• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Bookmarks
  • My Account →
  • বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Bookmarks
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

প্লেটোর সংলাপ – সরদার ফজলুল করিম

লাইব্রেরি » প্লেটো, সরদার ফজলুল করিম » প্লেটোর সংলাপ – সরদার ফজলুল করিম
প্লেটোর সংলাপ - সরদার ফজলুল করিম

সূচিপত্র

  1. প্যাপিরাস সংস্করণের ভূমিকা
  2. পঞ্চম সংস্করণের মুখবন্ধ
  3. চতুর্থ সংস্করণের মুখবন্ধ
  4. তৃতীয় সংস্করণের মুখবন্ধ
  5. দ্বিতীয় সংস্করণের মুখবন্ধ
  6. অনুবাদকের কথা
  7. সূচিপত্র

প্লেটোর সংলাপ [সক্রেটিসের বিচার এবং মৃত্যুর কাহিনী সংবলিত]
সরদার ফজলুল করিম অনূদিত

এ কাহিনীকে যারা নিজেদের জীবনের অপরিহার্য এক সাথিত্বে পরিণত করে তুলেছেন এবং তুলবেন :
তাদের উদ্দেশে

প্যাপিরাস সংস্করণের ভূমিকা

‘প্লেটোর সংলাপ’ শিরোনামের গ্রন্থখানির বর্তমান সংস্করণটি ষষ্ঠ সংস্করণ। এটি প্রকাশ করছেন। প্যাপিরাস প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালে। হিসাব করে দেখলে, গ্রন্থখানির দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৩ সনে। প্রথমটি ১৯৬৪ সনে। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে। আমি তখন বাংলা একাডেমীর সংস্কৃতি বিভাগের একজন কর্মী। ১৯৭৩ সনের উল্লেখ যখন করি তখন বলতে হয়, স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশ। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা।

ব্যক্তিত্ব বলে একটি কথা আছে। একটি ক্রিয়াশীল অস্তিত্ব। তারও বয়স হয়। বয়স বৃদ্ধি পায়। সেদিক থেকে ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর বয়স এখন থেকে ত্রিশের অধিক। প্রায় চল্লিশ বছর।

এইকালে আমাদের এই মাতৃভূমিতে নানা যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সেসব ঘটনার সঙ্গে বিভিন্নভাবে আমিও মানসিকভাবে সম্পর্কিত হয়েছি। এই সম্পর্কের নানা স্মৃতি এবং আমার কিছু সার্থকতাবোধও আমার মনে জমেছে। আনন্দবোধও। আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাতে প্লেটো রচিত সক্রেটিসের বিচার এবং মৃত্যুর কাহিনীটিকে বেনজামিন জোয়েটের ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের হাতে পৌঁছে দেওয়ার আনন্দবোধ। এটি কেবল ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। বাংলা সাহিত্যেরও ব্যাপার। আন্তর্জাতিকভাবে প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের উচ্চারণ এরূপ যে : সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর যে-কাহিনী দার্শনিক প্লেটো অতুলনীয়ভাবে মানুষের জন্য রেখে গেছেন, তার আভাস ও পরিচয় অন্তত অনুবাদের মাধ্যমে, যে-ভাষা ও সাহিত্যে রক্ষিত নয়, সে ভাষা ও সাহিত্য সে-কারণে অধিকতর দরিদ্র। আমার সার্থকতা এবং আনন্দবোধ এই যে, আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের সর্বত্র, আমার শিক্ষকতার স্থানে যেটুকু সম্পর্ক তৈরির সৌভাগ্য ঘটেছে তার মাধ্যমে আমিও দেখেছি বুদ্ধি এবং বোধে দীপ্তিমান আমাদের ছাত্র-ছাত্রী এবং পাঠকবর্গ ‘প্লেটোর সংলাপ’ পাঠ করে আন্তরিক উদ্দীপনা বোধ করেছেন।

এতদিনে ‘প্লেটোর সংলাপ’ শিরোনামের সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী আমাদের বাংলা সাহিত্যে একটি নিজস্ব অস্তিত্ব তৈরি করেছে। আমাদের তরুণ নাট্যকারগণ নানা স্থানে এই মহৎ কাহিনীটিকে মঞ্চস্থ করে দর্শকবৃন্দকে উদ্দীপিত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের সে চেষ্টার সংবাদ আমাকেও অনুপ্রাণিত করেছে।

যে-কোনো মহৎ গ্রন্থেরও জীবন হিসাবে একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। প্লেটোর সংলাপ’ও সে সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে নয়। তথাপি একথাও সত্য যে, মানবজীবনের মহৎ ঐতিহ্যের ভাণ্ডারের কোনো মহৎ ঐতিহ্যেরই মৃত্যু ঘটে না। যুগ থেকে যুগান্তরের জীবন সংগ্রামের সৈনিকদের সে ঐতিহ্য উদ্দীপিত করে চলে।

