশর্ত নয়। কিন্তু অনুবাদকের কাফকা? তাঁর লেখায় এত বেশি কিছুর পরোক্ষ-উল্লেখ (allusions), এত রূপক-প্রতীক (symbol ও metaphor– দুই অর্থেই), এত প্যারাডক্স থাকে যে সেসবের গোড়ায় না গেলে কাফকা-অনুবাদ ভুল হতে বাধ্য। ফ্রানৎস কাফকা, বোরহেসের মতোই, বিনা কারণে একটি বাক্যও লেখেননি কখনো; এবং তার অতি সহজ, সরল, স্বাভাবিক গদ্য আসলে একটা ধোকা মাত্র; পাঠক সেই ধোকার মধ্যে পড়লে হয়তো কাফকা পড়তে আরো মজা পাবেন, আরো চমৎকৃত হবেন, কিন্তু অনুবাদক সেই ধোঁকার আড়ালটা পর্দা সরিয়ে দেখে না নিলে নির্ঘাত ভুল অনুবাদ করে বসবেন। এ কারণেই আমি খুশি যে দীর্ঘ ২২ বছরের কাফকা-বিষয়ে পড়াশোনার পরই, জার্মান ভাষাও একটু আধটু বোঝার পরই, এবং স্রেফ ঠিকভাবে কাফকা অনুবাদের স্বার্থে তার শহর প্রাগের অলিগলি নিজ চোখে দেখে নিয়েই কেবল এ বই বের করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এই প্রথম খণ্ডটি এক অর্থে তুলনাহীন। কাফকার জীবদ্দশায় প্রকাশিত লেখাগুলোর এতখানি পূর্ণাঙ্গ কোনো সংস্করণ ইংরেজি ভাষাতে তো নেই-ই, অন্য কোনো ভাষায়ও আছে কি না সন্দেহ। অন্তত কোথাও, পূর্ণাঙ্গতার বিচারে, এই বাংলা প্রথম খণ্ডটির সঙ্গে তুলনীয় কোনো কাফকা গল্প সংকলনের উল্লেখ আমি আজও দেখিনি। এই বইয়ের সব গল্প আপনি ইংরেজিতে একসঙ্গে পাবেন সন্দেহ নেই, কিন্তু ম্যাক্স ব্রডের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা তাঁর উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়টি আপনি সেখানে পাবেন না; আবার সেটি যেখানে পাবেন সেখানে তাঁর ‘তিনটি সাহিত্য সমালোচনা’ পাবেন না; আবার মাত্র একটি ইংরেজি বইয়েই পাবেন তাঁর ‘বিরাট শোরগোল’ লেখাটি; এবং অধিকাংশ বইয়েই পাবেন না ‘ব্রেসসায় উড়োজাহাজ’-এর মতো চমৎকার ভ্রমণকাহিনিটি বা সেটার এই পূর্ণাঙ্গ রূপটি। সে-অর্থে আপনি ভাগ্যবান যে আজ পর্যন্ত কাফকার জীবদ্দশায় প্রকাশিত যত লেখার সন্ধান মিলেছে, তার পুরো একশো ভাগ লেখাই পাচ্ছেন এখানে, দুই মলাটের ভেতরে; সেই সঙ্গে থাকছে প্রতিটি লেখার প্রাসঙ্গিক জরুরি তথ্য ও ব্যাখ্যা।

