• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন

লাইব্রেরি » আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন
আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কিভাবে নামাজ পড়তেন – আল্লামা হাফিয ইবনুল কায়্যিম

অনুবাদ ও সম্পাদনা – আবদুস শহীদ নাসিম
ইবুক নির্মাতা: মোঃ ইমরান
সৌজন্যে: ইসলামিক ইপাব ও মোবি ক্রিয়েটর টিম

.

ভূমিকা

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন:

(আরবি********************)

নিশ্চয়ই মু‘মিনদের জন্যে সালাত লিখে (ফরয করে) দেয়া হয়েছে, সময়ও নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। (সূরা ৪ আননিসা: ১০৩)

(আরবি*************)

নিশ্চত সফল হয়েছে সেসব মু‘মিন, যারা তাদের সালাত বিনয় ও একাগ্রতা অবলম্বন করে। (সূরা ২৩ আল মু‘মিন: ১-২)

(আরবি**************)

রসূল (মুহাম্মদ) তোমাদের যা কিছু প্রদান করে তোমরা তাই গ্রহণ করো; আর যা কিছু থেকে বিরত থাকতে বলে, সেগুলো থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রাখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা ৫৯ আল হাশর: ৭)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

(আরবি**********)

“তোমরা ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আদায় করতে দেখেছো আমাকে।” (সহীহ বুখারি, মুসনাদে আহমদ)

.

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম কে?

আল্লামা হাফিয ইবনুল কায়্যিম ইসলামি দুনিয়ার এক অত্যুজ্জ্বল দেদীপ্যমান নক্ষত্র। বহু বছর আগে তাঁর দৈহিক মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু ইসলামের জ্ঞানরাজ্যে তাঁর উত্সবাহী বিপুল অবদান তাঁকে সুরাইয়া সিতারার মতো সমুজ্জ্বল করে রেখেছে।

তাঁর জন্ম দামেস্কে। জন্মসাল ৬৯১ হিজরি।

ইসলামি ইলম ও আমলের দুনিয়ায় অসাধারণ উচ্চতার কারণে তাঁর যুগের লোকেরা তাঁকে তিনটি উপাধিতে ভূষিত করে:

১. ‘আল্লামা‘- বিদ্যাসাগর।

২. ‘শামসুদ্দীন‘- দীন ইসলামের সূর্য।

৩. ‘হাফিয‘- তিনি একাধারে কুরআন ও হাদিসের হাফিয ছিলেন। তাঁর মেধা ও স্মৃতিশক্তি ছিলো অনন্য।

তাঁর কুনিয়াহ ছিলো আবু আবদুল্লাহ। মূল নাম মুহাম্মদ ইবনে বকর ইবনে আইউব ইবনে সা’আদ। কিন্তু ‘আল্লামা ইবনুল কায়্যিম আল জাওযী নামে তিনি বিশ্বব্যাপী সমধিক পরিচিত।

ইবনুল কায়্যিম ছিলেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়র ছাত্র এবং স্বার্থক উত্তরসূরী। ইমাম ইবনে তাইমিয়া তো ‘শাইখুল ইমলাম’ অর্থাৎ ইসলামের শিক্ষক বা উস্তাদ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া সম্পর্কে বিখ্যাত বাক্যটি সকলেরই জানা ‘ইবনে তাইমিয়া যে হাদিস জানতেন না, সেটা হাদিস নয়।”

ইবনুল কায়্যিম ছিলেন তাঁর স্বার্থক শিষ্য। হাদিস শাস্ত্রে ইবনুল কায়্যিমের পান্ডিত্য ছিলো তাঁর উস্তাদেরই মতো। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিশ্লেষণ ও মতামতসমূহ মূলত ইবনুল কায়্যিমের মাধ্যমেই বেশি প্রচার ও প্রসারিত হয়েছে। ইবনুল কায়্যিম তাঁর গ্রন্থাবলীতে বার বারই বলেছেন ‘কা-লা শাইখুনা’ অর্থাৎ ‘আমাদের উস্তাদ- শাইখ বলেছেন’। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম ছিলেন একাধারে-