আমার ব্যক্তিগত জীবনের সীমান্তের নিকটবর্তী হয়ে মৃত্যুহীন মহৎ ঐতিহ্যের সেই বোধে আমিও উদ্দীপিত বোধ করছি এবং আমাদের উত্তর প্রজন্মের হাতে মহৎ জীবনের মৃত্যুঞ্জয়ী বোধের বাহক হিসাবে ‘প্লেটোর সংলাপ’খানিকে তাদের হাতে আনন্দের সঙ্গে স্থাপন করে যাচ্ছি। ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর বর্তমান সংস্করণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কর্মীর কাছে আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা।

সরদার ফজলুল করিম
ফেব্রুয়ারি ২০০২

পঞ্চম সংস্করণের মুখবন্ধ

প্লেটো রচিত সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী এবং সাহিত্য হিসাবে বিশ্বসাহিত্যে এবং জ্ঞানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর এমন কোনো ভাষা ও সাহিত্য নেই, যে ভাষা ও সাহিত্যে অন্তত অনুবাদের মাধ্যমে এই কাহিনী তার অপরিহার্য অংশে পরিণত না হয়েছে। বাংলা একাডেমীকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ যে, তারা বিশ্বসাহিত্যের এই চিরায়ত কাহিনীর বাংলা অনুবাদটির পঞ্চম সংস্করণটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী’ পাঠক মাত্রকেই একটি মহৎ দর্শনবোধে উদ্বুদ্ধ করে। এমন বোধি পাঠকদের দাবিতেই সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী সংবলিত ‘প্লেটোর সংলাপ’ বারংবার পুনর্মুদ্রিত ও পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। এটি আমাদের বাংলা ভাষার জন্য একটি গর্বের বিষয়। আজকের এই ২০০০ সাল থেকে পেছনের দিকে তাকালে ১৯৬৪ সালে এই অনুবাদের প্রথম প্রকাশের স্মৃতি প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বের স্মৃতি। যথার্থভাবে তারও পূর্বের স্মৃতি। কারণ রাজবন্দি হিসাবে আমার দীর্ঘকালের কারাবাসের পরে ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমীতে তার একজন অনুপ্রাণিত কর্মী হিসাবে যোগদানের সময় থেকেই এই চিরায়ত সাহিত্যকর্মটির বাংলা অনুবাদ আমার সীমাবদ্ধ শক্তি দিয়ে সাধন করার সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছিলাম। আমার স্নেহভাজন ছাত্র-ছাত্রী এবং সুধী পাঠকবর্গের নিকট থেকে বিচিত্র সব ঘটনার মধ্য দিয়ে যে অনুপ্রেরণা আমি লাভ করে এসেছি তার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। এর মধ্যে একটি সার্থকতাবোধও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমার নিজের এমন একটি প্রত্যয় তৈরি হয়েছে যে, আমার অবর্তমানেও আমাদের অনাগত প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ তরুণী এবং পাঠকবর্গ প্লেটো রচিত ‘সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী’টিকে তাঁদের নিজেদের জীবনের এক অপরিহার্য সাথীতে পরিণত করে রাখবেন। এই সার্থকতাবোধের চাইতে বড় কোনো প্রাপ্তির কথা আমি চিন্তা করতে পারিনে। এমন চিন্তাই আমাকে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনের মৃত্যুঞ্জয়ী বিশ্বাসে আমাকে উদ্বুদ্ধ করে গেল।

‘প্লেটোর সংলাপ’-এর বর্তমান সংস্করণের মুদ্রণ এবং প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মী এবং সুহৃদদের প্রতি রইল আমার অপার প্রীতিবোধ এবং কৃতজ্ঞতা।

সরদার ফজলুল করিম
মার্চ ২০০০ সাল

চতুর্থ সংস্করণের মুখবন্ধ

আজ থেকে পঁচিশ বছরেরও পূর্বে ‘সক্রেটিসের জবানবন্দী’, ‘সক্রেটিসের কারাগমন’ এবং ‘সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড’ এবং আরো কয়েকখানি সংলাপ নিয়ে ‘প্লেটোর সংলাপ’ নামে আমার অনূদিত সংলাপ কয়টির বর্তমান চতুর্থ সংস্করণ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা নিবেদন করতে চাই।