অনুবাদের ক্ষেত্রেও আমার সেই ১৯৯৫ সালের উইলা ও এডুইন মুইরের অনুবাদকে আর প্রামাণ্য মানিনি আমি। কারণ, এরই মধ্যে অনেক পড়েছি যে মুইর দম্পতির বিখ্যাত অনুবাদগুলো আসলে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বুঝেছি যে কী কী কারণে তারা প্রশ্নবিদ্ধ। অনুবাদ করতে গিয়ে আমি এবার পাশাপাশি রেখেছি কাফকার সব কটি ইংরেজি অনুবাদ (উইলা ও এডুইন মুইরসহ) এবং প্রতিটি লাইনের অনুবাদের সময় সব কটি ইংরেজি অনুবাদ একযোগে পড়ে নিয়েই কেবল বাংলা করেছি; আর সেই সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে যখনই কোনো খটকা লেগেছে, তন্নতন্ন করে বাক্যটির বা শব্দটির ব্যাপারে খুঁজে নিয়েছি আমার সংগ্রহে থাকা ১০০-এরও ওপরের কাফকা-গবেষণা গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠা এবং পাশাপাশি দেখে নিয়েছি মূল জার্মান লাইনটিও (যদিও বিনয়ের সঙ্গে মানছি, আমার জার্মান জ্ঞান স্রেফ দীর্ঘ কয়েক বছরের কাফকা, রিকে ও সেবা পড়ার অভিজ্ঞতালব্ধ একধরনের ভাসা-ভাসা জ্ঞান মাত্র; এ ব্যাপারে আমার দীর্ঘদিনের নিত্যসঙ্গী এক বিশাল জার্মান-ইংরেজি ডিকশনারি আর ওই ভাষা নিয়ে লেখা এলেবেলে কিছু বই আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা)। এসব কারণেই, প্রকাশকের বিরক্তি ঘটিয়ে, দু বা তিন মাসের অনুবাদে আমার লেগে গেছে পাক্কা সাতটি মাস। তবে আমি খুশি যে এর ফলে বাঙালি পাঠক পাচ্ছেন এক অতি বিশ্বস্ত বাংলা ফ্রানৎস কাফকাকে। অনুবাদ-সাহিত্যবিষয়ক সব বিতর্ক মাথায় রেখেও আমি এখানে পাঠকের পাঠের আনন্দের ওপরে স্থান দিয়েছি কাফকার প্রতি আমার মহা খুঁতখুঁতে এক বিশ্বস্ততাকে, যার ফলে বাংলা পড়তে কোথাও কোথাও আপনার একটু খটকা লাগতে পারে বটে, কিন্তু আমি মনে করেছি, লেখকটি যেহেতু কাফকা, মো ইয়ান বা ভার্গাস য়োসা বা গার্সিয়া মার্কেস নন, সেহেতু তা-ই সই।

মোট ছয়টি ইংরেজি অনুবাদ থেকে প্রথম খণ্ডের এই লেখাগুলোর বাংলা করা হয়েছে, যেগুলো আমার অনুসরণের ক্রমানুসারে এমন: ১. স্যার ম্যালকম প্যালি (পেঙ্গুইন বুকস); ২. জয়েস ক্রিক (অক্সফোর্ড ওয়ার্ল্ডস্ ক্লাসিক); ৩. মাইকেল হফমান (পেঙ্গুইন মডার্ন ক্লাসিকস); ৪. জে এ আন্ডারউড (স্ফিয়ার বুকস্); ৫. নাহুম গ্ল্যাৎসার সম্পাদিত Franz Kafka –The Complete Stories-এর উইলা ও এডুইন মুইর এবং তানিয়া ও জেমস স্টার্ন; এবং ৬. কোনো কোনো গল্পের বেলায় আরনস্ট কাইজার ও এইখৃনে উইলকিনস্। পাঠকের জানার জন্য বলে রাখছি, ইংরেজিতে কাফকার গল্পগুলোর ক্ষেত্রে (উপন্যাস নয়) ম্যালকম প্যালির অনুবাদের চেয়ে আক্ষরিক ও বিশ্বস্ত কোনো অনুবাদ নেই; আর অন্যদিকে আন্ডারউডের চেয়ে বেশি পাঠযোগ্য, তরতরে কোনো ইংরেজি ভাষান্তর নেই। আমি, যেমনটা আগেই বলেছি, বিশ্বস্ততাকে রেখেছি পাঠযোগ্যতার ওপরে, তাই উপরের তালিকায় ম্যালকম প্যালির নামটিই রয়েছে সবার আগে। ওটাই প্রামাণ্য ধরে এগিয়েছি। মোটামুটি সব সময়। আর ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্রর দ্বিতীয় খণ্ডের কাজ, যেটি আকারে এই প্রথম খণ্ডটির চেয়েও কিছুটা বড়, এখনো শুরুই করিনি। আর এক মাস পর প্রথম খণ্ড বাজারে বেরিয়ে গেলেই কেবল ওটার কাজে হাত দেব, একই রকম পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে।