কুরআন ও হাদিসের হাফিয, সুন্নাতে রাসূলের শ্রেষ্ঠ পন্ডিত, শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, শ্রেষ্ঠ হাদিস বিশ্লেষক, শ্রেষ্ঠ সীরাত বিশ্লেষক, শ্রেষ্ঠ ফকীহ্ এবং সর্বোপরি তিনি ছিলেন মুজতাহিদে মতলক’ (স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ মুজতাহিদ)।

আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য ছিলো এই যে, তিনি ছিলেন কট্টর ও আপোসহীন সুন্নাতে রাসূলের অনুসারী। সুন্নাতে রাসূলের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও ছিলেন তিনি সর্বাগ্রে। তাঁর লেখা গ্রন্থাবলী এর উজ্জ্বল প্রমাণ। বিশেষ করে তাঁর লেখা মহান গ্রন্থ ‘যাদুল মা’আদ’ তো সুন্নাতে রাসূলের সোনালি স্মারক।

আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের অমর গ্রন্থাবলীর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো :

১. যাদুল মা’আদ (চার খন্ড)।

২. তাহযীব সুনানে আবু দাউদ ওয়া ইযাহু মুশকিলাতিহি।

৩. সফরুল হিজরাতাইন।

৪. মারাহিলুস সায়েরীন।

৫. আল কালিমুত তায়্যিব।

৬. যাদুল মুসাফিরীন।

৭. নকদিল মানকূল।

৮. ই’লামুল মু’ফীকীন আন রাব্বিল আলামীন (তিন খন্ড)।

৯. বাদায়েয়ুল ফাওয়ায়িদ (দুই খন্ড)।

১০. আস সাওয়ায়িকুল মুরসালা।

১১. হাদীউল আরওয়াহ ইলা বেলাদিল আফরাহ।

১২. নুযহাতুল মুশতাকীন।

১৩. আদ্দাউ ওয়াদ্দাওয়।

১৪. মিফতাহু দারিস সা’আদাহ্ (একটি বিশাল গ্রন্থ)।

১৫. গরীবুল উসলূব।

১৬. ইজতেমাউল জুয়ূশুল ইসলামিয়া।

১৭. কিতাবুত তুরুকুল হিকমাহ্।

১৮. ইদ্দাতুস সাবেরীন।

১৯. ইগাসাতুল লাহেফান।

২০. আত তিবয়ান ফী আকসামির কুরআন।

২১. কিতাবুর রূহ।

২২. আসসিরাতুল মুস্তাকীম।

২৩.আল ফাতহুল কুদসী।

২৪. আততুহফাতুল মাক্কীয়াহ।

২৫. আল ফাতাওয়া, ইত্যাদি।

২৬. জামউল ইফহাম।

সুন্নতে রসূলের কাড়াকড়ি অনুসরণ এবং বিদআতের বিরোধিতা করার কারণে আল্লামা ইবনুল কায়্যিমকে তাঁর উস্তাদ ইবনে তাইমিয়ার মতোই অনেক জেল-যুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

কাজি বুরহানুদ্দীন যরয়ী তার সম্পর্কে বলেছেন : আসমানের নিচে তাঁর চাইতে ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী লোক দেখা যায়নি।

সুন্নতে রসূলের বাস্তব নমুনা এই মহান জ্ঞানতাপস ৭৫১ হিজরির ১৩ রজব তারিখে ইহকাল ত্যাগ করেন।

.