এটি নিবেদন নয়। এটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ! আমার কৃতজ্ঞতা বাংলা ভাষার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষাব্রতী, সাহিত্যিক ও সুহৃদ সেই পাঠকবর্গের কাছে যাদের নিরন্তর তাগিদে ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর চতুর্থ সংস্করণটি প্রকাশিত হচ্ছে। আমার কৃতজ্ঞতা বাংলা একাডেমীর কর্তৃপক্ষ এবং প্রেস, প্রকাশনা ও মুদ্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমার স্নেহ-শ্রদ্ধার পাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে যারা যত্নসহকারে বইখানির চতুর্থ সংস্করণের মুদ্রণ ও প্রকাশনার কাজ সমাপ্ত করেছেন।

শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত এবং বিস্তারিত করার যে ব্রত নিয়ে বাংলা একাডেমী একদিন এ দেশের সংগ্রামী তরুণ প্রজন্মের রক্তাক্ত ভাষা-আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাদের সেই ব্রত পালনে বাংলা একাডেমীর আন্তরিকতার একটি প্রকাশ ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর চতুর্থ সংস্করণ মুদ্রণের মধ্যে যে প্রকাশিত হচ্ছে, সেটি পাঠকসাধারণ স্বীকার করবেন।

বিশ্বের জ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ দার্শনিক প্লেটো। সক্রেটিস যেমন ইতিহাসের, তেমনি প্লেটোর অমর এক সৃষ্টি। ‘সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী’ পৃথিবীর যে ভাষাতে অন্তত অনুবাদের মাধ্যমেও রক্ষিত নেই, সে ভাষা সেই কারণে সেই পরিমাণে যে দরিদ্র, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই অনুভূতি থেকেই আমি একদিন প্লেটোর রচিত এই কাহিনী ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনুবাদের আগ্রহ পোষণ করেছিলাম। আমার অক্ষমতার কথা আমি জানি। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা থেকে নিজেকে অব্যাহতি দানের অপরাধবোধই আমাকে এই অক্ষম কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল। প্রথম প্রকাশের পর থেকে সুহৃদ পাঠকবর্গের নিরন্তর আগ্রহ এবং উৎসাহের নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতার যে সাক্ষাৎ আমি বিগত পঁচিশ বছর যাবৎ লাভ করে এসেছি সেটি আমার অক্ষম জীবনবোধেও কিছুটা সার্থকতার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।

সেই সার্থকতার অনুভূতিটি প্রকাশের অধিক চতুর্থ সংস্করণের এই মুখবন্ধটিতে আর কিছু বলার নেই।

সরদার ফজলুল করিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডিসেম্বর ১৯৯২

তৃতীয় সংস্করণের মুখবন্ধ

‘প্লেটোর সংলাপ’ বাজারে নেই কেন তরুণ ছাত্র-ছাত্রী এবং সাহিত্যানুরাগী পাঠকদের এমন তাগিদ এবং প্রশ্নের জবাবে বাংলা একাডেমী যে ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করছে, এটি আনন্দের কথা। এবং এমন বই এর জন্য যে পাঠকবর্গ তাগিদ দিয়েছেন, বিরাজমান অন্ধকার এবং হতাশার মধ্যে সেই ঘটনাটি আমাদের জন্য অপরিসীম অনুপ্রেরণারও বিষয়।

এই প্রসঙ্গে ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর অনুবাদক হিসাবে ব্যক্তিগত জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা আজ আবশ্যক বোধ করছি।

কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা। ১৯৭৪ কিংবা ১৯৭৫ সাল। সাংসারিক বিষয়গত একটি ফর্ম ঢাকার একটি ব্যাঙ্কের কোনো একটি অফিসে পেশ করার জন্য হাজির হয়েছি। দেখলাম, দীর্ঘ লাইন পড়েছে একটি ফর্ম জমা দেবার জন্য। আমি তখনো অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সামনে যারা রয়েছেন তাদের ফর্ম ক্রমান্বয়ে জমা হচ্ছে। তার প্রয়োজনীয় সিলমোহরকরণ এবং রসিদ প্রদান চলছে। আস্তে আস্তে লাইন অগ্রসর হচ্ছে। আমি অগ্রসর হতে হতে কাউন্টার বা ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট ঘুলঘুলির প্রায় নিকটবর্তী হয়েছি। আশা হচ্ছে পরের ফর্মটিই আমার হবে এবং আমার ডাক পড়বে। একটু পরে যথার্থই আমার ডাক পড়ল। কাঁচের বেড়ার ওপাশ থেকে চেয়ারে বসা করনিক ভদ্রলোক সজোরে আমার নাম ধরে বার দুই ডাক দিলেন : সরদার ফজলুল করিম কে? কে সরদার ফজলুল করিম? ডাকটার মধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিকতা ছিল। অপর কারুর ব্যাপারে ইনি তো এমনভাবে ডাকেন নি। কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে কি? শঙ্কিত মনে জবাব দিলাম : আমি সরদার ফজলুল করিম। কেন কি হয়েছে? কাউন্টারের ওপাশ থেকে ভদ্রলোক সন্দেহমিশ্রিত সুরে আবার বললেন : আপনি সরদার ফজলুল করিম? এ ফর্ম আপনি দিয়েছেন? এ ফর্ম আপনার? আমি অধিকতর শঙ্কিতভাবে বললাম : হ্যাঁ, আমিই সরদার ফজলুল করিম। এ ফর্ম আমি জমা দিয়েছি। কিন্তু অসুবিধাটা কি?