অনুবাদে কাফকার অদ্ভুত বিরামচিহ্নরীতি, যেমন ধরুন ড্যাশ বা হাইফেনের আগে কমা, যত দূর সম্ভব অপরিবর্তিত রাখা হলো, সব সময় চেষ্টা করা হলো মূল জার্মানের বিরামচিহ্ন অটুট রাখতে। কাফকার অদ্ভুতুড়ে বিরামচিহ্ন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে তার মানসিক অবস্থার ফ্রয়েডীয় বিশ্লেষণমূলক বইও আছে কয়েকটি। বাংলা গদ্যের নিয়ম মেনে যেখানে তা ভাঙতেই হয়েছে সেটুকু ছাড়া, আর কোনোখানেই কাফকার বিরামচিহ্নরীতি মানার সাহস দেখাইনি। কাফকার প্যারাগ্রাফিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই –এ ব্যাপারে আরো কঠোরভাবে এখানে মানা হয়েছে শুধু মূল জার্মানকে, কোনো ইংরেজি অনুবাদ নয়।

ফ্রানৎস কাফকার গদ্য যতটা সহজ-সরল ও স্পষ্ট, তার লেখার বিষয়বস্তু বা থিম ততটাই জটিল, অস্বচ্ছ, অনিশ্চিত ও ঘোরালো। প্রচুর মেটাফর (সোজা বাংলায় রূপকালংকার) উপস্থিত তাঁর লেখায় এবং মেটাফরিক্যাল প্যারাডক্সেরও কমিত নেই (যেমনটা তিনি ঠিক মৃত্যুর মিনিট খানেক আগে বলেছিলেন রবার্ট ক্লপস্টকে: ‘হয় আমাকে মেরে ফেলো, না হয় তুমি খুনি’)। মেটাফর তাঁর লেখায় অর্থের স্বচ্ছতা আনার বদলে এনেছে অর্থের মহা অনিশ্চয়তা। এ কারণেই আলব্যের কাম বলেন, কাফকার লেখার নিয়তি ও মহত্ত্ব এটাই যে, ‘It offers everything and confirms nothing’ (তুলে ধরে সবকিছুই, কিন্তু নিশ্চিত করে না কিছুই)। ওয়াল্টার বেনজামিন বলেছেন: ‘কাফকার দুর্লভ ক্ষমতা ছিল নিজের জন্যই প্যারাবল তৈরি করার…তিনি তার লেখার ব্যাখ্যা ঠেকানোর জন্য যত রকমের সাবধানতা অবলম্বন সম্ভব, তার সবই করে গেছেন। আপনাকে তার লেখার মধ্যে নিজের পথ করে নিতে হবে সাবধানে, সতর্কতা নিয়ে, আর সব দিকে খেয়াল রেখে।

এ কারণেই কাফকার লেখার অর্থ উদ্ধারের আশায় এত এত গবেষণা, আর এ কারণেই এ বইয়েরও এই দীর্ঘ এক শ পাতার উপরের পাঠ-পর্যালোচনা ও এমন বিশদ ভূমিকা। বোরহেসের মুখবন্ধটিও, বোরহেসের মতো মহান লেখকের লেখা বলে তো বটেই, পাঠককে কাফকা বুঝতে আরো সহায়তা করবে বলেই এ বইতে জুড়ে দেওয়া হলো। এখানে পাঠককে জানিয়ে রাখছি আলব্যের কার বিখ্যাত উক্তিটি: ফ্রানৎস কাফকার পুরো শিল্পই গঠিত হয়েছে পাঠককে পুনঃপাঠে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে। তার লেখার সমাপ্তি, বা সমাপ্তির অনুপস্থিতি, এমন সব ব্যাখ্যার ইঙ্গিত খাড়া করে, যা পরিষ্কার ভাষায় বিবৃত করা হয়নি, কিন্তু আপনার কাছে সে ব্যাখ্যা ন্যায্য বলে মনে হওয়ার আগেই আপনার দরকার হয়ে পড়বে লেখাটি, আবার একবার, অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে পড়ার।