এটি নামাযের উপর সেরা গ্রন্থ

রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে এই গ্রন্থটি তুলনাহীন- অনন্য এক সেরা গ্রন্থ।

এ বইটি মূলত আল্লামা হাফিয ইবনুল কায়্যিমের সীরাতে রসূল ও সুন্নতে রসূলের উপর লেখা সবচাইতে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সোনালি গ্রন্থ ‘যাদুল মা‘আদ এর ইবাদত অধ্যায়ের সালাত সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর সংকলন।

রসূলুল্লাহ (ﷺ) কিভাবে নামাযের জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন, কী পদ্ধতিতে নামায পড়েছেন, নামাযে কী পড়েছেন, নামাযের আরকান-আহকাম কিভাবে পালন করেছেন, ফরয নামায ছাড়া আর কিকি নামায, কতো রাকাত পড়েছেন?

-সেসবেরই এক বিশ্বস্ত ও প্রামাণিত বর্ণনা এ বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অজ্ঞাতার কারণে পরবর্তীকালের লোকেরা নামাযের এমন অনেক নিয়মই পালন করে না, যা রসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং করেছেন। আবার তারা নামাযের সাথে এমন অনেক নিয়মই জুড়ে নিয়েছে, যা রসূলুল্লাহ (ﷺ) করেননি। অথচ আল্লাহর রসূল (ﷺ) পরিস্কারভাবে বলে গেছেন: (আরবী************)

অর্থ : তোমরা ঠিক সেভাবে নামায পড়ো, যেভাবে পড়তে দেখেছো আমাকে। (সহীহ বুখারী, মুসনাদে আহমদ)

এতো গেলো রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিজের কথা। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই তো বলে দিয়েছেন : (আরবী**************)

অর্থ: হে নবী বলো তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসে থাকো, তবে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলেই আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন। (সূরা ৩ আলে ইমরান: ৩১)

আল কুরআনের অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (আরবী*********************)

অর্থ : আল্লাহর রসূল তোমাদের যা দিয়েছেন, তোমরা তাই মেনে চলো, আর তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হাশর: ৭)

এখন আমাদের কাছে একথা পরিস্কার হয়ে গেলো, সকল কাজেই আমাদেরকে আল্লাহর রসূলের অনুসরণ করতে হবে। তাঁকে মেনে চলতে হবে। তিনি যেসব বিধিবিধান ও নিয়মপদ্ধতি চালু করে গেছেন, সেগুলো অবশ্যি পালন করতে হবে।

নামায ইসলামের সেরা ইবাদত। নামায অবশ্যি সেভাবে পড়তে হবে, যেভাবে পড়েছেন স্বয়ং রসূলুল্লাহ (ﷺ)। তিনি পরিস্কার নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তিনি যেভাবে নামায পড়েছেন, তাঁর অনুসারীদেরকেও ঠিক সেভাবে নামায পড়তে হবে।

যারা সুন্নতে রসূল ও সাহাবায়ে কিরামের আছার সম্পর্কে অবগত আছেন, আজকাল তাঁরা মসজিদে গিয়ে বিস্মিত হন, এমনকি অজ্ঞ লোকদের তিরস্কারের শিকার হন। যেমন-

আমাদের দেশের ইমাম সাহেবানরা নামাযের সালাম ফিরানোর পর মুসল্লিগণকে সাথে নিয়ে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে অবশ্য জরুরী কাজ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। অথচ আল্লাহর রসূল (ﷺ) নামাযের সালাম ফিরানোর পর মুসল্লিগকে নিয়ে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করেছেন বলে প্রমাণ নেই।

ইমাম সাহেবগণের এ কাজের ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, এখন মুসল্লিগণ এ কাজকে নামাযের অংশ মনে করতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবস্থা এতোটা চরম আকার ধারণ করেছে যে, কোনো ইমাম যদি সালাম ফিরানোর পর মুসল্লিদের সাথে হাত উঠিয়ে মুনাজাত না করেন, তবে তার ইমামতি থাকবে না। আমাদের জানা মতে এ কারণে কিছু লোকের ইমামতি ছুটে গেছে। আবার অনেকেই এই কাজটা রসূলুল্লাহর সুন্নত নয় জেনেও করে যাচ্ছেন কেবল ইমামতি টিকিয়ে রাখার জন্যে।

ফলে ইমামরা কি নিজেদের কৃতকর্মের কারণে এক বিরাট ফিতনার মধ্যে বন্দী হয়ে পড়েননি?