এবং তারপরেই জবাব এল : আপনি ‘প্লেটোর সংলাপ’ লিখেছেন? সেই মুহূর্তটিতে আর যে কোনো জবাবই আমি প্রত্যাশা করি নি কেন, এমন জবাবটি আশা করি নি। এমন জবাবের কথা আমি কল্পনা করতে পারি নি।

এবার আমি সবিনয়ে বললাম : আমি তো লিখি নি। প্লেটোর রচনা। আমি অনুবাদ করেছি।

ব্যাঙ্ক কাউন্টারের একজন মধ্যবিত্ত কর্মচারী, সেই প্রশ্নকারী হাতের কলমটি মুহূর্তখানেক স্থির রেখে বললেন : খুব সুন্দর হয়েছে।

কর্মব্যস্ত লাইনে দাঁড়িয়ে কাঁচের বেড়ার ওপাশের সেই আগ্রহী পাঠকের ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর এমন সপ্রশংস উক্তির কোনো জবাব আমি দিতে পারি নি। তার সঙ্গে আর আমার সাক্ষাৎ ঘটে নি। পেছনের মানুষের চাপে কাউন্টারের কাজ সমাধা করে আমাকে সেদিন বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে প্লেটোর সংলাপ’ অনুবাদের যে সার্থকতা-বোধটি আমার মনে জেগেছিল তার সঙ্গে আর কোনো সার্থকতা বা প্রাপ্তির কোনো তুলনা চলে না।

প্লেটোর দর্শন ও সাহিত্য সৃষ্টির কিছু নমুনার এমন অনুবাদের সকল সীমাবদ্ধতা এবং ত্রুটি সত্ত্বেও এর প্রয়োজন এখানে যে বাংলাতে এই অনুবাদটি যদি নিষ্পন্ন না হতো তা হলে হয়তো এই বাঙালি পাঠকের কাছে প্লেটোর সাহিত্যসৃষ্টির কোনো নমুনা আদৌ পৌঁছতে পারত না। এবং তিনি এবং তার সমপর্যায়ের সংখ্যাহীন পাঠককে আমরা প্লেটোর অনুপম সৃষ্টির রসাস্বাদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখতাম। সেই পাঠকদের দাবিতেই ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর তৃতীয় সংস্করণের প্রকাশ সম্ভব হল। এমন আগ্রহী পাঠকদের কাছে আমার অপরিসীম কৃতজ্ঞতা।

সরদার ফজলুল করিম
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নভেম্বর ১৯৮২

দ্বিতীয় সংস্করণের মুখবন্ধ

প্রথম প্রকাশের প্রায় সাত বছর পর ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। একদিকে আমাদের ভাষা, শিক্ষা ও সাহিত্যক্ষেত্রে যেমন সংকট চলছে, তেমনি আবার ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর ন্যায় চিরায়ত সাহিত্যের পুনঃপ্রকাশের ন্যায় আনন্দ এবং উৎসাহজনক ঘটনাও, সংঘটিত হচ্ছে। এটি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। প্লেটোর রচনার স্বাদ অনুবাদের মাধ্যমে হলেও বাংলা ভাষার পাঠক সাধারণের কাছে পৌঁছে দেবার আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে একদিন প্লেটোর সংলাপের মধ্য থেকে কয়েকটি সংলাপ আমি অনুবাদ করেছিলাম। বাংলা একাডেমী তা প্রকাশ করেছিলেন। বিগত সাত বছরে জাতীয় জীবনে বিরাট রাজনীতিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তা লাভ করেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে বৈদেশিক বৈরী শক্তির বাধা আজ অপসারিত। আজ দেশের ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগীদের অকৃত্রিমতা এবং একনিষ্ঠতা প্রমাণের দায়িত্ব সমুপস্থিত। শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা আর আজ আর ঘোষণার অপেক্ষা রাখে না এবং এ ক্ষেত্রে ঘোষণামাত্রই আর যথেষ্ট নয়। বৈদেশিক কোনো ভাষায় শিক্ষাদানের কৃত্রিম অবস্থার অবসান আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এ দায়িত্ব সম্পাদনে যেমন মৌলিক সৃষ্টির আবশ্যকতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈদেশিক সকল ভাষা ও সাহিত্যের সম্পদকে অনুবাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাংলা ভাষার সম্পদের ভাণ্ডার অধিকতর সমৃদ্ধ করে ভোলা। বস্তুত এ চিন্তা কেবল যে রাষ্ট্রনায়কদের, তাই নয়। এ চিন্তা এবং দাবি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগীমাত্রের। এবং তারই প্রকাশ ঘটছে গরুত্বপূর্ণ সাহিত্য-সামগ্রীর ক্রমাধিক চাহিদার মধ্যে। বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ জাতীয় জীবনের এবং পাঠক সাধারণের এই চাহিদার বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে ‘প্লেটোর সংলাপ’-এর পুনঃপ্রকাশ করছেন। এজন্য তারা ধন্যবাদার্হ।

