নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার
প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০২০
প্রচ্ছদ : কামিল দাস
প্রচ্ছদ সহায়তা : কৌশিক মজুমদার
কৃতজ্ঞতা
অরুন্ধতী মজুমদার, ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী, তন্নিষ্ঠা মজুমদার, পুণ্যব্রত পত্রী, প্রদীপ গরাই, বিল্টু দে, মুহিত হাসান, রনিতা চট্টোপাধ্যায় ও শান্তনু চৌধুরী
.
আমার ভীষণভাবে মনে হয়, খাবার সমস্ত মানুষকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। মানে, খাবারের মতো লেভেলার বোধহয় পৃথিবীতে খুব কম আছে। প্রত্যেকটা মানুষ, সে ধনী হোক, দরিদ্র হোক, মাঝামাঝি হোক আমাদের মতো, নির্বিশেষে কিন্তু ভালো খাবার খেতে ভালোবাসে। আর ভালো খাবারই বা কেন বলব, খিদে পেলে ভালো খাবার, খারাপ খাবার, অ্যাভারেজ খাবার বা মোটামুটি খাবার, তাতে কী-ই বা এসে যায়! খাবারের গন্ধে নোলা লকলক করে না, এমন কিন্তু আমার এই মাঝবয়সি জীবনে আমি খুব একটা দেখিনি।
যাঁরা জানেন না, আমি একটা ফুডব্লগ-এ অল্পস্বল্প লেখালেখি করি। ওই সামান্য… গল্পের ছলে যেটুকু যা বলা যায়; এবং সমস্যাটা হচ্ছে, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে গিয়েই আমাকে আটকে যেতে হয় কিছু ডেটার জন্যে। ডেটা মানে কী?– খাবারের বিভিন্ন গল্প, খাবার সম্পর্কিত পড়াশোনা। এটা কীভাবে এল, ওটা কীভাবে এল, সেটা কীভাবে এল। এবার যখনই আমি আটকে যাই, তখনই কৌশিক হচ্ছে সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন, যার কাছে আমি একদম নির্দ্বিধায় ফোন করি। “কৌশিক, এটা কী হল?” “কৌশিক, ওটা কী হল?” আর হাসিমুখে মোটামুটি ভদ্রলোক সবকিছুর উত্তর দিয়েও দেন। কী করে এত সময় বের করেন তাঁর এই সাকসেসফুল গবেষণার মাঝামাঝি, আমি জানি না, কিন্তু সময়টা তিনি ঠিক বের করেন। হয় তিনি নিজে জানেন, নয় তিনি পড়াশোনা করে কোথাও থেকে একটা খবরটা খুঁজে বের করে আমাকে জানাবেন। এবার অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল যে খাবারের গল্প বা আমার ‘ফুডকাহিনি’-র পাশাপাশি এইরকম একটু পড়াশোনা নিয়ে নানা মজার গল্পের কোনও বই করা যায় কি না, যেখানে খাবার সম্পর্কিত পড়াশোনাগুলোকে সহজভাবে বলা হবে। আর তখনই কৌশিক হঠাৎ একদিন বলে বসল, “ইন্দ্রজিৎদা, আমি কিন্তু একটা বই লিখছি।“ খুব ভালো কথা! এইবার কৌশিক ছাড়ল দ্বিতীয় বোমাটি। “ইন্দ্রজিৎদা, সেই বইয়ের ভূমিকা কিন্তু তোমায় লিখতে হবে।“ মানে, খানিকক্ষণের জন্যে আমি বুঝতে পারিনি যে কৌশিকের মাথাটা কি শোকে-তাপে একদমই গেছে, নাকি আমার সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছে, সত্যিই বুঝতে পারিনি, বিশ্বাস করুন! এইবার হল মজাটা। কদিন পরে বুঝলাম, কৌশিক ব্যাপারটা ঠাট্টার ছলে নয়, সিরিয়াসলি বলেছে। আরে আমি যাঁর লেখা পড়ে নিজের লেখা লিখছি, আমি লিখব তাঁর বইয়ের ভূমিকা! এ পাগল না মাথা খারাপ? কিন্তু অবস্থা দেখুন। আমাকেই তো লিখতে হচ্ছে।
ধরুন আপনাদের যদি একটা সোজা প্রশ্ন করি যে, ব্রেকফাস্ট কাকে বলে? আপনারা জানেন, সকালবেলা খায়, ফাস্টকে ব্রেক করে, উপোস ভাঙে। আর ডিনার কখন খায়? সেটাও জানেন, যেটা রাত্তিরে খায়। কিন্তু যদি বলি, ডিনার কি সকালে খায়? ব্রেকফাস্টকে কি ডিনার বলা যায়? বা ডিনারকে কি ব্রেকফাস্ট বলা যায়? পাগল ভাবতেও পারেন, তেড়ে মারতে আসতেও পারেন। কিন্তু এই গল্পটায় তেড়ে মারতে আসাটা বোধহয় খুব একটা দোষের কিছু নয়। আর কৌশিকের এই সমগ্রটি, এই বইটা ঠিক সেই কাজটাই করবে। আমাদের মতো বহু লোককে, যারা খাবার নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে, সহজ ছলে লেখালেখি করে, কোথায় খাব সেটা বলে, এই বইটা কিন্তু আমাদের সেই গল্পগুলোই বলে কৌশিকের নিজস্ব অননুকরণীয় এক সহজ সরল স্টাইলে। ওর লেখার ভাষা নিয়ে বেশি কিছু বলারই নেই। এতগুলো বই বেস্টসেলার, ঝরঝরে ভাষা, সহজ কথাবার্তা, কিন্তু তথ্যসমৃদ্ধ। পড়ে দেখুন। ভূমিকা পড়ার পিছনে বেশি সময় নষ্ট করার থেকে আমার সবসময়েই মনে হয়, যে-কোনো ভালো খাবার নিয়ে লেখা পড়াটা অনেক বেশি দরকারি, অনেক পছন্দের বিষয় লোকের কাছে। বইটা পড়ুন আর পড়ে জানান যে আপনাদের এই ‘নোলা’ বইটা কেমন লাগল। কৌশিককে অশেষ শুভেচ্ছা জানাই ওর এই লেখার জন্যে, ওর বই বছর বছর বিভিন্ন সংস্করণে বের করুক। আমাদের আর-একটু সুবিধা হয়। এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি কম করতে হয়।
আর হ্যাঁ, আপনারা জানান পড়ে কেমন লাগল।
কলম ইতি।
ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী
Leave a Reply