আমরা বলবো, কোনো ইমাম যদি কখনো মুসল্লিগণকে নিয়ে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করেন, তবে তা নাজায়েয নয়। কিন্তু এটাকে নিয়মে পরিণত করা এবং প্রত্যেক নামাযের সাথে অপরিহার্য ও অবধারিত করে নেয়া সুন্নতে রসূলের পরিপন্থী। অতপর মুসল্লিদের বিরাগ ভাজন হবার ভয়ে একাজ ঠিক নয় জেনেও ছাড়তে না পারা নিজেদের মনগড়া রীতিকে শরীয়তের বিধানে পরিণত করার নামান্তর নয় কি?

এটা তো নামাযের মধ্যে একটা মনগড়া সংযোজন। অপর দিকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুতে যাবার সময় এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে রফে ইয়াদাইন করতেন। এমনটি দুই রাকাত পড়ে যখন দাঁড়াতেন তখনো রফে ইয়াদাইন করতেন বলে বর্ণনা আছে। এসব জায়গায় রফে ইয়াদাইন করা আল্লাহর রসূলের সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত সুন্নত। কিন্তু না জানার কারণে অনেক মুসল্লি তা করেন না। আবার অনেকে জেনেও তিরস্কারের ভয়ে করেননা। আবার কেউ করলে তাকে আহলে হাদিস উপাধি দেয়া হয়।

আরেকটি অজ্ঞতা বড়ই দু:খজনক। সেটা হলো, কেউ কেউ এ সুন্নত পালন না করার ক্ষেত্রে বাহানা হিসেবে বলেন, আমি হানাফী, আর হানাফী মাযহাবে রফে ইয়াদাইন নেই, সেজন্যে আমি তা করি না।”

-এটা ইসলামের মহান নিশানবরদার ইমাম আবু হানীফার প্রতি অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ পরিস্কার করে তাঁর মাযহাবের পরিচয় দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন: (আরবী*******************)

অর্থ: সহীহ হাদিস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব।[দেখুন: ইবনে আবেদীন রহ. এর আল হাশীয়া গ্রন্থ, ১ম খন্ড ৬৩ পৃ:]

ইমাম আবু হানীফা (রহ) এর এ বাণী থেকে প্রমাণিত হয়ে যায় যে, সহীহ ও প্রমাণিত হাদিস অনুসারে আমল করাটাই তাঁর মাযহাব।

সহীহ হাদিস পাওয়া গেলে, কথাটা বলার কারণ হলো, তাঁর সময় হাদিস ছিলো মানুষের মুখে মুখে, মানুষের স্মৃতিতে। তাঁর জীবদ্দশ পর্যন্ত হাদিসের গ্রন্থাবলী সংকলিত হয়নি। তাঁর ইনতিকালের পরেই হাদিসের। ইমামগণ বিভিন্ন দেশে ও শহলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাদিস সমূহ সংকলন ও যাচাই বাছাই করেছেন।

তিনি আশংকা করছিলেন, তাঁর যেসব হাদিস জানা আছে, তার বাইরেও হাদিস থেকে যেতে পারে। সেকারণেই তিনি একথা বলে গেছেন। আর বাস্তবেও তাঁর আশংকা ঠিক প্রমাণিত হয়েছে। হাদিসের ইমামগণ যখন সব অঞ্চল থেকে হাদিস সংগ্রহ ও যাচাই বাছাই করলেন, তখন দেখা গেলো, এমন বহু হাদিস সামনে চলে এসেছে, যেগুলো ইতোপূর্বে ইমাম আবু হানীফার শহর কুফায় পৌছেনি। [রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামায পড়ার পদ্ধতি সরাসরি হাদিস থেকে জানার জন্যে বিরাট বিরাট গ্রন্থ পড়তে না পারলেও অন্তত মিশকাত শরীফ সকলেরই পড়ে নেয়া উচিত।]