‘প্লেটোর সংলাপ’-এর প্রথম সংস্করণের প্লেটোর জীবন ও সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত আলোচনা থাকে নি। এটি একটি অসম্পূর্ণতার দিক। এক্ষেত্রে অনুবাদক এবং প্লেটোর রচনার পরিবেশনকারী হিসাবে আমার চিন্তা ছিল এরূপ যে, প্লেটোর রচনার প্রসাদগুণ এত গভীর যে অনুবাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ রচনা পাঠক সাধারণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। বস্তুত প্লেটোর রচনাকে আলোচনার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করার প্রয়োজন পড়ে না। অবশ্য প্লেটোর দার্শনিক এবং রাষ্ট্রনীতিক চিন্তার আলোচনা আবশ্যক।

প্লেটোর যে ছটি সংলাপ এই সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে তাদের মধ্যে প্লেটো-দর্শনের সবদিক যে উপস্তিত, এমন নয়। বস্তুত এ ছটি সংলাপের এবং বিশেষ করে এর প্রথম তিনটি অর্থাৎ সক্রেটিসের জবানবন্দি’, ‘ক্রিটো’ এবং ‘ফিডো’র প্রধান গুণ তার মনিহারী ঐতিহাসিক নাটকীয়তা। এর তিনটি সংলাপে যথাক্রমে সক্রেটিসের বিচার এবং তার জবানবন্দি, তার উপর মৃত্যুদত্রে আদেশ, কারাকক্ষে সক্রেটিসের দার্শনিক আলোচনা এবং হেমলক পানে তাঁর জীবনদানের বর্ণনা রয়েছে। শেষ তিনটি সংলাপে প্লেটো সক্রেটিসের মাধ্যমে নৈতিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করেছে। দার্শনিক প্রশ্নের দিক দিয়ে বর্তমান অনূদিত সংলাপই যে প্লেটোর একমাত্র কিংবা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনা, এমন নয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে একজন মহৎ ব্যক্তির ন্যায়-অন্যায় এবং আনুগত্য এবং বিরোধিতার যে প্রশ্ন প্লেটো এই সংলাপ কটিতে তার অতুলনীয় কাব্যময় গদ্যে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে উপস্থিত করেছেন তা বিশ্বসাহিত্যে একটি অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। এমন সম্পদের সংযোজন ব্যতীত যে-কোনো সাহিত্যই দরিদ্র থাকতে বাধ্য। এই চেতনা থেকেই প্লেটোর রচনার আভাসদানের প্রাথমিক পর্যায়ে এই কটি সংলাপকে সংকলনাকারে পেশ করেছিলেন।