গল্পগুলো পুনঃপুনঃ পাঠ করে বাঙালি পাঠক ‘বিশ শতকের এই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক’ (বলেছেন খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক জে. জি. ব্যালার্ড) এবং নিঃসন্দেহে সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখকের অন্ধকার, কৌতুকময় ও জটিল পৃথিবীতে প্রবেশ করে আনন্দলাভ করুন, এটুকুই প্রত্যাশা।

এবার আসি ধন্যবাদ দেওয়া ও ঋণ-স্বীকারে। প্রজেক্টটি যথেষ্ট বড়, আমি ঋণীও তাই অনেক মানুষের কাছে। প্রথমেই বলতে হয় নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা আমার ছোট ভাই মশিউর রহমান (বাবু)-এর কথা, আমাজন ডটকম থেকে ডেলিভারি নেওয়া অজস্র কাফকাগ্রন্থ এবং কাফকা-গবেষণাগ্রন্থ প্রথম গেছে যার ঠিকানায় এবং বারবারই কষ্ট করে যে বাংলাদেশের প্লেনে তুলে দিয়েছে সেগুলো; মশিউরের সাহায্য ছাড়া নিশ্চিত এ বইটির এই রূপ দাঁড়াত না। আরেকজন আমার ব্যাংকের সহকর্মী আমজাদ হোসেন, সে-ও আমেরিকা থেকে প্রায় ১৫টি কাফকা-গবেষণাগ্রন্থ এনে দিয়েছে আমাকে। এদের দুজনের ঋণ ভোলার নয়।

অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে প্রিয়তম কবিবন্ধু, বর্তমানে ইন্টারনেটে ব্যস্ত ব্লগার, ব্রাত্য রাইসুর নাম, যে আজ ২২টি বছর ধরেই চাচ্ছে আমার ফ্রানৎস কাফকা প্রজেক্ট শেষ হোক; আমার বাংলা গদ্যে স্বচ্ছতা আনার ব্যাপারে নানা উপদেশের জন্যও আমি রাইসুর কাছে ঋণী। এরপর আসে অনুবাদক, লেখক, প্রিয়বন্ধু রাজু আলাউদ্দিনের নাম; মোটামুটি রাইসুর মতো সে-ও আমাকে দীর্ঘ বছর ধরে প্রেরণা দিয়ে গেছে কাফকা অনুবাদে; আর তার বোরহেস অনুবাদও আমাকে অনেক সাহসী করেছে এই কাজে। রাজুর সঙ্গে বোরহেস ও কাফকা নিয়ে এত কথা, এত গল্প হয়েছে এবং তাঁর কাছ থেকে কাফকা সম্বন্ধে এমন কিছু অন্তদৃষ্টিও আমি পেয়েছি যে, সবকিছু মিলে তাঁর প্রতি আমার ঋণ সত্যিই উল্লেখযোগ্য।

আর কবি সাজ্জাদ শরিফ ২০১২ সালের মে-জুন মাসে আমাকে কাজটি শেষ করার জন্য তাড়া না দিলে এবং এই দীর্ঘ কয়েক বছরেও কাজটি শেষ না করার জন্য মাঝেমধ্যে খোটা না দিলে আমি নিঃসন্দেহে এ বছরও কাফকায় হাত দিতাম না। তাঁর প্রতিও আমার অনেক ঋণ। সত্য কথা বলতে, আমি জানি যে তিনি বিশ্বাস করেন আমি একজন সৎ ও ভালো অনুবাদক; আর তাঁর এই বিশ্বাস সম্বন্ধে আমার জ্ঞানটুকু আমার জন্য সব সময়ই কাজে লেগেছে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে। আরেকজন আছেন, অনুবাদক-গল্পকার ফারুক। মঈনউদ্দীন, অফিসে তার ঠিক পাশের রুমটিতেই আমি বসি। তাঁর মতো বিখ্যাত অনুবাদকের এত কাছাকাছি থেকে এবং আমার অনুবাদ নিয়ে তাঁর সব সময়ের স্পষ্ট প্রশংসা ও উৎসাহের পরে আমার পক্ষে আর সম্ভবই হয়ে ওঠেনি কাজটি শুরু ও শেষ না। করা। সাজ্জাদ ভাই ও ফারুক ভাইয়ের কাছে থাকল আমার সত্যিকারের ঋণ।