উপরোক্ত কথাটি ইমাম আবু হানীফা রহ. এর কথা হলেও ইমাম শাফেয়ী রহ. ও একই কথা বলে গেছেন। অন্যান্য ইমামগণের বক্তব্য এবং নীতিও ছিলো অনুরূপ। কুরআন-সুন্নাহই ছিলো তাঁদের সকল কর্মের ভিত্তি।

কুরআনের যেসব আয়াত এবং যেসব হাদিসের ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রয়োজন ছিলো, তাঁরা পূর্ণ ইখলাসের সাথে সেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করে গেছেন। তাঁদের বিভিন্নজনের ব্যাখ্যার কিছু তারতম্য হয়েছে বটে, কিন্তু তাঁদের কেউ নিজের ব্যাখ্যাকে চূড়ান্ত কিংবা একমাত্র ব্যাখ্যা বলেননি।

এছাড়া যেসব প্রাসংগিক বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, হাদিসও পাওয়া যায়নি, এমনকি সাহবায়ে কিরামের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি, সেসব বিষয়ে তাঁরা ইজতিহাদ করেছেন। সেসব বিষয়ে পূর্ণ ইখলাসের সাথে কুরআন-সুন্নাহর স্পীরিটের উপর কিয়াস করে তাঁরা নিজেদের মতামত পেশ করে গেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই যা উত্তম মনে করেছেন তার উপর মত দিয়ে গেছেন। তারা কেউই নিজের মতকে চূড়ান্ত ও অকাট্য মনে করেননি। বরং তাঁরা প্রত্যেকেই বলে গেছেন: “সহীহ হাদিস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব এবং সেক্ষেত্রে আমার প্রদত্ত মত ও ব্যাখ্যা বর্জনীয়।”

তাঁদের এই উদারতার কারনে তাঁদের হাতে গড়া ছাত্ররাও অনেক বিষয়ে তাঁদের সাথে ইখতিলাফ করে গেছেন। যেমন ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ছাত্র আবু ইউসুফ রহ. ও মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী রহ. অনেক বিষয়েই তাঁদের পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আবু হানীফা রহ. এর সাথে ইখতিলাফ করে গেছেন। ছাত্রদের এই ইখতিলাফের কারণে ইমামের মর্যাদা মোটেও কমেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।

সকল আলিমই একথা জানেন, ইমাম আবু হানীফার ছাত্ররা যেসব বিষয়ে তাঁর সাথে ইখতিলাফ (ভিন্নমত) করেছেন, সেই ভিন্নমতগুলোও ইমাম আবু হানীফার মাযহাব বলেই গণ্য হয়। এর কারণ হলো ইমামের সেই মহান বাণী. সহীহ হাদিস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব।”

তাই একথা স্বতসিদ্ধ যে, কোনো ব্যক্তি যদি সহীহ হাদিস পাওয়া গেলেও মাযহাবের দোহাই দিয়ে তা না মানেন এবং পালন না করেন, তবে তিনি প্রকারান্তরে মাযহাবের ইমামকেই অমান্য করেন।

বর্তমান কালে সামষ্টিকভাবে আমাদের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সঠিক জ্ঞানের অভাবে আমরা কুরআন-সুন্নাহকেও যথাযথ ভাবে অনুসরণ করতে পারছি না এবং মাযহাবের ইমামগণকেও যথারীতি মেনে চলতে পারছি না।

এবার ফিরে যাই এই বইয়ের প্রসংগে। আলহামদুলিল্লাহ। এ বইটি আমাদেরকে প্রমাণিত সুন্নত পদ্ধতিতে নামায পড়তে সাহায্য করবে। আর যখনই আমরা প্রকৃতপক্ষে সুন্নতে রসুলের অনুসরণ করতে পারবো, তখনই আমরা মাযহাবের ইমামগণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি এবং তাঁদেরকে অনুসরণ করছি বলে প্রমাণিত হবে।