যে-কোনো চিন্তানায়কের দর্শন এবং চিন্তার সঠিক মূল্যায়নের জন্য আমাদের স্থান ও কালের একটি প্রেক্ষিতে বোধ থাকা আবশ্যক। প্লেটোর সংলাপে যে রচনাশৈলীর গুণেই অমর হয়ে আছে তা নয়। প্লেটোর জীবনকাল খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৭ থেকে ৩৪৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্লেটোর শৈশব এবং কৈশোর কাটে স্পার্টার সঙ্গে এথেন্সের আত্মঘাতী পিলোপনেশীয় যুদ্ধের মধ্যে। এই যুদ্ধের মধ্যেই এথেন্স হৃতবল হয়ে পড়ে। তার পূর্বতন শৌর্যবীর্য তখন ক্ষয়প্রাপ্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নানা প্রশ্ন, সমস্যা এবং অস্থিরতা তখন আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। অভিজাত বংশের সন্তান প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের শিষ্য। পিলোপনেশীয় যুদ্ধে এথেন্সের পরাজয়ের পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে এথেন্সের শাসন-ব্যবস্থা সক্রেটিসকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিচারে সোপর্দ করে। সক্রেটিসের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল, সক্রেটিস কূটতার্কিক। সক্রেটিস রাষ্ট্রের তরুণ সম্প্রদায়ের মনে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র এবং সমাজ-ব্যবস্থা সম্পর্কে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং অশ্রদ্ধার ভাব সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। সক্রেটিস তরুণদের মনে ন্যায় কাকে বলে, অন্যায় কী, এরূপ মৌলিক প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছেন। সক্রেটিস ভণ্ড জ্ঞানীর মুখোশ খুলে দিচ্ছেন। সক্রেটিসের নিজের ভাষায় : “রাষ্ট্ররূপ মন্থরগতি অশ্বের জন্য আমি হচ্ছি বিধিদত্ত একটি উঁশ পোকা।” এই সমস্ত অভিযোগের বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। সক্রেটিস স্বর্গ-মর্তের কোনো সমস্যা নিয়ে আর আলোচনা করবেন না, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তুলবেন না, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিচারকের কাছ থেকে তিনি মুক্তি লাভ করতে পারতেন। এমনকি অনুসারীদের সহায়তায় কারাগার থেকে তিনি পলায়ন করতে পারতেন। কিন্তু একদিকে যেমন নিজের বিবেককে মিথ্যার নিকট তিনি বিক্রয় করতে চান নি, তেমনি আবার রাষ্ট্র অধম এবং মিথ্যাচারী লোকদের করায়ত্ত হলেও রাষ্ট্রের নিয়ম নীতি, দণ্ডদান এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতেও সক্রেটিস অস্বীকার করেছেন। অন্যায় আইনের তিনি প্রতিবাদ করেছেন, তার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি “আইন ভঙ্গকারী” হতে চান নি। এরূপ সিদ্ধান্তের মধ্যে সক্রেটিসের জীবনদর্শন প্রকাশিত হয়েছে। সক্রেটিসের দর্শন সক্রেটিসের কোনো রচনায় পাওয়া যায় না। তার নিজের কোনো রচনার কথা জানা যায় না। তিনি ঘরে বসে লেখার চেয়ে রাস্তার ধারে কিংবা বাজারে লোক জড়ো করে তাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের পরিক্রমায় জীবন ও জগতের সমস্যার বিচার করাতে অধিক আনন্দ পেতেন এবং একেই সত্য লাভের প্রকৃষ্ট পন্থা বলে বিবেচনা করতেন। কিন্তু প্লেটো সক্রেটিসকে নায়ক করে প্রশ্নোত্তরের দ্বান্দ্বিক রীতিতে বিপুল সংখ্যক দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করেন। এই সমস্ত গ্রন্থের মধ্যে রিপাবলিক, লজ, এ্যাপোলজি বা জবানবন্দি, ক্রিটো, ফিঙে, পারমিনাইডিস, সিম্পোজিয়াম, থিটিটাস, স্টেটসম্যান প্রভৃতি সংলাপের নাম বিশেষভাবে খ্যাত। প্লেটোর পূর্বগামী গ্রিক দার্শনিকদের দর্শন ছিল প্রধানত প্রকৃতিনির্ভর এবং বস্তুবাদী। সে দর্শনে বস্তুর সত্যতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করা হয় নি। কিন্তু প্লেটো তার পূর্বগামী দার্শনিকদের বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকে সমালোচনা করে জীবন ও জগতের ভাববাদী ব্যাখ্যা তৈরি করেন।

গ্রিসের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল দাস এবং অপরাপর শ্রমজীবী মানুষের শোষণ। এথেন্স নগররাষ্ট্রের অধিবাসীদের অর্ধাংশের অধিক ছিল দাস। অপরদেশের বাণিজ্য-জাহাজ আক্রমণ এবং লুণ্ঠন করে, এবং অপর নগররাষ্ট্র আক্রমণ করে তার অধিবাসীদের বন্দি করে দাস করা হত। দাসদের কোনো নাগরিক অধিকার ছিল না। তাদের নাগরিক বলে গণ্য করা হত না। প্লেটো ছিলেন অভিজাত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তাঁর ‘লজ বা বিধান এবং রিপাবলিক’ নামক গ্রন্থে তিনি যে আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করেছেন তার ভিত্তিও তাই নিম্নতর শ্রেণীর শ্রম। রাষ্ট্রের শাসক হবে যারা জ্ঞানী, যারা দার্শনিক। তার রক্ষক হবে সৈন্যবাহিনী ও দার্শনিক এবং সৈন্যবাহিনী এরাই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সত্তার অধিকার ভোগকারী স্বাধীন নাগরিক। এদের নিচে অবস্থান হচ্ছে শ্রমজীবী কারিগরদের, উৎপাদকদের। তারা শ্রম করে শাসক-দার্শনিক এবং রাষ্ট্রের রক্ষক সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করবে, তাদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করবে! শাসক দার্শনিকদের কোনো ব্যক্তিগত পরিবার বা সম্পত্তি থাকবে না। কিন্তু তাই বলে তাদের কোনো কিছুর অভাব থাকবে না। অভাবহীন অবকাশে তারা শাসনের দক্ষতা আয়ত্ত করবে। কারণ ‘শাসন’ হচ্ছে অপরাপর কৌশলের ন্যায় একটি কৌশল। জুতা সেলাই একটি কৌশল বা শিল্প। তাকে শিক্ষা করে আয়ত্ত করতে হয়। যে, সে কৌশল আয়ত্ত করতে পারে না। তেমনি যে রাষ্ট্রশাসনের শিল্পকে শিক্ষার মাধ্যমে আয়ত্ত না করেছে সে রাষ্ট্রশাসনে অক্ষম। রাষ্ট্রশাসনের ক্ষমতা তাই সকলের নয়। কেবল শাসনে দক্ষ যারা তাদের। দার্শনিকগণ রাষ্ট্রশাসনে সবচেয়ে দক্ষ। তারা সবচেয়ে জ্ঞানী। তারাই শাসন-ক্ষমতার একমাত্র যোগ্য অধিকারী। শিশুকাল থেকে রাষ্ট্র এক সার্বিক শিক্ষার মাধ্যমে শাসক হওয়ার উপযুক্ত নাগরিককে বাছাই করবে এবং পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং সর্বোচ্চ দর্শন শিক্ষাদানের মাধ্যমে দার্শনিক-শাসককে তৈরি করবে। প্লেটোর ভাববাদী দর্শন এবং রাষ্ট্রতত্ত্ব