এ ছাড়া বলতে হয় প্রথম আলোর বন্ধু আলীম আজিজ ও সমকাল-এর বন্ধু মাহবুব আজীজের কথা –দুজনই কী সুন্দরভাবে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যার যার পত্রিকার সাহিত্য পাতায় আমার অনুবাদে ছেপেছিলেন কাফকার দুটি বিখ্যাত গল্প, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২-তে কাফকার রায়’ গল্প লেখার এক শ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছোট ভূমিকাসহ দারুণ ট্রিটমেন্ট দিয়ে। এ দুজনও আমাকে নিয়ত প্রেরণা দিয়ে গেছেন কাজটি শেষ করার জন্য। ধন্যবাদ এই দুই সাহিত্য সম্পাদককে। আরো একজনকে ধন্যবাদ– আমি যে-ব্যাংকে কাজ করি তার ব্র্যান্ড বিভাগের প্রধান নাজমুল করিম চৌধুরী; শিল্প সাহিত্যের বিরাট রসিক এই তরুণ তার অভাবনীয় মার্কেটিং বুদ্ধি দিয়ে এ বইয়ের বাজারজাতকরণের দিকটিতে আমাকে ও বইয়ের প্রকাশককে উল্লেখযোগ্য মেধা-সহায়তা করেছে।

আজ আমার মনে পড়ছে প্রয়াত লেখক ও মনীষী আহমদ ছফার কথা। ১৯৯৫ সালে যখন পাঠক সমাবেশ থেকেই বের হচ্ছে আমার ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র, তখন ছফা ভাই কী স্নেহে লম্বা একটি চিঠি লিখেছিলেন ঢাকার গ্যেয়টে ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টরকে, বইটি প্রকাশে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য। ছফা ভাই আজ আর নেই, কিন্তু চিঠিটি আমার কাছে আজও রয়ে গেছে –নিজের অনুবাদ নিয়ে নিঃসংশয় না থাকার কারণে তখন প্রজেক্টটি ন্ট থেকে সরে আসি বলে, যে চিঠি আমার আর কখনোই পৌঁছানো হয়নি প্রাপকের কাছে।

শেষে আসি প্রাগের বিখ্যাত ‘ফ্রানৎস কাফকা সোসাইটি’র দুজন মানুষের কথায় (আমি নিজেও এ মহাপ্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটির একজন সামান্য সদস্য) যারা আমাকে অনুপ্রেরণাই শুধু দেননি, নানা নির্দেশনা দিয়েও সাহায্য করেছেন। এঁদের প্রথমজন প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি মিজু জুজানো ভেনোরোভা (Zuzana Vernerova; সবাই ডাকে ‘জুজানো’ নামে; যেমন কাফকাকে চেক ভাষায় তারা ডাকে ‘কাফকে’ বা ‘কাফকি’ নামে)। কাফকা-বিষয়ে বিজ্ঞ এই মেয়েটি অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে আমার বইয়ের অসংখ্য চেক ও জার্মান শব্দের উচ্চারণ ঠিক করে দিয়েছে; আমার অনুবাদের বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক জায়গার দারুণ ব্যাখ্যা দিয়েছে; এবং তার অফিসে একদিন পুরো এক বেলার কাজ ফেলে রেখে আমার অনুবাদ বিষয়ে অজস্র আগে-থেকে-তৈরি-করে-নিয়ে-যাওয়া প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছে। অন্যজন ‘কাফকা সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিপার্টমেন্ট ও লাইব্রেরির প্রধান, জুজানো মেয়েটির বস, মিসেস ড্যানিয়েলা উহেরুকোভা (Daniela Uherkova), যিনি জুজানোকে কখনোই বাধা দেননি, বরং উৎসাহিত করে গেছেন আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে। ‘ফ্রানৎস কাফকা সোসাইটি’ প্রতীক্ষায় আছে বাংলায় ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্রর দুই খণ্ড ও দুর্গ উপন্যাসের প্রকাশ হওয়া নিয়ে, এ-ও আমার জন্য কম অনুপ্রেরণার বিষয় নয়।