আমরা এ গ্রন্থটি অনুবাদও করেছি, সম্পাদনাও করেছি। আগেই বলেছি, মূল গ্রন্থ যাদুল মা‘আদ থেকে নামায সংক্রান্ত অনুচ্ছেদুগুলো আমরা এখানে সংকলন করেছি। যাদুল মা‘আদ আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের এক অমর কীর্তি। এটি কেবল ফিকহের গ্রন্থ নয়, বরং এটি সীরাতে রসূল ও সুন্নাতে রসুলের গ্রন্থ।

এ গ্রন্থে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম সকল বিষয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শ ও সুন্নতকে উন্মুক্ত করে তুলে ধরেছেন। বিরোধপূর্ণ হাদিসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন, ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এবং সামাধান করেছেন। এমহান গ্রন্থ থেকে নামায সংক্রন্ত অনুচ্ছেদেগুলো সংকলন করতে গিয়ে আমরা কিছু কিছু সম্পাদনার কাজও করেছি। তাহলো:

১. শিরনাম উপশিরমান ব্যবহার করেছি।

২. তরতিব অর্থাৎ সাজানো পদ্ধতিকে আমরা নাড়াচাড়া করে কোনো কোনো বিষয়কে আগপাছ করেছি বর্তমান কালের পাঠকদের উপযোগী করার জন্যে।

৩. গ্রন্থকার বিভিন্ন হাদিসের বিশুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা যাচাই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাবীদের অবস্থা সম্পর্কে যে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, আমরা এ বইতে তা নিয়ে আসিনি, বরং তাঁর বিশ্লেষনের ফলাফলটাই নিয়ে এসেছি।

৪. বিভিন্ন বিষয়ের দীর্ঘ প্রাসংগিক আলোচনাকেও আমরা সংক্ষিপ্ত করে মূল কথাগুলো নিয়ে এসেছি।

৫. গ্রন্থকার নিজেই যেহেতু হাদিস ও ইলমে হাদিসের অথরিটি, সেজন্যে তিনি অনেক ক্ষেত্রেই হাদিসের সূত্র উল্লেখ করেননি। আমরা সর্বত্র নয়, কোনো কোনো স্থানে হাদিসের সূত্র উল্লেখ করে দিয়েছি।

৬. মূল গ্রন্থে টিকা-টিপ্পনী নেই। কোনো কোনো বিষয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে স্পষ্টতর করার জন্যে আমরা টিকা-টিপ্পনী ব্যবহার করেছি। (সুতরাং টিকা-টিপ্পনীতে কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে সেটার দায় দায়িত্ব আমার।)

৭. গোটা বইতে বিভিন্ন স্থানে আমরা কয়েকটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করেছি। অনুচ্ছেদগুলোতে কেবল হাদিসই উল্লেখ করা হয়েছে। আমার নিজের কোনো বক্তব্য তাতে নেই। যেসব অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে, সেগুলোতে টিকা দিয়ে সংযোজিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

-এভাবে আমরা এই মূল্যবান বইটিকে তার বিশুদ্ধতার সাথে সাথে সহজ, সরল, সুন্দর, সাবলীল, সুখপাঠ্য ও সর্বসাধারণ পাঠকের উপযোগী করার চেষ্টা করেছি।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ বই মুমিনদের জন্যে খুবই উপকারী প্রমাণিত হবে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) যেভাবে নামায পড়তেন, যারা ঠিক সেভাবে নামায পড়তে চান, এই বই তাঁদেরকে বড় উপকারী বন্ধুর কাজ দেবে। -এ বই রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নামাযের প্রতিচ্ছবি।

-এ বই তাদের জন্যে, যারা সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতো করে নামায পড়তে চান।