উভয়ই পরবর্তীকালে চিন্তার বিকাশে বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছে। প্লেটো রাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অভিজাততন্ত্রকে সমর্থন করেছেন। তৎকালীন এথেন্সের গণতন্ত্রকে তিনি বক্তৃতাবাগীশদের দ্বারা পরিচালিত আবেগপ্রবণ জনতার নীতিহীন ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্লেটোর রাষ্ট্রীয় তত্ত্ব গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় এটা আজ বড় কথা নয়। প্লেটোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁর চিন্তার বিপুলতা। তার রচনায় তৎকালীন গ্রিক-সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সকল সমস্যার আলোচনাই স্থান লাভ করেছে। সে-সব সমস্যার সমাধান সর্বকালীন নয়। এমনকি তার নিজের জীবনকালেও তাঁর সব সমাধান গৃহীত বা প্রযোজ্য হয় নি। তাঁর আদর্শ দার্শনিক, শাসক হন নি। কিংবা বাস্তবভাবে চেষ্টা করেও তিনি কোনো শাসককে আদর্শ দার্শনিকে রূপান্তরিত করতে পারেন নি। কিন্তু এটা প্রধান নয়। প্রধান হচ্ছে মানুষের রাষ্ট্র এবং সমাজের মূল সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারা। প্লেটো তা পেরেছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মানুষের অধিক সংখ্যক সমস্যার মধ্যেই চিরন্তনতার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। মূলগতভাবে প্রায় আড়াই হাজার বৎসর পূর্বে প্লেটো মানুষের যেসব সমস্যার উল্লেখ করেছেন আজকের মানুষেরও সেই সমস্যা। আজ নতুনতর সমাজ-ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ তার সমস্যা সমাধানের নতুনতর চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চেষ্টার ক্ষেত্রেও অতীত যুগের মানুষের জীবনের সমস্যা এবং তার সমাধান প্রচেষ্টার পরিচয় আবশ্যক। প্লেটোর রচনার মধ্যে আমরা অতীত কালের এক সুবিকশিত নগররাষ্ট্রের সমস্যা ও তার সমাধান প্রচেষ্টার পরিচয় পাই। এ দিক থেকে প্লেটোর রচনার মূল্য তার শিল্পগত সৌকর্যের বাইরেও আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রে অপরিসীম।

সরদার ফজলুল করিম
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫ জুন ১৯৭৩

অনুবাদকের কথা

কোনো সাহিত্যকর্মকে ভাষান্তরিত করে হুবহু উপস্থিত করা যে-কোনো ভাষা এবং ভাষাবিদের পক্ষে দুরূহ। প্লেটোর সংলাপ বা ‘ডায়ালগসমূহ শুধু দর্শন নয়, উচ্চাঙ্গ সাহিত্যকর্মেরও নিদর্শন। তথাপি প্লেটোর সাথে আমাদের পরিচয় সাক্ষাৎ নয়, ইংরেজি কর্মেরই মাধ্যমে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজ অধ্যাপক বেনজামিন জোয়েট প্লেটোর সমগ্র ‘ডায়ালগ’কেই অনুবাদ করে ইংরেজি সাহিত্যে পেশ করেন। সে অনুবাদ উচ্চ সাহিত্যকর্ম হিসাবে আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।