শেষে আমার সহধর্মিণী ফারহানা মাসরুরের ধৈর্যের প্রশংসা না করে পারছি না। গত সাতটি মাস এই প্রজেক্ট আমাদের যৌথ সংসারের জীবনযাপনে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, আর সেটাই স্বাভাবিক। সমানে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাওয়া এবং আমার অলস মুহূর্তে অনুবাদের কাজে বসতে তাড়া দেওয়ার জন্য আমি তার কাছে নিঃসন্দেহে বড় রকমের ঋণী। ধন্যবাদ প্রাপ্য আমার দুই মেয়ে মালাগা ও নিওবি-রও, যারা গত সাতটি মাস তাদের বাবার সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হওয়া শিখেছে।

সবশেষে অসংখ্য ধন্যবাদ পাঠক সমাবেশের প্রকাশক, সাহিত্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু সাহিদুল ইসলাম বিজুকে, ২২টি বছর ধরে আমার কাজের প্রতি আস্থা ও ১৭টি বছর ধরে এ বইয়ের চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপির জন্য, একবারও আশা না ছেড়ে, অপেক্ষা করার কারণে। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ বইয়ের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জার কাজটি এত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিল্পী সেলিম আহমেদকে, যিনি কাজটি করেছেন তার নিখাদ কাফকা-প্রেম থেকেই।

বইয়ের ‘ভূমিকা’ ও ‘পাঠ-পর্যালোচনা’ অংশের জন্য কাফকা-বিষয়ক যে অনুবাদক ও গবেষকদের কাছে আমি ঋণী, তাদের নাম ওই দুই অংশের শেষে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করা হলো।

বইয়ের যেখানেই তৃতীয় বন্ধনী ([]) ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই বুঝে নিতে হবে যে, বন্ধনীর ভেতরের কথা, শব্দ বা বাক্যটি অনুবাদকের, সেটি মূল লেখার অংশ নয়।

ফ্রানৎস কাফকার বিশাল-বিচিত্র পৃথিবীতে আপনাকে স্বাগত।

মাসরুর আরেফিন
[email protected]
২৮ ডিসেম্বর, ২০১২, ঢাকা

Book Content

ফ্রানৎস কাফকা: খ্যাতি, প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা
দুটি কথোপকথন
ব্রেসসায় উড়োজাহাজ
প্রথম দীর্ঘ রেলভ্রমণ: ম্যাক্স ব্রড ও ফ্রানৎস কাফকা
বিরাট শোরগোল
ধেয়ান
রায়
দি স্টোকার
রূপান্তর
দণ্ড উপনিবেশে
এক গ্রাম্য ডাক্তার (কিছু ছোট কাহিনি)
কয়লা-বালতির সওয়ারি
এক অনশন-শিল্পী (চারটি গল্প)
পরিশিষ্ট : তিনটি সাহিত্য সমালোচনা – ফ্রানৎস কাফকা
লেখক: ফ্রানজ কাফকা, মাসরুর আরেফিনবইয়ের ধরন: অনুবাদ বই, গল্পগ্রন্থ / গল্পের বই
আগস্ট আবছায়া - মাসরুর আরেফিন 

আগস্ট আবছায়া – মাসরুর আরেফিন 

আড়িয়াল খাঁ - মাসরুর আরেফিন 

আড়িয়াল খাঁ – মাসরুর আরেফিন 

আলথুসার - মাসরুর আরেফিন (উপন্যাস)

আলথুসার – মাসরুর আরেফিন

রূপান্তর / দ্য মেটামরফসিস

দ্য মেটামরফসিস – ফ্রানজ কাফকা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.