-এ বই ঐ লোকদের জন্যে, যাঁরা সুন্নতে রসূলকে আকঁড়ে ধরতে চান।

-যারা আল্লাহর রসূলের নামায পড়ার পদ্ধতি অনুসরণ করে মনের প্রশান্তি অর্জন করতে চান, এ বই তাদের জন্যে।

-এ বই তাঁদের জন্যে, যারা কুরআন-সুন্নাহকে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগি ও সার্বিক জীবনের মানদন্ড বানাতে চান।

-এ বই তাঁদের জন্যে, যারা নিজ নিজ মাযহাবের সেই মহান ইমামগণকে সত্যিকার অর্থে অনুসরণ করতে চান, যে ইমামগণ নিজেদের সমস্ত আমল ও মতামতের ভিত্তি বানিয়েছিলেন আল্লাহর কুরআন ও আল্লাহর রসূলে সুন্নতকে এবং অনুসারীদেরকেও তাই করতে বলে গেছেন।

শেষ করার আগে একটি ওযর পেশ করে নিচ্ছি। সেটা হলো, এ বইতে আমরা নামায শব্দ ব্যবহার করেছি, অথচ কুরআন-হাদিসের মূল শব্দ হলো সালাত। সালাত শব্দটিই আমাদের ব্যবহার করা উচিত ছিলো কিন্তু সালাতের পরিবর্তে নামায শব্দটি ব্যবহার করেছি সর্ব সাধারণ পাঠকগণের সুবিধার্থে। কারন বহু শতাব্দী থেকে এ শব্দটি বাংলা ভাষায় ও বাংলাভাষীগণের কাছে পরিচিত ও প্রচলিত। যেমন, আল্লাহ শব্দের জায়গায় খোদা শব্দটি পরিচিতি ও চালু হয়ে আছে। আমরা মনে করি বোল-চালের ক্ষেত্রে আল্লাহ‘ সালাত‘ প্রভৃতি এই মূল শব্দগুলো ব্যাপকভাবে চালু হয়ে যাওয়া দরকার। তখন বইপুস্তকেও সেগুলো চালু হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

এ বই লেখার সময় আমার বড় মেয়ে সাজেদা হোমায়রা হিমু বেশ কিছু অংশের ডিকটেশন লিখে দিয়ে আমার সহযোগিতা করেছে। আমি তার, বইয়ের প্রকাশকের এবং সকল পাঠক-পাঠিকার দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করছি।

আল্লাহ তাবারুক ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শিখানো পদ্ধতিতে নামায পড়ার তৌফিক দান করুন। আমাদের নামায পড়ার পদ্ধতি ভুল থাকলে তা সংশোধন করে আমরা যেনো সুন্নতে রসূলের অনুসারী হতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সেই সৌভগ্য দান করুন। আমীন।

আবদুস শহীদ নাসিম
২৮.০৭.২০০০ ঈসায়ী

Book Content

১. নামাযের জন্যে রসূলুল্লাহর পবিত্রতা অর্জন পদ্ধতি
২. রসূলুল্লাহ-এর নামায পড়ার পদ্ধতি
৩. জামাতে নামায
৪. রসূল ফরযের আগে-পরে যেসব নামায পড়তেন
৫. সফরের নামায
৬. জুমার নামায
৭. কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ নামায)
৮. বিতির নামায
৯. রসূলুল্লাহর অনিয়মিত নফল নামায সমূহ
১০. ইস্তিস্কা ও সূর্য গ্রহণের নামায
১১. দুই ঈদের নামায
১২. জানাযার নামায
বইয়ের ধরন: ইসলামিক বই

সমূহ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সাম্ভালা ট্রিলজি (অখন্ড)

সাম্ভালা ট্রিলজি (অখন্ড) – শরীফুল হাসান

ইহুদি প্রশ্নে - কার্ল মার্কস

ইহুদি প্রশ্নে – কার্ল মার্কস

আরণ্য – বুদ্ধদেব গুহ

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.