আক্ষরিক অনুবাদ দ্বারা কোনো সাহিত্যকর্ম সৃষ্টিকেই অপর ভাষার পাঠকবৃন্দের নিকট উপস্থিত করা চলে না। আক্ষরিক অনুবাদে মূল রচনার শব্দগত অর্থ ঠিক থাকলেও, অনেক সময়ে তার প্রকৃত অর্থ বিকৃত হয়ে যায় এবং তার প্রাঞ্জলতা লোপ পেয়ে উচ্চাঙ্গের সৃষ্টিও পাঠের অযোগ্য এবং বোধের অগম্য হয়ে দাঁড়ায়। অধ্যাপক জোয়েট মূল গ্রিককে অনুসরণ করলেও তিনি যে আক্ষরিক অনুবাদ করেন নি একথা তার বিভিন্ন পাদটীকা ও ব্যাখ্যাতে বুঝা যায়। তিনি মূল বিষয়ের অর্থ, ইংরেজি ভাষায় প্রকাশের প্রাঞ্জলতার উপর জোর দিয়েছিলেন। বর্তমান বাংলা অনুবাদেও আমি জোয়েট-কৃত অনুবাদের অর্থ এবং বাংলা প্রকাশের স্বচ্ছন্দতার উপর জোর দিবার চেষ্টা করেছি। সেই প্রয়োজনে জোয়েটের কোনো বাক্য ভেঙে একাধিক বাক্যতে রূপান্তরিত করা হয়েছে কিংবা কোথাও বাক্য সংস্থাপনকে পুনর্গঠিত করা হয়েছে। কিন্তু জোয়েটের অর্থকে পরিবর্তন করা হয় নি।

প্লেটোর দর্শনকে “ডায়ালগের’ আকারে বাঙালি সাহিত্যামোদী ও চিন্তাবিদদের দরবারে পেশ করার সুযোগ একটি মূল্যবান সুযোগ। বাংলা একাডেমী আমাকে সেই সুযোগ দান করেছেন। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা বোধ করছি। এ অনুবাদ-কার্যকে আমি একটি মহৎ কার্য হিসাবেই দেখেছি। আমার শক্তির সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু এ মহৎ কার্যে আমার আন্তরিকতার কোনো ত্রুটি ঘটে নি, এটুকু আমি বলতে পারি। অনুবাদে উন্নতির অবকাশ রয়েছে। দর্শনের মৌলিক ভাবধারাসমূহকে বাংলা ভাষায় উপস্থিত করার যে প্রশংসাৰ্হ পরিকল্পনা বাংলা একাডেমী গ্রহণ করেছে তার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদকর্মও নিশ্চয় অধিকতর উন্নত হয়ে উঠবে। প্রাথমিক প্রচেষ্টার দুর্বলতা এবং ত্রুটিবিচ্যুতি পাঠকসমাজ সহানুভূতি এবং ক্ষমার চোখে দেখবেন, এই ভরসা করি।

অনুবাদক
ঢাকা
ডিসেম্বর ১৯৬৪

সূচিপত্র

সক্রেটিসের জবানবন্দি
ক্রিটো
ফিডো
চারমিডিস
লীসিস
ল্যাচেস

কোনো মানুষের যদি সাধন করার মতো মহৎ কার্য কিছু থাকে তাহলে তার সম্মুখে বড় প্রশ্ন জীবন কিংবা মৃত্যু নয়। তার বিবেচনার একমাত্র বিষয় হওয়া আবশ্যক : আপন কার্য সাধনে সে কোথাও অন্যায় কিংবা অবিচারের আশ্রয় গ্রহণ করল কিনা।

–সক্রেটিস

Book Content

সক্রেটিসের জবানবন্দি
ক্রিটো
ফিডো
চারমিডিস
লীসিস
ল্যাচেস
লেখক: প্লেটো, সরদার ফজলুল করিমবইয়ের ধরন: Editor's Choice, অনুবাদ বই, ধর্ম ও দর্শন
আমি সরদার বলছি - সরদার ফজলুল করিম

আমি সরদার বলছি – সরদার ফজলুল করিম

আমি রুশো বলছি : দি কনফেশানস - সরদার ফজলুল করিম

আমি রুশো বলছি : দি কনফেশানস – সরদার ফজলুল করিম

এ্যারিস্টটল-এর ‘পলিটিকস’ - সরদার ফজলুল করিম

এ্যারিস্টটল-এর ‘পলিটিকস’ – সরদার ফজলুল করিম

Reader Interactions

Comments

  1. Mohammad Ekramul Haque Khan

    November 11, 2023 at 3:37 am

    আমার শিক্ষক জনাব সরদার ফজলুল করিমের লেখা খুব চমৎকার।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Lost Your Password?
Bangla Library Logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Registration confirmation will be emailed to you.